my_unexpected_love
part_17
Arohi_Ayat
.
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাওয়েল দিয়ে চুল মুচ্ছি আর নিজে নিজেই এত ব্লাশ হচ্ছি বলার বাহিরে৷ নিজেই বার বার আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় হেসে দেই৷ এই লজ্জাটা একটু ভিন্ন,, এর আগেও অনেক লজ্জা পেয়েছি কিন্তু সেটা শুধু মাত্রই মাঝে মাঝে বেশি দুষ্টামি করতে গিয়ে নিজেরটা নিজেই অপমানিত হয়ে লজ্জিত হতাম ফ্রেন্ডদের সামনে কিন্তু সেই লজ্জাটা অনেক বিরক্তিকর তখন ত অনেক রাগও লাগে নিজের উপর,, আর এই লজ্জাটা একটু ভিন্ন,, বার বার সেই কথাটা মাথায় আসে আসতেই লজ্জায় লাল হয়ে যাই! একটু আগে,,,,,,,,আমি ভাইয়ার সামনে গিয়ে যখন মন খুলে বলেই ফেললাম যে আমি তোমাকে ভালবাসি তখন অনেক সাহস নিয়ে ভাইয়ার রিয়েক্ট এর অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু ভাইয়া কিছু না বলে অনেক্ষন ধরে তাকিয়েই ছিলো৷ আমি ভাইয়াকে কিছু বলতে না দেখে একটু লজ্জা পেলাম চোখ মুখ খিচে নিচে তাকিয়ে রইলাম৷ তখন আওয়াজ পেলাম হঠাৎই বৃষ্টি শুরু হয়েছে৷ এই বৃষ্টিও কি বুঝলাম না অসময় আসে৷ আমি মাথা উঠিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে তারপর সাইড কেটে চলে যেতে যেতে বললাম
– বৃষ্টি পরছে নিচে চলো!
তখন হঠাৎ ভাইয়া আমার হাত টেনে ধরলো পিছনে থেকে৷ ভাইয়াও ওইদিকে ঘুরে আছে৷ আমি পিছনে ঘুরে ভ্রু কুচকে তাকালাম৷ আমি বললাম
– কি হয়েছে?
ভাইয়া কিছু না বলে আমাকে এক টানে নিজের সামনে নিয়ে এলো৷ এইবার আমি একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি৷ ভাইয়া হঠাৎই আমার ঘারে হাত দিয়ে এমন দ্রুত গতিতে আমার ঠোটে নিজের ঠোট মিশিয়ে দিল যে আমি কিছু বুঝলামি না! আমি চুপ চাপ এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছি যেন আমি মাত্র আকাশ থেকে পরলাম৷ এইদিকে আবার বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে তাও আবার অনেক জোরে৷ কিন্তু ভাইয়ার এখন কিছুতেই খেয়াল নেই৷ ভাইয়া এখন নিজের কাজেই ব্যাস্ত তাও অনেক ঘোরের মধ্যে আছে৷ কিন্তু এখন আমি সবই বুঝতে পারছি,, আমি কি করবো শুধু সেটাই বুঝতে পারছি না৷ ভাইয়াকে কেন যেন ধাক্কা দেওয়ারও সাহস হচ্ছে না৷ আমার কেমন যেন এটা একটা সপ্নের জগত মনে হচ্ছে কারণ এই মুহুর্তে আমার মাথাটা ঘুরপাক খাচ্ছে৷ আর এইদিকে আমি এইটাও বুঝতে পারছি ভাইয়া আস্তে আস্তে আরো ঘোরে চলে যাচ্ছে,, আমার ঘারে হাত দিয়ে স্লাইড করছে৷ ওহ এর মাঝে আমার আরেকটা কথাও মাথায় এসেছে যে এইটা আমার জীবনের ফার্স্ট কিস ছিল,, কিন্তু আমি কখনো এটা ভাবিও নেই যে এই ফার্স্ট কিস আমার ভাইয়ার সাথে হবে? এটা পুরোই unexpected ছিলো৷ এরই মাঝে আরেকটা কথা মনে পরলো যে কেউ যদি এখন ছাদে এসে পরে তাহলে? এটা মাথায় আসতেই একটা ধাক্কা দিলাম ভাইয়াকে৷ যেহেতু ভাইয়া ঘোরে ছিল তার উপর আবার ভাইয়া জানতো না যে আমি হঠাৎ এইভাবে ধাক্কা দিব তাই ভাইয়া দূরে সরে গেলো৷ আমি আমার ঠোটে হাত দিয়ে ভাইয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললাম
– ওহ নো!!
এটা বলেই ছাদ থেকে একটা দৌর দিয়ে নিচে চলে গেলাম৷ আর এইদিকে ভাইয়া কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে পরে ভাইয়াও নিচে গেলো৷ আমি এক দৌড়ে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম৷ রুমে এসে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি৷ খেয়াল করে দেখলাম একেবারেই ভিজে গেছি বৃষ্টিতে৷ তারাতাড়ি করে ওয়াশরুমে গেলাম৷ আর এইদিকে ভাইয়া ছাদ থেকে নামতেই মার সামনে পরলো৷ মা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল
– কিরে? এই রাতে বৃষ্টিতে ভিজেছিস কিভাবে? এখন ঠান্ডা জ্বর এসে পরলে?
ভাইয়া কিছু বলল না৷ মা নিজেই বলল
– যা চেঞ্জ কর!
ভাইয়া চলে গেলো নিজের রুমে৷ আর আমি ওয়াশরুম থেকে জামা চেঞ্জ করে বের হয়ে আয়নার সামনে এসে ভিজা চুল গুলো মুছতে লাগলাম৷ আর এইসব কথাই ভাবতে লাগলাম৷ একটু পরে মা এসে দরজা নক করলো৷ আমি দরজা খুলতে মা বলল
– কিরে খেতে আয় তারাতাড়ি! তুইও কি ভিজেছিস?
আমি একটু মাথা চুলকিয়ে বললাম
– না মানে,,, একটু ছাদে গিয়েছিলাম,,,,
– আচ্ছা আয় তারাতাড়ি!
এটা বলে মা চলে গেলো৷ আমি টাওয়েলটা রেখে চুল গুলো এক সাইডে এনে ওড়নাটা নিয়ে তারপর নিচে গেলাম৷ সিরির সামনে আসতেই দেখলাম ভাইয়াও নিচে৷ ভাইয়াকে দেখে হঠাৎ মনে কেন যেন একটু ভয় শুরু হয়ে গেলো৷ কেন যেন নিচে যেতে ইচ্ছে করছে না৷ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর নিজেকে অনেকটা রিল্যাক্স করে আস্তে আস্তে নিচে গেলাম৷ নিচে গিয়ে মাথা নিচু করে একবারও ভাইয়ার দিকে না তাকিয়ে টেবিলে বসে পরলাম৷ দেখলাম ভাইয়াও এসে আমার পাশেই চেয়ার টেনে বসলো৷ আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে৷ নিজেকে কিভাবে লুকাবো সেটাই মাথায় ঘুরছে৷ টেবিলের উপর এক হাত রেখে চেহারাটা হাত দিয়ে ঢেকে তারাতাড়ি খাওয়া শুরু করলাম৷ তারাতাড়ি খেতে গিয়ে হঠাৎ কাশি উঠে গেলো৷ ভাইয়া তারাতাড়ি করে পানির গ্লাস নিয়ে আমাকে পানি খাওয়ে দিতে লাগলো৷ আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে তারাতাড়ি পানি খেয়ে সেখান থেকে উঠে গেলাম৷ মা বলল
– কি হয়েছে আর খাবি না?
আমি তারাতাড়ি হাত ধুয়ে উপরে যেতে যেতে বললাম
– না আর খাবো না!
আমি দৌড়ে আমার রুমে গিয়ে বসে রইলাম৷ উফফ মনে হচ্ছে এখন থেকে আর ভাইয়ার সামনেই যেতে পারবো না৷ ভাইয়ার সামনে পরলেই কেমন যেন লজ্জা ত লাগেই আবার কেন যেন হার্ট বিট বেরে যায়৷ দুই পা ভাজ করে বেডের উপর বসে আছি মাথা নিচু করে এক চিন্তা মাখা মুখ নিয়ে৷ চুল গুলো এলো মেলো হয়ে আছে৷ হঠাৎ কাউকে রুমে ঢুকার টের পেয়ে একটু মাথাটা ঘুরিয়ে তাকালাম৷ দেখলাম ভাইয়া,,আমি তারাতাড়ি সোজা হয়ে বসে নিজের চুল ঠিক করে বসলাম৷ ভাইয়া এসে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো
– কি হয়েছে?
আমি মাথা নিচু করেই বললাম
– কিছু না!
ভাইয়া এসে আমার পাশে বসে আমার চুল গুলো মুখ থেকে সরিয়ে আমাকে সোজা করিয়ে বসিয়ে বলল
– কি হয়েছে সেটা বল!! এমন করছিস কেন?
আমি এইবার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম
– কিছুনা,, কিন্তু তোমার সামনে যেতেই কেমন যেন লজ্জা লাগছে!!
আমার কথা শুনে ভাইয়া একটু হাসলো৷ আমি ভাইয়াকে হাসতে দেখে বললাম
– ছারো তুমি বুঝবে না! এটা আমার ফার্স্ট কিস ছিল! আমার ত ভাবতেই অবাক লাগছে!
ভাইয়া বলল
– ওহ ত এই কথা! কিন্তু আমার মতে এটা তোর ফার্স্ট কিস ছিল না!
আমি ভ্রু কুচকে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম
– এহ! কখনোই না এটা আমার ফার্স্ট কিস ছিল!
এটা বলার পর হঠাৎ কিছু মনে পরতে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম
– হু,,,কিন্তু আমার মতে এটা তোমার ফার্স্ট কিস ছিল না তাই না? কারন তুমি ত এর আগেও,,,,,,,!
এতটুকু বলে আবার নিচে তাকিয়ে রইলাম৷ ভাইয়া একটু হেসে নিজের মাথাও একটু নিচু করে আমার দিকে তাকালো৷ ভাইয়া বলল
– কিন্তু এখন ত তুই আমার গার্লফ্রেন্ড রাইট?
আমি মাথা উঠিয়ে ভ্রু কুচকে বললাম
– হুম রাইট!! তাহলে আমার এটা জানারও অধিকার আছে যে এর আগে তুমি কাকে কিস করেছো?
ভাইয়া বলল
– হ্যা এটা আমার সেকেন্ড কিস ছিল,, আর তোরও!
আমি অবাক হয়ে বললাম
– মানে কি?
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল
– কারণ এর আগে আমি যাকে কিস করেছিলাম সেটাই তুইই ছিলি! আর তখন সেটা আমার ফার্স্ট কিস ছিল আর তোর ও! তাই এইটা আমাদের সেকেন্ড টাইম কিস!
আমি উঠে দাঁড়িয়ে মুখে হাত দিয়ে অবাক হয়ে বললাম
– কি?? তুমি আমাকেই কিস করেছিলে? কিন্তু কবে?
ভাইয়া বলল
– ওইযে ওইদিন যে তুই রাতের বেলা উঠে বাহিরে এসেই আমাকে দেখে এক চিৎকার দিয়ে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছিলি ওইদিন!
আমি অবাক হয়ে বললাম
– কিইইইইইই? তার মানে আমি বাহিরে যাকে দেখেছিলাম সেটা তুমি ছিলে???? আমি ত ভেবেছিলাম সেটা মনে হয় নিবির ভাইয়া ছিলো৷ তাই আজ পর্যন্ত আমি শুধু এটাই ভাবতাম যে নিবির ভাইয়া ওইদিন রাতে আমার রুমের বাহিরে কি করছিলো? কিন্তু এখন দেখছি সেটা তুমি ছিলে?? ওইদিন আমার কাছে কেমন যেন মনে হয়েছিলো তখন হঠাৎ ঘুম ভেঙে যেতে সেখানে কাউকে না দেখে আমি রুমে বাহিরে গিয়েছিলাম দেখতে কেউ আছে কিনা আর তখন সেখানে তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে! আমার ভাবতেই অবাক লাগছে তুমি লাইক সিরিয়াসলি সেটা তুমিই ছিলে? নিশান ভাইয়া তুমি এমন কবে থেকে হলে যে চুপিচুপি রুমে ঢুকে চুমু দিয়ে যাও!!!
ভাইয়া একটু রেগে বলল
– কি বলছিস!!
এটা বলে ভাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলল
– আমি চলে যাই,,, তুই ঘুমা!!
এটা বলে ভাইয়া চলে যেতে নিলে আমি ভাইয়াকে থামিয়ে বললাম
– দাড়াও! এখন আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড রাইট? তাহলে এখনো তুমি আমাকে তুই করে কেন বলো?
ভাইয়া ভ্রু কুচকে বলল
– মানে? তাহলে কি করে বলবো?
– কেন “তুমি” করে বলবে,, এখন থেকে তুই করে বলবে না! একটা বয়ফ্রেন্ড কি গার্লফ্রেন্ড কে তুই করে বলে??
ভাইয়া দুই কোমরে হাত গুজে বলল
– হেই,, তুই মাত্র একটু আগে আমাকে বলেছিস যে তুই আমাকে ভালবাসিস আর একটু আগেই তুই আমার গার্লফ্রেন্ড হয়েছিস আর এখনি আমার উপর অর্ডার করা শুরু করেছিস? লিসেন,,,,,,!
ভাইয়ার কথার মাঝখান দিয়ে আমি আমতা আমতা করে বললাম
– হ্যা,,, তো? আমাকে তুমি করেই বলবে নাহলে চলবে না!! আর এখন যেহেতু তুমি আমার ববয়ফ্রেন্ড তাহলে এখন থেকে আমিও তোমাকে,,,,,,,,!
ভাইয়া আমার একটু সামনে এসে ভ্রু কুচকে বলল
– কি আমাকে???
আমি বললাম
– এখন থেকে আমি তোমাকে শুধু নিশান বলে ডাকবো!
ভাইয়া আমার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে৷ আমি একটু হকচকিয়ে গিয়ে বললাম
– না মানে,, সবার সামনে ভাইয়া বলেই ডাকবো কিন্তু যখন আমরা একা থাকবো তখন তোমার নাম ধরে ডাকবো!!
ভাইয়া আমার আরেকটু সামনে এসে আমার দিকে কিছুক্ষন শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ আমার কপালে নিজের ঠোট ছোয়ালো৷ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো তারপর বলল
– ওকে ঘুমা এখন! আমি যাই!
এটা বলে ভাইয়া নিজের রুমে চলে গেলো৷ আর আমি অবাক হয়ে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি৷
চলবে,,,,,,
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)