অরুর সংসার,পর্ব-১১,১২

অরুর সংসার,পর্ব-১১,১২
লেখিকা-নিশিকথা
পর্ব-১১

অরু ওজু করে বের হয়ে ভাবছে…
অরু : ডাকবো উনাকে??
না থাক যদি বকে
না ডাকা আমার দায়িত্ব
কিন্তু!!ডাকার অধিকার? সেটা কি আছে???

অরু সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ডেকেই ফেলল অয়নকে

অরু: এই যে শুনছেন??
ওঠেন!!! নামায পড়বেন না??
শুনেছেন? মাত্র ২-২চার রাকায়াত তো! ওঠেন না!!
ওঠেন প্লিজ।
(অয়ন চোখ মুখ কুচকে একবার কোনমতে তাকিয়ে কি মনে করে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো
অরু: হুম। আমার ডাকা দায়িত্ব ছিল ডেকেছি। একবার না তিন তিন বার! না উঠলে কি করবো!

(অরু নামাযে দাড়িয়ে গেল। নামায শেষে আল্লাহ এর কাছে অনেক কান্নাকাটি করলো অরু! কেন তিনি অরুর সাথে সব সময় এমন করেন??
সেই ছোট বেলা থেকে অরু কষ্ট পেয়ে আসছে! অল্পবয়সে মাকে হারালো, বাবার স্নেহ বঞ্চিত হল, সৎ মা এর গালমন্দ, খারাপ কথা শুনে বড় হল…লেখাপড়াটা কম্পলিট করতে পারলো না।খুব কষ্টে ১২ ক্লাস পর্যন্ত পড়ালেখা করেছিল অরু! তারপর জোড় করেই বিয়ে দিয়ে দিল ওকে! অরু শুধু বলেছিল এইচ এস সি পরীক্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে! তাও করলো না! মা নয় সৎ ছিল কিন্তু বাবা? এতই কি বোঝা হয়ে গেছিলো অরু তাদের কাছে???
না অরুকে বোঝা কিভাবে বলতে পারে তারা? অরু তো বাসার সব কাজ করতো! এইটুক বয়সে কাজের মেয়ের মত সারা বাড়ীর কাজ, রান্নাবান্না করতো অরু! আর নিজের পড়ালেখার খরচ ও নিজেই চালাতো একটা টিউশুনি করে! তাহলে কেন?? কেন অপেক্ষা করলো না তারা???
এই তো আজ করোনা ভাইরাসের প্রকপ না হলে এইচ এস সি পরীক্ষা হত সামনে মাসে! কিন্তু তাতে কি অরুকে তো তার আগেই বিয়ে দিয়ে দিলো!
বিয়ের পর এই বাড়ীর সবাই ওকে ভালবাসলেও আসল মানুষটার মন ই পেল না অরু!!! তার স্বামি যে তাকে ভালই বাসে না!
কিন্তু অরু যে তাকে এইকয় দিনে প্রচন্ড ভালবেসে ফেলেছে!! কি করবে সে এখন??? কিভাবে অয়নের মনের এক কোণে নিজের জন্য একটুখানি জায়গা তৈরী করবে?? )

নামায শেষে অরু অয়নের পাশে গিয়ে শুয়ে রইলো! কাঁদতে কাঁদতে চোখ বেশ ফুলে গেছে…চোখজোড়া বেশ ভার ভার লাগছে অরুর।একসময় ঘুমিয়ে গেল সে।
ঘুম ভাঙলো যখন তখন বাজে সকাল ৭:১৫!

অরু: এই যাহ! এত সময় ঘুমালাম! উনার তো অফিস আছে!
( দ্রুত পায়ে অরু ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল)
কেউ ওঠে নি এখনো ঘুম থেকে! সবার ছুটি যে!!
অরু দেখলো সেলিনা আর মিনু ২জন আটার রুটি, ডিম, ভাজি নিয়ে আরামে খাচ্ছে আর গল্প করছে!! অরুকে দেখে ২জন ই দাড়িয়ে গেল।
অরু ফ্রিজ থেকে মাংসের বাটি বের করতে করতে বলল..
অরু : আরেহ আপনারা দাড়িয়ে গেলেন কেন??? বসে খেয়ে নিন
সেলিনা : এমা নুতন বউ কি লাগবে কউ আমি কইরে দিচ্ছি। অই মিনু কো, সাহাইয্য কর।
মিনু : কউ বউ কি করুম?
অরু : আগে আপনারা খেয়ে নিন। আমি ততক্ষনের চালের গুড়ি রেডি করি। আজ চালের রুটি বানাবো। আপনাদের খাওয়া শেষ বলে বরং আমাকে একজিন রুটি সেকে দিয়েন আর একজন তরকারী কেটে দিয়েন
মিনু, সেলিনা : আইচ্ছা
অরু ৮:৩০ এর মধ্যে চালের রুটি তৈরী করলো ,গরুর মাংস ভুনা রাতে উঠিয়ে রেখেছিল গরম, করলো, ভাজি করলো গতকালের মত ফোরং দিয়ে,ক্ষীর ও তৈরী করলো!! জুস, চা তো আছেই। শুধু অয়ন তো না বাড়ীর জামাই আসছে, ভাল মন্দ না করলে হয়!!!
৮:২৫ এর দিক রুম থেকে রেডি হয়ে বের হল অয়ন। অরু রুম থেকে বের হবার আগে অয়নের প্রয়োজনীয় সব সামনে রেখে গিয়েছিল তাই অয়নের রেডী হতে খুব সুবিধা হয়েছে।
ইদানিং অয়নের আরাম। অরু তাকে সব এগিয়ে দেয়,তার কষ্ট কম হয়।

অয়ন রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামার পথে অহনার রুমের সামনে দিয়ে থেমে গেল।
অহনা ফোনে কথা বলছে যানো কার সাথে।
অহনা : জি আমি জানি। আমার ও আপনার কথা খুব মনে পরে
_ _ – – _ _
না না আমি কথা বলবো তো বাপীর সাথে। একটু সময় দিন।
_ _- -_ _
না না আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলতে পারবো না! খুব ভয় লাগে।।।।।

অয়নের সন্দেহ হচ্ছে অহনাকে!!! গতকাল যখন অয়নের সাথে কলেজে দিয়েছিল অনেক বা কল আসছিল অহনা!!! অহনা বারবার কেটে দিচ্ছিল!!
এর মানে কি অহনা??????
অয়নের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল!!!!
আজ যদি অয়নের সন্দেহ ঠিক হয় তাহলে অয়ন অহনাকে ছেড়ে কথা বলবে না! বোন হয়েছে তো কি?????

অয়ন আর অপেক্ষা না করে ঘটঘট করে নেমে এলো। নেমে এসে দেখে অরু ছাড়া কেউ নেই । আজ থেকে তো আবার সবার ছুটি।
অরু নাস্তা সাজিয়ে অপেক্ষা করছিল অয়নের যেই না চোখ পরলো অয়নের দিকে অরু হা।
এত সুন্দর কোন পুরুষ হয়? তার এটিটিউট তো অরুকে খুনই করে ফেলবে!!
তার উপর অয়নের পরনে ব্লাক প্যান্ট আর হাল্কা পেস্ট কালারের একটা শার্ট!!!ব্লাক সুট টা পাশে রেখে বসলো অয়ন।
অয়ন: এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো বোকার মত?
(অরু সাথে সাথে মাথা নামিয়ে খাবার বেড়ে দিল অয়নকে)
অয়ন: এত কিছু !! কখন করলে???
অরু : সকালে
অয়ন :এত ফাস্ট !! বাহ।
ঘরের কাজে তো দেখি তোমার হাত সেই ফাস্ট চলে!!
অরু : আমার অভ্যাস আছে, আমাদের বাসায় তো সব কাজ আমিই করতাম।
অয়ন :ওহ! ভাল। এমনিও সব কাজের তোমার হাত পা দ্রুত চলে শুধুমাত্র আমার কাছে আসা ছাড়া!!
অরু :সেটার অভ্যাস তো আবার আমার নেই
(অরু কথা টা বলে সাথেসাথে জিহ্বয় কামড় দিল)
(অয়ন ভ্রু উচু করে তাকিয়ে আছে অরুর দিকে…অরু চলে যেতে নিলে অরুর হাত ধরে ফেলল অয়ন! টান দিয়ে নিজের কোলে বসালো অরুকে!! ♥♥♥
অরু চোখ খিঁচে বসে আছে!
অয়ন অরুর কাঁধে ঠোট
বুলিয়ে বলল…….
অয়ন: সেটার অভ্যাস টা এবার দ্রুত করে ফেল |
♥♥♥♥♥♥♥♥♥
অরু :ছাড়েন প্লিজ
অয়ন: কি বললে?
অরু : বা মানে
অয়ন: হুম মানে?
[অয়নের ছোঁয়ায় অরুর পাগলপ্রায় অবস্থা, নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে তার!

এক সময় কেউ আসছে এমন আভাস পেয়ে অয়ন অরুকে ছেড়ে দিল….

অরু এখনো অয়নের কোলে বসা! চোখ বন্ধ করে চোখমুখ সেই একি ভাবে খিচে বসে আছে… ]

অয়ন : কি হল? এভাবে দিন দুপুরে আমার কোলে বসে থাকবে নাকি? আজিব। কেউ দেখলে কি ভাববে?
(অরু এবার চোখ বড়বড় করে তাকালো!! বলে কি লোক টা। সামনে তাকিয়ে দেখে সিড়ি বেয়ে অহনা নামছে মোবাইল এর দিক তাকিয়ে…. মেয়েটা মোবাইলের মাঝে এতই বিজি যে সামনে ঘটে যাওয়া একজোড়া দম্পতির রোমান্স তার চোখে এখনো পরে নি।
অরু অহনাকে দেখে এবার এক দৌড়………………
রান্নাঘরে যেতে হাপাচ্ছে অরু!!! )

অহনা : গুড মর্নিং ভাই
অয়ন : গুড মনিং! ( অয়নের একটু আগের কথা মনে পরে গেল…. অহনা কি তাহলে অয়ন যার কথা ভাবছে তার সাথে কথা বলছিল!অয়ন আর কথা বাড়ালো না, চুপচাপ খেয়ে চলে গেল! এর মাঝে অহনা এটাওটা নানান কথা বলেছে অয়নের সাথে , অয়ন শুধু হু হা বলে উত্ত্রর দিয়েছে! তবে পেট ভরে খেয়ে বের হয়েছে সে।আসলে অরুর হাতের খাবার অনেক মজা!
আর অরুর হাতের চায়ের তো জবাব ই হয় না।এক কাপ চা খেলে আর সারা দিনে চায়ের দরকার হয় না! আর সেটা এখন অয়ন ও স্বীকার করতে বাধ্য! কারন গতকাল অয়ন অরুর হাতের চা খেয়ে আর সারাদিনের চা খায় নি, যেখানে হাসপাতালে তার ৪,৫ বার চা খাওয়া লাগতো আগে )
(ওর পর আর অরু অয়নের সামনে আসে নি লজ্জায়। বুয়াদের হাতে সব যা লাগে পাঠিয়েছে)

অয়ন গেলে অরু গুটিগুটি পায়ে ডায়নিং টেবিলে এলো!
অহনা : কই ছিলা তুমি?
অরু: ওই একটু কাজ। করছিলাম
অহনা : এত কি কাজ! আমি একা খাবো নাকি, এসো একসাথে খাই ভাবি
অরু : কিন্তু, বাবা, আপুরা তো এখনো এলো না
অহনা : দেড়ী আছে! ছুটি পেয়েছে না সবাই!
আচ্ছা তোমার বরটা এমন কুমড়ার মত মুখ করে গেল কেন?
অরু : …….. কই??
অহনা: ওই তো!
আচ্ছা ভাবি চাইনিজ রান্না করতে পারো???
অরু: হ্যা
অহনা : রিয়েলি??? খাবো ভাবি প্লিজ
অরু: আজ???
অহনা : ইয়েস আজই ই।প্লিজ প্লিজ ভাবি! জিজুও আছেন। প্লিজ
(এতক্ষনে সবাই নেমে এলো)
বাবা: কি বায়না করছিস আবার?
অহনা : চাইনিস খাবো ভাবির হাতে
আরোহী : পারো তুমি?
অরু: জি
অনিক : তাহলে তো আমিও খাবো। ভাবি বানাও
(অরু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল)
/
//
///
//
/
লাঞ্চ টাইম হল! গতকালের মত আলমগির হাজির! অয়নকে লাঞ্চ দিয়ে চলে গেল সে!
আলমগির : নেন ভাই। ভাবি একা হাতে সব রান্না করে গরম গরম পাঠিয়েছে!
টাইমিং দেখছেন? রাইট টাইমিং নাং?
অয়ন: হুম

অয়ন টিফিন খুলে অবাক!
ফ্রাইড রাইস, ভেজিটেবল,ক্রিস্পি চিকেন,বিফ ক্যাসুনাট কারি

অয়ন: এই মেয়ে তো দেখি সব ই পারে
(এক চামচ খেয়ে) বাহ একদম রেস্টুরেন্ট এর মত হয়েছে…….
অয়ন ভাবছে ..
মেয়েটার অনেক গুন। দেখতেও মাশাআল্লাহ্‌ ♥ । তাও কপাল টা খারাপ মেয়েটার কারন সে আমার বউ! আমি তো ওকে ভালবাসি না।একদমইই ভালবাসি না!
তবে অরুকে ভাল না বাসার কোন কারণ নেই! অরু এমন একটা মেয়ে যাকে যে কেউ ভালবাসতে বাধ্য! আমার জায়গায় অন্য কোন ছেলে থাকলে হয়তো অরুকে মাথায় করে রাখত! অরুকে নিজের সব টুক দিয়ে ভালবাসতো!
না।
না! অরু অন্য কারো কেন হতে যাবে??? অরু তো আমার…. শুধু আমার….
অরু আমার পারসোনাল প্রপার্টি! শুধু আমার।অরুর শরীরের প্রতিটা অংশ শুধুই আমার। কাউকে ভাগ দেব না আমি অরুর।
দিবই বা কেন??? অরু শুধু আমার। আমার বউ।
হোক না আমি ওকে ভালবাসি না।তাও অরু আমার।।।।।
★অয়ন নিজেই নিজের সাথে তর্ক করছে অরুকে নিয়ে.
কিন্তু তার সব কথার এক কথা যে সে অরুকে ভালবাসে না ★
/
//
///
//
/
ওদিকে অরুর সারাদিন অনেক ভাল কাটলো! রান্না করেছে আর তার দুই ননদের সাথে গল্প করেছে জুটিয়ে… একসাথে খেয়েছে, জোহরে,আসোরের নামায ও ৩ জনে একসাথে আদায় করেছে… আর অরুর চাইনিক খেয়ে তো সবাই প্রসংসায় পঞ্চমুখ!
আরোহী আর অহনা অরুকে এত আপন করে নিয়েছে আর অরু তাদের যে গল্প করতে করতে তাদের সময়ের খেয়ালই ছিল না……
সারাটা দিন ভাল কাটায় অরুর মন ও খুব ভালইই হয়ে গেছিল! বাধ সাধলো সন্ধা বেলায়!!
পেটে ব্যাথায় অরুর খুব বেশি কষ্ট হচ্ছিলো!!!
আরোহী অহনা নামাযের জন্য ডাকতে এসে দেখে অরু পেট চেপে শুয়ে আছে কুরিয়েমুরিয়ে…
আরোহী : কি হয়েছে। পেটে ব্যাথা?? কেন??
অরু :……..
অহনা: খুব কষ্ট হচ্ছে? ভাইয়াকে বলবো
অরু: না আপু। এই টাইমে আমার একটু এমন হয়
অহনা আর আরোহী অরুকে আর বিরক্ত না করে লাইট অফ করে রুম থেকে বের হয়ে গেল।।

রাত ৮ টা
অয়ন বাড়ী ফিরলো।
রুমে ঢুকে সারা রুম অন্ধকার দেখে অয়ন কিছুটা অবাক হল!
লাইট অন করে দেখলো খাটের এক কোনে অরু শুয়ে আছে!
পাশের টেবিলে রোজের মত লেবুর শরবত রাখা। কিন্তু আজ আর আগের মত অরু দাড়িয়ে নেই গ্লাস নিয়ে……….

অয়ন বাইরের থেকে এসেছে বলে আর অরুর কাছে গেল না।ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে।

অরুকে এমন শুয়া দেখে অয়নের কেন জানি ভাল লাগছে না! যাই হোক গুটিগুটি পায়ে অয়নের আশেপাশে তো সবসময় ঘুরতে থাকে মেয়েটা। আজ এমন শুয়া! তাকালোও না অয়নের দিকে!…
আচ্ছা অরু এমন করে আছে কেন? কি হয়েছে ওর??(অয়ন শাওয়ার ছেরে দাড়িয়ে ভাবছে).
….

চলবে…….

অরুর সংসার
পর্ব-১২
লেখিকা-নিশিকথা

অরুকে এমন শুয়া দেখে অয়নের কেন জানি ভাল লাগছে না!
যাই হোক গুটিগুটি পায়ে অয়নের আশেপাশে তো সবসময় ঘুরতে থাকে মেয়েটা।
আজ এমন শুয়া! তাকালোও না অয়নের দিকে!…
আচ্ছা অরু এমন করে শুয়ে আছে কেন?
কি হয়েছে ওর??(অয়ন শাওয়ার ছেরে দাড়িয়ে ভাবছে)……………

শাওয়ার শেষে অয়ন বের হল একটা ট্রাউজার আর নিল কালারের গেঞ্জি পরে বের হল। অয়ন বের হয়ে একটা জিনিস খেয়াল করলো……….
………….. আজ তার বউ শাড়ি পরা নেই…. তার মত নীল রং এর একটা সালোয়ার কামিজ পরেছে….. পিছে থেকে যা অবজারভ করলো…চেহারা তো দেখায় কায়দা নেই।
অয়ন যেয়ে টেবিল থেকে লেবুর শরবত টা খেয়ে নিল।
তার নজর অরুর দিকে! কি হয়েছেটা কি মেয়েটার!!
অয়ন ভাবছে…
জিঙ্গাসা করবো??
আবার নিজেই বলল মনে মনে …..
নাহ জিঙ্গাস করবো আর কি না কি ভেবে নেবে!

অয়ন খাটের অপসিটের স্কাউচে দিয়ে বসলো লেপটপ নিয়ে। কাজের মাঝে ডুব দিল অয়ন কখন ১০ টা বেজে গেছে খেয়াল নেই তার।
দরজার নক শুনে তাকালো অয়ন! আরোহী খেতে ডাকছে!

অয়ন রুম থেকে বের হতে গিয়ে আবার অরুর দিক তাকালো।।
তারপর আরোহী কে বলল…..
অয়ন : কি তোমাদের নতুন বউ কি ২ দিন রান্না করে অসুস্থ হয়ে গেল নাকি?
আরোহী : ওকি কথা ভাইয়া। ও অসুস্থ!!! চল তুই। আমি ওকে একটু পরে কিছু খাওয়ায় দিবো ডেকে।
অয়ন: হুম ( আজব অসুস্থ অসুস্থ!!! বললেই হয় কি হয়েছে! ডঃ ফারহানার কাছে শুনে মেডিসিন আনিয়ে দিতাম! ধুর। >মনেমনে <) অয়ন নিচে গিয়ে অনিককে দেখে অবাক. অয়ন: আরে ভাই কবে এলে? অনিক : কাল! আজ খবর নেবার সময় হল?? অয়ন : আমাকে তো কেউ বলেই নি অনিক : কাল লেট ফিরেছিলে!! তা ভাবি বলে নি অয়ন: আর লোক পেলো না(মনেমনে ) খাওয়া শেষে অয়ন আর অনিল গেল ছাদে আড্ডা দুতে! আসলে সিগারেট টানতে গেল তারা! ছাদে সময় কাটিয়ে ১১ টা নাগাদ রুমি ঢুকলো অয়ন। রুমে ঢুকতেই দেখে অরু আলমারির কাছে দাড়িয়ে কি যে করছে! অয়নকে দেখে হাতে থাকা কিছু একটা সাথেসাথে লুকিয়ে ফেলল অরু! অয়ন বিষয়টা দেখেছে! আর এটা দেখে অয়নের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে!! অয়ন তার কাছে কিছু লুকানো খুব ই অপছন্দ করে!!!! অয়নঅরুকে দেখেও এবার না দেখার ভান করে লাপটপ নিয়ে বসলো! অরু ওয়াশরুমে চলে গেল ...... অরু যেতেই অয়ন আলমারি খুলল! তার দেখতে হবে যে অরু তার কাছে কি লুকাচ্ছে! আলমারি খুলতেই অয়ন যে দেখলো সেতো বল্ড!!! আলমারিতে তার কাপড় চোপড় কই??? সব তো অরুর কাপড়!!! ৪ পার্ট আলমারির ২ পার্ট ওলরেডি অরুর দখলে সেখানে আগে পুরো আলমারি অয়নের ছিল!! অয়ন ভাবছে যে এই ২ দিন অরু তার কাপড় গুছিয়ে সামনে রাখছে, সেতো খেয়াল ই করে নি যে এর ফাঁকে অরু তার আলমারির অর্ধেকাংশ বাজেয়াপ্ত করে ফেলবে। ধুর আর ভাল লাগে না অয়নের!!! উফ তার সব কিছুতে এখন অরু ভাগ বসাবে নাকি! না অরুকে বলতে হবে আলমারি টা ছেড়ে দিতে! দরকার পড়লে অয়ন তাকে ওয়ারড্রব এনে দেবে নতুন!!! এর মাঝে অয়ন যে কাজে আলমারির কাছে এসেছিল ভুলেই গিয়েছিল। ফিরতে গিয়ে মনে পড়লো, আবার আলমারি খুলল। অরুর লুকানো জিনিসটা দেখে অয়ন বুঝলো বিষয় টা। অয়ন: ওহ তা আমাকে সোজাসুজি বললেই হত।লুকানোর কি আছে। ওয়েট , তুমি নিজেই বলবা আমাকে। অয়ন খাটে লাপটপ নিয়ে বসলো কাজে। / // / অরু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আস্তে আস্তে খাটের কাছে আসলো। খাটে এক শুতেই অয়ন অরুর উপর আধশোয়া হয়ে শরীরে ভার ছেরে দিল। অরুর বোঝ হয় এখনি দম আটকে যাবে!!!! অরু ভয় পাচ্ছে! এই অবস্থায় ও কি তাহলে???? কি হতে চলেছে তার সাথে? অরু: (কাপাকাপা কন্ঠে) আমাকে ছেড়ে দিন। আজকে। আমার কাছে আজকে থেকে ১ সপ্তাহ এসেন না অয়ন : (অরুর গলায় ঠোট বুলাতে বুলাতে) হুম কেন?? অরু: প্লিজ অয়ন : কেন সেটা তো বল অরু: আমি অসুস্থ অয়ন: দেখলাম। কিন্তু বললে না তো কি হয়েছে? অরু: ..................... অয়ন: বল। অরু : ............. (অরু এবার হুহু করে কেঁদেই দিল.... অরুর হুট করে কাঁদায় অয়ন মোটেও প্রস্তুত ছিল না।দ্রুত উঠে গেল অরুর উপর থেকে। ) অয়ন : আরে কি হল কাঁদছো কেন? (অরু কেঁদেই চলেছে) অয়ন: আচ্ছা বাবা আমি আসবো না ১ উইক কাছে। প্লিজ থামো (অরু কাঁদতে কাঁদতে এক কোণে শুয়ে পরলো খাটের) অয়নের খারাপ লাগতেছে। কেমন করে কাঁদলো মেয়েটা! কিন্তু এই মেয়েই গত কয়দিন রাতের পর রাত কেঁদেছে অয়নের জানা নেই! রাত ২:৩০........ অয়নের ঘুম ভাংলো কারো গোঙানির শব্দে। অরু পেটে ব্যাথায় গোঙাচ্ছে পেট চেপে। অয়ন সাথেসাথে উঠে বসলো! অয়ন: অরু? কি হয়েছে? অরু????? খুব কষ্ট হচ্ছে?? অরু : আর পারছি না আমি।খুব কষ্ট অয়ন: .................... (অয়ন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না...অরুর চোখের পানি আর চাপা আর্তনাদ যেন অয়নের বুকে ছুরিকাঘাত করছে.. ..এত রাতে কাকে ডাকবে?? আরোহীকে?? না এত রাতে স্বামি স্ত্রির একটা প্রাইভেসি আছে! ডঃ শুশান্ত কে ফোন করবে?? না না উনি তো ছেলে ডঃজয়া???? পাগল নাকি!!! আপদকে ফোন করে বিপদ ডাকা যাবে না ডঃফারহানা? এত রাতে ফোন করা ঠিক হবে না ) অয়ন না পেরে নেটে সার্চ দিল। গুগল ই সব সমস্যার ইন্সট্যান্ট সমাধান বাসার মেডিসিন এক্স এ পেইনকিলার থাকতে পারে । অয়ন এরপর দ্রুত পায়ে নিচে দিয়ে একটা হট ব্যাগ রেডী করে নিল। এক গ্লাস কড়া চিনির শরবত বানালো।। তারপর অনেক খুঁজে একটা পেইন কিলার পেল। উপরে গেল সব নিয়ে। অয়ন: অরু! ওঠো "! অরু (অয়ন অরুকে কোনমতে ধরে উঠালো..... অরুকে পেইন কিলার খাইয়ে দিলল অয়ন: অরু এই নেও এই চিনির শরবত টা এক ঢকে খেয়ে নিবা (অরুর হাত কাঁপছে অয়ন নিজে অরুকে খাইয়ে দিল) অয়ন : শোও এখন ( অরুকে শুইয়ে দিয়ে ) এই হট ওয়াটার ব্যাগ টা পেটে দিয়ে শোও আরাম পাবে ১ ঘন্টা পর অরুর ব্যাথাটা কমলো ! অরু ঘুমিয়ে গেল। ♥♥♥♥♥♥ সকালে অরুর ঘুম ভাংলো, অরু চোখ খুলে অয়নকে দেখলো। অরুর মুখে স্মিত হাসি। মাশাআল্লাহ কি সুন্দর তার বর টা। ঘুমের মাঝে কি ইনসেন্ট লাগছে তাকে! গতকাল রাতে অয়ন তাকে অনেক যত্ন করেছে।অয়ন অরুর পাশে না থাকলে হয়তো অরু পেতের ব্যাথায় শেষ হয়ে যেত.... অরু ভাবছে... মানুষ টা বাইরে দিয়ে যতই খারাপ প্রিটেন্ড করুর মন টা তার ভাল। একারনেই তো অরু তাকে এত ভালবাসে। আর সে কিনা বলে অরুকে ভালবাসে না। ভাল না বাসলে কি অরুর এত কেয়ার করতো । অরুর শরীর টা এখন অনেকটা বেটার লাগছে। শুধুমাত্র অয়নের কারনে! না অরু মনে মনে ভেবে নিয়েছে সে অয়নের মন জয় করবেই। যে করে হোক অয়নের মনের এক কোনে নিজের জন্য জায়গা তৈরী করেই ছারবে, অয়নের ভালবাসা সে অর্জন করবেই ♥♥ ঘড়ির দিক তাকাতেই অরুর চোখ কপালে! তখন ৮ বাজে। অরু ধরফরিয়ে উঠলো! এখন অরু রান্না কখন করবে? আজ কি আবার অয়নের ব্রেড বাটার খেতে হবে নাকি!!! দ্রুত ফ্রেশ হয়ে, অয়নের কাপড় বের করে নিচে গেল। নিচে গিয়ে দেখে আরোহী রান্নাঘরে অরু : আসসালামুআলাইকুম আপু আরোহী : ওয়াকাইকুম আসসালাম♦ শরীর এখন কেমন অরু : আলহামদুলিল্লাহ আপু এখন ভাল। আপনি এখানে কি করছেন? আমি রান্না করে দিচ্ছি দ্রুত কিছু। আরোহী : আরে না আমি খিচুরি রান্না করেছি আজকে,সাথে আচার আছে, ডিম ভাজি।অয়নের খুব প্রিয় নাস্তা! অরু: তাই আপু? আরোহী : হুম। তোমাকে যাওয়ার আগে শিখিয়ে দিব অরু : আচ্ছা আপি। আমি চা বানাই? আরোহী : না আমি বানিয়েছি। তুমি উপরে যাও, দেখ অয়নের কিছু লাগে কি না। অরু আরোহীর কথা মত উপরে গেল। অরুর খুব লজ্জা করছে কেন জানি। রুমে ঢুকতেই দেখলো অয়ন শার্ট পড়ছে। অয়ন অরুকে দেখে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল অয়ন: এখন শরীর কেমন? অরু: জি ভাল (মাথা নিচু করে, এমন একটা ভাব তার যে অয়নের চোখে চোখ মিলালে মাটিতে মিশে যাবে লজ্জায় অয়ন: এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে বুঝি না। এত লজ্জা আসে কোথা থেকে তোমার? আমাকে একটু ধার দেও। আমার তো একটুও লজ্জা নেই (অরু অয়নের কথা শুনে হেসে দিল) অয়ন ওয়ালেট, মোবাইল পকেটে রেখে কোট হাতে নিল। মাশা আল্লাহ্‌ লাগছে অয়নকে। অরু মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখছে তার বর কে মায়াভরা চোখে। অয়ন : সেলোয়ার কামিজ পরলে বউ বউ লাগে না তোমাকে। তেমন একটা ফিল আসে না আর কি। সুস্থ হলে এসব পরার দরকার নেই আর। (বলে নিচে চলে গেল) দেখতে দেখতে ৭ দিন পার হয়ে গেল। ওদিকে জয়ার বাবা অনেক অসুস্থ ! হার্টে ছিদ্র পাওয়া গেছে কয়েকটা। এই নিয়ে জয়া খুব ই টেনশনে আছে। আজ জয়া তার বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে ডঃশুশান্ত এর কাছে। গাড়ী তে বসে জানালার দিক তাকিয়ে আছে। হটাৎ জয়া একটা জিনিস খেয়াল করলো........ সেদিন বাসায় ফিরে জয়ার মন খুব খারাপ ছিল অয়নের কথায়। কষ্টে তার বুক ফেটে যাচ্ছিল। সেদিন রাতেই জয়ার বাবা অসুস্থ হয়ে যান। !!! জয়ার বাবা অসুস্থ হবার পর থেকে জয়া যেন তাকে নিয়েই বিজি। আশ্চর্য ওরপর থেকে এতদিন জয়ার একবারও অয়নের কথা মনে পরে নি!!! তাহলে কি অয়নের কথাই ঠিক? জয়া কি নিজের উত্তর পেয়ে গেল?? চলবে...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here