You are my property,Part_1
M Sonali
— একি কি করছেন কি আপনি? ছুরি দিয়ে কি করবেন আপনি? প্লিজ আমার হাত ছাড়ুন আমার ভীষণ ভয় লাগছে। আপনি আমার হাত কাটছেন কেন? আআআআ।
আকুতির সুরে কথাগুলো বলে কান্না করতে লাগলাম আমি। কিন্তু আমার কোন কথা না শুনে আমার হাতে ছুরি চালালেন সামনে বসে থাকা ভদ্রলোকটা। আর ছুরি দিয়ে আমার হাতে স্পষ্ট ভাবে লিখে দিলেন “Raj”। লেখাটা শেষ হতেই ছুরি টা পাশে সরিয়ে রাখলেন উনি। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে ডেভিল হেসে বলে উঠলেন,
— আমার সব জিনিসের ওপর আমার নাম লেখা থাকে। তাহলে যেটা শুধুমাত্র আমার অন্য কারো নয়, সেটার উপর নিজের নাম লেখা থাকবে না সেটা তো হতে পারে না তাই না?
কথাগুলো বলেই বাঁকা হাসলেন উনি। ওনার কথার কোন কিছুই বুঝতে পারলাম না আমি। কি বলতে চাইছেন উনি আমাকে? অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম আমি ওনার দিকে। আর হাত কেটে যাওয়ার জ্বালায় কান্না করতে লাগলাম। আমাকে এভাবে কান্না করতে দেখে উনি চিৎকার করে ডাক্তার কে ডাক দিলেন। উনার ডাকে যেন এক মুহূর্ত দেরি করলেন না ডাক্তার, দ্রুত এসে হাজির হল কেবিনে।
ডাক্তার কেবিনে এসে পৌঁছাতেই রাজ আমার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে ডাক্তারকে উদ্যেশ্য করে বলে উঠলেন,
— ডক্টর যত দ্রুত সম্ভব ওর হাতের ব্লাড পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিন। তবে হ্যাঁ এই ঘা যেনো না শুকায় এমন ঔষুধ দেবেন। এটা যেন কখনোই না শুকায় এটা সারা জীবন এভাবেই থাকবে।
ওনার কথা শুনে আমি এবং ডাক্তার দুজনেই বেশ অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিন্তু আমি এখনো কান্না করে চলেছি হাতের যন্ত্রণায়। ডাক্তার কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলেন,
— এ আপনি কি বলছেন মিস্টার রাজ! এই জায়গার ঘা না শুকালে তো ওনার হাতে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে? আর তাছাড়া ঘা না শুকালে অনেক সমস্যা হয়ে যেতে পারে ওনার হাতের!
রাগি চোখে ডাক্তারের দিকে ফিরে তাকালো রাজ। তারপর দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
— আমি এত কিছু শুনতে চাই না ডাক্তার। আমি চাই আমার এই নাম যেন সারা জীবন ওর হাতে লেখা থাকে। Because Rahi is just my property.
রাজের কথা শুনে অনেকটাই অবাক হয়ে গেলেন ডাক্তার। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে রাজকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
— ঠিক আছে মিস্টার রাজ, আপনি চিন্তা করবেন না আমি ওনার ঘা শুকানোর জন্য ওষুধ দেবো ঠিকই, তবে উনার হাতের এই কেটে যাওয়ার দাগটা কখনো শুকাবে না। ওখানে সারাজীবন সাদা দাগ হয়ে থাকবে। আর আপনার নামটাও স্পষ্ট দেখা যাবে। কিন্তু ঘা না শুকালে ওনার হাতে ইনফেকশন হয়ে, পড়ে হাত কেটে ফেলতে হতে পারে। এখন বলুন আপনি কি চাঁন?
ডাক্তারের কথায় কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কি যেনো ভাবলেন রাজ। তারপর উনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
— ঠিক আছে আপনি তাহলে সেটাই করুন ডাক্তার। কিন্তু খবরদার আমার নাম এখানে যেন সারা জীবন থাকে। আমার নাম টা যেনো স্পষ্ট দেখা যায় সারাজীবন।
এতক্ষণ আমি চুপ করে থাকলেও এখন আর চুপ থাকতে পাড়লাম না। অসম্ভব রাগ কাজ করলো আমার মাঝে। আমি নিজের হাতটা ঝারি মেরে তার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে রাগী গলায় বলে উঠলাম,
— কি পেয়েছেন কি আপনি? আর এমন করার মানে কি আমার সাথে? আমি আপনার সম্পত্তি মানে! কে বলেছে আমি আপনার সম্পত্তি? আজ বাদে কাল আমার বিয়ে আর আপনি এসব কি শুরু করেছেন আমার সাথে?
বিয়ের কথাটা বলতেই উনি লাফিয়ে উঠে আমার সামনে দাঁড়িয়ে, মুখের সামনে মুখ এনে রাগি গলায় বললেন,
— কে বলেছে তোমার বিয়ে? তোমার বিয়ে হলে শুধু এই রাজের সাথে হবে। অন্য কারো সাথে নয়। আজ থেকে তুমি এই রাজের সম্পত্তি। শুধু এই রাজের। You are just my property.understand?
হুংকার ছেড়ে কথাগুলো বললেন উনি। ওনার কথায় আমার সামনে থাকা ডাক্তার ও যেন কেঁপে উঠলেন, আর সাথে আমিও। আমি ওনার থেকে কয়েক পা পিছিয়ে গেলাম। কিছুতেই বুঝতে পারছি না আমি, কেন এমন করছেন উনি আমার সাথে? গতকাল ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্যেই কি আমার এমন অবস্থা? আমি কাঁপা কাঁপা গলায় উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার? যে আপনি আমার সাথে এমন করছেন? কালকে আপনাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়াই কি আমার ভুল ছিল? কেন এমন করছেন আপনি আমার সাথে?
কথাগুলো বলতে বলতে অঝোর ধারায় কান্না করতে লাগলাম আমি। আমাকে এভাবে কান্না করতে দেখে উনি ওনার রাগ দমন করে অনেকটাই শান্ত হয়ে গেলেন। তারপর আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বেডের উপর বসিয়ে ডাক্তার কে ইশারা করে ব্যান্ডেজ করে দিতে বললেন। কিন্তু আমার কোন কথার উত্তর দিলেন না উনি। আমারও কেন জানি আর সাহস হচ্ছে না ওনাকে কিছু বলার। ডাক্তার আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে চলে যেতেই উনি পাশ থেকে আবারো সেই ছুরি টা হাতে তুলে নিলেন। এবার ওনার হাতে ছুরি দেখে যেন প্রাণ পাখিটা উড়ে যাওয়ার অবস্থা হল আমার। আমি ওনার থেকে দূরে সরতে সরতে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
— ছু ছুরি দিয়ে কি করবেন আ আপনি? প্লিজ আমার হাত আর কাটবেন না। আমার ভীষণ ভয় করছে। আমি কোন ভুল করে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দিন কিন্তু এভাবে আমাকে কষ্ট দেবেন না প্লিজ।
কথাগুলো বলতে বলতে ভয়ে কান্না করে ফেললাম আমি। উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে ছুরিটা এবার নিজের হাতে চালালেন। এবং ওনার নিজের হাত কেটে সুস্পষ্টভাবে লিখলেন “Rahi”। ওনার হাতে আমার নাম লিখতে দেখে অবাক চোখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম আমি ওনার দিকে। উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠলেন,
— তুমি যেমন আজ থেকে আমার সম্পত্তি, তেমন আমিও আজ থেকে শুধু তোমারি সম্পত্তি। তাই তোমার হাতে যদি আমার নাম লেখা থাকে, তাহলে আমার হাতে কেন তোমার নাম লেখা থাকবে না?
উনার কথার কোন কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। শুধু অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে দেখছি। আসলে কি বলতে বা বোঝাতে চাইছেন উনি আমাকে? কোন কিছুই আমার মাথায় ঢুকছেনা। আমাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে ভাবতে দেখে উনি নরম গলায় বলে উঠলেন,
— এখন তুমি সোজা বাসায় চলে যাও রাহি। এসব নিয়ে তোমাকে আর ভাবতে হবে না। বাকি কথা তোমার সাথে আমার কালকে হবে। so good bye
উনার কেবিন থেকে বেরিয়ে আমি দৌড়াতে লাগলাম হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার জন্য। আমি জানি না উনি কেন এমন করছেন আমার সাথে। উনাকে তো আমি ঠিক করে চিনিও না। আর না উনি আমাকে চেনেন। তাহলে উনি আমার নামটাই বা কি করে জানলেন? যে নিজের হাতে লিখলেন? গতকাল বান্ধবীর বাসা থেকে ফেরার সময় রাস্তায় ওনাকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে আমি তাকে নিয়ে হাসপাতালে আসি। তারপর আজকে উনার কি অবস্থা সেটা জানতে আশাতেই উনি আমার সাথে এমন করলেন। কিন্তু কেন এমন করলেন এটা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিনা?
————————
আমার নাম আফিয়া আক্তার রাহি। আমি বাবা মার দুই মাত্র সন্তান। আমার একজন বড় ভাই আছে আর আমি ছোট। ভাইয়ার নাম রাকিব।বাবা-মা এবং ভাইয়ার অনেক আদরের মেয়ে আমি। পরিবারের ছোট বলে সবাই অনেক বেশি ভালোবাসে আমায়। আগামী শুক্রবার মানে আগামি কাল আমার বিয়ে। আমার বিয়েটা আব্বু ই ঠিক করেছেন ওনার পছন্দের ছেলের সাথে। আর ওনাদের পছন্দ মানে আমারও পছন্দ। ছেলেকে যদিও আমি একবার দেখেছি মাত্র। কিন্তু তবু আমি কারো মুখের উপর না করিনি। কেননা আব্বু-আম্মু কখনোই আমার খারাপ চাইবে না। আর তাছাড়া আমিও তাদের কথামতো সব সময় চলাফরা করি। আম্মুর কথা মত আমার দুজন বান্ধবী কে বিয়ের কার্ড দেওয়ার জন্য আমি কালকে বের হয়েছিলাম। আর বিয়ের কার্ড বান্ধবীর কাছে দিয়ে বাসায় ফেরার পথে মাঝ রাস্তায় দেখতে পাই একটি ছেলে আহত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছে। ছেলেটির হাতে কপালে এবং পায়ে বেশ কিছুটা আঘাত লেগেছে। কিন্তু আশে পাশে এত মানুষ থাকা সত্বেও কেউ তার পাশে এগিয়ে আসছে না। একেই বুঝি বলে ঢাকা শহর! আমি আর কোন কিছু না ভেবে ওনার কাছে দ্রুত এগিয়ে যাই। তখনই দেখতে পারি ওনার কপাল কেটে অনেকটা রক্ত বের হয়ে যাচ্ছে। সৌভাগ্যবশত আমার কাছে সব সময় একটি রুমাল থাকে। যে রুমালটি আমি অনেক শখ করে বানিয়ে ছিলাম। সেই রুমালটা আমার ব্যাগ থেকে বের করে আমি ওনার কপালে বেধেঁ দেই। তারপর চিৎকার করে আশেপাশের মানুষের কাছে হেল্প চাইতে থাকি। তখন আমার আশে পাশের কয়েকজন মানুষ এগিয়ে আসেন এবং আমাকে উনাকে নিয়ে হাসপাতালে আসতে সহযোগিতা করেন। কালকে আমি ওনাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে বাসায় ফিরে যাই। আজকে আবারো এক বান্ধবীর বাসায় আসার সময় মনে পড়ে যায় ওনার কথা। তাই হাসপাতালে ওনাকে দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু উনি যে আমার সাথে এমনটা করবেন সেটা আমি কোনভাবেই ভাবতে পারিনি। আর আমি বুঝতে পারছি না উনি এই অল্প সময়ের মাঝে আমার নামই বা কিভাবে জানলেন? আমি তো ওনাকে নিজের নাম বলিনি। আর ওনাকে যখন আমি হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম তখন উনি জ্ঞানে থাকলেও কথা বলার মত অবস্থায় ছিলেন না। যে আমার নাম ধাম সবকিছু জেনে নেবেন। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই দ্রুতো এসে একটি সিএনজিতে উঠলাম আমি। তারপর রওনা হলাম বাসায় ফেরার উদ্যেশে।
চলবে,,,,,,