You are my property,Part_6,7

You are my property,Part_6,7
M Sonali
Part-6

— আমি আপনার সাথে এ বাড়িতে থাকতে চাইনা! আমাকে আমার বাবার বাড়িতে যেতে দিন। আমি সেখানেই থাকতে চাই আর কলেজে পড়াশোনা করতে চাই।

অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর হঠাৎ ওপরের এই কথাটি বলে উঠলাম আমি। আমার কথা শুনতেই আমার সামনে বসে থাকা রাজ চৌধুরী যেন অবাক হয়ে ফিরে তাকালেন আমার দিকে। সে হয়তো আমার কাছ থেকে এমন কথা আশা করেন নি। তারপর আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে উঠলেন,

— তুমি যা চাইবে তাই হবে রাহি, কিন্তু আমার একটি শর্ত আছে।

আমি তার কথা শুনে অন্য দিকে তাকিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বসে রইলাম। তার কোন কথার উত্তর দেওয়ার মত মন মানসিকতা নেই আমার মাঝে। কেন না এই মুহূর্তে আমার কাছে পৃথিবীর সবচাইতে ঘৃনার কোন লোক থাকলে সেটা শুধুমাত্র এই লোকটি। যে আমার জীবনে ঝড় এর বেগে এসে সব কিছু ওলট পালট করে দিয়েছে। আমার বাবা-মার কাছে আমাকে মিথ্যাবাদী করে তুলেছে এই লোকটি। আমি কি করে ক্ষমা করব একে? আর কীভাবেই বা মেনে নেব নিজের স্বামী হিসেবে? আমার কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে সে নিজেই বলে উঠলো,

— আমি তোমার সকল চাওয়া পূরণ করবো রাহি। তুমি যেটা চাও সেটাই হবে। কিন্তু তার আগে আমার একটি শর্ত আছে। আর শর্তটি হলো তুমি তোমার বাবার বাসায় থাকবে ঠিক আছে, আমি ততদিন পর্যন্ত তোমার উপর নিজের স্বামীর অধিকার খাটাবো না যতদিন না তুমি নিজে থেকে মেনে নিয়ে আমার কাছে চলে আসো। তবে তুমি সেখানে থাকবে ঠিকই কিন্তু আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোন ছেলের সাথে কথা বলা তো দূর চোখ তুলেও তাকাতে পারবে না। আর যদি আমার কথা অমান্য করো তাহলে সেদিনই হবে তোমার ওই বাড়িতে শেষ দিন। এটা মাথায় রাখতে হবে তোমার!

তার বলা কথাগুলো শুনে অসম্ভব রাগ হল আমার মাঝে। কত বড় সাহস এই লোকের যে আমার ওপরে নিজের আদেশ খাটাতে চাইছে! কি হয় উনি আমার, তাকে আমি চিনিনা জানিনা। আমার সরলতার ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সে আমাকে বিয়ে করেছে। আমার তো এ বিয়েতে মত ছিল না! কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমি কারো মুখের ওপর কোন কথা বলতে পারিনি। জানিনা আমার কেন এমন হয়। কেন নিজের ওপর কোনো মিথ্যা অপবাদের প্রতিবাদ করতে পারি না আমি। কিন্তু তাই বলে তো এই নয় যে এই লোকটার সবকথা মেনে নেবো আমি? কখনোই না ।

এসব কথা মনে মনে ভেবে চুপ করে রইলাম আমি। তার কোন কথার উত্তর দেওয়ার ইচ্ছা করছে না এই মুহূর্তে আমার। আমাকে চুপ থাকতে দেখে তিনি আবারো বলে উঠলেন,

— কি হলো রাহি আমি তোমাকে কিছু বলছি! আমার কথার উত্তর দাও? আমি তোমাকে যে শর্তটা দিয়েছি তুমি যদি সেই শর্তটা সঠিকভাবে মানতে পারো তবেই আমি তোমাকে আমার বাসা থেকে তোমার বাবার বাড়িতে যেতে দেব। আর তুমি যতদিন না আমাকে মন থেকে স্বামী রুপে মেনে নাও, ততদিন সেখানে থাকতে দেবো। আমি কখনোই তোমার কাছে জোর করে স্বামীর অধিকার চাইবো না। তুমি সেখান থেকেই কলেজে পড়াশোনা করতে পারবে। কিন্তু তোমার জীবনে আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পুরুষ থাকতে পারবে না। এটা তোমাকে প্রমিস করতে হবে আমার কাছে?

তার কথাগুলো শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে চিন্তা করলাম আমি। এখন তার প্রতিটি কথা মেনে নেওয়াই সঠিক হবে আমার জন্য। কারণ যেভাবেই হোক এই বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে ফিরতে হবে আমায়। আর সবকিছু বুঝিয়ে বলতে হবে ভাইয়াকে। আমার বিশ্বাস আর কেউ আমার কথা বিশ্বাস না করলেও ভাইয়া নিশ্চয়ই আমার কথা বিশ্বাস করবে। আমার সাথ দেবে। আর এই লোকটিকে আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিতে সাহায্য করবে। তাই মুখে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,

— ঠিক আছে আপনি যেমন বলছেন তাই হবে। আমি ওই বাসায় থেকে কলেজে পড়াশোনা করব। আর আপনি ছাড়া অন্য কোন ছেলের সাথে কথা বলবো না। এটা আপনার কাছে আমার প্রমিস।

আমার কথা শুনে উনি যেন বিশ্ব জয় করা এক হাসি দিলেন। তারপর লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে খুশি হয়ে বললেন,

— থ্যাংক ইউ রাহি থ্যাংক ইউ সো মাচ। আমি জানতাম তুমি আমার কথা অবশ্যই রাখবে। আর আমিও নিজের কথা রাখবো। তোমার যা দরকার সব কিছু তোমাকে আমি সেখানে দেবো। আর তুমি যাতে তোমার বাবার বাড়ি থেকে কলেজে পড়তে পারো, সেই সব কিছুর ব্যবস্থা করব আমি তোমার জন্য। এখন রুমে গিয়ে আলমারিতে দেখো তোমার জন্য কাপড় রাখা আছে। সেটা বের করে রেডি হয়ে নাও আমি নিজে গিয়ে তোমার বাড়িতে তোমায় রেখে আসবো।

কথাটি বলেই তিনি অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন। আমিও আর দেরি না করে দ্রুত নিজের রুমে ছুটে এসে আলমারি খুলে দেখলাম অনেক সুন্দর একটি কালো রঙের গাউন জামা। আমি জামাটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। তারপর জামা কাপড় চেঞ্জ করে গোসল করে গাউনটা পড়ে বেরিয়ে আসলাম। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হালকা একটু সেজে নিলাম আমি। চোখে হালকা করে কাজল, ফোটে হালকা লিপস্টিক, কানে এক জোড়া ঝুমকো, ব্যাস এতটুকুই যথেষ্ট। রেডি হয়ে উপর থেকে নিচে নেমে আসলাম আমি। নিচে নেমে আসতেই দেখতে পেলাম রাজ সোফার উপর বসে ফোনে কথা বলছেন কেউ একজনের সাথে। ওনাকে দেখতেই না চাইতেও যেন নিজের নজরটা আটকে গেল ওনার দিকে। ওনাকে দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। আমি হয়তো এর আগে এভাবে ওনার দিকে একবারও লক্ষ করিনি। তিনি যেমন লম্বা ফর্সা সুন্দর এবং স্মার্ট। তার চাইতেও বেশী ভালো লাগছে এখন মনে হচ্ছে। তিনি আমার সাথে ম্যাচিং করে কালো রংয়ের কোট প্যান্ট পরেছেন। সাথে চোখে পড়ে আছে দামী সানগ্লাস। হাতে দামি ওয়াচ। সবকিছু মিলিয়ে যেন অসাধারণ সুন্দর লাগছে তাকে দেখতে। আমি হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। হঠাৎ ফোনটা রেখে আমার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালেন উনি। তারপর একপা একপা করে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।

ওনাকে এগিয়ে আসতে দেখে যেন হুশ ফিরল আমার। আমি অনেকটাই অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম ওনাকে এগিয়ে আসতে দেখে। তবুও নিজেকে যতটা সম্ভব সামলে নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম। উনি আমার কাছে এগিয়ে এসে পা থেকে মাথা পর্যন্ত আমাকে দেখলেন। তার পর অন্য দিকে ঘুরে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলে উঠলেন,

— আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে রাহি, চলো এবার বের হতে হবে। তোমাকে ঐ বাসায় রেখে অফিসে যাবো আমি। আর তাছাড়া রাই কেও আনতে যেতে হবে।

ওনার কথা শুনতেই রাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল আমার। সত্যিই তো এই বাসায় আসার পর থেকে একবারও তো রাইকে দেখিনি। তাহলে ও কথায় গেলো? আমি অবাক হয়ে রাজের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম,

— কেনো রাই এখানে নেই? ও কোথায়?

— রাই তোমাকে আর আমাকে একা থাকতে দেবে বলে নিজের বান্ধবীর বাড়িতে থেকে গেছে কাল। সেখান থেকেই ওকে আনতে যাব আমি। ওকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। এবার চলো তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে অফিস যেতে হবে আমায়।

কথাটি বলেই সামনের দিকে হাটা দিলেন উনি। ওনার কথা শুনে স্পষ্ট বুঝতে পারলাম আমি, যে উনার কথায় যেন অনেক কষ্ট জড়িয়ে আছে। কিন্তু এই কষ্টটা কিসের আমি সেটা বুঝতে পারলাম না। আর বোঝার চেষ্টাও করছি না। উনার পিছু পিছু সোজা গিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লাম। উনি ড্রাইভিং সিটে বসে আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললেন,

— সামনে এসে বসো, এভাবে পিছন সিটে বসে থাকলে যে কেউ দেখে তোমার ড্রাইভার মনে করবে আমায়।

উনার কথায় বেশ বিরক্ত হলাম আমি। তবুও বিরক্ত টাকে প্রকাশ না করে পেছন থেকে সামনে এসে বসে পড়লাম। আমাকে বসে পড়তে দেখে উনি অন্য দিকে তাকিয়ে বারবার গাড়ির হর্ন বাজাতে লাগলেন। আমি ওনার এমন হর্ন বাজাতে দেখে বেশ বিরক্ত ফিল করতে লাগলাম। সামনে এসে তো বসেছি তাহলে আবার কেন হর্ন বাজাচ্ছেন উনি? তাই বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললাম,

— আপনার এই খাম্বা মার্কা গাড়ি টাকে এভাবে ষাঁড় গরুর মত চেঁচাচ্ছেন কেন বারবার?

আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। তারপর জোরে জোরে হা হা করে হাসতে লাগলেন। ওনাকে এভাবে হাসতে দেখে যেন এবার বিরক্তির সীমা পার হয়ে গেল আমার। আমি বিরক্তিকর কন্ঠে বলে উঠলাম,

— এভাবে হাসির কি হল? কিছুক্ষণ আগেই তো বলছিলেন আপনার দেরি হয়ে যাচ্ছে! এখন আবার এমন শুরু করেছেন কেন? তাড়াতাড়ি চলুন আমাকে বাসায় পৌঁছে দেবেন।

আমার কথায় উনি এবার হাসি থামিয়ে বলে উঠলেন,

— লাইক সিরিয়াসলি রাহি? আমার এই দামী গাড়িটাকে তোমার খাম্বা বলে মনে হয়? আর গাড়ির হর্ন এর শব্দকে ষাঁড়ের ডাক মনে হয় তোমার?

ওনার কথায় চুপ করে বসে রইলাম আমি। উত্তর দেওয়ার মতো কোনো ইচ্ছেই এখন আমার নেই। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে এবার উনি হাসি থামিয়ে বেশ অনেকটাই গম্ভীর হয়ে গেলেন। তারপর কিছু একটা ভেবে একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিলেন। আমাকে নিয়ে আমার বাবার বাসায় পৌঁছে দিয়ে, তিনিও নেমে পড়লেন। তাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে উনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,

— আপনি এখানে নামছেন কেন? আপনি না বললেন আপনি অফিসে যাবেন?

উনি আমার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে গাড়ির পিছন থেকে অনেকগুলো ফল মিষ্টির প্যাকেট আর শপিং ব্যাগ বের করলেন। তারপর আমাকে পাশ কাটিয়ে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার আগেই উনি আমাদের বাসার গেটের মধ্যে ঢুকে পড়লেন। আমি অবাক চোখে ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কেমন লোক রে বাবা, এমন ভাব করছে যেন আমাকে উনি চেনেই না। যেন আমাকে সাথে করে নিয়ে আসেন নি। আর এই বাড়িটা যেন ওনার, আমি এ বাড়ির কিছুই নই। বেশ বিরক্ত সহকারে রাগ নিয়ে উনার পিছু পিছু আমিও বাসার দরজার কাছে এগিয়ে গেলাম। উনি কলিংবেল চাপতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিয়ে আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে খুশি হয়ে বলে উঠলো,

— তোমরা এসে গেছো বাবা? আমি তোমাদের জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম।

চলবে,,,,,,,

You are my property
Part_7
M Sonali

গত 30 মিনিট যাবত একের পর এক খাবার গিলে যাচ্ছেন রাজ। উনাকে এভাবে খেতে দেখে যেন চোখদুটো কটোর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে আমার। এত যে কেউ খেতে পারে সেটা এই রাজকে না দেখলে হয়তো কেউ বুঝতেই পারবে না। আর আমার মা বাবাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন বাড়িটা আমার বাবার বাড়ি নয় বরং ঐ রাজের বাবার বাড়ি। মা বাবাও যেনো আমার নয়। আমার দিকে কারো কোনো খেয়ালই নেই। তারা তো নিজেদের নতুন জামাইকে নিয়েই ব্যস্ত। কিন্তু এদিকে যে আমি সকাল থেকে কিছুই খাইনি। সেদিকে কারো খেয়ালই নেই। কেমন যেন নিজেকে আজ বাবার বাড়িতে পর পর মনে হচ্ছে। তাহলে এখানে আমি থাকবো কি করে? ভাবতেই দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে চাইছে। কিন্তু কান্না করতে পারছিনা আমি। শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে ঐ রাজের খাবার গেলা দেখছি।

হঠাৎ মাথায় কারো গাট্টা মারার আঘাত পেয়ে সে দিকে ফিরে তাকালাম আমি। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে চেয়ারে বসতে বসতে বলল,

— কিরে পুচকি এভাবে আমাদের নতুন জামাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন রে? বেচারার তো পাতলা পায়খানা হবে তোর নজরে।

এমনিতেই অনেকক্ষণ হলো রেগেছিলাম। ভাইয়ার কথায় যেন আরো বেশি রাগ টা বেড়ে গেল আমার। ইচ্ছা তো করছে এবার ভাইয়ার সাথে আচ্ছা করে ফাইটিং শুরু করে দেই। কত বড় কথা আমি নাকি ওনাকে নজর দিয়ে ওনার পেট খারাপ করে দিবো! রাগে আর কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে উঠে নিজের রুমে চলে গেলাম আমি। আমাকে এভাবে যেতে দেখে বেশ কয়েকবার পিছু ডাকলো ভাইয়া। আমি তার কথায় থামলাম না, সোজা নিজের রুমে এসে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বেলকুনিতে চলে আসলাম। ভীষণ কান্না পাচ্ছে আমার ইচ্ছে করছে হাত পা ছাড়িয়ে চিৎকার করে কান্না করি। কিন্তু সেটারও উপায় নেই। তাই গাল ফুলিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে প্রকৃতি দেখতে লাগলাম। এদিকে ক্ষুধায় মনে হচ্ছে পেটের মধ্যে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে আমার। সেদিকে যেন কারো খেয়ালই নেই। একদিনেই কি এতটা পর হয়ে গেছি আমি সবার? ধুর কিচ্ছু ভাল্লাগে না।

বেশ কিছুক্ষণ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকার পরে দরজায় কেউ বারেবারে টোকা দিতে লাগলো। আমি দরজায় টোকা দেওয়ার শব্দ শুনে বিরক্তি নিয়ে সে দিকে তাকালাম। কিন্তু দরজা খুললাম না। দরজা খোলার কোনো ইচ্ছেই আমার মাঝে নেই এখন। কারন এমনি তে একা থেকে আমি যতই রাগ দেখাই না কেনো। কারো সামনে গিয়ে সেই রাগটা প্রকাশ করার ক্ষমতা নেই আমার। জানিনা আমার সাথেই কেনো এমনটা হয়। নিজের ফিলিংস গুলো কেনো কাউকে বোঝাতে পারিনা আমি! আমার ভাবনায় ছেদ কাটিয়ে আবারো কে যেন বারবার দরজায় ধাক্কা দিয়ে উঠলো। এবার শুধু ধাক্কা দিয়েই থামলো না, সে আমার নাম ধরেও ডাকতে লাগল। শেষমেশ বিরক্ত হয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে ফেললাম আমি। আর দরজা খুলতেই দেখতে পেলাম আমার সামনে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছেন রাজ। তার হাতে খাবারের প্লেট। উনাকে দেখেই যেন বিরক্তিটা আরো একশ গুণ বেড়ে গেল আমার। আমি ভ্রু কুঁচকে রাগি গলায় বলে উঠলাম,

— কি হয়েছে? কি সমস্যা আপনার? বারবার দরজায় ধাক্কা দিচ্ছেন কেনো?

উনি আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে হুড়মুড় করে আমাকে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকে পড়লেন। তারপর উনার হাতের খাবারের প্লেট টা টেবিলের উপর রেখে আমাকে সরিয়ে দিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলেন। তারপর আমার হাত ধরে নিয়ে খাটের উপর বসিয়ে দিলেন। ওনার এমন কার্যকলাপে অবাক এর চাইতে রাগটাই যেন বেশি হচ্ছে আমার। আমি ওনার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে কিছু বলতে যাব তার আগেই উনি বলে উঠলেন,

— এখন রাগ না দেখিয়ে তাড়াতাড়ি খাবারটা খেয়ে নাও। এখন না খেলে দুপুর অব্দি কিছু না খেয়েই থাকতে হবে।

ওনার কথা শুনে প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলাম আমি,

— না খেয়ে থাকতে হবে মানে কি?

উনি আমার কথায় এবার মুখটি অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলে উঠলেন,

— না খেয়ে থাকতে হবে কারণ এ বাসার সবাই জানে যে তুমি সকালে আমার খাবার সহ দু প্লেট খাবার খেয়ে এসেছো। আর আমাকে না খাইয়ে রেখেছো। তাই তো সবাই তোমাকে ছেড়ে আমাকে খাওয়াচ্ছিল এতক্ষণ বুঝলে?

উনার কথায় যেন আকাশ থেকে পড়লাম আমি। এ লোক বলে কি! আমি নাকি দুই প্লেট খাবার খেয়ে এসেছি! আজ অব্দি জীবনে কখনো এক প্লেটের বেশি খাবার খেয়েছি কিনা আমি নিজেই জানি না। আর উনি কি না আমার নামে এতবড় একটা মিথ্যা কথা বলছে? রাগে যেন এবার শরীর জ্বলে যেতে লাগলো আমার। কত্ত বড় সাহস এই লোকের, আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমার বাবা-মার কাছে আমার সম্পর্কেই এত বড় মিথ্যা কথা বলেছে উনি? আর আব্বু আম্মু বা কেমন কিভাবে ওনার কথা মেনে নিলেন যে আমি দুই প্লেট খাবার খেয়েছি? ভাবতেই যেন মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছা করছে আমার। তবে নিজের মাথার নয় এই লোকটির মাথার। আমি রাগে কোন কথা না বলে সেখান থেকে সরে বেলকুনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম।

আমাকে বেলকুনিতে আসতে দেখে উনিও আমার পিছু পিছু এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন। তারপর বাইরের দিকে চোখ রেখেই বলে উঠলেন,

— বেশিক্ষণ তোমার সাথে এক রুমে দরজা আটকে থাকলে সবাই কি ভাববে বলতো? আমাদের তো নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে, তাই দেরি না করে খাবার গুলো খেয়ে নাও তাহলে আমি বাইরে যেতে পারবো।

— তো আপনাকে আটকে রেখেছে কে বাইরে যাওয়া থেকে? যান না তাড়াতাড়ি চলে যান। আপনাকে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছে কে? আর দরজা লাগিয়ে রেখেছেন কেন আপনি?

— কারণ এই খাবারটিও আমি খাব বলে নিয়ে এসেছি। এখন দরজা খুলে আমি বাইরে যাওয়ার পর আমার শাশুড়ি আম্মা শশুর মশাই যদি দেখে যে আমার খাবারটা তুমি আবারও খেয়ে নিয়েছো, তাহলে তারা সবাই তোমাকে রাক্ষসী ভাববে বুঝলে। তাই তাড়াতাড়ি খেয়ে প্লেটটা খালি করে দাও আমি নিয়ে চলে যাই।

ওনার কোথায় যেন পায়ের নিচের মাটি সরে গেল আমার। লোকটা বলে কি, গত আধাঘন্টা হলো খেয়েও, এখনও নাকি আরও এক প্লেট খাওয়ার জন্য নিয়ে এসেছে উনি? এবার তো আমার সন্দেহ হচ্ছে এটা আদৌ কোনো মানুষ না কী আস্ত একটি রাক্ষস? আমাকে ওনার দিকে এমন বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি কেমন লজ্জা পাওয়ার ভাব নিয়ে বললেন,

— দেখো রাহি, তোমাকে আমি আগেই বলেছি তুমি আমাকে মন থেকে মেনে না নিলে আমি তোমার কাছে স্বামীর অধিকার চাইবো না। এখন তুমি যদি আমার দিকে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকো, তাহলে কিন্তু আমি ধরে নেবো তুমি আমাকে মন থেকে মেনে নিয়েছো। তখন কিন্তু আমি তোমার ওপর,,,,,,,, বুঝতেই তো পারছো!

ওনার কথা শুনে চোখ নামিয়ে নিলাম আমি। সাথে শুকনো ঢোক গিলে রাগী ভাব নিয়ে রুমে এসে খাবারের প্লেটটা নিয়ে খাবার খাওয়া শুরু করলাম। এমনিতেই অসম্ভব খিদে লেগেছে আমার। ক্ষুধায় একদম হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গিয়েছে বলা চলে। তাই আর রাগ দেখিয়ে লাভ নেই। আমার খাওয়া দেখে উনি আমার পাশে এসে বসে আমার দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইলেন। ওনাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বেশ অস্বস্তি লাগল আমার। আমি ওনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,

— আপনার না অফিসের খুব জরুরী কাজ আছে? তাহলে আপনি এখানে আছেন কেন অফিসে যাবেন না?

— এটাই তো আমার অফিস আর যে কাজগুলো করছি এটাই হল আমার সেই জরুরী কাজ বুঝলে? এখন কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি খাবারটা খেয়ে নাও। আমাকে আবার রাইকে আনতে যেতে হবে।

ওনার কথা শুনে খাওয়া বাদ দিয়ে বড় বড় চোখে ওনার দিকে তাকালাম আমি। উনি হয়তো আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে বলে উঠলাম,

— আমি তোমার কাছে মিথ্যা কথা বলিনি রাহি। সত্যিই অফিসে কাজ আছে আমার। তবে এখানের চাইতে ওটা জরুরী নয়। তুমি তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও আমি একটু পরেই চলে যাব। আর তোমার সাথে একদম কলেজেই দেখা হবে আমার। এখানে হয়তো আর তেমনভাবে আসা হবে না। অনেক বেশি মিস করব তোমায় আমি রাহি।

কথাগুলো কেমন অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন উনি। আমি ওনার দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে তাড়াতাড়ি খাবারটা খেয়ে নিলাম। তারপর প্লেটটা ওনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে উঠলাম,

— এবার তাড়াতাড়ি বিদায় হন!

উনি আমার কথাটা শুনে আমার দিকে বেশ কিছুক্ষণ অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলেন। আমি ওনার চাওনি টাকে দেখে অন্য দিকে ঘুরে তাকালাম।উনি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন প্লেটটা নিয়ে।

চলবে,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here