অতলস্পর্শ,পার্ট_১২
জান্নাতুল বিথী
আমি বাহিরে আসতেই দেখি কুশান জিদান ভাইয়া আর মিতু গাড়ির সাথে হালান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আমাদের তো কথা ছিলো আমি আর জিদান ভাইয়া যাবো তাহলে কুশান আর মিতু আসলো কোথা থেকে।আমি এসব ভাবতে ভাবতেই ভ্রু কুচকে তাদের দিকে এগিয়ে যাই।আমাকে আসতে দেখে ভাইয়া বলে..
“অবশেষে চলে আসলো জিহু।তাহলে যাওয়া যাক.??”
“হুমম ভাইয়া বাট যাওয়ার কথাতো ছিলো শুধু আমি আর তুমি যাবো তাহলে এখানে অন্যকেউ না মানে বলতে চাইছি..??”
‘”ওহহহ আচ্ছাহ এতো পর করে দিলি তুই আমাকে যে এখন আমি অন্যকেউ হয়ে গেলাম।ঠিক আছে আমি তোর সাথে যাবো না। আমার হবু বরের সাথে যাবো বাইকে করে।তুই বরং কুশান ভাইয়ার সাথে চলে আয়।”
আমার কথা শেষ করতে না দিয়েই মিতু বলে উঠে।ওর কথা শুনে আমি আৎকে উঠি।..
“ন-না আমি ক-কারো সাথে যেতে পারবো না।”
“জিহু প্লিজজ আমরা একটু আলদা সময় কাটাতে চাই। সো বুঝতেই তো পারস তুই।প্লিজজজ তুই কুশান ভাইয়ার সাথে চলে আয়।আর না আসলে কিন্তু খবর আছে।বাইইইই।”
বলেই জিদান ভাইয়া মিতুর হাত ধরে চলে যায়।যাওয়ার সময় মিতু আমাকে চোখ মারে।এতক্ষন যা হয়েছিলো সব যেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো।আমি যেনো একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম এতক্ষন।হঠাৎ কুশান ভাইয়া আমার পাশে দাড়িয়ে আছে কথাটা ভাবতেই আমি ভাইয়ার দিকে তাকাই।মনে মনে ভাবতে থাকি কিছুক্ষণ আগের ঘটনার জন্য যদি কুশান ভাইয়া আমাকে ধরে থাপ্পর দেয় তাহলে আমি কি করবো।আমার ইজ্জতের ফালুদা হবে ভাবতেই আনমনেই গালে হাত চলে যায়।ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।আমি তার দিকে তাকাতেই সে আমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে গাড়িতে উঠার জন্য।আমি নিচের দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে গিয়ে ফ্রন্ট সিটে বসে পড়ি।ভাইয়াও গিয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে একবার আমার দিকে তাকায়।আমি মুখ ফিরিয়ে নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য অনুভব করতে থাকি।..
“ম্যাম আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি তাই যদি আপনি আমাকে অনুমতি দেন তো আমি আপনাকে জিহু বরে কি ডাকতে পারি.??”
ভাইয়ার এমন কথা শুনে আমি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাই।ভাইয়ার মনোযোগ সামনের দিকে।আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি হঠাৎ সে আবার বলে উঠে..
“জিহু সেদিন তোর সাথে এমন বিহেব করার পর থেকে আমার নিজের কাছেই অনেক খারাপ লেগেছিলো।আমি তো তোর সাথে এমন বিহেব করতে চাই নাই।আসলে কয়েকদিন যাবত আমার অফিসে কাজের চাপ অনেক বেশি থাকায় সময় মতো কিছুই করতে পারি নাই।সেদিন অফিসে কাজের চাপ একটু কম থাকায় তাড়াতাড়ি বাগি চলে এসেছিলাম আমার প্রচুর মাথা ব্যাথা করেছিলো তাই।আর ছোট বেলা থেকেই আমি মাথা ব্যাথা সহ্য করতে পারি না।নিজেকে পাগল পাগল মনে হয় তখন।তার উপর আবার অফিস থেকে ফেরার পথে এমন কিছু দেখেছিলাম যা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি।আর তা দেখার পরই আমার মাথা আরও বেশি গরম হয়ে যায়।প্রচুর রাগ করে বাড়ি ফিরেছিলাম কন্ট্রোলে ছিলো না। আর সেই মুহূর্তেই তোর কথা শুনে আরো মেজাজ খারাপ হয়েছিলো তাই উল্টা পাল্টা বলছি।বিশ্বাস কর জিহু আমি ইচ্ছে করে কিছু করি না।তখন আমি হুশে ছিলাম না।প্লিজ ক্ষমা করে দে আমাকে।আমি আমার ভুলের জন্য নিজেকে শাস্তিও দিয়েছিলাম।”
ভাইয়ার করুন কন্ঠ শুনে আমি অবাক হয়ে যাই।আমি ভাইয়ার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি।এসবের পেছনে এমন কিছু যে লুকিয়ে আছে তা আমার জানাই ছিলো না।এখন নিজের মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে যে কেনো ভাইয়াকে তখন এতো গুলো কথা বলেছিলাম।হঠাৎ ভাইয়ার শেষ কথাটা মাথায় আসতেই তার দিকে তাকিয়ে বলি..
“নিজেকে শাস্তি দিয়েছেন মানে.?? কি করছেন আপনি.??”
কথাটা শুনেই ভাইয়া মুচকি হাসে।তারপর তার বাম হাত আমার দিকে এগিয়ে দেয়।ভাইয়ার বাম হাত দেখতেই আমার চোখ ছলছল করে উঠে।আমি কেদে দেই।কারন ভাইয়ার ফর্সা হাত একদম কালো হয়ে আছে।হাত কেটে হাতের অবস্থা বেহাল করে রেখেছে।..
“আপনি কি পাগল.??কি করছেন এটা.??আমি আপনার কে যে আমার সাথে খারাপ বিহেব করার কারনে আপনি নিজেকে এভাবে কষ্ট দিলেন।??”
আমার কথা শুনে ভাইয়া মুচকি হেসে একবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে..
“যখন থেকে আমি বুঝতে শিখেছি ঠিত তখন থেকেই আমার এই মনে তোমার বসবাস।তোমাকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে।তোমার হাসিতে মুগ্ধ হয়ে যাই আমি।চোখ বন্ধ করলেই শুধু তোমাকেই দেখতে পাই।আর এখন আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছি এই তুমি ছাড়া আমি পুরোই অচল।”
আমি মুগ্ধ নয়নে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।নিমিষেই আমার সব রাগ অভিমান ধুলোয় মিশে যায়। যখন ভাইয়ার কথা গুলোর মানে বুঝলাম তখন লজ্জায় নুইয়ে পড়ি।ভাবতেই অনেক খুশি লাগে আমার।হঠাৎ আমি ভাইয়ার বাম হাতটা উচু করে কাটা স্থানে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে তার বুকে মাথা রেখে বলি..
“আমিও মনে হয় একই রোগে আক্রান্ত।”
বলেই ভাইয়ার বুকে মাথা রেখে এই সময়টাকে অনুভক করতে থাকি।
চলবে