আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_২৩

আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_২৩
সাহেদা_আক্তার

আমি মনে মনে কইলাম, মেজাজ খারাপ হইসে। এগুলা গাজররে খাওয়াইলে শান্তি পাইতাম।

বিকালে নিজের রুমে বিছানায় শুইয়া ফোন গুতাইতেসি। হঠাৎ কলিংবেল বাজল। আলসি লাগতেসে উঠতে। দ্বিতীয় বার বাজতে না পারতে উঠলাম। রুমের দরজার কাছে পৌঁছাইতেই দেখি রাতুল দরজা খুলসে। আমি সেখান থেকে দাঁড়াই দেখলাম আকাশ আসছে। মনে পড়ল বাটিটা তো রাইখা আসছি। ঐটা দিতে আসছে মেবি। রাতুল জিজ্ঞেস করল, কি চাই?

– জানোই তো কি চাই।

রাতুল কটমট কইরা ওর দিকে তাকাইলো। তাদের হাবভাব কিসুই বুঝি না। একটা আরেকটারে দেখলে যেন কামড়াই দিবো। আকাশ মিষ্টি হাসি দিয়া বলল, বাটিটা দিতে আসছিলাম।

– কিসের বাটি?

– স্যুপ। আমার জন্য বানিয়ে দিয়েছিল। আজকে স্যুপ দিয়েছে পরে দেখো মনটাই দিয়ে দিয়েছে। যদিও……

আকাশের কথার মাঝে রাতুল বাটি নিয়া দরজা মাইরা দিল মুখের সামনে। এটা কেমন অভদ্রতা! কিন্তু রাতুলের চেহারা দেইখা মনে হইলো সে মোটেও মজা করার মুডে নাই। আমি ভয়ে চোরের মতো বিছানায় এসে ফোনটা হাতে নিলাম। যেই না ভাব ধরলাম ফোন টিপতেসি, কিসু দেখি নাই, কিসু জানি না তখনই রাতুল আমার রুমে আসল। আমি ফোনের দিকে মনোযোগ দেওয়ার ভাব করলাম। সে ঠকাস কইরা বাটিটা টেবিলে রাখলো। আমি পিটপিট কইরা তাকাইলাম। মনে মনে কইলাম, আস্তে রাখো, ভাঙতো আরেকটু হইলে। রাতুল আমার দিকে তাকাই আছে। আমিও তাকাই আছি। তারপর সে রূঢ় গলায় বলল, স্যুপ কেন দিয়েছো?

– কাকে?

– পাশের বাসায়।

– বানিয়েছিলাম তাই…

– আমাকে তো দাও নি।

– আমি খাওয়ার পর শেষ হয়ে গিয়েছিল তাই…

– যদি শেষ হয়ে যাবে জানো তবে আমাদের জন্য রাখতে। ওকে দিলে কেন?

– দি দিলাম আর কি…… আমি একটু ওয়াশরুম যাই…

বইলাই উইঠা চইলা যাইতে লাগসিলাম। সে পিছন থেকে টাইনা দেয়ালের সাথে দাঁড় করাইলো। আমি তো ভয়ে শেষ। আজকে কেন যেন অনেক রাইগা আছে। এই পর্যন্ত আগে কখনো এমন রাগতে দেখি নাই। আজকাল বিদেশ থেকে আসার পর আমার সাথে মেজাজ নিয়ে কথা বলতেসে। কি যে হইলো আমি কিছুই বুঝতেসি না। এত রাগে ক্যান!? সে ডান হাত আমার পাশে দেয়ালে রাইখা বলল, ছোঁয়া, সব সময় সে কেন? সবকিছু ভুলে যাওয়ার পরও সে কেন? আমি না কেন? কেন তাকে তুমি বেছে নাও? আমাকে কেন না? এত ভালোবাসা দেওয়ার পরও তার কাছেই কেন তোমার মন চলে যায়? আমাকে কি এটুকু ভালোবাসা যায় না? এক বিন্দুও না? কিন্তু আমি যে ভালোবাসি ছোঁয়া। তোমাকে ভালোবাসি। বইলা আমার কাঁধে কপাল রাখলো। তার সামান্য স্পর্শে আমি অস্বস্তিতে কাঁইপা উঠলাম। সে বুঝতে পেরে হয়ত হুট করেই রুম থেকে বাইর হইয়া গেল।
.
.
.
.
সাহেদারে নিয়া বইসা আছি। দুইজনে ফুসকার দোকানের সামনে চেয়ারে। সাহেদা বের হইতে চাইতেসিলো না। আমি জোর কইরা বাইর করাইসি। নতুন বউ নতুন বউ ভাব। যা হোক এখন আইনা নিজেই চুপ কইরা বইসা আছি। ঠ্যাং দুইটা একটা আরেকটার সাথে ঠোকরা ঠুকরি করতেসে। কি করব বুঝতেসি না। মামারে বলসিলাম দুই প্লেট ফুসকা দিতে। দশ মিনিটে চইলা আসলো। প্রথম ফুসকাটা মুখে দিতেই সাহেদা বলল, কি হল? খা। কি এমন ভাবছিস? আমি ভাবলেশহীন ভাবে কইলাম, সাহেদা, কালকে আমার সাথে দুইটা কাহিনী ঘটসে। সে দ্বিতীয়টা মুখে দিতে দিতে কইলো, কি কাহিনী?

– গাজর আর বন্ধু দুইজনেই আমারে একই দিনে প্রপোজ করসে।

সাহেদা ভিমরি খাইয়া কাশি উঠাই ফেলল। আমি মামা থেকে তাড়াতাড়ি কইরা পানি নিয়া ওরে দিলাম। ও একটু শান্ত হয়ে কইলো, কবে?

– কালকে।

– হঠাৎ?

– মানুষ তো হঠাৎ করেই প্রপোজ করে।

– তা করে। আচ্ছা বল এখন কেমনে করসে? আর দুইজনই বা একইদিনে কি করে?

– কালকে আকাশকে এক বাটি স্যুপ বানাই দিসিলাম।

– ওহ্ হো…

– আরে শোননা। আসলে পরশু দেখসিলাম গাজরটা বৃষ্টিতে ভিজে আসছে। ভাবলাম একটু গরম গরম স্যুপ দিয়ে আসি।

– বাব্বা, এখন থেকেই এত প্রেম।

– তুই শুনবি?

– আচ্ছা বল বল।

– তো গিয়ে দেখি কি, গাজরের জ্বর উঠসে। তারপর তারে জলপট্টি দিলাম, স্যুপ আর ওষুধ খাওয়াইলাম। তখন আমি মুখ ফোসকে বলে ফেলেছিলাম কালকে ওকে ভিজে আসতে দেখসি। এরপরই সে বলল আমি নাকি তার এহম এহম দেখে ফেলসি।

– এহম এহম কি আবার?

– মানে শরীর আরকি।

– সেটা আবার কখন শরীরের সমার্থক হইলো?

– ধুর এখন বুঝছিস তো। তাইলেই হবে। তারপর সে বিয়ের কথা বলল।

– ওমা! তাই নাকি? তাহলে বিয়ে করে ফেল।

– ধুর, পুরা কাহিনী শোন আগে।

– আচ্ছা বল।

– এরপর আমি এক দৌঁড়ে বাসায় আসছি। খুব খুশি ছিলাম শুনে। আসার সময় ওর একটা ডায়রী আনসিলাম লুকাইয়া। সেখানে পড়ে দেখি তার ভালোবাসার মানুষ আছে। আমার সাথে মজা করসে।

– হুম, বুঝলাম। আর দ্বিতীয়টা?

– সে স্যুপের বাটি ফেরত দিতে গিয়া ক্যাঁচাল লাগাইসে। রাতুল আমার কাছে জানতে চাইসিলো কেন দিলাম গাজরকে। তাকে কেন স্যুপ দেই নাই। আমি কাটাই যাইতে চাইসিলাম। কিন্তু সে হঠাৎ আমাকে প্রপোজ করে বসল।

– এক কাজ কর।

– কি?

সাহেদা শেষ ফুসকাটা মুখে দিতে দিতে কইলো, তুই দুইজনরেই রিজেক্ট করে দে। আমি তার দিকে তাকাই কইলাম, কেন? সাহেদা প্লেটটা রাইখা বলল, কারণ আমি তোরে আমার জা বানামু। ওর কথা শুইনা আমার ফুসকা গলায় আটকাইলো। আমি তারে ইশারা ইঙ্গিতে কইলাম পানি দিতে। পানি দিয়া কোনোমতে গিলে কইলাম, না থাক বাপু। তিনজনে টানাটানি করতেসে আমারে নিয়া। আরেকজন যোগ করার ইচ্ছা নাই। পরে দেখমু দুইজনে দুই হাত আর দুইজনে দুই পা নিয়া টানতে টানতে আমারে চাইর টুকরা করে ফেলবে। সাহেদা আমার কথায় পাত্তা না দিয়া বলল, তুমি তো ফান্দে পড়েছো বগা। এখন কাইন্দা কেমনে কুল পাইবা সেটা ভাবো। আমিও ওর সাথে সহমত হইলাম। আসলেই আমি বগা হই গেলাম।

সাহেদারে নিয়া রিকশায় বইসা আছি ট্রাফিকে। বাংলাদেশে জ্যামের শেষ হইলো না। আধাঘন্টায় কচ্ছপের মতো দশ কদম আগাইসি। কি বিরক্তি! শখ কইরা বাইর হইলাম। সাহেদার সাথে কথা কইসিলাম মন হালকা হওয়ার জন্য। আর সে তার ভাসুরের কথা বইলা মনটা আরো ভারি কইরা দিল। আমি বসে বসে আশেপাশের লোকজন দেখতেসিলাম। হঠাৎ একজায়গায় চোখ স্থির হইলো। মনে হইলো গাজররে দেখলাম। আমি নাইমা যাইতেই সাহেদা বলল, কই যাস। এখুনি জ্যাম ছাড়বে।

– তুই বাসায় যা। আমার কাজ আছে।

বইলা নাইমা পড়লাম। রাস্তার পাশে আইসা আবার খুঁজতেই দেখলাম একটা রেস্টুরেন্টে ডুকল। আমিও পিছু পিছু গেলাম। যদিও ঢুকি নাই। বাইরে কাচ দিয়া তাকাই দেখলাম ঐ শিং মাছটা বইসা আছে ভেতরে। লাল রঙের টপস আর নীল জিন্স পইরা ঠ্যাংয়ের উপর ঠ্যাং তুইলা আছে। ঠোঁটে টকটকে লাল লিবিষ্টিক দেয়া আর চোখে সানগ্লাস। রেস্টুরেন্টের ভেতরেও কি রোদ পড়ে নাকি? সানগ্লাস খুলে নাই৷ আকাশ গিয়া ওর কাছে বসলো। আমার যদি অলৌকিক শক্তি থাকতো তাইলে শিং মাছটারে ওখান থেইকাই হাপিস কইরা দিতাম। আমি রোদের মধ্যে দুই চোখের উপর হাত রাইখা ভেতরে তাকাইলাম। দুইজনে হাইসা হাইসা কথা বলতেসে। হঠাৎ দেখি শিং মাছ একটা লাল গোলাপ বাইর কইরা আকাশরে দিলো৷ আমার দেইখা কান্না আসতেসে। আমি এখনো তারে কিসু দিতে পারলাম না আর এই মাইয়া গোলাপ দেওয়া, হাগ করা, গালে কিস করা। সব কইরা ফেলল। আল্লাহ আমার কি হবে! আকাশ কি করে তার জন্য আবার তাকাইতেই দেখি সে হাসি হাসি মুখ কইরা গোলাপটা নিয়া নিল হাত থেকে। দেইখাই আমি সোজা হইয়া খাঁড়াইলাম। আমি আর দেখমু না। আমার যা জানার জানা হই গেসে। আমি বাসায় যামু। বইলাই নাক চাইপা ধইরা হাঁটা দিলাম। পাছে নাকের পানি বাইয়া পড়ে।
.
.
.
.
কলিং বেল টিপলাম৷ কেউ দরজা খুলে না। বিরক্ত হইয়া টিপতে লাগলাম বাচ্চাদের মতো। ঝিলিক দরজা খুইলা একটা ধমক মারতে গিয়া বলল, ও ছোঁয়াপু তুমি? দেখো কে আস…। আমার এত কথা শুনতে মন চাইলো না। আমি পেত্মীর মতো ঝুলতে ঝুলতে রুমে চইলা গেলাম। রুমের দরজা মাইরা বিছানাই উইল্টা পড়লাম। ধুর কিচ্ছু ভাল্লাগে না। সব কেমন জট পাকাই গেসে। ইচ্ছে করতেসে গাজরের রাগটা ডায়রীটার উপর ফালাই। কুচি কুচি কইরা কাইটা নদীর জলে ওর ভালোবাসা ভাসাই দি। তুমি ভালোবাসো একজনরে আর আমারে বিয়ার কথা বইলা মশকরা করো। তোমার মশকরা আমি কাল বাইর করবো। দাঁড়াও। তোমার যদি কান দিয়া ধোঁয়া না বাইর করসি। তো আমার নামও ছোঁয়া না।

রাতে খাইতে বসলাম। কি করা যায় সেটা চিন্তা করতেসি আর একটা একটা ভাত মুখে দিতেসি। মন আছে চিন্তায়। এদিকে টেবিলে বসা চারজন মনুষ্যের চোখ যে আমার উপরে নিবদ্ধ সেটা আমার খেয়ালে নাই। আমি আপন মনে বিড়বিড় কইরা হাসতেসি আর খাইতেসি৷ আবার বিড়বিড় করতেসি৷ হঠাৎ লাফ দিয়া কইলাম, পাইসি। আমার লাফ দেওয়ায় নিরীহ চারটা প্রাণী আরেকটু হইলে হার্টফেইল করতো। হঠাৎ সেটা খেয়াল হতেই কইলাম, সবাই আমার দিকে এভাবে তাকাই আছো কেন? আব্বু বলল, তোর কি কিছু হইসে?

– কি হবে?

ঝিলিক বলল, বিড়বিড় করছিলা আর হাসছিলা। আমি ভাতের লোকমা দিয়া বললাম, ও কিছু না। আম্মু বলল, কিছু না হলে ভাত গুণে গুণে খাচ্ছিস কেন? ঠিকমতো খা।

– হুম।

রাতুল আসার পর থেইকাই চুপ কইরা আছে। আজকে সারাদিনে টু শব্দ করে নাই। আমিও যেচে কথা বলি নাই। অন্য সময় হইলে সবার আগে সেই পঁচাইতো। আমার এখন সেদিকে ভাব্বার মন নাই। আমার এখন দায়িত্ব আমার গাজরকে শিং মাছ থেকে রক্ষা করা।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here