#ওগো_প্রণয়ের_নিমন্ত্রণ🌼
#লেখিকা:-Nowshin Nishi Chowdhury
#১৩_পর্ব
আবিরের বাবার ফ্লাইট শনিবার রাত এগারোটায়।তাই আবির এবং মাইশার এনগেজমেন্টের এর অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে শুক্রবার সন্ধ্যায়।
ঢাকায় অবস্থানরত কিছু আত্মীয়-স্বজন নিয়ে আপাতত এই শুভ কাজটা সারতে চাইছে এই দুই পরিবার।
আংটির মাপ এবং এই অনুষ্ঠানের আয়োজন সম্পর্কে কথাবার্তা বলতে চৌধুরী বাড়িতে এসেছেন আহমেদ বাড়ির প্রত্যেক সদস্য। নিচের ড্রইংরুমে তাদের চায়ের আড্ডা বসেছে।
আসরের মধ্যে মিস্টার শারাফাত চৌধুরীকে আজ বেশ হাসি খুশি লাগছে। মিসেস মেহরিমা চৌধুরীর স্বামীর দিকে এক ঝলক তাকিয়ে তাহরিমা আহমদের সাথে কথা বলতে লাগলেন,
— হাতে তো আর মাত্র তিন দিন সময় বাকী আছে। এর মধ্যে কি সবকিছুর আয়োজন কমপ্লিট করে উঠতে পারব আমরা?
তাহরিমা আহমেদ বোনকে বললেন,
— চিন্তা করিস না সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই হয়ে যাবে।
মিস্টার আকরাম আহমেদ মেহরিমা চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বললেন,
— ডোন্ট ওয়ারি মিসেস শালিকা। কোমর বেঁধে নামলে এই তিন দিনে ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন পর্যন্ত করে ফেলা যায় তো সামান্য এনগেজমেন্টের আয়োজন কী তাই তো মিস্টার চৌধুরী?
মিস্টার শারাফাত চৌধুরী মুচকি হেসে বললেন,
— হ্যাঁ ঠিক বলেছেন ভাইয়া।
পাশের সোফায় আবির এবং অভি পাশাপাশি বসে আছে।
হঠাৎ মেহরিমা চৌধুরীর নজর আবিরের উপর পড়লো তখন তিনি আবির কে বললেন,
— আবির অভি তোমরা উপরে যাও পুতুল ওপরে আছে। এখানে বড়দের মাঝখানে বসে থাকলে তোমরা শুধু বোরই হবে। তার থেকে বরং পুতুলের সাথে গিয়ে কথা বল ওর ও ভালো লাগবে তোমাদের ও ভালো লাগবে।
অভি যেন এই কথাটারই অপেক্ষায় ছিল। এক লাফে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ভাইয়ের রিঅ্যাকশন দেখে আবিরও তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালো।
অভি মেহরিমা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে ভ্যাবলাকান্তের মত একটা হাসি দিয়ে সিঁড়ির দিকে চলে গেল। আবির ও পিছু পিছু গেল।
অভির কর্মকাণ্ড দেখে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত সবাই হেসে উঠলো। বেচারা এতক্ষণ কি ভাবে ফেঁসে বসে ছিল এখানে।
_______🤎_______
অভি পুতুলের রুমের সামনে এসে জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে লাগলো। আবির তাড়াতাড়ি দৌড়ে এসে অভির মাথায় একটা চাটি মেরে বলল,
— বেয়াদব ছেলে এভাবে কেউ কারোর রুমের দরজায় নক করে?
অভি অভি নিজের মাথার পেছনটা হাত দিয়ে বলে,
— বা ভাই বাহ্! এখনো এনগেজমেন্ট হলো না তাই আমি তোর কাছে বেয়াদব হয়ে গেলাম আর বিয়ে হয়ে গেলে তো আমাকে ঘর দিয়ে তাড়িয়ে দেবে তুমি।এ জন্যই হয়তো গুণীজনেরা বলেছেন বিয়ে করলে ভাই পর হয়ে যায়।
আবির ভাইয়ের ঘাড় চেপে ধরে বলল,
— তোর কোন গুণীজনেরা এসব কথা বলেছে চল আমাকে দেখাবি।
— আহ ছাড় ভাইয়া লাগতেছে আমার। এসব জানার জন্য খালি ব্যবসার খাতা খুলে নিয়ে বসে থাকলে হয় না সাহিত্যের খাতাও খুলতে হয়।বুঝলি।
দুই ভাইয়ের ঠেলাঠেলির মধ্যে পুতুল দরজা খুলে দিল। দেখতে পেল দুই ভাই তার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ধস্তাধস্তি করছে।
— আমি আসলে ওয়াশরুমে ছিলাম তো সেজন্য দরজা খুলতে পারিনি।
আবির পুতুলকে দেখতে পেয়ে অভিকে ছেড়ে দিল। অভি নিজের ঘাড় ডলতে ডলতে বলল,
— আরেকটু পরে খুলতি বইন। একেবারে লাশ হয়ে তোর দরজার সামনে শুয়ে থাকতাম আমি। এটা তো বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেছে । যাকে সামনে পাচ্ছে তার ঘাড়ে চেপে খামচা খামচি শুরু করে দিয়েছে। দেখ আমার ঘাড়ের কি অবস্থা করেছে?
আবির অভিকে মারতে উদ্ধত হলে। তৎক্ষণাৎ ভাইয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য অভি পুতুলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে পুতুলের রুমের ভেতরে ঢুকে গেল। তাল সামলাতে না পেরে আবিরের হাতের উপরে গিয়ে পড়লো।
আবির অভির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
— দিন দিন বেয়াদবির সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিস তুই। ও এক্ষুনি পড়ে যাচ্ছিল।
অভি টিটকারী মেরে বলল,
— অলরেডি পড়ে গেছে তোমার হাতের উপর। নাও শুটিং শুরু করো আমি ক্যামেরা ধরছি।ল্লাল্লালা লালা …
ভাইয়ের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পুতুলকে জিজ্ঞাসা করল,
— তোমার লাগেনি তো?
পুতুল সাথে সাথে আবিরের দিকে তাকিয়ে পড়লো। আবির নিজেকে শুধরে নিয়ে বলল,
— না মানে তোর কোথাও লাগেনি তো?
পুতুল মুচকি হেসে বলল,
— না।
অভি পুতুলের রুমের অ্যান্ড্রয়েড টিভি অন করে গেমস খুঁজতে লাগলো। ঘাড় কাত করে দরজার দিকে তাকিয়ে ওদেরকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
— এই যে রোমিও জুলিয়েট। বলছি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক জ্যাম না বাঁধিয়ে বারান্দায় গিয়ে আলাপ করো। এতে তোমাদের ও মঙ্গল আমারও হোল স্কোয়ার মঙ্গল। গেম এ কন্সেন্ট্রেট দিতে পারছি না।
পুতুল দরজার কাছে আর না দাড়িয়ে সোজা বারান্দায় চলে গেল। আবির বারান্দায় যাওয়ার আগে অভির দিকে তাকিয়ে বোঝালো বাসায় চল একবার দেখিস আজ তোর কি হাল করি আমি।
পুতুল বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে দূর আকাশে তাকিয়ে আছে। আবির তার পাশে কিছুটা দূরত্বে এসে দাঁড়ালো। ঘাড় ঘুরিয়ে পুতুলের দিকে তাকালো। এই মেয়েটাকে সে ছোট থেকেই ভালোবাসে।
আবি এ্যআই আবি বলে ডাকা এই মেয়েটার মায়ায় জড়িয়ে ছিল প্রেম বোঝার আগে। ফর্সা গোল গাল বার্বিডলের মতো এই ছোট্ট পুতুলকে যেদিন তার খালামনির কোলে প্রথম দেখেছিল , সেদিন না বুঝে সবাইকে বলেছিল,
— আমার এই পুতুলটাকে লাগবে। আমাকে দাও আমার লাগবে।
খালামণি তার সাথে মশকরা করে বলেছিল। তুমি এই পুতুলটাকে সামলানোর মতো বড় হও বাবা তারপর আমার পুতুলটা আমি তোমাকে দিয়ে দেবো। তখন যত্ন করে রাখতে হবে কিন্তু আমার এই পুতুলটাকে।
আবার ও কি বুঝে জানি আবির বলেছিল,
— আচ্ছা।
তার কথা শুনে সেদিন সবাই হেসেছিল। সেদিন ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি কিন্তু আজ বোঝে আবির কেন সবাই হেসেছিল তার কথায়। পুরনো কথা মনে পড়তেই আবিরের ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠল।
ভাবতেই অবাক লাগছে আবিরের যে পাশে দাঁড়ানো এই অপ্সরার মতো নাক ফুলো, রাগী,জেদি, বাঁচাল মেয়েটা নাকি তা বউ হবে। কৈশোরের ক্রাশ আর যৌবনের প্রথম ভালোবাসার অনুভূতি সে।
ভাবতেই আবিরের মেরুদন্ড বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। পায়ের তলা শিরশির করে উঠলো আবিরের।
— আজ পুতুল রানী এতো চুপচাপ কেন? মন খারাপ নাকি?
পুতুলের মনোযোগ ভ্রষ্ট হলো। নজর ফিরিয়ে আবিরের দিকে তাকালো। আবির পুতুলের চেহারা দিকে তাকিয়ে কিছুটা কেঁপে উঠলো।এ যেন তার আমাবস্যা আকাশে এক ফালি পূর্ণিমা চাঁদ।
ভাসা ভাসা চোখ মেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। পুরো সাদা শুভ্র সালোয়ার কামিজ পরিহিত এই মানবিক টিকে বেহেশত থেকে নেমে আসা কোন হুর পরী মনে হচ্ছে।
— না। মন খারাপ নয়। ওই এমনি..
আবির তৎক্ষণাৎ একটি হীরার নেকলেস পুতুলের গলায় পরিয়ে দিয়ে পুতুলের সামনে এসে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,
” ডাকিবো না প্রিয় কেবলই দেখিবো
দুচোখে পরান ভরে।
পূজারী যেমন প্রতিমার মুখে
প্রদীপ তুলিয়া ধরে।”
তখনই পুতুলের আম্মু ওদের সবাইকে ডেকে উঠলো রাতের খাবারের জন্য। আবিরের ঘোর কেটে গেল। ইতস্তত করে নেকলেসের বক্সটা তাড়াতাড়ি পুতুলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
— এনগেজমেন্ট এর দিনে নেকলেসটা পরো। খুব সুন্দর লাগবে তোমাকে পুতুল। একদম আমার মন মন্দিরের প্রতিমার মতো।
আবির অভিকে নিয়ে চলে গেল পুতুলের রুম থেকে। পুতুলের হাত আপনা আপনি নিজের গলায় চলে গেল। নেকলেস টা একবার ছুঁয়ে দেখে পেছনের এর হুকটা খুলে ফেলল সে।
বক্সে নেকলেস টা রেখে আলমারির কাছে চলে আসলো। আলমারি খুলে ড্রয়ারে বক্সটা রাখতে গিয়ে তার পাশে থাকা জিনিসটা দেখে মাইশার চোখজোড়া চকচক করে উঠলো।
#চলবে…🤎
[ প্রিয় পাঠকগণ আমি আপনাদের অপেক্ষায় রইলাম]