অনুভূতিটা_ছিল_ভালোবাসার #পর্ব_০৪,০৫

#অনুভূতিটা_ছিল_ভালোবাসার
#পর্ব_০৪,০৫
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
পর্ব_০৪

আমি হেসে বললাম আচ্চা ঠিক আছে।এখন বলল নাকি পরে বলল।।
ভাবি আমার সামনে বসে বলল এখনি বলবি।।

তাই আমি বললাম আচ্চা তাহলে শুনো।
আমি আর জারা আগে বেশির ভাগ একসাথে সময় কাটাতাম।।তখনো কেউ জানতাম না আসলে আমাদের মধ্যে কি চলছে।।আমরা যখন নবম শ্রেণীতে পড়ি সমস্যা হয় তখন।।

ভাবি: কেন ভাই কি হয়েছিল তখন??

আমি বললাম আমি তখন মেয়েদের সাথে কথা বলা শুরু করেছিলাম।।ক্লাসে নতুন মেয়েরা ভর্তি হয়েছিল।।আর এইতাই আমার বড় ভুল হয়েছিল।।
তখন জারার সাথে তেমন কথা হত না।।একদিন আমি একটা মেয়ের সাথে কথা বলিতেছিলাম এমন সময় জারা এসে বলল রাজ তুই আমার সাথে আয়।।কিছু কথা বলল।।।
আমি মেয়েটির সাথে কথা শেষ করে জারার সাথে চলে গেলাম কথা বলতে।।
আমি জারাকে বললাম এইবার বল কি বলবি।।জারা কিছু না বলে আমাকে ধরে কেঁদে দিল।।।আমি অনেকটা ভয় পেয়ে গেলাম।।তাই আমি বললাম কি হয়েছে জারা কান্না করছিস কেনো।।
জারা শুধু কান্না করেই যাচ্ছে।।
আমি এইবার জারা ধমক দিয়ে বললাম কি হয়েছে বল।শুধু কান্না করছিস কেন।।
জারা কান্না কিছুটা থামিয়ে বলল আমি আর পারছি না রাজ।।তুই কি কিছু বুঝিস না।।।
আমি বললাম কি বুঝার কথা বলছিস।।
জারা আমার কানের কাছে এসে বলল ভালবাসি রাজ।।খুব ভালবাসি।।।
আমি তাই হেসে বললাম আমিও আমার এই বোনটা খুব ভালবাসি।।
এই কথা বলার সাথে সাথেই জারা আমাকে একটা থাপ্পড় দিল।।
আমি অবাক হয়ে বললাম মারলি কেনো।।
জারা বলল আমি কি তোকে বলছি আমি ভাই হিসেবে ভালবাসি।।।
আমি বললাম তাহলে কি হিসেবে??
জারা আমাকে জরিয়ে ধরে বলল তোর আব্বু আম্মু যে ভাবে একজন আরেকজনকে ভালবাসে সে ভাবে।।।
আমি জারাকে বললাম কি বলছিস তুই এইগুলা।।তুই আমার বোন লাগিস।।
এই কথা বলার সাথেই আরেকবার থাপ্পড় দিল।।।

আর এইদিকে ভাবি আমার কথা শুনে হাসতেছে।।হাসি থামিয়ে বলল তারপর কি হয়েছিল ভাই।।।

আমি বললাম কি আর হবে বল।।তারপর আমি বুঝলাম জারা আমাকে সত্যি ভালবাসে।।

ভাবি বলল কিভাবে বুঝলি ভাই।।।

আমি বললাম তারপর থেকে জারা আমাকে আর একা থাকতে দেয় না।।যখন স্কুলে যাব তখন জারা আমার সাথে থাকে।।কারো সাথে আড্ডা দিলে জারা আমার পাশে বসে থাকবে।।আর যদি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলি তাহলে তো আর কথাই না।।মেয়েদের সামনেই আমাকে জরিয়ে ধরে বসে থাকে।।।

ভাবি আমাকে বলল আর যদি বোন বলে পরিচয় করিয়ে দিস তাহলে কি করে ভাই।।

আমি হেসে বললাম তেমন কিছু করে না ভাবি।।শুধু থাপ্পড় দেয়।।আজকেও দিসে একটা।।
আমার কথা শুনে ভাবি হাসতে হাসতে খাটে গড়াগড়ি করতাছে।।।
কিছুসময় পর হঠাৎ করেই ভাবি হাসি থামিয়ে বলল তাহলে তুই জারার সাথে আজ কথা বলিস নাই কেন??

আমি এইবার হেসে বললাম জারার পাগলামির জন্য এইরকম হয়েছে ভাবি।।।

ভাবি কিছুটা অবাক হয়ে বলল কেন ভাই কি করেছিল জারা??

আমি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলাম।।।তারপর বললাম জারার ভালবাসার পাগলামি দিনদিন বেড়ে চলেছিল।।আর এইটা দেখে একজন ভাল চোখে দেখে নি।।

ভাবি বলল কার কথা বলছিস ভাই???
আমি বললাম আমার ফ্রেন্ড রাকিব।।

ভাবি বলল কেন?রাকিবের এইখানে কি সমস্যা হয়েছে।।

আমি বললাম আমরা যখন কলেজে ভর্তি হলাম তখন রাকিবের সাথে আমাদের প্রথম পরিচয় হয়।।তুহিন আর রাফিও আমার সাথে ছিল।।বন্ধুরা সবাই আমার আর জারার কথা জানতো।।কিন্তু…

কিন্তু কি ভাই।।বল কি হয়েছিল।।
আমি বললাম রাকিব জারাকে পছন্দ করতো।।এই কথা রাকিব জারাকে অনেকবার বলেছিল।।।কিন্তু জারা রাকিবকে না বলে দেয় আমার কারনে।।
আর এইতাই রাকিব ভাল চোখে দেখেনি।।।
আমাদের কলেজে যখন টেস্ট পরীক্ষা হবে তার কিছুদিন আগে আমাদের সমস্যা শুরু হয়।।

ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে বলল কি সমস্যা হয়েছিল ভাই।।
আমি বললাম জারা আমাকে নিয়ে যে পাগলামি করে সেটা রাকিব গিয়ে মামিকে বলে দেয় আর কিছু ছবি দেখায়।।যা দেখে মামি আমাকে অনেক কথা শুনায় জারার সামনে।।

ভাই জারা কিছু বলে নাই তার আম্মুকে।।
আমি বললাম না।।সে দিন জারা একদম চুপ ছিল।।।জারা যদি সেদিন মামিকে কিছু বলতো তাহলে আমাদের মাঝে এই সমস্যা হতো না। কিন্তু জারা চুপ করে শুধু ওর আম্মুর কথা শুনেছে।।যার কারনে আমি আর জারার সাথে কথা বলি না।।

ভাবি বলল তাহলে এই দুই বছর তুই জারার সাথে কথা বলিস নি।।
আমি বললাম না।।কথা বলি নি।কিন্তু জেরিনের কাছ থেকে জারার খবর নিতাম।।
ভাবি বলল এখন কি তোদের মাঝে সব ঠিক হয়ে গেছে।।
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম জানি না।।

এমন সময় জেরিন রুমে এসে বলল ভাইয়া কি করো।।।
আমি তাকিয়ে দেখি জেরিনের সাথে জারা আর লামিয়াও দারিয়ে আছে।।।

আমি বললাম তেমন কিছু না।।দারিয়ে আছিস কেনো।ভিতরে আয়।।
ওরা রুমের আসল।।।জেরিন বলল ভাইয়া আব্বু বলেছে আজ আমাদের এইখানে থাকতে।।।

ভাবি আমাদের বলল তোমরা কথা বল আমি আমার রুমে যাই।।কিছু কাজ আছে।।
এই বলে ভাবি চলে গেল।।

আমি ওদের বললাম সবাই দারিয়ে আছে কেনো।।
আমার কথা শুনে লামিয়া আর জেরিন আমার দুই পাশে বসলো।।।
জারা আমার পাশে লামিয়া দেখে আমার দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে।।।

আমি মনে মনে বলতাছি আজকে মনে হয় জারা আমাকে আরেকটা থাপ্পড় দিবে।।
কিন্তু না জারা তেমন কিছুই করলো না।।
জারা চুপ করে জেরিনের পাশে বসে পরল।।

লামিয়া আমাকে বলল আপনি এখন কি নিয়ে পড়াশুনা করছেন।।
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই জারা বলল রাজ গনিত নিয়ে পড়াশুনা করছে আর কিছুদিন পর তৃতীয় বর্ষে ভর্তি হবে।।

লামিয়া আবার আমাকে বলল আপনার কি কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে।।।
আমি জারার দিকে তাকিয়ে দেখি জারা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।।আমি জারার দিকে তাকিয়ে বললাম না নাই।।এইগুলা কোনো কাজের না।।
জেরিনও আমার সাথে বলল হ্যা ভাইয়া মেয়েদের সাথে তেমন কথা বলে না।।ভাইয়া তোমার কি মিমের কথা মনে আছে।।
আমি বললাম হ্যা।কেনো কি হয়েছে??
জেরিন লামিয়াকে বলল আপু জানেন আমার ফ্রেন্ড মিম ভাইয়াকে অনেক পছন্দ করে।কিন্তু ভাইয়া মিমকে বলেছে ভাইয়ার নাকি এইগুলা পছন্দ না।।তাই না ভাইয়া।।।
আমি ওদের কথার উত্তর না দিয়ে জারার দিকে তাকিয়ে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।।কারন জারার চোখ লাল হয়ে আছে।।চোখ দিয়ে মনে হয় আমাকে এখনি ধ্বংস করে দিবে।।

To be continue…..

#অনুভূতিটা_ছিল_ভালোবাসার
#পর্ব_০৫
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

আমি ওদের কথার উত্তর না দিয়ে জারার দিকে তাকিয়ে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।।কারন জারার চোখ লাল হয়ে আছে।।চোখ দিয়ে মনে হয় আমাকে এখনি ধ্বংস করে দিবে।।

তাই আমি জেরিনকে বললাম আপু আমার এবার থাম।।তুই কি চাচ্ছিস বল।।।আমি তোকে তাই দেব।।তুই এবার চুপ কর।।।

পাশের থেকে জারা জেরিনকে বলল জেরিন তুই রাজের বিষয়ে আর কি কি জানিস বল আমাকে।।

লামিয়াও জেরিনের কথা শুনার জন্য আগ্রহ নিয়ে বসে আছে।।
আর এই দিকে আমার অবস্থা খারাপ।।কারন জারা যদি আর কিছু জেনে যায় তাহলে আমি শেষ।।।
জেরিন জারাকে বলল জানো আপু মিমতো আমাকে একবার কি বলেছিল।।।
জারা একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আর একবার জেরিনের দিকে তাকাচ্ছে।।।

জেরিন এবার হেসে বলল মিম নাকি রাজ ভাইয়ার সাথে প্রেম করতে চায়।।।
এই কথা শুনার পরে আমি আর বসে থাকলাম না।।।রুম থেকে বের হয়ে ভাবির রুমে চলে গেলাম।।

যদি আমি এখন জারার সামনে থাকতাম তাহলে কি যে হত আমি নিজেও জানি না।।।

ভাবির রুমে গিয়ে দেখি রাসেল ভাইয়া আর তানিয়া ভাবি গল্প করতাছে।।।

আমাকে দেখে ভাইয়া বলল কিরে রাজ তুই কি কোনো বিষয় নিয়ে টেনশনে আছিস।।

আমি বললাম হুম জারার বিষয় নিয়ে।।।

আমার কথা শুনে ভাইয়া হাসতে শুরু করলো।।

ভাবি ভাইয়ার হাসা দেখে আমাকে বলল কেন ভাই আবার কি হয়েছে।।।

আমি বললাম কি আর হবে জেরিন এখন মিমের কথা জারাকে বলে দিয়েছে।।।

আমার এই কথা ভাইয়া একবার হাসতে হাসতে খাটে গড়াগড়ি খাচ্ছে।।

ভাবি ভাইয়াকে বলল তুমি এইভাবে হাসতাছ কেনো।।

ভাইয়া হাসি থামিয়ে ভাবিকে বলল তুমি জানো এখন জারা রাজকে কি করবে??

ভাবি বলল কি করবে??

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল থাপ্পড় দিবে।।।

ভাবি অবাক হয়ে ভাইয়াকে বলল তুমি কি করে যানো??

আমি ভাবিকে বললাম কারন এইটা ভাইয়া জারাকে শিখিয়েছে।।।

আমার এইকথা শুনে ভাবিও হাসতে শুরু করেছে।।।
আমি তাদের কাহিনী দেখে রাগ করে রুম থেকে বের হয়ে ছাদে চলে গেলাম।।

আর এই দিকে ভাবি ভাইয়াকে বলল তুমি জারাকে এইটা কেন শিখিয়েছ??
ভাইয়া বলল তুমি হয়তো জানো না রাজ থাপ্পড়কে ভয় পায়।।

ভাবি বলল কেন এইখানে ভয় পাওয়ার কি আছে।।

ভাইয়া হাসতে হাসতে বলল একবার আম্মু রাজকে একটা থাপ্পড় দিয়েছিল।।তারপর রাজের অনেক জ্বর হয়।।এর পর থেকে রাজ থাপ্পড়কে ভয় পায়।।
কিন্তু রাজের আর জ্বর হত না।।।

ভাইয়ার এই কথা শুনে ভাবিও হাসা শুরু করে দিল।।

আর এই দিকে আমি ছাদে গিয়ে রাফিকে ফোন করলাম।।

রাফি বলল হ্যা রাজ বল।

– রাফি তুই কি এখনো মিমকে কিছু বলিস নাই।।

– রাজ তুই কোন বিষয়ে কথা বলছিস বলতো।।

– তুই মিমকে এখনো বলিস নি তুই মিমকে পছন্দ করিস।সে কি এখনো বলেছিস।।

রাফি এইবার চুপ করে আছে।।

আমি বললাম কিরে চুপ কেন??

রাফি বলল যদি তুহিন খারাপ ভাবে দেখে তাহলে।।

আমি বললাম আচ্ছা বুঝেছি।।তোর সাথে পরে কথা বলছি।।

এই বলে কল কেটে দিলাম।।তুহিনকে কল দিব তার আগেই আমার ফোন একটা কল আসলো।।
কথা বলে কল কেটে দিয়ে তুহিনকে ফোন করলাম।।

তুহিনকে বললাম শুন কালকে তুই আমার সাথে বাহিরে দেখা করিস।

তুহিন বলল আচ্ছা ঠিক আছে।।
তারপর কিছু কথা বলে কল কেটে দিলাম।।

পিছনে তাকিয়ে দেখি লামিয়া দারিয়ে আছে।।

আমি কিছু বলল তার আগেই লামিয়া বলল আপনি কি কাউকে পছন্দ করেন??

আমি মনে মনে ভাবতাছি এই মেয়ের খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নাই শুধু এক কথা।।

আমি বললাম না তেমন কেউ নাই।।

আমার এই কথা শুনে লামিয়াতো মহা খুশি।।
কিন্তু আমি এর কোন কারন খুজে পেলাম না।।

আমি লামিয়াকে বললাম আপনি থাকেন আমি নিচে যাই।।

এই বলে আমি রুমে চলে গেলাম।।রুমে যাওয়ার কিছু সময় পর দরজা লাগানোর শব্দ হল।।
তাই আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি জারা দরজা লাগিয়ে আমার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে।।

To be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here