#অপ্রেমের গল্পটা যেভাবে শুরু হয়েছিলো
#পর্ব-১৯,২০
#সাবিকুন নাহার নিপা
পর্ব-১৯
ঢাকায় ফেরার পরও বিন্তীর মন খারাপ ভাব দূর হলো না। ফেরার পর পর ই শিশিরের বাবা তার মনোভাব প্রকাশ করলেন। বিন্তী তাকেও কিছু বলল না। চুপচাপ শুনলো কেবল। সকলের কথা ফেলে দেয়া যায় না। বিন্তী নিজেও এই ব্যাপার নিয়ে খুব ভেবেছে। এসব নানান চিন্তা ভাবনা নিয়ে বিন্তীর মন খারাপ ছিলো। শিশির সেটা খেয়াল করলো। বাড়ি থেকে আসার পর পর ই যে ওর মন খারাপ সেটা লক্ষ্য করেছে। কিন্তু মন খারাপের কারণ বুঝলো না। শিশির চেষ্টা করলো বিন্তীর মন ভালো করার। বিন্তীকে বলল,
“এই তুমি আমার সঙ্গে এক জায়গায় যাবে?”
“কোথায়?”
“যেকোনো এক জায়গায়? ”
বিন্তী বুঝতে না পেরে বলল, মানে?
“আমার বন্ধুরা তোমার সঙ্গে দেখা করতে চায়। তাই ভাবছি তোমাকে নিয়ে যাব। ”
“তোমার বন্ধুরা আমার সঙ্গে হঠাৎ দেখা করতে কেন চায়?”
“হঠাৎ না। বিয়ের খবর শুনেই চাইছিল। ”
“আচ্ছা।”
“আচ্ছা আবার কী! বলো যাবে কী না? ইয়েস অর নো!”
“আমি গিয়ে কী করব। ”
“নাচতে হবে না এটুকু নিশ্চিত থাকো। ”
বিন্তী হেসে ফেলল। বলল,
“ওদের বাসায় আসতে বললেই হয়।”
“কেন আমার সঙ্গে গেলে কী তোমার পায়ে ফোস্কা পড়বে?”
“না। কিন্তু বাসায় আনলে আপ্যায়ন করা হবে ভালোমতো। রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর চেয়ে বাসায় রান্না করে খাওয়ানো ভালো না?”
শিশিরের আইডিয়া পছন্দ হলো। বলল,
“গুড আইডিয়া। রান্না কী তুমি করবে?”
“হ্যাঁ। চাচী আর আমি মিলে করব।”
“আচ্ছা। তাহলে ওদের বলে দেই। ”
“দাও।”
শুক্রবারে শিশিরের পাঁচ বন্ধু বাসায় এলো। রান্নাবান্না বিন্তীই করেছে। শিরিন পাশে থেকে অবশ্য দেখিয়েও দিয়েছে। শিশিরের বন্ধুরা এই বাসায় খুব একটা আসে না। এখন বন্ধুর বউ দেখার লোভে কেউ আর তেমন আপত্তি করলো না।
শিশিরের পাঁচ বন্ধুর নাম মুন্না, রাসেল, মিশুক, রিশাদ আর জাকি। কেউ কেউ শিশির টাইপ আবার কেউ কেউ একটু অন্যরকম। রাসেল আর মিশুক শিশিরের স্কুলের বন্ধু। এই দুজন কে শিরিন ভালো করে চিনে। বাকীদের নাম জানলেও আলাপ, পরিচয় তেমন নেই।
বিন্তী সবার সঙ্গে হেসেই কথা বলল। প্রথমে সবার কথা বলতে অস্বস্তি হলেও কিছুক্ষণ পর থেকে ভাবী ভাবী করে মুখ দিয়ে ফেনা বের করে ফেলল। কথায় কথায় মিশুক জিজ্ঞেস করলো,
“ভাবী একটা প্রশ্ন?”
“জি বলুন।”
“আপনার নাম কী বিন্তী নাকি বৃন্তী?”
বিন্তী হেসে বলল, আমার নাম আসলে বৃন্তী রাখা হয়েছিলো। কিন্তু কিভাবে কিভাবে যেন বৃন্তী টা বিন্তী হয়ে গেছে।
শিশির এই কথা শুনে মন খারাপ করে ফেলল। বিন্তীর নামের বিষয় টা তো ওর জানা নেই।
মিশুক হেসে বলল, আমি আপনার নাম শিশিরের মুখে শুনেই বলেছিলাম যে নাম সম্ভবত বৃন্তী। শিশির বলল না ও খুব জানে।
এরপর শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলল, দেখলি গবেট, আমার অনুমান মিলে গেছে।
বিন্তী হেসে ফেলল। শিশির মুখ ভার করে ফেলল। যেন নামের ব্যাপার টা ও’কে না বলে বিন্তী মস্ত বড়ো অন্যায় করে ফেলেছে। এই অন্যায়ের কোনো ক্ষমা নেই। একশ চুয়াল্লিশ ধারায় এই অন্যায়ের শাস্তি হলো বুড়িগঙ্গায় দশ টা ডুব দিয়ে গোসল করা।
এরপর আরও কথাবার্তা হলো। কাকতালীয় ভাবে মিশুকের সঙ্গে বিন্তীর অনেক মিল। সেগুলো নিয়ে আলোচনা করে দুজন আবার খুব হাসাহাসি করছিল। শিশির সব টা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। গায়ে জ্বালা ধরে গেল বিন্তীর হাসি দেখে। এদের সঙ্গে এতো হেসে হেসে কথা বলার কী আছে! ও’কে কী ক্লোজ আপ কোম্পানি টাকা দিচ্ছে বিজ্ঞাপনের! ইচ্ছে করলো দাঁত গুলো হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দিতে। তারপর ছুটে যাবে টুথপেষ্ট এর এড।
খাওয়ার সময় শিশির বলল,
“এই সব রান্না মা করেছে তোদের জন্য। ”
বিন্তী পাশেই ছিলো। সরু চোখে একবার শিশির কে দেখলো। শিরিন পাশেই ছিলো। বলে উঠলো,
“আরে না। সব তো বিন্তী করেছে। আমি তো সঙ্গে ছিলাম। ”
সবাই তো হৈ হৈ করে উঠলো। খাওয়ার আগে আরেক দফা ভাবী ভাবী হলো।
শিশিরের ইচ্ছে করছে খাবারের বাটি দিয়ে একেকটার মাথা ফাটিয়ে দিতে। আগে জানলে খাবারে ফিনাইল মিশিয়ে রাখতো। তারপর ভাবী ভাবী ছুটে যেত। আর ভাবীর দাঁতগুলোও বন্ধ হতো।
খাওয়ার সময়ে শিশির পাঁচ বন্ধুর গুষ্টি উদ্ধার করলো। মনে মনে ওদের পাঁচ পুরুষ কে গালিগালাজ করলো। তারপর নিজেকে গালি দিলো। এতদিন নিজেকে বুদ্ধিমান ভাবতো। আজ বুঝতে পারছে যে ও একটা বোকার হদ্দ। মাথাভর্তি মানুষের বিষ্ঠা ছাড়া কিছুই নেই।
খাওয়া দাওয়া শেষে আরও গল্পগুজব হলো। শিশির চাইলো শয়তান গুলো কে ভাগাতে। কিন্তু বদমায়েশের দল আবারও ভাবী ভাবী শুরু করলো। আর ভাবী বেচারি হাসি হাসি মুখ নিয়ে গল্প শুনছে। এমন ভাব করছে যেন ইলেকশনে যোগ দিয়েছে। আর এখন দলের লোকের কথা শুনছে। ভাবীর সঙ্গে এসে ভাবীর দেবর আর শাশুড়ীও যোগ দিয়েছে। এরাও হেসে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে বলদগুলোর কথা শুনে।
নিজের মা ভাইকে দেখে শিশিরের এখন সন্দেহ হচ্ছে যে এরা আসলেই কী ওর নিজের লোক! নাকি ও’কে কুড়িয়ে এনেছে। ওর বরাবরই ধৈর্য্য কম। আপদ গুলো বিদায় করতে না পেরে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। তার উপর সকলের হা হা হি হি সহ্য করতে হচ্ছে। শিশির তুষার কে বলল,
“একটু ঘরে আয় তো। ”
তুষার অনিচ্ছাসত্ত্বেও গেল। ওখানকার আড্ডা ভালোই জমছিল। শিশির ডাকায় বিরক্ত হলো। বলল,
“কী বলবি বল।”
শিশির ঠান্ডা গলায় বলল,
“তোর পড়াশোনা নাই?”
তুষার বিস্মিত গলায় বলল,
“আমি আবার কী করলাম।”
শিশির একটা অপ্রিয় কাজ করলো। বিনা কারনে তুষারের পেটে কয়েকটা ঘুষি মারলো। তুষার হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। হতভম্ব তুষার কে একা রেখে শিশির বেরিয়ে গেল বন্ধুদের ওখানে। মেজাজ টা এখন একটু ঠান্ডা হয়েছে।
****
বন্ধুরা চলে গেল। তারা বলে গেল যে ভাবী আর আন্টির আপ্যায়নে অত্যন্ত সন্তুষ্ট। তাই আবারও আসবে। শিশির মনে মনে বলল,
“তোদের ব্যবস্থা পড়ে নেব। ”
শিরিন মুখ ফসকে বলে ফেলল,
“ছেলেগুলো খুব ভালো। মনে প্যাচ নেই। তাই না বিন্তী?”
বিন্তী হ্যাঁ বলতে যাবে তার আগেই শিশির ঝাপিয়ে পড়লো। বলল,
“হ্যাঁ ওরা ভালো। আর আমি খারাপ। ”
“তোকে খারাপ কখন বললাম?”
“এখন ওদের শিশির বানিয়ে ঘরে রেখে দাও। শিশির এক, শিশির দুই। ”
শিরিন বিন্তীর দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি ভুল টা কী বললাম! ওর বন্ধুদের ভালো বলাও দোষ। ”
শিশির চিৎকার করে বলল,
“হ্যাঁ আমি খারাপ। আমাকে ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে এনেছো। সেখানে গিয়ে থাকব এখন থেকে। ময়লা পঁচা খেয়ে থাকব। খুশি সবাই? ”
এরপর মা ছেলের কিছুক্ষন তর্ক বিতর্ক চলল। শিরিন ক্লান্ত হয়ে বলল,
“আমি আর কথাই বলব না। বোবা হয়ে থাকব। তুই যদি এরপর মা মা করতে আসিস চাপকে পিঠের চামড়া তুলে ফেলব। এরপর মরিচ মাখিয়ে রোদে শুকাতে দেব। ”
বিন্তী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলো। ও তো উল্টাপাল্টা কিছু বলে নি। হেসেই তো কথা বলল। তবুও শিশির এতো রেগে গেল কেন!
এই ছেলের রাগ, মান, অভিমান কিছুই বোঝা যায় না।
ওদিকে তুষার ঘুষি খেয়ে ঘরে বসে আছে। ও জানেই না যে ওর দোষ টা কী। শিশিরের কী সত্যি সত্যি ই মাথাটা গেছে!
চলবে…
#অপ্রেমের গল্পটা যেভাবে শুরু হয়েছিলো
#পর্ব-২০
“শিশির তোমার সমস্যা কী বলোতো?”
শিশির রাগে ফুসছে। বিন্তীর কোনো কথার জবাব দিলো না। বিন্তী আবারও জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি হঠাৎ রেগে গেলে কেন? আমি রাগের কী এমন করেছি?”
“তুমি তো কিছুই করো নি। সব দোষ আমার। গুন্ডাগুলো কে বাড়িতে আনাই আমার দোষ। ”
বিন্তী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“তোমাকে বোঝা মুশকিল। কখন তোমার রাগ হয়, কখন অভিমান হয়। বুঝিনা।”
“তোমার বুঝতে হবে না। তুমি থাকো তোমার মতো। ”
বিন্তী আর কথা বলল না। পাশ ফিরে শুয়ে রইলো। এই শিশির টা কী সত্যিই এমন! এমন হলে হয়! বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তো রাগ কন্ট্রোল করতে শিখতে হবে। পরে এই ব্যাপার নিয়ে কথা বলবে। এভাবে আসলে চলতে দেয়া যায় না। সবসময় ঝগড়াঝাটি, ঝামেলা ভালো লাগে না। ওদের দুটো ভালো কথা হলে বাকী আটানব্বই টা হয় ঝগড়ার কথা। এভাবে চলতে দেয়া যায় না।
শিশিরও পাশ ফিরে শুয়ে রইলো। বিন্তীর উপর আজ খুব রেগে গেছে। কই বিন্তী তো ওর সঙ্গে এতো ভালো করে কথা বলে না। আর বাইরের ছেলেগুলোর সঙ্গে এতো হাসাহাসির ই বা কী আছে। নিজের নাম বৃত্তান্তই বা ব্যখ্যা করার কী দরকার! ফাজিল মেয়ে!
***
বিন্তী আর শিশিরের সম্পর্ক যত দিন যাচ্ছে ততো জটিল হচ্ছে। শিশির চায় বিন্তী সারাদিন ঘরেই থাকুক। বাইরে গেলেও কখন ফিরবে, দেরি কেন হচ্ছে এই নিয়ে ঝগড়া, ঝামেলা লেগেই থাকে।
এর মধ্যে একদিন বিন্তী বাড়িতে কাউকে না বলে বাইরে গেল। শিশির বাইরে গেছিল। ফিরে এসে শুনলো বাইরে গেছে। শিরিন কে জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি জানতে চাও নি কোথায় গেছে?”
“না। ”
“কেন?”
“ও কী বাচ্চা! কলেজ পড়ুয়া মেয়ে হলে নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করতাম। ”
শিশির তুষার কে জিজ্ঞেস করলো,
“তুই কিছু জানিস?”
তুষার বলল,
“তোদের কোনো ব্যাপারে আমি আর নেই। সেদিন বিনা দোষে মার খেলাম। তখনই তওবা করেছি।”
শিশির অপেক্ষা করতে লাগলো। রোজ রোজ ঝামেলা ওর নিজেরও ভালো লাগে না। বিন্তী আসলে আজ ভালো করে কথা বলবে।
বিন্তী ফেরার পর শিশির জিজ্ঞেস করলো,
“কোথায় গিয়েছিলে?”
শিশির স্বাভাবিক গলায় প্রশ্ন করলে বিন্তীও স্বাভাবিক গলায় উত্তর দিলো,
“কাজ ছিলো। ”
“কী কাজ?”
বিন্তী বিরক্ত হলেও প্রকাশ করলো না। গলার স্বর স্বাভাবিক রেখেই বলল,
“কিছু বই কিনলাম। অনলাইনে চাকরির ফর্ম পূরণ করলাম। ”
শিশির অবাক গলায় বলল,
“তুমি চাকরি করবে?”
“অবাক কেন হচ্ছো শিশির? অবশ্যই চাকরি করব।”
“চাকরি কেন করবে? তোমার যা দরকার সব তো পাচ্ছোই। ”
“এটা কেমন কথা!”
শিশির নরম গলায় বলল,
“চাকরি করতে হবে কেন বিন্তী?”
বিন্তী কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল,
“তুমি তোমার বাবার পয়সায় চলতেই পারো শিশির। কিন্তু শ্বশুরের কাছ থেকে হাত পেতে টাকা নিতে আমার লজ্জা লাগে। ”
শিশির চুপ করে রইলো। সূক্ষ্ম অপমান টা গায়ে মাখলো না। বিন্তীকে আর কিছু বলল না।
বিন্তী বলল,
“আরও এক জায়গায় গিয়েছিলাম। জানি তুমি শুনে রিয়েক্ট করবে। তবুও বলছি। সাব্বিরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।”
শিশির বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো। বিন্তী বলল,
“মনে হলো ব্যাপার টা জানানো উচিত তোমাকে।”
শিশির রাগলো কী না বোঝা গেল না। বলল,
“ভালো তো। ”
“ভালো খারাপের কিছু না শিশির। সাব্বিরের কিছু জিনিস আমার কাছে ছিলো। সেগুলো দেয়ার জন্য। ”
শিশির হেসে ফেলল। বলল,
“জিনিসপত্র দিতে তোমাকেই কেন যেতে হলো। কাউকে দিয়ে পাঠালেই পারতে।”
“আমার কাছে মনে হয়েছে আমি গেলেই ভালো হবে। ”
“বেশ বেশ। তা কেমন আছে সাব্বির সাহেব। উনি কী বিয়ে করেছেন?”
“খেঁজুরে আলাপ করতে যাই নি আমি। ”
“আচ্ছা।”
“তুমি ব্যাপার টা অন্যভাবে নিচ্ছো কেন?”
শিশির অবাক হবার ভান করে বলল,
“কীভাবে নিলাম?”
“তুমি অন্য টোনে কথা বলছ। আমি তোমাকে চিনি।”
“আমাকে চেনার জন্য থ্যাংক ইউ। তবে একটা কথা বলি। সাব্বির সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে আমাকে নিলে ভালো হতো। সৌভাগ্যবান ভদ্রলোক কে দেখার আমার খুব ইচ্ছে ছিলো। ”
বিন্তী শিশিরের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“শিশির আমি না বললে তুমি জানতেও পারতে না যে সাব্বিরের সঙ্গে আমি দেখা করতে গিয়েছিলাম। তাই এই ব্যাপারে রিয়েক্ট কোরো না প্লিজ।”
শিশির এই পর্যায়ে নিজের ফর্মে চলে এলো। রেগে বলল,
“না না আমি রিয়েক্ট কেন করব! তুমি প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে যাবে তাতে আমি কেন রিয়েক্ট করব!”
বিন্তীও রেগে বলল,
“আস্তে কথা বলো। আর একদম উল্টাপাল্টা কিছু বলবে না।”
“ওকে ঠিকঠাক কথা বলব। তা তোমার প্রেমিক নিশ্চয়ই অনুতপ্ত। ক্ষমা চাইছে! আরেকটা সুযোগও চাইছে নিশ্চয়ই। এখন শুধু তোমার মনের বরফ গলার অপেক্ষা। ”
বিন্তীর মন টা খারাপ হয়ে গেল। শিশির এই কথাগুলো বলছে ওকে! বলল,
“ছিঃ শিশির!”
“ছিঃ কেন বলছ! হতেই পারে। ”
“তুমি আমাকে এই চিনলে!”
শিশির আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ ঘরের প্রতিটা জিনিস ভাঙতে লাগলো। ফুলদানি থেকে শুরু করে গিটার সব ভেঙে ফেলল। আওয়াজ পেয়ে শিরিন আর তুষার ছুটে এলো। তুষার জিজ্ঞেস করলো,
“ভাবী কী হয়েছে?”
শিরিন তুষার কে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“ও’কে কেন জিজ্ঞেস করছিস! ও’র কী কিছু হওয়া লাগে। এমনি এমনিই ইস্যু পেয়ে যায়।”
বিন্তী শিশির কে কিছু বলল না। চুপচাপ দেখলো। ভাঙচুর শেষ হবার পর বলল,
“নিজে রোজগার করে সেই পয়সা নষ্ট করো। কদিন আর বাবার পয়সা নষ্ট করবে?”
শিশির রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো। বলল,
“তোমার বাপের পয়সা তো আর না। তাহলে তোমার কেন লাগছে?”
“হ্যাঁ আমার বাপের পয়সা না ঠিক ই। কিন্তু আগে নিজে রোজগার করো তারপর বুঝবে।”
” এতো লেকচার আমার দরকার নেই। তোমার মতো মেয়ের লেকচার তো না’ই। ”
“আমার মতো মানে কী? আমি খারাপ? তাতো আমি স্বীকার ই করি। ”
“অকৃতজ্ঞ কোথাকার!”
বিন্তী আর কিছু বলল না। গাল বেয়ে কয়েক ফোটা পানি পড়লো। শিশির বেরিয়ে গেল।
রাত দশ টায় শিরিনের ফোনে থানা থেকে ফোন এলো যে শিশির থানায় আছে। ওর বন্ধু মিশুক কে রেস্টুরেন্টে ডেকে এনে মেরেছে। রেস্টুরেন্টের জিনিসপত্রও ভেঙেছে। তাই তারা পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দিয়েছে।
শিরিন খবর শুনে পাগল হয়ে গেল। তুষার কে বলল,
“তোর বাবাকে ফোন কর।”
বিন্তী সব টা শুনে কঠিন গলায় বলল,
“দুটো দিন জেলে থাকতে দেয়া উচিত। তাহলে হয়তো মজা টের পাবে।”
চলবে…..