অতলস্পর্শ,পার্ট_০৫
জান্নাতুল বিথী
জৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি সময়।তীব্র গরমে চারদিকে খা খা করছে।আর সেই গরমে এক হাজার বিরক্ত নিয়ে দাড়িয়ে আছি আমি।এই মুহূর্তে কুশান ভাইয়ার প্রতি প্রচুর রাগ লাগছে।লোকটা নাকি আজ আমাকে নিতে আসবে।আমি ভার্সিটির গেটের সামনে দাড়িয়ে আছি।আজ ভার্সিটিতে আসার সময় জিদান ভাইয়া ড্রপ করে দিয়ে গেছে।আর বলছে সে নাকি আসতে পারবে না তাই কুশান ভাইয়া আসবে।কিন্তু কোথায় সে আমি গত আধ ঘন্টার মতো দাড়িয়ে আছি অথচ তার কোনো খবর নেই।এমন সময় আমার সামনে গাড়ি এসে দাড়ায়।মনে মনে ঠিক করি এখন গিয়ে হাজারটা রাম ধমক দেবো তাকে।আর তাই ভেবেই তার দিকে এগিয়ে যাই।ইতোমধ্যে ভাইয়া গাড়ির গ্লাস নামিয়ে আমার দিকে তাকায়।আমি গাড়িতে উঠে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই তার দিকে চোখ পড়তেই আমি চমকে উঠি।এই রোদে ভাইয়ার অবস্থা বেহাল।গায়ের সাদা শার্ট ভিজে সারা শরীরে লেপ্টে আছে।ফ্রন্ট সিটেই তার কোট রাখা ছিলো আমি উঠার আগে ভাইয়া ওইটা সরিয়ে নিজের কোলের উপর রাখে।ঘামে ভিজে আছে সে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে এখন শাওয়ার নিয়ে আসছে। চুল গুলো কপালে লেপ্টে আছে।হঠাৎ তার ড্রেসআপ দেখে আমার মনে পড়ে আজ ভাইয়ার অফিসে জয়েন হওয়ার কথা।কথাটা মনে পড়তেই আমার রাগ নিমিষেই কর্পূরেরর মতো উড়ে যায়।রাগের জায়গায় এখন আমার বড্ড মায়া লাগছে তার প্রতি।ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে..
“সরি রে আসলে আজ অফিসের প্রথম দিন তাই বের হতে অনেকটা সময় লাগলো আর রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিলো তাই আসতে অনেকটাই লেট হইছে…”
ভাইয়ার কথা শুনে আমি কোনো উত্তর দেই না।কোনো কথা না বলে আমি ব্যাগ থেকে পানি বের করে দেই ভাইয়াকে।..
“কিছুটা খেয়ে বাকীটা মুখে ছিটিয়ে দিন ভালো লাগবে।”
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।তারপর আমার থেকে পানি হাতে নিয়ে বলে..
“সরি বলছি তো এতো রাগ করার কি আছে জিহু.??”
“আজিব কখন বলছি আমি রাগ করছি।আর এখানে রাগ করার কি আছে। মানুষের সমস্যা থাকতেই পারে স্বাভাবিক।”
আমার কথা শুনে ভাইয়া পুনরায় মুচকি হাসে।ভাইয়া হাসলে তাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগে।আমি তার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেই।এই কয়েকদিনে ভাইয়া আমাকে বারবার ওই একই কথা শুনিয়েছিলো ইন্ডিরেক্টলি।আমি মুখ খিছে সহ্য করি সব কিছু।তাকে কিছু বলতে গেলেও কেনো জানি না বলতে পারি না।গলায় আটকে যায় সব কথা।..
“ভাইয়া একটা কথা বলি আপনাকে.??”
হঠাৎ আমার এই কথা শুনে ভাইয়া আমার দিকে আড় চোখে তাকায়।..
“হুমম বল..”
“সেদিন আমি আপনাকে ইচ্ছে করে প্রোপোজ করি নাই।”
এই কথা শুনে ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়।….
“সেদিন ফাহিম আমাকে ডেয়ার দিয়েছিরো আপনাকে প্রোপোজ করার।তাই বাধ্য হয়ে আপনাকে প্রোপোজ করছি আমি।আর শর্ত ছিলো আগামী এক ঘন্টা আপনাকে না বরা যে আমি আপনাকে ডেয়ারের জন্য প্রোপোজ করছি।”
চোখ বন্ধ করে এক দমে বলি কথা গুলো।একটু সময় যাওয়ার পরও যখন কোনো সাড়া শব্দ পাই না তখন আমি আস্তে করে একটু চোখ মেলে তার দিকে তাকাই।ভাইয়ার দিকে তাকাই।ভাইয়া চোখ মুখ শক্ত করে বলে..
“ফাহিম কে.??”
ভাইয়ার প্রশ্ন শুনে আমি মনে মনে হাসি।ভাইয়ার সাথে একটু মজা করার জন্য বলি..
“আমার বফ আজ তিন বছর আমাদের রিলেশন।ভাইয়া একদিন আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো কেমন.???”
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ভাইয়া জোরে গাড়ি ব্রেক কষে।আমি চমকে উঠে ভাইয়ার দিকে তাকাই।ভাইয়াকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে অনেক রেগে আছে।কিন্তু তার রেগে যাওয়ার কারন টাই আমি খুজে পেলাম না।ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে..
“জিহু গাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি নেমে যা।”
আমি ভাইয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।কি এমন ভুল করছি আমি যার জন্য ভাইয়া আমাকে গাড়ি থেকে নামতে বলছে।..
“ভাইয়া আমি..”
“জিহা আমি কি বলছি তোকে।”
এবার ভািয়া অনেক জোরে চিৎকার করে কথাটা বলে।ভাইয়াকে এভাবে রেগে যেতে দেখে আমার ভয় লাগে।ভাইয়ার চিৎকার শুনে ভয়ে কেপে উঠি আমি।আমি কথা না বাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে যাই।আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।অজান্তেই চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।আমি গাড়ি থেকে নামতেই ভাইয়া পুনরায় গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আমাকে রেখেই চলে যায়।আমি দাড়িয়ে কাদতে থাকি।ভাইয়া কেনো আমার সাথে এমন করলো তাই এখনো বুঝতে পারছি না।আমি সহজে কান্না করি না কিন্তু আজ অনেক কান্না আসতেছে।ভাইয়া আমার সাথে এমন না করলেো পারতো।কতক্ষণ এভাবে দাড়িয়ে ছিলাম জানা নেই।হঠাৎ আমার সামনে একটা গাড়ি এসে থামে।গাড়িটা ব্রেক কষে দাড়াতেই আমি চোখ তুলে সেদিকে তাকাই।তাকিয়ে দেখি জিদান ভাইয়া গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।আমাকে তার দিকে তাকাতে দেখে ইশারায় গাড়িতে এসে বসতে বলে।আমার চোখে এখনো পানি।আমি কোনো দ্বিমত প্রকাশ না করে এগিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসতেই পুনরায় ভাইয়া গাড়ি চলতে থাকে।ভাইয়া আমাকে একটা প্রশ্নও করে নাই।অন্য সময় হলে এখন আমাকে হাজারটা প্রশ্ন করতো কেনো কান্না করছি কি হইছে আমার কেউ কি কিছু বলছে আমাকে.??ব্লা ব্লা ব্লা।কিন্তু এখন কোনো প্রশ্ন করে নাই দেখে আমি অনেক অবাক হই।
চলবে