You are my property,Part_47,48
M Sonali
Part-47
দরজা খুলে রুমে ঢুকতেই চোখ যেন কটোর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো রাজের। কারণ ও সামনে তাকিয়ে দেখল, রাহি বিছানার ওপর মাথা নিচের দিকে আর পা উপর দিকে দিয়ে সটান হয়ে শুয়ে আছে। চুল গুলো নিচের দিকে ছড়িয়ে রেখেছে। পরোনের জামা কাপড় গুলো কেমন এলোমেলো হয়ে আছে। রাজ দৌড়ে গিয়ে ওর পাশে বসে ওর মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলল,
— রাহি, কি হয়েছে তোমার? তুমি এভাবে পড়ে আছো কেন? এই রাহি তাকাও আমার দিকে, বলো আমায় কি হয়েছে তোমার?
ওর কথা শুনে ওর দিকে বড় বড় চোখ করে ড্যাব ড্যাব করে তাকাল রাহি। ও তাকাতেই ওর চোখ দেখে যেন আঁতকে উঠল রাজ। কারণ ওর চোখ দুটো ভীষণ লালচে লাগছে। তার সাথে মুখটাও কেমন অগোছালো লাগছে। রাহি ওর কোল থেকে লাফিয়ে উঠে বসে পিটপিট করে ওর দিকে তাকিয়ে। ঘারটা একদিকে কাত করে রাজের গাল টেনে দিয়ে ওর কোলে উঠে বসলো। তারপর ওর দিকে কিছুটা ঝুকে ওর ঠোঁটে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে নেশা মাখা গলায় বলল,
— স্বামী, তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে স্বামী? তুমি জানো আমি তোমাকে ছাড়া একটুও থাকতে পারি না। তুমি কই ছিলা স্বামী?
রাহির এমন আচরণে রাজ বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বোঝার চেষ্টা করল ওর আসলে কি হয়েছে। পরক্ষণেই ওর মনে পড়লো নিশ্চয়ই ও কোন কিছু খেয়েছে। রাজ আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সেই মাটির পাত্র টা একদম খালি। সেটা দেখতেই নিজের মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠল,
— ওহ সিট, এখন কি হবে? এই মেয়ে তো সবটুকু ভাঙ খেয়ে নিয়েছে। এখন কি কি করবে ও আল্লাহই জানে?
এতোটুকু বললেই রাহি ওর কোল থেকে লাফ দিয়ে নিচে নেমে ভাব নিয়ে বলল,
— এই ছেলে তোমার সাহস তো কম নয়? তুমি দেশের প্রধানমন্ত্রীর সামনে এভাবে বসে আছো ক্যান হুহহ? আমি নাচ দেখতে চাই। তাই এভাবে বসে না থেকে নাচো। আমি প্রধানমন্ত্রী তোমার সামনে বসে থেকে তোমায় আদেশ করছি, তুমি নাচো আর আমার মনোরঞ্জন করো।
রাহির এমন কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো ওর দিকে রাজ। তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে এসে ওকে সান্ত করার জন্যে বলে উঠলো,
— ইশশ রাহি, তুমি কি পাগল হয়ে গেছো। কি বলছো এসব আবোলতাবোল। প্লিজ কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ।
— ওই বেটা তুই কী বললি আমায়? আমি নিজেরে নিয়ন্ত্রণ করবো? আরে ব্যাটা তুই প্রধানমন্ত্রীর উপরে কথা কস। আমি এখানে চুপ করে বসে আছি তুই নাচ। আমি তোর নাচ দেখে মনোরঞ্জন করমু। নাচ ব্যাটা।
— রাহি প্লিজ নিজের জ্ঞানে আসো। বোঝার চেষ্টা করো তুমি কোন প্রধানমন্ত্রী নও আর আমি রাজ তোমার বর। ভালো করে তাকিয়ে দেখো নিজেকে কন্ট্রোল করো। কি আবোল তাবোল বলছ এসব তখন থেকে?
— ফাজিল পোলা কি বললি তুই? আমায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মানোস না? আজকে তো তোকে আমি,,,?
কথাটা বলেই পুরা রুমজুড়ে কিছু একটা খুঁজতে লাগলো রাহি।
বেশ কিছুক্ষণ খুঁজতে খুঁজতে পাশের টেবিলে থাকা একটি কাঠের স্কেল হাতে পেলো রাহি। তারপর সেটাকে নিয়ে চলে এসে রাজের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের হাতে নিজে আলতো ভাবে মারতে মারতে বলে উঠলো,
— তুই জানোস না দেশের প্রধানমন্ত্রী কোন কিছু অর্ডার করলে সাধারন জনগনের সেটা মানতে হয়। তুই কি নাচবি, নাকি তোরে আমি এটা দিয়ে পিটনি দিমু?
কথাগুলো বলেই রাজকে তাড়া করতে লাগলো ও। ও বেচারাও কোনো উপায় না দেখে ছোটাছুটি শুরু করলো। রাজ এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। তবে বেশ ভালভাবেই বুঝে গেছে যে রাহি নিজের মাঝে নেই। সে এখন পুরোপুরি মাতাল হয়ে গেছে। এভাবে বেশ কিছুক্ষন ধরে রুম জুড়ে ছোটাছুটি করার পর এবার হয়রান হয়ে চুপ করে এক জায়গায় দাঁড়ালো রাজ। সেই সুযোগে রাহি গিয়ে ওর পিঠের উপর স্কেল দিয়ে দুটো লাগিয়ে দিয়ে বলল,
— কিরে ব্যাটা এখন নাচবি নাকি আমি তরে এটা দিয়ে বাইরামু?
রাহিকে রাগি ভাবে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয়ে কোন উপায় না পেয়ে এবার নাচার জন্য রাজি হলো রাজ। তবে শর্ত দিল সে মোবাইলে ভিডিও করে রাখবেন সব কিছু। রাহিও নাচতে নাচতে রাজি হয়ে গেলো ওর শর্তে।
বিছানার ওপর পায়ের উপর পা তুলে লাঠিটা হাতে নিয়ে ইশারায় নাচতে বলল রাজকে। কিন্তু কিসের সাথে নাচবে সেটা বুঝতে না পেরে রাজ জিজ্ঞেস করল,
— নাচবো তো ঠিক আছে। কিন্তু গান না চালালে নাচবো কার সাথে আমি?
ওর কথা শুনে রাহি বললো,
— ঠিকই তো বলেছিস। তোর তো বুদ্ধি আছে রে বেটা। আচ্ছা দাঁড়া দেখি কি করা যায়।
তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে বসে চিন্তা করে রাহি বললো,
— আমি না, অনেক সুন্দর গান গাইতে পারি। আমি গান গাই আর তুই নাচ কেমন?
কথাটা বলেই গান গাইতে শুরু করল রাহি,
— ঐ বেটা তুই শুনতে কি পাশ,
ঐ বেটা তুই শুনতে কি পাআআআশ,
হাতে লাঠি আমার, ওও হাতে লাঠি আমার!!
যদি তুই না নাচিস মাইর খাবি আমার,,
হাতে লাঠি আমার,ওও হাতে লাঠি আমার।
রাজ যা ও একটু নাচতে পারতো রাহির এমন গান শুনে সেটাও ভুলে গেলো। চুপ করে দাঁড়িয়ে হা করে রাহির দিকে তাকিয়ে রইলো। ও এটা কি গান গাচ্ছে সেটা বোঝার চেষ্টা করলো। ওকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লাঠি হাতে ওর পাশে এগিয়ে এসে ওর পা__র ওপর একটা বারি মেরে দিয়ে রাহি আবারও গাইতে লাগলো,
— প্রধানমন্ত্রী বসে আছে দেখ তোর সামনে,
তবু কেনো না নেচে দাঁড়িয়ে আছিস আনমনে।।
ভালো ভাবে নেচে দেখা, নইলে তরে মারমু একা
তখন বুঝবি রাহির মাইরে কতটা মজার,
হাতে লাঠি আমার, ওও হাতে লাঠি আমার।😂
(এইডা কি একটা গান? ভাভা রে ভাভা😨)
ওর গান শুনে আর লাঠির বারি খেয়ে কোনো উপায় না পেয়ে রাজ এবার কোমর দুলিয়ে উল্টাপাল্টা নাচতে লাগলো। রাহিও নিজের মতো উল্টাপাল্টা গান গাইতে লাগলো। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর। রাহি ঢুলু ঢুলু পায়ে ওর কাছে এগিয়ে এসে হাতের লাঠিটা ফেলে দিয়ে ওকে জরিয়ে ধরলো। তারপর বললো,
— তুই অনেক সুন্দর নাচতে পারিস। আই লাইক ইউ। কিন্তু তুই এত লম্বু কেনো রে? একটু বেটে হতে পারিস না। আমি তোরে কিসি দিবো। কথাটা বলেই পা উঁচু করে রাজের ঠোট জোরা আকড়ে ধরলো রাহি। (বাকিটা অজানাই থাক)
———————–
সকালের তীব্র রোদ চোখে এসে লাগায় ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসে হাই তুলতে তুলতে ভালোভাবে চারি দিকে তাকালাম। চারিদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম সকাল হওয়ার বেশ অনেকটাই সময় পেরিয়ে গেছে। অনেক বেলা হয়ে গেছে হয়তো। এত বেলা অব্দি ঘুমিয়েছি আমি, তো বুঝতে পারছি না। কিন্তু কালকে রাত্রে কি হয়েছিল কিছুই মনে পড়ছে না। আমার মাথাটাও বেশ ব্যথা করছে। মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে বসে রইলাম। তখনই খেয়াল হলো নিজের শরীরের দিকে। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম আমার শরীরে খুব ছোট একটি নাইটি ছাড়া আর কোন কিছুই নেই। কিন্তু কাল রাতে তো আমি এটা পড়ে ছিলাম না? কালকে তো একটা খুব সুন্দর গাউন পড়েছিলাম আমি। এটা কখন পড়লাম তাহলে? তখনই মনে হলো এটা নিশ্চয়ই রাজের কাজ। ও হয়তো রাতে চেঞ্জ করে দিয়েছে আমায়। কিন্তু রাতে কি হয়েছে কোনো কিছুই মনে করতে পারছিনা আমি। নাইটিটা এতই ছোট যে বিছানা থেকে নামতে লজ্জা লাগছে আমার। তাই চাদর দিয়ে যতটা সম্ভব নিজেকে ঢেকে নিলাম। তবে মাথা ব্যথার কারণে যেন সহ্য করতে পারছি না। মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলাম চুপ করে। তখনই রাজ এক গ্লাস শরবত হাতে আমার কাছে এগিয়ে এসে পাশে বসে বলল,
— এই লেবুর শরবত টা খেয়ে নাও একটু বেটার ফিল হবে। কাল রাতে যা করেছ না তুমি আমি জিন্দেগীতে ভুলবো না।
উনার কথা শুনে উনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম আমি। তারপর আমতা আমতা করে বলে উঠলাম,
— কা কাল রাতে কি করেছি আমি? আমার তো কিছুই মনে পরছে না। আর এত বেলা অব্দি ঘুমিয়েছি আপনি আমায় ডাকেন নি কেনো?
— কি করেছ সেটা পরে জানতে পারবে। এখন শরবত টা খেয়ে নাও মাথাব্যথা কমে যাবে। আর ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো তোমার জন্য এখনও নাস্তা করিনি আমি। বড্ড ক্ষুদা লেগেছে।
তার কথা শুনে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম। সত্যিই মনে করতে পারছিনা কিছু রাতে কি এমন করেছি আমি। কিন্তু মাথাব্যথায় কোন কথা বলতেও ইচ্ছা করছে না। তাই ওনার হাত থেকে শরবতের গ্লাস টা নিয়ে এক চুমুকে সবটুকু সাবাড় করে ফেললাম। তারপর গ্লাসটা উনার হাতে দিয়ে আবার ওনার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,
— বলুন না প্লিজ কাল রাতে কী হয়েছিল? আর আমার শরীরে তো গাউন পরা ছিল। তাহলে এই নাইটিটা এলো কি করে? আর এত ছোট নাইটি কোথায় পেলেন আপনি?
আমার কথায় উনি গম্ভীর গলায় অন্য দিকে তাকিয়ে বললেন,
— যেহেতু এই রুমে তুমি আর আমি ছাড়া অন্য কেউ থাকেনা। তাহলে নিশ্চয়ই গাউনটা খুলে নাইটিটা আমি তোমাকে পরিয়ে দিয়েছি তাই না? এখন কথা না বাড়িয়ে জলদি যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। আমার কিন্তু খুব ক্ষুধা লেগেছে রাহি। কাল রাতে তুমি যা করেছ আর কি বলব?
চলবে,,,,,,,,,,,,,,
You are my property
Part 48
M Sonali
— যেহেতু এই রুমে তুমি আর আমি ছাড়া অন্য কেউ থাকেনা। তাহলে নিশ্চয়ই গাউনটা খুলে নাইটিটা আমি তোমাকে পরিয়ে দিয়েছি তাই না? এখন কথা না বাড়িয়ে জলদি যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। আমার কিন্তু খুব ক্ষুধা লেগেছে রাহি। কাল রাতে তুমি যা করেছ আর কি বলব?
উনার কথা শুনে আমি আমতা আমতা করে বললাম,
— ক কি করেছি আমি কাল রাতে? আসলে আমার না, কালকে রাতের কোন কথাই মনে পড়ছে না! শুধু এতটুকু মনে আছে যে কাল রাতে আমি ওই সার্ভেন্ট এর দিয়ে যাওয়া মাটির পাত্রের শরবতটা খেয়েছিলাম। খুব মজার ছিলো শরবতটা। তারপর আর আমার কিছু মনে নাই। বলুন না প্লিজ কি হয়েছিলো কাল রাতে?
— কি হয় নি, কি করনি সেটা বল রাহি? কাল রাতে তুমি যেটা করেছো আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেগুলো ভুলব না। আচ্ছা এখন কথা না বাড়িয়ে শরবত টা খেয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। আর শুনো বেশি সময় লাগাবে না। জলদি করে ফ্রেশ হয়ে ফিরে আসো। এমনিতেই কালকে রাত্রে অনেকক্ষণ পানিতে ভিজে থাকতে হয়েছে তোমায়।
উনার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালাম আমি। তারপর মনে করার চেষ্টা করলাম কালকে রাত্রে আমি কখন পানিতে ভিজে ছিলাম। কিন্তু না আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না। তাই আবারও ওনার দিকে তাকিয়ে আমতা-আমতা করে অসহায় কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,
— বলুন না প্লিজ কালকে রাত্রে কি হয়েছিল? আর আমি পানিতেই বা কেন ভিজে ছিলাম?
আমার কথা শুনে রাজ আমার দিকে ঘুরে বসে আমার চোখে চোখ রেখে বলতে শুরু করল,
— কালকে রাত্রে ওই মাটির পাত্রে যেটা ছিল সেটা কে ভাঙ বলে। মানে সেটা একটা নেশা জাতিয় তরল। তুমি সেটা খেয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিলে। আর নেশা করে আমাকে তুমি যা নয় তাই করিয়েছো। এমনকি এই স্কেলটা হাতে নিয়ে আমাকে নাচিয়েছো। আর শুধু নাচিয়েই সান্ত হওনি, শেষ মুহূর্তে আমাকে কিস করার নাম করে নিজেকে সহ আমাকে জরিয়ে বমি করে ভাসিয়ে দিয়েছিলে। আর সেই কারণেই তোমাকে অনেকক্ষণ পানিতে ভিজে থাকতে হয়েছে। কারণ বমি গুলো পরিষ্কার করে তোমার ড্রেস চেঞ্জ করে দিয়েছি আমি। আর কিছু বাকি রাখো নি আমার জীবনে। জীবনে যে টা করিনি, কালকে তোমার জন্য সেটা করতে হয়েছে আমাকে। পুরা একঘন্টা পাগলের মতো নাচিয়েছো তুমি আমায়। আর কি গান ধরেছিলে তুমি! এমন গান জীবনেও শুনিনি আমি।
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন উনি। ওনার কথা শুনে ড্যাব ড্যাব করে ওনার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে কথাগুলো নিয়ে ভাবতে লাগলাম। তারপর আচমকাই হা হা করে হাসতে শুরু করলাম। যখন শুনেছি ওনাকে কাল রাতে আমি নাচিয়েছি, সত্যি বলতে এতটা মজা লেগেছে আমার যা বলার বাহিরে। কেন যে কালকে রাতের কথাগুলো মনে পড়ছে না? খুব মিস করছি সময়টাকে। আমাকে এভাবে হাসতে দেখে উনি একটা ধমক দিয়ে বললেন,
— এই মেয়ে এত হাসি আসছে কোথা থেকে তোমার? আমার অবস্থা নাজেহাল করে এখন খুব হাসি পাচ্ছে তাই না? দিবো টেনে এক চড়।
ওনার ধমক খেয়ে থেমে গেলাম। থেমে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও দম ফাটানো হাসিতে ভেঙ্গে পড়লাম আমি। আমাকে এভাবে হাসতে দেখে উনি মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে বসে রইলেন। বুঝতে পারলাম অনেক বেশি বিরক্ত বোধ করছেন উনি। আর ওনার এই বিরক্তবোধ টাও আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে। খুবই মজা পাচ্ছি এটা ভেবে যে এমন একজন রাগি লোককে আমি পিটিয়েছি নাচিয়েছি। ভাবতেই কি যে আনন্দ লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না। এভাবে বেশ কিছুক্ষন হাসার পর আমি উঠে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম। ফ্রেশ হব বলে। নাইটির ওপরে চাদর পেচিয়ে নিজেকে ভালো করে মুড়িয়ে নিয়েছি। ওয়াশরুমের দরজার কাছে যেতেই দেখলাম সেদিনের সেই বনি বিড়ালটা আমার আগেই ওয়াশরুমে ঢুকে পরলো। রাজ দরজা খোলা রাখায় বিড়ালটা আমাদের রুমে চলে এসেছে। আমি বিড়ালটাকে ধরব বলে ওটার পিছু পিছু ওয়াশরুমে ঢুকলাম। আর তখনই বিড়ালটা দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে বাথটাবে পড়ে গেল। আর পড়ার সাথে সাথে বিড়াল টা যেনো কেমন ছটফট করতে লাগল। যেনো ওটা কারেন্টে আটকেছে। বিড়ালটাকে এমন করতে দেখে সন্দেহ হল আমার। তাই আমি চিৎকার দিয়ে রাজকে ডাক দিলাম। ডাকার সাথে সাথে রাজ চলে আসলো। এসে দেখে অবাক হয়ে গেল। কেননা বিড়ালটা বাথটাবে পরে ছটফট করতে করতে মারা গিয়েছে অলরেডি। বিড়াল টার এমন অবস্থা দেখে আমি রাজ কে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ লুকিয়ে কান্না করতে লাগলাম। বুঝতে বাকি রইল না এইভাবে কারেন্ট দেওয়া আছে। রাজ ভালো করে খুঁজে খুঁজে দেখল বাথটাবের মাঝে একটি কারেন্টের তার ফেলে রাখা। এটা দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কেউ প্ল্যান করে এভাবে রেখে দিয়েছে তারটা বাথটাবের পানিতে। রাজ আমাকে বুকে আগলে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বাইরে নিয়ে এলো। তারপর আমার হাতে একটি সুন্দর সালোয়ার কামিজ ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত ওটা পরে নিতে বললো। আমিও বাদ্ধ মেয়ের মতো কোনো প্রশ্ন না করে সালোয়ার কামিজটা পরে নিলাম। তারপর ও আমাকে বিছানার উপর বসিয়ে দিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে হাতের মুঠো শক্ত করে চিৎকার করে সিকিউরিটি কে ডাকতে লাগলো। সাথে সাথে একজন সার্ভেন্ট এসে হাজির হলো আমাদের রুমে। রাজ দাঁত কিড়মিড় করে রাগ দেখিয়ে কর্কশ কন্ঠে বলল,
— আপনাদের হোটেলের ম্যানেজার কে ডাকুন। এই মুহূর্তে এখানে ডাকুন তাকে। তার সাথে কথা আছে আমার।
রাজ কে এমন রাগান্বিত হতে দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেল সার্ভেন্টটা। সে দ্রুত ম্যানেজারকে ডাকার জন্য ছুটে গেল। ওর দিকে তাকিয়ে যেন ভয় পেয়ে গেলাম আমিও। রাগে ওর চোখ মুখ একদম লাল রং হয়ে আছে। থরথর করে কাঁপছে ওর শরীর। বুঝতে পারছি অসম্ভব রেগে আছে ও। কিন্তু এখন আমার ওর চাইতেও বেশী ভয় লাগছে ওই বিড়ালটাকে ওইভাবে চোখের সামনে মরতে দেখে। বুঝতে পারছি না এখানে কারেন্ট আসলো কিভাবে? বেশ কিছুক্ষণ সময়ের মাঝেই হোটেলের ম্যানেজার এসে হাজির হলো আমাদের রুমে। তারপর রাজের দিকে তাকিয়ে মৃদু গলায় বললো,
— এনি প্রবলেম স্যার? আপনি এমন রেগে আছেন কেনো? মি আই হেল্প ইউ?
— এই রুমের চাবি আমার কাছে ছাড়া আর কার কাছে আছে?
— স্যার হোটেলের প্রতিটি রুমের চাবি’ই একটা কাস্টমারের কাছে আর একটা আমাদের কাছে থাকে। তেমনি এই রুমের চাবিও একটা আপনার কাছে আর একটা আমাদের কাছে আছে। কেনো স্যার কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
ম্যানেজারের কথার কোন উত্তর না দিয়ে ওনার হাত ধরে টানতে টানতে ওয়াশ রুমে নিয়ে গেল রাজ। তারপর উনাকে বাথটাবের পানির দিকে লক্ষ্য করে দেখিয়ে রাগি গলায় বলে উঠল,
— যদি তাই হয় তাহলে আপনারা বলুন এই কাজটা কে করেছে? আপনারা কেন এভাবে মারতে চাইছেন আমাদের? সব সত্যি করে বলবেন! এটা প্ল্যানিং কাজ ছাড়া আর কোন কিছু নয়। কিছুক্ষণ আগেও আমি এখানে ফ্রেশ হয়েছি। কই তখন তো আমার কারেন্ট লাগে নি! তাহলে এই এতোটুকু সময়ের মাঝে এখানে এভাবে কারেন্ট সিস্টেম কে করেছে? আজ এই বিড়ালের জায়গায় হয়তো আমার বা আমার স্ত্রীর কিছু হতে পারতো? আপনি বলুন এই কাজটা কে করেছে আমি এটার সঠিক প্রমাণ সহ জানতে চাই।
রাজের কথা শুনে আর বাথটাবের মধ্যে কারেন্ট সিস্টেম করে তার রেখে দেওয়া দেখে ম্যানেজার অনেক ঘাবড়ে গেলেন। উনি দরদর করে ঘামতে শুরু করলেন। তার মধ্যে রাজের এভাবে রাগ করতে দেখে যেন আরো বেশি অবস্থা খারাপ হলো তার। কারণ তারা খুব ভালোভাবেই জানেন রাজ কতটা পাওয়ারফুল একজন লোক। তাই সে রিকোয়েস্ট করে বলে উঠলেন,
— প্লিজ স্যার আপনি এভাবে হাইপার হবেন না। আমরা দেখছি কি করা যায়। আর আমাদের কোন লোক এরকম টা কখনোই করবেনা। আর আপনার সাথে তো কথাই নেই। নিশ্চয় এখানে অন্য কারো হাত আছে বা কোন এক্সিডেন্টলি এটা হয়ে গেছে। প্লিজ আপনি শান্ত হন আমি দেখছি কি করা যায়।
উনি এভাবে মিনতি করে বললে ও রাজকে যেন শান্ত করতে পারলেন না। কারণ ও অনেক বেশি রেগে আছে রাগের চোটে থর থর করে কাঁপছে পুরো শরীর। রাগ যেন মাথায় উঠে গিয়েছে ওর। চোখ দুটো রক্ত লাল হয়ে আছে। ওকে এভাবে রাগান্বিত হতে দেখে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে ম্যানেজার একজনকে ডেকে বললেন বাথটাব থেকে কারেন্ট এর তার সরিয়ে সেটাকে ঠিক করার জন্য। লোকটিও ম্যানেজার এর কথা মতো কাকে যেনো ডাকতে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। আমি শুধু চুপটি করে বিছানার এক কোণে বসে সবার সবকিছু দেখছি। ম্যানেজার অনেক আকুতি-মিনতি করে রাজের কাছে বলে রুম থেকে বিদায় হলেন। তারপর ও গুটিগুটি পায়ে আমার পাশে এসে বসল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে শান্ত করে নিয়ে মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করে বলল,
— রাহি মনে করে বলতো আমি যখন এই রুম থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম মানে তুমি তখন ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলে। তখন কি তোমার কারো কথা মনে হয়েছে বা তোমার এমন অনুভূতি হয়েছিল যে রুমে কেউ ঢুকেছে? আসলে আমি বাইরে থেকে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে গেলেও আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমি বাইরে যাবার পর এই রুমে অন্য কেউ ঢুকে ছিল। আর সে’ই এই কাজটা করেছে।
— আমার কোন কিছু মনে পড়ছে না রাজ। আমিতো কালকে রাতে কি হয়েছে সে সবই ভুলে গিয়েছি। তাহলে আপনি দরজা লাগিয়ে চলে যাওয়ার পর আমার ঘুম ভাঙার আগে রুমে কে এসেছিল আমি কিভাবে বলব বলুন? আমি তো ঘুম থেকে ওঠার পর আপনাকে সামনে দেখেছি। আর কাউকে নয়। বুঝতে পারছিনা কেউ কেন এমনটা করবে আমাদের সাথে। আমাকে কেনই বা কেউ মারতে চাইবে?
আমার কথার উত্তরে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল রাজ। তারপর কোন কিছু একটা ভেবে উঠে দাঁড়িয়ে দ্রুত দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে ম্যানেজারকে ডাকতে লাগলো। সেই মুহূর্তেই রুমের মাঝে প্রবেশ করল মিষ্টি। তারপর রাজের দিকে তাকিয়ে ওর হাত ধরে বলল,
— এই আংকেল, আংকেল! তুমি আমার বনিকে কোথাও দেখেছ? ওকে না আমি কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা। ও কি তোমাদের রুমে এসেছে?
মিষ্টির কথা শুনে রাজ এবার নিজেকে কিছুটা শক্ত করল। তারপর মিষ্টির সামনে হাটু গেরে বসে ওর গালে হাত দিয়ে বললো,
— মামনি তুমি একটু তোমার আব্বুকে ডেকে নিয়ে আসতে পারবে? উনার সাথে আমি একটু কথা বলতাম। একটু ডেকে নিয়ে আসো প্লিজ!
রাজের কথা শুনে চুপ করে কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে রইল মিষ্টি। তারপর মুচকি হেসে বলল,
— আচ্ছা আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।
কথাটা বলেই আব্বু আব্বু বলে ডাকতে ডাকতে দৌড়ে ওদের রুমের দিকে চলে গেল। মিষ্টি চলে যেতেই রাজ ছলছল চোখে আমার দিকে একবার তাকালো। তারপর আবার মিষ্টিদের রুমের দিকে তাকালো। আমি বেশ বুঝতে পারছি মিষ্টি বনির কথা বলায় রাজ কষ্ট পেয়েছে। এই ছোট্ট মিষ্টি মেয়েটি যখন জানতে পারবে ওর আদরের বিড়াল টা মারা গেছে! তখন কতই না কষ্ট পাবে ও। কথাটা ভাবতেই আমার বুকের মাঝে যেনো চিনচিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে। চোখ দুটো আপনা থেকেই ভিজে যাচ্ছে বার বার।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মিষ্টি ওর আব্বুর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে আমাদের রুমের কাছে চলে আসলো। মিষ্টি আর ওর আব্বুকে আসতে দেখে ওদের কাছে রাজ এগিয়ে গিয়ে প্রথমে হ্যান্ডশেক করল মিষ্টির আব্বুর সাথে। তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে গম্ভির কন্ঠে বলে উঠল,
— এভাবে আপনাকে বিরক্ত করার জন্যে সরি ভাইয়া। আসলে আপনার সাথে আমার কিছু কথা বলার আছে। মিষ্টির বিড়াল মানে বনি কে নিয়ে।
রাজের কথা শুনে মিষ্টির আব্বু একবার ওর দিকে আর একবার আমার দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালেন। তারপর জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে মৃদু গলায় বলে উঠলেন,
— কি হয়েছে আসলে বলুন তো? কিছুক্ষণ আগে দেখলাম হোটেলের ম্যানেজারের সাথে আপনি চিৎকার চেঁচামিচি করছেন! এনি প্রবলেম ব্রো?
উনার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাজ একে একে সবকিছু খুলে বললেন ওনাকে। সবকিছু শোনার পর উনি কিছুক্ষণ চুপ করে দম নিয়ে থেকে বলে উঠলেন,
— মিষ্টির বনিকে নিয়ে আপনারা টেনশন করবেন না। আমি মিষ্টিকে আরেকটা বিড়াল এনে দিবো বনির মতো। তবে আপনি একটি কাজ করে দেখতে পারেন মিস্টার রাজ। ওই যে দেখুন এখানে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। তাহলে নিশ্চয়ই আপনাদের রুমে আপনারা ছাড়া অন্য কেউ যাওয়া আসা করলে ওইটাতে দেখা যেতে পারে। আপনি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করছেন না কেনো?
লোকটির কথা শুনে রাজের চোখ মুখ চকচক করে উঠল। কারন এতক্ষণ এই আইডিয়াটা ওর মাথাতেই আসেনি। আসলে ও সিসি ক্যামেরাটা সেভাবে খেয়াল করেনি কখনো। ওর আইডিয়াটা মাথায় আসতেই মিষ্টির আব্বুকে সাথে নিয়ে দ্রুত চলে গেলো ও ম্যানেজারের কাছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করবেন বলে।
চলবে,,,,,,,,,,
Akta e kotha bolbo…. Writer kintu hebbi song banate pare🤣🤣🤣