my unexpected love
part_2
Arohi Ayat
নিবির ভাইয়া আমার মুখ চেপে ধরে বলল
– চুপ! আমি বলেছি না তুই ওর সামনে যাবি না!
আমি নিবির ভাইয়ার থেকে নিজেকে ছারিয়ে বললাম
– কেন যাব না? নিশান ভাইয়া তো আমারও ভাই হয় নাকি?!
–যাই হোক তবুও তুই আমার থেকে ওকে ভালো করে চিনিস না! আমি ওকে বুঝি কারণ আমরা একসাথে থাকি৷ আর তুই ত আর আমাদের সাথে থাকিস না!!
আমি আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে এলাম৷ আমার দরকার নেই এই নিবির ভাইয়ার সাথে কথা বলার! আমার সাথে এমন করে কেন বুঝলাম না?! হুহ!
”
শপিং শেষ করে সবাই বাসায় ফিরেছি ১ঘন্টা হয়েছে৷ বাসায় এসেই সবাই প্রথমে ফ্রেশ হয়েছে৷ আর এখন সবাই সবার শপিং দেখতে ব্যাস্ত৷ যে যা নিয়েছে সবাই ট্রায় করে করে দেখছে৷ আসলে শপিং এর উদ্দেশ্য টা হলো কালকে মার চাচাতো বোনের মেয়ের বিয়ের দাওয়াত আছে তাই৷ রিদিয়ানা আপু তানিশা আর আমি একই রকম ব্ল্যাক কালার এর শাড়ি নিয়েছি৷ যেহেতু অনেক দিন পর বোনেরা এক হয়েছি তাই একসাথে ড্রেস পড়বো একই রকমের অনেক খুশি লাগছে৷ আর নিবির ভাইয়াও আমাদেরটা দেখে ব্ল্যাক কালার এর একটা পাঞ্জাবি নিয়েছে৷ নিবির ভাইয়া বলছে সবাই এক কালার এর পড়লে ভালো হয় তাই শুধু আমরা ভাই বোনেরা সবাই একই কালার নিয়েছি৷
বিকেল বেলা,, সবাই মিলে ছাদে উঠেছি৷ সবার হাতেই চায়ের কাপ৷ সবাই চা খাচ্ছি আর কথা বলছি৷ ভাই বোনদের সবাই একসাথে হওয়ার মজাই আলাদা৷ রিদিয়ানা আপু আর আমি দোলনায় বসেছি৷ হঠাৎ পিছন থেকে নিড়ব এসে দোলনাটা একটু ধাক্কা দিতে আমিও বেখেয়ালি ছিলাম তাই হাতের থেকে সব চা পরে গেলো তাও আমার উপরেই৷ আমি তারাতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে জামা ঝারা দিলাম৷ নিবির ভাইয়া তো মানুষই আমার যে কোনো কাজে একটা না একটা কথা বলবেই তাও আবার আমাকে নিয়ে৷ নিবির ভাইয়া মাকে উদ্দেশ্য করে বলল
– আচ্ছা আন্টি নিশা কি জন্মই প্রতিবন্ধী হয়েছিলো নাকি এখন অটিস্টিক হয়ে গেছে?
আমি রেগে বললাম
–আজব এখানে আমার কি দোষ ছিল?! এই নিড়বই তো এসে আমাকে ধাক্কা দিয়েছে! আমি আজকে,,,,,,
এটা বলেই নিড়বের পিছনে দৌড় লাগালাম৷ বেয়াদবটার জন্য সবাই এমন আমাকে নিয়ে এই কথা বলছে৷ নিড়ব সারা ছাদ ভরে দৌড়াতে শুরু করেছে৷ এইভাবেই রাগ লাগছে আবার ওকে ধরতে না পেরে এমন রাগ লাগছে বলার বাহিরে৷ নিশান ভাইয়া একটা টুলে বসেছিল৷ নিড়ব গিয়ে নিশান ভাইয়ার পিছনে দাড়ালো৷ আমিও নিশান ভাইয়ার সামনে গেলাম ওকে ধরার জন্য৷ আমি ঘুরে গিয়ে নিড়বকে ধরবো আর নিশান ভাইয়ার পায়ের সাথে উষ্টা লেগে পরে গেলাম৷ আমার মনে হয়েছে নিশান ভাইয়া ইচ্ছা করে তার পা আমার সামনে দিয়েছে যেন আমি পরে যাই৷ আমি নিচে বসেই ভ্রু কুচকে নিশান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি৷ আর ভাইয়া অন্য দিকে তাকিয়ে চা খাচ্ছে যেন সে কিছু দেখেই নাই৷ তানিশা এসে আমাকে উঠিয়ে দাড় করালো৷ নিবির ভাইয়া আবার মাকে কি যেন বলতে নিলে আমি রেগে আগেই বললাম
– দাড়াও! নিশান ভাইয়া আমাকে পা দিয়ে ফেলেছে!!
মা বলল
– আচ্ছা হয়েছে সন্ধ্যা হয়েছে সবাই ভিতরে চল৷
এটা বলে মা আর আন্টিরা চলে গেলো৷ আর নিশান ভাইয়াও চলে গেলো৷ সবাই চলে গেলো কিন্তু আমি রেগে ছাদেই দাঁড়িয়ে আছি৷ ধুর এত রাগ লাগছে না নিচে যেতে ইচ্ছে করছে না৷ আমার আবার রাগ উঠলে যতক্ষন কেউ এসে আমাকে একটু আদর করবে বা স্বান্তনা দিবে ততক্ষন আমার রাগ মাথায় উঠে থাকে৷ পিছন থেকে নিবির ভাইয়া এসে বলল
– নিচে চল এখন৷ নাহলে এত যে ভয় পাস সন্ধ্যা হলে ভুত পেত্নি সব এসে ঘুর ঘুর করে তোকে ছাদ থেকে ফেলে দিবে আবার! আর হ্যা আমি আগেই বলেছিলাম নিশানের এইসব পছন্দ না ৷ আর আমিও জানি ও ইচ্ছা করেই তোকে ফেলেছে৷ খারাপ কিছু করে নাই! এই জন্য বলছি ওর সামনে গিয়ে এমন ফাইজলামি করবি না!! চল নিচে!
”
সবাই ব্যাগ গুছাতে ব্যাস্ত৷ কালকে সকালেই রওনা দিব মার চাচাতো বোনের বাসায়৷ রাতে ডিনার করে সবাই তারাতাড়ি শুয়ে পড়লাম৷
সকালে ঘুম থেকে তারাতাড়ি উঠে রেডি হয়ে সবাই বের হলাম৷ উনাদের বাসা অনেক দূরে৷ যেতে যেতে ৩/৪ ঘন্টা লাগবে৷ আমরা সবাই গাড়িতে মজা করতে করতে যাচ্ছিলাম৷ অনেক ভাল লাগছিলো৷ আবার আজকের দিনটাও অনেক ভালো৷ আকাশ একটু মেঘলা মেঘলা৷ আমার এই মেঘলা আকাশ এত ভালো লাগে একেবারে মনটা শান্তি হয়ে যায়৷ সবারই এখন অনেক ভাল লাগছে৷ আমার কোনো যায়গায় ঘুরার থেকে এমন সবার সাথে journey করতে বেশি ভালো লাগে৷ আবার কেউ না থাকলেও আমি একা থাকলেও journey করতেই বেশি ভাল লাগে৷ সারা রাস্তায় বৃষ্টি পরলো না কিন্তু আকাশ মেঘলা ছিল৷ আন্টিদের বাসায় পৌছানোর পরে সবাই ফ্রেশ হলাম৷ সবাই একটু কথা বললাম৷ নাস্তা করে শুধু আমরা ভাই বোনেরা একটু বাহিরে বের হলাম৷ আকাশ এখন অনেক অন্ধকার হয়ে আছে যেন সন্ধ্যা হয়ে গেছে৷ আমরা সবাই হাটতে হাটতে একটু আন্টিদের বাসার পাশেই একটা রোড আছে যেখানে গাড়ি কম চলে কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ ঘুরে জায়গাটার নাম সবাই বলে “প্রেম রোড”৷ আসলে আমিও জানি না কেন বলে এই নাম কিন্তু রোডটা অনেক সুন্দর দুই পাশে গাছ৷ আমারাও সেখানে গেলাম৷ আমারা এই রোড নিয়েই কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলাম৷ হঠাৎ বৃষ্টি ছেরে দিল৷ আমরা সবাই দৌড়ে একটা দোকানের সামনে দাড়ালাম৷ অনেক জোড়ে বৃষ্টি পরছে মনে হয় না একটু পরেই থেমে যাবে আর এতক্ষন এইখানে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না তাই সবাই বাসার দিকে দৌড় দিলাম৷ বাসায় আসতেই দেখলাম সবাই ভিজে গেছে তাই ঠিক করলাম বৃষ্টিতে গোসল করবো সবাই৷ আমি দৌড়ে বৃষ্টিতে চলে গেলাম৷ উফফফ মানে অনেক বেশি ভাল লাগছে৷ এই মোমেন্টাকে যদি কোনো ভাবে আটকে রাখা যেতো৷ সবাই বৃষ্টিতে ভিজছে শুধু নিশান ভাইয়া বাদে৷ নিবির ভাইয়া বলল
– নিশান আয় না অনেক ভালো লাগবে!
নিশান ভাইয়া শুধু মাথা নারিয়ে না বলল৷ আমি বললাম
– আচ্ছা তুমি আসবে না তাহলে এক কাজ করো একটু আমাদের সবাইকে এইভাবে ভিডিও করো! আমার অনেক ভালো লাগছে৷ সময়টাকে আটকে ত রাখতে পারবো না কিন্তু একটু ভিডিও দেখে মনে ত রাখতে পারবো! প্লিজ প্লিজ একটু করো না!!
সবাই বলার পর নিশান ভাইয়া রুমে গিয়ে তার ফোন এনে ভিডিও করা শুরু করলো৷ আমি দুই হাত মেলে আকাশে তাকিয়ে অনেক ইঞ্জয় করছি বৃষ্টিটাকে৷ হঠাৎ পা পিছলে পরে যেতে নিলে নিবির ভাইয়া এসে তারাতাড়ি আমার হাত টেনে ধরলো৷ আমি চোখ বন্ধ করে আছি ভয়ে৷ চোখ খুলতে দেখলাম নিবির ভাইয়া আমাকে ধরে আছে৷ আমি তারাতাড়ি করে উঠে দাড়ালাম৷ আম্মু ভিতর থেকে সবাইকে ডেকে বলল
– এই তোরা ভিতরে আয়! সবার ঠান্ডা লেগে যাবে!
আমরা সবাই ভিতরে গিয়ে জামা কাপর পাল্টে নিলাম৷ আমি ওয়াশরুম থেকে টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হলাম৷ আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে ব্যাস্ত৷ আমি ভাবছি একটু আগে বৃষ্টিতে ভিজতে অনেক ভালো লাগলো৷ কিন্তু যখন আমি পরে যেতে নিলাম নিবির ভাইয়া এসে আমাকে ধরলো,, আমার কেমন যেন ফিল হলো৷ এইরকম হলে কত রোমেন্টিক মনে হয়৷ আমি ত ফিল্মেও দেখি এমন বৃষ্টিতে নায়ক নায়কার রোমেন্টিক সিন হায়!!আমি ত ভুতের ফিল্ম দেখি ভয় ত করে কিন্তু আমার কেন যেন দেখতে ইচ্ছে করে কিন্তু আবার মনে হয় এখন যদি সাথে কেউ থাকতো মানে আমার বয়ফ্রেন্ড অথবা হাসবেন্ড তাহলে কত রোমেন্টিক হতো!! হায়!! আমি এইসব ভাবছি হঠাৎ করে নিশান ভাইয়া এসে ভুল করে এই রুমে ঢুকে আমার দিকে তাকালো৷ আমি আয়নায় ভাইয়াকে দেখে পিছনে তাকালাম৷ ভাইয়া কিছু না বলে সাথে সাথে চলে গেলো রুম থেকে৷ আমি আবার আয়নায় তাকাতে মনে পড়লো আমার গায়ে ত ওড়নাও নাই উফফ!
আমরা সবাই একসাথে লাঞ্চ করতে বসলাম৷ আজকেই গায়ে হলুদ এর পর কালকের দিন গ্যাপ দিয়ে পরশু দিন বিয়ে৷ আমরা তারতাড়ি খাওয়া শেষ করে উঠে গেলাম৷ এখনি বাজে ৩টা৷ রেডি হতে হতে আবার সবার অনেক দেড়ি হয়ে যাবে৷ আমরা গেলাম রেডি হতে৷ বাড়িতে এইভাবেও গেস্ট দিয়ে ভরা৷
”
হলুদের ফাংশন মাত্র শুরু হলো আস্তে আস্তে আরও গেস্ট আসছে৷ আমারও রেডি হয়েগিয়েছি৷ আমার আজকেও একই সাজ একই কাপড় পরেছি৷ সবাই একেবারে লাল রঙের শাড়ি পরেছি সুন্দর করে সেজেছি আর মাথায় গাজরা পরেছি৷ আমরা রেডি হয়ে বের হলাম৷ অনেক গেস্ট এসে পড়েছে৷ আমাদের ত আর কোনো কাজ নেই ব্যাস সেল্ফি তুলা শুরু করলাম৷ অনেক্ষন পর নিবির ভাইয়া আর নিশান ভাইয়া একসাথে এলো৷ উনারা দুইজনও লাল রঙের পাঞ্জাবি পরেছে৷ দুইজনকে মাশাল্লাহ অনেক হ্যান্ডস্যাম লাগছে৷ উনারা আসতে আমরা বললাম
– আমরা মেয়ে হয়ে আমাদের লেট হলো না রেডি হতে আর তোমাদের এত লেট হয়েছে?!
নিবির ভাইয়া বলল
– লিসেন আমাদেরও অনেক আগে হয়েগিয়েছিল কিন্তু আমরা এতক্ষন এইভাবেই রুমে বসেছিলাম৷ এত মানুষের ভিরে আসতে ইচ্ছে করছিলো না! এখন তোরা রেডি হয়েছিস তাই এসেছি!
”
অনেক্ষন পর,,,আমরা এতক্ষন একটু ছবি তুললাম আবার একটু হলুদ দিলাম ফাংশন ইঞ্জয় করলাম৷ এখন আমরা সবাই এসে ছাদে বসেছি৷ আসলেও ভালো লাগছে না আর এত মানুষের সামনে আবার বোরিং লাগছে৷ তাই আমি বললাম তার থেকে আমরা সবাই ছাদে গিয়ে আড্ডা দেই৷ নিশান ভাইয়া ত কিছু বলছে না শুধু আমাদের কথা শুনছে৷ আর আমরা পকপক করছি আর নিবির ভাইয়া কথা বলছে কিন্তু নিবির ভাইয়া একটাই কাজ পারে কিভাবে আমাকে পচাতে হয় সেটা৷ আর আমার প্রান প্রিয় ভাইও বার বার তার কথার সাথে মিলে আমাকে আরও পচাতে ব্যাস্ত৷
– জানো সবাই একবার রাতে আমি নিশার রুম থেকে কিসের যেন আওয়াজ পাচ্ছিলাম৷ এর পর আমি নিশার রুমের দরজা খুলে হালকা উকি দিয়ে দেখি ভুতের ছবি ছেরে চাদর মুরো দিয়ে যত বালিশ আছে সব নিজের পাশে রেখে ও ভুতের ছবি দেখছে!
নিবির ভাইয়া বলল
– ভিতুর ডিম! আবার ভুতের ছবি দেখার অনেক শখ!
আমি রেগে বললাম
– বুঝলাম না এখানে আমাকে নিয়ে কেন কথা হচ্ছে?!
রিদিয়ানা আপু বলল
– আচ্ছা এইসব বাদ দিয়ে চলো আমরা সবাই মিলে একটা গেম খেলি!!
আমি ত সর্ব প্রথম লাফ দিয়ে উঠে বললাম
– অকে!!
নিবির ভাইয়া আমাকে এইভাবে দেখে আবার বলল
– অটিস্টিক পোলাপান!
আমি রেগে বললাম
– তাহলে চলে যাই আমি এখান থেকে!! আমি অটিস্টিক যখন! আমার সাথে থেকে যেন আবার তোমরাও অটিস্টিক না হয়ে যাও!!
নিশান ভাইয়া হঠাৎ বলে উঠলো
– না! এখানে এসে চুপ করে বসে থাক!
চলবে,,,,,
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)