অতঃপর প্রণয়,পর্ব:১৫

অতঃপর প্রণয়,পর্ব:১৫
অরিত্রিকা আহানা

আয়াজের জয়েনিং এর দুমাসের মাথায় তার চাচাতো বোন সুহানার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো। এই উপলক্ষে আজকে দুই মাস পর সে বাসায় ফিরেরে। আয়াজের চাচা সপরিবারে কানাডা থাকেন। মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যেই গতমাসে দেশে ফিরেছেন তারা। ছোটবেলা থেকেই সুহানা কানাডায় বড় হয়েছে। তাই শখ করে গ্রামের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আয়াজে চাচা। আয়াজরা সবাই আজকে সন্ধ্যায় রওনা হবে। দুদিন আগে ইরিনের মায়মুনা বেগমের সাথে দেখা করতে গেছে। ইরিনের যাত্রাবাড়ীর ফ্ল্যাটে গতমাসেই উঠে গেছেন তারা। মায়মুনা বেগমই তাড়াতাড়ি করে ফ্ল্যাটে উঠেছেন। একই এপার্টমেন্ট মেয়ের বাপের বাড়ি, শ্বশুর বাড়ির তাই তিনি ইরিনের বাবাকে প্রায় জোর করেই রাজী করিয়েছেন ফ্ল্যাটে উঠার জন্য। ফ্ল্যাটের সামান্য কিছু কাজ বাকি ছিলো,তাই ইরিনের বাবা চাইছিলেন আরো কিছুদিন পরে উঠতে কিন্তু মায়মুনা বেগম মানলেন না।বাধ্য হয়েই ইরিনের বাবাকে বদলি হতে হলো।
আয়াজের আসার খবর শুনে ইরিন দুপুরে চলে এসেছে। কিন্তু এসে দেখলো আয়াজ বাসায় নেই। কিসের যেন ফর্ম ফিলাপ করতে গেছে বলে গেলো।

রওনা হওয়ার কিছুক্ষন আগে আয়াজ বাসায় এলো। এসেই দ্রত গোসল সেরে রেডি হয়ে নিলো সে। হালকা বেগুনী রংয়ের একটা টিশার্ট আর কালো ট্রাউজার পরেছে সে। অনেক দূরের রাস্তা তাই বাসার সবাই-ই ক্যাজুয়্যাল পোশাক পরে বেরিয়েছে। ভারি জামাকাপড় পরলে বেশিক্ষণ গাড়িতে বসে থাকা যায় না। অস্বস্তি লাগে।
ইরিন পরেছে।ফুলহাতা ফতুয়া আর লং স্কার্ট। চুলগুলো খোঁপা করে মাথায় বউদের মত ওড়না দিয়েছে।ছোটখাটো একটা পুতুল মনে হচ্ছে তাকে! আয়াজ মুগ্ধ চোখে কিছুক্ষন চেয়ে রইলো। তার ইচ্ছে করছে ইরিনের তুলতুলে নরম গালে একটা কামড় বসিয়ে দিতে।

আয়াজ গাড়িতে উঠতেই। ইরিন চেঁচিয়ে উঠে বললো,

—“আমার ব্যাগ? আমার ব্যাগ আনা হয় নি?”

ইরিনের ব্যাগ সে তার রুম থেকে বের করতে ভুলে গেছিলো। ড্রাইভার ড্রয়িংরুম থেকেই সবার ব্যাগ নিচে নামিয়েছে। ইরিনের ব্যাগ ভেতরে ছিলো বিধায় রয়ে গেছে।

ফ্ল্যাটের চাবি নিয়ে আয়াজ গেলো ইরিনের ব্যাগ আনতে। রুমে ঢুকেই সে হতবাক হয়ে গেলো। সব মিলিয়ে ব্যাগ মোট চারটা। ইরিন প্রচন্ড সাজুনি। বিয়ের সাজগোছ জামাকাপড় কিচ্ছু বাকি রাখে নি সে। আয়াজ ভাবছে এতগুলো ব্যাগ তো সিনেমার নায়িকারা সাথে করে নেয় না। ইরিনের কি কখনো বুদ্ধিসুদ্ধি হবে না? হতাশ হয়ে চারটা ব্যাগ নিয়ে নিচে নামলো সে।

ব্যাগ গাড়ি পেছনে রেখে গাড়িতে উঠতেই ইরিন ফিসফিস করে বলল,” থ্যাংক ইউ।”

—“ফিসফিস করে কথা বলছিস কেন?”

ইরিন জবাব না দিয়ে আবারো ফিসফিস করে বললো,

—“আপনি এত শুকিয়ে গেছেন কেন?”

—“তোকে বারণ করেছি না ফিসফিস করবি না? আমার অস্বস্তি লাগে।”

—“ঠিক আছে আর করবো না।”

ইরিন চুপ করে গেলো।আয়াজ কৌতূহলী কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,

—“তুই এতগুলো ব্যাগে কি নিয়েছিস?”

—“কেন?”

—“না। আর কিছু বাকি আছে কি না তাই। ব্যাগ তো চারটাই না? বাদ পড়ে নি তো?”

ইরিন চোখ পাকিয়ে বললো,

—“আমার সাজগোজের জিনিস নিয়ে আপনার এত প্রবলেম কেন?”

—“তারমানে সব সাজগোজের জিনিস নিয়েছিস? ভালো। খুব ভালো। বিয়ের দিন তোকে চেনা গেলেই হয়।”

ইরিন আবার চোখ পাকাতেই আয়াজ হেসে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। কিছুক্ষন বাদে পাশে ফিরতেই দেখলো ইরিন অলরেডি তার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।

গাড়ি থেকে নামার কিছুক্ষণ আগে ইরিনের ঘুম ভাঙলো।সারা রাস্তা আয়াজের কাধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে এসেছে সে। ঘুম থেকে উঠে দেখলো আয়াজ ফোন নিয়ে ব্যস্ত! ইরিন চোখ পিটপিট করে উঁকি দিলো আয়াজ ফোনে কি করছে সেটা দেখার জন্য,তখনই ফোনের স্ক্রিনে সেটা দেখে আয়াজ তার দিকে তাকিয়ে বললো,

—“এই সোজা হয়ে বয়!..উঁকি দিচ্ছিস কেন?”

ইরিন সোজা হয়ে বসলো।ওড়না ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বলল,”আমি তো টাইম দেখছিলাম,কয়টা বাজে?..আমাদের আর কতক্ষণ লাগবে?”

নিজের মিথ্যে বলার প্রতিভা দেখেই নিজেই মুগ্ধ হলো সে।

—“আধঘন্টা!”

—“আরো আধঘন্টা?”

—“কেন কি হয়েছে?”

—“সেই কখন থেকে গাড়িতে বসে আছি।ক্লান্তিতে আবার মাথা ঘুরছে। হাত পা ব্যথা করছে।”

আয়াজ জানালার গ্লাস খুলে দিলো।ফুরফুরে বাতাস আসছে।এসি অন করা ছিলো বিধায় গাড়ির গ্লাস বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। আয়াজের নির্দেশে এসি বন্ধ করে দিলো ড্রাইভার। ইরিন জানলার বাইরে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখছে। ভোরের আলো ফুটেছে অনেক আগে। ঘুমে ছিলো বিধায় খবর ছিলো না। ঠান্ডা বাতাসে শরীর ফুরফুরে লাগছে।

মিনিট বিশেকের মাঝেই পৌঁছে গেলো তারা। হেলাল সাহেবদের গাড়ি তাদের আগে পৌঁছেছে। নিচতলার ডাইনিং এ বসে চা খাচ্ছে সবাই। এদিকে বাড়ির কিছু মেরামত কাজ চলছে।অনেকদিন পর এসেছে বিধায় রং করানো হচ্ছে। দরজা জানালা চেইঞ্জ করা হচ্ছে। উৎসব পরিবেশ তৈরি হয়ে গেছে অলরেডি। মুরুব্বি দের সালাম করে আয়াজ ভেতরে ঢুকে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য। ইরিন সালাম করে সোহেলি বেগমের পাশেই বসে রইল।
সেদিন সারাদিন বোরিংই কেটেছিলো ইরিনের। সবার সাথে পরিচয় করে নিয়েছে কেবল।

পরেরদিন সকাল থেকেই শুরু হলো জোর বৃষ্টি। আয়াজদের গ্রামের বাড়ির সামনের উঠান পাকা নয়। বৃষ্টির পানিতে কাদাপানি একেবারে মাখামাখি অবস্থা। মহিলারা অনেকেই দল বেঁধে বৃষ্টিতে ভিজতে নেমেছে। ছোট ছোট বাচ্চারাও আছে। হৈ হৈ, রৈ রৈ পরিবেশ।
পুরুষেরা বৃষ্টির পানি মাথায় নিয়ে পুকুরে গোসল করতে চলে গেছে। হেলাল সাহেবও উৎফুল্ল মনে ভিজতে চলে গেছেন। আয়াজ আলসেমির জন্য যেতে পারে নি। তার জন্য মোটরে পানি তুলে গোসলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইরিনও সবার সাথে কাদামাটিতে লাফালাফি করছে। এর ওর গায়ে কাদা ছুড়ে মারছে আর খুশিতে লাফাচ্ছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে একপলক দেখে আয়াজ গোসল করতে ঢুকে গেলো। মনে মনে বিরক্ত হলো সে, ইরিনকে বৃষ্টিতে ভিজতে বারণ করেছিলো সে। বৃষ্টির সাথে যেই পরিমান ঠাণ্ডা পড়ছে তাতে হুট করে জ্বর জ্বর সর্দি বাধিয়ে বসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ইরিন তাকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে গেছে। আয়াজ আর ডাকলো না। কারণ এই মুহূর্তে ডাকলেও সে শুনবে না। আয়াজ দীর্ঘশ্বাস চুপচাপ গোসল করতে চলে গেলো। ইরিন শখ করে সাজগোজের জিনিসত্র নিয়ে এসেছে বিয়ে উপলক্ষ্যে, এখন জ্বর সর্দি না বাধালেই হয়।

ঘন্টাখানেক বাদে সে গোসল করে বেরিয়ে হাত দিয়ে চুলের পানি ঝাড়ছিলো। এমন সময় তুতুরী এসে বললো,

— “মামা, মামী আছাড় খেয়ে পড়ে পা মচকে ফেলেছে। ”

আয়াজ চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,

—“বেশ হয়েছে। কোমর ভাঙ্গে নি?”

তুতুরী ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে চেয়ে আছে। আয়াজ ভেবেছে লাফালাফি করতে গিয়ে হয়ত খানিকটা ব্যথা পেয়েছে তাই আমলে নিলো না। আয়াজের পরনে একটা স্যান্ডো গেঞ্জি আয় নীল ট্রাউজার। হ্যাঙারে থেকে টিশার্ট বের করে গায়ে দিচ্ছিলো সে, মুক্তা এসে জানালো সোহেলি বেগম তাকে ডাকছে ইরিনকে তুলে আনার জন্য।

—“আমি মাত্র গোসল করে এসেছি ভাবি।”

আয়াজের কথা শেষে না হতেই সোহেলি হন্তদন্ত হয়ে আয়াজের ঘরে ছুটে এলেন। কাঁদোকাঁদো স্বরে বললেন,

—“জলদি আয় বাবা। সর্বনাশ হয়ে গেছে। ইরিনের পা মচকে গেছে! বেচারী শখ করে বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়েছিলো, কাদামাটিতে পা পিছলে মচকে গেছে। ব্যথায় উঠতে পারছে না।”

বাইরে এখনো তুমুল বৃষ্টি। ইরিন উঠোনে পা মেলে বসে কাঁদছে। কেউ ধরতে এলেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিচ্ছে। সেই ভয়ে সবাই দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
আয়াজ দ্রুত বেরিয়ে এসে দেখলো ইরিন উঠানে বসে চিৎকার করছে।
বৃষ্টি মাথায় নিয়ে উঠোনে নেমে গেলো আয়াজ। কাদামাটিতে সে নিজেই বারবার পা পিছলে পড়ে যাচ্ছিলো। ইরিনকে পাঁজকোলা করে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে এলো। তার গায়েও কাদামাটি লেগে মাখামাখি। ইরিনকে কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। ইরিন কান্না বন্ধ করে হাঁ করে আয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াজের টিশার্ট তার গায়ের কাদায় মাখামাখি। ভীষণ লজ্জা লাগছে তার। আয়াজ তার দিকে তাকাতেই চোখ নামিয়ে নিলো। আয়াজ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সোহেলি বেগমকে পাঠিয়ে দিলেন। সোহেলি ওয়াশরুমে ঢুকে ইরিনকে গোসল করিয়ে বের করে নিয়ে এলেন। ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই শুরু হলো তার পায়ের জন্য ঘরোয়া চিকিৎসা। সে তখনো কান্না করে যাচ্ছে। বস্তুত ইরিন যতটা না ব্যথা পেয়েছে তার চেয়ে বেশি চিৎকার করে সবাইকে বেহুঁশ বানিয়ে ফেলছে।সোহেলি সবার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন ইরিন। মুক্তা এসে ইরিনের পায়ে হলুদ গরম করে লাগিয়ে দিলো।
হেলাল সাহেব, মহসিনসহ বাড়ির অন্যান্য পুরুষেরা গোসল সেরে সবে বাড়ি ফিরেছে। ইরিনের চিৎকারে হেলাল সাহেব আর মহসিন দৌঁড়ে এলেন। হেলাল সাহেব ইরিনের পায়ের অবস্থা পরীক্ষা করে জানালেন সামান্য মচকেছে। রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।

ইরিন ঘরে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আস্তে আস্তে পায়ের ব্যথা বাড়ছে। প্রথমে খুব একটা মালুম না হলেও এখন ব্যথা যথেষ্ট বেড়ে গিয়েছে। তার পায়ে হলুদ পোড়া লাগিয়ে কাপড় দিয়ে বেধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যথা কমছে না।খাটের কাছে জানালার পাশে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদছে সে।বাইরে তখনো বৃষ্টি। দুপুরের খাবারের পর আয়াজ রেস্ট নিতে এসেছিলো। ইরিন তাকে দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে পুনরায় জানালার বাইরে তাকালো। রুমে কারেন্ট নেই। আকাশ মেঘলা থাকায় ঘর প্রায় অন্ধকার। ইরিনের চেহারা ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছে না। তবে কান্নার কারনে তার শরীর মৃদু কেঁপে কেঁপে উঠছে।আয়াজ নরম সুরে বললো,

—” বেশি ব্যথা করছে?”

ইরিন ফোঁপানো বেড়ে গেলো। পরোক্ষনেই কান্না বন্ধ করার চেষ্টা করলো । কাউকে কিচ্ছু বলবে না সে। কিচ্ছু না! বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো। আয়াজ পাশে দাঁড়িয়ে তার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

—“বৃষ্টি দেখবি?”

ইরিন মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। তার নিঃশব্দ চোখের পানি গাল ভিজিয়ে ফেলেছে। আয়াজ তাকে কোলে করে বারান্দায় নিয়ে গেলো। বারান্দা গ্রিল ঘেঁষে দাঁড়ালো সে। বাইরে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা বৃষ্টিতে লাফালাফি করছে। ইরিনের ভীষণ মন খারাপ হচ্ছে। কই ওদের তো কেউ পিছলে পড়ছে না? ইরিনকেই কেন পড়তে হলো? ইরিন দুহাতে আয়াজের গলা জড়িয়ে ধরে তার বুকের ওপর মাথা এলিয়ে দিয়ে চুপ করে রইলো। তার খুব জোরে কান্না পাচ্ছে। এত সাধ করে বিয়েতে এসেছে। এখন ভাঙ্গা পা নিয়ে কি করে মজা করবে সে? তার সাথেই কেন এমন হলো? বাইরে কি সুন্দর বৃষ্টি, সবাই ভিজছে। আর সে খোঁড়া হয়ে ঘরে বসে আছে।

বারান্দায় আবছা আলো আবছা অন্ধকার। আয়াজ কখনো বৃষ্টি দেখছে কখনো ইরিন দেখছে। ইরিন গাল ফুলিয়ে আদুরে বেড়ালের মত চুপচাপ তার বুকে মুখ গুঁজে আছে। আয়াজ আরো কিছুক্ষন তাকে নিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর রুমে নিয়ে এসে খাটে বসিয়ে দিয়ে বলল,

—“দেখি পা সোজা কর।”

ইরিন পা সোজা করতেই তার পায়ে বাঁধা হলুদ লাগানো কাপড়টা খুলে দিয়ে পরীক্ষা করে দেখলো বেশি মচকেছে কি না। ইরিন ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছে। আয়াজ আশ্বাস দিয়ে বলল,

—” বেশি মচকায় নি। রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে। ঠিকমত রেস্ট নে,কাল সকালেই দেখবি ঠিক হয়ে গেছে।”

ইরিন ঘাড় কাত করে সায় জানালো। আয়াজ খাটে ইরিনের পাশে শুয়ে গায়ে কাথা টেনে নিয়ে বললো,

—“আয় শুবি।”

ইরিন মাথা দোলালো। এর মানে সে শোবে না। আয়াজ তাকে টেনে শুইয়ে দিয়ে বলল,

—“শুয়ে থাক, দেখবি ব্যথা কমে যাবে। ”

ইরিন কোনরূপ প্রতিবাদ করলো না। আয়াজে বুকের ওপর মাথা দিয়ে চুপচাপ শুয়ে রইলো। আয়াজ তার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলল,

—” আমি বারণ করলে তো শুনবি না। এখন পড়ে যে পা মচকালো কার ক্ষতি হলো? কষ্ট কি আমি পাচ্ছি? তাইজন্যই বলি চলাফেরা করতে সাবধানে করবি। বড় হয়েছিস জ্ঞানবুদ্ধি খরচ করে কাজ করতে শিখ। সারাক্ষণ বাচ্চাদের মত লাফালাফি করাটা একটু কমা।”

ইরিন জবাব দিলো না। আয়াজের আরেকটু কাছে সরে এসে একেবারে চুপচাপ লেপ্টে রইলো তার সাথে। আয়াজ তাকে দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে চুপচাপ শুয়ে রইলো।

পরের দিন সকাল থেকেই বৃষ্টি। বৃষ্টির কারনে সুহানার বিয়ের আপাতত বন্ধ আছে। ইরিনের পায়ের ব্যথাও কমেছে। সে দিব্যি সবার সাথে হাসি তামাসা করছে। দুপুর পর্যন্ত আয়াজ ঘরেই ছিলো। দুপুরের পর বৃষ্টি বন্ধ থাকায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বেরিয়ে গেলো। আড্ডা শেষে বিকেলবেলা বাড়িতে ফেরার সময় মাঝপথেই শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি। আয়াজের কাছে অবশ্য ছাতা আছে। ছাতা মাথা খুব সাবধানে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলো সে। উঠোনের কাছে এসেই থমকে গেলো। ইরিন উঠোনের কাদামাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর খিলখিলিয়ে হাসছে। সারা গা কাদায় মাখামাখি। তাকে ঘিরে আয়াজের চাচাতো ভাইয়ের বউয়েরা সহ ইরিনের বয়সী কিছু তরুণীও বৃষ্টিতে ভিজে লাফালাফি করছে। আয়াজের হতবাক হয়ে গেলো।এদিক ওদিক তাকিয়ে রাগে বাঁশের একটা কঞ্চি জোগাড় করে নিলো সে। আজকে ইরিনের ছাল তুলে ফেলবে। মোচড় খাওয়া পা নিয়ে সে ভিজতে নেমেছে কোন সাহসে?
বস্তুত ইরিন তাকেই পাহারা দিচ্ছিলো।সে ঘর থেকে বেরোতেই সোহেলি বেগমের কাছ থেকে অনেক অনুনয় বিনয় করে বৃষ্টিতে ভেজার অনুমতি নিয়েছে। ভিজতে নামলেও সে একজায়গায় স্থির হয়েই ভিজছিলো। গতকালের পা মচকে যাওয়ার ভয়ে লাফালাফি করার সাহস পেলো না। কিন্তু আয়াজ তো আর এসবের কিছুই জানে না। ইরিনকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখেই সে বেশ ক্ষেপে গেছে। তাকে কঞ্চি হাতে এগিয়ে আসতে দেখেই ইরিন সারা গায়ে কাদামাটি নিয়ে একছুটে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো।
বাকিরা মেয়েরা সবাই ভয়ে হতবম্ভ হয়ে আছে। ভাবিরা মুখ টিপে হাসছে। দোতলার বারান্দা থেকে সোহেলি বেগমও দেখেছেন। মুখে আঁচল চাপা দিয়ে হাসতে হাসতে হেলাল সাহেবের কাছে গেলেন ঘটনা বর্ণনা করার জন্য। আয়াজ কঞ্চি ফেলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে পা ধুয়ে নিলো। জুতোয় কাদামাটি লেগে এক অবস্থা। ভালোমত পা ধুয়ে ভেতরে ঢুকলো সে, যেন কিছুই হয় নি।এদিকে ইরিন ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সোজা সোহেলির রুমে চলে গেছে। আজকে আর ভুলেও এই রুম ছেড়ে বেরোবে না সে।
.
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here