মায়াবন_বিহারিনী🖤 #পর্ব_৪৩

#মায়াবন_বিহারিনী🖤
#পর্ব_৪৩
#আফিয়া_আফরিন

আজ বাড়িতে আবারো উৎসব লেগেছে। ছোট বড় সবাই মিলে হইচই; এক কথায় রমরমা পরিবেশ। ছোট বড় বাচ্চারা বাড়ি ঘর লন্ডভন্ড করতে ব্যস্ত। আর একটু বয়স্করা গল্প গুজব করছে। সকলের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ, উত্তেজনা।
ছোট্ট মেয়েটা দেখতে দেখতে বড়ই হয়ে গেলো। আজ তার এক বছর পূর্ণ হলো। সে তার মায়ের কাছে থাকতে চায় না, বাবার কাছেই যেন সব। দুনিয়ার সকল শান্তি যেন তার বাবার কোলে। ইমার প্রতি ইমনের ভালবাসাটাও অদ্ভুদ! মায়ার তো মাঝে মাঝে মনে হয়, সে মা না হয়ে; ইমন মা হলে সবচেয়ে বেশি ভালো হতো।

আজ ইমার জন্মদিনের দিন, সারাটাক্ষণ ইমনের কাছেই ছিল। ইমন বাহিরে গেলে, হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসবে। এইটুকু বাচ্চা কি বোঝে, কে জানে?

আজকে সারা দিনে অনেক ক্লান্তি গেছে। বাসায় অনেক মানুষজন ছিল, বাচ্চারা ছিলো। সবার খাওয়া দাওয়া শেষে, সবকিছু ঠিকঠাক করে গোছগাছ করতেই অনেক রাত হয়ে গেছে।
সবাই যে যার ঘরে চলে গেছে ঘুমাতে। ইমন বাইরে গেছে, খালামণিদের এগিয়ে দিয়ে আসতে। এখনো ফিরে নাই।

মায়া ইমাকে নিয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু সে তার বাবাকে ছাড়া কিছুতেই ঘুমাবে না।
আধো বুলিতে বারবার বলছে, “বা-বা, বা-বা।”

মায়া ওকে শান্ত করিয়ে বলছে, “বাবা বাহিরে গেছে মা। এক্ষুনি আসবে। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।”

“বাব্বা-বা।”

“বাবা আসবে তো মা। একটু কাজে গেছে। এখন তুমি ঘুমাও। বাবা আসলে তোমায় ডেকে দেবো।”

“বা-বা-বা, বাব্বা।”

“আরে ধুর। কি বাবা বাবা শুরু করছে মেয়ে? বারবার বলতেছি না, বাবা বাহিরে গেছে। বাসায় ফিরতে হবে নাকি? মেজাজ কেমন গরম করে পোলাপান।”

মায়ার ধমকে ইমা ঠোঁট উল্টিয়ে কেঁদে ফেললো। মায়া তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। মেয়ের যত দরদ, সব তার বাবার জন্য।

এমন সময় ইমন ফিরলো। ইমাকে কাদঁতে দেখে মায়াকে জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে? ও কাঁদছে কেন এভাবে?”

“কেন আবার? তোমার জন্য। সারাক্ষণ বাবা বাবা, পাগল করে ছাড়লো।”

ইমন ইমাকে কোলে তুলে নিয়ে উঁচু করলো। ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল, “এসে গেছি আম্মু। আর কাঁদতে হবে না। এরপর যখন বাহিরে যাব, সব সময় তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবো। আম্মুর কাছে আর রাখবো না। সারাদিন শুধু বকে, তাই না!”

ইমা কান্না থামালো এবং সামনে উপর নিচের পাটিতে গজানো চার দাঁতে হেসে ফেললো।

ইমন বললো, “এখন কি ঘুমাতে হবে না? অনেক রাত হয়ে গেছে। চলো আমরা এখন ঘুমিয়ে পড়ি। কাল সকাল বেলা ইনশাআল্লাহ, বাবা ঘুরতে নিয়ে যাবো।”

কিছুক্ষণের মধ্যেই ইমা ঘুমিয়ে পড়লো। সারাদিনের পরিশ্রমে মায়া ও অনেক ক্লান্ত ছিলো। সেও প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিলো। হঠাৎ কপালে হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকালো। দেখলো ইমন। মায়া উপুর হয়ে ইমনের কাঁধে মাথা রেখে ওপাশে তাকালো। এই সাহেব মেয়ে কে সাইডে রেখে তার জায়গা দখল করে নিয়েছে।

“কি ব্যাপার হুম? ওকে সাইডে রাখছো, যদি পড়ে যায়?”

“পরবে না। বালিশ দিয়ে রেখে এসেছি।”

“আচ্ছা। তো এই পাশে কি?”

ইমন মায়ার দিকে কিঞ্চিত এগিয়ে এসে বললো, “এই পাশেই তো আমার সব। আমার পুরো পৃথিবী। আমার দিনের সমস্ত ব্যস্ততা, অবসন্নতা, কাজকর্মের ছুটি দিয়ে রাতের নির্জনতা। সবটা ঘিরেই তো তুমি, শুধুই তুমি।”

“তাই?”

“হ্যাঁ।”
এই বলে বলে ইমন আলতো করে মায়ার কপাল ছুঁয়ে দিচ্ছিলো।
মায়া নিষ্পলক চেয়ে রয়েছে ইমনের চোখের দিকে।

ইমন ক্ষীণ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “কি দেখছো ওইভাবে?”

মায়া নিজের কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো, “আমাকে। আমাকে দেখছি।”

“আমাকে দেখছি মানে?”

“বুঝতে পারছো না! তোমার চোখের মনি কুঠুরিতে আমাকে দেখা যাচ্ছে। একদম স্পষ্টভাবে। তুমি কি জানো না, বর্ণহীন ভাষার গভীরতা পেলে একে অন্যের চোখের অপরজনকে স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়।”

ইমন মিষ্টি করে হাসলো। কেমন যেন লজ্জা মাখা সেই হাসি। মায়া তা দেখে খিলখিল করে হেসে উঠলো।

হাসতে হাসতেই বললো, “ওমা! তুমি দেখি লজ্জা পেয়ে গেলে। সিরিয়াসলি, তোমার লজ্জাও আছে আবার? আল্লাহ! আর কি দেখতে হবে আমাকে?”

ইমন মায়ার গাল টেনে দিয়ে বললো, “হু। দুনিয়ার শুদ্ধ সবার কাছে তো নি’র্ল’জ্জ আমি।”

মায়া উল্টো ইমনের গলা জড়িয়ে ধরে বললো, “না। দুনিয়া শুদ্ধ সবার কাছে নি’র্ল’জ্জ হতে হবে না। শুধুমাত্র আমার কাছে হলেই হবে। তোমার এই রূপ শুধুমাত্র আমার জন্যই গ্রহণযোগ্য। বাকি সবার কাছে তুমি যেমন, ঠিক তেমনি থাকবা।”

ইমন মায়াকে আলতো করে বুকের মধ্যে টেনে নিলো।
.
.
আজ শুক্রবার। সকাল সকাল নীলা এসে হাজির। সে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি যাচ্ছিলো। পথিমধ্যে মনে হলো এখানে আসার কথা। তাই যাওয়ার পথেই চলে এসেছে। এসেই বায়না ধরেছে, মায়া কে সাথে করে নিয়ে যাবে।
মায়া যেতে চাচ্ছিলো না। কিন্তু নীলার জোরাজুরিতে রাজি হলো।

সুহাদাও বললেন, “যা না। গিয়ে আজকের দিনটা ঘুরে আয়। আমার দাদুমণিকেও সাথে করে নিয়ে যা।”

“ওকে আবার তোমাদের কাছে রেখে যাওয়া যাবে। যে জালানো জ্বালায়। ইমন থাকলে একটা কথা ছিলো।”

নীলা মিমো কেও যেতে বললো। কিন্তু মিমোর রবিবার থেকে পরীক্ষা। তাই সে যেতে পারছে না।
তাই নীলা মায়া আর ইমাকে নিয়েই চললো। ইমন বাসায় নেই, থাকলে হয়তো সেও যেতো।
.
.
সারাদিনটা নীলার সাথেই কাটিয়ে, বিকেলে বাসায় চলে যেতে চাইছিলো মায়া। কিন্তু নীলা ছাড়লো না। ইমার সাথেও তার বেশ ভাব জমেছে। সন্ধ্যার একটু পর ইমন ফোন করে জানালো, “আমি একটু কিছুক্ষণ পর তোমাদের নিতে যাবো। এই রাতের বেলা একা একা আসার কোন প্রয়োজন নেই।”

“কি দরকার তোমার আবার কষ্ট করে আসার? আমরা কি একা একা আসতে পারি না নাকি?”

“না আসতে পারবো না। আমার একটা রেস্পন্সিবিলিটি আসে না, তাছাড়াও!”

“তাছাড়াও কি? কি মতলব?”

“তুমি সারাদিন এত মতলব মতলব করো কেন? মতলব কেন থাকবে?
আমি নিয়ে আসতে গেলে আসার পথের সময়টা বাড়তি পাশে পাবো তোমাকে, এ লোভটাও সামলাতে পারছি না তো।”

মায়া লজ্জা পেয়ে চুপ করে গেল। তারপরেই বলল,”সারাক্ষণ তো তোমার পাশে পাশেই থাকি। মানে, যত পাই তত চাই; তাই না?”

ইমন হো হো করে হাসলো। জিজ্ঞেস করল, “ইমা কই?”

“আছে নীলা আপুর কাছে। নীলা আপুর সাথে যে ভাব জমাইছে, বলার বাহিরে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে রাখছি এখন। আমি একটু কিছুক্ষণ পর আসছি। রেডি হয়ে থাকো।”

সেই রাতেই ইমন মায়া আর ইমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো। পরদিন তারা চলে গেল মায়ার খালামনিদের বাসায়। মায়ের কাছে ফোনে জেনে ছিলো, “মিলা আর শিলা আপু ওখানেই আছে। তাই তাদের সারপ্রাইজ দিতে চলে যাওয়া।

সত্যি তারা সারপ্রাইজ হলো বটে। অনেকদিন পর দেখা। সবাই একসাথেই থাকা হয়, অথচ ব্যস্ততার খাতিরে কেউ কারো সাথে দেখা করার সময় টা পর্যন্ত পায় না। সেদিন আর মায়া ইমনকে ছাড়লো না কেউ।
জামাই জামাই করতে করতেই জামাই আদর করা হলো।
.
.
ফিরে এসে দুই দিন বাদে, মায়ের বাড়িতে ঘুরতে চলে গেলো। অনেক, অনেকদিন পর নিজের বাড়িতে ঢুকে শান্তি লাগছে। অব্যক্তনিও আনন্দ হচ্ছে। সেই কতগুলো দিন পর এখানে আসা। সেদিন বিকেলবেলা মহুয়াও চলে এলো।

মাহিদ এখন বড় হয়ে গেছে। সুন্দর করে কথাও বলতে পারে। তবে সে প্রচন্ড দুষ্টু, মারামারিও করে। এর মধ্যে ইমার সাথে কয়েকবার চুল টানাটানিও হয়ে গেছে। ওতে কিছু হবে না, বাচ্চা মানুষ!

অনেকদিন পর সবাইকে একসাথে দেখে জাহানারা মনের আনন্দে কেঁদেই ফেললেন। দুই মেয়ে, মেয়ে জামাই, নাতি নাতনি; সবাইকে দেখে আনন্দ আর ধরে রাখা যায় না।

বাচ্চার দুটোও বেশ তার নেওটা হয়েছে। ইমা তো এখনো বাচ্চা মানুষ, সে এতকিছু বোঝেনা। ঝগড়া ও করতে পারে না। মাহিদ কিছু একটা বলতে গেলে, ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে।
.
.
বিকেলবেলা মহুয়া মায়া কে গিয়ে বললো, “চল না। কোথাও থেকে ঘুরে আসি। তোর সাথে অনেকদিন ঘুরে বেড়ানো হয় না। বিয়ের আগে কত ঘুরতাম আমরা।”

“কোথায় যাবা?”

“দেখি কোথায় যাওয়া যায়।”

“আচ্ছা চলো আমার তো আপত্তি নাই। বাচ্চাদেরকে রেডি করাতে হবে।”

“না। ওদেরকে মার কাছে রেখে যাবো। সব সময় যেদিকে যাই, পিছু নেয়। এ আবার কেমন কথা? সব সময় অত্যাচার ভালো লাগেনা। আজকে নিব না, বলে দিলাম। শুধুমাত্র আমি আর তুই ঘুরে আসি।”

“এটা আবার কিভাবে হয়? মা একসাথে দুজনকে সামলাতে পারবে বলে তোমার মনে হয়। দুজনেই যা ঝগড়াঝাটি করে। আমরা আসার পর হয়তো দেখা গেলো, ঝগড়া করতে করতে দুজনের মাথার চুল-টুল ছিড়ে ফেলছে।”

“ছিড়ুক। চুল ছিঁড়ে আবার চুল গজাবে। মা ওদেরকে ঠিক সামলাতে পারবে। আর ইমন তো আছেই। ওর মেয়ে ও ঠিক পারবে।”

“তোমার কি হয়েছে বলোতো? আমার জ্ঞানদাত্রী আপু এরকম ছেলে মানুষি করছে কেন?”

“ওই আমি জ্ঞানদাত্রী?” চোখ পাকিয়ে বলল মহুয়া।

মায়া বলল, “রি’লা’ক্স আপু! আমি ফাজলামি করছি। কিন্তু তোমার আসলে হইছেটা কি?”

“আরেহ, কিছুই হয় নাই। শুধুমাত্র পোলাপানের জ্বালায় অতিষ্ট আমি। খাইতে দেবে না, বসতে দেবে না, ঘুমাতে দিবে না। যন্ত্রণার জন্য শেষ নাই। মাঝে মাঝে যা মেজাজ গরম হয় না!
আজকে অনেকদিন পর এখানে আসছি, একটু রিলাক্সে থাকতে চাই। মাহিদ মার কাছেই থাকুক।”

মহুয়ার কথার ধরন দেখে মায়া হিহি করে হাসলো।
বললো,”আমার তো তাহলে ভাগ্য ভালো। আমার মেয়েটা শান্ত শিষ্টই আছে। জ্বালায় খুব কম।”

“সুখে আছিস তুই।”

“আসলেই সুখে আছি।”

“হ্যাঁ থাকবিই তো। তোর সাথে শাশুড়ি আছে, ননদ আছে, স্বামী আছে। ইমাকে তো তারাই দেখতে পারে। আর আমাকে দেখ, একদম একা একা পড়ে গেছি। আরাফাত তো বাসায় থাকে না সারাদিন, তার অফিস আছে।”

“আচ্ছা থাক থাক আর মন খারাপ করতে হবে না। চলো এখন যাই আমরা।”

মহুয়া খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল, “ধুরু!”

জাহানারা এসে বললেন, “ওর মাথা এমন গরম হয়ে আছে কেন? ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে ওর মাথায় দে?”

“আপু নাকি বাচ্চাকাচ্চাদের জ্বালায় অতিষ্ট!”

জাহানারা হেসে বললেন, “এই কথা বলছিস। সে হিসেবে মাহিদ তো একদম নাদান বাচ্চা। তুই ছোট থাকতে আমাকে কি পরিমান অত্যাচার করতিস, বলা শুরু করবো একবার।”

“না মা থাক, লাগবেনা। তুমি ওই দুটো আন্ডা-বাচ্চাকে দেখে রাখ। আমি আর মায়া একটু বাহিরে থেকে ঘুরে আসি।”

“আচ্ছা যা। আর নিশ্চিন্তেই থাক।”

মহুয়া চলে গেল রেডি হতে।

মায়া মহুয়ার পাগলামি দেখে হেসে ফেললো। জাহানারা মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো, “তুইও কি মহুয়ার মত এমন অভিযোগ করিস নাকি?”

“একদমই না। আমাকে তো ইমাকে নিয়ে থাকতেই হয় না। হয়তো মা, নয়তো মিমোর কাছেই থাকে। আর ইমন তো আছেই। অবশ্য ও সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে মিমো কে। রাতে মাঝে মাঝে ওর কাছেই থাকে। আর ইমনকে পেলে তো আমাকে পাত্তাই দেয় না। ব্যাপারটা ভীষণ দুঃখজনক!”

মায়ার কথায় জাহানারা হেসে ফেললেন। সামান্য এইটুকু কথাই বুঝলেন, মেয়ে তার বড্ড সুখে আছে। এত সুখের দিকে যেন কখনো কারো নজর না লাগে। মায়া মন খুলে হাসছে। সেই হাসি দেখে জাহানারার মন কানায় কানায় ভরে উঠলো। তিনিও হাসলেন।

.
.
দুইজন ঘোরাঘুরি করে বাড়ি ফিরতেই রাত হয়ে গেল। বাহিরে থেকে তাড়া খেয়ে এসেছে, বিধায় এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো।

ইমন ইমাকে কোলের মধ্যে নিয়ে বসে আছে। ইমা উঠে দাঁড়িয়ে ইমনের চুল ধরে টানছে। আধো বুলিতে বা-বা, বা-বা করে ডাকছে আর খিলখিলিয়ে হাসছে। ইমনও সাথে সাথে হাসছে।
ওদের দুজনের কান্ড কাহিনী দেখে মায়া বললো, “আমার মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানো? আমি ওর মা না হলেই ভালো হতো। তুমি ওর এত যত্নআত্তি কর, তুমি মা বলেই বোধ হয় ভালো হতো।”

ইমন হেসে বলল, “হু। যাইহোক ওকে ঘুম পাড়িয়ে দাও। অনেকক্ষণ যাবৎ কাঁদছিলো।”

মায়া ইমাকে বুকের উপর নিয়েই ঘুম পাড়িয়ে দিলো। ইমন কাছে এসে বললো, “আমার জায়গা কোথায়?”

“এখানে তোমার জায়গা নেই। এখানে শুধু আমাদের মা মেয়ের জায়গা। তুমি যেখানে আছো, সেটাই তোমার জায়গা।”

“এটা ঘোরতর অন্যায়!”

“মোটেও না। দিনের বেলা মেয়ের অত্যাচার, আর রাতের বেলা তোমার; তাই না?”

“যাহ বাবা। আমি তোকে অত্যাচার কখন করলাম? এত বড় অ’প’বা’দ!”

মায়া চোখ পিট পিটিয়ে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না।
কিন্তু ইমন এগিয়ে এসে কপালে চুমু খেলো। ইমা সহ মায়া কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মায়া অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো, “ও উঠে যাবে। তারপর উঠে কান্নাকাটি করবে। নিজেও ঘুমাবে না, আমাকেও আর ঘুমাতে দেবে না।”

“উহু। উঠবে না। আমার মেয়ে তোমার মতো এতো পঁচা না।”

ঠিক এমন সময় ই ইমা উঠে গেলো। এবং ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে শুরু করলো। কিন্তু বেশিক্ষণ কাঁদলো না। মিনিট দশেকের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো। মায়া ওকে পাশে শুইয়ে দিয়ে ইমনের দিকে তাকিয়ে বললো, “দেখলে তো?”

ইমন মাথা চুলকিয়ে বোকা হাসি হেসে বললো, “হ্যাঁ দেখলাম।”
তারপরেই আবার মায়া কে বললো, “চলো।”

“কোথায়?” মায়া অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।

“বারান্দায়। দেখো কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে।”

“ঘুমাবো এখন।”

“প্লিজ!”
ইমন ওর হাত ধরে, এক প্রকার জোর করেই বারান্দায় নিয়ে গেলো। মুখোমুখি দাঁড় করালো। চাঁদের আলো তির্যক ভাবে মায়ার চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে। আরো মায়াবী লাগছে তাকে।

ইমন ওর চুলের খোপা টা ছাড়িয়ে দু কাঁধে হাত রেখে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। ছোট্ট করে ঠোঁটে একটা চুমু খেলো। আলতু হাতে গালটা ছুঁয়ে দিয়ে বললো, “জানো চাঁদ পরি, তোমাকে আজকে কিসের মত লাগছে?”

“কিসের মতো?”

“সদ্য আঠারো তে পা দেওয়া এক কিশোরী। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে, ক্লান্তির সূর্যি মামাকে বিদায় দিয়ে, জোসনা রাতে চাঁদের পরশ পাওয়া এক অবিকল কিশোরী যেনো তুমি!
যার মোহে নয়, শুভ্রতায় ডুবতে রাজি আমি। যাকে এক আকাশ ভালোবাসার ক্ষমতা রাখি আমি। যার মাঝে বারবার ডুব দিতে চাই, বিলীন হতে চাই।”

মায়া কিছু বললো না। মুগ্ধ চোখে কিছুক্ষণ ইমনের দিকে তাকিয়ে থেকে, চোখ নামিয়ে নিলো। জীবনটা যেন শুভখাদে বইতে শুরু করলো।
.
.
.
.
.

চলবে…..

[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here