You are my property,Part_22,23
M Sonali
Part-22
৭ দিন পর,,,,,,,,
দুপুর ৩.০০ টা
আমাদের বাসার ছাদের উপর বসে আছি আমি আর আরিশা। দুজনেই আলোচনা করছি কালকে কলেজে নবীনবরণ উৎসব এর বিষয়ে। আসলে নবীনবরণ উৎসবে যাওয়ার মতো কোন ইচ্ছাই নাই আমার। কেন জানি না একটুও যেতে ইচ্ছে করছে না আমার সেখানে। কিন্তু ভাইয়া আর আরিশার জোর করার কারনে অনিচ্ছা সত্যেও যেতে বাধ্য হয়েছি আমি। আর তার ওপর আলিশা জোর করে ধরেছে শাড়ি পরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু শাড়ি পড়াটা যে আমার কাছে অসম্ভব বিরক্তি লাগে সেটা ওকে কিভাবে বোঝাবো আমি। তবে আরিশা তো নাছোড়বান্দা। আমাকে শাড়ি না পরিয়ে ছাড়বেই না সে। আর এখন ওর আমাদের বাসায় আসার একটি কারণ আমাকে নিয়ে শপিং মলে গিয়ে পছন্দ করে শাড়ি কিনে আনা। যদিও আমার যাওয়ার একদমই ইচ্ছা নেই তাই সে এখন জোর করে আমাকে রাজি করানোর জন্য ছাদে নিয়ে এসেছে। অনেক জোরাজুরির পর আর না করতে পারলাম না। তাই রাজি হয়ে গেলাম আমি। আমি রাজি হতেই আরিশা এমনভাবে লাফিয়ে উঠলো যেন বিশ্ব জয় করে ফেলেছে ও।
— ও রাহি তোমাকে অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ। তুমি জানো তুমি রাজি হওয়ায় আমি ঠিক কতটা খুশি হয়েছি! এখন দেরি না করে জলদি চলো তো রেডি হয়ে নাও। আমরা এখনই শপিংমলে যাব।
— আরে এখনই শপিংমলে যাব মানে তুমি তো এই কিছুক্ষণ হলো আসলে। আর কিছুক্ষণ থাকি না তারপরে না হয় যাব! আর তাছাড়া তুমি আসার পরে কিন্তু এক কাপ কফি ছাড়া আর কিছু খাওনি। এখানে একটু বসো আমি নাস্তা নিয়ে আসছি। তারপরে না হয় যাব!
— সে কথা বললে তো চলবে না রাহি। তাড়াতাড়ি চলো এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেছে।আর নাস্তা কেনো আমি তোমার এখানে ডিনার করে যাবো আজ কেমন?
আরিশার কথা শুনে খুশি হয়ে গেলাম আমি। আর হাসি মুখে বলে উঠলাম,
— আচ্ছা ঠিক আছে তাই হবে। তাহলে চলো এখন রেডি হয়ে নেই।
দুজন মিলে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম শপিং মলের উদ্দেশ্যে। আরিশাকে দেখে অসম্ভব খুশি লাগছে। আমরা বাসা থেকে বেরিয়ে গেটের কাছে বের হতেই দেখলাম একটি কালো রংয়ের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে গেটের বাইরে। গাড়িটাকে দেখে আমার চিনতে একটুও অসুবিধা হলো না। কারণ এটা আরিয়ানের গাড়ি। আরিশার বয়ফ্রেন্ড আরিয়ানের গাড়ি এটা। গত 7 দিন হলো গাড়িটাকে এত বার দেখেছি যে মুখস্ত হয়ে গেছে গাড়িটার সব কিছু।
গাড়িটাকে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পা যেনো সেখানেই থেমে গেল আমার। আমি আর সামনের দিকে হাঁটলাম না। আমাকে থেমে যেতে দেখে আরিশা আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— কি হলো রাহি থেমে গেলে কেন? তাড়াতাড়ি চলো আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আমি আরিশার দিকে তাকিয়ে গম্ভির গলায় বলে উঠলাম,
–তুমি তোমার বয়ফ্রেন্ডকে কেন ডেকেছো আরিশা? আমরা দুজনেই চলে যেতাম!
— আসলে কি বলো তো সারাদিন তো আরিয়ান কাজে ব্যস্ত থাকে। তাই ঠিক করে আমার সাথে দেখা বা কথা বলতে পারেনা। যে কারণে সব সময় আমায় মিস করে ও। আসলে অসম্ভব ভালোবাসে তো তাই। তাই যখনই চান্স পায় ছুটে আসে আমার সাথে সময় কাটাতে। আজকে নাকি ওর সময় ছিল আর যখন শুনেছে আমি তোমায় নিয়ে শপিং মলে যাব! তাখনই চলে এসেছে এত টুকু সময় আমার সাথে কাটাবে বলে। প্লিজ তুমি রাগ করোনা। চলনা তাড়াতাড়ি যাই ওর আবার সময় শেষ হয়ে যাবে।
আরিশার কথা শুনে আমি কোন উত্তর দিলাম না। মাথা নিচের দিকে করে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে হালকা করে নিশ্বাস ছাড়লাম। তারপর আরিশার দিকে তাকিয়ে মলিন হাসি দিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালাম। কেন জানিনা আরিশাকে আরিয়ানের সাথে দেখলে আমার একটুও ভালো লাগে না। বুকের ভেতর কেমন যেনো হাহাকার করে। সব কিছু ফাঁকাফাঁকা লাগে। যেন অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছি আমি। গত সাত দিনে আরিয়ানের সাথে অসংখ্য বার দেখা হয়েছে আমার কিন্তু কখনোই দুজনের মাঝে দুই একটা কথাও হয়নি। যখন’ই দেখা হয়েছে সে আরিশাকে নিয়েই ব্যস্ত ছিল। দেখেই বোঝা যায় সে হয়তো আরিশাকে অনেক ভালবাসে। কিন্তু কেন জানি না ওদের ভালোবাসাটা দেখে ভালো লাগলেও বুকের মাঝে সব সময় এক হাহাকার এবং ফাঁকা ফাঁকা অনুভুতি হয়। বারবার মনে হয় আমার ওসব স্বপ্ন ছিল না সত্যি ছিল। আর এই আরিয়ান’ই আমার রাজ, আমার স্বামী ও। যে আমায় পাগলের মতো ভালবাসতো। যার নাম শুধু আমার হাতেই নয়। আমার হৃদয় গহিনেও লেখা ছিলো।
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই গাড়ির কাছে পৌঁছে গেলাম আমরা। কিন্তু আরিয়ানকে কোথাও দেখতে পাচ্ছিনা। আরিশা এদিক ওদিক তাকিয়ে আরিয়ান কে খুঁজতে লাগল। তখন’ই গাড়ি থেকে ড্রাইভার নেমে এসে বলল,
— ম্যাডাম স্যার আসেন নি উনি শপিংমলে আছেন। আপনাদের নিয়ে যেতে বলেছেন। কোন একটা জরুরি কাজ এর জন্য একটু দেরি হয়ে গেছে তাই উনি আসতে পারেনি।
ড্রাইভার এর কথায় মন কিছুটা মন খারাপ করলো আরিশা। তারপরে আবার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
— আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই, চলো রাহি।
তারপর গাড়িতে উঠে বসলাম আমরা। আর রওনা হলাম শপিং মলের উদ্দেশ্যে। বেশ কিছুক্ষণের মাঝেই আমরা শপিং মলের কাছে পৌছে গেলাম। তারপর আরিশার সাথে একসাথে শপিংমলের মাঝে প্রবেশ করলাম। বিশাল বড় শপিং মল এটা, ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় শপিং মল। ভেতরে গিয়ে একটি শাড়ির দোকানে নিয়ে গেল আরিশা আমায়। তবে ও বারবার আশেপাশে আরিয়ানকে খুঁজছে। আর সাথে আমিও না চাওয়া সত্ত্বেও আরিয়ানকে খুঁজে চলেছি। জানিন না কেনো ওনাকে না দেখে আমারও ভীষণ খারাপ লাগছে। তবুও নিজের খারাপ লাগা ভালোলাগাটাকে আড়াল করে রেখে শাড়ি দেখার দিকে মনযোগ দিলাম। বেশ অনেকগুলো দামী দামী শাড়ী বিছিয়ে রাখা হয়েছে আমাদের সামনে। সবগুলোই একটা একটা করে বেছে বেছে দেখছি আমি আর আরিশা। সবগুলো তখন’ই পাশে কারো উপস্থিতি অনুভব করলাম আমি। পাশে ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলাম আরিয়ান এসে শাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখতেই যেন বুকের মাঝে ধুকপুকানি হাজার গুণ বেড়ে গেল আমার। কেন যেন ভীষণ অস্বস্তি হতে লাগল সাথে এক অদ্ভুত ভালো লাগার অনুভুতি দোলা দিয়ে যেতে লাগলো মনে।
হঠাৎ আরিয়ানের কথায় ধ্যান ভাঙলো আমার। ও আমার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— হাই রাহি, কেমন আছো তুমি? আমি কি তোমাদের শাড়ি চুজ করতে হেল্প করবো? আমার চয়েজ কিন্তু এতটাও খারাপ নয়। সো একটা চান্স দিতেই পারো!
আমি ওনার কথায় বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। কী উত্তর দেবো কিছুই যেনো আমার পেট থেকে আর মুখ পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। কেন জানিনা হাত-পা থরথর করে কাঁপতে লাগলো আমার। উনি হয়তো আমার অস্বস্থিটা বুঝতে পারলেন। তাই হালকা মন খারাপ করে শুধু বললেন,
— ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমি কি আরিশাকে একটু ওদিকে নিয়ে যেতে পারি? মানে ওর সাথে আমার কিছু দরকারী কথা ছিল। তুমি ততক্ষণ একা একা শাড়ি চয়েজ করতে পারো প্লিজ।
আমি ওনার কথার কোন উত্তর না দিয়ে শুধু মাথা ঝাকালাম। এদিকে আমার সারা শরীর ঘেমে একাকার অবস্থা। বোরকার জন্য হয়তো বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু মুখটা বারবার টিস্যু দিয়ে মুছছি আমি। উনি আমার কথার উত্তরের অপেক্ষা না করে আরিশাকে সাথে নিয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে গেলেন। উনি চলে যেতেই যেন অনেকটা স্বস্তি ফিরে পেলাম আমি। ধীরে ধীরে নিজেকে স্বাভাবিক করতে লাগলাম। আমি বুঝতে পারি না কেন আমার সাথে এরকম হয়। কি সমস্যা আছে আমার মধ্যে?
প্রায় 15 মিনিট হয়ে গেল একা একাই শাড়ি দেখছি আমি। কেন জানিনা শাড়ি দেখায় মন বসছে না। যে কারণে সামনে একশটার বেশি শাড়ি থাকা সত্ত্বেও একটাও চুজ করতে পারছি না। তখনই আমার সামনে এসে দাঁড়াল আরিশা আর আরিয়ান। দুজনের মুখেই মুচকি হাসি। আরিশা এসে আমার পাশে বসতে বসতে বলল,
— কি হল কয়টা শাড়ি পছন্দ করলে রাহি?
ওর কথায় ওর দিকে ফিরে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে উঠলাম আমি,
— এখনও একটাও পছন্দ করতে পারিনি। কেনো জানিনা একটাও পছন্দ হচ্ছে না আমার।
কথাগুলো বলে মন খারাপ করে বসে রইলাম আমি। আমাকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে ফিক করে হেসে দিল আরিশা। তারপর বলে উঠল,
— এমন ছোট বেবিদের মতো ঠোঁট উল্টাতে হবে না রাহি বেবি। তোমার শাড়ি আমি পছন্দ করে দিচ্ছি ওয়েট।
কথাটা বলেই দোকানদারকে বলে আরো অনেকগুলো শাড়ি নামালো আরিশা আমার সামনে। সব গুলোর মধ্য থেকে একটি হলুদ শাড়ি তুলে আমার হাতে দিয়ে বলল,
— দেখো তো এই শাড়িটা কেমন লাগে?
আমি দেখে শুধু মাথা ঝাকালাম ভালো-মন্দ কিছুই বললাম না। আরিশা ওটা ফেলে রেখে এবার একটা কলা পাতা কালার অনেক সুন্দর একটি শুতি শাড়ি আমার কাছে দিয়ে বললো,
— দেখো তো এইটা কেমন লাগে? এটাতে তোমায় অনেক সুন্দর মানাবে।
এবারকার শাড়িটা বেশ পছন্দ হলো আমার। শাড়িটা হাতে নিয়ে আমি বলে উঠলাম,
— বাহ শাড়িটা তো ভিষন সুন্দর! আমি এটাই নিবো।
আমার কথা শুনে এবার বেশ খুশিই হলো আরিশা। ও দোকানদারকে বলে দুইটা ঐ একি শাড়ি নিলো। আর বললো দুজন এক সাথে এক সাজে কলেজে যাবো কাল। শাড়ি দুটো কিনে নিয়ে ফিরে আসার সময় গেটের কাছে আসতেই হঠাৎ আরিশা বলে উঠলো,
— তুমি এখানে একটু দাঁড়াও রাহি। আমি একটু দোকান থেকে আসছি। ওই দোকানে ভুল করে আমার ফোনটা ফেলে এসেছি।
কথাটা বলে আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরিশা চলে গেল সেই দোকানে। আমি গুটি গুটি পায়ে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ালাম। আরিয়ানও শপিং মলের ভিতরেই ছিলেন। একটু পরে হাতে একটি শপিং ব্যাগ নিয়ে ফিরে এলো আরিশা। তার সাথে আরিয়ানও। ওর হাতে শপিং ব্যাগ দেখে আমি জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
— আবার শপিং ব্যাগ কেন? আবার কি কিনলে আরিশা?
আমার কথায় ও মুচকি হেসে বলল,
— পরে বলব এখন চলো যাওয়া যাক!
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,
You are my property
Part_23
M Sonali
ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাচ্ছে আরিয়ান। আর পিছনের সিটে আমি আর আরিশা বসে রয়েছি। শপিং মল থেকে বের হতেই আরিয়ান নিজের ড্রাইভারকে কি একটা কাজে পাঠিয়েছে। তাই এখন নিজেকেই ড্রাইভার হতে হয়েছে তার। আমার সাথে বেশ কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে আরিয়ানের গাড়ির ভেতর থাকা আয়নার মধ্যে। আর প্রতি বারই চোখাচোখি হওয়ার সাথে সাথে আরিয়ান নিজের চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নিয়েছে। সাথে আমিও। সারাটা রাস্তা জুড়ে আমি আর আরিশা মিলে গল্প করেছি কালকের নবীনবরন উৎসবের বিষয়ে। তবে আরিয়ান একটা কথাও বলেনি পুরো রাস্তা জুড়ে। একদম চুপচাপ গাড়ি চালিয়েছে সে। আমরাও তাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করিনি। বেশ কিছুক্ষণ পর আমার বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো গাড়ি। গাড়ি থামতেই নেমে পড়লাম আমি। আমার পিছু পিছু আরিশাও গাড়ি থেকে নেমে আসলো। আমি আরিশার হাত ধরে নিয়ে বাসার মধ্যে ঢুকতে গেলে আরিশা বলে উঠলো,
— আমি এখন তোমাদের বাসায় যেতে পারব না রাহি। আমার বাসায় একটু জরুরী কাজ আছে। তুমি বরং যাও কাল দেখা হবে তোমার সাথে নবীনবরন উৎসবে।
আরিশার কথায় ওর দিকে রাগি চোখে তাকালাম আমি। তারপর গাল ফুলিয়ে বলে উঠলাম,
— আরিশা এটা কিন্তু মোটেও ঠিক নয়। তুমি আমাকে নিয়ে শপিংমলে যাওয়ার আগে বলেছিলে তুমি আজকে আমার সাথে আমাদের বাসায় ডিনার করবে। তাহলে এখন কেন বাহানা করছো? আমি কোন কথা শুনতে চাই না তোমাকে এখনই আমার বাসায় আসতে হবে। আর রাতের ডিনার সেরে তারপর যাবে, তার আগে নয়।
আমার কথায় আরিশা এবার মাথা নিচের দিকে দিয়ে অসহায় ভাবে বলল,
— প্লিজ রাহি বোঝার চেষ্টা করো, আমারও অনেক ইচ্ছা আছে তোমার সাথে ডিনার করা। কিন্তু কি করবো বল, সবসময় একটি না একটি ব্যস্ততা থেকেই থাকে। অন্য একদিন আসবো না হয়। প্লিজ রাগ করো না। আর তাছাড়া আরিয়ানও আমার জন্যে দাঁড়িয়ে আছে দেখো। এখন ওকে ছাড়া এভাবে গেলে ও কি ভাববে বলো তো?
আরিশার এমন অসহায় ভঙ্গিতে কথা বলা দেখে আর কিছু বলতে পারলাম না আমি। তবে একবার আমি গাড়িতে বসে থাকা আরিয়ান এর দিকে তাকালাম। আর তাকাতেই যেন বুকের মাঝে কেঁপে উঠল আমার। কেননা আরিয়ান কেমন অসহায় ভঙ্গিতে মায়া ভরা চোখে আমার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক অব্দি ফেলছেন না সে। তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কেন জানি না আমার পুরো শরীর জুড়ে একটি শিহরন বয়ে গেল। এ শিহরণটা ভয়ের নাকি ভালোলাগার কোন কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না আমি। সে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন তার অন্য কোন দিকে আর কোন খেয়াল নেই। এমন কি আমি তার দিকে তাকানোর পরেও সে চোখ নিচে নামিয়ে নিলেন না। ওনাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে এবার বেশ অস্বস্তি লাগতে লাগলো আমার। কেন জানি না ভেতর থেকে কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগল। তাই আর সেখানে এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে আমি আরিশার থেকে বিদায় নিয়ে সামনের দিকে হাটা দিলাম। তখনি আমার হাত ধরে টান দিয়ে আরিশা বললো,
— কোথায় যাচ্ছো রাহি, তোমার সাথে আমার আরো কিছু কথা আছে।
আমি আবার থেমে গিয়ে ওর দিকে ফিরে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
— কি কথা আরিশা?
আমার কথার উত্তরে আরিশা একটি মিষ্টি করে হাসি দিয়ে নিজের হাতে থাকা শপিং ব্যাগ টা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
— এতে তোমার জন্য একটি গিফট আছে রাহি। আমি শুধু তোমার জন্যই পছন্দ করে এটা কিনেছি। আশাকরি তোমার এটা ভাল লাগবে। আর তুমি এটা গ্রহণ করবে।
আরিশার কথা শুনে আমি একবার শপিং ব্যাগের দিকে আর একবার ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— কিন্তু এসবের কি দরকার ছিল আরিশা? আমি তো এমনিতে ও একটা শাড়ি কিনে এনেছি!
— মনে করো আমার পক্ষ থেকে এটা তোমার জন্য বন্ধুত্বের গিফ্ট। তাই এটা স্বাদরে গ্রহন করো।
ওর কথা শুনে আমি মাথা নিচের দিকে দিয়ে আস্তে করে বললাম,
— কিন্তু আমিতো তোমাকে কিছুই দিতে পারলাম না আরিশা!
ও আবারো একটি মিষ্টি হেসে বলে উঠলো,
— কখনো সময় এলে আমি সেটা তোমার কাছ থেকে চেয়ে নেব। তখন কিন্তু না করতে পারবে না কেমন? এখন এটা রেখে দাও আমি আসছি।কালকে দেখা হবে। সকাল সকাল রেডি হয়ে কলেজে চলে এসো কেমন।
কথাটা বলে আমার কোন কথার উত্তরের আশা না করে দ্রুত গিয়ে গাড়িতে উঠে বসল আরিশা। আরিশা গাড়িতে বসলেই আরিয়ান দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিয়ে স্থান ত্যাগ করল। যতদূর পর্যন্ত ওদের গাড়ি দেখা যায় আমি তাকিয়ে রইলাম গাড়িটার দিকে। তারপর চোখের আড়াল হতেই একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শপিং ব্যাগ দুটি হাতে নিয়ে বাসার মধ্যে প্রবেশ করলাম।
কলিংবেল চাপতেই আম্মু দরজা খুলে দিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে সামনের দিকে হাটা দিলাম। হাটতে হাটতে ভাইয়ার রুমের সামনে আসতেই রুমের মাঝে থেকে ভাইয়ার কিছু কথা কানে এসে বেজে উঠলো আমার। ভাইয়া কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। আর তাকে বারবার এই কথাটা বলছে যে,
— প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো আমি যখন তখন এভাবে তোমার কাছে আসতে পারি না। আর তুমিও ভুল করেও বাসায় আসবে না। রাহি যদি একবার বুঝে যায় তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তুমি তো সব বুঝতে পারছ নাকি?
ভাইয়ার এতোটুকু কথা শুনলেই যেন পা সেখানেই থমকে গেল আমার। আমি আরও একটু দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। ভাইয়া অ্যাকচুয়ালি কার সাথে কথা বলে সেটা বোঝার জন্য। কিন্তু তখনই ভাইয়া হঠাৎ করে পিছন ঘুরে তাকালো আর তাকিয়ে আমায় দেখতেই যেন থমকে গেল সে। কোনো কথাই আর বলবো না। শুধু বলল,
— আচ্ছা আ আমি এখন ফোন রাখছি। তোমার সাথে পরে কথা হবে।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো ভাইয়া আমি ভাইয়ার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভাইয়া ফোনটা পকেটে রাখতে রাখতে আমার পাশে এগিয়ে এসে বলল,
— কিরে তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন পুঁচকি? শপিংমলে শপিং করা শেষ? দেখি কি কি কিনলি?
ভাইয়ার কথা শুনে আমি বেশ ভালই বুঝতে পারছি ভাইয়া আমাকে ফোনের ব্যাপারটা ভুলাতে চাইছে আর কথা ঘুরানোর জন্য এভাবে জিজ্ঞেস করছে। আমি ভাইয়ার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে শপিং ব্যাগ গুলো ওর হাতে তুলে দিয়ে বলে উঠলাম,
— এগুলো দেখো সব এতেই আছে যা যা শপিং করেছি। আর তোমার ফোনটা একটু দাও তো!
আমার কথায় যেন ভাইয়া এবার অনেকটা ঘাবড়ে গেলো। বেশ কিছুটা ঘামও ঝরতে লাগল ওর কপাল বেয়ে। আমি আবারও বলে উঠলাম,
–কি হলো ভাইয়া আমার কথা বুঝতে পারোনি? তোমার ফোনটা একটু দাও।
ভাইয়া পকেট থেকে রুমাল বের করে নিজের কপালের ঘামটা মুছে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বেশ ঘাবড়ানো কন্ঠে বলে উঠল,
— আমার ফোন দিয়ে কি করবি তুই রাহি? কেবল বাইরে থেকে এসেছিস যা ফ্রেশ হয়ে নে। ফোন না হয় পরে নিস।
আমি এবার বেশ কিছুটা গম্ভীর স্বরে বলে উঠলাম,
— তুমি তো কখনো ফোন চাইলে আমাকে মানা করো না ভাইয়া! তাহলে আজ কেন মানা করছ? দাওনা একটু তোমার ফোনটা আমার একটু দরকার আছে।
ভাইয়া এবার না চাইতেও নিজের ফোনটা বের করে আমার হাতে দিলো। আমি ফোনটা নিয়েই দ্রুত কল লিস্ট চেক করার জন্য ঢুকে পড়লাম। কল লিষ্ট এর প্রথমেই একটি নাম্বার ভেসে উঠলো চোখের সামনে। যে নাম্বারটি সেভ করা আছে রাইয়ান দিয়ে। আমি নাম্বারটা ভাইয়ার সামনে তুলে ধরে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
— ভাইয়া এই নাম্বারটা কার? আর এই রাইয়ান’ই বা কে?
আমার কথার উত্তরে ভাইয়া থতমত খেয়ে বলে উঠলো,
— রাইয়ান আমার কলিগ। আমরা একসাথে জব করি। তুই হঠাৎ এসব নিয়ে পড়লি কেন বলতো পুচকি?
আমি ভাইয়ার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে সেই নাম্বারটায় ডায়াল করলাম। আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে এই নাম্বারটা আর কারো নয় এটা রাই এর নাম্বার। আর ভাইয়া এতক্ষণ রাই এর সাথেই কথা বলছিল।
পুউউ পুউউ শব্দে বেশ কয়েকবার রিং বাজতেই ওপাশ থেকে ফোনটা রিসিভ হলো। কিন্তু আমি কোনো কথা না বলে একদম চুপ করে রইলাম ও পাশে কে আছে সেটা জানতে। ওপাশ থেকে একটি ছেলে কন্ঠ বলে উঠল,
— কি হয়েছে রাকিব, আবার ফোন করলে কেন? হ্যালো হ্যালো রাকিব কি হলো কথা বলছো না কেনো?
ছেলেটার কথা শুনতেই আমি ফোনটা কেটে দিলাম। তার মানে আমার ধারণা ভুল ছিলো। সত্যি এটা ভাইয়ার কলিগ এর নাম্বারই হবে। আর ভাইয়া এতক্ষণ তার কলিগ এর সাথেই কথা বলছিলো। আমাকে ফোন কেটে দিতে দেখে ভাইয়া এবার বেশ রাগী গলায় বলে উঠলো,
— কি হলো নিজেই ফোন করলি, আবার কথা না বলে কেটে দিলি কেন বলতো? আসলে তোর কি হয়েছে কি পুচকি? এমন কেন করছিস তুই?
ভাইয়ার কথার কোন উত্তর না দিয়ে ফোনটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম আমি। কেন জানিনা আমি ওই ঘটনাগুলোকে স্বপ্ন হিসাবে মেনে নিয়েও মেনে নিতে পারছি না। যেন বারবার আমার মন বলছে এগুলো কোন কিছু স্বপ্ন ছিল না। সবই ছিল সত্যি যে সব কিছু আমার সাথে ঘটেছে। তাহলে সবকিছু কেন এত বদলে গেল? এসব ভেবে মাথা ধরে যাচ্ছে আমার। আর কিছু ভাবতে পারছিনা আমি। তাই শপিং ব্যাগ গুলো বিছানার পাশে রেখে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় চুপটি করে শুয়ে পড়লাম। কারো সাথে আর কোন কথা বলার ইচ্ছা হচ্ছে না আমার।
———————————-
রাত দশটা
আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙলো আমার। আম্মু আমাকে ডাকতে ডাকতে বেশ রাগী গলায় বলে উঠলো,
— কি হলো রাহি এত ঘুমালে চলে? সেই শপিং মল থেকে আসার পরে তো আর রুম থেকেই বের হলে না। কি হয়েছে কি তোমার বলতো? তাড়াতাড়ি উঠো, উঠে ডিনার সেরে নাও অনেক রাত হয়ে গেছে। তারপর না হয় আবার ঘুমাবে।
আমিও আর কথা না বাড়িয়ে উঠে ওয়াশরুমে গেলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে ডিনার করতে চলে গেলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর ডিনার সেরে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানার পাশে আসতেই চোখ পরলো বিছানায় থাকা শপিং ব্যাগগুলোর দিকে। আমি গুটি গুটি পায়ে শপিং ব্যাগের কাছে এগিয়ে গিয়ে সেগুলো হাতে তুলে নিলাম। তারপর আরিশার গিফ্ট করা ব্যাগটা খুলে তার ভিতর থেকে একটি প্যাকেট বের করলাম। প্যাকেটটা খুলতেন ভিতর থেকে অনেক সুন্দর একটি নীল রঙের শাড়ি বের হয়ে এল। অসম্ভব সুন্দর দেখতে শাড়িটা। একদম মিলমিলে পাতলা তবে অনেকটা ঘনসুতার। যার কারণে পড়লে হয়তো পেট দেখা যাবে না। শাড়িটা দেখে অসম্ভব ভালো লাগলো আমার। সত্যিই আরিশার পছন্দটা অনেক সুন্দর। শাড়ি টা আমি বেশ কয়েকবার এপিঠ-ওপিঠ করে দেখতেই শাড়ির ভেতর থেকে ঝনঝন শব্দে কিছু একটা নিচে পড়ে গেল। আমি নিচে তাকাতেই আরো বেশি অবাক হয়ে গেলাম। কেননা শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে জুয়েলারি রাখা আছে ভিতরে। চুরি, ঝুমকো, মালা, টিকলি সবকিছুই রাখা আছে এতে। আর সবগুলো জিনিস’ই অসম্ভব সুন্দর। খুব ভালো লাগলো আমার শাড়ি ও জিনিসগুলো দেখে। আমি সুন্দর করে আলমারিতে সব গুছিয়ে তুলে রেখে দিলাম। কোন একসময় পড়বো ভেবে। তারপর বাকি সব শপিং ব্যাগগুলোও আলমারিতে গুছিয়ে রেখে চুপচাপ এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম।
চলবে,,,,,,,,