ফানাহ্_🖤 #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান #পর্বসংখ্যা_০৪

#ফানাহ্_🖤
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
#পর্বসংখ্যা_০৪

-মেহরাজ তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, সেখানে তুমি কি না কোত্থেকে একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে চলে এলে! এমনটা তোমার কাছ থেকে এক্সপেক্ট করিনি

-সব কাজ এক্সপেকটেশন অনুযায়ী হবে এমন তো কোনো কথা নেই চৌধুরী আংকেল।

মেহরাজের গা ছাড়া কথায় ভেতরে ভেতরে প্রচন্ডরকম ফুসে উঠলো তিয়াসার বাবা ওয়াকিফ চৌধুরী। তবে মুখে প্রকাশ করলো না। আড়চোখে ক্ষিপ্ত ভাবে তাকালো আজহারের দিকে। কটাক্ষ করে বললো

-আপনাকে আমি এক কথার মানুষ ভেবেছিলাম মুর্তজা সাহেব। এখানে তো আপনারা আমার মেয়ের জীবন টাই ইয়ার্কি বানিয়ে দিলেন।

-দেখুন, এই বিয়েতে আপনি যেমন হতবাক হয়েছেন, তার চেয়ে দ্বিগুণ বিস্মিত আমরা নিজেরাও। এমনটা হবে আমরা তো ভাবতেও পারিনি

আরহামের বলা কথায় আরও দ্বিগুণ তেঁতে উঠলো ওয়াকিফ চৌধুরী। সোফা ছেড়ে উঠে খানিক চেঁচিয়ে বললো

-চার বছর ধরে তিয়াসার সাথে মেহরাজের বিয়ে ঠিক করে রাখা, আমার রিলেটিভস রাও এ ব্যাপারে জানে, আর এখন কি না আপনারা বলছেন ছেলে বিয়ে করে এনেছে আপনারা ভাবতেও পারেননি

একদমে চেঁচিয়ে কথা গুলো বলে হাঁফিয়ে উঠলো মোটাসোটা শরীর নিয়ে। রাগে কপাল বয়ে ঘাম ঝরছে। ক্ষোভ পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো মেহরাজের দিকে। এদিকে এতো উত্তেজনা, উৎকণ্ঠায় কোনো মনোযোগ নেই, স্বভাবসুলভ শান্তভাবে টেবিলে বসে নাস্তা করছে।
সুবৃহৎ লম্বাটে আট আসন বিশিষ্ট টেবিলের মধ্যিখানে একাই বসে খাচ্ছে। পাশেই দাঁড়িয়ে আম্বি একবার এটা একবার ওটা তুলে দিচ্ছে মেহরাজের প্লেটে। কিন্তু মমতা ভরা এই আদরটুকু কেও অগ্রাহ্য করে মেহরাজ শুকনো কাঠকাঠ টোস্টে কামড় বসিয়ে খাচ্ছে, ডান হাতে জুসের গ্লাস বা হাতে ফোন। দুনিয়াবি সকল ধ্যান জ্ঞান ভুলে ফোনের মাঝেই বুদ হয়ে রইলো যেন আধ্যাত্মিক কোনো নে’শায় ডুবে গেছে।
হুট করেই বিপ বিপ শব্দে ভাইব্রেট করে উঠলো ফোনটা, অবিলম্বে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। হাতলে টান করে রাখা কালো রঙের ব্লেজার টা তুলে হাটা ধরলো বাইরের দিকে
আম্বি হতাশ হয়ে তাকালো মেহরাজের যাওয়ার পানে, একদিন ছেলে বাড়িতে খাইনি বলে ওর সব পছন্দের পাকোয়ান তৈরি করে টেবিল ভরে ফেলেছে অথচ ছেলে সেগুলোতে আঙুলের স্পর্শও লাগাইনি। তিনি যে ছেলেকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত মমতা, আদর দেখান সেটা তিনিও ভালোই জানেন, এজন্য প্রায় সকলের কটাক্ষও শুনতে হয়। কিন্তু তবুও গা করে সেসবে, যেন দুনিয়াতে একমাত্র ছেলে ছাড়া আর কিছুই নেই।

আজহার শান্তদৃষ্টিতে পরখ করলো মেহরাজের স্থান্তত্যাগ। ওয়াকিফ এবার গলার স্বরটা অদ্ভুত ভঙ্গিমায় পরিবর্তন করে ফ্যাসফ্যাসে গলায় রুক্ষভাষীতে বলল

-ছেলের উপরে একটা কথাও চলে না আপনার মুর্তজা সাহেব, একুশ বছরেও লাগাম টানতে পারেননি।

-এরকম একুশ বছর আরও দু তিনবার চলে গেলেও লাগাম শব্দ টা মেহরাজ আব্রাহামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে নাহ

সোফাতে গা এলিয়েই কফির কাপে চুমুক দেওয়ার পূর্বমুহূর্তে বলল আরহাম। আজহারের নির্বাকতাকে আরও ব্যাপকভাবে হেয় করে উঠে দাঁড়ালো ওয়াকিফ চৌধুরী। গটগট করে সদর দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

তন্মধ্যে সিড়ি ভেঙে মোহর নিচে নেমে এলো। আসার নূন্যতম ইচ্ছে ছিলো নাহ, তবে শাহারা বেগম নাজমাকে দিয়ে ডাকতে পাঠিয়েছিল ওকে।
গুটি গুটি পায়ে সিড়ি বেয়ে নেমে এলো, এখানে আসতে অনিহা হওয়ার কারণ ভয় নয়, এই মানুষ গুলোর রূঢ় আচরণ। কাওকে সহ্য হচ্ছে না মোহরের অচেনা অজানা মানুষ গুলোর জীবনে এমন চক্ষুশূল হতে চাইনি ও। ওদের ব্যবহারে নিজেকে বারংবার তুচ্ছ মনে হচ্ছে।

-এইতো তুমি এসেছো। আসো খেতে বসো অনেক বেলা হয়েছে

নিচতলার বা দিকের ঘরটা থেকে বেড়িয়ে এসে মোহরকে দেখে এগিয়ে এলেন শাহারা। ওর হাত ধরে টেবিলের কাছে নিয়ে গেলো।ততক্ষণে বাড়ির পুরুষেরা বেরিয়ে গেছে। আম্বি ট্রে তে করে চা আনছিল শাহারার জন্যে, মোহরকে দেখেই বাড়া ভাতে ছাই পরার মতো মুখাবয়ব হয়ে গেলো। কুঞ্চিত ভ্রুদ্বয়ে প্রগাঢ় তিক্ততা মিশিয়ে রুক্ষ গলায় বলল

-ওকে এখানে কেন এনেছেন মা, নাজমাকে বললেই তো উপরে খাবার দিয়ে আসতো। উড়ে এসে জুড়ে বসেছে খেতে না দিয়ে মে’রে ফেলতে তো পারিনা

-আম্বি, তোমার ব্যবহার দেখে আমি আশ্চর্য হচ্ছি। বাড়ির কাজের লোকের সাথেও এ ধরনের ব্যবহার করা হয়না এ বাড়িতে। নিজের শিক্ষা আদর্শজ্ঞান সব কি ভুলে বসেছো?

-তা নয়তো কি, এই মেয়েটা আমার ছেলের জীবন ধ্বংস করতেই এ বাড়িতে এসেছে।

-যদি ও ধ্বংস করতেই আসে, তবে এটাও তোমার জানা উচিত নিজের ধ্বংসকে নিজেই বিয়ে করে এনেছে মেহরাজ, স-ইচ্ছাতেই এনেছে।
আর বিয়ে যখন করেছে তাই ও এ বাড়ির বউ।

-ওকে না এবাড়ির না মেহরাজ কারো বউ-ই মানি না। যত দ্রুত সম্ভব ওদের ডিভোর্স করানোর ব্যবস্থা করবো আমি

-আপনি ব্যস্ত হবেন নাহ, আমি নিজেই চলে যাব এ বাড়ি থেকে।

-বললেই হলো চলে যাবে? বড়োলোক ছেলে দেখে বিয়ে করেছো, এমনি এমনিই ছেড়ে দিবে? তোমাদের মতো মেয়েদের হাড়ে হাড়ে চিনি জো’চ্চর কোথাকার

কথাগুলো ফুলকির মতো শরীরে বিঁধে গেলো মোহরের, কিন্তু প্রতিক্রিয়া করলো নাহ। তবে এটুকু বলেই ক্ষান্ত হলো না মেহরাজের চাচী কাকলি। এগিয়ে এসে আম্বির পাশেই দাঁড়িয়ে বলল

-ওর কথায় কান দেবেন না ভাবি,এসব কথায় মানুষকে ভিজিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করার ধান্দা। আমিতো বলব এক্ষুনি গলাধা’ক্কা দিয়ে বের করে দাও বাড়ি থেকে

-কাকলি! ভুলে যাবে না আমি এখনো বেঁচে আছি। এবাড়িতে কে থাকবে কে না সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে তোমাদের মতামত চাইনি। আর যাকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করার কথা বলছো সে কার বউ এটা ভুলে যাচ্ছো কি করে?

-আপনি ওর হয়ে বলবেন না মা। মেহরাজ ওকে বিয়ে করে ভুল করেছে আর তা শীঘ্রই বুঝতে পারবে।

শাহারা ওদের কথায় গ্রাহ্য না করে মোহরকে খাবার বেড়ে দিতে গেলে আম্বি বলল

-এই তোমার পরনে এটা কার শাড়ি? এটা তো দেখে মনে হচ্ছে

-হ্যাঁ এগুলো আমিই ওকে দিয়েছি।

-কিন্তু মা..

-এখানে কোনো কিন্তু আমি দেখছি নাহ। যেটা যার পাওয়ার কথা ছিল সেই পেয়েছে।

মোহর প্রচন্ড অপমানবোধ নিয়েও পরিশ্রান্ত গলায় বলল

-আমি আসার সময় কোনো জামা কাপড় আনার সুযোগ পাইনি, তাই বাধ্য হয়ে এটাই পড়তে হয়েছে, ক্ষমা করবেন। শাড়িটা আমি আপনাকে ফিরিয়ে দেব

কাকলি ঝাঝালো গলায় বলল

-বাড়িতে আসতে না আসতে এ বাড়ির বউদের জন্যে রাখা শাড়ি গুলো হাতিয়ে নিয়েছে। একে রাখলে আরও কত কিছু হাতাবে খোদা জানে। আমি বলে রাখছি এই মেয়ের জন্যে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে দিলাম

বলেই হনহন করে চলে গেলো, আম্বি ও আর সেখানে দুদন্ড দাঁড়ালো নাহ। মোহর না চাইতেও গাল বেয়ে সিক্তকণা বয়ে পড়লো। এতদিন চাচীর কটাক্ষ শুনেছে এখানে এসে এই মানুষ গুলোর। না জানি আর কতদিন বয়ে বেড়াতে হবে এসব।

শান্ত দুপুরেও প্রকৃতি গুমোট বায়ুশূন্য হয়ে আছে। গাছের পাতা গুলো তীব্র ভাবে অনশনে বসেছে। গ্রীষ্মের শেষ দিকেও ধরনীর উত্তাপে অতিষ্ঠ হবার জো। কেমন থমথমে পরিবেশে নীরবতা রাজত্ব কায়েম করে আছে। মনে হচ্ছে ঝড়ের পূর্বাভাস, মোহর ঘর্মাক্ত শরীরে নিচতলার কোণার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। এতক্ষণ শাহারা বেগমের ঘরেই ছিল। মানুষটা এক মুহূর্ত হাতছাড়া করেনি মোহরকে, মোহরের আজ নিজের দাদীর কথা মনে হলো খুব করে, শেষ কবে দেখেছিল তাকে? মনে হয় পাঁচ ছয় বছর বয়সে। আজ শাহারা বেগমকে দেখে তাকে দেখার তীব্র আকুতি হচ্ছে মনের ভেতর, সে থাকলেও হয়তো এভাবে আগলে রাখতো মোহরকে।
নিজের ভাবনান অজানায় বুদ হয়ে সিড়ির দিকে যাচ্ছিল তখন দরজার বেল বাজার শব্দ হলো। পা থামিয়ে দাঁড়ালেও দরজার দিকে গেল নাহ, আশেপাশে কেও নেই আরও তিন চারবার বিরতিহীনভাবে বাজতে থাকলো ধাতব শব্দের আওয়াজ টা। মোহর এদিক ওদিক তাকিয়েও কাওকে পেলো নাহ। অগত্যা নিজেই এগিয়ে গেলো।
দরজা খুলতেই একটা বাচ্চার কান্নার শব্দ এসে কানে লাগলো, সামনে দাঁড়ানো অচেনা একটা চেহারা, অবশ্য একদিনে কাকেই বা চিনবে এমন একটা বাড়ির!
মেয়েটা মোহরকে দেখেও গ্রাহ্য করলো নাহ, ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ধুপধাপ পায়ে বাড়ির ভেতর ঢুকলো। বাচ্চাটার কান্নার শব্দ আরও তীব্র হয়ে উঠলো, কিন্তু অদ্ভুতভাবে মেয়েটা তাতে অসহ্য হয়ে ছিটকে ফেলল বাচ্চাটাকে সোফার উপরে, ব্যথায় চিৎকার করে ওঠা নবজাতকের কান্না কানে না নিয়েই উপরে উঠে ঘরে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলো। মোহর বিব্রতবোধ নিয়েই এগিয়ে গিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে নিল, বেশ অনেকক্ষণ কাঁধে তুলে দোলানোর পর কান্নার বেগ কমে এলো, রান্নাঘরের দিক থেকে নাজমা বেরিয়ে এসে মোহরের কোলে বাচ্চাটা দেখে বলল

-ওমা এ তো তাথই আপার বাচ্চা, হেই কি আইছে?

-আমি তো চিনি না তাথই কে, তবে মনে হলো বাচ্চার ই মা। ওকে এভাবে সোফাতে ফেলেই ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।

এলোমেলো দ্বিধাদ্বন্দ্বিত গলায় বলল মোহর, নাজমা যেন বিরক্ত হলো কথা গুলো শুনে, মুখ ভেংচে বলল

-মা যেমন জল্লাদ মেয়ে তার এক কাঠি উপরে, আপনে বাচ্চাডারে একটু রাখেন আমি ওহনই দুধ গরম কইরা আনতাছি, আহারে বাচ্চাডা কিল্লেইগা যে ওই ডাইনি ডার পেটে হইছিল খোদা জানে

বলে গজরাতে গজরাতে চলে গেল। মোহর আগামাথা না বুঝলেও এটুকু বোধগম্য হলো যে মেয়েটার এরূপ আচরণ হয়তো এমনই তাই ওরা অবগত। বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে সোফাতে বসলে নাজমা ফিডারভর্তি দুধ নিয়ে আসলে মোহর বাচ্চাটার মুখের সামনে ধরলো। বাচ্চাটা এক মুহুর্ত দেরি না করে চকচক শব্দ করে খাওয়া শুরু করলো, ছোট্ট ফিডারটা কয়েক মুহুর্তেই খালি করে হাফাতে হাফাতে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে ঘুমে তলিয়ে গেল মোহরের কোলেই। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল মোহর৷ এইটুকু বাচ্চাকে কতক্ষণ না খাইয়ে রাখলে এভাবে খেতে পারে, দুধ খাওয়ার জন্যে বাচ্চাটা কাঁদছিল অথচ মা হয়ে এভাবে ফেলে গেলো।
মোহর আরও কিছুক্ষণ ওভাবেই কোলে নিয়ে বসে রইলো, অপলক তাকিয়ে রইলো নিষ্পাপ নির্মল চেহারা টার দিকে।
ওর ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে খটাখট শব্দ করে কাকলি খাতুন বাড়িতে প্রবেশ করলো, এতক্ষণ কোথায় ছিল কে জানে! তবে মোহরের কোলে বাচ্চাটাকে দেখেই এভাবে আঁতকে উঠলো যেন কোনো অঘটন ঘটে গেছে
হুড়মুড়িয়ে এসে ঘামে ভেজা শরীরেই মোহরের থেকে বাচ্চাটা ছিনিয়ে নিয়ে বলল

-তোমার সাহস কি করে হলো আমার নাতনিকে কোলে করার, খবরদার ওকে ধরবা নাহ।

বলেই সামনে এগিয়ে যেতে যেতে জোর গলায় ডেকে বলল

-মালা,এই মালা কোন চিপায় ম’রলি। শিগগির আমার ঘরে আই।

বলে চলে গেলো। মোহর আর ভাবলো না কিছু। ওকে থাকতে দেওয়া ঘরটার দিকেই এগিয়ে গেলো মৃদুমন্দ পায়ে।

……………….

রজনীর প্রায় মধ্যভাগ তখন, অসুস্থ শরীরে গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন মোহর।বাইরে প্রকট শব্দে মেঘের গর্জন আর এলোথেলো বাতাসের তান্ডবলীলার মাঝেও। খুব ধীরে পা ফেলার শব্দ শোনা যাচ্ছে, মধ্যরাতে ঘড়ির টিকটিক শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে এতো আস্তে পদক্ষেপ পরছে যে শব্দটা আলাদা করার সম্ভাবনা কারো নেই। অতি সাবধানে দরজার নব ঘুরিয়ে নিঃশব্দে পা ফেলে ঘরের ভেতর প্রবেশ করলো কেও।
পা টিপে টিপে মোহরের মাথার কাছে এসে দাঁড়ালো। আস্তে আস্তে মোহরের গা ঘেঁষে বসলো। মেশাতুর লোভমিশ্রিত চাহনিতে তাকালো মোহরের দিকে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুঁটে খুঁটে প্রতিটি অঙ্গের ভাঁজে ভাঁজে চোখ বুলালো। যেন আবছা আলোতে ভ্রমে জ্বলজ্বল করা চোখ দু’টো চাহনি দিয়েই স্পর্শ করছে মোহরের শরীরের প্রতিটি শিরা উপশিরা।
ঘুমের মাঝে বুকের উপর থেকে আঁচল সরে গেছে মোহরের, পেটের তিন-চতুর্থাংশই স্পষ্ট চোখে বিঁধছে, ঘনঘন নিঃশ্বাসের সাথে বুকের উঠানামা দেখে সারা শরীরে বৈদ্যুতিক ঝটকার মতো ঝিনঝিন করে উঠলো আগন্তুকের। ফোস ফোস নিঃশ্বাসের শব্দে যেনো কান গরম হয়ে এলো, মাঝামাঝি দূরত্ব ঘুচিয়ে নিলো আগন্তুক। দু’হাত মোহরের দুপাশে রেখে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই ঝুঁকে এলো খানিকটা। নাসারন্ধ্র টেনে টেনে আকুল তৃষ্ণার মারণসম উন্মাদনা নিয়ে শুঁকতে চাইলো মেয়েলী শরীরের সমস্ত মিঠা ঘ্রাণ। নড়েচড়ে উঠলো মোহর। ঘুমের মাঝেই ষষ্ঠইন্দ্রীয় খুব কড়াভাবে অজ্ঞাত উপস্তিতির জানান দিলো। কিন্তু ঘুমে বুদ হওয়া চোখ টেনে খুলতে বেশ সময় লেগে গেল।
আচমকাই চোখ খুলে উঠে বসলো মোহর। কাঁপা কাঁপা নজরের নাজুক দৃষ্টিতে সারা ঘরে চোখ বুলালো। সে নিজে ছাড়া কোনো প্রাণির উপস্থিতি নেই, কিন্তু মোহরের গাট ফিলিংস হচ্ছে কেও ছিল এখানে, মাত্রই ছিল। বেগানা ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো, গায়ের উপর কাঁথা টেনে জুবুথুবু হয়ে বসে রইলো। কেন যেন এখনো মনে হচ্ছে একজোড়া চোখ তাকে দেখছে খুব গভীর, নিগূঢ়, তীক্ষ্ণভেদি দৃষ্টি এখনো ঠিক তার দিকেই স্থির হয়ে আছে!
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

#Humu_❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here