আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥,পর্ব_১৬,১৭
সাহেদা_আক্তার
পর্ব_১৬
আমি চুপ করে রইলাম। এ মনে হয় তার ছেঁড়া। দাঁড়া একবার সুযোগ পাইলে সুধে আসলে সব শোধ করমু। দুই জনে এসে একটা বেঞ্চে টিফিন খাইতে বসলাম। মুন বক্স খুলতে খুলতে জিগাইলো, রাতুল তোকে সিট ছেড়ে দিল কেন? আমি কইলাম, নতুন কারো সামনে ভালো সাজাটা মানুষের অভ্যাস। আমি যখন বললাম যে আমি ওকে ভালো বলে জানি তখন ও আমার সাথে খারাপ ব্যবহারটা করতে একটু দ্বিধা করতেছিল। মুন বলল, ও। তাই বল। সেইজন্যই তো বলি রাতুল এত সহজে তার জায়গা ছেড়ে দিল কেন। হঠাৎ দেখি ক্লাস ফাইভের একটা ছেলে কাঁদতেসে। মুন দেইখা বলল, আজকেও। আমি জিগাইলাম, ঘটনা কি? ও বলল, ও জিতু, রাতুলদের সাথে ক্রিকেট খেলতে চায়। কিন্তু রাতুল ওকে খেলায় নেয় না। বার বার ধমক দিয়ে তাড়াই দেয়। আমি বললাম, এই ছেলের সমস্যা কি? খালি সবার উপর ক্ষমতা দেখায়। দাঁড়া, আজকেই টাইট দিমু।
মুন যাইতে মানা করল। শুনলাম না। আমি টিফিনটা রাইখা রাতুলের কাছে গেলাম। সে মাত্র ব্যাটিংয়ের পজিশান নিতেছিল। আমি গিয়া বললাম, আমি খেলবো। সে হাইসা উড়াই দিয়া কইল, মেয়ে হয়ে আসছে ব্যাট বল খেলতে। ব্যাট আলগাইসো কোনদিন।
– যদি পারি?
– পারবা না।
– বাজি?
– হুহ্, বাজি। তিনটা বল করবো। যদি একটা সিক্স মারতে পারো তো তুমি জিতা আর যদি না পারো তো আমি যা বলবো তাই করতে হবে।
– আমি রাজি। আর হারলে জিতু তোমার বদলে খেলবে।
– আমিও রাজি।
মুন আমার কানে ফিসফিস করে বলল, ওর সাথে খেলার চ্যালেন্জ নিলি! ও আমাদের স্কুলের বেস্ট ক্রিকেটার। পারবি ওর সাথে? রাতুল বলল, কি হল? ভয় পেয়ে গেলে? আমি ওর থেকে ব্যাট কাইড়া নিলাম। বাপ রে! ওজন আছে। এটা দিয়ে সিক্স মারা চারটি খানি ব্যাপার না। কিন্তু আমাকে তো পারতেই হবে। রাতুল বল নিয়ে আমার দিকে শয়তানি হাসি দিল। আমি ঢোক গিললাম। পারমু তো!? না পারলে কি যে করতে বলে কে জানে। ব্যাটা এক নাম্বারের ফাজিল মনে হইতেসে। আল্লাহ রক্ষা কইরো। ক্রাশের ঠেলায় বাচ্চাদের ব্যাট বল দিয়া খেলসি। এখন এই ভারি ব্যাটে কি পারমু!!!?
রাতুল প্রথম বল ছুইড়া মারল। বল আমার নাগালের বাইরে। মারতে পারলাম না। রাতুল দেইখা হাসল। সাথে তার বন্ধুদেরও সেই হাসি। ইচ্ছা করতেসে সবগুলার দাঁত কপাটি খুইলা হাতে ধরাইয়া দেই। আমি পজিশান নিতে নিতে দ্বিতীয় বলও ছুঁড়ে মারল। আমি টাল সামলাতে গিয়া পইড়া যাইতে লাগলাম। ভাগ্য ভালো পড়ি নাই। রাতুল হাতের মধ্যে বল নিয়া আমাকে দেখাইতে দেখাইতে উপরে ছুড়তেসে আর ক্যাঁচ ধরতেসে। আমি আবার ঢোক গিললাম। লাস্ট বল। আমার সম্মান। না, ছোঁয়া তোকে পারতে হবে। তুই না চেরির বৌ। পারবি পারবি। চেরিকে দেখেছিস না কত্ত ভালো খেলতো। প্রত্যেক ওভারে চার ছক্কা। এই লাতু ফাতু তোর চেরির কাছে কিচ্ছু না। তাহলে আমি কেন ভয় পাইতেসি? আমাকেও পারতে হবে। নইলে আজকের পর আমি মাথা উঁচু কইরা দাঁড়াইতে পারমু না। রাতুল চিনা হাসি দিয়া লাস্ট বল ছুঁইড়া মারল। আমি চোখ বন্ধ কইরা সেই লেভেলের চিক্কুর দিয়া ব্যাট হাকাইলাম। আমার চিক্কুরে সবাই তাকাই আছে। চারপাশ চুপ। আমি তাকাই দেখি সবাই আমার পেছনে তাকাই আছে। আমিও তাকাইলাম। কিছুই তো নাই। সব ঝোপঝাড়। বল কই? সবাই হঠাৎ হইহই করে উঠল। আমি তাকাই আছি রাতুলের দিকে। তার মুখ বাংলার পাঁচ হইয়া আছে। মুন দৌঁড়াই আইসা কইল, বোইন তুই সেই লেভেলের সিক্স মারছিস। শুইনা আমার জান ফিইরা আসল। আমি পারসি। আমি পারসি চেরি ফল। আমি রাতুলের কাছে গিয়া দাঁড়াইলাম। আমি ওর কানের কাছে গিয়া ফিসফিস করে বললাম, অহঙ্কারই পতন। আমি জোর গলায় বললাম, রাতুলের বদলে জিতু খেলবে। তারপর ওর দিকে ফিইরা কাঁধে হাত রাইখা বিজ্ঞের মতো কইলাম, Don’t show ego so much. It will kill you. Mind it.
আমি টিফিন বক্সটা নিয়া উপরে চইলা আসলাম। মুনও চইলা আসলো। সব ক্লাস ভালো মতোই শেষ হইল। বাড়িতে রুমে চিৎপটাং হইয়া শুইয়া পড়লাম। ওফ! কি একদিন গেল। স্কুলের প্রথম দিনই অবস্থা টাইট। মুন ব্যাগ রাইখা আমার কাছে চেয়ার টেনে বইসা কইল, চেরি কে? আমি অবাক হয়ে বললাম, কোন চেরি?
– সেটা আমি কি করে বলব? আজকে ব্যাটিং করার সময় চেরি বলে যে এক চিৎকার দিলি। আমার কানের পর্দার বারোটা বেজে গেসে।
– সত্যি! আমি চেরি বলে চিৎকার দিসি?
– না, আমি তো মদ খাইয়া ওখানে দাঁড়াইছিলাম তাই উল্টা পাল্টা শুনসি।
আমি বিড় বিড় কইরা কইলাম, আমার কি হইবো। আনমনেও চেরি, খেয়ালেও চেরি, স্বপ্নেও চেরি। শুধু বাস্তবে নাই। এই চেরিকে কবে ভুলমু। আল্লাহ মালুম। মুন বলল, কি হইল তোর আবার? বিড়বিড় করিস কার সাথে?
– জামাইর সাথে। আমি গোসলে যাইতেসি।
আমি উইঠা কাপড় চোপড় নিয়া ওয়াশরুমে ঢুইকা গেলাম। আয়নার সামনে বোতামটা ধরে কিছুক্ষণ দাঁড়াই রইলাম। মনে মনে বললাম, তুমি আছো মহাসুখে, আমি আছি হাজার ঝামেলায়। একবার তোমাকে সামনে পাই, বুঝাই দিমু আমি কি ছিলাম। এখন কি হইসি।
গোসল তো করি কাউয়ার স্পেশাল গান গেয়ে। আব্বা আম্মা চলে যাইবার পর কাউয়া সং মুখ বাইর হয় নাই অনেক দিন। আজকে আবার কাউয়া সং গাইলাম ইচ্ছা মতো। আমার কাউয়া সং শুনলে গানের স্যার তো ইয়ে হই যাইবো। যাগ্গে হোক। আমার কি। আমি টাওয়াল মাথায় পেঁচাই বাইর হইলাম। দেখি যেমনের কাপড় চোপড় তেমনি রইসে। মাইয়া গেল কই? আমি ভিজা কাপড় নিয়া ছাদে আইসা দেখি ও কারো সাথে ফোনে ফিসফিস করে কথা বলতেসে। আমি চুপি চুপি গিয়া শুনতে চাইছিলাম। কিন্তু ও টের পাইয়া গেল। আমার দিকে ফিরে বলল, তোর গোসল শেষ?
– না হলে কি তুই ওয়াশরুমে আমার সাথে দাঁড়াই আছিস? কার সাথে কথা বলতেছিলে?
– কারো সাথে না।
– প্রেম করতেছিস নাকি?
– আরে বললাম তো কেউ না। আমি গোসল করতে যাইতেসি।
মুন নেমে গেল। আমার কেমন যেন সন্দেহ হইতেসে। মনে হইতেসে সে প্রেম করতেসে। দাঁড়া আমি খুঁইজা বাইর কইরা ছাড়মু।
.
.
.
.
– হ্যালো…
– হুম বলো।
– ছোঁয়া সন্দেহ করছে। আমাকে ছাদে কথা বলতে দেখে ফেলেছে। তাই এখন ওয়াশরুমে ঢুকে কথা বলতেসি।
ফোনের ওপাশ থেকে হেসে বলল, কি বলেছে?
– বলেছে আমি নাকি প্রেম করছি।
– তাহলে করে ফেলো।
– কি?
– প্রেম।
– আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন?
– ছোঁয়া যাতে সন্দেহ না করে তার জন্য এটুকু করতেই পারো।
– আপনাদের দুইজনের জন্য আমি পাগল হয়ে যাবো। আর প্রেম করা কি সোজা কথা? ছেলে পাবো কোথায়?
– আজ বিকাল চারটায় দেখা করবে।
– কার সাথে?
– সেটা পরে জানাবো। আগে একটা জায়গা বলো।
– উম…… আমাদের স্কুল থেকে কিছুদূরে একটা নদী আছে। নাম ময়ূরাক্ষী। সেখানে কিছু ছাউনি আছে। ওখানে দেখা করবো।
– ওকে।
– কিন্তু কার সাথে?
– তোমার প্রেমিকের সাথে।
সাথে সাথে ওপাশ থেকে ফোন কেটে দিল। মুন মাথা চাপড়াইতে চাপড়াইতে কইল, এই দুইজনের ঠেলায় আমি পাগল হই যামু। এখন নাকি ওদের প্রেমের চক্করে আমারেও প্রেম করা লাগবে!
.
.
.
.
আমি রুমে চক্কর দিতেসি আর মুন ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার অপেক্ষা করতেসি। ও গোসল করে বের হতেই আমি ওরে আটকাইলাম। আমারে দেইখা ওর মুখ শুকাই গেল। আমি কইলাম, এতক্ষণ কি করতেছিলি?
– কি করমু? গোসল।
– কেউ ফোন নিয়ে গোসল করতে যায়?
– আরে একটু দরকার ছিল। তুই কেন যে তখন থেকে এতো জেরা করতেছিস। চল খাবি। আমার খুদা লাগছে।
আমারে কিসু বলার সুযোগ না দিয়া চইলা গেল। আমিও ছাড়ার পাত্রী নই। চিনা জোঁকের মতো ওর পিছে লাইগা আছি। আমি একবার ওয়াশরুম গেসে। বের হইয়া দেখি পাখি ফুরুত। মিষ্টি খালাকে জিগাইতেই কইল, ও একটু বাইরে গেসে। আমি সাথে সাথে দৌঁড় দিলাম বাইরে। ঐ যে সাইকেলে করে যাইতেসে। আমি উসাইন বোল্টের মতো দৌঁড় দিলাম। দেখলাম ও স্কুলের পথ ধরসে। তাই থাইমা একটু নিঃশ্বাস নিলাম। তারপর আবার আগাই গেলাম। স্কুলে আইসা দেখে ও নাই। গেল কই? মনে হয় আরো সামনে। আমি হাঁটতে লাগলাম। কিছুদূর যাইতেই ময়ূরাক্ষী নদী পড়ে। আগে আসছিলাম। ওখানেই ওরে পাইলাম। দেখলাম একটা ছেলের সাথে সামনাসামনি ছাউনিতে বইসা আছে। আমি একটা ঝোপের পেছনে লুকাই ওদের কথা শুনার চেষ্টা করলাম। ধুর ছাতা কিছুই শোনা যাইতেসে না। তাও কান পাইতা রাখলাম।
(ছাউনিতে)
মুন একটানা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। ছেলেটা উসখুস করছে। কিছু বলছে না দেখে মুন বলল, আপনাকে কি দুলাভাই পাঠিয়েছে?
– কে? আ…
– শসসসসস্। দুলাভাইয়ের নাম বলা বারণ। …… আপনার নাম?
– রেদোয়ান।…………এক মিনিট…
ওর ফোন আসতেই রিসিভ করল। ফিসফিস করে বলল, এত পিচ্চি মেয়ে পাঠিয়েছিস আমার সাথে প্রেম করার জন্য!? মুন উদাসমুখে নদীর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার বন্ধুও কিন্তু আমার বয়সী মেয়ের প্রেমেই হাবুডুবু খাচ্ছে।
চলবে…
#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_১৭
#সাহেদা_আক্তার
মুন উদাসমুখে নদীর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার বন্ধুও কিন্তু আমার বয়সী মেয়ের প্রেমেই হাবুডুবু খাচ্ছে। রেদোয়ান অপ্রস্তুত হয়ে কেশে বলল, ইয়ে মানে…
– আমি এখানে প্রেম করতে আসিনি। এসেছি আপনার বন্ধুর জন্য। সব নিশ্চয়ই জানেন। ছোঁয়া সন্দেহ করছে। তাই আপনার সাহায্য লাগবে। বেশি কিছু করা লাগবে না। আপনাকে আমার সাথে নিয়ম করে একঘন্টা চ্যাট করতে হবে আর ফোনে মাঝে মধ্যে কথা বলতে হবে। এই…
– আচ্ছা, আমি ভেবে দেখবো।
– এটা হল আমার নাম্বার। যদি রাজি থাকেন তো জানাবেন। বাই।
মুন বেরিয়ে এল ছাউনি থেকে। রেদোয়ান ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছে করবে কি না। যেমন বাচ্চা ভেবেছিল তেমন মনে হল না। বরং স্ট্রেট ফরোয়ার্ড।
আমি দেখলাম মুন বাড়ির দিকে রওনা দিসে। কি কথা হইল কিছুই শুনতে পাইলাম না। কচু, শুধু দৌঁড়াই আইসা বলটাই পড়ল। ও বাড়ি পৌঁছানোর দশ মিনিট পরে আমি বাড়ি ঢুকলাম। গিয়া দেখি গানের স্যার আসছে। আমিও গিয়া বসলাম। বার বার ওর দিকে তাকাইলাম। কিন্তু ওর মুখোভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হইল না। কি চলতেসে ওর মাঝে! জানা দরকার।
সন্ধ্যায় মিষ্টি খালা সেই লেভেলের চিৎকার দিয়া কইল, মুন…… ফ্রিজের গাজর কই? মুন আইসা কইল, আমি জানি না। মিষ্টি খালা কোমরে হাত দিয়া কইল, তুই ছাড়া এখানে গাজর পাগল কে আছে? এমন সময় দুই হাতে দুইটা গাজর নিয়া ছাদ থেকে নামতেসি আর মুনের কথা চিন্তা করতেসি। ওদের সামনে আইসা আনমনে একটা গাজরের অর্ধেকে কামড়াই মুখে নিয়া ফেললাম। ওরা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল কইরা তাকাই আছে। আমার খেয়াল হইতেই কইলাম, কি হইসে? মুন কাছে এসে আমারে জোরে চিমটি কাটল। আমি চারশো চল্লিশ বোল্টের একটা চিক্কুর দিয়া ওর থেকে তিন হাত সইরা কইলাম, চিমটি দিস ক্যান?
– আমি স্বপ্ন দেখতেসি কি না তাই দেখতেছিলাম।
– তাইলে নিজেরে চিমটি কাট। উফ!!! কি জোরে চিমটি দিসে। লাল হই গেসে।
মিষ্টি খালা বলল, তুই কবে থেকে গাজর খাস? আমি ভাবতেসিলাম তখনও। তাই হঠাৎ মুখ থেইকা বাইর হই গেল, প্রেম কবে থেকে? চিন্তার বিষয়। মিষ্টি খালা আর মুন একে অপরের দিকে তাকাইলো। আমার খেয়াল হতেই বললাম, কি যেন বলতেছিলা গাজরের কথা? জানো কতদিন গাজর খাই নাই। তাই সব সুদে আসলে মিটাই নিসি।
– মানে?
– যতগুলা গাজর ছিল সব পেটে চালান করসি৷ কি যে ভালো লাগতেসে। কিন্তু এত গাজর খাইও জট ছাড়াইতে পারলাম না। বুদ্ধিতে জঙ ধরে গেছে।
মিষ্টি খালা অবাক হয়ে কইল, এক কেজি গাজর!!!!! মুন তার কাছে গিয়া কইল, আম্মা ওরে মনে হয় কোনো গাজর পাগল ভূতে ধরসে। এখনই ওঝা ডাকো। আমি ধমক দিয়া কইলাম, মুন, তুই চুপ করবি না তোর ঘাড় মটকামু।
আমি রুমের দিকে এগিয়ে বিড়বিড় করতে লাগলাম, এই মেয়ে প্রেম করতেসে। কিন্তু কতদিন হইতে পারে। কে ছেলেটা? জানা দরকার। যাইতে যাইতে ডান হাতেরটা শেষ করে বাঁ হাতের গাজরে কামড় দিলাম। ক্রাশরে ছাড়লাম কিন্তু গাজররে ছাড়তে পারলাম না।
.
.
.
.
ছয় বছর পর……
– মুন, ওঠ।
– আরে ঘুমাতে দে।
– মুন কি বাচ্চি। উঠবি না পানি ঢালমু।
– যা তো। কালকে কতদূর জার্নি করে আসছি। এখন ঘুমাইতে দে।
– এ্যাঁহ, নিজেই খালি জার্নি করে আসছে। আমি তো উইড়া উইড়া আসছি। কেমনে যে তোরে রেদোয়ান ভাই পছন্দ করছিল। আল্লাহ জানেন। উঠ কইতেসি।
হঠাৎ ওর ফোনের রিংটোন বাইজা উঠল। ও হাঁতড়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল, হ্যালো। সাথে সাথে ওর ঘুম উধাও। ও দ্রুত বিছানা থেকে নাইমা বলল, আমি এখুনি আসছি। জাস্ট আধা ঘন্টা। ফোন বিছানায় ছুইড়া মাইরা ওয়াশরুমে দৌঁড় দিল। আমি কল লিস্ট চেক কইরা দেখলাম রেদোয়ান ভাই ফোন দিসিলো। আমি হতাশ হই বললাম, আমি এতক্ষণ গুতাই পারলাম না। আর রেদোয়ান ভাইয়ের এক কলেই মেয়ে ওয়াশরুম! হায়রে!!! বোইনের কোনো মূল্য নাই জামাইর কাছে। আমারে কেউ এক চামুচ পানি দে ডুইবা মরি।
কালকে ভার্সিটি হল থেকে দুইজন আসছি। আমরা একই ভার্সিটিতে ভর্তি হইসে। আমার সাথে সেই লেভেলের ধুমাইয়া পড়াশুনা করছিল ভর্তির আগে। তাই আজকে দুইজনে একসাথে। হলেও একসাথে থাকি তবে সাবজেক্ট আলাদা। আমি সাইকোলজিতে পড়তেসি। মিষ্টি খালা অবশ্য বলছিল মেডিকেলে ট্রাই করতে যেহেতু আমার রেজাল্ট অনেক ভালো ছিল। কিন্তু কেন জানি করি নাই। সাইকোলজিতে চলে গেলাম। আমার জন্য পার্ফেক্ট সাবজেক্ট। বলে না রতনে রতন চিনে, আমি চিনসি পাগল।
আমি ধীরেসুস্থে খাবার টেবিলে আইসা বসলাম। সবাই মুনের দিকে তাকাই আছে। আমিও যোগ দিলাম। সে গোগ্রাসে গিলতেসে। মনে হইতেসে কয়েক বছর না খাইয়া আছে। খাওয়া শেষ কইরা পানি খাইতে খাইতে আমাদের দিকে ইশারা করে জিগাইল, কি? খালু বললেন, এমন করে খাচ্ছিস কেন? আমি গালে হাত দিয়া উদাস ভঙ্গিতে রুটি নিতে নিতে কইলাম, জামাইর ডাক পড়সে, তাই এমন রাক্ষসের মতো গিলতেসে। মনে হয় রেদোয়ান ভাই ওরে খাওয়াইবো না।
– ছোঁয়া…… আমি আসছি।
মুন বের হই যাইতেছিল। আমি কইলাম, রেদোয়ান ভাইয়ের পকেট খালি করবি বলে পার্সটা রেখে যাচ্ছিস? মুন মুখ বোঁচা করে পার্সটা নিয়া দৌঁড় দিল৷ আমি মুখ কালো কইরা রুটি চিবাইতেসি আর ভাবতেসি, আমার আর এ জীবনে হইবো না।
আমি রুমে এসে বিছানায় শুইলাম। ডান হাতে একটা ইয়া মোটা গাজর। এই ছয় বছরে যে কতো গাজর খাইসি!!! তার হিসাব একটা খরগোস করতে করতেও হার্ট অ্যাটাক করবো। আমি সেই রকমের মোবাইল টিপতেসি। টিইপ্পা হের রস কষ সব বাইর কইরা ফেলতেসি। মাঝে মধ্যে মনে হয় মোবাইলের মুখ থাকলে কইতো, বোইন পায়ে পড়ি, আর টিপিস না। আমার শরীরের আর কিছু আস্তো নাই। ওরে আমারে কেউ বাঁচা। এমন সময় ম্যাসেজ আসলো। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খুললাম।
‘ ম্যাসেজ দাওনি কেন? বাড়িতে পৌঁছে ম্যাসেজ দিতে বলেছি না। এতটা মন ভোলা হলে চলে? সাবধানে থাকবে। আর মাত্র কয়টা দিন। লাভ ইউ।
~ লাভার ভ্যাম্পায়ার’
আমি ফোনটা নামাই রাখলাম। ছয়টা বছরে দশটা সিম বদলাইছি, পঁচিশটার উপরে নাম্বার ব্লক করসি। কিন্তু এই ভ্যাম্পায়ারের পিছু ছাড়াইতে পারি নাই। কি করে যেন আমার নাম্বারটা তার কাছে পৌঁছাই যায়। মাঝে মধ্যে ভাবি, আমার ফোনে কোনো গোপন এ্যাপস আছে নাকি যার মাধ্যমে সে সব জানতে পারে! সকাল বিকাল টাইম টু টাইম ম্যাসেজ। খাইসি কি না, পড়তেসি কি, কেমন আছি। সাথে একটা বাক্য, আই লাভ ইউ। কিছু বলার না থাকলেও এই লাইনটা প্রত্যেকদিন আসবেই। ক্লান্ত হই গেলাম৷ এখনো পর্যন্ত বুঝতে পারলাম না কে এটা। একটা দিনও মিস যায় নাই যে সে আমারে সকালে কল দিয়া ঘুম থেকে জাগায় নাই। এখন ভাবি, কে হতে পারে যে আমারে এক মুহুর্ত ভুলতে পারে না। আমিও তো পারি নাই, আমার চেরি ফলরে ভুলতে। মাঝরাতে মাঝেমধ্যে জাইগা গেলে হঠাৎ ওর কথা মনে পড়ে। তখন দুই ফোঁটা পানি পড়া যেন অভ্যাস হয়ে গেসে। আমি বোতামটা ধরে চেরির চিন্তায় ডুইবা গেলাম। তখনই মিষ্টি খালা বলল, বের হবি না?
– হুম। রেডি হচ্ছি।
আমি উইঠা পড়লাম। বিয়ার শপিং করতে হবে। মুন পাগলিটার বিয়া। রেদোয়ান ভাইয়ের সাথে। ছয় বছর ধরে প্রেম করতেসে। প্রথমে অস্বীকার করছিল। কিন্তু একদিন আমার কাছে হাতে নাতে ধরা খাই শিক্ষা হইসে। বেটি আমারে একটা থ্যাংকসও জানাইলো না। আমি মিষ্টি খালা আর খালুরে বিয়ার জন্য রাজি করাইসি। এখন তো আমারে চিনবে না। সব দোষ রেদোয়ান ভাইয়ের। দাঁড়া বিয়ার দিন কোটি টাকা দিলেও জুতা ফেরত দিমু না।
মিষ্টি খালাকে নিয়া বাইর হইতেই আরেক ঝামেলা খাঁড়া। বাপরে!!! ঝামেলার শেষ নাই। মিষ্টি খালা হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছো রাতুল? বেক্কলটা দাঁত কেলাই বলল, ভালো আন্টি। আপনি কেমন আছেন?
– ভালো।
সে আমার দিকে তাকাই গলায় মধু ঢাইলা বলল, কেমন আছো, ছোঁয়া? আমি তিতা গলায় কইলাম, নিমপাতার রস খাইলে যেমন ভালো থাকে তেমন। আমার এমন কথায় ও কিছু মনে করল না। এতগুলা বছরে কমসে কম দশবার প্রপোজ করসে। একবারও সংসদে বিল পাস হয় নাই। তবুও পিছু ছাড়ে না। আমি আসলে কেমনে কেমনে টের পাই যায়। পরদিন আসি এক পায়ে খাঁড়া। আর ভালো লাগে না।
আমি বললাম, খালা চলো। রাতুল কইল, আমিও ঐদিকে যাইতেসি। চলেন একসাথে যাই। আমি ঘর থেকে আমার স্কুটিটা বের করলাম। যদি আর একবার বলসে আমাদের সাথে যাবে তো এক পা আমার স্কুটির সাথে বাঁইধা টান দিমু। আমি স্কুটিতে উইঠা মিষ্টি খালার দিকে তাকাই আছি। মিষ্টি খালা আমার মতিগতি বুঝতে পাইরা বলল, তোমার সাথে পরে কথা হবে। আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। রাতুল মুখ কালো করে বলল, আচ্ছা, আন্টি। সাবধানে যাবেন আর ছোঁয়া……। আরও কিছু বলার আগে ওকে ধুল খাওয়াইয়া বের হই গেলাম।
আজকে কিছু শপিং করলাম। ইস্!!!! কত সুন্দর সুন্দর শাড়ি!!! ইচ্ছা করতেছিল সব নিয়া আসি। আমি গায়ে হলুদের জন্য একটা জামদানি শাড়ি পছন্দ করছিলাম লাল আর সাদা রঙের। সেই সুন্দর। কিন্তু এতো দাম যে শুইনাই আর দ্বিতীয় বার তাকাই নাই৷ ইস্!!! শাড়িটা এতো সুন্দর ছিল!!! যাগ্গে। কি করা। কেনা কাটা করে চইলা আসলাম দুইটার দিকে। এসে ফ্রেশ হতে চইলা গেলাম। কাউয়া সং এখন আর নাই। কয়েক বছরে গানের স্যার ওটাকে অনেক পরিশ্রম করে কোকিল সংএ পরিণত করতে সক্ষম হইসে। কোকিল কন্ঠে গোসল কইরা বাইর হই দেখি বিছানায় একটা প্যাকেট। কৌতুহলী হইয়া ভেতরে উঁকি দিলাম। একটা শাড়ি। বের করতেই আমি খুশিতে ব্যাঙাচীর মতো লাফাইতে লাগলাম। সেই লাল সাদা জামদানি শাড়িটা। আমি কিছুক্ষণ শাড়িটা নিয়া লাফাই হঠাৎ চোরের মতো চোখ সরু কইরা কইলাম, এটা এখানে আইলো কেমনে!
চলবে…