You are my property,Part_24,25

You are my property,Part_24,25
M_Sonali
Part-24

সকাল ১০.১৫ টা মিনিট
আয়নার সামনে বসে কলেজের নবীনবরন উৎসবে যাওয়ার জন্যে রেডি হচ্ছি আমি। শপিং মল থেকে কেনা সেই কলাপাতা রঙের শাড়িটা পড়েছি। সাথে ম্যাচিং করা চুরি, কানে ঝুমকা পরেছি, গলায় চিকন একটি স্বর্ণের চেন ছাড়া বাড়তি কোনো কিছুই পড়িনি। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, চোখে গাড়ো করে কাজল। চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। ব্যাস আর কোন সাজ নেই মুখে। কোনো রকমের মেকআপও করিনি আমি। অতিরিক্ত সাজ একদমই পছন্দ করি না তাই এতোটুকুই যথেষ্ট মনে করলাম। পরিপূর্ন সাজগোজ হয়ে গেলে নিজেকে আর একবার আয়নায় ভালো করে দেখে নিলাম আমি। বেশ ভালোই লাগছে দেখতে আমায়। তারপর তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম। বাসায় আমি ছাড়া কেউ নেই। ভাইয়ার সাথে সবাই যেনো কই গেছে। যদিও যাওয়ার আগে ভাইয়া বলেছিলো ওরা নানি বাড়ি যাচ্ছে তবে আমি জানি সেটা মিথ্যে ছিলো। তবে সেই ব্যপারে প্রশ্ন করার কোনো ইচ্ছে হয়নি আমার। তাই আর কথা বারাইনি আমি।

আরিশা সেই আধ ঘন্টা আগে থেকে ফোন করে করে আমায় জ্বালিয়ে মারছে। এতক্ষণে হয়তো গাড়ি নিয়ে গেটের কাছে পৌঁছেও গেছে ও। ভাবতে ভাবতেই দরজা খুলে বাইরে বের হলাম আমি। আর বাইরে বের হতেই দেখতে পেলাম সত্যিই আরিশা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গেটের বাইরে।

আমাকে বাসা থেকে বের হতে দেখে আরিশা গাড়ি থেকে নেমে আসলো। আরিশাও আমার মত একই রকম সাজে সেজেছে। তবে ওর মুখে মেকআপ এবং গলায় একটি বড় হাড় এই দুটো জিনিস একটু বেশি পড়েছে আমার থেকে। আমার চাইতে অনেক বেশি সাজগোছও করেছে ও। অনেক ভালো লাগছে দেখতে ওকে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলাম,

— মাশাআল্লাহ তোমাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে আরিশা!

আমার কথা শুনে ও মুচকি হেসে আমার কাছে এগিয়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে বলল,

— তোমাকেও কিন্তু কম লাগছেনা রাহি। এই অল্প সাজেও তোমায় একদম পরীর মত লাগছে।

ওর কথায় মুচকি হাসলাম আমি। তবে কোন উত্তর দিলাম না। ও আমার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসলো। তারপর ড্রাইভারকে বললো কলেজে যাওয়ার জন্য। আমি গাড়ির মধ্যে বসে এদিক ওদিক আরিয়ানকে খুঁজতে লাগলাম। কেন জানিনা ওনাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে আমার। আরিশা হয়তো আমার মনের কথা বুঝতে পেরে বলে উঠল,

— কাকে খুঁজছো রাহি? আরিয়ানকে? ও তো আজকে আমার সাথে আসেনি। আসলে আমাদের নবীন বরণ উৎসব এর গেস্ট হিসেবে সিলেক্ট করা হয়েছে আরিয়ানকে। তাই ও ঐখানে যাবে আর সেখানেই আমাদের সাথে দেখা হবে।

আরিশার কথার কোন উত্তর দিলাম না শুধু মুচকি হাসলাম আমি। তারপর বাইরের দিকে চোখ রাখলাম। বেশ কিছুক্ষণের মাঝেই আমরা পৌছে গেলাম কলেজে। কলেজের গেটে পৌঁছাতেই গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম আমরা। তারপর দুজনে একসাথে হাত ধরে কলেজের মধ্যে প্রবেশ করলাম। এর মধ্যে পুরো কলেজের মাঝে মানুষের আনাগোনা অনেকটাই বেড়ে গেছে। সবাই নানা রকম সাজে সেজে এসেছে নবীন বরণ উৎসব এর জন্য। স্ট্রেজের উপর অলরেডি অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। আমি আর আরিশা গিয়ে পাশাপাশি দুটি চেয়ারের উপর বসে পড়লাম। স্ট্রেজে জুনিয়ার একটি মেয়ে নৃত্য করছে। সাথে আশেপাশের সবাই হাত হালি দিয়ে তাকে উৎসাহ দিচ্ছে সাথে আমিও। মেয়েটির নৃত্য শেষ হতেই একজন স্যার স্ট্রেজের ওপর এসে ঘোষণা করলেন আরিয়ান এসে গেছে। আমাদের কলেজের গেস্ট হিসেবে। ওনাকে সবাই স্বাগত জানিয়ে স্ট্রেজের উপর নিয়ে এসে বসানো হলো। আমি আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে চোখ সরাতে পারছি না। নীল রঙের পাঞ্জাবিতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে।যেনো কোনো প্রিন্স এর চাইতে কম নয়। আমার মতো কলেজের সকল মেয়েরই একি অবস্থা। সবাই যেনো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে তাকে।

আরিয়ান চোখে সানগ্লাস পরে আছে। যে কারণে উনার দিকে তাকিয়ে ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা ওনি কোনদিকে তাকিয়ে আছে। তাই আমিও বেহায়ার মত তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি তাকে। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর হঠাৎ আরিয়ান গলাখাকারি দিয়ে উঠলেন। ওনাকে এভাবে গলা খাকারি দিতে দেখে কেন জানিনা মনে হল যে উনি আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে এমনটা করলেন। তাই আমি দ্রুত লজ্জা পেয়ে ওনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। তারপর বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে অনুষ্ঠান দেখতে লাগলাম। একেক জন একেক রকম পারফরম্যান্স করছে। একটি ছেলের গান শেষ হওয়ার পর এবার স্যার স্ট্রেজে এসে আরিয়ানের নাম ঘোষণা করে বললেন ওনাকে গান গাইতে। ওনার নাম ঘোষণা করার সাথে সাথে আশেপাশের সবাই খুব জোরে চিল্লিয়ে উঠলো। কেউ কেউ আবার সিটি বাজিয়ে উঠলো। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে। আমার পাশে আরিশা আছে কি নেই সেদিকে কোন খেয়াল নেই আমার। এখানে আসার পর একবার ও আরিশার সাথে কথা হয়নি আমার। কিন্তু সেদিকে আমার যেনো কোনো খেয়ালই নেই। তারপর আরিয়ান হাতে একটি গিটার নিয়ে মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন। চারিদিকে সবাই নিরব নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেল। তখন’ই আরিয়ান গিটার বাজিয়ে গান গাওয়া ধরল,

শুধু তোমায় ঘিরে,
শুধু তোমায় ঘিরে,
সিঁদুর রাঙা মেঘ করেছে দূরে
শুধু তোমার ছায়া মেঘের উপর
ঢেউ খেলে রোদ্দুরে।

অভিমানের আড়ি কেটে,
কোথায় তুমি যাচ্ছ হেঁটে
হৃদয়ের চিরকুটে তুমি খুব ডানপিটে।
আমি তোমার মান ভাঙাবো,
ভালোবাসার চোখ রাঙাবো,
মিষ্টি কোনো গান শোনাবো
গলার নরম স্বরে।

(বাকিটা নিজ দ্বায়ীত্বে শুনে নিয়েন)

ওনাকে এই গানটা গাইতে দেখে কেন যেন মনে হলো উনি গানটা আমার জন্যেই গাইছিলেন এতক্ষণ। গানটা শেষ হতেই আশেপাশের সবাই হাততালি দিয়ে উঠল। অনেকে সিটি বাজিয়ে উঠলো। আর মেয়েরা তো পারলে এখন আরিয়ানের সাথে ডান্স করবে। আমি সেদিকে লক্ষ্য না করে পাশে ফিরে তাকালাম আরিশার দিকে। তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। কেননা আরিশা আমার পাশে নেই। আমি ওকে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু একি ও তো কোথাও নেই! ওকে খু্ঁজতে সেখান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালাম আমি। চারিদিকের কোথাও আরিশাকে দেখতে পেলাম না আমি। তাই আরিশাকে খুঁজতে খুঁজতে এবার কলেজের ভেতর প্রতিটা রুমে রুমে চেক করতে লাগলাম আমি। এভাবে করতে করতে লাইব্রেরীর পাশে একটি অন্ধকার রুমের সামনে পৌঁছাতেই কেউ একজন হ্যাচকা টান দিয়ে আমার হাত ধরে সেই রুমটার মধ্যে নিয়ে গেল। রুমটা পরিপূর্ণ অন্ধকার, কিছুই দেখা যাচ্ছে না। হাতে এভাবে হ্যাচকা টান পড়ায় অনেক জোরে চিৎকার করতে নিলাম আমি। আর তখনই সে আমার মুখটা খুব শক্ত করে চেপে ধরল। যার ফলে আমার মুখ দিয়ে শুধু উম উম শব্দ ছাড়া আর কোন কিছুই বের হচ্ছেনা। সে আমাকে সেভাবেই ধরে রেখে এবার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস সে বলে উঠলো,

— I love you, I love you so much. & I miss you so much jaan. আর কত পোড়াবে আমায়। তুমি বিহনে যে পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি আমি প্রতিটা মুহুর্তে। please jaan come back my life.

ওনার কথাগুলো শুনে আমি আর নড়াচড়া না করে একদম চুপ হয়ে গেলাম। আমাকে চুপ হতে দেখে উনি আমার মুখের সামনে থেকে হাতটা সরিয়ে নিলেন। তারপর আমার গালে ছোট্ট করে একটি চুমু এঁকে দিলেন। তার পর উনি আমায় ছেড়ে সামনে দু পা এগোতেই আমি ওনার হাত ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলাম,

— র রা রাজ….!

আমার কথার উত্তরে উনি কিছু না বলে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন। তারপর আমার হাতটা নিজের দুই হাতের মাঝে নিয়ে আলতো করে হাতে চুমু এঁকে দিলেন। সাথে সাথেই কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল আমার হাতে। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না এটা ওনার চোখের পানি। আমি কিছুক্ষণ নিজের হাতের ওপর অন্য হাত বুলিয়ে পানিটা স্পর্শ করলাম। তারপর ওনাকে ধরার জন্যে সামনে এগোলাম। কিন্তু আমি যখনই ওনাকে ধরার জন্য সামনে পা বাড়ালাম উনি যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন আমার সামনে থেকে। আমি অন্ধকার হাতড়ে ওনাকে পাগলের মতো এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু না ওনার চিহ্ন টুকুও কোথাও নেই।

ওনাকে না পেয়ে আমি দৌড়ে এবার ছুটে আসলাম বাইরে। তারপর স্টেজের কাছে পৌঁছালাম। সেখানে গিয়ে যেন আরো বেশি অবাক হয়ে গেলাম আমি। কেননা আরিয়ান সেই আগের জায়গায় একি ভাবে বসে থেকে সকলের পারফরম্যান্স দেখছে। তাহলে আরিয়ান যদি এখানে হয় তাহলে আমার পাশে ওটা কে ছিল? ভাবতেই যেন মাথা ঘুরতে শুরু করলো আমার। আমি চুপটি করে একটি চেয়ার টেনে বসে আরিয়ানের দিকে এক নজরে তাকিয়ে থাকলাম। ওর ভাব ভঙ্গি বোঝার জন্য। কিন্তু না ও এখন সকলের পারফরম্যান্স দেখতে ব্যস্ত। আমার দিকে এক বারের জন্যও ফিরে তাকাচ্ছে না। তবে কি আমি ভূল ভাবছি? এটাও কি আমার স্বপ্ন ছিল? এসব ভাবতে ভাবতে আমার চোখ গেলো আমার হাতের দিকে। আর সেখানে স্পষ্ট কয়েক ফোঁটা পানির চিহ্ন দেখতে পেলাম আমি। তার মানে এটা আমার স্বপ্ন ছিল না! সবকিছুই বাস্তব ছিল। তার মানে সত্যিই রাজ আমার কাছে এসেছিল! তবে কি আরিয়ান রাজ নয়? রাজ কি তাহলে অন্য কেউ? কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? রাজ যদি সত্যিই থেকে থাকে তাহলে এই আরিয়ান’ই আমার রাজ। কেননা আমি ওকে দেখেছি সব সময়।এ সবকিছুর উত্তর আমাকে যেভাবেই হোক খুঁজে বের করতেই হবে। মনে মনে শপথ করলাম আমি।

চলবে,,,,,,,

You are my property
Part_25
M Sonali

সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিট
গত আধ ঘন্টা হল ছাদের ওপর এপাশ থেকে ওপাশে পায়চারি করছি আমি। আর সব কিছুকে মিলানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু বারবার’ই যেন মাথার মধ্যে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। তবে আমি এটা শিওর হয়ে গেছি যে রাজ এবং রাই কে নিয়ে ঘটনাগুলো কোন কিছুই মিথ্যে ছিল না। বা আমার স্বপ্নও নয়, ওগুলো সব ছিল বাস্তব। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাহলে এখন সবাই কেন আমার সাথে এমন করছে? শুধু সেটাই খুঁজে বের করতে হবে আমায়। আর সেটা আমি বের করেই ছাড়বো যে ভাবেই হোক না কেনো! আর তার জন্যে মনে মনে সব প্ল্যান করাও হয়ে গেছে আমার। মনে মনে এসব ভাবছি আর এপাশ থেকে ওপাশ পায়চারি করে চলেছি। যেভাবেই হোক সব কিছু জানতেই হবে আমায়। হঠাৎ ছাদের গেটের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সে দিকে ফিরে তাকালাম আমি। আর তাকাতেই দেখলাম ভাইয়া গেটের সাথে হেলান দিয়ে আমার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। ভাইয়া কে দেখে যেন মনের মাঝে নেচে উঠল আমার। কেননা এখন আমার ভাইয়াকেই প্রয়োজন। কারণ আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করার জন্যে প্রথম গুটি হিসেবে আমি ভাইয়াকেই ব্যবহার করব। তাই দ্রুত ভাইয়ার কাছে ছুটে গিয়ে ওর হাত ধরে বললাম,

— তুমি এখানে কেন দাঁড়িয়ে আছো ভাইয়া? আসো এদিকে আসো, তোমার সাথে আমার একটু জরুরী কথা আছে।

আমাকে এভাবে খুশি হয়ে ওর হাত ধরে টেনে আনতে দেখে বেশ কিছুটা অবাক হল ভাইয়া। সেটা ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু আমি সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে ছাদের এক কোনায় দাঁড় করালাম। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম,

— ভাইয়া দেখো আজকের পরিবেশটা কত সুন্দর তাই না? কি সুন্দর মিলমিলে ঠান্ডা বাতাস বইছে, আর কত সুন্দর একটি অর্ধো চাঁদ উঠছে আকাশে।

আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ভাইয়া একবার আমার কপালে আর একবার আমার গলায় হাত দিয়ে স্পর্শ করে বলল,

— এই তোর শরীর ভালো আছে তো পুচকি? তুই এমন করছিস কেন বলতো? তুই তো কখনো এভাবে খুশি হয়ে এমন ভাবে কথা বলিস না? আজ হঠাৎ কি হল তোর আর এই সন্ধ্যা বেলা কেন ছাদে দাঁড়িয়ে আছিস একা একা? ভূতে ধরলো নাকি তোকে?

ভাইয়ার কথায় আমি খিল খিল করে হেসে দিয়ে বলে উঠলাম,

— ভুতে তো ধরেইছে তবে আজ নয় প্রায় একমাস আগে আর অনেকগুলো ভুতে। আচ্ছা বাদ দাও ওসব কথা! তোমার সাথে জরুরী কথা আছে আমার। আশা করি তুমি আমার কথাটা রাখবে প্লিজ।

— কি কথা বল শুনছি?

— ভাইয়া প্লিজ তুমি একটু আব্বু আর আম্মুকে বলোনা আমার একটা মোবাইল চাই। খুব আর্জেন্ট।

আমার কথা শুনে ভাইয়া বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

— এটা কি সত্যিই তুই বলছিস রাহি? নাকি এটা অন্য কাউকে দেখছি আমি?

ভাইয়ার কথা শুনে মুখ ফুলিয়ে বলে উঠলাম আমি,

— বাহ রে ভাইয়া! এখন নিজের বোনকে ও তুমি চিনতে পারছ না?

আমার কথায় ভাইয়া মুচকি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— আরে ধুর পাগলী আমি কি সেটা বলেছি নাকি? আসলে আব্বু তোকে অনেকবার ফোন কিনে দিতে চেয়েছে, আমিও চেয়েছি। কিন্তু তুই সবসময় বলতিস তোর ফোনের প্রয়োজন নেই। ফোন নিয়ে শুধু শুধু সময় ওয়েস্ট করতে চাস না। তাহলে আজকে তোর হঠাৎ কি হলো বলতো যে এখন ফোন চাইছিস?

— আমার একটা জরুরি প্রয়োজন ভাইয়া প্লিজ তুমি আব্বুকে বলে আমাকে একটি ফোনের ব্যবস্থা করে দাও। প্রয়োজন না হলে কি আমি চাইতাম বলো?

ভাইয়া আমার কথায় মুচকি হেসে বলল,

— চল নিচে যাওয়া যাক! আর চিন্তা করিস না আমি আজকে রাতের মাঝেই তোকে ফোন এনে দেবো প্রমিস।

ভাইয়ার কথায় আমি খুশি হয়ে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম। ভাইয়া ও মহা আদরে আমাকে বুকে জড়িয়ে নিল। তারপর দুই ভাইবোন মিলে নিচে নেমে আসলাম।

রাত 9:30, আমি নিজের রুমে বসে বসে কলম মুখের মধ্যে দিয়ে নানা রকম চিন্তা করছি। কিভাবে কি করব সে সব নিয়ে। হঠাৎ ভাইয়া পিছন থেকে এসে আমার চোখ ধরে বলল,

— বলতো পুচকি তোর জন্য আমি কি এনেছি?

আমি মুচকি হেসে ভাইয়ার হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,

— ভাইয়া তুমি আমার জন্য মোবাইল এনেছো?

ভাইয়া এবার আমার হাতে একটি প্যাকেট দিতে দিতে বলল,

— দেখ তো তোর পছন্দ হয়েছে কিনা?

আমি প্যাকেটটা হাতে নিয়ে দ্রুত সেটা খুলে বের করলাম। অনেক দামী একটি সুন্দর ফোন কিনে এয়েছে ভাইয়া আমার জন্য। খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে আমার। আমি খুশি হয়ে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে অনেক ধন্যবাদ দিলাম। ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

— পাগলী তোর এই হাসির জন্য আমি সবকিছু করতে পারি। জানিস তোর এই হাসিটা আমি কত মিস করেছি? কত দিন হয়ে গেল তোর মুখের হাসি আনন্দ টা দেখতে পাইনি আমি। আমার কতটা কষ্ট হয়েছে তুই জানিস?

— love you ভাইয়া, I love you so much.

— love you too পুচকি আমার। আচ্ছা শোন এই ফোনের মাঝে তোর জন্য আমি নতুন সিম কিনে ভরে দিয়েছি। সাথে সবকিছু সেটিং করে দেওয়া হয়েছে। এখন তুই শুধু ইচ্ছে মতো চালাতে পারবি এটা। আর যেটা বুঝতে পারবি না সেটা আমায় জিজ্ঞেস করিস আমি শিখিয়ে দেবো কেমন! আমি এখন যাই রে অনেক ক্ষুদা লেগেছে।তুই ডিনার করেছিস?

— হ্যাঁ ভাইয়া আমি একটু আগে ডিনার করেছি। তুমি যাও আমার কোন দরকার পড়লে আমি তোমায় বলবো!

আমার কথা শুনে ভাইয়া এবার আমার গালটা টেনে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমি দ্রুত গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে এসে খাটের উপর ফোনটা নিয়ে বসে পড়লাম। তারপর ফোনটা খুলে তার মধ্যে থেকে আমার সেই নতুন সিম টা বের করে নিলাম। সিমটা নিয়ে ধীরে ধীরে গুটি গুটি পায়ে দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে বাইরের দিকে উঁকি দিলাম। আর উকি দিতেই দেখি ভাইয়া ডিনার করছে মনোযোগ দিয়ে। আমি চুপিচুপি ভাইয়ার রুমে চলে গিয়ে ভাইয়ার ফোন থেকে ওর সিমটা বের করে আমার সিমটা ওর ফোনে তুলে দিলাম। তারপর ওর সিমটাকে নিয়ে আবার চুপি চুপি নিজের রুমে চলে আসলাম। এসে আমার ফোনের মধ্যে ওর সিমটা লাগিয়ে ফোনটা ওপেন করলাম। এবার শুরু হবে সব প্রমাণ জোগার এর পালা।

ফোনটা ওপেন হতেই আর সময় নষ্ট না করে দ্রুত সেই রাইয়ান নামে সেভ করা নাম্বার টা বের করে তাতে একটি মেসেজ সেন্ড করলাম। মেসেজে লিখে দিলাম,

“রাই আমি এই মুহূর্তে তোমার সাথে দেখা করতে চাই। খুব জরুরি একটি প্রয়োজন আছে রাহির ব্যাপারে। তুমি কি একটু আমাদের বাসার পাশের ওই পার্কটাতে আসতে পারবে?”

মেসেজটা সেন্ড করার কিছুক্ষণের মাঝেই ওপাশ থেকে মেসেজ আসলো,

“আমি এক্ষুনি আসছি রাকিব। তুমি চলে আসো”

মেসেজটা পেতেই আমার মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি ফুটে উঠলো। বুকের মধ্যে ধুকধুক করে উঠলো। তারমানে আমার ধারণাই ঠিক। এটা অন্য কেউ নয় এটা আসলে রাই এর নাম্বার। যেটা আমার জন্যেই ভাইয়া রাইয়ান নামে সেভ করে রেখেছে। তারমানে ওসব কিছুই আমার স্বপ্ন ছিলো না সবকিছুই সত্যি!

আমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিয়ে রুম থেকে বের হলাম রাই এর সাথে দেখা করব বলে। যখনই রুম থেকে বের হয়েছি সামনে আম্মু আর ভাইয়া পরলো। আম্মু আমাকে রেডি হয়ে বাইরে যেতে দেখে বেশ কিছুটা রাগী গলায় আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

— কি ব্যাপার রাহি তুমি এত রাতে একা একা কোথায় যাচ্ছ? এভাবে কাউকে কিছু না বলে?

আম্মুয় কথায় কী উত্তর দেবো বুঝতে পারছিনা আমি। তবুও যেভাবেই হোক আমাকে আজকে এখান থেকে একাই যেতে হবে নইলে সবকিছুই গুলিয়ে ফেলবো আমি। তাই কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলাম,

— আমার একটা প্রয়োজন আছে আম্মু। প্রয়োজনটা পার্সোনাল তাই যাব আর আসব। প্লিজ তুমি আমায় বাধা দিও না। আমি বেশিক্ষণ দেরী করবোনা এই যাব আর এই আসব।

আমার কথা শুনে আম্মু রাগে গলায় কিছু বলতে যাবে তখনই ভাইয়া ধপ করে আম্মুর হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলে উঠল,

— আম্মু তুমি ওকে যেতে দাও। বাধা দিও না হয়তো কোন প্রয়োজনে যাচ্ছে ও। আর তাছাড়া চিন্তা করো না আমি তো আছি আমি ওর সাথে যাচ্ছি।

ভাইয়া আমার সাথে যাবে শুনে এবার যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো আমার। আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে অসহায় ফেস করে বললাম,

— ভাইয়া আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানে তুমি যেতে পারবে না। আসলে আমি একটু পার্সোনাল কাজে যাচ্ছি। প্লিজ তুমি বোঝার চেষ্টা করো আর আম্মুকে বোঝোও আমাকে একটু যেতে দিতে।

আমার কথা শুনে ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কিছু একটা ভাবল তার পরে বললো,

— আচ্ছা ঠিক আছে তুই যা সমস্যা নাই। তবে বেশি দেরি করিস না তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস। রাত কিন্তু অনেক হয়েছে দেশের অবস্থাও তেমন ভালো নয়।

আমি ভাইয়ার কথা শুনে খুব খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম। আর একটি রিক্সা নিয়ে দ্রুত রওনা দিলাম পার্কের উদ্দেশ্যে। ভাবতেই পারিনি বাসা থেকে বের হতেই সামনে একটি রিক্সা পেয়ে যাব। যেনো রিক্সাটা আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল।

রিকশায় করে পার্কের দিকে যত এগিয়ে যাচ্ছি তত যেন মনের মাঝে উত্তেজনা হাজার গুণ বেড়ে যাচ্ছে আমার। আজকে আমি সব প্রশ্নের উত্তর পাবো ভাবতেই একটা ভীষণ ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করছে মনে। রাজ কে আবার আগের মত আমার স্বামী হিসেবে ফিরে পাবো ভাবতেই যেন খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি। ইচ্ছা করছে ডানা থাকলে এতক্ষন উড়ে চলে যেতাম পার্কে। আর রাই এর সাথে সব কথা বলে সবকিছু জেনে নিতাম। উত্তেজনার কারনে অল্প রাস্তাকেও যেনো হাজার মাইল দুরত্য মনে হচ্ছে আমার। এভাবে চিন্তা করতে করতে একসময় পার্কের গেট এ পৌঁছে গেলাম আমি। পৌঁছাতেই তাড়াতাড়ি করে রিক্সাভাড়া মিটিয়ে পার্কের মধ্যে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম। কিন্তু গেটের কাছে যেতেই দেখতে পেলাম পার্ক অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। এটা দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল আমার। ফিরে আসতে নিয়েও আবার চিন্তা করলাম পার্ক বন্ধ হলে কি হবে রাই তো এখানে আসতে পারে! তাই আর কিছু না ভেবে পার্কের সামনে থাকা একটি বেঞ্চের উপর গিয়ে বসে পড়লাম। আর রাই এর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

বেশ অনেকক্ষণ সময় হল পার্কের গেটের সামনে বসে আছি আমি। কিন্তু আশেপাশে একটি জনমানবের চিহ্ন মাত্র নেই। বেশ কিছুক্ষণ পরপর রাস্তা ধরে শুধু কয়েকজন করে হেটে যাচ্ছে। এখন বেশ ভয় ভয় লাগছে আমার। রাত 10 টার উপরে বেজে গেছে কিন্তু রাই এর কোন দেখা নেই। হঠাৎ চোখে পড়ল একটি কালো গাড়ি এগিয়ে আসছে পার্কের এদিকে। গাড়িটা দেখে চিনতে আমার আর বেগ পেতে হল না। কারন এটা আরিয়ানের গাড়ি। এই গাড়িতে বহুবার চড়েছি আমি আরিশার সাথে। গাড়িটাকে দেখেই আমি দ্রুত বেঞ্চের থেকে নেমে একটু আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। কারণ আমি জানি রাই হয়তো আমাকে এখানে দেখলেই এখান থেকে পালিয়ে যাবে। আমার কোন কথাই শুনতে চাইবে না। কারণ এ কয়দিনে যতোটুকু বুঝতে পেরেছি সবাই কোনো না কোনো কারণে আমার সাথে মিথ্যা অভিনয় করে চলেছে। আর এসবের উত্তর জানতে হবে আমায়। কিন্তু তাতে ধৈর্য হারালে চলবে না। তাই দ্রুত লুকিয়ে পড়লাম আমি। আর চুপটি করে দেখতে লাগলাম কি হয়। তখনই দেখলাম গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে আসছে রাই। আর আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ভাইয়াকে খুঁজছে হয়তো।

আশেপাশে চোখ বুলিয়ে যখন ভাইয়া কে কোথাও দেখতে পারলো না রাই। তখন ফোন বের করে ভাইয়াকে ফোন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো।ওকে যখনই ফোন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে দেখলাম তখনই আমি দ্রুত আমার ফোনটা সাইলেন্ট করে ফেললাম। যার কারণে রাই আর ফোন দিলেও ফোনের শব্দ ওর কান পর্যন্ত পৌঁছালো না। ফোন বাজতেই আমি ফোনটা রিসিভ করে নিজের কানে ধরে রাখলাম কিন্তু কোনো কথা বললাম না। তখনই রাই গাড়ির দিকে ঘুরে রাগি গলায় বলে উঠল,

— কি ব্যাপার রাকিব আমি তো এসে গেছি কিন্তু তুমি এখনো আসনি কেন? আমাকে ফোন করে ডাকলে এখন তোমারি দেখা নেই?

আমি ধীরে ধীরে ফোন কানে ওর পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তারপর ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম,

— আমি তো অনেক আগেই চলে এসেছি রাই। শুধু তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here