আঁখির আড়ালে,পর্বঃ- ০৪

আঁখির আড়ালে,পর্বঃ- ০৪
সাদিয়া_সৃষ্টি

দিশা উঠোনে এক প্রকার দৌড়েই বেড়াচ্ছে। জোর কদমে এগিয়ে চলেছে আবার ফিরে আসছে। কিন্তু এই হাঁটার তেমন কোন উদ্দেশ্য নেই। দিশার মনে হচ্ছে হাঁটতে হাঁটতে ভাবলে হয়তো তার মস্তিষ্কের বুদ্ধি একটু বাড়বে। এতে দ্রুতই এমন এমন সব বুদ্ধি পাওয়া যাবে যার মাধ্যমে সে আগামীতে কোন সমস্যা ছাড়াই বিহানকে গ্রাম ঘোরাতে পারবে। তার বার বার মনে হচ্ছে বিহানকে গ্রাম ঘোরানো তার জন্য উচিত কাজ নয়। এতে কিছু একটা হবে। এর জন্য কোন একটা সমস্যা হবে-ই হবে! কিন্তু কি সমস্যা হবে সেটাই জানে না সে। তবুও মনের গহীন থেকে এক মিশ্র অনুভূতি খেলে যাচ্ছে। বার বার মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে,

”ওই ছেলেটাকে গ্রাম ঘোরানোর জন্য গ্রামে অনেক মানুষ আছে, তোর যেতে হবে না।”

আবার তখন-ই মন বলে উঠছে,

”যা, এতে অনেক নতুন কিছু আবিষ্কার করবি।”

মস্তিষ্ক এর দৃঢ় প্রতিবাদে জবাব দিল,

”কি নতুন কিছু আবিষ্কার হবে রে?”

মন ও শান্ত হয়ে জবাব দিল,

”নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন অনুভূতি।”

মস্তিষ্ক সাথে সাথে কড়া গলায় আবার প্রতিবাদ জানানোর জন্য উদ্যত হলো,

”রাখ তো তোর নতুন অনুভূতি। ওসবে ভাত হয় না।”

মন টান টান জবাব দিল,

”তোর তো কোন কাজ নেই, খালি অকাজ করা। শোন খন্দকারের মেয়ে, আজ পর্যন্ত কোন ছেলেকে ঘোরাস নি, তাই এখন ঘোরাবি। তুই কি ছেলেদের ভয় পাস নাকি? কিছু করলেই তো পিঠের উপর ২ ঘা বসাতে পারবি। কি? পারবি না?”

দিশা মনে মনে বলে উঠল,

— হ্যাঁ, বেশ পারব। শুধু ২ ঘা কেন? হাত পা ভেঙে রাখতে পারব। কিন্তু ওই বিহান নামের লোকটার একাই ঝামেলা।

মন আর মস্তিষ্ক যেন একসাথে তাকে জিজ্ঞেস করে উঠল,

— কি ঝামেলা?

দিশা আনমনে বলে উঠল,

— তার তাকানো। তাকালেই মনে হয় যেন চোখের গভীরতা অনেক। দেখলেই ডুবে যেতে হয়। সাঁতরেও উঠা যায় না। মনে হয়, ওই চোখে একবার নজর পড়লে সে আমার মন পড়ে নিতে পারবে। মরে যেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু এই মরার ধরণ আলাদা। বেঁচে থেকে মরে যাওয়া! আমি বলে বোঝাতে পারব না। সেই যে প্রথমে চোখে চোখ পড়ল, কি হ্যাংলার মতো পলক না ফেলে আমি-ই তাকিয়ে ছিলাম। ইশ্‌… ওই লোকটা ওভাবে না তাকালেই হয় শুধু!

শেষে সিদ্ধান্ত নিল দিশা।

”কি এমন মহা পুরুষ যে তাকে নিয়ে ভাবতে হবে? ২ দিন থাকবে। ঘুরবে। আমি শুধু গ্রামে এ বাড়ি ও বাড়ি দেখাব, কাজ শেষ!”

__________

সেদিন বিকাল-রাত শাকিলের সাথে সময় কাঁটাল বিহান। সে বলেছিল কয়েকবার শাকিলকে চলে যেতে। কিন্তু শাকিল তাকে ছাড়েই নি। এমন যেন সে কয়েদী। তাকে নজরে নজরে রাখার আদেশ করেছে আদালত। মানুষ ঘোরানোর দায়িত্ব নেবে, ঠিক আছে। কিন্তু ধরে বেঁধে আটকে রাখা জিনিসটা অন্যরকম হয়ে যায়। যেই অন্য রাস্তায় হাঁটার কথা বিহান বলেছে, শাকিল অনেক সুন্দর মতো বিহানের কথা এড়িয়ে গিয়েছে।

এসব ভাবতে ভাবতে চায়ে আরেক চুমুক দিল বিহান। গত রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে রবির সাথে এই দোকানে এসে চা পান করেছিল। বেশ ভালো লেগেছিল তার। ঠাণ্ডা পরিবেশ, গ্রাম হওয়ায় সেই সময়টাকে অনেক গভীর রাত বলেই মনে হচ্ছিল। পেঁচা আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক এক আলাদা পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। এর মাঝে সমবয়সীদের সাথে চা পান করতে করতে গল্পে মেতে ওঠা। বেশ ভালো একটা মুহূর্ত। মনে রাখার মতো। বিশেষ করে অন্ধকার পরিবেশ উপভোগ করছিল বিহান। হ্যারিকেনের আলোয় আলোকিত হয়েছে শুধু দোকানটুকু। দোকানটা মকবুল মির্জার বাড়ির সামনেই। তাই এখানে বসে থাকতে কোন চিন্তা আসেনি তার। আজও একই পরিবেশ। শুধু গত রাতে সাথে ছিল রবি। আর আজ শাকিল। তবে গত রাতে রবির সাথে তেমন একটা কথা বলতে পারে নি। কিন্তু শাকিল রবির মতো না। অনেকটা বন্ধুসুলভ আচরণ। কথা শুনে বোঝাই যাচ্ছে না যে সে বিহানের থেকে কয়েক বছরের বড়। তাই আরও বেশি ভালো লাগছে। সাথে ছিল গ্রামের আরও ৪-৫ টা ছেলে।

একজন কথোপকথনের মাঝে-ই বলে উঠল,

— গ্রামের নতুন খবর জানো?

— কি নতুন খবর?

সাথে সাথে আরেকটি ছেলে জিজ্ঞেস করে উঠল। আগের ছেলেটা জবাব দিল,

— খন্দকার বাড়ির মেয়ের গান শোনার প্রতিযোগিতা।

— ওই দিশার কথা বলছিস?

— তা নয়তো কি? দিশার গান শোনার পর যে সজ্ঞানে থাকবে, তাকে পুরষ্কার দেওয়া হবে।

— যা তা কথা বলিস না। ঠিক করে বল।

— আসলে কথায় কথায় উঠে গেল। ইমতিয়াজ আছে না, ওই বলেছে, পুরষ্কার দিবে।

— আমি নেই বাবা।

ছেলেটার সাথে সাথে বাকিরাও বলে উঠল,

— আমরাও নেই।

বিহান নিজের কৌতূহল দমন করতে না পেরে বলে উঠল,

— কেন? গান শুনলে কি হবে?

— কানের পর্দা ছিঁড়ে যেতে পারে। কান ফেটে যেতে পারে। সারাজিবনের জন্য কানে নাও শুনতে পারে সে।

— এতো ভালো গান গায়?

বিহান অবুঝের মতো বলে উঠল। ওর প্রশ্নে সবাই হেসে উঠল। শাকিল কোন মতে নিজের হাসি থামিয়ে বলে উঠল,

— বল, এতো বাজে গান গায়। ইমতিয়াজ প্রতিবার এমন কথা বলে। কারণ সে জানে যে কেউ টিকে থাকতে পারবে না।

— আমি যাবো কাল।

— কোঁথায়?

— খন্দকার বাড়ি। আমি গান শুনব। দেখি, কেমন গান গায়?

— আমাদের কথা শুনো, গান শোনা লাগবে না। তার বদলে আমি তোমাকে পাশের গ্রাম ঘুরিয়ে আনব।

— আমি খুব ভালো শ্রোতা। মনোযোগ দিয়ে অনেক সময় পর্যন্ত শুনতে পারি। মাঝে কথা না বলেও অনেকক্ষণ থাকতে পারি। আর কাল এর পরীক্ষাও হয়ে যাবে নাহলে।

— যেমন তোমার ইচ্ছা।

বলে বাকিরা বিহানের কাঁধে হাত দিয়ে অসহায়ের ভঙ্গিতে তাকাল। যেন বিহান একটা মোস্ট বড় দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে। জয় করা ভীষণ মুশকিল। এতে বাঁচা মরার প্রশ্ন আসতে পারে। বিহানও অপেক্ষায় থাকল আগামী সকালের। কি নতুন অপেক্ষা করছে তার জন্য?

__________

প্রবল উৎসাহের সাথে বিহান আর শাকিল পৌছাল খন্দকার বাড়ির সামনে। বিহানের উত্তেজনা সময়ের সাথে বেড়েই চলেছে। দিশার কথা শুনেই তো সে কিছু সময়ের জন্য থমকে যায়। তার গান শুনলে কেমন লাগবে? গত রাতে এই নিয়ে ভাবতে গিয়ে ঘুম হয়নি ঠিক মতো। বার বার বিছানায় এপাশ ওপাশ করেছে সে। তার ধারণা দিশা ভালোই গান গাইতে পারে। কিন্তু ওরা বিহানের সাথে হয়তো মজা করেছে। আবার আরেকটা ধারণা হিসেবে এসেছে, হয়তো ভালো গান গায় না, কিন্তু একেবারে খারাপ গানও গাইতে পারে না। একটু হলেও তো ভালো গায়। কান নষ্ট হয়ে যাবে- এমন হতে পারে না। যদিও এসবই তার ধারণা মাত্র। তবুও, এইটুকু আশা তো রাখা যেতেই পারে।

দিশাকে ইমতিয়াজ গান গাইতে বললে দিশা সাথে সাথেই রাজি হয়ে যায়। তার গান গেয়ে গেয়ে মানুষকে জ্বালাতে ভীষণ ভালো লাগে। মানুষ যখন তার গান সহ্য করতে না পেরে থামতে বলে তখন মনে এক প্রশান্তি কাজ করে। এমনকি শরীরের শক্তি ব্যবহার না করে সে গান গেয়ে শত্রুদের নাজেহাল করে দিতে ভালোই পারে। তাই প্রায়ই গানের চর্চা করে থাকে। আর সেসময় বাড়িতে কেউ থাকে না।

বিহান তার গান শুনবে এই কথাটা জানার পর তার মনটা উশখুস করেছিল ঠিকই। কাজটা ঠিক হবে কি না? যতই হোক, গ্রামের অতিথি বলে কথা। তার কান নষ্ট করে দেওয়ার মতো মহান কাজ অন্তত তার দ্বারা সম্ভব হবে কি? কিছুক্ষণ ভেবে সে সিদ্ধান্ত নিল,

”অবশ্যই হবে। গতকাল তার জন্য আমি উঠোনে কতক্ষণ ধরে হাঁটলাম। আমাকে হাঁটাল এতক্ষণ। তার জন্য তো কিছু করতেই হয়। শাস্তি না ঠিক, উপহার। গ্রামে আসবে কিন্তু আমার গান না শুনে চলে যাবে এটা ক হতে দেওয়া যায়? অবশ্যই না। তাহলে গান আমি শোনাবোই। আর ওর দায়িত্ব যেহেতু মকবুল মির্জা নিয়েছেন, তাই কানের চিকিৎসা করানোর হলে উনিই করিয়ে দিবেন।”

বিহানকে বসানো হয় একটা পিঁড়িতে। তার সামনে বেশ কিছু দুরুত্ব বজায় রেখে বসে দিশা। দিশা ভালো মতো কেশে তারপর শুরু করল,

যা রে.
যা রে যারে উড়ে যা রে পাখি
ফুরালো প্রানের মেলা,
শেষ হয়ে এলো বেলা
আর কেন মিছে তোরে বেঁধে রাখি
যা রে.

বিহান চোখ বড় বড় করে শুধু দিশার দিকে তাকিয়ে থাকল। কানে হাত দেয় নি ভদ্রতার খাতিরে। তাছাড়া গান শুরু হওয়ার আগেই দেখে নিয়েছিল। আশেপাশে থেকে সবাই সরে গিয়েছে। শুধু বাড়ি থেকে বেশ কিছু দূরে থাকা আমগাছে ইমতিয়াজ উঠে পড়েছে। সেখান থেকে বিহানের উপর নজর রাখছে। একবার চোখ মুখ কুচকালে কিংবা কানে হাত দিলেই সে জিতে যাবে আর বিহান হেরে যাবে। এটা তার জানা কথা যেন। তাই তো রেখেছে সে এই প্রতিযোগিতা। কিছুটা বাজি ধরার মতো। কিন্তু আসলে বাজি না। কারণ সে জিতলে উপহার হিসেবেই দিবে। অবশ্য সে জানে যে কেউ টিকতে পারবে না। তাই তো উপহার দিবে বললেও কি দিবে সেটা ভেবে রাখে নি।

বিহান পুরোটা সময় গান শুনেছে। কানে কি রকম প্রভাব পড়েছে সেটা বলা যাচ্ছে না। তবে বিহানের চোখ আটকে আছে দিশার বন্ধ চোখ জোড়ার দিকেই। প্রতিবারের মতো অতো কাপাকাপি না হলেও নিজের মনের অবস্থা যে বেশ শোচনীয় সেটা বোঝার বাকি নেই বিহানের। নিজের অনুভূতিকে আটকে রাখার ক্ষমতা যেন তার দিন দিন লোপ পাচ্ছে। তাও শুধু দিশার ক্ষেত্রেই। কারণ গ্রামে দিশার থেকেও বেশ সুন্দরী মেয়ে আছে। কিন্তু কারো প্রতি তার এমন টান অনুভুত হয়নি। যেটা দিশার জন্য সে অনুভব করেছে। একেবারে বিহানকে নাড়িয়ে দিয়েছে ভিতর থেকে। বিহান সেটা বুঝতেও পারছে আর স্বীকারও করছে। কিন্তু এরপর? এরপর কি করবে সে? মানুষের সাথে প্রথম দেখায় জন্ম নেওয়া অনুভূতির মহত্ত্ব তো শুধু ও নিজেই বুঝবে। অন্য কেউ বুঝবেও না, আর পাত্তাও দিবে না। কি করা উচিত বিহানের।

চোখের সামনে তুড়ি বাজাতেই বিহানের ধ্যান ভাঙে। সে বুঝতে পারে নিজের অবস্থান। আরও কিছু ভাববে তার আগেই বাচ্চা বড় সবাই সেখানে চলে আসে। আর ইমতিয়াজকে চেপে ধরে। কি পুরষ্কার দেবে ইমতিয়াজ। প্রথমে গাছ থেকে নামতে না চাইলেও পরে সবাই লুঙ্গি ধরে টানার হুমকি দেয়। বেশ মনোযোগ দিয়েই সব দেখছিল বিহান। নিজের অনুভূতি যেন কেউ বুঝতে না পারে তার জন্য অন্য দিকে মন দেওয়ার চেষ্টা করছিল। লুঙ্গির ব্যাপার শুনে নিজের হাতে লুঙ্গির গিঁট চেপে ধরে। শেষে ইমতিয়াজের লুঙ্গি খুলতে না পেরে যদি তারটা খুলে দিতে তেড়ে আসে? এতে বেশ হাসিও পায় তার। সে দিশার দিকে তাকাতেই তার হাসিমুখ দেখে আবার কেঁপে ওঠে। নিজের দৃষ্টি আবার আমগাছে স্থাপন করে বিহান।

ইমতিয়াজ বেশ কিছু সময় ভেবে সিদ্ধান্ত জানায়। বিহানকে উপহার হিসেবে নিজের ঠেলাগাড়ি দিবে সে। শুধু ১ দিনের জন্য। এর বেশি কিছু না। অন্যরা চিৎকার শুরু করলেও বিহান হাসি মুখে সব মেনে নেয়। এর মধ্যে এক আলাদা ধরণের আনন্দ বিদ্যমান। যেই আনন্দ সে আগে কখনো উপভোগ করে নি। এই প্রথম। তবে এটাই শেষ কি না কে জানে!

বিহান ঠেলাগাড়ির নাম শুনে সেটা দেখতে কেমন হতে পারে সেটাই ভাবছিল। তখন দিশা বিহানকে নিজের পিছনে যেতে বলে। বিহানও দিশার কথা অনুযায়ী ওর পিছনে যাওয়া শুরু করে। দিশা সামনের দিকে আঙুল দেখিয়ে বিহানকে বলে,

— এটাই ঠেলাগাড়ি।

— এটা?

বিহান প্রশ্ন করে ওঠে। দিশা হাসি মুখে মাথা নাড়ায়। যার অর্থ হ্যাঁ, এটাই। ২ চাকা বিশিষ্ট এই অদ্ভুত ধরণের গাড়ির নাম আগে শুনলেও থিম মনে করতে পারছিল না বিহান। তাই অবাক হওয়ার পরিমাণ তার ক্ষেত্রে একটু বেশিই। দিশা বিহানের অবাক হওয়ার চেহারা দেখে মুচকি হাসে। তারপর বলে,

— চালাবেন?

— আমি? চালাবো?

— হ্যাঁ, এই গাড়ি আজকের জন্য আপনার। তো আপনি ই তো চালাবেন। নাহলে কে চালাবে?

— ঠিক আছে।

দিশা সেখানে গিয়ে গাড়ির মাঝ বরাবর বসে যায়। দিশাকে বসতে দেখে বিহানও দিশার পাশে বসতে যায়। কিন্তু তার আগেই দিশা বাঁধ সাধে।

— এখানে বসছেন কেন?

— আপনি বসলেন তাই।

— আপনি না চালাবেন। আপনি ওখানে গিয়ে দাঁড়ান। আর গাড়ি ধরে ধাক্কা দিন।

বিহান দিশার কথামতো ধাক্কা দেওয়া শুরু করল।

— তারপর কি করব?

— এভাবেই ধাক্কা দিতে থাকুন। আমি যাত্রী আপনি গাড়িচালক। আর আজ এভাবেই আপনাকে আমি গ্রাম ঘোরাব।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here