You are my property,Part_39,40
M Sonali
Part-39
সকালের মিষ্টি রোদ চোখে এসে লাগতেই ঘুম ভেঙে গেল আমার। ঢুলুঢুলু চোখে পাশে তাকিয়ে দেখি রাজ আমার পাশে নেই। হয়তো অনেক আগেই উঠে গেছে ও। সামনে থাকা দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখি সকাল ৮.৩০ মিনিট বেজে গেছে। ইস নতুন বউ হয়ে এত বেলা পর্যন্ত ঘুম পাড়া একদম উচিত হয়নি আমার। তাই দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে পরে, কাপড়-চোপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম ওয়াশরুমে। যত দ্রুত সম্ভব ফ্রেস হয়ে বেড়িয়ে রান্নার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে আমায়, এটা ভেবে। কারন বাসায় আমি আর রাজ ছাড়া তো আর কেউ নেই। তাহলে রান্নাটা নিশ্চয়ই আমাকেই করতে হবে! আম্মুর কাছে অবশ্য টুকিটাকি বেশ ভালই রান্না শিখেছি আমি। তাই কোন সমস্যা হবে না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ফ্রেশ হয়ে একটি নীল রঙের শাড়ি পড়ে বের হয়ে এলাম আমি। বাইরে বের হয়ে আয়নার সামনে গিয়ে চুল মুছে চিরুনি করে নিলাম। তারপর আঁচলটা কোমরে গুঁজে প্রথমে বিছানাটা পরিস্কার করে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখলাম। পুরো রুমটা বেশ ভালো মতো গুছিয়ে পরিস্কার করে বাইরের দিকে পা বাড়ালাম রান্না করবো বলে। দরজার কাছে আসতেই বেখেয়ালে রাজের সাথে খুব জোরে ধাক্কা খেলাম আমি। ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে যেতে নিলাম আর তখনি রাজ আমার কোমর জড়িয়ে ধরে আমাকে আটকে ফেলল। তারপর উত্তেজিত গলায় বললো,
— এত তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাচ্ছ হুমম? এখনি তো পরে গিয়ে কোমর ভাঙতে।
ওর কথায় আমি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ওর কাছ থেকে একটু সরে এসে বললাম,
— সরি রাজ প্রথম দিনেই এত দেরিতে ঘুম থেকে উঠলাম আমি। আসলে রাতে ঘুমাতে একটু দেরি হয়েছে তো তাই সকালে ঘুম ভাঙেনি। আপনি একটু ওয়েট করুন আমি এখনই আপনার জন্য খাবার বানিয়ে দিচ্ছি।
কথাটি বলেই বাইরের দিকে আবারও পা বাড়ালাম আমি। তখনই উনি আমার হাত ধরে আটকে দিয়ে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর আমার চুলে মুখ গুঁজে জোরে একটি নিশ্বাস নিয়ে বলে উঠলেন,
— আমি কি তোমাকে বলেছি আমার জন্য খাবার বানাতে? তোমাকে কিছুই করতে হবে না। বরং আজকে তোমায় একটা সারপ্রাইজ দিবো চলো আমার সাথে।
কথাটি বলেই আমাকে কোলে তুলে নিলেন উনি। উনার এমন আচরণে অবাক হয়ে গেলাম আমি। তবে মুখে কিছুই না বলে ওনার গলা জরিয়ে ধরে ওনার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম। আর মনে মনে বলতে লাগলাম,
— ইশশ আমার বরটা এত কিউট কেন? দেখলেই মন চায় গাপুসগুপুস করে খেয়ে ফেলি। নয়তো সারাদিন শুধু তাকিয়েই থাকি। এতটা মিষ্টিও কি কারো বর হয়?
এসব কথা ভাবছি আর ওনার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছি আমি। উনি সামনে একটু হেঁটে আবার থেমে গেলেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে আমার নাকের সাথে নিজের নাকটা ঘষে নিয়ে বলে উঠলেন,
— এভাবে তাকিও না জান, হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে।
ওনার কথায় এবার বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি। তাই দ্রুত উনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে ওনার বুকে নিজের মুখ লুকালাম। উনি আমাকে কোলে করে আরেকটু শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে সামনের দিকে হাটা দিলেন। তারপর সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে সোজা ডাইনিং টেবিলে নিয়ে গেলেন। তারপর একটি চেয়ার টেনে আমাকে চেয়ারের ওপর বসিয়ে দিয়ে সামনে থাকা খাবারের ঢাকনাগুলো খুলে দিলেন উনি। গরুর মাংস, মুরগির রোষ্ট, ছোট মাছের চড়চড়ি, ডিম ভুনা, লাল শাক, সালাদ, আর ভাত রাখা আছে। সব খাবারগুলোর ঢাকনা খুলে দিয়ে উনি বললেন,
— এই নিন মহারানী, যেটা খুশি খেতে পারেন!
আমি এতগুলো খাবার দেখে অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
— এই এত খাবার কে খাবে? কি দরকার ছিল আপনার হোটেল থেকে এত খাবার কিনে আনার? আমি নিজেই বানিয়ে নিতাম।
আমার কথায় উনি আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিস ফিস করে বললেন,
— তোমাকে কে বলেছে এগুলো হোটেলের খাবার? এগুলো আমি নিজে হাতে বানিয়েছি আমার মনের রানীর জন্যে।
ওনার কথা শুনে আমি বিস্ফোরিত চোখে তাকালাম উনার দিকে। তারপর উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলাম,
— এসব কি বলছেন আপনি? এগুলো আপনি বানিয়েছেন মানে?
— জি ম্যাম এই সবগুলো জিনিস আমি বানিয়েছি। শুধুমাত্র তোমার জন্য। তুমি আমাকে বলেছিলে না, যে আমি রান্না বান্না পারি কিনা? বিয়ের পর তোমাকে রান্না করে খাওয়াতে পারব কিনা? দেখো আমি কত কিছু শিখে ফেলেছি শুধু তোমার কথা রাখার জন্য। গত 15 দিনে আমি সব রকম রান্না শিখে নিয়েছি। তোমায় রান্না করে খাওয়াবো বলে।
ওনার কথা শুনে আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে। এসব কি বলছেন উনি? আমি মজা করে কি একবার বলেছিলাম আর উনি সত্যি সত্যিই এত রান্না শিখে ফেললেন? এমন কি রান্না করেও ফেললেন আমার জন্যে? আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি এবার আমার মুখোমুখি মুখ নিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠল,
— কি ব্যাপার জান তুমি কি আমার দিকে শুধু এভাবে তাকিয়েই থাকবে! নাকি এগুলো টেস্ট করে দেখে একটু প্রশংসাও করবে আমার রান্নার?
আমি ওনাকে কি বলব বুঝতে পারছি না। তবে সত্যিই আজকে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান স্ত্রী মনে হচ্ছে। যে কিনা এমন একজন স্বামী পেয়েছি। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে কোন কথা না বলে ডাইরেক্ট ওনাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। আমাকে এমন করে জড়িয়ে ধরতে দেখে উনি পাথরের মূর্তির মত চুপ করে দাড়িয়ে রইলেন। এভাবে বেশ কিছুক্ষন কেটে যাওয়ার পর উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
— আমার কিন্তু বড্ড খিদে লেগেছে রাহি ।সেই ভোর ৫ টা থেকে রান্না করছি। খুধায় এখন পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। প্লিজ খাবারটা টেস্ট করে একটু বলো না কেমন হয়েছে? অনেক কষ্ট করে রান্না করেছি তোমার জন্য।
ওনার কথা শুনে ওনাকে ছেড়ে দিয়ে মুচকি হেসে বললাম,
— আমি জানি আপনার রান্না অনেক মজা হয়েছে।
কথাটি বলেই আবারও চেয়ারে বসে প্লেটের মধ্যে সব খাবার একটু একটু করে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম আমি। প্রতিটি খাবার’ই অসাধারণ হয়েছে। সত্যিই ওনার হাতে জাদু আছে বলতে হয়। খাবার খেতে খেতে আমি খাবারের প্রশংসা করতেই ভুলে গেছি। এদিকে উনি যে আমার খাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে সেদিকে আমার খেয়ালই নেই।
খেতে খেতে হঠাৎ ওনার দিকে চোখ পড়তেই থেমে গেলাম আমি। উনি হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। থেমে গিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচের দিকে দিয়ে বলে উঠলাম,
— সরি, আসলে খাবারটা এত টেষ্টি হয়েছে যে কি বলব। খাবার সময় সবকিছু ভুলে গেছি আমি। সত্যিই আপনার হাতের রান্না অসাধারণ, ঠিক আপনার নিজের মতই।
উনি আমার কথা শুনে কোনো উত্তর না দিয়ে একটানে আমাকে চেয়ার থেকে উঠিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে নিলেন। তারপর বলে উঠলেন,
— তোমার খাওয়া শেষ তাই না? এবার আমাকে খাইয়ে দাও। অনেক কষ্ট করে রান্না করেছি। এখন আর নিজে হাতে খেতে পারবো না।
ওনার কথায় বেশ লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ঠিক আছে আমি খাইয়ে দিচ্ছি। কিন্তু এভাবে কি করে খাওয়াবো?
কথাটি বলে ওনার কোল থেকে উঠতে নিলে উনি আরো শক্ত করে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বললেন,
— এভাবেই খাওয়াতে হবে। কোন বাহানা চলবে না। নাও আমি হাঁ করছি জলদি খাইয়ে দাও।
কোন উপায় না দেখে আমি একটা প্লেটে খাবার নিতে নিলে উনি আবার ও আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
— এই প্লেটে নয় তুমি যে প্লেটে খেয়েছ সেটাতে নাও।
— কিন্তু ওটা তো আমার এঠো করা প্লেট?
— তাতে কি ওটা কোন এঠো হয়নি। তুমি ওই প্লেটে নিয়েই আমাকে খাইয়ে দেবে বুঝলে। জানোনা এক প্লেটে খেলে ভালোবাসা বাড়ে? এখন দেরি করো না তো জলদি খাইয়ে দাও বড্ড খিদে লেগেছে আমার।
উনার কথায় আর কোন কিছু না বলে আমি আগের প্লেটটাতেই খাবার নিয়ে ওনাকে নিজ হাতে অনেক যত্নসহকারে খাইয়ে দিলাম। তারপর পানি দিয়ে ওনার মুখ ধুয়ে নিজের আঁচল দিয়ে মুছে দিলাম। তারপর উঠতে নিলেই উনি বলে উঠলেন,
— উঠছো কেন? আমি কি তোমাকে উঠতে বলেছি? এখনো তো খাওয়া বাকি আছে আমার।
উনার কথায় উনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম আমি,
— আর কি খাওয়া বাকি আছে আপনার? আমি তো আপনাকে সবই খাওয়ালাম?
— আরে খাবার পরে মিষ্টিমুখ করতে হয় জানো না তুমি? আমিতো এখনও মিষ্টিটাই খাইনি।
— কিন্তু এখানে তো মিষ্টি কোনো কিছুই দেখছি না? আচ্ছা আপনি বসুন আমি ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে আসছি।
কথাটি বলে আবারও ওনার কোল থেকে উঠতে নিলে উনি আবারও আমাকে আটকে দিয়ে বললেন,
— আমি ঐ মিষ্টির কথা বলিনি। আমি এই মিষ্টির (ঠোটে ইশারা করে) কথা বলেছি।
উনার কথায় বড্ড লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি। বড় বড় চোখ করে ওনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
— মাম মাম মানে?
— মানে এটা ( কচু আর জানতে হবে না😁)
———————————-
সকাল থেকেই রুমের মাঝে চুপ করে শুয়ে আছে রাই। কারো সাথে কোন কথা বলছে না। রাকিব বেশ কয়েকবার রুমে এসে ঘুরে গেছে। কিন্তু ও আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি রাই কে। হয়তো কালকে সারাদিনের ব্যস্ততার কারণে ক্লান্ত ও। তাই আর বেশি কিছু বলেনি ওকে। কিন্তু এবার অনেক বেলা হয়ে যাওয়ার পরেও রাই রুম থেকে বের হচ্ছে না চুপ করে বিছানার উপর শুয়ে আছে। তাই রাকিব রুমে এসে রাই এর পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
— কি হয়েছে রাই? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? এভাবে শুয়ে আছো কেনো?
রাকিবের কথার উত্তরে কোন কিছু না বলে ওর দিকে ঘুরে রাকিবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাই। রাকিব তখনই খেয়াল করে রাই এর দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। ওকে কান্না করতে দেখে রাকিব বেশ উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
— কি হয়েছে রাইশা? তুমি এভাবে কান্না করছো কেন? তোমাকে কেউ কিছু বলেছে? কি হয়েছে বল আমায়? সকাল থেকে এভাবে কেন শুয়ে আছ তুমি? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে বল আমায়? কি হয়েছে তোমার রাই?
রাকিব কে এমন উত্তেজিত হতে দেখে রাকিবের বুকে মুখ গুঁজে আস্তে করে বলে উঠল রাই,
— আমি প্রেগন্যান্ট রাকিব। তুমি বাবা হতে চলেছো, আর আমি মা!
রাই এর কথাটা শুনতেই যেন থমকে যায় রাকিব। বেশ কিছুক্ষণ নীরব নিস্তব্ধতা ছেয়ে যায় পুরো রুমজুড়ে। রাকিবের কানে যেন কথাটি বারবার বাজতে থাকে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর রাকিব রাই এর মুখটা নিজের বুক থেকে তুলে উত্তেজিত হয়ে জোরে শব্দ করে বলে উঠে,
— সত্যি বলছো তুমি রাইশা? সত্যি আমি বাবা হতে চলেছি আর তুমি মা? এতবড় একটা গুড নিউজ পাবো আমি সেটা ভাবতেও পারিনি।
রাকিবের কথা শুনে ওর বুকে লজ্জায় মুখ লুকায় রাই। পুরো বাসা জুরে সুরু হয়ে যায় আনন্দ আর খুশির উল্লাস। রাকিব রাহির কাছে ফোন করেও কথাটি জানিয়ে দেয়। সবার মাঝে এমন আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।
চলবে,,,,,
You are my property
Part 40
M Sonali
বাইরে আলো ফুরিয়ে হালকা অন্ধকার হয়ে এসেছে চারিদিকে। জানালার পর্দাগুলো বারবার দমকা বাতাসে উড়ে উড়ে আবার শান্ত হয়ে পরছে। সেই সাথে দমকা হাওয়া এসে আছড়ে পরছে আমার মুখে। সন্ধ্যা হয়ে এলো বুঝি। বেশ ভালো লাগছে এখনকার অনুভূতিটা। রাই আমার সামনে বসে সেই কখন থেকে আচার খেয়ে চলেছে। আমি চুপটি করে ওর সামনে বসে ওর আচার খাওয়া দেখছি আর ওর অনুভূতিটা উপভোগ করছি। মা হওয়ার অনুভূতিটা সত্যিই কত মিষ্টি হয় তাই না? গত 10 দিন হলো এ বাসায় এসেছি আমি। এই 10 দিন হল বেশ ভালোভাবেই দেখতে পাচ্ছি রাইয়ের কাজগুলো। সব সময় পেটের খুব কেয়ার করে চলাফেরা করে ও। অনেক সময় দেখেছি একা একা বসে থাকলে পেটে হাত বুলাচ্ছে। একা একাই বিড়বিড় করে পেটের দিকে তাকিয়ে কিছু বলছে। আবার নিজে নিজেই হাসছে। ভীষণ ভালো লাগে আমার ওর এই অনুভূতি গুলো দেখে। এটাই বুঝি মা হওয়ার প্রথম অনুভূতি একটি মেয়ের জীবনে। আমি যখন রাই এর দিকে তাকিয়ে এসব কথা ভাবতে বাস্ত। তখনই ও আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে উঠল,
— কি ব্যাপার ভাবি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছো?এই নাও আচার খাও, আমি তো একা একাই খেয়ে চলেছি সেই তখন থেকে। তুমিও একটু খাও! ওর কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম আমি,
— আমার খাওয়ার সময় হলে আমিও খাবো। এখন তুমি খাও ভাবিজান। আর তাছাড়া এখন তো তোমারই বেশি বেশি খেতে হবে বল! আমার ভাগ্নে টা যেন অনেক কিউট আর সুন্দর হয় ঠিক তোমার মত বুঝলে। বেশি বেশি খাবে আর নিজের যত্ন নিবে তাহলে তোমার বেবিটা অনেক কিউট আর গুলুমুলু হবে। আমি যেন ওকে গাল টিপে দিয়ে আদর করতে পারি।
আমার কথা শুনে রাই মুচকি হেসে বলল,
— সেটা না হয় বুঝলাম, কিন্তু আমি ভাগ্নে-ভাগ্নি মুখ দেখবো কবে হ্যাঁ? তুমিও তো এখন একটি ছেলে পুলে নিতে পারো নাকি? একসাথে দুজনের ছেলে মেয়ে হলে, একসাথে বড় হবে ওরা। একসাথে স্কুলে পড়তে যাবে। বড় হলে ওদের বিয়ে দিয়ে দিব। কী বলো? ননদ-ভাবী থেকে বিয়ান হয়ে যাব তখন ভালো হবে না?
রাই এর কথা শুনে চুপ করে কিছুক্ষণ বসে রইলাম আমি। তবে ওর প্রশ্নের কোন উত্তর দিলাম না। তারপরে ওকে কিছু না বলেই আচমকা উঠে নিজের রুমের দিকে দৌড় লাগালাম। রাই আমার সিন দেখে বেকুবের মত আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। কি হলো কিছুই হয়তো বুঝতে পারেনি ও। কিন্তু আমার মাথার মধ্যে যে একটা আইডিয়া চলছে সেটা তো আর ও জানে না। আমি সোজা নিজের রুমে এসে বিছানার ওপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে রাজের কাছে ফোন লাগালাম। দুবার রিং হতেই ফোন রিসিভ করলো ও,
— হ্যালো জান তুমি আমায় ফোন করেছো? আমি তো ভাবতেই পারছি না!
ওনার কথা শুনে গম্ভীর গলায় বলে উঠলাম আমি,
— ভাবতে যখন পারছেন না তাহলে আর ভাবতে হবে ও না। এখন বলুন আপনি বাসায় কখন আসবেন? আমি আপনার সাথে ও বাড়ি যাব।
উনি আমার কথা শুনে চমকে উঠে বলে উঠলেন,
— সত্যি বলছো জান তুমি বাড়ি আসবে? কিন্তু হঠাৎ বাড়ি আসতে চাইছো যে কিছুকি হয়েছে?
উনার কথা শুনে এবার বেশ বিরক্তি নিয়ে কর্কশ গলায় বললাম আমি,
— কেন বিয়ে করে কি বউকে শুধু শ্বশুর বাড়িতেই ফেলে রাখবেন? নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা নেই আপনার?
আমার এমন কথায় যে উনি বড়সড় একটা শখ খেয়েছেন এটা আর বলতে হবেনা। আমি বেশ ভালই বুঝতে পারছি। উনি অবাক হয়ে বলে উঠলেন,
— কি হয়েছে রাহি তোমার? তুমি হঠাৎ এভাবে কথা বলছ কেন? তুমি জোর করে ও বাসায় থাকতে চেয়েছ বলেই তো তোমাকে আমি ওখানে থাকতে দিয়েছি। কিন্তু তুমি হঠাৎ এভাবে আসতে চাইলে তাই জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে। কিন্তু তুমি তার উত্তর না দিয়ে হঠাৎ এমন করে কথা বলছ কেন?
উনার কথার উত্তরে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলাম আমি,
— সেটা আপনাকে বলতে হবে না। আপনি জলদি করে আসুন আর আমাকে ও বাসায় নিয়ে চলুন। আমি আর এখানে থাকতে চাই না। বুঝলেন?
কথাটা বলেই চট করে ফোনটা কেটে দিলাম আমি। জানি এখন উনার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গেছে। হঠাৎ করে আমি কেনো এমন করলাম তা নিয়ে হয়তো অনেক চিন্তায় পরে গেছেন উনি। তাতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসে না। কারন ওনাকে তো এবার আমি আবার মজা দেখাবো।বসে বসে কথাগুলো ভেবেই আলমারির কাছে চলে গেলাম আমি। তারপর লাগেজটা বের করে তার মাঝে জামা কাপড় গুলো সব গুছিয়ে তুলতে লাগলাম। একটু পরেই রাজ আসলে বাসায় চলে যাব বলে। তখনই রুমের মাঝে এসে প্রবেশ করল রাই। আর এসে আমাকে কাপড়-চোপড় গোছাতে দেখে অবাক হয়ে আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল,
— কি হয়েছে ভাবি তুমি হঠাৎ এভাবে কাপড় গুছাচ্ছ কেনো? কোথায় যাচ্ছো তুমি?
ওর কথার উত্তরে আমি ওর দিকে না তাকিয়েই বলে উঠলাম,
— শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি। বাবার বাড়িতে আর কত দিনই বা থাকবো।
— মানে? এসব কি বলছ তুমি ভাবি? হঠাৎ কি হল তোমার, তুমি এভাবে কেন চলে যেতে চাইছ বলতো? আমার কথায় কি রাগ করেছো তুমি? কি হয়েছে তোমার প্লিজ বলো আমায়।
আমি শান্ত হয়ে রাইকে আমার পাশে বসিয়ে নিয়ে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম,
— ও বাড়ি যাচ্ছি তোমার ভাইয়াকে শাস্তি দিব বলে। তোমার আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। অথচ তুমি মা হতে চলেছো, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি কেন মা হলাম না? আমার পেটে কেন তোমার মত বেবি এলো না? এজন্য তোমার ভাইয়াকে শাস্তি দিতে যাচ্ছি বুঝলে? এখন আর কাউকে কিছু বল না। আমাকে চুপ করে চলে যেতে দাও পরে তোমাকে সব বলবো আমি, আমার কিউটি ননদিনী টা।
আমার কথা শুনে বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকাল রাই। তারপর বিস্ফোরিত কন্ঠে বলে উঠল,
— ভাবি তোমার মাথা কি ঠিক আছে? আই মিন তুমি কি সুস্থ আছো নাকি পাগল হয়ে গেছো বলতো? আমার কিন্তু সত্যিই এবার সন্দেহ হচ্ছে?
ওর কথা শুনে আমি ভাবলেশহীন ভাবে কাপড়-চোপড় গোছাতে গোছাতে বলে উঠলাম,
— সে তোমার যেটা খুশি সেটা ভাবতে পারো রাই। এখন আমাকে ডিস্টার্ব না করে বরং কাজে একটু হেল্প করো। অনেক কাপড় চোপড় গোছাতে হবে।
রাই আমার কথা শুনে আমার পাশে এসে আমার হাত ধরে বলল,
— আজকে না গেলে হয়না ভাবি? তুমি গেলে অনেক মিস করবো তোমায়। গত দশদিন হল একসাথে খুব ভালো সময় কেটেছে তোমার সাথে। তুমি ছাড়া ভীষণ একা একা ফিল করবো এখানে।
— তাহলে নিজের রুমে যাও আর নিজের কাপড়চোপড় গুলো গুছিয়ে রেডী হয়ে থাকো। আমার সাথে করে তোমায় নিয়ে যাব আমি।
আমার কথা শুনে আমার পাশে থেকে এক পা পিছিয়ে গিয়ে রাই আবারও বিস্ফোরিত কন্ঠে বলে উঠল,
— কিন্তু আমি কেন ও বাড়িতে যাবো এখন? এটা আমার শশুর বাড়ি। আর এখন তো এটাই আমার আসল ঠিকানা তাইনা ভাবি?
ওর কথা শুনে আমি ওর দিকে এক নজর তাঁকিয়ে মুচকি হেসে দিয়ে আবারও কাপড়-চোপড় গোছাতে মনোযোগ দিয়ে বলে উঠলাম,
— তাহলে একবার ভাবো, আমি যে গত 10 দিন ধরে পড়ে আছি এ বাসায়, এটাও তো আমার বাড়ি নয় তাই না? এখন আমি কেন তাহলে এখানে বেশি দিন থাকবো? নিজের বাড়ি ফেলে রেখে?
চলবে,,,,,,,,,