You are my property,Part_33,34
M Sonali
Part-33
— আচ্ছা রাই আমাকে একটা কথা বলতো! তোমার ওই খাটাশ ভাইয়া নিজের রাজ নামটা পাল্টে এই আরিয়ান নামটা কেন রেখেছে সে?
ফোন করে হঠাৎ এমন প্রশ্ন করায় অনেকটাই বিব্রতবোধ করল রাই। ও আমার কথার উপরে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো,
— আচ্ছা ভাবি তুমি কি সত্যি ভুলে গেছো ভাইয়ার পুরো নামটা? মনে নেই তোমার বিয়ের দিন ভাইয়া যখন প্রথম তোমাদের বাসায় যায়, তখন কিন্তু সকলের সামনে ভাইয়া নিজের নাম আরিয়ান আহমেদ রাজ চৌধুরী বলেছিল। তোমার হয়তো খেয়াল নেই কিন্তু ভাইয়ার পুরো নাম কিন্তু আরিয়ান আহমেদ রাজ চৌধুরী। তুমি হয়তো সেটা ভুলে গেছো।
রাই এর কথায় আমার মনে পড়ে গেল সেদিনের কথা। সত্যিই তো আরিয়ান সেদিন নিজেকে আরিয়ান আহমেদ রাজ বলেইতো গিয়েছিল। একদম মাথা থেকে চলে গেছে। এই কথাটাকে মনে থাকলে তো এতদিন আর এত কষ্ট করে ছুটতে হতো না ওদের পিছনে। কথাগুলো ভাবতেই নিজের ওপর প্রচুর রাগ হচ্ছে আমার। তবে রাগটাকে এখন কন্ট্রোলে রেখে রাইকে আবারও জিজ্ঞেস করে উঠলাম,
— তা তোমার মহারাজ ভাই এখন কোথায় শুনি?
আমার কথার উত্তরে রাই হেসে দিয়ে বললো,
— ভাবী তুমিও না, এখন রাত প্রায় বারোটা বাজতে চলল। এত রাতে মানুষ কি করে? নিশ্চয়ই ভাইয়া এখন ঘুমিয়ে পড়েছে তাই না? আর তুমিও নিজের ঘুমের সাথে আমার ঘুমেরও বারোটা বাজাচ্ছো। বলি তোমার কি এখনো ঘুম পায় নি নাকি? কাল কলেজ নেই তোমার?
— হ্যাঁ হ্যাঁ জানি জানি, তুমি কেমন ঘুমাবে এখন। আমার কাছ থেকে ফোনটা কেটে দিয়েই তো আমার ভাইয়ের সাথে রোমান্টিক আলাপে মগ্ন হয়ে যাবে, জানি তো। বলি একদিন একটু ভাই এর বোনের সাথে কথা বললে কি সমস্যা আছে বল? আসলে কি বলতো আমার একদমই ঘুম আসছে না। তাই ভাবলাম তোমার সাথে একটু বকবক করে সময় কাটাই।
আমার কথার উত্তরে রাই কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। তারপর আস্তে আস্তে বলে উঠলো,
— ভাবি ফোনটা তাড়াতাড়ি কেটে দাও। দরজায় ভাইয়া এসে নক করছে। বুঝতে পারছি না এত রাতে কেন নক করছে ভাইয়া।
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো রাই। আমাকে আর কিছু বলার সুযোগই দিলো না। আমি ওর কথা শুনে টেনশনে পড়ে গেলাম। এত রাতে উনি কেন আসবে রাইয়ের রুমে? নাকি রাই ভাইয়ার সাথে কথা বলার জন্য এভাবে ফাঁকি দিয়ে ফোনটা কেটে দিলো আমার? কথাটা ভাবতেই আবারো ফোন দিলাম রাই এর নাম্বারে। আর ফোন দিতেই দেখতে পারলাম ফোনটা অফ করে রেখেছে ও। এবার আমি শিওর হলাম আর কিছু নয় নিশ্চয়ই আমার ভাইয়া ওর কাছে গেছে বা অন্য কোন ফোন দিয়ে ভাইয়ার সাথে প্রেম আলাপে মগ্ন হয়েছে সে। তাই সে চাইছে না আমি তাকে ডিস্টার্ব করি। আমিও আর বেহায়ার মত ওদেরকে ডিস্টার্ব না করে ফোনটা পাশে রেখে শুয়ে চুপটি করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম ভাঙতেই তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম আমি। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে কলেজের জন্য রেডি হয়ে রুম থেকে বের হলাম। বের হতেই দেখলাম ভাইয়া ডাইনিং টেবিলে বসে হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর এই হাসির কোন অর্থই বুঝলাম না আমি। তাই আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আম্মুর কাছে কিচেনে এগিয়ে গেলাম। আম্মু সকালের নাস্তা তৈরি করছিল আমি পিছন থেকে গিয়ে আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,
— আম্মু কি করো?
আম্মু নিজের হাত দিয়ে আমার হাত তার গলা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হেসে বললো,
— কি ব্যাপার বলোতো? আমার মেয়েটাকে আজকে এত খুশি খুশি লাগছে? কি হয়েছে বলোতো?
আমি আম্মুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,
— তেমন কিছু না আম্মু আসলে ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে তাড়াতাড়ি খেতে দাও প্লিজ।
আম্মু আমার থুতনিতে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বললো,
— তুমি গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বস! আমি তোমাদের ভাই-বোন দুজনার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি।
আম্মুর কথার উত্তরে একটি মিষ্টি হাসি দিয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে ভাইয়ার সামনাসামনি একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম আমি। ভাইয়ার দিকে তাকাতেই লক্ষ করলাম ও এখনো আমাকে দেখে সেই আগের মতো দাঁত কেলিয়ে হাসছে। ওর হাঁসির কোন কারণই খুঁজে পাচ্ছি না আমি। তাই কিছুটা রাগী গলায় বলে উঠলাম,
— কি হয়েছে বলো তো ভাইয়া? তুমি সেই তখন থেকে আমাকে দেখে এভাবে হাসছো কেন? আমাকে কি দেখতে জোকারের মতো লাগছে?
ভাইয়া আমার কথার উত্তরে এবার ফিক করে হেসে দিল। বেশ কিছুক্ষন হাসার পরে ও হাসতে হাসতে বলে উঠল,
— তোকে ঠিক জোকারের মতো লাগছে না! কিন্তু ইদানিং তুই সত্যিই একটা জোকার হয়ে গেছিস রে পুঁচকি!
কথাটা বলে আবারো আগের মত হাসতে লাগলো ভাইয়া। ওর কথার মানে আমি কিছুই বুঝলাম না। তবে ভীষণ রাগ হচ্ছে আমার। আমি কিছুক্ষণ ভাইয়ার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে থেকে, সে দিকে আর পাত্তা না দিয়ে আম্মুকে জোরে ডাক দিয়ে বললাম নাস্তা দেওয়ার জন্য। আম্মুও তাড়াতাড়ি আমার জন্য নাস্তা নিয়ে এলো। আমি ভাইয়ার দিকে আর না তাকিয়ে তাড়াতাড়ি নাস্তা শেষ করে কলেজে যাওয়ার জন্য সামনে হাটা দিলাম। তখনি ভাইয়া আমায় ডেকে বলল,
— কিরে রাহী এত তাড়াতাড়ি কলেজে যাচ্ছিস কেন? কলেজের সময় হওয়ার তো এখনো বাকি। এত তাড়াতাড়ি কলেজে কি দরকার তোর?
আমি পিছনে ফিরে ভেঙচি কেটে বললাম,
— আমার একটা প্রয়োজনীয় কাজ আছে ভাইয়া। আমি আসছি। তোমরা চিন্তা করো না।
কথাটা বলেই দ্রুত দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে আসলাম আমি। আর মনে মনে বুদ্ধি আঁটতে লাগলাম আজকে কিভাবে আরিয়ানকে মজা বুঝানো যায়। ভাবতে ভাবতেই রাস্তায় নেমে পড়লাম আমি। এবার রাস্তা দিয়ে হেলেদুলে হাঁটছি আর সবকিছু চিন্তা করছি কি করা যায়।
বেশ অনেকক্ষণ যাবৎ রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছি আর এদিক ওদিক উকিঝুকি মারছি আজকে কেন জানিনা ওই ব্যাটা খাটাস মানে আমার জামাই মশাই এখনো আসছে না। এমনকি আরিশারও দেখা নেই। ব্যাপার কি বুঝতে পারছি না। ওদের জন্যই তো এতো তাড়াতাড়ি বের হলাম আমি তাহলে কেন আসছেনা ওরা? দূর ভাল্লাগেনা এবার মন খারাপ করে হাঁটতে হাঁটতে চিন্তা করলাম আর হাটা সম্ভব না। অলরেডি অনেকখানি চামড়া উঠে গেছে পায়ের। তাই রিক্সা খোঁজার জন্য রাস্তার এক সাইডে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি। তখনি চোখে পরলো আরিয়ানের সেই কাল গাড়িটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে। গাড়িটা কে দেখতেই যেনো আমার চোখ মুখে উজ্জলতা ফুটে উঠল। এটারই অপেক্ষায় ছিলাম এতক্ষণ আমি। আমি হাসিমুখে সে দিকে একবার তাকিয়ে আবার এমন ভাব করলাম যেন আমি গাড়িটাকে দেখি’ই নি। অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম। তখনই গাড়িটা এসে একদম আমার সম্মুখে দাঁড়ালো। তারপর গাড়ির কাঁচ নামিয়ে ভেতর থেকে আরিয়ান বাঁকা হেসে বলে উঠলো,
— হাই শালী, এখানে দাঁড়িয়ে কার জন্য অপেক্ষা করছো?
আরিয়ানের মুখে শালী ডাক শুনতেই চোখদুটো যেনো কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো আমার। এই ব্যাটা বলেকি, বউকে নাকি শালী বলে ডাকছে! এটা কেমন মানুষ, আমি না হয় ওনার সাথে অভিনয় করে ডেকেছি। কিন্তু উনি? উনি কেন আমায় শালি বলে ডাকছে? মনে মনে এসব চিন্তা করতে করতেই ওনার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম আমি। তখন উনি গাড়ি থেকে নেমে এসে আমার সামনে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়ালেন। তারপর বাঁকা হেসে বলে উঠলেন,
— কি হলো শালী আমার আধাঘরওয়ালী দুলাভাইয়ের দিকে এভাবে তাকিয়ে থেকে নজর দেওয়ার মানে কি বলতো? তোমার বান্ধবী মানে আমার হবু বউ আরিশা কিন্তু আমার সাথে রাগারাগি করবে। তোমায় এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখলে।
ওনার কথায় আমি নিচের দিকে মুখ করে দাঁড়ালাম। ব্যাটা কি ফাজিলের ফাজিল, আমাকে এভাবে লজ্জা দেওয়ার মানে কি? আর উনি হঠাৎ আমাকে এমন শালী শালী বলে ডাকতে শুরু করলো কেন? উনি আবার সত্যি সত্যি আরিশা কে বিয়ে করবে নাতো? কথাটা ভাবতেই বুকের মাঝে ধুক করে কেঁপে উঠলো আমার। আচ্ছা আমি ওনাকে একটু বেশি জ্বালাতন করে ফেলিনিতো? যার কারনে উনি অতিষ্ঠ হয়ে আরিশাকে বিয়ে করতে চাইছেন? এমনটা মনে হতেই ওনার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে ফিরে তাকালাম আমি। তারপর আস্তে করে বলে উঠলাম,
— আপনি হঠাৎ আমাকে শালী ডাকছেন কেন?
আমার কথার উত্তরে উনি নিজের চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বলে উঠলো,
— কেন তুমি আমাকে দুলাভাই ডাকতে পারো! তাহলে আমি কেনো তোমাকে শালী ডাকতে পারবো না? শালী!
ওনার কথায় এবার আমি বেশ রেগে গিয়ে বললাম,
— দেখুন এটা কিন্তু মোটেও ঠিক হচ্ছেনা। আমি আপনাকে দুলাভাই ডাকতেই পারি। কারণ আপনি আমার বান্ধবী আরিশাকে বিয়ে করবেন। কিন্তু আপনি আমাকে শালী ডাকতে পারেন না কারণ শালী হলো একটা গালাগালি। আমার কাছে যা অসহ্য লাগে।
আমার কথা শুনে উনি অন্য দিকে তাকিয়ে অভিমানি গলায় বলে উঠলেন,
— তোমার কাছে এটা গালাগালি মনে হচ্ছে! আর যখন আমাকে তুমি দুলাভাই বলে ডাকো, তখন সেটা গালাগালির চাইতেও বেশী তিতো লাগে আমার কাছে। সেটা কি তুমি বোঝনা?
উনার কথার উত্তরে আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,
— মানে?
উনি কথা ঘুরিয়ে বলে উঠলেন,
— মানে কিছুই না এখন তাড়াতাড়ি চলো আমরা যাই।
— কোথায় যাবো আমি আপনার সাথে?
— কোথায় যাবে আবার, তুমি কলেজের জন্য বের হয়েছো তাই না? চলো তোমাকে কলেজে পৌছে দেই।
— সেটা বুঝলাম কিন্তু আরিশা কোথায়? ওকে দেখছি না যে আপনার সাথে?
— আসলে আরিশা ওর আম্মুর কাছে গেছে। ওখান থেকেই কলেজে চলে যাবে ও। তুমি বরং আমার সাথে চলো আমি তোমাকে কলেজে পৌছে দিচ্ছি।
আমি আর ওনার কথায় কোন কিছু না বলে চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। কারণ পায়ের অবস্থা এমনিতেই দফারফা হয়ে গেছে আমার। উনি মুচকি হেসে আমার পাশে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে আমার দিকে একবার তাকিয়ে বাঁকা হেসে আবার সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভিং শুরু করলেন। আমি ওনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে বাইরের দিকে নজর দিলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করলাম উনি কলেজের দিকে না গিয়ে অন্য দিকে যাচ্ছেন। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে উঠলাম,
— কি ব্যাপার আপনি কলেজের দিকে না গিয়ে এদিকে কোথায় যাচ্ছেন?
আমার কথার উত্তরে উনি আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললেন,
— তোমাকে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছি বুঝলে? চুপ করে বসে থাকো।
ওনার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলাম আমি,
— আমাকে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন মানে? আমি কি কোন আসবাবপত্র নাকি যে আপনি আমাকে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন? দাঁড়ান, দাঁড়ান বলছি আমি এখানে নেমে যাব। আপনার হাবভাব আমার মোটেও ভালো লাগছেনা। নামিয়ে দিন বলছি আমায় নইলে আমি কিন্তু আমার রাজু কে ফোন করে ডাকবো।
রাজুর কথা বলতেই উনি জোরে করে ব্রেক কশে গাড়ি থামালেন। সাথে সাথে আমার কপাল গিয়ে সামনে বারি খেতে নিলো। কারন আমি সিট বেল্ট পড়িনি। সাথে সাথে উনি আমার কপালের কাছে নিজের হাতটা দিলেন। যার দরুন আমার কপালে আঘাত না লেগে বরং ওনার হাতে আঘাত লাগলো। আমি স্বাভাবিক হয়ে বসে উনার দিকে তাকাতেই ভয়ে চমকে উঠলাম। কেননা ওনার চোখ দুটো রক্ত লাল হয়ে আছে। উনি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
— কি হয়েছে আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আমার দিকে?
— খুব শখ না তোমার রাজুর বউ হওয়ার? ঠিক আছে চলো এখনই তোমাকে রাজুর বউ হওয়াচ্ছি আমি। কে সেই রাজু এখনি বের করব আমি। চলো আমার সাথে।
কথাগুলো বলেই উনি সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলেন। ভয়ে যেন আমার কলিজা শুকিয়ে গেল। লোকটা কি করতে চাইছে? সত্যিই কি আমাকে নিয়ে এখন সেই অটো ড্রাইভার রাজুর কাছে যাবে নাকি সে? যাকে সে কাল রাতে মেরেছিল? আমি ভয়ে ভয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
— দেখুন আসলে রাজু বলে কেউ নেই। আমি আপনাদের সাথে এমনি দুষ্টামি করেছি। প্লিজ গাড়িটা থামান। আমার ভীষণ ভয় করছে।
আমার কথা শুনে উনি শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে একবার তাকালেন। তারপর গাড়ি চালাতে চালাতেই সামনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
— ভয় পেওনা আমিও তোমার সাথে দুষ্টুমি করছিলাম। আমি জানি রাজু বলে কেউ নেই। আসলে তোমাকে নিয়ে আমি শপিংমলে যাচ্ছি। বিয়ের জন্য শপিং করব বলে।
— বিয়ের জন্য শপিং মানে? কার বিয়ের জন্য শপিং করবেন আপনি?
— কার আবার, যার বিয়ে খাবে বলে তুমি উঠে-পড়ে লেগেছো, আমার আর আরিশার বিয়ে আগামী শুক্রবার। আমরা এখন তার জন্যেই শপিংয়ে যাচ্ছি। আরিশাও সেখানেই আছে।
চলবে,,,
You are my property
Part_33
M Sonali
— কার আবার, যার বিয়ে খাবে বলে তুমি উঠে-পড়ে লেগেছো, আমার আর আরিশার বিয়ে আগামী শুক্রবার। আমরা এখন তার জন্যেই শপিংয়ে যাচ্ছি। আরিশাও সেখানেই আছে।
ওনার কথা শুনে মনে মনে ভীষণ রাগ হল আমার। কিন্তু এখন রাগ করলে চলবে না। ওনাকে ঠিক ওনার মত করে শাস্তি দিতে হবে আমার। কেন জানি না মনে হচ্ছে রাই ওনাকে সব কিছু বলে দিয়েছে। আর তাই এখন উনি আমার সাথে এমন আচরণ করছে। ঠিক আছে আমিও উনার সাথে তালে তাল মিলাবো। আমিও দেখতে চাই উনি কতক্ষণ সহ্য করতে পারে। আমি তো সহ্য করে চলেছি বহুদিন, আমার এসবে কোনো কিছু যায় আসে না এখন। তাই মনে মনে পণ করলাম যাই হয়ে যাক না কেন আমি আর কষ্ট পাবো না। এবার ওনাকে কষ্ট দেওয়ার পালা। আমি যথেষ্ট সহ্য করেছি আর নয়। তাই আমি মুচকি হেসে ওনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
— ওয়াও দুলাভাই, আগে বলবেন তো আমরা শপিং মলে যাবো। তাহলে তো আমি আর একটু সেজেগুজেই আসতাম। আপনার সাথে শপিং মলে যাব বলে কথা, সেখানে কত হ্যানসাম ছেলে থাকবে একজনকে যদি পটিয়ে নিতে পারি তাহলে মন্দ কি বলেন?
আমার মুখ থেকে এমন উত্তর শুনে ওনার মুখটা নিমেষেই চুপসে গেল।হাতটা শক্ত করে মুঠো করলেন উনি। আমি সেদিকে একনজর তাকিয়ে না দেখার ভান করে অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,
— কি হলো দুলাভাই এখন আবার চুপ করে বসে রইলেন কেন? তাড়াতাড়ি চলুন আমার তো আর তর সইছে না শপিংমলে যাওয়ার জন্য।
আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। তারপর একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলেন। পুরো রাস্তায় আমার সাথে একটা কথাও বলেননি আর উনি। ওনাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে অসম্ভব রেগে আছেন উনি। তাতে অবশ্য আমার আর কিছু যায় আসে না।
শপিং মলের সামনে গিয়ে গাড়ি থামতেই আরিয়ান এর আগে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম আমি। তার পর ওনার অপেক্ষা না করে শপিং মলের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। উনি তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির চাবিটা নিয়ে আমার পিছু পিছু আসতে লাগলেন। আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে এদিক থেকে ওদিক ছোটাছুটি করতে লাগলাম। উনি এক সময়ে দ্রুত এসে আমার হাত ধরে রাগি গলায় বলে উঠলেন,
— কোথায় যাচ্ছ তুমি? এভাবে পাগলের মত ছোটাছুটি করছো কেনো? আমিতো আসছি নাকি, এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছ কেন তুমি?
উনার কথার উত্তরে আমি ওনার দিকে নীরব দৃষ্টি ফেলে শান্ত গলায় বলে উঠলাম,
— আমি আপনাকে ছেড়ে কখন চলে গিয়েছি আরিয়ান? আমিতো আপনার পাশে ছিলাম কিন্তু আপনি তো আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন?
উনি আমার কথা শুনে হঠাৎ করেই আমার হাতটা ছেড়ে দিল। আমার হাত ছেড়ে দিতেই আমি খলখলিয়ে হেসে দিয়ে বলে উঠলাম,
— আরে দুলাভাই আপনি তো দেখি মজাও বোঝেন না। আমি আপনার সাথে মজা করছিলাম। আর লাইক সিরিয়াসলি আপনি বিশ্বাস করেন যে আপনি আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন? বলি আপনার সাথে আমার সম্পর্কটা কিসের যে আপনি আমায় ছেড়ে চলে যাবেন? আর আমি বা আপনার কাছে যাব কেন? চলুন্ত তাড়াতাড়ি শপিং টা সেরে নেওয়া যাক। আর আরিশা কোথায়? ওকে কোথাও দেখছিনা কেনো?
আরিয়ান বেশ কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর আমার হাতটি ধরে বলে উঠলেন আমার সাথে এসো। কথাটা বলেই আমার হাত ধরে টানতে টানতে একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলেন। তারপর দোকানদারদের অর্ডার করলেন বিয়ের শাড়ি এবং লেহেঙ্গা দেখাতে। আমি ওনার মতিগতি কিছুই বুঝতে পারছি না। ওনার দিকে তাকিয়ে কিছু বলব তার আগেই উনি হনহনিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে গেলেন। আর যাওয়ার আগে আমাকে শুধু বলে গেলেন ওখান থেকে না উঠতে। আমিও আর কিছু না ভেবে সেখানে বসে থেকে শাড়ি এবং লেহেঙ্গা পছন্দ করতে লাগলাম। বেশ কয়েকটা শাড়ি এবং লেহেঙ্গা দেখার পরে একটি কালো রঙের লেহেঙ্গা অসম্বব পছন্দ হলো আমার। খুবই সুন্দর লেহেঙ্গা টি একদম পাতলা ও সফ্ট কাপড়ের তৈরী। যদিও নিচের কাপড়টা মোটা। তবে অনেক সুন্দর এবং চোখ ধাঁধানো কাজ করা লেহেঙ্গাটি। আমি লেহেঙ্গা টি হাতে নিয়ে দোকানদারের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলাম,
— ভাইয়া এই লেহেঙ্গাটির প্রাইজ কত?
দোকানদার মুচকি হেসে বললেন,
— আপনাকে জানতে হবে না আপনি শুধু চয়েজ করুন ম্যাম। স্যার আমাদের প্রাইজ টা দিয়ে দেবেন। আর উনি বলেছেন আপনার কাছে কোন কিছু না বলতে।
আমি অবাক হয়ে রাগি গলায় বললাম,
— এটা কেমন কথা! পছন্দ করব আমি কিনবো আমি আর আমি প্রাইজ জানতে পারবো না? এটা আবার কেমন কথা? ঠিক আছে আমি এটা নেব না।
জানি না কেন হঠাৎ করেই ভীষণ রাগ উঠে গেল আমার। লেহেঙ্গা টা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই কেউ একজনের বুকের সাথে ধাক্কা লাগল আমার। সামনে তাকিয়ে দেখলাম আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে বাঁকা হেসে। ওনার হাসির মানে বুঝার আগেই উনি ছো মেরে লেহেঙ্গাটা তুলে নিয়ে আমার হাত ধরে সেই দোকান থেকে বেরিয়ে এলেন।
আমার হাত ধরে নিয়ে উনি এত দ্রুত হেঁটে চলেছেন যে আমি যে ওনাকে কোন প্রশ্ন করব বা কিছু বলবো সেই সময়টুকুও পাচ্ছিনা। টানতে টানতে উনি আমাকে শপিং মলের কর্নারে লেডিস চেঞ্জিং রুম এর কাছে নিয়ে গেলেন। তারপর আমার হাতে লেহেঙ্গাটি দিয়ে বললেন,
— যাও লেহেঙ্গা টি পরে চেঞ্জ করে আসো।
আমি ওনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলে উঠলাম,
— মানে কি? এই লেহেঙ্গাএি আমি নিজের জন্য পছন্দ করিনি। আপনি বলেছিলেন আরিশার জন্য পছন্দ করতে। আমি ওর জন্যই এটা পছন্দ করেছি। আর তাছাড়া আপনার দেওয়া জিনিস আমি কেন পড়বো?
আমার কথার উত্তরে উনি কোন কথা না বলে আমার হাত ধরে নিয়ে সোজা সেই রুমের মাঝে ঢুকে গেলেন। আমি শুধু বেক্কলের মত তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আসলে কি করতে চাইছেন উনি?
আমার হাত ধরে নিয়ে রুমে ঢোকার পর লেহেঙ্গাটা একপাশে রেখে আমার হিজাবে হাত দিতেই আমি ওনার হাত ধরে ফেলে রাগী গলায় বলে উঠলাম,
— এটা কি করছেন কি আপনি? আপনার সমস্যা কি বুঝতে পারছিনা আমি?
উনি আমার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে নরম সুরে বলে উঠলেন,
— তেমন কিছুই না তুমি ড্রেস চেঞ্জ করতে চাইছো না তাই আমি নিজেই তোমাকে চেঞ্জ করে দিচ্ছি। আমি দেখতে চাই এটা পরলে তোমাকে কেমন লাগে?
এবার যেন রাগটা মাথায় চড়ে বসলো আমার। আমি ওনার হাত সজোরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বলে উঠলাম,
— কি বলতে চান আপনি? আপনার কি মাথা ঠিক আছে? আপনি আমার ড্রেস চেঞ্জ করে দিবেন মানে? বের হন বের হন এখান থেকে? নইলে আমিই বেরিয়ে যাচ্ছি।
কথাটি বলেই আমি দ্রুত বেরিয়ে আসার জন্য পা বাড়ালাম। তখনই আমার হাত ধরে ফেলে উনি বলে উঠলেন,
— কোথায় যাচ্ছ রাহি আজ আমি তোমাকে জামাটা পড়িয়েই ছাড়বো। তুমি এখান থেকে কোথাও যেতে পারবে না। তোমার প্রতি আমার অনেক দিনের লোভ-লালসা কাজ করে। আজকে সেটা আমি পুরন করেই ছাড়বো।
কথাটা বলেই উনি আমার হিজাবের একটি পিন টান মেরে খুলে নিলেন। যার দরুন আমার হিজাবটা অনেকটাই খুলে গেল। সাথে সাথে আমি রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে ওনার দিকে ঘুরে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে সজোরে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলাম ওনার গালে। আমার হাতের থাপ্পর খেয়ে উনি আমার থেকে বেশ কিছুটা দূরে সরে গেলেন। তখনি আমি ওনার কাছে এগিয়ে গিয়ে ওনার শার্টের কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে ওনার চোখে চোখ রেখে বলতে শুরু করলাম,
— কি মনে করেন কি আপনি নিজেকে? যখন যা খুশি তাই করে বেড়াবেন আর কেউ কোনো কিছুর প্রতিবাদ করতে পারবে না? কি মনে করেছেন আপনি? আমার সাথে শুরু থেকে এতটা খারাপ আচরণ এর পরেও আপনাকে আমি মেনে নেব? কখনোই মেনে নেব না আমি আপনাকে। আই হেট ইউ মিস্টার আরিয়ান চৌধুরী। আমি আপনার ব্যাপারে সবকিছুই জানি। আমার সাথে নাটক করার কোন প্রয়োজন নেই আর আপনার। তবে আমি আপনাকে কখনো স্বামী হিসেবে মানি নি। আর আজও মানিনা, সারা জীবনেও মানবো না। আজ আপনি যেটা করলেন এটার জন্য সারাজীবন পস্তাতে হবে আপনাকে। আপনাকে আমি ঘৃণা করি মিস্টার আরিয়ান চৌধুরী। আই জাস্ট হেট ইউ।
কথাগুলো বলে ওনার কলার ছেড়ে দিয়ে ওনার বুকে দুহাত দিয়ে একটা ধাক্কা দিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে সোজা দৌড়ে শপিং মল থেকে বেরিয়ে আসলাম আমি। দু চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়ছে আমার। রাগে সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। ইচ্ছে করছে নিজের হাতে খুন করে ফেলি ওই আরিয়ান চৌধুরি কে। উনি কেনো করলেন আমার সাথে এমন টা? আমি তো ওনাকে মনে মনে স্বামী হিসেবে মানতে শুরু করেছিলাম। তাহলে আজ হঠাৎ কেন এমনটা করলেন উনি? উনি কি তাহলে আমাকে কখনো ভালবাসেনি? সবকিছু উনার অভিনয় ছিলো?
এসব ভাবছি আর রাস্তা ধরে সোজা হেঁটে চলেছি আমি। মাথায় কোন কিছু কাজ করছে না। শুধু এতোটুকু জানি রাগে আমার সারা শরীর কাঁপছে। এভাবে বেশ কিছুদূর হেঁটে আসতেই কোথা থেকে যেনো ভাইয়া এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। তারপর সোজা আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে হাসতে হাসতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে উঠল,
— আমার বোন সুস্থ হয়ে গেছে। আমার বোন ভালো হয়ে গেছে। আমি আর কোনো চিন্তা করিনা রাহি। তোকে নিয়ে অনেক চিন্তায় ছিলাম আমরা। আজ সেই চিন্তা থেকে মুক্ত হলাম। তুই চিরদিনের মত সুস্থ হয়ে গেছিস বোন। তোকে নিয়ে আর কোন চিন্তা নেই আমাদের। আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। যে উনি তোকে সুস্থ করে দিয়েছেন। আমাদের চেষ্টা বৃথা যায় নি।
ভাইয়ার কথাগুলোর অর্থ আমি কোন কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার কি এমন হয়েছে যে আমি সুস্থ হয়ে গিয়েছি? এসব কি বলছে ভাইয়া? আমি ভাইয়ার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ভাইয়ার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওর হাসি মুখটা দেখছি। হাসির সাথে সাথে ওর চোখ থেকেও গড়িয়ে পরছে পানি। তবে আমি বুঝতে পারছি এই পানিটা কষ্টের নয়, এটা সুখের পানি গড়িয়ে পড়ছে ওর চোখ থেকে। আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
— আমার কি হয়েছে ভাইয়া? যে আমি সুস্থ হয়ে গেছি? এসব কি বলছ তুমি?
চলবে,,,,,,,,,