#প্রেমময়_বসন্তের_আগমন
#পর্বঃ৬
#বর্ষা
কাজী অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে তাসকিন আর ওয়াজিহা। তাসকিন বারবার ঘামছে।যেন ভয় পাচ্ছে সে। ওয়াজিহা মুচকি মুচকি হাসছে তাকে দেখে। তাসকিন আবারো বললো,
”লাবণ্যময়ী,আমরা এখন না বিয়ে করলে হয় না?অন্য একদিন করি!”
ওয়াজিহা বাচ্চা বাচ্চা ফেস করে অভিমানী স্বরে বললো,
”আজকে আর কালকে কি !করতে তো হবেই একদিন।চলো আজই করে ফেলি”
ওয়াজিহা তাসকিনকে টেনে কাজী অফিসে নিতে নিলেই তাসকিন মাথা নিচু করে জোর গলায় বলে,
”আমি তোমায় বিয়ে করতে পারবো না।আমি অন্য একজনকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।সে আমার বাচ্চার মা।তোমার সংলগ্নে আমার দিন ভালো কাটে তাই তোমার সাথে সম্পর্ক করেছিলাম।তবে আমি তোমায় বিয়ে করতে পারবো না!”
ওয়াজিহা মুচকি হাসে ওর কথা শুনে।তারপর পায়ের জুতো খুলে ঠাস ঠাস করে গালে কয়টা মারে।তারপর চিল্লিয়ে বলে,
”হারামজাদা যখন আমার পেছন পেছন ঘুরতি তখন মনে ছিল না তোর ভালোবাসার ব্যক্তিটার কথা।যাকে হারানোর ভয়ে শিক্ষার্থী অবস্থায় বিয়ে করেছিস,তাকেই আবার চিট করছিস। তোদের মতো ছ্যাচড়া ছেলেদের কারণেই আজ পৃথিবী থেকে ভালোবাসা নামটা উঠে যাচ্ছে। চারপাশে ভালোবাসা নামক প্রতারণার ঘুরাফেরা!”
”লাব…”
”চুপ একদম চুপ।তোকে যে এখন আমি সহ্য করছি তা তোর ভাগ্য।আমাকে ওই নামে ডাকার তোর কোনো অধিকার নেই।এমনকি তোর অধিকার নেই আমাকে ডাকার। ভালোয় ভালোয় বলছি,শুধরে যা।এর পরের বার যদি স্নিদ্ধাকে আবারো চিট করার চেষ্টা করেছিস তো জানে মেরে ফেলবো।”
”তুমি স্নিদ্ধাকে চেনো কিভাবে?”
কাঁপা কাঁপা গলায় তাসকিন জিজ্ঞেস করে। ওয়াজিহা শুধু হাসে।জবাব না দিয়েই চলে আসে।সে বুঝতে পেরেছে এখন।
”শার্টের চেয়ে ভেতরের গেঞ্জি বেশি বড় হতে নেই!”
ওয়াজিহা রিকশা ডেকে চলে আসে ওখান থেকে।উত্তরা লেক পার্কে নিয়ে যেতে বলে আকাশটা দেখতে থাকে।বিকেল পেরিয়ে একটু পরেই হয়তো সন্ধ্যা নামবে। ওয়াজিহা অবাক হয় পুরুষ মানুষ কত নিখুঁত অভিনয় জানে! ওয়াজিহা লেক পার্কে পৌঁছে একটু নিরব স্থানে বসে কাঁদতে থাকে।সে তো হৃদয় দিয়েই ভালো বেসেছিলো।তবে কেন তার সাথেই এমন হলো।কেন তাসকিন এমন করলো ওর সাথে।
”রাত্রি গভীর হচ্ছে। নির্জনে থাকা আপনার জন্য নিরাপদ নয়!”
হঠাৎ গম্ভীর পুরুষনালী কন্ঠস্বর কানে ভাসতেই দ্রুত চোখের জল আড়াল করে ওয়াজিহা।পেছন ঘুরে লোকটার দিকে তাকায়।অন্ধকারের মাঝেও লোকটার চোখ দুটি ঝলঝল করছে ওয়াজিহার নিকট। ওয়াজিহা থমথমে মুখে বলে,
”অচেনা অজানা কারো জন্য চিন্তিত না হয়ে নিজের কাজ নিজে করুন!”
”কে বললো আপনি আমার অচেনা?”
ওয়াজিহা অবাক,বিষ্মিত মুখশ্রীতে তাকিয়েই থাকে।লোকটা ওর খুব কাছে চলে এসে কিছু একটা স্প্রে করে।কিঞ্চিত মূহূর্ত ব্যবধানে জ্ঞান হারায় ওয়াজিহা।লোকটা মোবাইলের ফ্লাশ ওন করে তাকিয়ে থাকে ওয়াজিহার পানে।যখন বুঝতে পারে সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। ওয়াজিহাকে কোলে নিয়ে পা বাড়ায় গাড়ির দিকে।রাস্তার লোকজন তাদের দেখে।তবে কিছুই বলে না।
★
”স্যারের কথা অনুযায়ী সব করো..নয়তো স্যার রাগ করবেন..”
কারো একজনের কথা কানে আসতেই ওয়াজিহা মাথা চেপে উঠে বসে।নিজেকে আবিষ্কার করে অচেনা অজানা কারো বেড রুমে।দ্রুত নিজের পোশাকের দিকে তাকায় সে।না,সব ঠিকঠাক। চিন্তায় ওয়াজিহা মাথা ব্যথার কথা ভুলেই যায়।দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে বসে। খাটের ডান দিকটায় ওর ফোন রাখা ছিলো।হাতে নিয়ে পেছনে ঘুরতেই দেখতে পায় বেডের ওপর বিশাল এক ফটো।একটা বাচ্চা মেয়ে আর একটা বাচ্চা ছেলে! ওয়াজিহার কিছু ভিষন আসতে লাগে!
”পুতুল থাম।পুতুল আমি দৌড়াতে নিষেধ করেছি। পুতুল থাম…পড়ে যাবি!পুতুল…..”
”এ্যা..এ্যা..”
ছেলেটা ছুটে এসে বাচ্চাটার কাছে এসে বসে।বলে,
”বলেছিলাম না পড়ে যাবি!কথা তো শুনিস না।উঠে আয়”
পুতুল ছোট্ট ফুলায়।আদুরে কন্ঠে বলে,
”পিয়ু ভাই ব্যথা লাগে!”
”আয়,আমি কোলে নিচ্ছি!”
পিয়ু এগিয়ে এসে কোলে নেয় পুতুলকে। পুতুলকে গোলাপী ফ্রকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।পিয়ু কালো বাদামী কালার শার্ট আর সাদা কালার জিন্স পড়েছে। অসম্ভব সুন্দর দেখতে দুটো বাচ্চাই। পুতুল নামের বাচ্চাটাকে পুতুলই বলা যায়!পিয়ুর চোখ দুটো ধূসর রঙা,কি গভীরতাপূর্ণ!
”এই যে শুনছেন?”
কারো ডাকে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে ওয়াজিহা।মাথাটা ধরে মুখ কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে কালো শার্ট পরিহিত এক যুবককে। আশ্চর্য!কল্পনার ওই বাচ্চাটার মতোই চোখ দুটো তার।কি বিশালতা তার চোখ জুড়ে!
”শুনছেন”
লোকটার ডাকে ওয়াজিহা লজ্জা পায়।সে কেন নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে ছিল ছিঃ! ওয়াজিহা কিছু না ভেবেই বলে ওঠে।
”পিয়ু ”
ওয়াজিহা নিজের বলা কথাটায় অনেক চমকায়।ছেলেটার চোখ দুটো ছলছলে। ওয়াজিহা কিছু বলতে নেওয়ার পূর্বেই ছেলেটা বলে ওঠে,
”ইউশা ইজহান ”
★
”রক্তের টান নয়, বরং আত্মার টানই প্রকৃত ”
প্রিতম ওয়াহেদ কথাটা ডাইরিতে লিখলেন।তারপর গাঢ় কালিতে কেটে দিলেন।ডাইরিটা প্রথম থেকে দেখতে লাগলেন।গাঢ় কালিতে কাঁটা অনেকগুলো দাগ।প্রিতম ওয়াহেদ ডাইরি রেখে গিটার হাতে বারান্দায় চলে যান।হয়তো অনেকেই বিরক্ত হবে আজ তার গিটারের শব্দে।তবে অন্যদের কমফোর্ট দিতে গিয়ে নিজের আনন্দ আর তিনি হারাতে চান না।
টুং টাং শব্দে প্রিতম ওয়াহেদ গিটারে সুর তোলেন।চোখ জোড়া তার ছলছলে।সকাল দশটা। চাকরিজীবীরা সবাই তো অফিসে চলেই গেছে।আর এখনো অব্দি হয়তো কেউ ঘুমে নেই!
”স্বপ্ন আমায় কাছে টানে ক্ষণিকের পানে,
আনন্দপূর্ণ জীবন আমায় দূর ছাই করে বারিবার!
মেয়ে তুমি ছেলে আমার কষ্ট বুঝবে না কখনোই,
আমরাও যে তোমাদেরটা পারি না উপলব্ধি করতে!
……..
পাপা লাভস ইউ বেটা
পাপা লাভস ইউ…..
সময় হয়তো কেড়েছে তোমায়,
পাপা তোমার সুরক্ষার্থে করেছিলো ত্যাগ তোমায়!”
ফোনের শব্দে প্রিতম ওয়াহেদ গান গাওয়া বাদ দিয়ে চোখ মুছে বেডরুমে ফিরে আসেন। মোবাইলটা হাতে তুলে নেন।অবাক হোন।চিন্তিত হোন ফোনে বলা কথাটা শুনে।দ্রুত কাবার্ড থেকে ব্লেজার বের করে বেড়িয়ে পড়েন রুম থেকে।
গাড়িতে বসে ফোন দিতে থাকেন কাউকে।রিসিভ করে না কেউই।মুখে তার ভীতি লক্ষণীয় হয়ে ওঠে।অন্য নাম্বারে ফোন দেওয়া মাত্রই উক্ত ব্যক্তি ফোন ধরেন।
”ওসমান দ্রুত আমার দেওয়া নাম্বারটা ট্রেস করো। দ্রুত ”
প্রিতম ওয়াহেদ ওপর পাশের কথা না শুনেই কল কেটে দেন।গাড়ি পার্ক করে।চুল টেনে ধরেন রাগে জিদে।মনে হচ্ছে কেউ তার কলিজায় হাত তুলেছে।প্রিতম ওয়াহেদ স্টেরিয়াং এ থাপ্পর মারেন বার কয়েক।হাতে ব্যথা পেলেও তা গ্রাহ্য করেন না।
কিঞ্চিত বাদেই ফোন দেয় ওসমান।প্রিতম ওয়াহেদ দ্রুত কল রিসিভ করেন।
”স্যার আপনার দেওয়া নাম্বারটা একটা রিসোর্টে দেখাচ্ছে।যা আপনার থেকে তিন কিলোমিটার দূরে!”
চলবে?
পূর্ববর্তী পর্বঃ
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/928373602217746/?mibextid=2JQ9oc