You are my property,Part_2
M Sonali
বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে থেকে আকাশের দিকে একমনে তাকিয়ে আছি আমি। আর ভেবে চলেছি হাসপাতালের সেই ঘটনাগুলো। এখন পর্যন্ত আমার মাথায় ঢুকছেনা উনি আমার সাথে কেন এমন ব্যবহার করলেন? হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর আমার হাতে ব্যান্ডেজ দেখে সবাই অনেক উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আমার হাতে কি হয়েছে সেটা জানার জন্য। আমি তাদের সত্যিটা বলতে পারিনি। তাই মিথ্যা করে বলেছি আসার সময় ছোট একটি অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে তখন হাত কেটে গেছে। যদিও আমার মনে হয় না এটা সবাই বিশ্বাস করলেও ভাইয়া বিশ্বাস করেছে! তবুও তাদের এটাই বলেছি আমি। আমি কখনোই নিজের পরিবারের কাছে কোন বিষয়ে মিথ্যা বলি না। কিন্তু আজকে কেন জানিনা সত্যিটা বলার মত সাহস ছিল না আমার। তাই মিথ্যাটা কে আকড়ে ধরলাম। কিন্তু সেই থেকে মনটাকে আর সায় দিতে পারছি না। বাবা-মার কাছে এত বড় একটি মিথ্যা কথা বলে। জানিনা সেই লোকটিকে বাঁচানোর অপরাধে কেন তিনি আমার হাতটা এভাবে কাটলেন। এবং নিজের নাম লিখে দিলেন। এখন শুধু একটাই চিন্তা হচ্ছে আমার এই ব্যান্ডেজ খোলার পরে যদি হাতে সেই রাজ নাম লেখাটা স্পষ্ট দেখা যায়! তাহলে সকলের কাছে আমি কি উত্তর দিব? কি করে বোঝাবো যে অ্যাক্সিডেন্টে আমার হাতে এই লেখা চলে এসেছে? এসব কথা ভাবতে ভাবতেই একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি। তখনই পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশে ঘুরে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ ভাইয়াকে দেখে অনেকটাই ঘাবড়ে গেলাম আমি। তবুও নিজেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে মুচকি হেসে বললাম,
— তুমি কখন এখানে এসে দাঁড়িয়েছো ভাইয়া?
ভাইয়া আমার কথার উত্তর না দিয়ে আমাকে ভালো করে একবার পর্যবেক্ষণ করল। তারপর কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমার কেটে যাওয়া হাতটা এক টানে নিজের কাছে এগিয়ে নিল।তারপর হাতটাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এদিক ওদিক করে দেখে বলে উঠল,
— সত্যি করে বলতো পুচকি তোর হাতে কি হয়েছে? আমার কাছে একদম মিথ্যে বলার চেষ্টা করবি না বলে দিলাম!
ভাইয়ার কথা শুনে শুকনো ঢোক গিললাম আমি। যতটা বুঝতে পেরেছি ভাইয়া এখন আমার কাছ থেকে সত্যিটা না জেনে আমায় ছাড়বে না। কিন্তু ওকে দেখে আমি খুব ভয় পাই। যদিও পরিবারের মধ্যে মনে হয় আমায় সব চাইতে বেশি ভালবাসে ভাইয়া আর আদর করে পুচকি বলে ডাকে। কিন্তু তবুও ভাইয়ার শাসন টা অনেক কড়া। যখন শাসন করতে শুরু করে তখন তার শাসন টা একটু বেশি কড়া হয়ে যায়। অনেক ভয় করছে আমার এখন ওকে দেখে। আমাকে চুপ করে ভাবতে দেখে ভাইয়া আবারও রাগি গলায় ধমকের সুরে বলে উঠলো,
— কি রে পুচকি, আমি তোর কাছে কিছু জানতে চাইছি। বল কি হয়েছে তোর হাতে?
ভাইয়ার ধমক খেয়ে হালকা কেঁপে উঠলাম আমি। তারপর কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলাম,
— ভাইয়া বিশ্বাস করো আমার কোন দোষ নেই। আমি কালকে একজন আহত লোককে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম বলেছিলাম না?
— হ্যা বলেছিলি, তো সেটা তো ভালো কথা। তার সাথে হাত কাটার সম্পর্ক কি?
— আজকে তমাদের বাসা থেকে আমাদের বাসায় ফেরার পথে হাসপাতাল সামনে পড়লে ভাবলাম লোকটাকে একটু দেখে আসি, উনি কেমন আছে। তাই আমি বাসায় না ফিরে হাসপাতালে ওনাকে দেখতে যাই। আর তখন উনি,,,,!
এতটুকু বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম আমি। তখন গম্ভির গলায় হাতের মুঠ শক্ত করে ভাইয়া বলে উঠলো,
— তখন উনি কি?
ভাইয়ার গম্ভীর গলায় বলা কথা শুনে কান্নার তেজ যেন আরো বেড়ে গেল আমার। আমি এবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে সবকিছু খুলে বললাম ভাইয়ার কাছে। হাসপাতালে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা। আমার মুখে সবকিছু শুনে রাগে কটমট করতে লাগলো ভাইয়া। নিজের হাতের মুঠো শক্ত করে বলল,
— ওই লোকটার এত বড় সাহস আমার বোনের হাত কেটে নিজের নাম লিখে দেয়? তাকে বাঁচানোর ফলাফল এইভাবে দিলো বুঝি সে? তুই চিন্তা করিস না পুচকি আমি ওকে দেখে নেব। তুই এসব নিয়ে একদম ভাববি না। আর আব্বু আম্মুকে কিছু বলার দরকার নেই। তারা শুধু শুধু চিন্তা করবে। হাতের কেটে যাওয়া নিয়েও টেনশন করিস না। তোর হাতের ঘা শুকানোর জন্য আমি ঔষুধ এনে লাগিয়ে দেবো। দেখবি হাতে কোনো দাগই থাকবে না।
কথাগুলো বলে আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে নিজের বুকে টেনে নিল ভাইয়া। আমিও ছোট বাচ্চাদের মত ভাইয়ের বুকে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম। ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আমার কান্না থামানোর জন্যে দুষ্টুমি করে বলল,
— এই পাগলি একদম কাঁদবিনা। কাল না তোর বিয়ে? আজকে কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে পেত্নী সেজে বসে থাক। তারপর কালকে তোর বর তোকে বিয়ের আসরে দেখে পেত্নী ভেবে বিয়ে না করে ভয়ে দৌঁড় দিবে।
কথাগুলো বলেই হা হা করে হাসতে লাগলো ভাইয়া। ভাইয়ার কথা শুনে কান্না করতে করতেই হাসতে লাগলাম আমি। তারপর ভাইয়ার বুকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারতে লাগলাম।
ভাইয়া আমার হাতে কিল ঘুষি খেয়ে ছাদের উপর দৌঁড়াতে লাগল। আমিও ভাইয়ার পিছু পিছু ওকে ধরার জন্য দৌড় দিলাম। এভাবে বেশ কিছুক্ষন আমাদের ভাই বোনের খুনসুটি চললো ছাদে। তারপর ভাইয়া থেমে গিয়ে হাটুর ওপর হাত ভড় করে কিছুক্ষণ জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বলে উঠল,
— পুচকি এবার থেমে যা প্লিজ। আমি অনেক হাপিয়ে গেছি।
ভাইয়া কে থামতে দেখে আমিও থেমে গিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে বললাম,
— বলো আরো আমাকে পেত্নী বল, তারপর এভাবেই দৌঁড় করাব তোমাকে। একদম দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বুড়ো হয়ে যাবে তুমি।
ভাইয়া আমার কান টেনে দিয়ে বললো,
— পুচকি কি বললি তুই আমাকে? আমি বুড়ো হয়ে যাব? আরে দেখ আমি কত হ্যানসাম একটি ছেলে, আমার পিছু কত মেয়ের লাইন পড়ে থাকে তুই জানিস?
— থাকবেই তো দেখতে হবে না ভাইটা কার? রাহির ভাই বলে কথা সুন্দর তো হতেই হবে তাই না? আচ্ছা ভাইয়া চলো এখন নিচে যাওয়া যাক সন্ধ্যা হয়ে আসছে। একটু পরে মাগরিবের আজান হবে।
— তুই নিচে যা আমি এক জায়গায় যাব!
— এখন আবার কোথায় যাবে তুমি?
— হাসপাতলে যাব ওই লোকটিকে দেখতে। যার এত বড় সাহস যে আমার বোনের হাত কেটে নিজের নাম লিখে দেয়! ওর আজকে খবর করে দিবো আমি। তুই শুধু কেবিন নাম্বারটা বল!
— ভাইয়া প্লিজ এখন এসব ঝামেলার মধ্যে যেওনা। যা হওয়ার সেটা হয়ে গেছে। শুধু শুধু এসব ঝামেলায় জড়িয়ে কি লাভ বল? আর তাছাড়া আমি তো আর যাচ্ছি না উনাকে দেখতে। কাল তো আমার বিয়ে হয়ে যাবে তাই না? আজকে সময় টা অন্তত আমাকে দাও। কথাও যেওনা ভাইয়া। চলো না আজকে সবাই একসাথে অনেক মজা করি। কাল তো তোমাদের সকলকে ছেড়ে চলেই যাব।
কথাটি বলে মুখ গোমরা করে ফেললাম আমি। আর নিচের দিকে মাথা দিয়ে নিশ্চুপে কান্না করতে লাগলাম। আমার কথা শুনে ভাইয়া আমাকে বুকে টেনে নিয়ে বলল,
— ধুর পাগলী কে বলেছে তুই কালকে বাড়ি ছেড়ে একেবারে চলে যাবি? তোকে আমি আমার কাছেই রেখে দেবো। সকালবেলা উঠে তোকে না দেখলে আমার সারাদিন ভালো যায় না জানিস না তুই? প্রত্যেকদিন আমি যাব তোকে দেখার জন্য তোর শশুরবাড়িতে বুঝলি। এখন এসব নিয়ে চিন্তা করিস না আমি যাব না হাসপাতলে।চল নিচে যাই।
———————————
রাত ১২.০৫ মিনিট,,,
বিভোরে ঘুমিয়ে আছে রাহি ও ওর বাসার সবাই। হঠাৎ ফোনের ক্রিং ক্রিং শব্দে ঘুম ভাঙে রাহির।
রাহি অসম্ভব বিরক্তি নিয়ে নাম্বার না দেখে কল রিসিভ করে কানের কাছে ধরে ঘুমু ঘুমু গলায় বলে,
— হ্যালো কে বলছেন?
অপরপাশ থেকে কোনো উত্তর আসে না। রাহি ফোনটা কানের কাছে রেখেই আবারও ঘুমিয়ে পড়ে। রাহির নিঃশ্বাসের শব্দ স্পষ্টভাবে শুনতে পাচ্ছে রাজ।ও ফোনটা কানের কাছে ধরে নিয়েই মুচকি হেসে মনে মনে বলে,
— ফাজিল মেয়ে আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে কি সুন্দর নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে দেখো? ওয়েট করো রাহি বেবি কাল তোমার জন্যে একটি বড় ধামাকা অপেক্ষা করছে। মনে মনে
কথাগুলো মনে মনে ভেবেই বাঁকা হাসলো রাজ। তারপর বেশ কিছুক্ষণ রাহির নিঃশ্বাসের শব্দ শোনার পর ফোনটা কেটে দিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো।
চলবে,,,,,,,,