অরুর সংসার,পর্ব-১৭,১৮

অরুর সংসার,পর্ব-১৭,১৮
লেখিকা-নিশিকথা
পর্ব-১৭

অরু আজ অয়নের দেওয়া সাদা জামদানী শাড়ি পরেছে…শরীরে মন মাতানো পারফিউম
…..পাতলা আচলে ধবধবে সাদা পেট দৃশ্যমান….গহনা বলতে কিছুই পরেনি অরু…. গলা,কান,হাত খালি….
চুলগুলো খোপায় বেধে বেলীফুলের গাজড়া পরেছে অরু! ছাদে নিজের হাতে লাগানো বেলীফুলের গাছ থেকে ফুল তুলে নিজের হাতেই গাজড়া বানিয়েছে অরু……..
চোখে মোটা কাজল……. ঠোটে টুকটুকে লাল লিপস্টিক……..
মেকআপের আর দরকার কি?এতেই অপরূপ সুন্দরি লাগছে অরুকে যেন এক সাদা পবিত্র অপ্সরী….
♥♥
♥♥এখন দেখার পালা অয়ন তার অপ্সরী বউকে এই রাতে কিভাবে আপন করে নেয়…….. দেখার পালা কিভাবে দুজন দুজনের মাঝে ডুব দেয়।।। কিভাবে প্রতিযোগীতায়তায় নামে একে অপরকে আপন করে নেবার যুদ্ধে……♥♥
♥♥
.
..

..
.
রাত ১:৩০ বাজে…. অয়নের রুমে আসার কোন নাম নেই… অরু সেজেগুজে অয়নের অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে স্কাউচ এর উপর আধশোয়া হয়ে কখন ঘুমিয়ে পরেছে তার খেয়াল নেই….

অয়ন তো এমন করে না…রোজ ১১টার মধ্যে খাওয়াদাওয়া শেষ করে দ্রুত নিজের রুমে চলে আসে..তাহলে আজ কি হল?……

……ওদিকে অয়ন তার বাবার সাথে গল্প করায় এতই মশগুল যে সময়ের তার খেয়াল নেই!
-কি রে! কয়টা বাজে দেখ!! রাত ১:৩০টা।খেয়াল ই ছিল না সময়ের
-হুম বাবা অনেক বেজে গেছে। ঘুমিয়ে পড় তুমি। আমিও রুমে যাই। আর সাদকে জানাতে হবে যে আমরা পরশু ভোরে রওনা হব।
-পরশু না কাল। ওলরেডি দিন শুরু হয়ে গেছে
-ওহ হ্যা
-এখন গিয়ে শুয়ে পর
-ওকে বাবা। আসসালামু আলাইকুম
-ওয়ালাইকুম আসসালাম
.
..
.
সাদের ফোনের রিংটোন বাজছে… বেজেই চলেছে….
-এই শুনছো! থামো না! দেখ ফোন বাজছে তোমার
-হু
-কি হল! দেখ না কে
-উহু
-উফফফফফ প্লিজ থামো, আগে দেখো কে? জরুরি কিছু চলে
-উহ!! দুর কোন শালা এই সময় ফোন দিল
(সাদ মৌ এর উপর থেকে উঠে ফোন রিসিভ করলো…
-হেলো কিডা?
-সাদ! ওকি ভাষা! ম্যানাস্ কি সব ভুলে গেছিস…
-ওহ তুই! ধুর বা** তোর খেয়ে বসে কোন কাজ নাই নাকি ভাবি আজ দেয় নি
-থাপরায় দাত ফেলায় দিবোনি। থাম
-বক বক জলদি
-কাল ভড়ে বান্দরবনের ৪ টা টিকিট কনফার্ম কর… আমি বিকাশে টাকা পাঠায় দিছি
-ওকে ডান। রাখ এবার
(অয়ন ফোন কেটে রুমে ঢুকলো……..
.
অয়ন রুমে ঢুকলো তখন ঘড়ীতে রাত ২ টা ছুঁইছুঁই।
রুমে ঢুকে অয়ন বড়সড় একটা ধাক্কা খেল!…
.
অরু তার স্কাউচে শুয়া…. দুর থেকে সাদা জামদানী শাড়ি তে যে অরুকে অপ্সরী লাগছে।….. অয়ন অরুর কাছে গেল…. পাতলা শাড়ীর মধ্য দুয়ে অরুর উন্মুক্ত ফরসা পেট সহ সামনে থেকে অর্ধেকাংশ শরীর দেখা যাচ্ছে। অয়ন রিতিমত ঘামতে শুরু করলো…..
.

অরুর সৌন্দর্যে অয়ন বরাবর মুগ্ধ…….. অরুর সৌন্দর্যে অয়ন বরাবর মানতে বাধ্য যে সে এত সুন্দর নারী এর আগে কখনো দেখে নি।…..
.

আজইই অয়ন ভাবছিল এই শাড়িটার কথা যে অরু তার দেওয়া প্রথম শাড়িটা এখনো পরে নি আর আজ ই অরু এই শাড়ি প্রথম বার পরে প্রতিবারের মত অয়নকে মুগ্ধ করে ছাড়লো….

অয়ন ব্যাগ থেকে নোস পিনের বক্সটা বের করে অরুর কাছে বসলো……
.
নোসপিন টা অরুকে পড়িয়ে দিল অয়ন…. ঠিক তখনি ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল আর হীরার নাকফুলে অরুর সুন্দর মুখখানা চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে গেল। এমন অপরূপ একটা মুহূর্ত পেয়ে অয়ন এবার কিছু বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে………. অয়ন অরুর থেকে একটু দুরে সরে এলো। নিজের মোবাইলটা বের করে ঘুমন্ত অবস্থায় কয়েকটা নিজের বউয়ার ছবি তুলে নিল। আজ অরুকে এতই সুন্দর লাগছে যে ছবিগুলা ঘুমন্ত অবস্থায় ও অসাধারণ হয়েছে আর তারউপর জলন্ত হীরার নাকফুলটার উজ্জলতায় বারতি আলোর দরকার হয় নি।
অনেকগুলা ছবি তোলা শেষে অয়ন একটা পার্ফেক্ট জায়গা দেখে সেখানে ক্যামেরা সেট করলো। তারপর টাইমার সেট করে অরুর কাছে গেল….অয়ন অরুর কপালে গভীরভাবে একটা ভালবাসার পরশ দিলো আর সেটাই ক্যাপচার হল অয়নের ক্যামেরায়…….
অয়ন ছবি টা দেখছে…. অসাধারণ সুন্দর হয়েছে ছবি টা…… আজ যে অয়ন ও একটা সাদা গেঞ্জি পরা আছে……
.

নির্জন রাত….
একজোড়া দম্পতি….. একজন নিজের ভালবাসার মানুষটার জন্য অপরুপ সাজে সজ্জিত হয়েছে তার দেওয়া সাদা জামদানী পরে.. আর অন্যজন দেখছে, মন ভরে সেই নারীকে যে কিনা তার জন্যই এই রাতে এত সেজেছে…..
অরু অয়নের জন্য রাতে সেজেছে কথাটা স্বাভাবিক ই তো……
.
তবে……..
.
অরুর সাজ আজ ভিন্ন! এই সাজের দ্বারা সে কি ইঙ্গিত করতে চাইছে অয়নকে???
.
অরুকে আজ অসাধারণ সুন্দরি লাগছে ঠিক ই কিন্তু আজ অরুকে রোজকার মত অপরূপ নির্মল লাগছে না….আজ অরুকে কেন জানি অপূর্ব এক আবেদনময়ী নারী লাগছে অয়নের নজরে…….
.
না সে অরুকে এই রুপে চায় না…
অয়ন তো নিজেকে অনেক কন্ট্রোল করে আসছে গত ৫ মাস ধরে…
সেদিন !!! যেদিন অয়ন-অরু একসাথে সকাল হওয়া দেখেছিল…. সেদিন তো তাদের জীবনের ও নতুন সকাল ছিল! অয়ন সেদিন অরুর মাঝে একজন ভাল ও খুব কাছের বন্ধু পেয়েছিল…

সেদিনের পর থেকে অয়ন তাদের বিয়ে, বিয়ের পরের কিছুদিন গুলো ভালভাবে ভেবেছিল …… সে তো অরুকে ভালবাসে না তবে অরুকে দেখলে তার কাম সাধনা জাগে…..অরুকে দেখলেই অয়নের মাথায় অরুকে পাওয়ার নেশা এমনভাবে ভর করে যে অরুর অবুঝ মনের আঘাত তার চোখে বিন্দুমাত্র ও বাধে না….. এই কাম সাধনাকে কি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না?
.
না যায় না….অয়নের শুধু একটাই কথা মাথায় ভালোভাব গাঁথা সেটা হল অরু তার স্ত্রি….. অরুর শরীরের প্রতিটি অংশের উপর শুধু অয়নের অধিকার….. অরুকে সে যখন খুশি কাছে পেতে পারে, অরুর মাঝে ডুবতে পারে… এটা অয়নের অধিকার।।
.
কিন্তু এটা কি অয়নের ভুল না? হ্যা স্বামি হিসেবে অরুর উপর তার সম্পুর্ণ অধিকার কাছে কিন্তু অরু নিজেই তাদের বাসর রাতে বলেছিল যে অরু প্রস্তুত না…..
তাহলে অরুকে কি সময় দেওয়া যায় না…? অরুকে সময় দিতে অয়নের আগে নিজেকে কন্ট্রোল করতে হবে….. আর নিজেকে কন্ট্রোল করা অয়নের পক্ষে খুবতো কঠিন না কারন নারীতে তো তার কোন দিন ই অতটা আকর্ষণ ছিল না অরু ব্যতিত……
তাই তো অয়ন অরুকে গত পাঁচ মাস বন্ধু হিসেবে ট্রিট করেছে, শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় নি…
.
অরুর রূপের মায়ায় এর মাঝে প্রায় ই পড়েছে অয়ন যখন নিজেকে কন্ট্রোল করা খুব ই কষ্ট সাধ্য হয়ে পরতো তার জন্য একারনেই তো তখন মাঝেমাঝে দুরেদুরে থাকতো অয়ন অরুর থেকে, সময় কম দিতো অরুকে………….
.

♦অয়ন নিজেও জানে না যে সে গত একয়মাসে কেন এমন করেছে… অরু তো অয়নের কামনা পূরনের খোড়াক ছিল অয়নের কাছে বিয়ের দিন থেকে….. তাহলে অয়ন কেন নিজেকে কন্ট্রোল করে অরুকে সময় দিতে চেয়েছে….কেন নিজের শরীরের চাহিদার আগে অরুকে নিয়ে সে এত ভেবেছে….. জানা নেই অয়নের……. ♦

কিন্তু অরু আজ এভাবে তাকে আকর্ষণ করছে কেন??

অরুর লাল টুকটুকে লিপ্সটিক অয়নের চোখ বাঁধছে…..অয়ন নিজের রুমালটা বের করে অরুর কাছে গিয়ে একটু ঝুকলো…. রুমাল দিয়ে অরুর ঠোটের লিপ্সটিক মুছতে মুছতে অরুর ঘুম ভেংগে গেল……
অরু চোখ খুলে অয়নকে নিজের কাছে ঝুঁকা অবস্থায় কেমন যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে…
এই নজর অয়নের ঠিক বুকের মাঝে ঘায়েল করছে.. অয়ন ও অরুর দিকে তাকানো….. দুজন যেন দুজনের চোখে হারয়ে যাচ্ছিল……
………… হটাৎ ফযরের আযান দিল……..অরু চোখ নামিয়ে বলল………

-নামায পরে নেই আমি
-হুম
-আপনি পড়বেন না?
-হুম।আমি ওযু করে আসতেছি আগে।ততক্ষন তুমি শাড়ী টা চেঞ্জ করে নেও (অরু কেন রাতে সেজেছে এই শাড়ি পরে অয়ন সেটা জিজ্ঞাস করে আর অরুকে লজ্জা দিল না)
-ঠিক আছে
-হুম
(অয়ন অরু একসাথে নামাযে দাড়ালো…..এই পাঁচ মাসে অরু আর কিছু পাড়ুক না পাড়ুক অয়নকে ৫ ওয়াক্ত নামায পড়াতে অভ্যাস করেয়ে ফেলেছে )

♥♥

ফযরের নামায শেষ করে বারান্দায় দাড়িয়ে ভরের পরিবেশ উপভোগ করছে অনিক।

<মন টা আজ তার অনেক ভাল।ভাল হবেই বা না কেন? যে ঘরে আরোহীর মত লক্ষি বউ আছে সে ঘরে উন্নতি আর বরকত হবেই..... গতকাল ই প্রমোশন হল অনিকের।.... সাথে গতকাল রাতে আরোহী রুশাকে নিয়ে রিটার বিয়েতে গিয়েছিল অনিক। হ্যা রিটা নামক ঝামেলা থেকে সে আজ মুক্ত! আর এর পছনে আরোহীর সহায়তা ছিল সবথেকে দরকারি। আরোহী ই বুদ্ধি করে রিটার মোবাইল আর লেপটপ থেকে অনিক আর রিটার সেই আপত্তিকর ফেক ভিডিও টি ডিলিট করিয়েছিল.. আর এতে আরোহীকে সর্বাধিক সহায়তা করেছিল সাদ। বেস্ট ফ্রেন্ডের বোনের বিপদে সে সহায়তা করবে না তা কি করে হয়....সাদ নিজের পরিচিত এক ভাইকে দিয়ে ট্রিকলি রিটার লেপটপ ও মোবাইল হ্যাক করিয়ে ভিডিও ডিলিট করিয়েছিল... . তারপর অনিক আর আরোহী রিটাদের বাসায় গিয়ে ওর বাবাকে রিটার কর্মকান্ডের কথা ফাস করে দিয়েছিল।... . সেদিন রিটার মা বাবা লজ্জায় পরে গিয়েছিল খুব।অনিক আর আরোহী কাছে অনেক করে ক্ষমাও চেয়েছিল.... . তাইই ইই দ্রুত ভাল ছেলে দেখে রিটার বিয়ে দিয়ে দিল তারা........>

-কি গো? ওখানে দাড়িয়ে কি ভাবছো?
-এই তেমন কিছুনা।
-চল ঘুমাই
-হু।আরোহী!! তোমার নামায হল??
-হ্যা
-কিন্তু!!!
-কিন্তু কি?
-তোমার না ডেট চলছে!!
-হুম চল ঘুমাতে! এসব থাক
-থাক মানে? বল ডেট চলছে তাহলে হল না কেন? গত মাসেও আমি এটা খেয়াল করেছি।
-এত দিকে খেয়াল তোমার??
-বল
-না
-কি না? বল
-কি বলবো!! ধুর ভাল্লাগে না!! তুমার এত দিক নজর কেন!! ধুরো.. সারপ্রাইজ টা ই নস্ট করে দিল
-কি সারপ্রাইজ??
-তোমার মাথা
-বল!!
-তুমি কি কিছুইই বোঝ না!!
-কি বুঝবো??
-অনিক!! আমারা ৩ থেকে ৪ হতে চলেছি♥
– ওহ!! কি????? ওয়েট এ মিনিট!!!! ৩ থেকে ৪ মানে??
-হ্যা অনিক! তুমি আবার বাবা হতে চলেছো♥
(অনিক আরোহীকে জড়িয়ে ধরলো….. আজ নিজেকে অনিকের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী ব্যাক্তি মনে হচ্ছে! সে আবার বাবা হবে! রুশা খেলার সাথী আসতে চলেছে….
-কয় মাস?
-আড়াই মাস
-মানে কক্সবাজারে ওইরাতে??
-হু
-আরোহী…… ভালবাসি ♥♥ বড্ড বেশি ভালবাসি তোমায়….
-আমিও ভালবাসি আমার রুশুর আব্বুকে….


♥♥

নামাযের পাটিতে বসে অরু কেঁদেছে… অয়নকে লুকিয়েই কেঁদেছে সে!! নামায শেষে অয়ন অরুকে বলল….
-অরু
-জ্বি
-বলেছিলাম না নীলাচল নিয়ে যাবো??
-হুম
– কাল ভোরে রওনা হব
♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥

চলবে……..

অরুর সংসার
পর্ব-১৮
লেখিকা-নিশিকথা

প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্রে পরিপূর্ণ পাহাড়ি কন্যার নাম বান্দরবান।
আর সেই পাহাড়ি কন্যর রুপ দুচোখে উপভোগ করতে রওনা হয়েছে অরু,অয়ন,মৌ আর সাদ….
অয়ন ড্রাইভ করছে।… তারা বাড়ীর গাড়ী নিয়েই এসেছে কেননা অয়ন সাদ দুজনেই এর আগে এর পথে অনেকবার এসেছে তাই রাস্তা তাদের মুখস্থ….
সাদেরই আইডিয়ে নিজেদের গাড়ী তে যাবার কেননা বাসে বা ট্রেনে মৌ বমি করে প্রচুর। আর প্লেনে গেলে তো ভ্রমনের মজা উপভোগ করবার সময় পাওয়া যায় না এত দ্রুত চলে প্লেন
…….যদিও অয়ন এমনটা চায় নি…….

অরু জানালা থেকে বাইরের চিরসবুজ প্রকৃতি দেখছে।
.
মৌ এটাওটা নানান কথা বলেই যাচ্ছে আর অরু শুনছে…সাদ মোবাইলে গেম খেলায় ব্যস্ত….

-অরু আমার যে কি এক্সাইটেড লাগছে…বান্দরবন যাচ্ছি আমরা…

-হুম আপু শুনেছি হাতে মেঘ ছুঁয়ে দেখা কিংবা পাহাড়ি সৌন্দর্যে বুঁদ হতে প্রকৃতির এই অনন্য নিঃস্বর্গের থেকে ভাল জায়গা আর নেই♥

সাদ বলল…..

-দোস্ত আগে কই যাবো আমরা?

-কোন রিসোর্টে রুম বুক করেছিস আগে তাই বল?

-হোটেল হিলটন….

-আর কথাও পেলি না..
হোটেল গ্রীন ল্যান্ড না হিল ভিউ তে করতি….

-আগে তো ওই ২টায় ই থাকছি তাই এবার এটায় করলাম।।। নিউ এক্সপেরিয়ান্স দোস্ত

-হুম… বান্দরবন বাস স্ট্যান্ডের এর পাশে না ওটা ?

-হু। বিশাল দেখে ২ টা রুম বুক করেছি দোস্ত… একরাতের ভাড়া ৪হাজার

-হুম….

-আজ বের হতে পারবো???

-না আজ তো যেতে যেতে রাত……রেস্ট নিব হোটেলে……..
কাল বের হব…
প্রথম যাবো স্বর্ণমন্দির তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে মেঘলা পর্যটন কম্পেক্স এবং আর বিকেলে ♥♥নীলাচল♥♥
(অয়ন এসব বলে গাড়ীর আয়নার দিক তাকালো… অরু তাকিয়ে আছে তার দিকেই…!)

অরুর পড়নে বেগুনি কালারের জামা আর হলুদ মনিপুরি তাঁতের ওরনা
…চুলগুলো বেনী করেছে অরু, চোখে মোটা করে কাজল, গহনা বলতে শুধু অয়নের সেদিনের দেওয়া হীরার নাকফুল…… এক কথায় অপরূপা লাগছে… অয়ন না চাইতেও তার চোখ বারবার অরুর দিকে যাচ্ছে…..
অরু তেমন কাপড় আনে নি,অনলি ২ টা তাঁতের ওড়নাওয়ালা থ্রিপিস এনেছে …. একটা পরে আছে আর একটা পরে ফিরবে… কারন তার বাকি সব শাড়ী। বাসায় পরার আরো ২টা থ্রি পিস আছে তা আবার আনার মত না…অয়ন শাড়ি আনতে মানা করেছে তাই আনে নি….. অয়ন মৌ কে বলে কিছু ফ্রক টাইপ ড্রেস আনিয়েছে…. সেগুলাই অরু পড়বে ট্যুরে….

নিজেদের গাড়ীতে যাবে বলে সকাল ১০ টা নাগাদ রওনা দুয়েছে ওরা।।

মৌ হটাৎ বলে উঠলো….
-ওয়াও অরু বারবার আমার তোমার নোসপিন টার দুকে চোখ যাচ্ছে…. জাস্ট ওয়াও……
-ধন্যবাদ আপু।
(অরু এটা বলে আবার অয়নের দিকে তাকালো…..
গতকাল রাতে কখন যে নোসপিন টা অয়ন তাকে পরিয়েছে জানা নেই। অরুর।
[ওযু করে নামায পড়ার পর অয়ন যখন বলেছিল….
-অরু
-জ্বি
-বলেছিলাম না নীলাচল নিয়ে যাবো??
-হুম
– কাল ভোরে রওনা হব
(অরু সাথেসাথে অয়নের দিকে তাকায়।সে অয়নের এই কথায় অনেক খুশি হয়েছে…. নীলাচল ঘুরবে তাই তো খুশি ই তারউপর অয়নের সাথে একান্তে সময় পাবে………)
-অরু
-হু
-আমি কিন্তু যা কথা দেই রাখি..
-হু.. ধন্যবাদ
..
অরু উঠে খাটের কাছে যাওয়ার সময় হটাৎ কি ভেবে যেন ফিরে আসে….

নিজেকে ভালভাবে পর্যবেক্ষন করছে অরু! গায়ে কোন গহনা ছিল না তার… তাহলে নাকে জলজলে পাথর টা কিসের?
নিজের নাকে হাত দিল অরু……
-গতকাল বলেছিলাম না ডিলটা ফাইনাল হয়েছে? কোটি টাকা প্রফিট হয়েছে…. এটা তোমার জন্য….. কেমন হয়েছে?? পছন্দ হয়েছে তোমার????
-হুম সুন্দর তো অনেক। পছন্দ হয়েছে খুব।
-হুম….
(অরু বেশ কিছুক্ষন নিজেকে তার স্বামীর দেওয়া উপহারে দেখলো… তারপর শুয়ে পরলো…..অয়ন একটা সিগারেট এর শেষ নামিয়ে রুমের লাইট আবার অফ করে শুতে গেল….যেই না রুমের লাইট অফ করলো অয়ন সেই অরুর নাকফুলটা জলজল করছে…. অরু চোখ খুলে খপ করে উঠে বসলো.)
-কি হল??
-সেকি এটা এমন চোখে লাগছে কেন?? আলো আলো
(অয়ন বাকা হাসি দিয়ে বলল….)
-হীরার তো একারনে
-কি???? হীরা????
(অরুর চোখ কপালে.. আজ পর্যন্ত শুধু টিভি তে হীরার জুয়েলারি দেখেছে…. মুভিতে নায়ক নায়িকাকে হীরার অলংকার দিতে দেখতো… ভাবে নে…অরু কোনদিন ভাবে নি যে সে কখনও হীরা দেখবে…. দেখবে তো দেখবে হীরার অলংকার জীবনে পরতে পারবে এটা সে কল্পনাও করে নি… )
-হায় হায় আমি তো এতে পানি লাগালাম (বলে শাড়ির আচল দিয়ে মুচছে অরু) (অয়ন অরুর এমন কান্ড দেখে বোল্ড! )
-আরে পাগলি…… কিছুই হবে না….
আরে #পাগলি কথাটা শুনে অরুর কেন জানি খুব ভাল লাগলো ♥ ]

…….
দীর্ঘ ৯ঘন্টা জার্নির পর সবাই পৌছালো বাংলাদেশের ভূস্বর্গে…..তখন বাজে সন্ধা ৭ টা……
অয়ন আর সাদ হোটেলে চেক ইন করে যে যার রুমে ঢুকলো ফ্রেশ হতে…
.
.
.
অভি ফেসবুকে লগ ইন করার সাথেসাথে দেখলো….
Abir Hossain Ayon updated a temporary profile pickture

(অয়ন রাতের সেই ঘুমন্ত অরুর কপালে ভালবাসার পরশ দিচ্ছে সেই ছবি ২৪ ঘন্টার জন্য প্রফাইল পিক দিয়েছে….. ওলরেডি 2k লাইক……. সবাই জিজ্ঞাস করছে ছবির নারী চরিত্র টি কে…..অয়নের অনেক ফ্রেন্ড, রিলেটিভ রা জানেই না অয়নের বিয়ে হয়ে গেছে আর অয়ন অরুর ছবি কখনো ফেসবুকে দেই নি আজ পর্যন্ত এই প্রথম দিয়েছে তাও এত মনোমুগ্ধকর একটা ছবি …অভিও দেখছে….. লাভ রিয়েক্ট দিল একটা…
সাথেসাথে মেয়ে কণ্ঠ বেসে আসলো তার কানে….

-মাশাআল্লাহহ ♥♥♥ স্যারের বউ টা তোহ অনেক সুন্দরি ♥♥♥

-হুম….
জয়া…..
-হা বল
-খারাপ লাগে নি ছবি টা দেখে??
-কেন বল তো???
-এমনি……..
-না! খারাপ লাগে নি!
-হুম
-অভি…..
-হু
-আমার সত্যিই খারাপ লাগে নি…..তোমাকে তো সব ইই বলেছি……
-হুম।

(আজ ৩ মাস হল জয়া আর অভির বিয়ের….
জয়ার বাবার অপরেশনের পর হটাৎ ই একদিন অভি জানতে পারে যে অয়ন বিবাহিত…..
তারপর ও জয়াকে কিছু জিজ্ঞাসা করে নি অভি …
অভি তো আবার বিদেশ চলে যাচ্ছিল ই…জয়া আটকিয়েছে…… জয়া বলেছিল “প্লিজ যেও না অভি… আমার তোমাকে খুব দরকার”
একদিন জয়া নিজ থেকেই সব শেয়ার করেছিল অভির সাথে……..

সময় নিজের গতিতেই যাচ্ছিল আর সময়ের সাথে গভীর হচ্ছিল জয়া আর অভির বন্ধুত্ব……
বন্ধুত্ব নাকি আর কিছু সেটা তাদের জানা ছিল না…………
তবে যদিও বন্ধুত্বই বলা হয় তাহলে বলতে হবে
এই বন্ধুত্বে কোন চাওয়া পাওয়া ছিল না…
না ছিল কোন চাহিদা…
.
শুধুই একে অপরের জন্য বিপদে সহায়তার এমন এক হাত ছিল ওরা দুজন দুজনের যে হাত কখনো দুরে যাবার নয়….

জয়া আস্তে আস্তে তার প্রতি অভির ভালবাসার গভীরতাকে বুঝতে পারে…♥
কথায় আছে না যদিও মেয়েদের মন বোঝা অসম্ভব কিন্তু মেয়েরা ছেলেদের নজর পড়তে পারে.ছেলেদের মন বুঝতে তারা সক্ষম.. কে তার দিকে কোন নজরে তাকিয়েছে চট করেই বুঝে ফেলতে পারে ….

ঠিক তেমনি জয়াও আস্তে আস্তে বুঝেছিল যে অভি তাকে পাগলের মত ভালবাসে….আর অভির তাকে এমন পাগলের মত ভালবাসার প্রেমেই তো পরেছিল জয়া….

তবে জয়ার মধ্যে একটাই দ্বিধা কাজ করছিল যে অয়নকে বুঝতে তে ভুল করেছে…. অভিকে বুঝতেও যদি ভুল করে??? অভি যদি তাকে ভাল না বেসে থাকে?? যদি ফিরিয়ে দেয়???
তবে অয়নের ব্যবহারে কখনও জয়ার এমনটা ফিল হয় নি যে অয়ন তার প্রতি দুর্বল… কিন্তু অভির প্রতুটা বিহেভিয়ারে জয়া বারবার একটা জিনিস ই ফিল করতে বাধ্য হয় যে অভি তার প্রতিটা জিনিসের উপর পাগল…………

জয়ার এই সকল দ্বিধাদ্বন্দের সমাধান মিলেছিল অভির ডায়েরী তে…….একদিন অভি ডিউটি তে থাকাকালীন জয়া না জেনে ওর বাসায় গিয়ে ডায়েরী টা পেয়েছিল যেখানে স্পষ্ট লেখা ছিল যে সে জয়াকে কতটা ভালবাসে।
জয়াকে কলেজে প্রথম দেখার দিন থেকে এই পর্যন্ত জয়ার প্রতি অভির প্রতিটা ফিলিংস এর কথা ডায়েরী তে লেখা আছে…….

সেদিন জয়া অবেক কেঁদেছিল…. খুশি তে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করে যে কেউ তাকে এতটা ভালবাসে…… নিজের প্রতি রাগেও কেঁদেছিল যে সে তার আসল ভালবাসা কে চিনতে পারে নি, বুঝতে পারে নি অভির ভালবাসার অসীমতাকে..

এরপর কিছুদিন কেটে যায় … জয়া অভির সাথে কোন যোগাযোগ করে নি…..একদিন অভিকে নিজের থেকেই বিয়ের কথা বলেছিল জয়া
…না বিয়ের কথা না… বলেছিল যে…..
-অভি
-হুম বল। এতদিন তো কোন খোঁজ ই ছিল না তোমার
-নিজেকে একটু একাকী সময় দিচ্ছিলাম
-ওহ
-ভালবাসার মানুষটা চিনতে পেরেছিলাম না একসময়…….. সে কাছেই ছিল কিন্তু আমি ছুটেছিলাম মরিচীকার পিছে…….এখন আসল মানুষ টাকে বোধহয় চিনতে পেরেছি….।জানিনা তোমার প্রতিউত্ত্রর কি হবে… তবে নিজের ভুলটা শুধরে নিতে চাই….. এখন যদি বলি তোমার হাত ধরে বুড়ো হতে চাই……??? দিবে সেই হাত টা???????
<অভি সেদিন জয়ার কথা শুনে আর কোন কথাই বলতে পারে নি.. জয়াকে টাইট করে জড়িয়ে বলেছিল... >

-Joya!!! I was in love with you a lot….
i love you.
I love you so much..
i will love you forever..

জয়া অতীতে অভির ভালবাসার গভীরতা না জেনেই অয়নের পিছে ছুটেছিল….. অভি সেদিন অনেক আঘাত পেয়েছিল… কিন্তু বলে না সত্য ভালবাসা এক না একদিন নিজের মঞ্জিলে পৌছায় ই……..

অভি সেদিন তেমনি নিজের ভালবাসাকে ফিরে পেয়েছিল…….

জয়া অতীতে অভির ভালবাসা না বোঝায় একদিন তাকে ফিরে যেতে হয়েছিল তবে সেদিন অভি জয়াকে ফিরিয়ে দেয় নি…

আজ জয়া আর অভি সুখী ডাক্তার দম্পতি….. ♥ ♥ ♥ ♥ ♥ ♥
.
..

..
.

অয়ন ফ্রেশ হয়ে বেডে চোখ বন্ধ করে বিস্রাম নিচ্ছিল….অয়নের পরনে একটা সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট… বুকের কাছ থেকে কয়েকটা বোতাম খোলা থাকায়. তার ফরসা লোমশ বুকটা দৃশ্যমান….
আর অরু সেই দিয়েই তাকিয়ে আছে…
-কি দেখছো এভাবে?
(অয়ন চোখ বন্ধ করেই বলল)
-না মানে
-হুম মানে????
-কিছুনা তো!
– তাহলে দেখো না
-আপনি কিভাবে বুঝলেন চোখ বন্ধ করে যে আমি তাকিয়ে আছি
-বুঝি
(অরু চোখ নামায় ফেলল…অয়ন এবার নিজের বউ কে দেখছে…. মেজেন্টা কালারের একটা লং ফ্রক পরা অরু। চুল গুলা ছেরে দিয়েছে, গহনা বলতে শুধু অয়নের দেওয়া নোসপিন আর হাতে কাচের মেজেন্টা চুরি…. ঘুরতে এসেছে বলে একটু সেজেছে অরু… সাজ বলতে চোখে মোটা কাজল আর লিপস্টিক… ♥♥♥ একদম রাজকুমারীর মত লাগছে অয়নের অরুকে.. )
..
-চল সাদ টেক্সট করেছে খেয়ে আসি…
-কিন্তু
-কি?
-মৌ আপু তো এটার সাথে ওরনা দেয় নি
-কই? ভাল করে দেখো
-দেখেছি নেই
-তাহলে হয়তো এটা ওড়না ছাড়াই
-তবে???
-অন্য কোন জামা থেকে ওড়না নিয়ে পরে নেও
-অরু একটা সাদা রং এর ওড়না গায়ে জরিয়ে অয়নের পিছে পিছে নিচে নামলো…..
.

ডিনার শেষে অয়ন আর সাদ তাস খেলায় মশগুল আর অরু, মৌ বসে বসে মাছি মারিতেছে…..
-অরু। ধর!! এটা নাও
-কি এটা আপি?
-আছে একটা জিনিস। ভিতরে একটা ড্রেস আর পারফিউম আছে….
ড্রেস টা পরে পারফিউম মেখে নেও…..আমিও যাই রেডী হই…..
(বলে মৌ নিজের রুমে চলে গেল)
অরু প্যাকেটটা টা খুলে হা…..
ব্লাক কালারের একটা পাতলা নাইটি…….. :O
অরু প্যাকেটা টা ফেলে ১ হাত দুরে চলে গেল!!!
-এ কি…… ছিছিছিছি নায়িকাদের ড্রেস
…অরু এটা পরতে পারবে না…এটা পরা আর না পরা এক ই……
অরু দ্রুত প্যাকেটটা ব্যাগের তলে লুকায় রাখলো…….
-অরু কি করছো ওভাবে???

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here