You are my property,Part_43,44
M Sonali
Part-43
জানালা ভেদ করে সকালের মৃদু রোদ এসে চোখের ওপর পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল আমার। ঘুম ঘুম চোখে হাই তুলতে তুলতে চোখ মেলে তাকালাম আমি। আশেপাশে তাকিয়ে পুরো রুমটাতে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। তারপর বিছানার পাশে তাকিয়ে দেখি রাজ নেই। পুরো রুম টাতে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। ধীরে ধীরে উঠে বসে এদিক ওদিক তাকালাম একবার। তারপর ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাজ সেখানে আছে কিনা। কিন্তু না রাজ সেখানেও নেই। রুমের দরজা হালকা করে ভিড়িয়ে দেওয়া দেখে বুঝতে পারলাম রাজ হয়তো নিচে গেছে। তারপর সামনে থাকা দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম সকাল ৮.৪৫ মিনিট বেজে গেছে। এত বেলা অব্দি ঘুমিয়েছি আমি? ভাবতেই মাথায় যেনো বাজ পরলো আমার। এটা কি হলো? এত বেলা অব্দি তো কখনোই ঘুমাই না আমি। আমি দ্রুত বিছানা ছেড়ে নামার জন্য নিচে পা রাখলাম। আর তখনই বিছানার পাশে টেবিলের ওপর রাখা একটি ফুলের তোড়ার দিকে চোখ পরতেই থমকে গেলাম আমি। বিছানা ছেড়ে না নেমে বিছানার উপরে বসে থেকে ফুলের তোড়াটা হাতে নিলাম।
ওটা হাতে নিতেই একটি চিরকুট নজরে এলো আমার। যেটা ঐ ফুলের তোড়াটার নিচে রাখা ছিল। আমি চিরকুটটা হাতে নিয়ে ফুলের তোড়াটা পাশে রেখে দিয়ে চিরকুট টা খুলে পড়তে লাগলাম।
” জান খুব ইচ্ছে করছিল তোমাকে ডেকে তুলে সকালবেলা একটু ভালোবাসার পরশ নিয়ে যাই। কিন্তু কি করবো বল! তোমার ঐ ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখটা দেখার পর আমার আর সাহস হয়ে উঠল না তোমাকে ডেকে তোলার। তাই তোমাকে না বলেই অফিসে চলে গেলাম। আজ অফিসে ভীষণ জরুরী একটা মিটিং আছে তাই আর দেরি করতে পারলাম না। তুমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করে আমাকে একটা ফোন কোরো প্লিজ। আমি তোমার ফোনের জন্য অপেক্ষায় থাকবো। মিস ইউ জান এন্ড আই লাভ ইউ।”
চিরকুট টা পড়ে আনমনেই মুখে হাসি ফুটে উঠল আমার। চিরকুটটা বুকে জড়িয়ে নিয়ে ওনাকে অনুভব করলাম আমি। সত্যিই আমি খুব ভাগ্যবতী, তাই ওনার মতো একজন ভালবাসার মানুষ পেয়েছি আমি। উনি সত্যিই একটা পাগল। এতটা পাগলের মতো যে কেউ কারো স্ত্রী কে ভালবাসতে পারে উনাকে না দেখলে হয়তো জানতামই না! আমি ওনাকে এত এত জ্বালাতন করি তবুও কখনো একটুও রাগ করেননি উনি। বরং নিজের ভালোবাসা দিয়ে আমার সব রাগ ভুলিয়ে দেয়। কথাগুলো ভেবে মুচকি হাসি দিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম আমি। একটু পর ফ্রেশ হয়ে ফিরে এসে বালিশের পাশে থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে ওনার নাম্বারে ডায়াল করলাম আমি। একবার রিং হতেই ফোনটা রিসিভ করলেন উনি। হয়তো এতক্ষণ উনি আমার ফোনের জন্যেই অপেক্ষা করছিলেন। রিসিভ করেই মায়া জরানো গলায় বলে উঠলেন,
— জান ঘুম থেকে উঠেছো তুমি?
ওনার কথায় মুচকি হাসলাম আমি। তারপর দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে ছোট্ট করে বললাম,
— হুমম!
— চিরকুট টা পেয়েছিলে?
— হুমম!
— ফ্রেশ হয়েছো?
— হুমম!
— আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করবে না? কথা বলবেনা আমার সাথে? নাকি শুধু এই হুম হুম ই করতে থাকবে?
বেশ কর্কশ গলায় বললেন কথাটা উনি। উনার কথা শুনে আবারও মুচকি হাসলাম আমি। তারপর শান্ত গলায় বলে উঠলাম,
— আপনার না জরুরী মিটিং আছে? তাহলে আমার সাথে কথা বলছেন যে? আর একবার রিং হতেই সাথে সাথে ফোন রিসিভ করে ফেললেন কিভাবে?
আমার কথা শুনে উনি হালকা হেসে ঘোর লাগানো গলায় বলে উঠলেন,
–তোমার চাইতে জরুরি আমার কাছে অন্য কোন কিছুই নয় জান। আর মিটিং একটু পরে, এখন নয়। এতক্ষণ তোমার ফোনের অপেক্ষাই করছিলাম আমি।
উনার কথা শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেল আমার। ওনার মিটিং যদি আরেকটু পরেই থাকে, তাহলে কি প্রয়োজন ছিল এত সকাল সকাল আমাকে রেখে চলে যাওয়ার? আমি চুপ করে বসে রইলাম ওনার কথার কোন উত্তর দিলাম না। আমার কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে উনি আবার বলে উঠলেন,
— কি হল জান কথা বলবে না আমার সাথে? চুপ করে আছো কেন তুমি? জানো সকাল থেকে তোমার সাথে কথা বলতে পারিনি দেখে আমার কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছিল? তাইতো তোমার ফোনের অপেক্ষায় বসে ছিলাম এতক্ষণ।
— মিটিং যদি আরেকটু পরেই থাকে তাহলে কি দরকার ছিল এত তাড়াতাড়ি আমাকে না জাগিয়ে চলে যাওয়ার? আরেকটু পরে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো?
আমার কথার উত্তরে উনি শব্দ করে হেসে দিয়ে বললেন,
— আরে পাগলি মেয়ে আমি কি এত তাড়াতাড়ি এসেছি সাধে? এসেছি তোমার জন্যই। তোমার জন্য একটি সারপ্রাইজ আছে। সেটাই করতে হবে আর তাছাড়া মিটিং তার জন্য প্রিপারেশনও নিতে হতো নাকি?
— সারপ্রাইজ! কি সারপ্রাইজ আছে আমার জন্য? বলুন না প্লিজ। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে?
— উহুহ কি সারপ্রাইজ এখন বলে দিলে আর সেটা সারপ্রাইজ থাকবে নাকি? আমি অফিস থেকে ফিরে তোমাকে সব বলে দিবো। তুমি ওয়েট করো প্লিজ। এখন বলো ব্রেকফাস্ট করেছো?
— উহু এখনো করিনি।
— কি বলছ কি তুমি রাহি? এখন বেলা বাজে সাড়ে নয়টা! তুমি এখনো ব্রেকফাস্ট করোনি? যাও তাড়াতাড়ি গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নাও। আমি দশ মিনিট পর আবার ফোন দিবো। এর মাঝে তুমি যদি ব্রেকফাস্ট না করো, তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম। তাড়াতাড়ি যাও আর ব্রেকফাস্টটা করে নাও জান। আমি এখন ফোন রাখছি কেমন! আমাকে কিন্তু ব্রেকফাস্ট হয়েগেলে ফোন দিয়ে জানাবে যে তুমি ব্রেকফাস্ট করেছ। আমি ওয়েট করে থাকবো তোমার ফোনের।
— আপনাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না মিষ্টার বর মশাই। আমি খেয়ে নিচ্ছি আপনি আপনার মিটিং সামাল দেন। আর বাসায় একটু তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করেন। বাই
কথাটি বলেই ফোনটা কেটে দিলাম আমি। তারপর একা একাই হাসতে লাগলাম। এখন হয়তো উনিও হাসছেন। সত্যিই আমি ওনাকে একটু বেশিই জ্বালাতন করি। কথাগুলো ভেবে ফোনটা রেখে নিচের দিকে পা বাড়ালাম আমি। তারপর নিচে সিড়িতে গিয়ে দেখি আরিশা ডাইনিং টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছে। আমাকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ালো ও। ওকে উঠে দাঁড়াতে দেখে আমি ওর পাশে এগিয়ে গিয়ে বললাম,
— কি হলো আরিশা খাবার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালে কেনো?
আরিশা মুচকি হেসে বললো,
— এখনো খেতে বসি নি আমি। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম এতক্ষণ। দুজনে একসাথে খাব বলে। এসো একসাথে ব্রেকফাস্ট করা যাক।
ওর কথায় মুচকি হেসে দুজন মিলে পাশাপাশি চেয়ারে বসে বলে উঠলাম আমি,
— তুমি ব্রেকফাস্ট করে নিলেই পারতে! আমার উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেল আজ। এত বেলা অব্দি না খেয়ে আছো তুমি শুধু শুধু।
আমার কথায় আরিশা হেসে দিয়ে বললো,
— আরে সমস্যা নেই আমার অভ্যাস আছে। আমি তো আরো দেরীতে ব্রেকফাস্ট করি।
ওর কথায় আর কিছু না বলে দুজন মিলে খাবার খাওয়ায় মন দিলাম। খেতে খেতে আরিশা আবার বলে উঠল,
— জানো রাহি, আমি ভোরবেলা উঠে নিজের বাড়িতে যাবো বলে ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়েছিলাম। কিন্তু আরিয়ান এত জোর করলো না কি বলবো! জোর করেই বললো এখানে থাকতে। তুমি নাকি সারাদিন একা একা ফিল করো। তাই তোমার সাথে থেকে তোমাকে সময় দিতে বলল ও। নইলে এতক্ষণ তো আমি নিজের বাড়িতে চলে যেতাম।
আরিশার কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললাম আমি,
— কেন আরিশা? তুমি কেন চলে যেতে নিয়েছিলে? আরিয়ান তো ঠিকই বলেছে। আমি সারাদিন একদম একা একা খুব বোর হতাম বাসায়। তুমি আছো এখন একটা সঙ্গি আছে। দুজন মিলে খুব ভালো সময় কাটবে আমাদের। কি বল?
— হুমম আমিও তাই আর না করতে পারিনি।
আরিশার কথা শুনে মুচকি হেসে আবারও খাবারে মনোযোগ দিলাম দুজন। তারপর খাওয়া শেষ করে যখন উঠতে যাব তখন’ই রহিমা এসে দুজনের সামনে দুই বাটি পায়েস দিয়ে বললো,
— ম্যাডাম এটা আপনাদের জন্যে। খেয়ে নিন, খাবার শেষে মিষ্টি মুখ করতে হয়।
ওর কথা শুনে মুচকি হেসে ওর দিকে তাকিয়ে পায়েসের বাটিটা হাতে তুলে নিলাম আমি আর আরিশা। তারপর এক চামচ পায়েস মুখে দিতেই মনটা যেন জুড়িয়ে গেল আমার। সত্যিই মেয়েটির হাতের রান্নার তুলনা হয়না। অনেক সুন্দর রান্না করে ও। প্রতিটা খাবার’ই অনেক সুস্বাদু করে রান্না করতে পারে। আমি এক চামচ মুখে দিয়ে রহিমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললাম,
— সত্যিই রহিমা, তোমার হাতের কাজের তুলনা হয়না। প্রতিটি খাবার কি রকম নিখুঁত ভাবে তৈরি করো তুমি। খুবই ভালো লাগে তোমার তৈরি খাবার খেতে।
আমার কথা শুনে খুব খুশি হলো রহিমা। তারপরে হাসি দিয়ে বলল,
— ম্যাডাম আরেকটু পায়েস দেই?
— এখন নয় পরে খাবো আবার। এখনি এটুকুই থাক।
আমার পরে আরিশাও রহিমার রান্নার অনেক প্রশংসা করল। তারপর দুজন মিলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে উপরে ছাদে চলে গেলাম। আড্ডা দেওয়ার জন্য। আরিশা অনেক মিশুক একটা মেয়ে এবং অনেক মিষ্টি। ওর সাথে গল্প করতে গেলে কখন সময় কেটে যায় বোঝাই যায় না। দুজন মিলে বেশ জমে গেছে আমাদের। সারাক্ষণ গল্প করে কাটিয়ে দিচ্ছি সময়।
চলবে,,,,,,,,,,
You are my property
PART 44
M Sonali
সেই কখন থেকে রাজের পিছু পিছু এদিক থেকে ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি আমি। কিন্তু পাজিটা একটুও শান্ত হয়ে বসছে না। উনার সাথে অনেক কথা আছে, সেটা কিভাবে বোঝাবো ওনাকে। তাছাড়া উনার সারপ্রাইজটাও তো জানার আছে আমার। কিন্তু উনি আসার পর থেকে সেই তখন থেকে শুধু ফোনে কার সাথে যেন কথা বলে যাচ্ছেন। একটুর জন্যও আমাকে সময় দিচ্ছেন না। এবার বড্ড বেশি রাগ হচ্ছে আমার। ইচ্ছে করছে উনার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে একটা আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলি। অনেকক্ষণ এভাবে উনার পিছু পিছু হাঁটার পর এবার বেশ বিরক্ত লাগছে আমার। তাই আর উনার পিছু পিছু না হেটে চুপটি করে গিয়ে সোফায় বসে পড়লাম। উনি আরো কিছুক্ষণ এভাবে ফোনে কথা বলে ফোনটা পকেটে রেখে আমার পাশে এসে বসলেন। তারপর জোরে একটা নিশ্বাস ছেড়ে ভাবলেশহীন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— কী হয়েছে? এমন গাল ফুলিয়ে বসে আছো কেন?
— সেটা জেনে আপনি কি করবেন? আপনার কোনো ইচ্ছে আছে এটা জানার মত? আপনার হাবভাব দেখে আমার তো তা মনে হয়না! আপনি আসার পর থেকে যে আমি আপনার পিছু পিছু ঘুরে চলেছি সেটা কি আপনার নজরে পড়েনি? এটাই আপনার ভালোবাসা? সকালে তো চিরকুটে বেশ ভালোভাবেই লিখে দিয়েছিলেন, আমার সাথে কথা বলতে না পেরে আপনার দম বন্ধ হয়ে আসছে! তাহলে আসার পর থেকে তো একটুও কথা বললে না আমার সাথে? সেই তখন থেকে ফোনে কথা বলে চলেছেন। বলি আপনার বউ কি আমি? নাকি ফোনে যার সাথে কথা বলছিলেন সে? সেই কখন থেকে কথা বলেই যাচ্ছেন তো বলেই যাচ্ছেন। আমার দিকে তাকানোর সময় টুকুও নেই আপনার! এখন কথা থামালেন কেন হ্যা? বলুন না বলুন সারাদিন সারারাত কথা বলুন। আপনার কথা বলা শেষ করতে হবে না। আমি চললাম আমার বাপের বাড়ি।
কথাগুলো একনাগাড়ে বলে জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস টেনে তারপর রাগি চোখে উনার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালাম আমি। সামনের দিকে দু একপা বাড়াতেই উনি এসে আমার হাত ধরে বললেন,
— আরে আরে তুমি চলে গেলে আমি সার্প্রাইজ টা দেবো কাকে? আর আমার সাথে কক্সবাজার যাবে কে?
ওনার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে গম্ভির গলায় জিজ্ঞেস করলাম,
— কক্সবাজার যাবে মানে?
আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে পিছন থেকে আমাকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ গুজে দিয়ে উনি বলল,
— মানে আজ বিকেলে আমরা কক্সবাজার পাড়ি দিচ্ছি।
ওনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওনার দিকে ঘুরে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে উঠলাম,
— হঠাৎ কক্সবাজারে কেন যাব আমরা?
উনি আমার কথায় গম্ভীর মুখ করে অসহায় কণ্ঠে বললেন,
— আচ্ছা তুমি কি কোন কিছু বুঝতে পারো না রাহি? কক্সবাজার মানুষ কেন যায়? অবশ্যই ঘুরতে যায় তাই না? তোমাকে নিয়ে আমি সেখানে ঘুরতেই যাব। মানে হানিমুনে যাবো আমরা বুঝলে। সাতদিন সেখানেই থাকব। সেখানে আমাদের সাথে অন্য কেউ থাকবে না। শুধু তুমি আর আমি। সেখানে কোনো কাজ থাকবে না। সারাক্ষণ তুমি আর আমি একসাথে থাকবো। আর সারাদিন শুধু রোমান্স করব।
— রো রো রোমান্স করবো মানে?
— মানে তোমার তো বাচ্চা চাই তাইনা বলো? বাচ্চা তো আর এমনি এমনি আসবে না। সে জন্যে বাচ্চার বাবা মাকে একটু রোমান্টিক হতে হবে। একটু স্পেস থাকতে হবে সবার থেকে। তাহলেই তো সে আসবে। আর তাই এই ব্যাবস্থা বুঝলে। এখন কথা না বাড়িয়ে চলো। দুজন তাড়াতাড়ি খেয়ে নেই। রেডি হতে হবে তো, বিকাল চার টায় রওনা হতে হবে আমাদের।
ওনার কথায় বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম। লজ্জায় ওনার দিকে তাকানোরও সাহস হচ্ছে না আমার। তাই কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে সামলে নিলাম। তারপর দেওয়াল ঘড়িটার দিকে ফিরে তাকালাম। দেওয়াল ঘড়িতে অলরেডি তিনটা বাজতে চলল। আমি ওনার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বললাম,
— আপনার কি মাথা ঠিক আছে রাজ? আমরা চারটার সময় যদি এখান থেকে বের হই তাহলে এখন সময় আছে মাত্র এক ঘণ্টা। মাত্র এক ঘন্টার মাঝে কিভাবে রেডি হবো আমরা? আর তাছাড়া কক্সবাজার যেতে হলে তো নিজেদের একটা গোজ গাজও আছে তাই না? আমি কাপড় গোছাবো কখন আর নিজেই বা রেডি হবো কখন? আর আমার বাড়িতেও তো জানাতে হবে নাকি?
— কুল ম্যাডাম কুল। আপনাকে কোনো গোজগাজ করতে হবে না। আর আমি রাই আর রাকিব ভাইয়াকেও ফোন করে সব বলে দিয়েছি। তাই শুধু আপনাকে নিজে রেডি হতে হবে। কাপড় চোপড়ের গোছগাছ যেটা করতে হবে সেটাও করা আছে। তাই চিন্তা না করে এখন তাড়াতাড়ি চলো দুজন মিলে একসাথে লাঞ্চ টা করে নিয়ে রেডি হতে হবে।
কথাগুলো বলে আমার হাত নিচে নিয়ে আসতে লাগল রাজ। আমিও কিছু না বলে চুপ করে আসতে লাগলাম। নিচে আসতেই আরিশা আমাদের পাশে এগিয়ে সে বলে উঠল,
— কি ব্যাপার আরিয়ান? আসার পর থেকেই দেখছি তুমি কার সাথে যেন ফোনে কথা বলে চলেছো। আর রাহিও তোমার পিছে পিছে ঘুরে চলেছে। কি হয়েছে বলোতো, কিছু কি হয়েছে তোমাদের মাঝে?
ওর কথা শুনে রাজ মুচকি হেসে বলে উঠলো,
— তেমন কিছুই নয় আরিশা। আসলে আমরা বিকেলে কক্সবাজার যাচ্ছি। আর তাই এতক্ষণ ফোনে একটু কথা বলে সব ঠিকঠাক করছিলাম।
— হঠাৎ কক্সবাজার কেনো? এনি প্রবলেম আরিয়ান?
— নো প্রবলেম আরিশা। আসলে আমি রাহিকে নিয়ে কিছু দিনের জন্যে সেখানে ঘুরতে যাচ্ছি। আই মিন আমরা হানিমুনে যাচ্ছি।
হানিমুনের কথাটা শুনতেই আরিশার মুখে যেন এক রাশ মেঘ এসে জমলো। ওর মুখটা একদম কালো হয়ে গেল। আরিশা একদম চুপ হয়ে রাজের কথার কোন উত্তর না দিয়ে দ্রুত হেঁটে নিজের রুমের দিকে চলে গেল। ওর এমন আচরণে রাজ কিছু মনে না করলেও, ওর আচরণটা মোটেও আমার কাছে স্বাভাবিক লাগলো না। কেন জানি মনের মাঝে একটা খটকা লাগল। তবে কি আরিশা আমাকে নিয়ে জেলাস ফিল করছে? রাজের সাথে আমাকে দেখে সহ্য করতে পারছে না ও? কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা নয়। যদিও আমি জানি আরিশা আজকে পছন্দ করে। তাই বলে ও তো এখন জানে যে রাজ শুধু আমাকে ভালবাসে। আর আমি তার বিয়ে করা বউ। এখন কি আমাকে নিয়ে জেলাস ফিল করা ঠিক ওর? এসব ভাবতে ভাবতেই রাজ আমায় ডেকে বলে উঠল,
— কই রাহি আবার দাঁড়িয়ে রইলে কেনো? জলদি আসো আমাদের খেয়ে রেডি হতে হবে তো।
ওর কথার উত্তরে মৃদু হেসে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলাম আমি। খাবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলেও মনের মাঝে একটা খটকা থেকেই গেলো আরিশাকে নিয়ে।
আমাদের সামনে খাবার রেডি করে দিতে দিতে মুচকি হেসে বলে উঠলো রহিমা,
— স্যার, ম্যাডাম আপনারা বুঝে হানিমুনে যাবেন কক্সবাজারে? বিয়ের পর সব জামাই বউ’ই হানিমুনে যায়। আপনারাও মনে হয় সেখানে যাইতাছেন। সেখানে খুব মজা হইব তাই না স্যার?
— হ্যা রহিমা আমরা কক্সবাজারেই যাচ্ছি। কেন ওখান থেকে তোমার জন্য কিছু আনতে হবে? কিছু লাগলে বলে দাও, তোমার জন্য আসার সময় নিয়ে আসবো আমরা।
আমার কথা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে রহিমা বলে উঠলো,
— আরে ম্যাডাম, আসলে আমি তো এটাই বলতে চাইছিলাম। কিন্তু কিভাবে বলব বুঝতে পারছিলাম না। আমি শুনছি ঐ কক্সবাজারে নাকি শামুকের তৈরী অনেক কিছু পাওয়া যায়। এই যেমন শামুকের দুল, শামুকের মালা, শামুকের কিলিপ। আমার না সেগুলো পড়ার খুব শখ। আপনারা ঐ খান থেকে আসার সময় আমার জন্যে ওগুলা নিয়া আইসেন। আর তার বদলে আমার বেতন থেকে টাকা কেটে দিয়েন।
রহিমার কথায় হেসে ফেললাম আমরা দুজন। তারপর মৃদু হেসে রাজ বললো,
— তোমার বেতন থেকে কাটতে হবে না রহিমা। তোমার জন্য আসার সময় এমনিতেই ওগুলো নিয়ে আসবো আমরা। তুমি চিন্তা করো না। এখন তাড়াতাড়ি আমাদের খেতে দাও দেরি হয়ে যাচ্ছে।
তারপর দুজন মিলে দ্রুত খেয়ে রুমে চলে এলাম। তারপর যত দ্রুত সম্ভব রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। এখন সারে তিনটা বাজে। বাইরে বের হয়ে আরিশা আর রহিমার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরলাম আমরা। বের হওয়ার সময় আরিশার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না। একদম মেঘে ঢেকে ছিলো ওর মুখটা। ও যে মন থেকে মোটেও খুশি নয়। এটা বেশ ভালই বুঝতে পেরেছি আমি।
বাইরে বের হয়ে গাড়ির কাছে আসতেই থমকে দাঁড়ালাম আমরা। কারণ সেখানে একটি অচেনা লোক দাঁড়িয়ে আছে। লোকটির দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি লোকটি কে। তখনই লোকটা দৌড়ে রাজের সামনে এসে বলে উঠলো,
— ভালো আছেন স্যার? আমারে চিনতে পারছেন? আমি রাজু, রাজু অটো ড্রাইভার।
লোটির নাম শুনে চিনতে পেরে রাজ মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
— হ্যাঁ, হ্যাঁ কেনো চিনতে পারবো না। চিনতে পেরেছি তোমায়। কিন্তু তুমি এখানে কি করছ? আর আমার বাসায চিনলেই বা কি করে?
রাজু ড্রাইভার তখন হেসে দিয়ে বলে উঠলো,
— ভুলে গেছেন স্যার আপনে না আমারে আপনের বাড়ির ঠিকানা দিছিলেন, আর বলছিলেন কোন দরকার পরলে আপনের কাছে আইতে। তাই আমি আপনের কাছে আসছি। আসলে আমার একটা কাজের খুব দরকার এখন। আপনি কি আমায় একটা কাজ দিতে পারবেন?
উনার কথা শুনে বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে কিছু একটা ভাবল রাজ। তারপর মৃদু হেসে বলে উঠল,
— তুমি প্রাইভেট গাড়ি চালাতে জানো?
রাজের কথা শুনে লোকটি এক মুহূর্ত দেরি না করে বলে উঠল,
— হ স্যার আমি সব গাড়ি চালাতে জানি। প্রাইভেট গাড়ি চালানো তো আমার বাঁহাতের খেল।
— তাহলে আর চিন্তা কিসের আজ থেকেই তোমাকে চাকরি দিয়ে দিলাম। তুমি আমাদেরকে গাড়িতে করে নিয়ে কক্সবাজার যাবে আজকে আর এখনি। আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি কয়েক দিনের জন্যে। তুমিও চলো আমাদের সাথে। বাই দ্যা ওয়ে, তোমার কোনো সমস্যা নাই তো?
— না না স্যার, আমার কোনো সমস্যা নাই। আমি অবশ্যই আপনার লগে যামু। খালি যাওয়ার আগে রাস্তাতেই আমার বাড়ি পরে সেখান থিকা আমার কিছু কাপড় চোপড় নিয়া যামুনি।
— তাহলে দেরি কিসের চলো যাওয়া যাক। আর শোনো সেখানে আমরা বেশ কয়েকদিন থাকবো। তোমাকেও কিন্তু আমাদের সাথে সেখানেই থাকতে হবে। আর একটা কথা, আমি চেয়েছিলাম নিজেই ড্রাইভিং করে তোমার ভাবিকে নিয়ে যেতে। কিন্তু যেহেতু তুমি সাথে যাচ্ছ তাই আমিও আর ড্রাইভিং করবো না। ওখানে যেখানে যেখানে যেতে হবে তুমি আমাদেরকে নিয়ে যাবে ঠিক আছে?
— স্যার এইটা নিয়ে আপনে কোন চিন্তা করবেন না। সব আমি করমু যা করা লাগে আপনাগো লাইগা।
কথাটা বলেই আমরা কক্সবাজার এর জন্য বেরিয়ে পড়লাম। আর রাজু নামের অটো ড্রাইভারটা গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো। আমরা পিছন সিটে বসেছি আর ড্রাইভারটা সামনে। লোকটার আচার-ব্যবহার কেমন যেনো রহস্যজনক লাগছে আমার কাছে। তাই রাজুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
— আচ্ছা রাজ এভাবে একটা অপরিচিত লোককে আমাদের সাথে নিয়ে যাওয়া কি খুবই জরুরী ছিল? মানে হঠাৎ করে এসে চাকরি চাইল আর আপনি দিয়ে দিলেন? আর উনিও সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল। এভাবে আমাদের সাথে কয়েকদিনের জন্য যাওয়ার জন্য। এটা কি ঠিক হলো বলেন? আমার কাছে কিন্তু লোকটাকে মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না।
আমার কথার উত্তরে রাজ এক হাত দিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বলল,
— আরে ধুর পাগলী তুমি শুধু শুধুই চিন্তা করছ। এটা কে জানো? তোমার বলা মিথ্যা কথায় যাকে ধরে আমরা পিটিয়ে ছিলাম। এটা সেই অটো ড্রাইভার রাজু। শুধুশুধু বেচারারে অনেক মেরেছিলাম সেদিন আমরা। তখন বুঝতে পেরেছিলাম লোকটা বেশ ভালো। সেদিন ওনাকে টাকা দিয়েছিলাম সে টাকা টাও নিতে চাইনি। পরে বলেছিলাম যে কোন প্রয়োজনে তাকে সাহায্য করবো। তাহলে আজ যখন সে প্রয়োজনে আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে আমি কি করে তাকে ফিরিয়ে দেবো বলো? তুমি এসব নিয়ে ভেবনা তো। কিচ্ছু হবে না। আর তাছাড়া এই লোকটাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়।
রাজের কথার উত্তরে আমি চুপ করে গেলাম। আর কিছু বললাম না। আসলে কি বলব সেটাই খুঁজে পেলাম না। তাই চুপ করে থাকাই বেটার মনে করলাম। তবে কেন জানিনা এই লোকটিকে নিয়ে বেশ খটকা লাগছে আমার। বেছে বেছে এই সময়টায় তেই আসার সময় হলো উনার? আর এক কথায় আমাদের সাথে যাওয়ার জন্যও রেডি হয়ে গেলো। তাই মোটেও ব্যাপারটা স্বাভাবিক লাগছে না আমার কাছে। যদিও জানি আমার এই ভাবনার কোন ভ্যালু নেই। হয়তো রাজ’ই ঠিক বলছে। তবুও কেন জানি বারবার মনের মাঝে বড্ড কু ডাকছে আমার।
চলবে,,,,,,,,,,