পূর্নিমার_চাঁদ_জানে_তুমি_আমার #লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী Part 6

#পূর্নিমার_চাঁদ_জানে_তুমি_আমার
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
Part 6

রুমে এসে আবার সুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।১০:৩০ এ অর্পি আপু ডেকে তুলল।অর্পি আপুর সাথে ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখি রেহান ভাই নিধি আপুর ঠোট জোড়া দখল করে রেখেছে।আমার রুমের এক রুম পড়েই রেহান ভাইয়ের রুম আর তার পাশের টা নিধি আপুর।অর্পি আপু রেহান ভাই আর নিধি আপুকে এ অবস্থায় রেগে রেগে গেলো।

“বড় ভাইয়া কি হচ্ছে এসব?”

অর্পি আপুর কথা দুজ’জন সড়ে গেলো।রেহান হাত দিয়ে ঠোট মুছে বলে,,

“তুই আর আসার সময় পেলিনা।ধ্যাত।”

বলে নিধি আপুর হাত ধরে চলে গেলো।অর্পি আপু রেগে বো/মা হয়ে গেলো।আমি আড়ালে চোখ মুছে অর্পি আপুকে নিয়ে গেলাম সবাই যেখানে আছে সেখানে।যেতেই দেখি আদ্রিয়ান হলুদ পাঞ্জাবির সাথে কটি+ সাদা জিন্স পড়ে হাতে ঘড়ি পড়ছেন।আর সবার কথা শুনছেন।
আমি তাহিন ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললাম,,

“ভাইয়া আদ্রিয়ান নামের ছেলেটা রেহান ভাইয়ার কেমন বন্ধু? আগে তো দেখি নাই!”

“নিউ বন্ধু। আর আদ্রিয়ান আমাদের বিজনেসের 60% শেয়ার এর মালিক।রেহানের সাথে ভাব বেশি উনার।ইউ কে থেকে পড়াশুনা করে এসে নিজের বিজনেস শুরু করেছেন।আর আমাদের বিজনেসেও হেল্প করেছেন।”

“ওহহ।।”

“হুম।দেখ জোস না দেখতে।তোর সাথে কিন্তু ভালই মানাবে।”

আমি তাহিন ভাইয়ের কথা শুনে হা হয়ে গেলাম।বলে কি।

“হুম হুম মিথি তোকে আদ্রিয়ান ভাইয়ের সাথে ভালই মানাবে।”

পিছন থেকে অর্পি আপু সহ আরও অনেক কাজিন রা ছিলো তারা বলে উঠলো।

আমি ওদের কথা শুনে ওখান থেকে সরে এলাম।এই টপিক চেঞ্জ হলে ওদের কাছে যাবো।
আমি হলুদ কুর্তি এর সাথে গোলাপি কটি পড়েছি সাথে গোলাপি চুরিদার।চুলগুলো ছেড়ে রেখেছি।আমি এক সাইডে দাড়িয়ে আছি।বিয়ের সব কিছু রেডি করছে ফুপি সহ বাকিরা।

যার বিয়ে তার নাম তাসিফ।ভাইয়াটার সাথে এখনো দেখা হয়নি আমার। কারন আমি সবার সামনে অতো যাইনা। বিশেষ করে অচেনাদের সামনে।তাই। আমার পাশে এসে দাড়ায় আদ্রিয়ান।

“কি ব্যাপার আপনি একা একা দাড়িয়ে আছেন কেনো?”

“এমনি ভালো লাগছেনা।”

“ওহ।আপনার কি মন খারাপ?”

“না তো।”

“ওহহ।দেখুন আমরা এক জীবনে সব পাইনা।কিন্তু আল্লাহ আমাদের জন্য এমন কিছু রাখেন যা আমাদের কল্পনারও বাহিরে।”

“হুম।”

“সারা”

আমি অবাক চোখে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে। কেনো যেনো মনে হয় এই ডাক আমার চেনা।আগেও বহু বার শুনেছি এই ডাক।আমি বললাম,,আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?”

“যেনে নিয়েছি মিস।”

“হেয়ালি করাছেন কেনো?”

“কি হেয়ালি করলাম।”

“না কিছু না।”

বলে চলে এলাম।সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান ভালোবভাবে শেষ হলো।রাত ২ টায় যে যার রুমে ঘুমাতে গেলাম।পুরো অনুষ্ঠানে আমার মুড অফ ছিলো।সকালের ওই ঘটনার পর আদ্রিয়ানকেও আর দেখলাম না।আর রেহান ভাই তো নিধিকে নিয়ে রোমান্টিক কাপল ডান্সও করেছেন।ভালোই আছেন। আমি শুধু ওদের মাঝে ঢুকে পড়ছি।মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছি। আমার অর্পি আপুদের সাথে থাকার কথা ছিলো। কিন্তু অরিন আপু বরের বোন বলল আমাকে ওর সাথে থাকতে।আর বাকিদের আলাদা।আমি ওতো না ভেবে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। কারন অরিন অনেক মিশুক আসার কিছুক্ষণের মাঝেই ওর সাথে ভালো একটা বন্ধুত হয়ে গিয়েছিলো।

আমি দাড়িয়ে ছিলাম তখন ফুপি এলো আমার রুমে বলল,,

“মিথি মা রেহান কে বলে আয় কাল সকাল ৮টায় উঠতে কিছু কাজ আছে।আমি বলেছি তাও তুই একবার বলে আয় মা।”

“আমি ফুপি সকালে বলে দেই?”

“না না এখুনি যা।”

কি আর করার ফুপির কথা শুনে গেলাম রেহান ভাইয়ের রুমের সামনে।সবাই নাক ডেকে ঘুম এখন তাই ফুপি আমাকে জেগে থাকতে দেখে বলল এই কথা।অরিন চেঞ্জ করছিলো।তাই ওকে না বলেই রেহান ভাইয়ের রুমের সামনে এসে নক করলাম।
কয়েকবার নক করার পর কোনো রেসপন্স না পেয়ে আবারো জোরে ডাকলাম।তখন রেহান ভাই দরজা খুললেন শার্ট পড়ে চুলগুলো এলোমেলো। শার্টের বোতামগুলোও খোলা।আমাকে দেখে বিরক্তির সুরে বললেন,,

“এতো রাতে দরজা ধাক্কাচ্ছিস কেনো সারা?”

“না মানে রেহান ভাই একটা কথা বলার ছিলো।”

“তোর যত কথা সব কাল শুনবো এখন যা।”

বলে দরজা লক করতে নিলে আমি বাধা দিলাম।

বললাম ফুপির বলে দেওয়া কথাটা।রেহান ভাই শুনে কিছু বলবে তার আগেই রুমের ভিতর থেকে নিধি আপুর গলার আওয়াজ পেলাম।রেহান ভাইকে বলছে,,

“কে এসেছে বেবি?আমাদের রোমান্সের সময়?”

আমি থ হয়ে গেছি। নিধি আপু আর রেহান ভাই এক সাথে ছি ছি।নিধি আপুর কথায় রেহান ভাই কিছু না বলেই আমার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলেন।
আমি ছলছল চোখে চলে এলাম আমার রুমে।দেখি রুম অন্ধকার। বাহিরের চাদের আলো এসে রুমটা আলোয় ভরে গেছে। কান্না পাচ্ছে ভিষন।আজ আমি যা দেখলাম তাতে আমার কি করা উচিত আমার জানা নেই।যাকে ছোট থেকে পছন্দ করে এলাম।নিজের অজান্তেই ভালোবাসলাম।সে আজ অন্য কারোর সাথে এই অবস্থায়।আমার চোখ থেকে পানি গরিয়ে পড়তেই কেউ এসে হাতের মুঠোয় নিলো। তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান। চাঁদের আলোতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আদ্রিয়ানের মুখ।আমি তারাতারি চোখ মুছে নিলাম।আদ্রিয়ান বলল,,

“আজ দেখি চাদের সাথে মেঘের অভিমান পালা চলছে।কখনো যে আবার বর্ষন শুরু হয় ঠিক নেই।”

আমি ওনার কথা বুঝতে না পেরে বোকার মতো তাকিয়ে থাকলাম।
ওনি আমার সামনে এসে বললেন,,

“সারা একটা যায়গায় যাবে? ”

আমি কিছু বলার আগেই উনি আমার হাত ধরে নিয়ে বাহিরে এলেন।তারপর সোজা পার্কিং এ এসে হাত ছাড়লেন।

“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”

“চলো গেলেই দেখতে পারবে।”

বলে আমাকে গাড়িতে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসলেন।গাড়ি চলছে আপন গতিতে। আমি চুপচাপ বসে আছি কারন জানি এখন কোনো প্রশ্ন করলে উত্তর পাবো না।
কিছুক্ষণ পর উনি গাড়ি থামালেন একটা লেকের সামনে,,। গাড়ি থামিয়ে দরজা খুলে দিয়ে আমার হাত ধরে আমাকে নামায়।আমি অবাক হচ্ছি উনার কান্ডে।উনি আমাকে নিয়ে লেকের কাছে এলো।আমি জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। উনি আমাকে ইশারা করলেন চারপাশ দেখতে। আমি তাকিয়ে দেখলাম।লেকের চারপাশটা খুব সুন্দর করে ফেইরি লাইট দিয়ে সাজানো।লেকের থেকে একটু দূরে তাবু টাঙানো আছে। তার পাশেই আ/গু/ন জালানর কিছু কাঠ রয়েছে।

আদ্রিয়ান গিয়ে কাঠগুলো একত্রিত করে আ/গু/ন জালালো।তারপর ইশারা করে আমাকে ডাকলো। আমি গেলাম।আদ্রিয়ান বলল,,

“দেখো তো পছন্দ হয় কি না?”

“খুব সুন্দর যায়গাটা।”

বলে আমি চারপাশ ঘুড়ে ঘুড়ে দেখতে লাগলাম।আমার মন ভালো হয়ে গেলো ভিষন।আদ্রিয়ান হাসলো। আমি লেকের সামনে গিয়ে দাড়ালাম।চাদের আলো পড়ছে লেকের পানির উপর।সুন্দর লাগছে আরও লেক টাকে।আদ্রিয়ান এসে আমার পাশে দাড়ালো।

“ওই দুটো মাছ দেখতে পাচ্ছো সারা? ”

“কই?”

“ওই যে ”

“হুম।”

“কি সুন্দর লাগছে না একসাথে।”

আমি কিছু বললাম না।উনি আবারো বললেন।।

“সারা ওই দেখো সামনের গাছটায় দুটো পাখি বসে আছে টিয়া পাখি।এরা দুজন জোড়া।”

আমি দেখলাম সত্যি তাই। কিন্তু এখানে টিয়া পাখি দেখে অবাকও হোলাম।উনি বললেন,,

“দেখো একটা টিয়া পাখি রাগ করে অন্য ডালে গিয়ে বসেছে। কিন্তু এই ডালে থাকা টিয়া পাখিটা কিছুই করছে না।এমন কি উড়ে ওই পাখিটার কাছে যেতেও চাইছে না।বলোতো কেনো?”

আমি উনার দিকে তাকালাম। বললাম,,

“কেনো?”

“দেখো ওই অন্য ডালে বসা পাখিটার পাশে অন্য আর একটি পাখি এসে বসেছে।”

আমি দেখলাম তাই।কিন্তু অন্য পাখিটা ওই ডালে বসার একটুপর ই ওই ডালে থাকা টিয়া পাখিটা এই ডালেট টিয়া পাখিটার কাছে চলে এলো।এই টিয়া পাখিটা এটা দেখে ডানা ঝাপটালো তারপর দু’টো টিয়া পাখিই একসাথে উড়ে গেলো।

এটা দেখে উনি হাসলেন। আমার দিকে তাকিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,,

“বলোতো সারা এই টিয়া পাখিটা ওই ডালে যাওয়ার পর।এই ডালে থাকা টিয়া পাখিটা কেনো উড়ে গেলো না।বা ওর সাথে ওই ডালে গেলোনা।”

কি বলবো ভেবে পাচ্ছিাম না দেখে চুপ ছিলাম।এটা দেখে উনি নিজেই বললেন,,

“কারন এই ডালে থাকা পাখিটা জানতো যাই হোক না কেনো ওই ডালে যাওয়া পাখিটা তার আর তাই সে বিশ্বাস নিয়ে এই ডালে বসে ছিলো। অপেক্ষা করছিলো ওই ডালে থাকা পাখিটার জন্য।ঠিক যেমন আমি অপেক্ষা করি কারোর জন্য।কারন কেউ না জানুক।#পূর্নিমার_চাঁদ_জানে_তুমি আমার।”

আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি।কি বলছেন এগুলো?কার জন্য অপেক্ষা করেন উনি?

উনি আবারো বললেন,,

“আচ্ছা সারা তোমার ভয় করছে না আমার সাথে এখানে একা এসেছো।?”

তাই তো আমার তো ভয় করার কথা কিন্তু ভয় করলো না কেনো? আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি।
উনি আবারো হাসলেন।আমাকে বললেন,,

“চলো বাসায় যাওয়া যাক।”

বলে গাড়ির কাছে গেলেন। আমিও গেলাম উনার পিছু পিছু।গাড়ির সামনে দাড়াতেই উনি আমার হাতে একটা বক্স দিলেন।বললেন বাসায় গিয়ে খুলতে।তারপর গাড়িতে উঠে গেলেন।আমিও উঠলাম।গাড়ি চলছে আপন গতিতে। অদ্ভুত একটা সময় কাটালাম।একটা ভালো ও মুগ্ধতাময় সময়।

চলবে…!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here