আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_২৮

আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_২৮
সাহেদা_আক্তার

আয়ান ভাইকে সবাই খুঁজতে লাগল বিয়ে পড়ানোর জন্য। সে কোনদিকে যেন হাওয়া হই গেল। গেলটা কই!

আমিও খুঁজতেসি। হঠাৎ দেখি একটা রুমের ভেতর থেকে আয়ান আর আকাশের কথা কানে আসতেসে। নক দিতে যামু এমন সময় আয়ান বলল, তুই সব বলে দে ওকে।

– কি করে বলব! তুই তো সব জানিস। আমি ডক্টরের সাথে কথা বলেছিলাম। ওর ব্রেইনের ফ্রন্টাল লোব অনেক ড্যামেইজ হয়ে গিয়েছিল। এখন যদি চেষ্টা করি আরো বড় ক্ষতি হতে পারে।

– তুই তো ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে পারিস।

– সেই পথটা বন্ধ করে দিয়েছে দুইজন মিলে। এত জঘন্য কাজ কি করে করতে পারল!? বাচ্চা মেয়েটার কথা ভাবলো না!

– এখন কি করবি?

– আমার কাছে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করব। এমনিতেও…

দরজা ভেজানো ছিল। আমি কান পাততে গিয়ে দরজাটা ক্যাঁচ ক্যাঁচ কইরা খুইলা গেল। আমি সটাং কইরা দাঁড়াই পড়লাম। দুইজনে আমার দিকে তাকাই আছে। আমি দাঁত দেখাইয়া কইলাম, সবাই আপনাকে খুঁজছে আয়ান স্যার। আয়ান তাড়াতাড়ি বলল, হ্যাঁ চলো। সে এক প্রকার চোরের মতো বাইর হয়ে গেল। আমিও আয়ানের পিছু নিসিলাম। হঠাৎ আকাশ আমারে টাইনা নিয়া দরজা বন্ধ কইরা দিল। আমি কাঁপা গলায় বললাম, আমাকে যেতে দিন।

– যদি না দেই?

– না দিলে কিন্তু শাস্তি দিবো।

– কি শাস্তি দেবে? আমার আরেক গালেও কামড়ে দেবে? তোমার যে কামড়! কচ্ছপের মতো। দেখো দাগটা এখনো আছে।

শুইনা আমার আপাদমস্তক লজ্জায় গরম হইয়া ধোঁয়া বের হইতে লাগল। সে আমার দিকে তাকাই আছে। ইচ্ছে করতেসে এখানেই গর্ত খুঁইড়া লুকাই পড়ি ইন্দুরের মতো। সে হঠাৎ দুই হাত দিয়ে ধরে আমার মুখ উঁচু করল। আমার চোখ গিয়া পড়ল তার চোখে। ওর চোখ পানিতে টলমল করতেসে। কইলো, তোমার এই লাল মুখটা কত দিন দেখিনি! বইলাই আমার কপালে আলতো চুমু এঁকে বেরিয়ে গেল। কি হইলো!? কোনোকিছুরই মাথা মুন্ডু বুঝলাম না। তবে একটা জিনিস ঠিকই বুঝলাম। গাজরের চোখের পানি দেখে আমার ভেতরটা ধক কইরা উঠছিলো।
.
.
.
.
রুমে বইসা আছি। শাড়ি খুইলা ফ্রেশ হওয়ায় কি যে শান্তি লাগতেসে। সবকিছু সুন্দর করে তুইলা রাখসি। পর্ষী আসলেই দিয়ে দেবো। কার না কার জিনিস। বইসা বইসা ফোন গুতাইতেসি আর লালু মিয়া খাইতেসি এমন সময় রাতুল দরজায় নক কইরা বলল, আসবো?

– আসো।

– কি অবস্থা?

– শরীর ক্লান্ত লাগছে। তোমার পেট ঠিক আছে?

– হ্যাঁ।

দুইজনেই চুপ। আমি ফোন টিপতেসি। রাতুল হঠাৎ আমার পাশে এসে বইসা বলল, আজকে তুমি আর আকাশ ঐ রুমে কি করছিলে? আমি অবাক হওয়ার ভান কইরা কইলাম, কোকোন রুমে?

– কমিউনিটি সেন্টারের ঐ রুমটায়।

– ও, আয়ান স্যার ছিল তো আকাশের সাথে…

– আকাশ?

– মানে আকাশ ভাইয়ের সাথে।

– কিন্তু আমি যে দেখলাম আকাশ রুম থেকে বের হয়েছে তারপর তুমি বের হয়েছো।

– আয়ান স্যার চলে যাওয়ার পরই আমরা বের হয়েছি আর কি।

রাতুল কিছুক্ষণ চুপ থেকে কইলো, ছোঁয়া, রাতে খাবারের পর সবার সাথে কথা আছে। তুমিও থাকবে। বইলা চলে গেল। হঠাৎ সবার সাথে কি কথা!?

বিয়েতে কে কয় মণ আটা ময়দা মাখসে, কারে পেত্নীর আম্মা লাগতেসিলো এগুলা নিয়া আমি আর ঝিলিক খ্যাক খ্যাক করতেসি খাবার টেবিলে বইসা। হাসির ঠেলায় খাইতেও দেরি হইলো। খাওয়া শেষ হইতে হইতে এগারোটা। আমি তো ভুলেই গেসিলাম রাতুলের কথা। রুমের দিকে পা বাড়াইতেই সে আমারে আইনা সোফায় বসাইলো। আব্বু বসে বসে খবর দেখতেসে। আম্মুও আইসা বসল। ঝিলিক রান্নাঘরের কাজ শেষ কইরা আমার পাশে বইসা টিভি দেখতে লাগল। একটু পর রাতুল রুম থেকে আসতেই আব্বা টিভি বন্ধ কইরা বলল, বলো কি বলবে।

রাতুল কোনোরূপ ভণিতা না করেই কইলো, আমি আগামী শুক্রবার ছোঁয়াকে বিয়ে করতে চাই। রাতুলের কথা শুইনা আমি আকাশ থেকে পড়লাম। এটা কি কইলো! আব্বা কিছু বলার আগেই আমি দাঁড়াই গিয়া বললাম, এসব কি বলছো বন্ধু!?

– ছোঁয়া তুমি জানো আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর তোমাকে কখনো আমি অন্যের সাথে মিশতে দেখতে চাই না। আর আমি কেমন তা তুমি জানো। কোনো খারাপ কিছু কি আছে আমাকে রিজেক্ট করার মতো?

– আমি জানি তুমি অনেক ভালো। আমার অনেক কেয়ার করো। তাই বলে বিয়ে? আমি কখনো তোমাকে তেমন চোখে দেখিনি।

– তাহলে আমাকে কি চোখে দেখেছো তুমি?

– আমি তোমাকে বন্ধু হিসেবে পাশে চেয়েছি সব সময়…

– আর আকাশকে?

– ওর ব্যাপার আলাদা।

– কি করে আলাদা?

– আলাদা কারণ তুমি আমার মামাতো ভাই।

রাতুল হঠাৎ রেগে গিয়ে বলল, আমি তোমার মামাতো ভাই না। না তুমি আমার ফুফাতো বোন। আমি অবাক হয়ে বললাম, মানে!? রাতুল শান্ত হয়ে বলল, কিছু না। আমি তোমার অনুমতির জন্য এখানে ডাকিনি। শুধুমাত্র জানিয়ে দিলাম। আমার এবার মেজাজ খারাপ হলো।

– মানে কি? আম্মু? তুমি কিছু বলো।

– রাতুল ওর যদি……

– ফুফু, আশা করি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এই বিয়েতে রাজি হবে। আমি আর কিছুই চাই না। কাল থেকেই বিয়ের সব কাজ শুরু হবে। ছোঁয়া, সাহেদা যেহেতু নেই। তোমার বিয়ের আগে পর্যন্ত বাইরে যাওয়া বন্ধ।

– আমাকে আটকে রেখে বিয়ে করবে জোর করে?

– দরকার হলে তাই। তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি যতটুকু যেতে হয় যাবো। এত বছর অপেক্ষা করেছি। আর ধৈর্য্য ধরতে পারবো না।

আমি আব্বু আম্মুর দিকে তাকাইলাম। হঠাৎ যেন বোবা হয়ে গেলেন তারা। কিসের কৃতজ্ঞতা কিসের কি? আমাকে যেন বোবা পুতুল পেয়েছে। আমি রেগে বইলা উঠলাম, আমি এই বিয়ে করবো না। বইলাই গিয়া রুমের দরজা মাইরা দিলাম।
.
.
.
.
বৌভাতটা কাইটা গেল। সাহেদাও আসলো আয়ান ভাইয়ের সাথে। সাহেদাকে সারাদিনে কিছু বলার সুযোগ পাই নাই। তাই ওদের বাসায় বইসা আছি বলার জন্য। ও ছাড়া আপাতত কাউকে বলার মতো নাই। কাকেই বা বলব? আব্বু আম্মু কেন এমন করতেসে বুঝতেসি না। তারাও রাতুলের কথা এত সহজে রাজি হইয়া গেল। রাতুলও কি যেন এড়াই গেল। আগে তো এমন ছিল না। বিদেশ হতে আসার পর তেকে আমারে যে রুপ দেখাইতেসে মনে হইতেসে আমারেই পাগল হইয়া পাবনা যাইতে হবে। সাহেদাটা এত ব্যস্ত! ঠিক করলাম আজকে সাহেদার বাসায় থাকমু। কিন্তু এখন তো ম্যাডামের জামাই আছে। আমার কাছে থাকবে কোন সুখে?

আমি সোফায় বসে ওদের ব্যস্ততা দেখতেসি। সাহেদার সাথে পর্ষীটাও চইলা আসছে। অন্য বাচ্চারা কি সুন্দর খেলতেসে। সেও খেলবে। তা না। আমার সাথে চিপকাই বসে আছে। কোনো জ্বালাতন করছে না। বরং বুড়া মানুষের মতো আমার পাশে বইসা খেলা দেখতেসে আর একটু পর পর ওদের কান্ড কারখানা দেখে হেসে কুটি কুটি হইতেসে। কতক্ষণ পর সাহেদা আইসা আমার পাশে বইসা একটা পেয়ারায় কামড় দিতে দিতে কইলো, কিরে? একদিনে এমন আমসি হয়ে গেছিস কেন? আমি পর্ষীরে বললাম, পর্ষী, তুমি ওদের সাথে গিয়ে খেলা করো। এখানে আমরা কথা বলব। সে অনিচ্ছার সত্ত্বেও উইঠা খেলতে গেল। ও চলে যেতেই আমি সাহেদার দিকে ফিরে কইলাম, আমার বিয়ে ঠিক হইসে। সাহেদা এক প্রকার শক খেয়ে বলল, কিহ!? আমার বিয়ে এখনো শেষ হলো না তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে মানে! কার সাথে? আমি মলিন মুখে বললাম, রাতুলের সাথে। ও বলেছে আগামী শুক্রবার আমাদের বিয়ে।

– বলেছে মানে? তুই কিছু বলিসনি?

– সে আমার অনুমতির অপেক্ষা রেখেছে নাকি? সে নাকি শুধু জানিয়েছে। আমি যদি বিয়ে না করি সে জোর করে বিয়ে করবে।

– এটা কি ধরণের কথা!? আঙ্কেল আন্টি কিছু বলেনি?

– না। তারাও কিসের জন্য যেন চুপচাপ রাজি হয়ে গেছে। আজকে সকালে এসেও আমাকে অনেক বুঝিয়েছে। আমি জানি রাতুল ভালো ছেলে। চাকরি করে বিদেশে। বিয়ে হলে আমাকেও নিয়ে যাবে। কিন্তু আমি তো… কিছুই ভালো লাগছে না।

– চিন্তা করিস না। আমি ব্যবস্থা করছি।

– তুই কি করবি?

– অনেক কিছু করার আছে। সময় হয়ে গেছে। আর দেরি করা ঠিক হবে না।

– কিসের সময়? সাহেদা সত্যি করে বলবি আমার চারপাশে কি হচ্ছে? মাঝে মধ্যে মনে হয় সবাই সব জানে কেবল আমিই যেন কিছু জানি না।

– জানবি। তুই চিন্তা করিস না। শুধু আমাদের উপর ভরসা রাখ।

– আমাদের মানে!? আর কে?

– দেখিস।

– কেন আমাকে সবাই এমন অন্ধকারে ফেলে রেখেছে? আমার কি নিজের ব্যাপারে জানার অধিকার নেই!?

আমি এক প্রকার রাগ কইরা চইলা আসলাম বাসায়। কলিংবেল টিপতেই রাতুল দরজা খুলল। সে কিছু বলতে চাচ্ছিল। তার আগেই আমি রুমে গিয়া দরজা মাইরা দিলাম।

রাতে কিছু খাইলাম না। আম্মু, আব্বু, রাতুল, ঝিলিক সবাই ডাকল। আমি কিছুতেই দরজা খুললাম না। শুধু চোখের পানি ফেললাম। মাথাটাও যন্ত্রণা করতেসে। একটা ব্যাথার আর একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লাম। কখন যে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলাম টের পাইলাম না।

সকালে চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙল। বাইরে হঠাৎ চেঁচামেচি হচ্ছে কেন বুঝতেসি না। কান পেতে শুনার চেষ্টা করতেই বুকটা ধক কইরা উঠল। গাজর আসছে। তার সাথে রাতুলের কি নিয়ে যেন তর্ক হচ্ছে। আমি দরজা খুইলা রুম থেকে বের হতেই দুজনে আমার দিকে তাকালো।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here