আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥,পর্ব_১০,১১
সাহেদা_আক্তার
পর্ব_১০
খুশি মন থেকে উপচাইয়া উপচাইয়া পড়তেসে। আমি সুন্দর করে একটা লাল জামা পরে রেডি হইয়া নিলাম। একটু সাজুগুজুও করলাম। ক্রাশের সাথে দেখা করতে যামু বলে কথা।
আমি মার্কেটের রাস্তায় না গিয়া কলেজের রাস্তা ধরলাম। রিদি জিগাইলো, ঐদিকে কই যাস?
– একটা জায়গায় যামু।
– কোথায়?
– গেলে দেখবি।
আমরা দেড়টার সময় কলেজ গেটে পৌঁছাই গেলাম। রিদি বলল, এখানে আসলি কেন? আমার চোখ তখন ক্রাশরে খুঁজতেসে। বললাম, দেখতে আসছি। কলেজটা নাকি অনেক সুন্দর। ভাবতেসি এখানে পড়মু। মনে মনে কইলাম, ধুর বাবা, এত বড় কলেজ, ক্রাশরে দেখতেই পাইতেসি না।
এমনসময় রিদি বলল, দেখ, ওখানে কিসের ভীড়। কারো কিছু হইলো নাকি!? চল তো দেখি। রিদি আমারে টাইনা নিয়া গেল। আমি অনিচ্ছার সত্ত্বে গেলাম। দুইজনে ভীড় ঠেলে ঢুকতেই আমি থমকে গেলাম। আমার হূদয় ভেঙে শতটুকরা হইয়া গেল। চোখের পানি গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষা। এ আমি কি দেখতেসি!? এইটা দেখার জন্য আমি আজকে আসছি? আমি আগাইতে পারলাম না। চোখের পানির প্রথম ফোঁটা পড়ার আগেই ভীড় ঠেলে বেরিয়ে দৌঁড় দিলাম বাসার দিকে। তখনই সবার উল্লাস ধ্বনি। আমি কান চেপে ধরে চলে আসলাম৷ আমি শুনতে চাইনা।
বাসায় এসে সোজা নিজের রুমে। আম্মা অনেকবার ডাকল। আমি দরজা খুললাম না। আমি দরজার পাশে ফ্লোরে বইসা আছি। হাতে ক্রাশের ছবি। একদিন চুরি কইরা নিয়ে আসছিলাম ছবিটা। ইচ্ছা করতেসে ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলি। কিন্তু সাহস হইল না। কেমনে পারল সে? তাহলে তার ক্রাশ চাঁদনীই ছিল? আজকে চাঁদনী ক্রাশরে প্রপোজ করসে আর সে ফুলটা হাতে নিয়ে নিসে। তারমানে সে প্রপোজ একসেপ্ট করসে৷ হায় রে!!! আমি কোন স্বপ্নের জগতে আছি? নাহ্ আর না। বহুত পাগলামি করসি আর না। তবুও খুব কাঁনদন আসতেছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ইচ্ছে মতো কাঁনলাম। কাঁনতে কাঁনতে ভিজা বিড়াল হই গেলাম। মনটা হালকা হইতেই ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে বাইর হইলাম। দুপুরে খাই নাই। আম্মা নিজের রুমে। আব্বা মনে হয় নাস্তা আনতে গেসে। আমি বের হয়ে দেখলাম টেবিলে বাটিতে মিষ্টি রাখা। আমি বাটিটা নিয়ে সোফায় বসে টিভি ছেড়ে দিলাম। মাত্র একটা মিষ্টি মুখে দিয়ে আরেকটা নিসি তখন আম্মা টিভির আওয়াজে রুম থেকে বের হয়ে কইল, খালি পেটে মিষ্টি খাইতেছিস কেন?
– আম্মু এগুলা কিসের মিষ্টি?
– ভাবিরা কয়দিন পর লন্ডন চলে যাবে। ওখানে নাকি ছেলেকে পড়াবে। তাই মিষ্টি দিয়ে গেছে।
শুনে আর দ্বিতীয় মিষ্টিটা গলা দিয়ে নামল না। ওটা মাঝ পথেই আইটকা গেল। আম্মা বলতেই আছে, ওর বাবা লন্ডনে থাকে। ছেলে ভালো পড়াশোনা করছে। এখন শুধু রেজাল্ট দিলেই লন্ডনে মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে দেবে। আমি তো…… আম্মা আর কথা শেষ করতে পারল না। বাটি ভাঙার শব্দে চমকে উঠল। আমার হাত থেকে মিষ্টির বাটি পইড়া সাত আট টুকরা হই গেসে। রসে ফ্লোর মাখামাখি। আমি আস্তে করে কইলাম, সরি, আম্মু। তারপর গিয়া রুমের দরজা বন্ধ কইরা দিলাম। আম্মা বহুবার ডেকে কইল, ছোঁয়া কি হইসে তোর? দরজা খোল। আমার উত্তর দেওয়ার সময় নাই। সারাদিন প্রায় না খাওয়ার মতো। এখন মিষ্টি পড়াতে বমি হইতেসে। আমি বমি করে ওয়াশরুম থেকে বের হইলাম। কেন জানি মাথা ঘুরাইতেসে। সব আবছা আবছা। আমি শুয়ে পড়লাম বিছানায়। তারপর আর কিছু মনে নাই।
.
.
.
.
চোখ খুলে দেখি আম্মা আব্বা আমার দুইপাশে বইসা আছে। পায়ের দিকে তাকাই দেখলাম ব্যান্ডেজ। বাটির ভাঙা কাচে কখন পা কাটছে খেয়াল নাই। রুমের দরজা ভাঙা। হাতে স্যালাইন। শরীর দুর্বল। আমি উইঠা বসতে লাগলে আব্বা আম্মা দুজনে উদ্বিগ্ন হইয়া গেল। আমারে হেলান দিয়ে বসাইল। আম্মা জিজ্ঞেস করল, কেমন লাগছে?
– শরীর দুর্বল লাগছে।
– সারাদিন না খাওয়া। লাগবে না।
– কি হইসে আম্মু? দরজা ভাঙা।
– কি আর হবে? তুই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি। তুই এত ডাকেও যখন সাড়া দিচ্ছিলি না তখন ভয় পাই গেসিলাম। তোর আব্বু এসে দরজা ভেঙে দেখে তুই বিছানায় পড়ে আছিস। তারপর ডাক্তার ডেকে নিল। ডাক্তার বলছে না খেয়ে শরীর দুর্বল হয়ে এই অবস্থা।
আম্মা বাচ্চাদের মতো কাঁদতে কাঁদতে বলল, কি হইসে তোর। এমন অনিয়ম করিস কেন? তোকে নিয়ে কত চিন্তা হয়। তোর কিছু হয়ে গেলে আমরা কি নিয়ে বাঁচবো। আমি আম্মার চোখের পানি মুইছা কইলাম, ওরে আমার কিউট আম্মু রে, এভাবে কেউ কাঁদে? আব্বা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, কিছু কি হইসে? আমি বললাম, কই না তো। আসলে আজকে কেন জানি খুব মন খারাপ হইসে তাই এমন… আব্বা আমি কথা শেষ করার আগেই বলল, বুঝলে শিমু, আমাদের মেয়ে অনেক বড়ো হয়ে গেছে। দুঃখ লুকাতে শিখে গেছে। এখন কিছু খাওয়াও। আমি কিছু বললাম না। আম্মা বলল, তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো। আমি আজকে ওর কাছে থাকবো। আব্বা চলে গেল। আম্মা গেল খাবার আনতে। আমার চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। মনে মনে বললাম, কিসের ক্রাশ? কার জন্য নিজের ক্ষতি করতেসি? আমি আব্বা আম্মার আদরের একমাত্র মেয়ে। আমাকে নিয়ে তাদের জগত। আর আমি কিনা এমন একজনকে নিয়ে জগত গড়তেসি যে কখনো আমার ছিলই না। আমি নিজের চোখের পানি মুছে বললাম, আজ থেকে আমার জগত আমার আব্বু আম্মু। আর কেউ না।
আম্মু খাবার এনে খাইয়ে দিল। পা মেঝেতে রাখতে পারতেসি না। ভালোই কাঁটছে। রক্তে বিছানার চাদরও ভিজে গেসিল। আম্মা ওটা পাল্টাইলো। আমি ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। আম্মাও আমাকে জড়াই ধরে শুয়ে পড়ল। আমার চোখে ঘুম নাই। অন্ধকারে বাইরে থেকে আসা আলো খেলতেসে, ছুটে বেড়াইতেসে জানালা থেকে দেয়াল পর্যন্ত। আমি তাকাই আছি। আমার চোখে ভাসতেসে ক্রাশের সাথে দেখা হওয়ার সময়ে ওর লাল হয়ে থাকা মুখখানা। তারপর আর ভাবলাম না। ডুব দিলাম ঘুমের সাগরে।
.
.
.
.
সকালে দশটায় ঘুম থেকে উঠলাম। উঠতে ইচ্ছে করতেসিলো না। তাও উঠলাম। কালকের কথা মনে পড়তেই কেন জানি পাগলের মতো হাসলাম। তারপর ফ্রেশ হইয়া মাথা আঁচড়ানোর জন্য চিরুনিটা নিলাম। চোখ পড়ল বোতামটার দিকে। একবার ভাবলাম খুইলা ফেলি। আবার ভাবলাম না থাক। মাথায় একটা বেণী বানিয়ে খোঁপা করে ফেললাম। শরীরের আড়মোড়া ভেঙে মাত্র রুম থেকে বের হইতেসি এমন সময় দেখলাম বসার ঘরে আন্টি, ক্রাশ আর একটা লোক বসা। বোধ করি লোকটা ক্রাশের বাবা। ধুর, দুইমাস হইয়া গেল এখনও ছেলেটার নামই জানি না। এখন আর ওর নাম ক্রাশ না। কি ডাকমু? হ্যাঁ, চেরি ফল। তাই ভালা। আমি আসতেই আব্বা আমারে ডাকল৷ আমি এসে বসতেই লোকটা বলল, কেমন আছো? আমি উত্তর দিলাম, ভালো। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে চেন? আমি চেরির দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললাম, ওনার বাবা। আঙ্কেল হেসে বলল, একদম ঠিক। কালকে দেশে এসেছি। তোমার আন্টির কাছে তোমার গল্প শুনতে শুনতে আর তোমাকে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। আমি হাসলাম। ক্রাশ থুক্কু চেরি ফল আমার দিকে তাকাই আছে। হয়ত ভাবতেসে আমি কিসু কমু। কইলাম, আঙ্কেল, আমার না একটু কাজ আছে। আমি রুমে যাচ্ছি।
– আচ্ছা।
আমি রুমে আইসা বিড়বিড় করতে লাগলাম। আম্মার ফোন নিয়া কানে এয়ারফোন গুজতে গুজতে কইলাম, মনে হচ্ছে যেন বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে আসছে। আমি গান শুনতে লাগলাম। গানও ভালো লাগতেসে না। আমি এয়ারফোন খুলে শুনলাম আম্মা বলতেসে, এখনো তো সময় হয়নি। আমরা ভেবে দেখবো। ও… কালকে আমার মেয়ের জন্মদিন। আপনারা আসবেন কিন্তু। হয়ত বেশি বড়ো হবে না। ছোটখাটো করে একটু করবো। এই। ওনারা রাজি হয়ে গেলেন। ওনারা চলে যাওয়ার পর আমি আমার ফ্রেন্ডদেরকে ইনভাইট করলাম। আমার কেন জানি চেরি ফলকে ইনভাইট করাটা ভালো লাগলো না।
বিকালের দিকে আম্মু বলল, আমরা একটু বাইরে যাচ্ছি। আজকে হয়ত নাও আসতে পারি। তুই এক কাজ কর। রিদিকে বল এসে থাকতে।
– কোথায় যাচ্ছো?
– তোর নানাবাড়ি।
– হঠাৎ?
– শুনলাম তোর নানুর শরীর খারাপ।
– আমিও যাবো।
– আমরা যাবো আর চলে আসবো। অবস্থা খারাপ দেখলে থাকবো।
আমার কেন জানি যেতে দিতে ইচ্ছে করছে না। তবুও জোর করলাম না। রিদিকে ফোন করে আসতে বললাম। রিদি বলল, আধা ঘন্টা লাগবে। আমি বললাম, আচ্ছা। চারটার দিকে আব্বা আম্মা বের হই গেল। যাওয়ার আগে আব্বা বলল, তোর আম্মুর ফোনটা রেখে গেলাম। দরকার হলে ফোন দিস।
– আচ্ছা।
আব্বা কইল, ভালো থাকিস। সাবধানে থাকিস। আমি হাসলাম। আব্বা আম্মা বের হই গেল। আমি ফোন টিপতে বইসা পড়লাম। পনের বিশ মিনিট পর কলিংবেল বাজল। আমি দরজা খুলে বললাম, এতক্ষণ লাগে? এ্যাঁ!!!! কেউ নাই। নিচে তাকাই দেখলাম একটা বাক্স। আমি বাক্সটা নিয়ে দরজা মেরে দিলাম। টেবিলে রেখে দেখলাম, উপরে আমার নাম দেওয়া। একবার ভাবলাম কে দিল এটা? আমি মাত্র বক্সটা খুলব তখন আবার কলিংবেল বাজল। আমি বক্সটা আম্মুদের রুমে রেখে দরজা খুললাম। রিদি ভেতরে ঢুকে বলল, কি অবস্থা? প্রিপারেশন কেমন?
– কিসের?
– তোর বার্থডের।
– আর অবস্থা।
– কেন? কি হয়েছে?
– কেন জানি ভালো লাগছে না। আব্বু আম্মু না থাকলে ভালো লাগে না।
– ইট’স ওকে। রিদি যখন এসে গেছে তখন আর চিন্তা নেই।
এই ওই কইরা সন্ধ্যা রাত কাটল। দশটার মধ্যে খাইয়া শুয়ে পড়লাম। ঘুম আসতেছে না। রিদি তো শুতেই নাক ডাকতে শুরু করসে। হঠাৎ বাক্সটার কথা মনে পড়ল। আম্মুর রুমে গিয়া বাতি জ্বালাই বাক্সটা খুললাম। খুলে অবাক হইলাম।
চলবে…
#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_১১
#সাহেদা_আক্তার
হঠাৎ বাক্সটার কথা মনে পড়ল। আম্মুর রুমে গিয়া বাতি জ্বালাই বাক্সটা খুললাম। খুলে অবাক হইলাম। খুব সুন্দর একটা নীল সুতির শাড়ি। দেখতে জামদানির মতো। তারসাথে একজোড়া নুপুর আর এক গাছি নীল কাচের চুড়ি। সাথে একটা উড়া চিঠি পাইলাম।
‘ ছোঁয়া, এগুলো তোমার জন্মদিনের গিফট। আমার পক্ষ থেকে। আমি কে? জানতে চাইলে আজকে রাত সাড়ে এগারটায় ছাদে আসো। ও হ্যাঁ, তোমার নীল জামাটা আমার কাছে। তোমার প্রিয় নীল জামা। যদি জামাটা পেতে চাও তবে শাড়িটা পরে সুন্দর করে সেজে আসবে যেভাবে তুমি তোমার মনের মানুষটার জন্য সাজো।’
কে এটা? আমার জামা চোর নাকি!? আমার সাধের নীল জামাটা সেলাই করতে দিয়েছিলাম টেইলারের কাছে। কোন পোলায় নাকি নিয়ে গেছে আমার নাম করে। আমার বিশ্বাস হয় নাই। জামাটার জন্য আমার বহুত দুঃখ হইসে। কিন্তু এই জামা চোর হঠাৎ আমাকে এত সুন্দর শাড়ি দিল ক্যান! সে জানলই বা কি করে আমি চেরি ফলের জন্য সেজেগুজে বের হতাম! ভাব্বার বিষয়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, পনে এগারটা।
জামার টানে হোক বা কৌতুহলে হোক আমি রেডি হলাম। শাড়িটা সেই রকম সুন্দর। ইস্! আমারই নজর লাগি যাইতেসে। কানে নীল ছোট দুল পড়লাম। চোখে কাজল দিলাম। হাতে চুড়ি আর পায়ে নুপুর পইরা বাইর হলাম। তাড়াহুড়ায় চুল বাঁধি নাই। আমি কেন যে এত সাজলাম তাও জানি না। হয়ত চোরের শর্ত মানার জন্য যাতে আমার সাধের জামাটা দিয়ে দেয়?
ছাদে আইসা থমকে গেলাম। ছাদে লাভ শেইপ করে মোমবাতি জ্বালানো। তার মাঝে C + A দেওয়া। সি না হয় আমি। এ টা কেডা? আমি এদিক ওইদিক তাকাইলাম। কেউ নাই। যেই না আমি ফিইরা যামু কে যেন আমার চোখ বাঁইধা দিল। আমি কইলাম, কে? গলা একটু কাঁইপা উঠল। ভয় লাগতেসে। নিজে মনে মনে নিজেরে গালি দিতেসি। খাই দাই কাম ছিল না? একটা চোরের কথায় ছাদে চলে আসলাম। আমি কে কে করতেসি দেখে চোখ বেঁধে দেওয়া মানুষটি শসসসস্ করে শব্দ করল। তারপর আমাকে কোনদিকে টেনে নিয়ে দাঁড় করাইলো। আমার মনে হল আমাকে পর্যবেক্ষণ করতেসে। তারপর আমার খুব কাছে এসে আমার দুই গালে চুমু দিয়ে দিল। আমি বেকুব হয়ে গেলাম। আমার সারা শরীর কেঁপে উঠল। আমি চোখ থেকে কাপড়টা সরাতে যাবো তখন সে আমার দুইহাত পেছনে মুড়ে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলল। আমি ভয় পাওয়া গলায় আবার কইলাম, কে? সে কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, লাভার ভ্যাম্পায়ার। আমি কিছু বলার আগেই সে আমার ডান পাশের কাঁধের চুলগুলো সরিয়ে চুমু দিয়া দিল। আমি ওখানেই শ্যাষ। মনে হইল সারা শরীরে কারেন্ট বয়ে গেছে। এমন অনুভূতি জীবনেও হয় নাই। তারপরই চিৎকার দিতে গেলাম। সে মুখ চাইপা ধরল। আমি ব্যাথায় কোকাইতেসি। মনে মনে বলতেসি, সত্যিই কি ভ্যাম্পায়ারের কবলে পড়লাম নাকি! মানুষ হইলে তো কামড় দিতো না। আরে হালার ভ্যাম্পায়ার ছাড়। একটু পরে সে ছাইড়া দিল। তারপর হঠাৎ পাগলের মতো আমার ঘাড়ে গলায় চুমু দিতে লাগল। আমি সহ্য করতে না পাইরা ছটফট করতেসি। সে আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, লাভ বাইট দিয়ে সিল মেরে দিলাম। আজকে থেকে তুমি শুধু আমার। আর কারো না। এই চিহ্নই তোমাকে আমার কথা মনে করিয়ে দেবে। আমার অপেক্ষায় থেকো। আই লাভ ইউ মাই লাভ বার্ড। হ্যাপি বার্থডে ছোঁয়া। নিমিষেই তার ছোঁয়া থেকে মুক্ত হয়ে গেলাম। দ্রুত চোখ খুইলা দেখি কেউ নাই। মোমবাতি গুলা আগের মতোই জ্বলতেসে। ঘাড়ে হাত দিলাম। ইস্ রে। রক্ত বের হইসে মনে হচ্ছে। হাত দিতে পারতেসি না। দ্রুত সিঁড়ির দিকে ছুটলাম। ব্যাটা বাটপার। আমার অবস্থা খারাপ করে দিসে। সিঁড়ি দিয়ে উঁকি দিলাম। কিন্তু অন্ধকারে কাউকে দেখতে পাইলাম না। হঠাৎ কুকুর একটা ডাইকা উঠল। সাথে সাথে আমার বুক কাঁইপা উঠল। সত্যিই ভ্যাম্পায়ারের কবলে পড়লাম না তো!!!
আমি দৌঁড়ে বাসায় ঢুকলাম। দরজা মেরে আম্মুর রুমে চলে গেলাম। আয়নার সামনে যেতেই আঁতকে উঠলাম। ভ্যাম্পায়ার না ছাই। আস্তো একটা মানুষ আমারে কামড় দিসে। আবার কয় নাকি লাভ বাইট। লাভ বাইটের খ্যাঁতা পুড়ি৷ একেবারে রক্ত বাইর করে ফেলসে। আমি মলম লাগাইতে লাগাইতে কাঁনতেসি আর কইতেসি, এবার আমার কি হইবো। আমি সবার সামনে কেমনে যামু!? কে আমার এত বড় সর্বনাশ করলো। এত বড় আকামটা কেডা করল? যদি ঐ হালার লাভার ভ্যাম্পায়াররে পাই আমি তার রক্ত চুইষা খামু। আম্মা গো……। আমি সব খুলে গুছাইয়া রাইখা নাক টানতে টানতে শুইয়া পড়লাম।
.
.
.
.
সকালে ঘুম থেকে জাইগা দেখি রিদি আমারে কোলবালিশ বানাই ফেলসে। আমি ঠেইলা ওরে সরাই দিলাম। সে অপর পাশ ফিইরা শুইয়া পড়ল। কালকে রাতের কথা মনে পড়তেই ঘাড়ে হাত দিলাম। বাপরে!!!! কি ব্যাথা। এখনো হাত দিতে পারতেসি না। ফুইলা ঢোল হই আছে। আমি ফ্রেশ হয়ে বের হতেই আম্মা ফোন দিল। আমি দৌঁড়ে গিয়া ধরলাম।
– কেমন আছো আম্মু?
– ভালো। তুই?
– আছি আর কি। (মনে মনে) আম্মা গো একটা মানুষ নামের ভ্যাম্পায়ার থুক্কু ভ্যাম্পায়ার নামের মানুষ তোমার মেয়ের সর্বনাশ করে দিসে।
– রিদি আছে না?
– হ্যাঁ। পড়ি পড়ি ঘুমাইতেসে।
আম্মা আমার কথা শুইনা হাসল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, নানু কেমন আছে? আম্মা মলিন মুখে জবাব দিল, আছে ভালো।
– নানা ভাই কিছু বলসে?
– নাহ্, তোর মামা, নানা কেউ কথা বলে নাই। তোকে বলছি না তোর নানার জেদ বেশি। সেই পুরানো রাগ এখনও মনের মধ্যে পুষে রাখসে।
– ইট’স ওকে আম্মু। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমরা কখন আসবা?
– নয়টায় রওনা দিবো।
– আচ্ছা। তাড়াতাড়ি আসবা কিন্তু, আমার ভালো লাগতেসে না।
– ওকে, বাবা।
– হ্যালো, ছোঁয়া মা।
– হ্যাঁ, আব্বু বলো।
– তোর কি কিছু লাগবে? কিছু আনবো?
– উম…… জিলাপী এনো।
– আচ্ছা। সাবধানে থাকিস। অপরিচিত কেউ আসলে দরজা খুলবি না। ভালো মেয়ের মতো থাকবি। সময় মতো সব কাজ করবি।
– এমন করে বলছ যেন আজকে আসবে না।
– আসবো তো। আচ্ছা আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। রাখি?
– হুম।
আব্বু ফোন কেটে দিল। আমি ফোনটা রেখে রিদির দিকে তাকাইলাম। মেয়েটা এতো কেমনে ঘুমায়!? অবশ্য আমিও তো কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাই। কিন্তু কেন জানি আজকে মনটা অস্থির অস্থির করতেসে।
.
.
.
.
আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই ক্ষতটা দেখতেসি। ইস্, সবাই দেখলে কি ভাববে!? সবচেয়ে বড়ো কথা বলবটাই বা কি? নিশ্চয়ই কালকে ঐটা কোনো রাক্ষস আছিল। উফ্!!!! মলম লাগাইলাম বহু কষ্টে। হাত দিতে পারতেসি না। মলম লাগানো শেষ হইলে আমি রান্নাঘরে গেলাম। কি বানানো যায়? ভাবতেসি এমন সময় কলিং বেল বাজল। আমি খুইলা দেখলাম আন্টি। হাতের ট্রেতে কি যেন ঢাকা দিয়ে আনসে। আমি সালাম দিয়ে সইরা দাঁড়াইলাম। আন্টি ভিতরে ঢুইকা বললেন, কেমন আছো, ছোঁয়া?
– জ্বি আন্টি ভালো।
– তোমার আম্মু ফোন দিয়েছিল। বলল তারা নাকি কালকে ছিল না।
– হ্যাঁ, আন্টি।
– কোনো সমস্যা হয়নি তো?
– না, আন্টি। (মনে মনে) ও শ্বাশুড়ি আম্মা গো, কোন হালার পুত আপনার বৌমার গলার বারোটা বাজাই দিসে।
– আমাকে ডাকতে পারতে।
– আমার এক ফ্রেন্ড ছিল। এখনও ঘুমাচ্ছে।
– ও। এত গরমে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে রেখেছ কেন?
– এমনি। (মনে মনে) প্যাঁচাইসি কি সাধে? বার বার ঘষা লাইগা জ্বলতেসে। ঐ ভ্যাম্পায়র রে আমি আস্তো চিবাই খামু। ব্যাটা ফাজিলের হাড্ডি।
– তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি। তোমার জন্মদিনের গিফট।
– কি আন্টি?
আন্টি ট্রের প্লেটটার ডাকনা সরাতেই আমি বললাম, পায়েস!!! থ্যাংক ইউ আন্টি। আন্টি হেসে বললেন, তুমি নাকি পায়েস পছন্দ করো তাই ক্ষীরের পায়েস করে এনেছি। কাছে এসে বসো। আমি খাইয়ে দেই। আমি গিয়া বসতেই উনি আমাকে যত্ন কইরা খাওয়াই দিলেন। আমি কইলাম, আন্টি আপনি বসেন, আমি চা করে আনি। আন্টি হাসলেন।
আমি রুমে গিয়া রিদিকে ঠেলতে লাগলাম, এই রিদি, রিদি… ওই রিদুর বাচ্চা উঠ। রিদি চোখ ঢলতে ঢলতে কইল, কি হইসে? আমি ওরে টেনে উঠাই বললাম, ওঠ, পাশের বাসার আন্টি আসছে। সাড়ে নয়টা বাজে। তোকে এমন পড়ে থাকতে দেখলে কি কইবো। উঠ। যা ফ্রেশ হয়ে নে। আমি চা বানাইতে গেলাম। রিদি চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকাই আছে। আমি জিগাইলাম, কি হইসে?
– তুই? চা?
– তো?
– পারবি?
– না পারার কি আছে? তুই ফ্রেশ হয়ে আয়। তোকেও দিবো। টেস্ট করে দেখিস।
আমি রান্নাঘরে চলে গেলাম। চা বানাই ফেললাম চটপট। এখন আমি ভালোই বানাইতে পারি। আব্বা বলসে আমি নাকি ফাটাফাটি চা বানাই। মাত্র কাপগুলো ট্রেতে রেখে চা ঢাললাম। এমন সময় ফোন এলো। ফোন নিয়ে দেখলাম মিষ্টি খালা ফোন দিসে। আমি রিসিভ করে কানে ফোন ধরে ট্রেটা নিয়ে বসার ঘরে নিয়ে যেতে যেতে বললাম, হ্যালো, মিষ্টি খালা। কি হইসে? আমার হাত থেকে ট্রে পইড়া কাপগুলো টুকরো টুকরো হয়ইয়া গেল। চায়ে ভাইসা গেল ফ্লোর। কান থেকে ফোন পইড়া ব্যাটারি খুলে ছিটকে পড়ল একজায়গায়। আমি চায়ের মধ্যে বইসা পড়লাম। আন্টি দৌঁড়ে এলেন। রিদিও দৌঁড়ে আইল। জিজ্ঞেস করতেসে কি হইসে। আমি পাথরের মতো বইসা আছি। আমার জগতটা ভেঙে গুড়িয়ে গেল চোখের সামনে।
চলবে…