অরুর সংসার,পর্ব-২৩,২৪

অরুর সংসার,পর্ব-২৩,২৪
লেখিকা-নিশিকথা
পর্ব-২৩

-May i come in sir??
-yes come in
-রুম নং ২২ এর পেসেন্ট এর বিল প্রিপেয়ার করা হয়ে গেছে স্যার?
(অয়ন জয়ার কথায় নিজের ডেস্ক এর দিকে একবার তাকিয়ে দেখে নিল)
-না এখনো
-ওহ।করে ফেলেন স্যার। সিজার হয়েছে তাই ৩+লাখ টাকার মত বিল আসবে
-এত কেন?
-সিজার তাইই।আর সাথে প্রিমেচুয়ার বেবী হয়েছে………
-ওহ….. হুম বুঝেছি। একটু আগে মেবি উনার হাসবেন্ড কে ই দেখলাম।
আমি আধা ঘন্টার মধ্যে বিল প্রিপেয়ার করতে দিচ্ছি। আজই রিলিজ নাকি?
-হুম
-ওকে
-স্যার!!!
-হ্যা বলেন
-আর কতদিন স্যার?? আর কতদিন এমন অন্যায় চলবে বলতে পারেন??
ওই পেসেন্ট এর রিপোর্ট একদম নরমাল ই ছিল! একটু লো প্রেশারের প্রব্লেম ছিল মায়ের আর কিছু না।আমি নিজে উনার পাস্ট রিপোর্ট চেক করেছি……… বাবী সুস্থ সবল ভাবে আরো একমাস পরে জন্ম দেওয়া যেত……………
কিন্তু এ্যাপোলো হাসপাতাল তো গরীব বা মধ্যবিত্তদের জন্য অভিশাপ স্যার……..নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আর ওই পেসেন্ট কে আর তার পরিবার কে বলা হয়েছিল যে পেসেন্টের লাইফ রিস্ক… বাচ্চার অবস্থা ভুল জায়গায় এখন ই অপারেশন না করলে কাউকে বাঁচানো যাবে না….নিজেদের লাভের কারনে তাদের মিথ্যা ভয় দেখিয়ে ১মাস আগে সিজার করা হল…. এখন মা আর বাচ্চার অবস্থা সচনীয় …….. কেন স্যার?এমন কেন করলো….. এই দম্পতি তো আহামরি বড়লোক ও ছিল না…..
পেসেন্টের হাসবেন্ড টেনশনে পাগল হবার কায়দা… একদিকে হাসপাতাল এর মোটা অংকের বিল অন্য দিকে এতকিছুর পর ও যদি বাচ্চা আর মা সুস্থ থাকতো!! তাও নেই….
আর এটা কিন্তু নতুন হয়ে আসছে না স্যার…..এমন শত শত রেকর্ড আছে….
বলেন না স্যার আর কতদিন এভাবে চলবে??
আর কতদিন এ্যাপোলো হসপিটাল মানুষের শত কষ্টে উপার্জন করা অর্থ আত্বসাৎ করে নিজেদের প্রভিডেন্ট ফান্ড বাড়াবে???

-ডঃ জয়া আপনি কথাগুলা ঠিক বলেছেন যে এটা নতুন না…. এর আগেও এমন অনেক রেকর্ড আছে……… তবে এটাও জেনে রাখেন যে আপনি নতুন নয় যে এই নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন…..!! তবে ফলাফল জিরো……. সিস্টেমের কাছে কেউ টিকতে পারে নি..
আচ্ছা বলুন তো বাংলাদেশে ভাল ডাক্তার, ভাল চিকিৎসারর অভাব কেন??
কেনই বা দেশের মানুষ রোগ হলেই বিদেশে পারি জমায়??
কারন হল আমাদের দেশের ৩০% ভাল ডাক্তার এম বি বি এস পাশ করে বিদেশে চলে যায়……. আর বাকি ৩০% আপনার মত সিস্টেমের সাথে না পেরে শেষ পর্যন্ত বিদেশে চলে যায়….যেমন কিছুদিন আগে ডঃফারহানা এসব নিয়ে প্রতিবাদ করে যুক্তু তর্কে টিকতে পেরেই সেস্টেমের চাপে পরে আজ বিদেশে…. আমার এত বছরের ক্যারিয়ারে অনেক এমন ডঃ দেখেছি যারা প্রতিবাদ করেও এই হাসপাতাল কে চেঞ্জ করতে পারে নি……
এ্যাপোলো শুধু ধনীদের যাবার জায়গা…. এখানের জেনারেল ওয়ার্ডর এক্সপেন্স ই সাধারন মানুষ বহন করতে পারে না..
এত কিছুরর পর ও কিন্তু এই হাসপাতালে রোগী কমে না। বাংলাদেশের মন্ত্রি মিনিস্টার,নায়ক নায়িকা, বড় বড় শিল্পপতির পরিবার এখানেই চিকিৎসা নিচ্ছে।
-কিন্তু স্যার এভাবে আর কত দিন?
-হয়তো এন্টায়ার লাইফ
-ওহ
-আমি তো আপনাদের মত ডাক্তার না ডঃজয়া….তনে হাসপাতাল এর ফাইন্যান্স যেহেতু আমার হাতে আমি যথাসাধ্য চেস্টা করবো বিল কমানোর।
আর আপনি এই অভিযোগ টা হাসপাতাল এর সি ই ও এর কাছে করেন….অন্ততপক্ষে কিছুটা হলেও এই ভিক্টিম এর হেল্প হবে….তবে সিস্টেম চেঞ্জ পসিবল না
-হুম। এক্সকিউজ মি স্যার
-হুম………..

জয়া চলে যাবার পর অয়ন জয়ার বলা কথা গুলা নিয়েই ভাবছে…… তার ও তো আর এখানে কাজ করতে ইচ্ছা করে না… যত দ্রুত সম্ভব নিজদের বিজনেস এ ফুল কন্সেনন্ট্রিয়েট করবে সে… এসব তার আর ভাল লাগছে না………
অয়ন জানে হাসপাতালে গোটাকয়েক অসৎ ডাক্ত্রার কাছে। তবে সবাই না। অসৎ ডাক্তার গুলো অনেকের টাকা মেরে খায় তারা। ভুলভাল বলে হাসপাতালে আটকে রাখে দিনের পর দিন পেসেন্টদের আর পাহাড়সমান বিল বাড়ায়।
অয়ন এসবের বিরুদ্ধে তবে কিছু করার নেই। তার…… ৬ বছরের কন্টাক্ট হাসপাতাল এর সাথে.
……..
………………
……..

♥♥……… ইদানিং অরুর শরীর টা তেমন একটা ভাল না।……..
খুব অস্থির অস্থির লাগে তার। মাথা টা মাঝেমাঝেই চক্কর দিয়ে ওঠে।
যে অরু আগে সারা বাড়ীর কাজ একা করলেও ক্লান্ত হত না সে এখন অল্পতে ক্লান্ত হয়ে যায় ….. কেমন এক অদ্ভুত অনূভুতি হয় অরুর…..
আর ইদানিং শুধু ঘুম পায় তার….. একটু শুলেই যেন রাজ্যের ঘুম ভর করে তার চোখে…….

এই তো একটু আগে আসরের নামায পরে একটু শুয়েছিল কখন সে ঘুমিয়ে পরেছে খেয়াল নেই তার…………..♥♥

সন্ধ্যা ৬ টা………
কলেজের পাশের ছোট্ট চায়ের দোকানটায় বসে আছে অহনা………….
এখন থেকে না সেই সকাল ৭ টা থেকে এখনো অবধি সে ওখানটায় বসে।
সব লোকেরা তাকে ফিরে ফিরে দেখছে…… চা ওয়ালা চাচাও ৫,৬ বার জিজ্ঞাসা করে গেছে কিছু লাগবে কি না………
অহনা কোন মতে নিজের চোখের পানি আটকে রেখেছে………..
কই???????? রাজ তো এলো না……….. সে না অহনাকে কথা দিয়েছিল যে ১বছর পর ঠিক এই দিনে, এই সময়, এই স্থানে সে অহনার সাথে দেখা করবে…. ফিরে আসবে পুরোপুরি তার কাছে??..
কই আসলো না তো রাজ??
তাহলে কি সব শেষ???
অহনা তো রাজ বলেছিল অহনাকে যে এই সময়ের মাঝে না ফিরলে সে আর কোন দিন ফিরবে না….
তাহলে কি …………..??
সেই সময় তো আরো ৬ঘন্টা আগে পার হয়ে গেছে…….১বছর আগে ঠিক দুপুর ১২ টার সময় ই তো রাজ তাকে কথা দিয়ে গেছলো যে সে ফিরবে….
ফিরলো না??????

তাহলে কি অহনা ভুল করলো ১টা বছর ধরে রাজের বলা কথায় আস্থা রেখে তার জন্য অপেক্ষা করে?……….. এই মুহুর্তে অহনার নিজেকে অনেক বোকা বলে মনে হচ্ছে…..
১টা বছর কোন যোগাযোগ করে নি রাজ তাও সে অপেক্ষা করেছে… এই আধুনিক যুগে কত মাধ্যমই তো আছে যোগাযোগ এর….. তাও রাজ যোগাযোগ করে নি!………! অহনা তো পারতো রাজের খোজ নিতে, তার সাথে যোগাযোগের চেস্টা করতে…. করে নি অহনা কেননা সে রাজের কথায় বিশ্বাস করে এতদিন রাজের অপেক্ষায় বসে ছিল…. তাহলে অহনা বোকা নয় তো কি?
……………………
অহনা আকাশ এর দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিল…….. বলল…
♠♣একই আবহাওয়া… শুধু হাওয়ার গতিটা কেমন স্তিমিত হয়ে গেছে ……
একই স্থান… শুধু পথ ঘাট কেমন বদলে গেছে……
একই সময়… শুধু বছরের ব্যাবধান……
একই তুমি … তাও কেমন অচেনা লাগছে……
আর আমি???????
না কিছুনা… আমি এখনো সেখানেই আছি যেখানে তুমি আমায় ছেড়ে গিয়েছিলে।।। ♣♠

.

অয়ন বাসায় ফিরে দেখে অরু খাটে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে……
ঘড়ির দিকে তাকালো অয়ন…. এমন সময় অরু সহজে ঘুমায় না।
খাটের পাশের টেবিলে প্রতিদিনের মত আজ আর লেবুর শরবত টা নেই দেখে অয়নের মেজাজ টা একটু খারাপ ই হয়ে গেল…..
সে কোন কথা না বলে ওয়াশরুমে গিয়ে ঠাসস করে দরজা আটকে দিল..
সেই শব্দেই ঘুম ভেংগেছে অরুর…..
অরু বুঝলো যে অয়ন এসেছে।অরু দ্রুত নিচে গিয়ে ফ্রিজ থেকে শরবত টা নিয়ে উপরে গেল….. শরবত টা টেবিলে রেখে অরু ভাবলো…..
মৌ আপু কি চলে গেছে? কটা বাজে? এই সময় সে কেন ঘুমালো..?
কি হচ্ছে তার ইদানিং….
অরু আবার নিচে গেল। দেখে মৌ টিভি দেখছে…
-আহ আপু তুমি এখানে.. আমি একটু আগে তো দেখি ই নি তোমাকে। সরি আমি ঘুমিয়ে গেছিলাম ….. বিকালে তোমার সাথে ছাদে হাটার কথা ছিল কিন্তু আমি যে কেন এতক্ষন ঘুমালাম
-আরে বেপার না।তুমি ঘুম দেখে আমিও অহনার রুমে ঘুমিয়ে গেছিলাম
-ওহ। আপু রুমে??
-না অহনা তো সকাল থেকে বাসায় নেই
-এখনো ফেরে নি!! কেন? এত দেরী তো করে না
-আমিও তাইই ভাবছি
(অরুর টেনশন হচ্ছে অহনাকে নিয়ে….. কি হল মেয়েটার? এমনি বিয়ের বিষয় নিয়ে মন খারাপ তার)
অরু মৌ কে নাসতা দিয়ে উপরে গেল… রুমে গিয়ে দেখে অয়ন স্কাউচ এর উপর আধশোয়া হয়ে চোখ বন্ধ করে আছে…
-শুনছেন?
-বল (চোখ বন্ধ করেই বলল অয়ন)
-অহনা আপু সকালে বাইরে গেছে এখনো ফেরে নি
-কি? তুমি আমাকে আগে বল নি কেন?
(অয়ন মোবাইল হাতে নিয়ে অহনার নাম্বারে কল দিল…নাম্বার বন্ধ…….
অয়নের এবার টেনশন হচ্ছে অহনাকে নিয়ে।…. এমন তো কখনো করে না অহনা…. তাহলে কি অরুর কথাই ঠিক??? তার অহন এই বিয়েতে রাজি না?? রাজি না থাকলে বলতে তো পারতো….
অয়ন হুট করে দাড়িয়ে পরলো…… বলল
-সিট!!!!!!! অহন অল্পতেই কোন ভুল সিদ্ধান্ত না নিয়ে ফেলে………
-আপনি কথায় যাচ্ছেন??
-রাত ৮ টা বাজে…বাবার ফেরার সময় হয়ে এসেছে …আর অপেক্ষা করলে চলবে না…

(অয়ন গাড়ী নিয়ে বের হয়ে গেল অহনাকে খুঁজতে….. )

ওদিকে রাত ৯টা বাজে…
সাদ বাইক নিয়ে অহনার কলেজের পিছনের রাস্তা থেকেই রোজ অফিস থেকে ফেরে…..
আজ ও ফিরছিল। রাস্তার চায়ের দোকানের ওখানে চোখ পরতেই সাদ বাইক থামালো……. অহনা না মেয়েটা??? হ্যা!অহনাই তো………এত রাতে এখানে কি করছে সে?
সাদ বাইক রাস্তার এক সাইডে রেখে দ্রুত পায়ে অহনার সামনে গিয়ে দাড়ালো….
-অহন!!!!!!
(অহনা এখনো নিচের দিকে তাকানো)
-অহন!! (সাদ অহনার কাধে হাত রেখে ঝাকা দিল)
-হু????? হু(অহনা মাথা তুলে তাকালো)
-কি রে? এখানে এত রাতে কি করছিস তুই??
-ভাইয়া
-হু। কি করছিস? আচ্ছা বাদ দে আগে চল বাসায়।
– …….. (অহনা ঠায় বসা এখনো )
-কি হল চল (সাদ অহনার হাত টেনে নিয়ে নিজের বাইকে বসালো।অয়নকে ফোন করে সাদ জানালো অহনার কথা।। )
……
………….
……
বারান্দায় চুপচাপ দাড়িয়ে আকাশ দেখছে অহনা। রাত তখন ১১টা বাজে হয়তো….. অয়ন এক কৌটা স্প্রিঞ্জেল চিপ্স নিয়ে অহনার পাশে গিয়ে দাড়ালো….
অহনা বাসায় ফেরার পর অয়নের কথা মত কেউ তাকে কোন প্রশ্ন করে নি…
অয়ন ১টা চিপ্স খেয়ে বলল বাহ স্প্রিঞ্জেল এর নিউ ফ্লেভার…. যোস খেতে………
অহনা চুপচাপ আকাশের দিকে তাকানো……
অয়ন আবার বলল….
কেউ যদি শেয়ার করতে চায় আমি মানা করবো না… তবে সেটা ফাস্ট ফাস্ট ই কারন পরে আমার ভাল লেগে গেলে কিন্তু আমি চাইলেও দিব না….
অয়নের কথায় অহনা তার দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।অয়নের হাত থেকে চিপ্স এর কৌটা নিয়ে খাওয়া শুরু করলো।
-অহন
-বল ভাইয়া
-আমি ছেলে পক্ষ কে বলে দিয়েছি আমাদের সময় চাই।ডেট পোস্টপন্ড করতে…
-ভাইয়া আমি রাজি
-নাহ অহন। টেক ইউর টাইম
-না ভাইয়া আমি রাজি। যেদিন ঠিক হয়েছিল সেদিন ই ফাইনাল কর
-সিওর??
-ইয়াহ
-অহন
-হু
-তুই খুশি তো???
-(অহনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল….) হুম ভাইয়া
-(অয়ন অহনার কানের কাছে এসে বলল…)খাটের পাশের ড্রয়ারে আরও ৩ ফ্রেভার এরা চিপ্স রেখেছি। তোর জন্য।

এই বলে অয়ন চলে গেল আর অহনা হাসছে। খুব করে হাসছে… হাসতে হাসতে কেঁদে দিল……..

♥ অরু সংসারের সব কাজ শেষ করে কোন মতে খেয়ে নিল। খেতে ইচ্ছা করে না!কেমন গন্ধ লাগে তার কাছে।
রুমে ঢুকতেই অরুর বমি চলে আসলো। আসবেই বা না কেন…..অয়ন বারান্দায় দাড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট টানছে।অরু কোন মতে নাকে হাত দিয়ে ওয়াশরুমে গেল। ফ্রেশ হয়ে খাটে শুয়ার কিছুক্ষন পর নিজের শরীরের কারো হাতের স্লাইড পেল অরু। অরুর বুঝতে বাকি রইলো না ছোঁয়া টা তার স্বামির…

অয়ন অরুর মুখের কাছে মুখ আনতেই অরু সিগারেট এর বাজে গন্ধ পেল।অরুর খুব বমি আসছে, সারা শরীর ঘামছে…… এর আগে তো কত বার অয়ন সিগারেট খেয়ে ওই পোড়া ঠোঁট
দিয়ে অরুকে কিস করেছে… লং লিপ কিস করেছে… তখন ও তো এমন সিগারেট এর স্মেল ই পেত অরু অয়নের থেকে। প্রথম প্রথম প্রব্লেম হলেও পরে অভ্যাস হয়ে গেছিলো অরুর…..
তবে আজ এত খারাপ লাগছে কেন জানা নেই অরুর…কিছুক্ষন সহ্য করলেও যেই না অয়ন অরুর ঠোঁটে ঠোঁট মিলালো অরুর যেন বমি ঠেলে এলো ..

অরু সাথেসাথে অয়নকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেলে ওয়াশরুমে দৌড় দিল…….

অরুর এমন টাইপের ব্যবহার অয়ন আশা করেছিল না।মেজাজ টা বিগড়ে গেল অয়নের…♥

চলবে………

অরুর সংসার
পর্ব-২৪
লেখিকা-নিশিকথা

সেদিন রাতে অয়ন অরুকে এই বিষয়ে আর কিছু বলে নি। অরু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে অয়ন ঘুম …. অরুর মাঝে অনূশুচনা বোধ কাজ করছিল তখন……
এভাবে স্বামিকে ধাক্কা দেওয়া ঠিক হয় নি তার!!

তবে তার ও যে শরীর ভাল না….. কি করবে সে? কি হয়েছে তার???? বুঝছিল না অরু

এভাবেই কেটে যায় ১মাসের মত। বমির পরিমান টা বেরেই চলেছে অরুর…. খেতেই পারে না তবে ক্ষুধাও লাগে তার খুব….. অল্পতেই ক্লান্তির পরিমান টা বেড়ে চলেছে অরুর শরীরে………. কাউকে কিছু বলতেও পারে না।একদিকে অহনার বিয়ে তাই কাজ আরো বেড়ে গেছে অরুর….পাত্রপক্ষের সাথে কথা বলে বিয়ের ডেট আরো ১সপ্তাহ পিছিয়েছিল অয়ন….. ছোট বোন কে বিয়ে দিবে আরও খোঁজখবর নিতে চেয়েছিল সে….. …

তবে এর মাঝে কাকে বলবে অরু শরীরের এই অবস্থার কথা?
এদিকে আরোহী বাড়ী চলে এসেছে…….. প্রেগন্যান্সির ৪ মাস চলছে তার।আর মৌ এর আড়াই মাস মত……আর অহনা তো এই ১মাসে কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে…….. কথা বলে না তেমন ……এমনকি নিজের হবু বরের চেহারাও দেখে নি এখনো সে…দেখার ইচ্ছাই নেই তার….. এর মাঝে অনেক বার ই ২পরিবার থেকে অহনা আর ছেলেটার দেখা করার কথা ও বলেছিল….. অহনা রাজি হয় নি……. ফেসবুক একাউন্ট ও দিয়েছে অহিনা চেক করে নি।লাইফের উপর থেকে কেন যেন তার আগ্রহই উঠে গেছে……….

ইদানিং অরু অয়নের থেকে আরও দুরে দুরেই থাকে। এটা অয়নের মোটেই সহ্য হচ্ছে…… অয়নের ধারনা অরু তাকে ইগনোর করছে……অয়ন অরুকে এই নিয়ে কিছু বলে না….
কথাই বলে না ইদানিং দুজন দুজনের সাথে…….. অয়ন তার ইগোর কারনে আর অরু তার ভয়ে…..

অরুর সাহস কি করে হয় তাকে ইগনোর করার???অয়ন শুধু এটাই ভাবে!

অহনার বিয়ে শপিং সব আরোহী ই করেছে….অহনাও সাথে ছিল তবে অহনার কিছুতেই তেমন কোন আগ্রহ নেই।।
সাথী চৌধুরী কেও দাওয়ার দেওয়া হয়েছে। বেশ ধুমধাম করেই আয়োজন চলছে বিয়ের…
অয়ন হাসপাতালে যাবার আগে অরুকে ডাক দিল….
-জ্বি??? ডেকেছেন
-এটা রাখো
-এটা?
-এক লক্ষ টাকা আছে এতে। অহনার জন্য সোনার গহনা বানাতে দেওয়া আছে আজ যেয়ে বিল পে করে গহনা নিয়ে আসবা!
-আমি???
-তো??? প্রব্লেম কি? ৪০হাজার টাকা দেওয়া আছে বাকি দিয়ে নিয়ে আসবা। গলার হার,কানের দুল, চুরি, আংটি। এটা আমাদের পক্ষ থেকে অহনার বিয়ের উপহার। ওকে আগে থেকে বলবা না…… এনে রাখবা রাতে এসে একসাথে দিব।
-হুম ঠিক আছে
-গাড়ী পাঠিয়ে দিব আমি।আর মৌ কে বলেছি সে যাবে তোমার সাথে।
-জ্বি ঠিক আছে
(অয়ন রুম থেকে বের হতে গিয়ে আবার ফিরে এলো ……)

-অরু
-হুম
-গহনা আনার পর মেবি ২০হাজার টাকা বাঁচবে…… ওখান থেকে নিজের জন্য যা লাগে কিনে নিয়ো। ভাল দেখে ৩টা শাড়ি কিনবে নিজের জন্য… অনুষ্ঠানে পুরনো শাড়ি যেন না পড়তে দেখি। আজ যা যা লাগে সব কিনে এনো। আরো টাকা লাগলে বলো
(অরু মাথা নাড়িয়ে সন্মতি দিল….)

অয়ন বের হবার ৫,৬ মিনিট ই আরোহী আসলো…..
-অরু
-আরে আপু আপনি এই অবস্থায় উপরে এলেন কেন আমায় ডাকতেন
-আরে ব্যাপার না…. চল আজ তোমার মার্কেটে যেতে হবে আমাদের সাথে……
-আমি? কেন আপু??
-কেনাকাটা আছে……
-কিন্তু আপু আমি আজ মৌ আপুর সাথে যাবো
-আচ্ছা তা একসাথে যাবোনি…
-আচ্ছা আপু
………………..

অরু মার্কেট থেকে ফিরে মৌকে নিজের শারিরীক অবস্থার কথা বলল।আরোহীকে বলতে চেয়েছিল কিন্তু প্রেগন্যান্সির মাঝে বিয়ের সব কাজ ওকেই দেখতে হচ্ছে তার………. তাই মৌ কে বলল……
-হুম। আচ্ছা তোমার কি এই মাসে পিরিওড হয়েছে???
-(অরু মাথা নাড়িয়ে না বলল)
-ডেট কবে ছিল?
-গত মাসে বান্দরবন গেলাম না…তার পরের উইকে ডেট ছিল…হয় নি…. আর এখন ও ডেট চলছে.. হচ্ছে না….
-ওহ…বাইরে ছিলাম তখন বললে বা কেন বল তো! আচ্ছা দাড়াও আমি দেখি আমার কাছে আছে কি না!!
-কি আপু??
-প্রেগন্যান্সি কিট! থাকার কথা!! ও অনেক গুলা এনে দিয়ে ছিল
– *প্রেগন্যান্সি কিট* কথা টা শুনে অরু যেন থমকে গেল…. এর মানে??? সে কি………….??????????
-না নেই! আমিও কি বোকা!আমি তো আর বাড়ীতে নেইই আর ব্যাগে নিয়ে ঘুড়ি না তো…… দাড়াও তোমার ভাইয়াকে আনতে বলছি
-না আপু!!!!!
-কেন?
-উনি কি ভাববেন!!
-কিছুনা। তোমার কথা বলবো না…..
-হুম

রাতে সাদ ফিরে মৌকে ওগুলো এনে দিল…
-কেন লাগবে এখন তোমার এই জিনিস ?
-এমনি! নিচে যাও আসছি আমি
-হুম

মৌ অরুকে আগেই চেক করার নিয়ম বলে দিয়েছে…
-এটা রাখো। কাল সকালে উঠে চেক করবে। আর আমি আসলে আমাকে বলবে কেমন?
-হুম।
(অরু কাপা কাপা হাতে প্যাকেট নিল)
………………..

অরুর ভয় লাগছে…….কি হবে রেজাল্ট???
যদি পজিটিভ হয়???
তাহলে সে কি করবে? এত সুখ কি তার কপালে সইবে??

অরু রুমে গিয়ে দেখে অয়ন লেপটপে কাজ করছে….. অরু গুটিগুটি পায়ে গিয়ে খাটে শুয়ে পরলো…………..

অয়ন আজ কাল অনেক ব্যাস্ত বিজনেস এর কাজে….. অরুর দুরেদুরে থাকায় অয়নের রাগ হলেও কাজের চাপে কিছু বলার এনার্জি তার নেই….
.

আজ অহনার গায়ে হলুদ………..সকাল থেকে সবাই কাজে অনেক বিজি।অনিক ও সকাল সকাল চলে এসেছে…..অয়ন আজ হাসপাতালে যায় নি। সাদ আর নিসাদ হুসাইন ও অফিস থেকে ৩দিনের ছুটি নিয়েছে। সবাই যে যার কাজে বিজি ।

দুপুরের দিকে অরু আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে ভালভাবে পর্যবেক্ষন করছে………..

সে মা হতে চলেছে……….

৩বার চেক করেছে প্রতিবার পজেটিভ এসেছে………..
এক অদ্ভুত অনুভুতি কাজ করছে অরুর মাঝে।শরীরে কষ্ট, ক্লান্তি সব যে এই অনুভুতির কাছে তুচ্ছ……
আজ কেন যেন অরুর নিজের মায়ের কথা খুব মনে পরছে……… আজ যদি তার মা বেঁচে থাকতো তাহলে এই মুহুর্তে তার কি করা উচিৎ?কিভাবে চলা উচিৎ? তাকে বলে দিত..
আচ্ছা অয়ন যখন জানবে?? সে কিভাবে কিয়েক্ট করবে?????
অনেক খুশি হবে???

আজ রাতে বলবে অরু অয়নকে যে সে বাবা হতে চলেছে……….
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান টা ভাল করে সম্পন্ন হয়ে নিক…….
.
বেলা ৩টা বাজে হয়তো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য অয়ন একটা সাদা পাঞ্জাবী চুজ করেছে
……..তার মতে পাঞ্জাবী সাদাই বেস্ট অন্য রং এর পাঞ্জাবী সে পছন্দ করে না…….
অয়ন ফাইনাল ভাবে কাজ দেখতে দেখতে হটাৎ তার নজর গেল সামনে দাড়ানো তার বউ এর দিক।পাটিসাপটা পিঠা বানিয়ে উপরে নিয়ে আসছে অরু…….
অয়ন অরুকে দেখে বড়সড় একটা ধাক্কাই খেল…. হলুদ একটা সিল্ক জামদানী শাড়ি পরেছে অরু…..গহনা বলতে সেই অয়নের দেওয়া হীরার নাকফুল…. চুলগুলো পিঠে ছড়িয়ে দিয়ে এক সাইডে মেজেন্টা ফুলের টিকলি পরেছে সে….চোখে মোটা কাজল, হালকা কমলা রং এর লিপ্পি……. অপরূপ এক সম্পুর্ণা নারী লাগছে তাকে…………. অয়ন মুগ্ধ নয়নে দেখছে তার বউ কে…
হটাৎ অয়নের নজর গেল অরুর কোমড়ের দিক…. শাড়ি সরে পেটের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে!!! অয়নের রাগ যেব চট করে চরম পর্যায় গেল…. কিরকম কেয়ারলেস মেয়ে এ!!!!এত লোকের সামনে পেট বের করে এসেছে……….!!
কত ছেলেরা আছে এখন ছাদে।অয়ন,অহনা, আরোহী,অনিক সবার বন্ধু রা ই তো এসছে এক এক করে?…..
অরু তো কখন ও এমন পেট বের করে শাড়ি পরে না!!!! আজ কেন পরেছে!!
(আসলে অরুর শরীর টা এমনিও ভাল না তারপর কাজ সেরে কেবল শাড়ি পরে সেজেছে…. শাড়ি ঠিক আছে কি না চেক করতে যাবে তখনি আরোহী কাজে ডেকেছিল তাকে তাই পেটের দিক টা খেয়াল করে নি সে)
অয়ন অরুর কাছে এগিয়ে গেল দ্রুত পায়ে….. অরুর কাছে গিয়ে পেটের কাছে শাড়ি দিয়ে ঢেকে দিল….পেটে অয়নের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো অরু.. পাশে তাকিয়ে অয়নকে দেখলো তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে… কিছু বলতে যাবে তখন মৌ এসে পরলো….
-অরু কতক্ষন ধরে খুঁজছি তোমায়!! এসো এদিক…
(অরুকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল মৌ……)
(অয়নের মেজাজ অরুর কাছে গিয়ে আরো খারাপ হয়ে গেছিলো কারন অরু নেটের হাতাওয়ালা মেজেন্টা ব্লাউজ পরা!!! তাই পুরো হাত ই দৃশ্যমান তার…)

মৌ অরুকে এক সাইডে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাস করলো…
-টেস্ট করেছিলে???
-হুম
-কি এসেছে??
-Positive
-wow!!! congratulation♥♥♥
(মৌ অরুকে জরিয়ে ধরলো….অরু হাসছে…)
-ভাইয়া কে বলেছো??
-না আপু। রাতে বলবো
-ওকে
-উনাকে না বলা পর্যন্ত কাউকে বল না আপু
-ওকে ওকে। কত খুশির নিউজ বল তো অরু!! এই বাড়ীতে তিন টা বাবু আসতে চলেছে ♥♥
আর সবার পরপর…. আরোহী আপি তারপর আমি তারপর তুমি….. মা হবার এই ফিলিংস টা কেমন???
-এই দুনিয়ার সব থেকে শ্রেষ্ঠ আপু
-হুম আমার কাছেও।
-হয়তো এই পৃথিবীর সব মেয়ের কাছেই আপু ♥♥
-হ্যা রে♥♥

অয়ন অরু আর মৌ এর দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে…. কত হেসে হেসে কথা বলছে অরু…. কই অয়নের সাথে তো বলে না…….!!আর পেত বের করে শাড়ি আর নেটের ব্লাউজ পরার মত এত বড় অপরাধ করেও কি সুন্দর হাসছে সে……. অয়নের প্রচুর রাগ হচ্ছে…. রাগ টা আরও বেড়ে গেল যখন অহনার বন্ধুদের মধ্যে একজন অরুর কাছে গিয়ে বলল..
-আসসালামুআলাইকুম ভাবি
-ওয়ালাইকুম আসসালাম
-কেমন আছেন
-জ্বি আলহামদুলিল্লাহ
-আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে ভাবি
-ধন্যবাদ
(অরু এটা খেয়াল করে নি যে অয়ন তাদের খেয়াল করছে….আর কেউ কথা বললে না জবাব দেওয়া অভদ্রতা…. অরুর বয়ষ কম… অহনার বন্ধুটা অরুর থেকে বেশি একটা বয়ষে বড় না।…এত কথা কিসের তাদের মাঝে ভাবছে অয়ন…
অয়নের মাথায় রগ ফুলছে অরুর অন্য পুরুষের সাথে কথা বলাতে……….. )
-ভাবি আমি অহনার কাছে আপনার কথা অনেক শুনেছি। আপনাদের বিয়েতে আসা হয়েছিল না আমার!

-ওহ। আচ্ছা ভাইয়া থাকেন আমি অহনা আপুর কাছে যাই।

অরু যেতে নিবে ধাক্কা খেল এক বয়স্ক মহিলার সাথে…..সে আর কেউ না সাথী চৌধুরী……! এমনি ই অয়ন অরুর উপর রেগে আগুন ছিল তার উপর সোনায় সোহাগা তিনি…
-I am really sorry aunty
-it’s okay….. তুমি কে??
-অরু
-অয়নের বউ??
-জ্বি
(সাথী চৌধুরী সাথেসাথে অরুকে জড়িয়ে ধরলো…..তারপর ব্যাগ থেকে একটা গয়নার বাক্স অরুর হাতে দিল)
-এটা কি? আমায় কেন দিচ্ছেন আন্টি

(সাথী চৌধুরী কে দেখে অয়নের যেন চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে……তারপর অরুর উনার সাথে এত আদিক্ষেতা যেন অয়নের মনকে আরও বিষিয়ে তুলল… অয়নের আর সহ্য হল না ঘটঘট করে সে নিচে চলে গেল ছাদে থেকে)
-নেও বউমা এটা তোমার জন্যই এনেছি! আমি তোমার শাশুড়ি মা!!
-না আন্টি আমি এটা নিতে পারবো না……
(অরু উনার থেকে সাথেসাথেই দুরে সরে এলো…) সরি।আসছি আপনি বসেন ….
(অরু চলে গেল…)
.

অয়নের মাথায় যেন রক্ত উঠে গেছে রাগে!!!
ওহ এই জন্য অরু গত একমাস তার থেকে দুরে থেকেছে!! কারন পরিষ্কার…. অরুর এখন চোখ ফুটে গেছে। অরু ও বাকি মেয়েদের মত!!! অরুর এখন অন্য পুরুষ চাই………তাই তো আজ ওই ছেলের সাথে কথা বলল সে……আর সাথী চৌধুরী?? উনার সাথে অরুর এত খাতির!!!
..নিশ্চয় অরুর সাথে উনার আগে থেকে পরিচয় আছে….. এর মানে উনি ই অরুকে এসব শিখিয়ে!!!! খুন করে ফেলবে অয়ন অরুকে….
অরু শুধু তার। অরুর উপর শুধু তার অধিকার…… সেই অরু নাকি সেজে গুজে অন্য পুরুষের মন ভুলাচ্ছে……!!!
আজ অয়ন অরুকে ছাড়বে না …….

অরু অহনার রুমের দিকেই যাচ্ছিল…. হটাৎ কেউ যেন অরুর হাত টেনে ভিতরে নিয়ে গেল…….

-কে কে?????(চিৎকার দিতে যাবে অয়ন মুখ চেপে ধরলো…..)
-কেন?? অন্যকাউকে আশা করেছিলে বুঝি???
-না না
( অয়ন দরজার আটকিয়ে অরুকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলো)
– আহ ্্্্্্্্্্লাগছে ছাড়ুন
(অয়ন আরো জোড়ে চাপে ধরলো অরুকে)
-এখন আর আমার ছোঁয়া, কিস করা ভাল লাগে না তোমার??
-মানে?
-বল না।লাগে না? আগে তো লাগতো…. কিছু বলতে না……. আর এখন ধাক্কা ও দাও।।।।
– সরি সেদিন……..!
-কি ভেবেছিলে সেদিনের আচরন ভুলে গেছি আমি???
– আমি……….!
-চুপ! উত্তর দেও???আমার ছোঁয়া ভাল লাগে না??তাহলে কি আর কারো ছোঁয়া মনে ধরেছে কি…?
-ছিঃ এসব কি বলছেন!!!

(অয়নের মুখে এত নংরা কথা অরু আশা করে নি)

-আরে কিসের ছি??? বল না!!
-………….
-বল কোন সাহসে সেদিন আমাকে ধাক্কা দিয়ে চলে গিয়েছিলে ?? বমি করেছিলে না?? এভাবে আমাকে অপমান করার সাহস কে দিয়েছিল তোমায়?????
– …………………
(অরুর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরছে….এমনি ই শরীর টা তার দুর্বল… )
– …………………..
-খারাপ লাগে আমার ছোঁয়া খুব… তাই না??
– ………………….
-তাতে কি।খারাপ লাগলে কিছুই করার নেই…..
I don’t care….
অয়ন অরুকে ধাক্কা মেরে স্কাউচ এর উপরে ফেলল…..
অরু উঠাতে গেলে অয়ন তার ২হাত চেপে খাটের সাথে মিশিয়ে ফেলল…
-প্লিজ ছেড়ে দিন!! আমার শরীর টা ভাল না।
-কি হয়েছে তোমার শরীরে?? শাড়ি খুলো তো!! দেখি
-না প্লিজ
-অরু!!!!!
(অয়ন অরুর ব্লাউজের উপর হাত বুলালো…)
কি টাইপের ব্লাউজ পরেছো তুমি???? সম্পুর্ণ হাত দেখা যাচ্ছে….. ওহ তোমার হাত জোড়া কত ধবধবে ফরসা সেটা বাইরের পুরুষকে দেখাতে বুঝি???
-(অরু কেঁদে দিল।) কি বলছেন এসব? আমার শাড়ির ব্লাউজ বানানো হয় নি তাই বড় আপু এটা পরতে দিয়েছে
-পরতে দেবে আর তুমি পরবা??? তার উপর এই পরে ছাদে চলে গেলে??
– ………… ওপ্স!!!
সরি তোমাকে এত কথা বলার কোন মানেই হয় না।এখন শুধু …….
– …………..
-(অয়ন এবার অরুর শাড়ি সরিয়ে পেটে হাত দিল……)আর এই পেট টা!! কাকে কাকে দেখিয়েছো এতক্ষনে???
-কি বলছেন এসব! আমি ইচ্ছা করে……….!
-হুশশশ“““““`
(অয়ন অরুর উপর থেকে একটু উঠে স্কাউচ এর উপরে রাখা সিগারেট এর প্যাকেট টা থেকে একটা সিগারেট বের করলো…
মুখে নিয়ে লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরালো….. এক টান দিয়ে অরুর মুখের কাছে ধোয়া ছাড়লো…. অরু মুখ সরিয়ে নিয়ে ওয়াক টানলো …. বমি আসছে তার!…….
অয়ন এবার বাকা হাসলো..)
– আগে এই সিগারেড় খাওয়া ঠোঁটে চুমু খেতে প্রব্লেম হত না এখন বমি আসে……. !গুড!
অরুর পেটের হাত বুলালো অয়ন… বলল..

-হ্যা ঠিক এই জায়গাটুকু দেখা যাচ্ছিল

★অয়ন অরুর পেটের সেই জায়গার উপর জলন্ত সিগারেট চেপে ধরলো….
অরু চিৎকার দিয়ে উঠলো ব্যাথায় !!★

-হুশশশ ্্্্্্্্্্্্ আরে কি করছো বাড়ীতে মেহমান তো!!!!

★অরু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে…..প্রচুর যন্ত্রনা হচ্ছে তার…….. আর অয়ন অরুর পেটের একটা জায়গায় সিগারেট দিয়ে পুড়িয়ে ক্ষান্ত হয় নি… যেটুকু পেট দেখা গিয়েছিল ছাদে শাড়ি সরে সেটুকু জায়গায় এক এক করে ছেঁকা দিল…. অরু আর সহ্য করতে পারছে না…..চাপা আর্তনাদ আর ছটপট করছে সে…★

-কষ্ট হচ্ছে না খুব??
– ……………

অয়ন এবার সিগারেট ফেলে অরুর কাছে এলো…..অরুর শাড়ির আচল সরিয়ে ফেলল সে…..ব্লাউজ এর হুক গুলো খুলে ব্লাউজ টা এক প্রকার টেনে খুলল সে অরুর গা থেকে…
অরুর ডান হাতের বাহুতে কিছুক্ষন হাত বুলিয়ে হটাৎ কামড় বসিয়ে দিল অরুর অয়ন …. অরুর জান বের হয়ে গেল যন্ত্রনায়… চিৎকার দেবে তার শক্তি নেই অরুর শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে…….অরুর ২হাতের বাহুতে এভাবে অসং্খ্য কামড় বসালো অয়ন …… অরু এক সময় সেন্সলেস হয়ে গেল যন্ত্রনায় …..

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here