অনুভূতির_সংঘাত_১১

অনুভূতির_সংঘাত_১১
ছামিনা_বেগম

-কি রে , কোথায় তুই ? ফিরবি কখন ?

– আমার ফিরতে একটু রাত হবে আপু । পুরোনো বন্ধুদের সাথে একটু ঘুরতে এসেছি । কেন ? মেসেজ করেছিলাম তো , দেখোনি ?

ফোনের অপর পাশে দাড়িয়ে ঈশান ইশারায় বন্ধুকে গানের আওয়াজ কমাতে বলল । কিন্তু তার আগেই উচ্চস্বরে মিউজিকের শব্দ শুনে বৃষ্টির বুঝতে বাকি রইল না ইশান কোথায় গেছে । বৃষ্টি নিজের রাগটা যথাসম্ভব সামলে বলল,

– আজ বাড়িতে দাওয়াত রেখেছে আব্বু । সাড়ে ন’টার মধ্যেই যেন বাড়িতে পাই তোকে । আর হ‍্যাঁ , ড্রিংকস করে আসলে কিন্তু পিটিয়ে পিঠের ছাল তুলে দেব । কথাটা মনে থাকে যেন ।

নিজের কথা শেষ করেই খট করে কল কেটে দিল বৃষ্টি । বিরক্তি ভরে ফোনটা ছুড়ে ফেলল বিছানায় । এই অ্যালকোহল নামক অখাদ্য বস্তুটি কবে পিছু ছাড়বে ওর । এর মোহে পড়েই নিজের জীবনটা তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছে আজিম হক । বাবাকে দোষ দেয় না বৃষ্টি । মায়ের ব্রেস্ট ক‍্যানসারের লাস্ট স্টেজে এসে ধরা পড়ায় কিছুই করার ছিল না আর । মাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল আব্বু । সবাই বলে বৃষ্টি নাকি গানের গলা তার মায়ের থেকে পেয়েছে । সেই প্রানপ্রিয় স্ত্রীকে অকালে হারিয়ে আজিম হক অ্যালকোহলকেই নিজের সার্বক্ষনিক সঙ্গী বানিয়েছিলেন । আর এখন বৃষ্টিসহ পুরো পরিবারকে এর মাশুল গুনতে হচ্ছে । সেই থেকে বৃষ্টি যথাসম্ভব চেষ্টা করে অন্তত ভাইকে এই ছাইপাশ গেলা থেকে আটকাতে । কিন্তু একজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে তো সারাক্ষণ নজরবন্দি করে রাখা সম্ভব নয় । বৃষ্টি হতাশ হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়াল । আয়নার নিজের দিকে তাকিয়ে এক হেরে যাওয়া রমনী ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেল না সে । মন খারাপের অসুখটা বেশ ভালো করেই মাথা চাড়া দিয়েছে এবার ।

রান্নাবান্নার পাঠ চুকিয়ে সদ‍্য গোসল সেরেছে বৃষ্টি । ভেজা চুল থেকে এখনো টুপটাপ করে জল পড়ছে । বৃষ্টি পুরোনো আমলের বিশালাকার কাঠের আলমারিটির দরজা খুঁজে চিন্তিত হয়ে তাকাল । আজ কি সে শাড়ি পড়বে সে ? একটা বেগুনী রঙের কাতানের ওপর হাত রেখেও সরিয়ে নিল । শাড়িটা বেশ পুরোনো , তবুও নতুন জেল্লা একটুও কমেনি । শাড়িটা ভার্সিটিতে পড়াকালীন সময়ে একবার পড়েছিল বৃষ্টি । শিমুলের যেন চোখের পলক পড়ছিল না বৃষ্টির থেকে । সেবার খুব লজ্জা পেয়েছিল বৃষ্টি । বান্ধবীরা যা তা বলে ক্ষেপিয়েছিল । পুরোনো স্মৃতি বৃষ্টিকে লাল আভায় রাঙিয়ে দিয়ে গেল । কিন্তু….! নাহ !এটা একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে । নিজেকেই ধমকালো বৃষ্টি । কেন পড়বে সে শাড়ি ? শিমুলকে মুগ্ধ করতে ? কিন্তু সে তো আর এখন তার প্রেমিক নয় । সে এখন অন্য একজনের স্বামী , কারো বাবা। একজন বিবাহিত পুরুষকে নিয়ে এলোমেলো ভাবার অপরাধে বৃষ্টির অন্তঃকরণ থেকে কেউ তীব্র ভৎসনা করে উঠল । কিন্তু মন মানতে চাইলো না । আচ্ছা , শিমুলের স্ত্রী শাড়ি পড়ে সামনে এলে কি শিমুল তখনকার মতো মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকে যেভাবে দেখত বৃষ্টিকে ? ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল বৃষ্টির । কেন যে আজ মনের অজান্তেই নিজেকে তুলনা করতে ইচ্ছে করছে শিমুলের বৌয়ের সাথে । আচ্ছা , শিমুলের বৌ কি ওর থেকেও সুন্দর ? বিকেলের সেই শাড়ি পড়া মেয়েটাই কি শিমুলের স্ত্রী ? কিন্তু শিশুটিকে নিয়ে এত কান্ড হয়ে গেল । যদি ওকে মহিলা শিমুলের স্ত্রী হয়ে থাকে তাহলেও ওই দৃশ‍্যপটটি কেন যেন খাপছাড়া মনে হলো বৃষ্টির । বুদ্ধিমতি বৃষ্টি এত এত প্রশ্নবাণে যখন জর্জরিত তখন মিতুলের ডাক অদৃশ্য ওষুধের মতো কাজ করল ।

– আপা , মেহমান আসার সময় তো হয়ে গেল । আমি কি আগেই টেবিলে খাবার সাজাব ?

মিতুল আপা দরজায় এসে দাড়িয়েছে উত্তরের অপেক্ষায় । বৃষ্টি আলমারি থেকে একটা কটনের চুড়িদার বের করে বিছানায় রাখতে রাখতে বলল ,

– এত আগেই রাখার দরকার নেই । ওরা আসলে পরে সাজানো যাবে ।

– আচ্ছা ।

মিতুল চলে গেলে একটা বিষয় মাথায় আসতেই বৃষ্টির বুক কাঁপতে লাগল । আজ সাত বছর পর সেই মানুষটার সামনাসামনি হবে সে । সে কি কোনো কৈফিয়ত চাইবে ? যদি চায় তাহলে কি বলবে বৃষ্টি ?
তারপর মনে হলো সে তো নিজের জীবনটাকে গুছিয়ে নিয়েছে । তাহলে বৃষ্টি কেন পুরোনো ক্ষতে খুচিয়ে আবার রক্তাক্ত করবে ! বৃষ্টি তা কখনোই করবে না । একবুক নিশ্বাস নিয়ে অনেকটা আত্মবিশ্বাস ভরে নিতে চাইল বৃষ্টি । নিজের দূর্বলতার বহিঃপ্রকাশ করে নিজেকে ছোট করবে না সে । যা অতিত তা বরং অতীতের থাক , বর্তমানে তার কি কাজ ? বারংবার নিজেকে এই কথাটা বোঝালেও মন অশান্ত হয়ে উঠছে বৃষ্টির । সময় যত গড়াচ্ছে তার সাথে তাল মিলিয়ে বেড়ে চলেছে বৃষ্টির নিজের সাথে নিজের দ্বন্দ্ব । বাইরে হর্ণের শব্দ ভেসে আসছে । শিমুলরা বোধহয় ফিরল অফিস থেকে । আর মাত্র কিছুক্ষণ ! পরস্পরের মুখোমুখি হওয়ার সেই সন্ধিক্ষণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগল বৃষ্টি ।

*****

যখন থেকে পুতুল জানতে পেরেছে এতদিন যেই বাড়িটায় ওরা থাকছে সেটা আর কেউ নয় বৃষ্টিদের বাড়ি । তখন থেকেই শিমুলের প্রতি রাগের সাথে সাথে তার নির্লজ্জতায় পুতুলের বিস্ময় সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে উত্তরোত্তর । এক অদৃশ্য অনলের ধিকিধিকি আঁচে সর্বাঙ্গ জ্বলে যাচ্ছে তার । মানুষ এতটা নিচ , এতটা বেহায়া হয় কি করে ? সে ভেবে পাচ্ছে না বড়দার মাঝে কি মনুষ্যত্ব বলতে কিছু অবশিষ্ট আছে ? নাকি সেটাও বিসর্জন দিয়েছে সে ?

পুতুলের এমনতর ভাবনার সাথে সাথে তার হাত দুখানিও চলছে সমান তালে । ওর ইচ্ছে তো করছে তুলনকে নিয়ে এই মুহূর্তে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে । যেই বাড়িতে অহনা ভাবির খুনির বসবাস সেই বাড়িতে একি সঙ্গে ভাবির একমাত্র স্মৃতিচিহ্ন তুলনকে রাখতেও মন সায় দিচ্ছে না । এই বাসার পরিবেশটাই অসুস্থ , নোংরা আর বিষাক্ত মনে হচ্ছে পুতুলের । নিজের প‍্যাকিং সে সকালেই করে ফেলেছিল । এখন সে এক এক করে তুলনের সব খেলনা , জামাকাপড় লাগেজ বন্দি করতে লাগল । বিছানায় বসে পুতুলের ফোনে কার্টুন দেখছিল তুলন , ফুপিকে জামাকাপড় ভাঁজ করতে দেখে জিজ্ঞেস করল ,

– ফুপি , তুমি কোথায় যাবে ?

– আমাদের নতুন বাড়িতে । আর আমি একা নই , তুমিও তো যাবে আমার সাথে ।

তুলন কি বুঝল কে জানে ? বিশেষ ভঙ্গিতে ঠোট দুটো গোল করে মাথা ঝাকালো। ওর মুখভঙ্গি দেখে হেসে ফেলল পুতুল । তুলন আবার জিজ্ঞেস করল ,

– ফুপি , তুফিক যাবে না আমাদের সাথে ?
– হ‍্যাঁ সোনা । তৌফিকও যাবে ।
– আর আব্বু ?
পুতুল তুলনের মুখোমুখি বসে বলল ,
– আব্বু , দাদি , চাচ্চু , চাচিমা সব্বাই যাবে । এখন থেকে আমরা ওখানেই থাকব । বুঝেছ ? আমরা সেখানে চোর-পুলিশ খেলব । কার্টুন দেখব । তারপর রান্নাবাটিও খেলব । ঠিক আছে ?

তুলনের চোখ দুটো চকচক করে উঠল । হাত তালি দিয়ে বলল ,

– ইয়েএ অনেক মজা হবে ,তাই না ফুপি ?

– হুম , অন্নেক মজা করব আমরা ।

বলেই পুতুল বাকি জামা গুলো ভাঁজ করতে হাতে নেয়। তখনই তুলনের প্রশ্নে থমকে যায় হাত জোড়া ,

-ফুপি , আম্মিও আসবে সেখানে ?

তুলন অধীর আগ্ৰহ নিয়ে তাকিয়ে আছে ফুপির দিকে । যেন ফুপি তার আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ । ঘষা লাগলেই সব চাওয়া পূরণ হয়ে যাবে তার । তুলনের দিকে তাকিয়ে পুতুলের বুকটা হাহাকার করে ওঠে । কাপড় গোছানো ফেলে তুলনকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে নিঃশব্দে । তুলন ফুপির কান্নার কারণ বুঝতে পারে না । কিন্তু সে আর কোনো প্রশ্ন করে না । আরো একটু উষ্ণতার খোঁজে ফুপির বুকের সাথে লেপ্টে যায় । ছোট ছোট হাত দুটো দিয়ে আলগোছে জড়িয়ে ধরে ফুপিকে । নিজেকে স্বাভাবিক করে পুতুল বলে ওঠে ,

– আম্মি অনেক ক্লান্ত সোনা । তাই ঘুমিয়ে আছে । আমরা দেখে এসেছিলাম না সেদিন ?

তুলন মাথা ঝাকিয়ে সায় দেয় । পুতুল আবার বলে ,

– হুম । তুমি আরো বড়ো হও। তারপর আমি তোমাকে আম্মির সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাব । আমারও যে তোমার আম্মিকে অনেক কথা বলার আছে । ওর কাছ থেকে জবাব চাওয়ার আছে । সে কেন এত অবুঝ ছিল ? এমন ছেলেমানুষি কেন করল সে ? সব প্রশ্নের উত্তর চাই আমার । সব ।

*****

বাড়ি ফিরেও ল‍্যাপটপে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছে শিমুল । ফ‍্যাক্টরিতে কিছু কাঁচামাল আনতে হবে সামনের সপ্তাহে । তারই একটা আউট প্রিন্ট তৈরি করছে । তুলন বাবার কোলের ওপর বসে গলা ধরে ঝুলে আছে । সাথে চলছে তার আদো আদো বুলিতে শিশুসুলভ প্রশ্নপর্ব । শিমুল প্রসন্ন চিত্তেই প্রতিটি কথার জবাব দিচ্ছে । হঠাৎ করেই তুলন আবদার করে বসল ,

– আব্বু , আম্মিকে দেখব …
-এখন না সোনা । কাজ করছি তো । পরে দেখাই কেমন ? ঘুমুনোর আগে আম্মির সাথে দেখা করিয়ে দেব …

-নাআ । আমি এখনই দেখব ….

– আর একটু বাকি আছে । পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করো । প্লিজ ….

তুলন হেসে শরীর দুলিয়ে সায় দেয় । কাগজের স্তুপের সাথে একটা কালো বল পেন ছিল ছোট টি টেবিলটায় । সেটা তুলে নিয়ে শিমুলের পরিহিত সাদা টি শার্টটার বুকে আকিবুকি কাটতে থাকে ।

– আহঃ আম্মু, দুষ্টুমি করে না । আব্বুর ডিসটার্ব হচ্ছে তো ।

শিমুলের কথায় তুলন খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে । তখনই ঈষাকে নতুন কাপড় পরে সাজুগুজু করে বেরোতে দেখে ঝটপট শিমুলের কোল থেকে নেমে আসে । ঈষার পেছনে বকুল ও তৌফিককে কোলে নিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে বসে । ছোট্ট তুলন সবাইকে নতুন পোশাকে দেখে অবাক হয়ে তাকায় । বকুলের দিকে এগিয়ে গিয়ে তৌফিকের বৃদ্ধাঙ্গুলী ধরে বলে ,

– কোথায় যাবে চাচ্চু ? আমিও যাব ….

বকুল এক পায়ের উরুতে তৌফিককে বসিয়ে দিয়েছিল । এবার হেসে তুলনকে অপর পায়ের উরুতে বসিয়ে বলল ,

– আমরা তো সবাই আজকে দাওয়াত খেতে যাব । তুলন পঁচা , খালি কান্না করে । তাই তুলনকে নেব না …

তুলনের হাসি মুখটা নিমেষেই গোমরা হয়ে যায় । চোখ ছলছল করে ওঠে । বুঝতে পেরে বকুল জিভ কাটে ,

– স‍্যরি স‍্যরি আম্মু । আমরা সবাই যাব তো ।

শেফালী বেগম বেরিয়ে এসে হাঁক ছাড়েন ,

– পুতুল ? আর কতক্ষণ লাগবে তোর ? সবাই তৈরি হয়ে গেছে । আর এই মেয়ের এখনো পাত্তা নেই । কিরে শিমুল ? তুই কখন তৈরি হবি ? তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে , বেশি রাত করা যাবে না ।

– আমি যাচ্ছি না মা । তোমরা যাও ….

-কেন ? তোর আবার কি হলো ? কেন যাবি না ?

-এমনিতেই, ভালো লাগছে না মা । তাছাড়াও আমার অনেক কাজ ডিউ পড়ে আছে । সেগুলো আগে শেষ করতে হবে । তোমরা খেয়ে এসো ।

শেফালী বেগম এক পলক তাকিয়ে রইলেন শিমুলের দিকে। তারপর পুতুলকে তাড়া দিয়ে উঠলেন ,

– কিরে পুতুল ? আর কতক্ষণ লাগবে তোর ?

ঘরে পরার রাতের কুর্তা পাজামা পরে বেরিয়ে এলো পুতুল । বিরস মুখে বলল ,

– আমি যাচ্ছি না । তোমরা যাও ।

বলেই তুলনকে বকুলের কাছ থেকে নিয়ে বলল ,

– তুলন আমার সাথে থাক । তোমরা দাওয়াত পালন করে এসো ।

এবার বিরক্ত হলেন শেফালী বেগম। ঈষাও ভ্রু কুঁচকে বিনে পয়সার নাটক খানা গলার্ধকরণ করার চেষ্টা করল । শেফালী বেগম বললেন ,

– কি নাটক শুরু করলি তোরা দুই ভাই বোন মিলে ? এই , কেন যাবি না তুই ?

এমনিতেই চাপা একটা রাগ বিকেল থেকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল পুতুলকে । বারবার মনে হচ্ছিল মাকে জানিয়ে দেয় এই সেই তথাকথিত রাধারাণী যার কারণে তোমার ছেলে নিজের সাজানো গোছানো সুন্দর সংসারটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে । একটা শিশুকে মাতৃহারা করেছে জন্মের পর পরেই । তুলনকে বঞ্চিত করেছে মায়ের আদর সোহাগ থেকে । আর তোমার সেই গুণধর ছেলেই দিনের পর দিন তোমাদের ঠকিয়ে সেই মেয়ের বাড়িতেই ভাড়া থাকছে। কিন্তু কথা গুলো মনে এলেও মুখে আসছিল না কিছুতেই । কি যেন একটা আটকে দিচ্ছিল বার বার ? কিন্তু এবার আর শেষ রক্ষা হলো না । পুতুল চাপা স্বরে গর্জে উঠল ,

– নাটক আমি করছি না মা । নাটক তো তোমার গুণধর বড়ো ছেলে করছে । জিজ্ঞেস করো না তাকে , এতদিন এই বাড়িতে সে কেন থাকছে ? কিসের টানে ? করো , জিজ্ঞেস করছ না কেন ?

ঘটনার আকস্মিকতায় শিমুল কাজ ফেলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। পুতুলের কথার অর্থ তার বোধগম্য হচ্ছে না । কিসের কথা বলছে পুতুল ? শেফালী বেগম সহ সবাই সপ্রশ্ন তাকিয়ে আছে পুতুলের দিকে । পুতুল গমগমে কন্ঠে বলে ওঠে ,

– কি হলো ? বলছো না কেন বড়দা ? বলো না । বলো ? কেন এবাড়ি পড়ে আছ তুমি ? আচ্ছা , সারা শহরে কি ভাড়া বাসার এতই অভাব পড়েছিল যে তোমাকে শেষমেষ এই বাড়িতেই আসতে হলো ! এই বাড়িতে !

– এতদিন পর এসব কথা বলার মানে কি পুতুল ?

শিমুল না থাকতে পেরে এবার প্রশ্ন করে বসে । পুতুল এবার আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না । সরোষে বলে ওঠে ,

– এতদিন বলিনি কারণ এতদিন তোমার নির্লজ্জতার কথা তো জানতে পারিনি । তুমি দিনের পর দিন আমাদের সবাইকে ঠকিয়ে গেছো । এই বাচ্চাটাকে ঠকিয়েছ । যার কারণে তার মা দুনিয়া ছাড়া হলো তুমি তার বাড়িতেই ওকে এনে ফেললে ! এই সেই বৃষ্টি তাই না বড়দা , যার কারণে তুমি অহনা ভাবিকে ধোকা দিয়েছিলে ? তুমি এতটা নিচ কখন হলে বড়দা ? এতটা শেমলেস কি করে হতে পারো তুমি ? তোমার বিবেক কি তোমাকে একবার ও প্রশ্ন করে না ? এত এত ছলনার জাল বুনে তুমি ঘুমাও কি করে ?

(চলবে …..)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here