আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_২৪

আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_২৪
সাহেদা_আক্তার

অন্য সময় হইলে সবার আগে সেই পঁচাইতো। আমার এখন সেদিকে ভাইবা মন নাই। আমার এখন দায়িত্ব আমার গাজরকে শিং মাছ থেকে রক্ষা করা।
.
.
ভোর ভোর উইঠা কাজে লাইগা গেলাম। ফ্রিজ থেইকা আমার লালু মিয়াদের থইলাটা বাইর করলাম। ওদের ধুয়ে রাখার জন্য পেয়ালা ধুতে ধুতে ফ্যাত ফ্যাত করতেসি। আমার লালুগুলা অন্যের পেটে যাবে! ভাবতেই কান্না আসতেসে। তারাও আমার দিকে জুলুজুলু কইরা তাকাই আছে। যেন এখনই কাইন্দা দিবো। যাগ্গে, বুকের কষ্ট বুকে চেপে রাইখা ওদের গোসল করাইলাম। সুন্দর কইরা দাঁড়ি পরিষ্কার কইরা চামড়া ছিল্লাম। গ্রেটারে কুচি কইরা রান্নার সরঞ্জাম তৈরী শুরু করলাম। প্রথমে একটা পাত্রে ঘি এলাচ দিয়া কুচানো গাজরটারে নাইড়া কিছুক্ষণ পর তাতে দুধ পানিতে গুইলা দিয়া সিদ্ধ কইরা নিলাম। চিনি পরিমাণ মতো দিলাম। তারপর গুড়া দুধ আর বাদাম দিয়া পানি শুকাই গেলে নামাই ফেললাম। ব্যাস আমার গাজরের হালুয়া যুদ্ধের জন্য রেডি। এখন শুধু ঢাল তলোয়ার দেওয়া বাকি৷ আজকে আর ঝুঁকি নেই নাই। বাসার সবার জন্য বানাইসি। না হইলে পরে আবার আমারে চাইপা ধরব। এবার আসল কাজ৷ আমি চুপিচুপি বাইরে গিয়া এক শিশি জোলাপ কিইনা আনলাম বহু খুঁইজ্যা। কালকে বের হওয়ার উপায় ছিল না। নাহলে কালকে আইনা জোলাপের শিশির লগে আনন্দে নাচতাম কতক্ষণ।

আইসা দেখলাম এখনো কেউ উঠে নাই। যাক বাঁচা গেল। একটা বাটিতে গাজরের হালুয়া নিয়া অর্ধেক জোলাপ ঢাইলা দিলাম। ভালো মতো মিশাইয়া নিয়া উপরে বাদাম দিয়া সুন্দর কইরা ডেকোরেশন করলাম। মনে মনে চিনা হাসি দিয়া কইলাম, বাছা তোমার ঢংয়ের পিরিত বাইর করতেসি আমি। আমার লগে মশকরা? তোমার পেটের বারোটা যদি আমি না বাজাইসি তো আমার নামও ছোঁয়া না।

যাওয়ার আগে একটু রেডি হই নেই। জামাটা কেমন কুচকাই আছে৷ চুল কতগুলাও কাউয়ার বাসা। আমি রুমে গেলাম জামা বদলাইতে। আধাঘন্টা ধইরা জামা বাইছা একটা হলুদ জামা পরলাম। সভ্য জাতির মতো হইয়া রান্নাঘরে আইসা টাসকি খাইলাম। আমি ট্রেতে বাটিটা রেখে গেসিলাম। এখন দেখি বাটিতে হালুয়া নাই। গায়েব হইলো কই!? উপরে নিচে ডানে বায়ে কোথাও নাই। কেউ খাইলো নাকি! ই…… আল্লাহ জানেন কে খাইসে! আমি ভয়ে ভয়ে আরেক বাটিতে বাইড়া বাকি জোলাপটুকু দিয়া পা টিইপা টিইপা বাইর হইলাম। আসার সময় শুনলাম ওয়াশরুমে কে যেন ফ্যাশ টিপসে। হে হে চুরি কইরা খাইয়া নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারসো। এবার বুঝুক মজা।

কলিংবেল টিপতে আকাশ দরজা খুলল। কি কিউট লাগতেসে বাচ্চাদের মতো। মাথার চুল সব এলোমেলো। দরজা খুলতে খুলতে হাই দিতেসিলো। আমারে দেইখা হাই উধাও হইয়া গেল। আমি স্যাকারিন মিশ্রিত হাসি দিলাম। সে আমার দিকে তাকাই রইলো। আমি লজ্জা লজ্জা ভাব আইনা কইলাম, ভেতরে আসতে পারি? সে দরজা থেকে সইরা বলল, হ্যাঁ আসো আসো। আমি আশেপাশে তাকাই কইলাম, আন্টি এখনো আসেনি?

– না…… কাজ আছে তাই আসতে পারছে না।

– ও আচ্ছা। এটা আপনার জন্য।

– কি এটা?

আমি ঢাকনা তুলে কইলাম, গাজরের হালুয়া। সে আনন্দিত হইয়া বলল, তোমার মনে আছে! আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে কইলাম, কি মনে আছে? সে হঠাৎ নেতিয়ে গিয়া বলল, কিছু না। আচ্ছা রাখো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। মাত্রই উঠলাম। কালকে অনেক কাজ গেছে। বইলা চইলা গেল। আমি মনে মনে কইলাম, কি কাজ গেছে তো জানি। শিং মাছের লগে প্রেম করসো। আর কি কাজ থাকবে? হঠাৎ মনে হইলো, সে তো বিকালে রোগী দেখতে যাবে। কাজটা কি ঠিক হচ্ছে? নাহ, আমি নিয়া যাই। শাস্তিটা বেশি হই যাবে। আমি যাওয়ার আগেই সে আইসা বাটি নিয়া বইসা পড়ল। বলার আগেই গপগপ কইরা সব খাইয়া নিল। আমি হা কইরা ওর খাওয়া দেখলাম। খাওয়া শেষে কইলো, আমার খুব পছন্দ গাজরের হালুয়া। জানো? আমি কৃত্রিম হাইসা মাথা নাড়লাম। একটু পরেই বুঝবা ঠেলা।

– আমি আসি।

– না বসো।

– আমার কাজ আছে। কাল তো সাহেদার গায়ে হলুদ। অনেক কাজ। আসি।

আমি যাইতে লাগলেই আকাশ আইসা আমার ডান হাত ধইরা ফেলল। আমি কিছু বুঝার আগেই একটান মাইরা বুকে মিশাই ফেলল। এটা কি হইলো? আমি থাকমু না। না জানি কালকে কতবার এই বুকে মাইয়াটারে রাখসে। অন্যের জিনিস আমি ব্যবহার করি না। আমি ছুটার জন্য ধানাই পানাই করতেসি আর সে জাপটে ধইরা আছে। হঠাৎ আমি শান্ত হইয়া গেলাম। কেন জানি অনেক শান্তি লাগতেসে। আমি ওর বুকে কান পাতলাম। হার্টবিট স্পষ্ট শোনা যাইতেসে। মাত্র চোখটা বন্ধ কইরা শুনমু ভাবসিলাম হঠাৎ ওর পেট ডাইকা উঠলো৷ আমি চোখ খুইলা তাকাইলাম। সেও আমারে ছাইড়া দিলো।

– ছোঁয়া…

আবার ডাক দিলো। সে কইলো, একটু আসছি। হ্যাঁ? কোথাও যাবা না। আমি…। কথা শেষ হওয়ার আগেই দৌঁড়। হিহ হিহ হি… জোলাপের কত গুণ এবং কি কি তা আজ ভালো কইরা টের পাইবা। আমার এখানে থাকা সুবিধাজনক নয়। আমি তল্পিতল্পা গুটাই বাসায় দৌঁড় দিলাম।

রুমে বইসা আছি ফোন হাতে নিয়া। বইসা বইসা ঘাটতেসি আর একটু পরে ওয়াশরুমের ফ্ল্যাশের আওয়াজ শুনতেসি। দরজা খুলে বের হয়। আবার দুই তিন মিনিট পর দৌঁড়ে আইসা দরজা বন্ধের শব্দ হয়। আমি রুমের দরজা বন্ধ কইরা বইসা ছিলাম। একবার ভাবলাম উঁকি মাইরা দেখা দরকার চোরটা কেডা। দরজা খোলার শব্দ হইতেই আমি দরজাখান ফাঁক কইরা দেইখা এবার দরজার হুক লাগাই দিলাম। ইইই…… আমারে তো ভর্তা বানাই রোদে শুকাড় দিবো। বন্ধু চুরি কইরা খাইলো! একদিক দিয়ে ভালা হইসে। আমারে বহুত রাইগা রাইগা কথা কইসো। এখন শাস্তি ভোগ করো। নিজেই নিজের শাস্তি নিসো। হুহ।
.
.
.
.
আধা ঘণ্টা পর আম্মু দরজায় নক দিলো। আমি দরজা খুলতেই আম্মা জিগাইলো, তুই হালুয়া রান্না করেছিস? আমি দরজার ফাঁক দিয়া কইলাম, হু।

– আচ্ছা রাতুলের কি হয়েছে জানিস?

– কি কি হবে?

– উঠার পর থেকে কেবল বাথরুমে দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে দেখলাম।

– দেখো হয়ত পেট খারাপ হয়েছে।

– হঠাৎ পেট খারাপ হলো কেন? বুঝলাম না। বাইরের খাবার তো খায় নি। তবে!?

– তাকেই জিজ্ঞেস করো।

– আচ্ছা, আয়। খাবি।

– আসি।

আমরা চারজন টেবিলে বইসা গাজরের হালুয়া খাচ্ছি আর রাতুলের ওয়াশরুমে আসা যাওয়া দেখতেসি। আম্মু খাইয়া উঠে স্যালাইন বানাইয়া দিলো। সে এক মুহূর্ত বইসা থাকতে পারতেসে না। আধা শিশি জোলাপ। ভালোই কাজ করতেসে। ওর এ অবস্থা তাহলে গাজরের কি অবস্থা!!!!!
.
.
.
.
রাতে নিশ্চিন্তে ঘুম দিসিলাম। সকালের কলিংবেলের শব্দে ঘুমের বারোটা বাজল। দরজা খুইলা দেখি সাহেদা কোমরে দুই হাত দিয়া তাকাই আছে আমার দিকে। আমি ঘুম ঘুম চোখে কইলাম, কিরে? এই ভোর রাতে?

– কটা বাজে দেখেছিস?

– কটা?

– সাড়ে পাঁচটা। আর তুই এখনো ঘুমে?

– তো কি করবো?

– আজ না আমার গায়ে হলুদ!? আর তুই এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাস!

– যাবো আর কি। বিকালে সেজে গুজে।

– তুই এখুনি যাবি।

– এখন!?

– হ্যাঁ, এখন।

– আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

– আমার রুমে ওয়াশরুম আছে। চল।

সে আমারে টাইনা নিয়া গেল। যাওয়ার আগে গাজরের বাসার দিকে তাকাইলাম। দেখলাম দরজায় তালা মারা। গেল কই!?

ফ্রেশ হইয়া বইসা রইলাম ওর রুমে। ও আমার সামনে আচার নিয়া বসল। এ মাইয়ার আচার খানা শেষ হইলো না। আমি এক পিস নিয়া মুখে পুরতে পুরতে কইলাম, তোর আর আচার খাওয়া গেল না। তোর আচার ওয়ালার সাথে বিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।

– তাহলে তোরেও গাজর ওয়ালার কাছে বিয়ে দিয়ে দেবো। সারাদিন রান্না বান্না করবি আর খরগোশের মতো কচকচ করে গাজর খাবি।

– হ, এককাজ করব। আয়ান ভাইকে বলবো শিক্ষকতা ছেড়ে আচারের ব্যবসা করতে।

– এমন করে বলিস ক্যান? আচারই তো।

– হুম, আচারই।

আমি মনের সুখে আচার খাইতেসি আর গুণ গুণ কইরা গান গাইতেসি। সাহেদা সেটা খেয়াল কইরা বলল, বিয়া আমার আর তোর মনে রঙ লাগসে। আমি মুচকি হাইসা বললাম, জানিস কি হইসে? সাহেদা বয়াম থেকে আচার নিতে নিতে বলল, কি? আমি আঙ্গুল চেটে কইলাম, গাজর ঐদিন শিং মাছের সাথে দেখা করতে গেসিলো।

– গাজর না হয় আকাশ ভাই কিন্তু এই শিং মাছটা কে?

– তার ভালোবাসা।

– তাই নাকি?

– হুম। সেদিন দেখসি মেয়েটা ওরে একটা গোলাপ দিসে।

– তুই তো তাও করতে পারলি না।

আমি নাক টাইনা কইলাম, সাহেদা…। আমিও তারে টাইট দিসি। সাহেদা উৎসুক হইয়া কইলো, কি করছিস ভাইয়ের সাথে? আমি তার কানে ফিসফিস কইরা কইলাম, জোলাপ দিয়া গাজরের হালুয়া খাওয়াই দিসি। সাহেদা বেকুবের মতো তাকাই থাইকা কাইন্দা কাইন্দা কইলো, আর কিসু পাস নাই? আমার বিয়ার আগের দিনই তোর এমন শাস্তি দিতে হবে?

– কেন? কি হইসে?

ওর ফোন বাইজা উঠল, উঁকি দিয়া দেখি আয়ান ভাই ফোন দিসে। আমি কইলাম, ভাই কি শান্তি মতো কথাও কইতে দিবে না দুইজনরে? সাহেদা হাইসা দিয়ে কথা বলতে লাগল। দরজার দিকে তাকাইতেই মনে হইলো কে যেন দরজার বাইরে দাঁড়াই আছে।

(স্যাকারিন মিষ্টি জাতীয় জৈবপদার্থ যা চিনির থেকে ৫০০ গুণ বেশি মিষ্টি।)
চলবে…

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here