You are my property,Part_3
M Sonali
বাইরে থেকে সকলের চেঁচামেচির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল আমার। ঢুলুঢুলু চোখে ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙে খাট থেকে নিচে নেমে দরজা খুললাম আমি। দরজা খুলতেই দেখতে পেলাম বাড়ি ঘর সাজানো নিয়ে সবাই ব্যস্ত। বিয়ের তোরজোর বেশ ভালোভাবে শুরু হয়েছে। কিন্তু আমাকে এখনো কেউ ডাকেনি কেন? ভাবতেই মনে পড়ে গেল আমিতো নববধূ তাই হয়তো কেউ বিরক্ত করতে চায়নি আমায়। আর এটা নিশ্চই ভাইয়ার কথাতেই হয়েছে। মনে মনে বেশ হাসি পেল আমার কথাটা ভেবে। তারপর আর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে না থেকে মাথার খোলা চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতে এগিয়ে গেলাম ওয়াশরুমের দিকে। বেশ কিছুক্ষণ পরে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখলাম আম্মু বসে আছে খাটে। আমাকে দেখেই মিষ্টি করে একটি হাসি দিয়ে আমার কাছে এসে বললো,
— খাটের উপর তোমার হলুদের শাড়ি আর ফুলের জুয়েলারি রেখে গেলাম। এগুলো পড়ে বাইরে এসো একটু পর তোমার গায়ে হলুদ হবে।
আম্মুর কথা শুনে বেশ কিছুটা বিরক্ত হলাম আমি। কেননা এই গায়ে হলুদ দেওয়াটা আমার একদমই পছন্দ হয় না। তাই অসহায়ের মত লুক করে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
— আম্মু এই হলুদটা কি না করলেই নয়? আমার এগুলো একদম বিচ্ছিরি লাগে। প্লিজ এসব বাদ দাও না!
আমার কথায় আম্মু মুচকি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরে গলায় বলল,
— তা বললে কি আর হয় মামনি? আজকে তোমার বিয়ে। আর বিয়েতে যদি গায়ে হলুদ ই না হয় তাহলে বিয়ের মজাটা কোথায় বলো? তুমি আমাদের একমাত্র মেয়ে তোমার বিয়েতে কোন কিছুর কমতি রাখতে চাই না আমরা। তুমি চেয়েছিলে বলে তোমায় শাড়ি পড়াতেও কেউ আসেনি। তুমি একা একা পড়বে বলে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে শাড়িটা পড়ে জলদি বাইরে আসো। সবাই অপেক্ষা করছে তোমার জন্য। আমার অনেক কাজ পড়ে আছে আমি গেলাম।
কথাগুলো বলেই আমার কপালে একটি চুমু এঁকে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন আম্মু। আমি একরাশ বিরক্তি নিয়ে খাটের উপরে আম্মুর রেখে যাওয়া জিনিসগুলো দেখে নিলাম। যেহেতু রাগ করে কোন লাভ হবে না এগুলো আমাকে পড়তেই হবে। তাই আর কোনো চিন্তাভাবনা না করে মুখে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটালাম। তারপর শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম সেগুলো পড়ে আসার জন্য। একটু পর ওয়াশরুম থেকে শাড়ি পড়ে বের হলাম আমি। তারপর আয়নার সামনে বসে সেই ফুলের জুয়েলারি গুলো এঁকে এঁকে গলায় হাতে কানে মাথায় সব জায়গায় পড়ে নিলাম। ডান হাতে ব্যান্ডেজ থাকায় সে হাতে কিছু পড়লাম না আমি। তারপর চোখে হালকা করে কাজল দিয়ে মুখে হালকা মেকআপ সাথে ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক পড়লাম। নিজেকে একবার আয়নায় দেখলাম বেশ সুন্দর লাগছে আমাকে দেখতে। তখন এগুলো পড়তে বিরক্তি লাগলেও এখন খুব একটা খারাপ লাগছে না নিজের কাছে। বরং নিজেকে এভাবে দেখে ভালই লাগছে। যাক গে বিয়ে তো জীবনে একবারই হয় একটু না হয় হলুদ ই দিয়ে দিলো সবাই তাতে কি এমন ক্ষতি? কথাগুলো মনে মনে ভেবে আনমনেই হেসে দিলাম আমি।
হঠাৎ হুড়মুড় করে আমার রুমের মাঝে প্রবেশ করল আমার বয়সী বেশ কয়েকটি মেয়ে। তাদের মাঝে থেকে একটি মেয়ে দৌড়ে এসে আমার কাছে বসে পড়লো। মেয়েটিকে দেখতে অনেক কিউট। সে এসেই আমার কাছে বসে আমার হাত দুটি ধরে বলল,
— ভাবি কেমন আছো তুমি? তোমাকে দেখার অনেক ইচ্ছা ছিল জানো! যখন থেকে তোমার কথা শুনেছি শুধু তোমার কথাই ভেবে চলেছি আমি। আমার যে কত খুশি লাগছে তোমাকে সামনে দেখতে পেয়ে! তোমায় বলে বোঝাতে পারবো না।
মেয়েটির কথায় আমি কোন উত্তর দিচ্ছি না। আমি শুধু অবাক চোখে মেয়েটিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। কারণ এর আগে এই মেয়েটিকে কোথাও দেখেছি বলে আমার মনে হয় না। আর চিনিও না তাকে। আচমকা কোথা থেকে এসে আমার সাথে এমন করে কথা বলতে শুরু করল কিছুই বুঝলাম না আমি। তাই অবাক চোখে শুধু তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজের মাথায় নিজে একটি গাট্টা মেরে বলে ওঠলো মেয়েটি,
— উফস্ সরি ভাবি ভুল হয়ে গেছে আমার। আমি তোমার কাছে আমার পরিচয় দিতেই ভুলে গেছি। আসলে কি বলবো বলতো, তোমাকে দেখে এতটা এক্সাইটেড হয়ে গেছি যে নিজের পরিচয়টা দেবো সেটাই মনে নেই। আচ্ছা শোনো আমি হলাম তোমার একমাত্র ননদীনি। মানে তোমার হবু বরের একমাত্র ছোট বোন বুঝলে?আর আমার নাম হলো রাইশা ইসলাম। কিন্তু ভাইয়া আমাকে ভালবেসে রাই বলে ডাকে। তুমিও আমায় রাই ই ডেকো কেমন?
মেয়েটির কথা বলার স্টাইলটা অনেক সুন্দর এবং প্রাণবন্ত। ওর কথাগুলো শুনতে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। তবে খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছি মেয়েটা একটু বাঁচাল আর চনচলা টাইপের। নইলে প্রথম দেখায় এত কথা কেউ বলতে পারে না। আমি মেয়েটির দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
— হুমম বুঝলাম, কিন্তু আপনাকে তো এর আগে দেখিনি আমি? মানে যেদিন আপনার ভাইয়ারা সবাই আমাকে দেখতে এসেছিল তখন এতগুলো মানুষের মধ্যে কই আপনাকে তো দেখি নি? বা আপনার কথা শুনিও নি কারো মুখ থেকে?
আমার কথায় মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা ভাবলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে জোর করে হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো,
— আসলে কি হয়েছিল বলতো, সেদিন না আমার কলেজের একজন বান্ধবীর বাসায় ওর বার্ডেপার্টি ছিল। আমি সেখানেই গিয়েছিলাম বলে এখানে আসতে পারিনি। আচ্ছা সেসব বাদ দাও, তুমি কিন্তু খবরদার আমায় আপনি করে বলবে না। আমি না তোমার একমাত্র ছোট ননদিনী! আমাকে তুই করে বলবে অথবা তুমি করে ঠিক আছে?
মেয়েটির কথায় আমিও হেসে দিয়ে উত্তর দিলাম,
— আচ্ছা ঠিক আছে তাই হবে রাই।
আমার মুখে নিজের নামটি শুনে এবার খুশিতে যেন গদগদ হয়ে পড়ল রাই। তারপর আমার হাত ধরে আমাকে উঠিয়ে নিয়ে বললো,
— চলো এখন তোমার গায়ে হলুদ হবে আমরা তোমাকে গায়ে হলুদ দিতেই এসেছি।
আমার হাত ধরে নিয়ে আমাকে বাইরে নিয়ে আসলো তারা। তারপর বেশ ধুমধাম করে এবং অনেক হাসি ঠাট্টার মধ্যে দিয়ে আমার গায়ে হলুদ কমপ্লিট হলো। তারপর আমায় আরো একটি লাল পেরের হলুদ শাড়ি পড়িয়ে হালকা সাজে আলাদা একটি রুমে বসানো হলো। রাই আসার পর থেকে সেই যে বকবক শুরু করেছে তা আর থামার নাম নেই। আমিও ওর কথায় তাল মিলিয়ে একটু আকটু হু হা করছি। এভাবে বেশ কিছু সময় কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ রাই এর ফোন বেজে উঠলো। ও ফোনটা রিসিভ করে আমার কাছ থেকে উঠে দূরে গিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে এসে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
— ভাবি তুমি থাকো আমি তোমার বিয়ের সব জিনিস নিয়ে আসছি কেমন। ভাইয়া তোমার জন্য বিয়ের ডালা পাঠিয়ে দিয়েছে।
কথাটি বলেই রুম থেকে বাকি মেয়েদের নিয়ে বেরিয়ে গেল রাই। আমি শুধু নিশ্চুপে তাকিয়ে থাকলাম ওদের চলে যাওয়ার দিকে। ওরা চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরেই ভাইয়া আমার কাছে আসলো। আমাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে আমার পাশে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
–কেমন আছিস রে পুচকি? তোর কি মন খারাপ এভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন বলতো?
আমি ভাইয়ার দিকে অভিমানী চোখে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
— তুমি খুব পঁচা ভাইয়া! সেই সকাল থেকে একটি বারো আমার কাছে আসলে না। আমি না আজকে তোমাদের সকলকে ছেড়ে চলে যাব? আর তুমি একটিবার আমার কাছে আসলে না? আব্বুও আসলো না। তোমার কি এখনি পর করে দিচ্ছো আমায়? একটুও খারাপ লাগছে না আমি চলে যাব বলে?
আমার কথা শুনে ভাইয়া আমার গালে আস্তে করে আদরের থাপ্পড় দিয়ে বলে উঠলো,
— ধুর পাগলী এসব কি বলছিস তুই? তুই কখনই আমাদের পর হবি না। সারা জীবন তুই আমাদের আপন হয়েই থাকবি আমার পুচকি হয়ে। আসলে কি বলতো আমার একমাত্র পুচকি বোনের বিয়েতে যেন কোন রকম কোমতি না থাকে সে দায়িত্ব তো আমার আর আব্বুর ই বল! তাই সকাল থেকে বিয়ের সব তোড়জোড় করার ফাঁকে তোর কাছে আসার একদমই সময় হয়নি। কিন্তু যখন একটু ফাঁকা পেয়েছি দেখ তোর কাছে চলে এসেছি প্লিজ তুই রাগ করিস না বোন আমার।
ভাইয়ার কথা শুনে আমি ভাইয়ার বুকে মুখ লুকিয়ে কান্না করে দিলাম। সকাল থেকে এমনিতেই মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে এখন ভাইয়ার কথায় যেন আরো বেশি খারাপ লাগছে আমার। আমি এই পরিবারকে ছেড়ে কি করে গিয়ে একটি অচেনা অজানা জায়গায় থাকবো?ভাবতেই যেন বুকটা চিরে কষ্ট হচ্ছে আমার। ভাইয়া আমার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলতে লাগল,
— এই পাগলি কাঁদছিস কেন তুই? দেখবি তোকে যেখানে বিয়ে দিচ্ছি ওরা তোকে মাথায় করে রাখবে। তুই একদম রাজরানী হয়ে থাকবি বুঝলি? আর যদি কেউ তোর সাথে খারাপ আচরণ করে ওমনি আমাকে এসে বলবি, আমি তার নাক ফাটিয়ে দেবো। বিশেষ করে তোর বরের নাকটা ঘুষি মেরে বোঁচা করে দিলে মন্দ হবে না। নাক বোঁচা বরের বউ হবি তুই। তখন কত মজা হবে তোকে সারাক্ষণ খেপাতে পারব নাক বোঁচা বরের বউ ডেকে।
কথাগুলো বলেই দুষ্টুমি করে হাসতে লাগলো ভাইয়া। আমি বেশ বুঝতে পারছি ভাইয়া আমাকে হাসানোর জন্য কথাগুলো বলছে। তাই আমিও মুচকি হেসে দিয়ে অভিমানের সুরে বলে উঠলাম,
— ভাইয়া তুমিও না!
ভাইয়া আমার কথা শুনে এবার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো
— আচ্ছা তুই থাক আমি এখন দেখি বাইরের কাজ কতটা এগোলো। আর তাছাড়া এখন একদল মেয়ে এসে বসবে তোর কাছে তুই তো জানিসই মেয়েদের আমার কতটা এলার্জি মনে হয়।
কথাগুলো বলে আমার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে হাসতে হাসতে দরজার কাছে যেতেই রাইয়ের সাথে ধাক্কা লাগল ভাইয়ার। ভাইয়া এক নজর রাই এর দিকে তাকিয়ে রাই কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল। আর রাই রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আমার পাশে এসে বসে বললো,
— ভাবী ঐ বাদর ছেলেটা কে ছিল? এভাবে তোমার রুম থেকে বেরোতে নিয়ে আমাকে ধাক্কাদিয়ে আবার এভাবে পালিয়ে গেল? যেন আমি তাকে ধরে খেয়ে ফেলবো? কেমন বাঁদর ছেলে রে বাবা একবার সরিও বললো না?
রাই এর কথা শুনে মুখ টিপে টিপে হাসলাম আমি। তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
— উনি আমার ভাইয়া তুমি তো অবশ্যই তোমার ভাইয়ের কাছে শুনে থাকবে ভাইয়ার কথা। আসলে ও মেয়েদের থেকে সব সময় একটু দূরে দূরে থাকে। মেয়েদেরকে নাকি এলার্জি মনে হয় ওর কাছে। তাই তোমার থেকে এভাবে পালিয়ে গেল। প্লিজ তুমি রাগ করো না ওর হয়ে আমি তোমায় সরি বলে দিচ্ছি।
আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেন ভাবলো রাই। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,
— ও তার মানে উনি আমার বিয়াই সাব তাই না? আমার একটা এমন বিয়াই সাবের ই দরকার ছিলো। যে মেয়েদেরকে এলার্জি মনে করে। আমি যে কতটা এলার্জি এবার তাকে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়াব। আচ্ছা বাদ দাও ওসব, এই যে তোমার বিয়ের ডালা এসে গেছে দেখ তো পছন্দ হয় কিনা? গাড়িতে আরো অনেক কিছু আছে তুমি বস আমি এখনি নিয়ে আসছি।
কথাগুলো বলেই আমাকে আর কিছু কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে দ্রুত বেরিয়ে গেল রাই। আমিও আর কিছু বললাম না। তারপর ফিরে তাকালাম বিছানা পুরা করে রাখা বিয়ের সব ডালার দিকে। রাই এবং আরও ছয় সাত জন মেয়ে মিলে এতগুলো জিনিস নিয়ে এসেছে। এসব জিনিস দেখে যেন আমার চোখ দুটো কপালে উঠে যাওয়ার অবস্থা হল। কেননা আমি যতদূর জানি আমি যেমন মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে, তেমনি আমার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে ও একজন মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলে। আমার জানা মতে তাদের পক্ষে এত কিছু দেওয়া সম্ভব নয়। বেশ খটকা লাগলো আমার ডালাতে থাকা জিনিসগুলো দেখে।
একটি ডালাতে প্রায় সাত আটটা শাড়ি রয়েছে। প্রতিটি শাড়ি অসম্ভব সুন্দর এবং দামি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এক একটি শাড়ি হয়তো ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার নিচে নয়। আরেকটা ডালাতে একটা লাল রঙের লেহেঙ্গা রয়েছে। লেহেঙ্গা টা এতটাই সুন্দর যে কল্পনার বাহিরে। হয়তো এই লেহেঙ্গাটার দাম 50 হাজার টাকার উপরে ছেড়ে নিচে হবে না। আমি শুধু অবাক হচ্ছি উনারা একটি মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলে হয়ে এত দামি জিনিস কিভাবে কিনে দিলো? আরো বেশ কিছু দামি দামি কসমেটিকস রয়েছে বাকিগুলো ডালাতে। তখনই রাই এবং আরো সব মেয়েরা মিলে আরো অনেক গুলো ডালা হাতে নিয়ে হাজির হল রুমে। এবার প্রতিটি ডালায় যেন ভরি ভরি সোনার গহনা রয়েছে। আমি অবাক চোখে সেগুলো দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
— রাই এসব কি?
— কেনো ভাবি এগুলো তোমার বিয়ের সামগ্রী!
— আমি যতদূর জানি তোমার ভাইয়া তো অতটা ও বড়লোক নয় যে বিয়েতে এত কিছু দিতে পারে? কিন্তু এগুলো কি রাই? তোমরা কি ভুল করে অন্য কারো বিয়ের ডালা আমার কাছে নিয়ে এসেছো?
আমার কথায় বেশ থতমত খেয়ে গেল রাই। তারপর অপরাধী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিয়ে বলল,
— না ভাবি এগুলো তোমার বর মানে আমার ভাইয়া ই পাঠিয়েছে। ও নিজে পছন্দ করে তোমার জন্য কিনেছে এসব। তুমি এসব নিয়ে ভেবো না। তুমি শুধু দেখে যাও পরে সব জানতে পারবে।
আমি ওর কথা শুনে বেশ অবাক হলাম। পরে কি জানতে পারবো আমি? আসলে কি হচ্ছে কি আমার সাথে? হঠাৎ বাইরে খুব হট্টগোলের শব্দে ধ্যান ভাঙলো আমার। আমি উঠে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়াতেই দেখতে পেলাম বাইরে আব্বু আম্মু এবং ভাইয়া বেশ কয়েকজন লোকের সাথে অনেক কথা কাটাকাটি করছে। ভাল করে খেয়াল করে দেখতেই বুঝলাম আমার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সেই ছেলেটি এবং তার পুরো ফ্যামিলি এসে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সাথেই কথা কাটাকাটি হচ্ছে আব্বু আম্মু আর ভাইয়ার। কিন্তু কি নিয়ে কথা কাটাকাটির হচ্ছে এটা বুঝতে পারছিনা আমি। ভাইয়াকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অসম্ভব রেগে আছে। তবে আমি যতটা জানি আমার ভাইয়া অনেক শান্তি প্রকৃতির মানুষ। সে খুব সহজে রাগ করে না। আর একবার যদি রেগে যায় তাহলে তার রাগ কমানো অনেক কঠিন। কিন্তু কি এমন হলো এই অল্প সময়ের মাঝে যে পাত্রপক্ষের সাথে এভাবে সবার কথা কাটাকাটি চলছে? বিষয়টা যে করেই হোক জানতে হবে আমায়। মনে হাজারো কৌতুহল নিয়ে একপা একপা করে বাইরে বের হয়ে আসলাম আমি। আমার পিছু পিছু রাই ও বাইরে বেরিয়ে আসলো।
চলবে,,,,,,,,