#গল্পঃ Journey by Relation
#পর্বঃ ২
#লেখাঃ কামরুল ইসলাম ইথান
আপনার মেয়ে যথষ্ট বুদ্ধিমতী এবং বুঝসমপন্ন। অন্য মেয়েদের থেকে একদম আলাদা। যদি আলাদা না হতো তাহলে আমার সাথে রিলেশনশিপে জড়িয়ে পড়ত। কিন্তু ও সেটা করেনি। ও আপনাদের কথা চিন্তা করেছে। আমি তায়্যিবার কথা আমার মা বাবা কে জানিয়ে দিয়েছি। তারা তায়্যিবাকে দেখতে চেয়েছে এবং আপনাদের সাথে কথা বলতে চেয়েছে।
কথাগুলো শুনে তায়্যিবার বাবা আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। কেনো তাকিয়ে ছিল সেটা আজও অবদি বুঝতে পারিনি। তায়্যিবার বাবা আমার থেকে বাবার ফোন নম্বরটা নিল আর বলল,
– বাবা, মেয়ের বাবা বলে কথা। সবকিছু একটু ভেবে চিন্তে করতে হয়। আমাকে ভাবার জন্য একটু সময় দাও। আর যাওয়ার সময় খেয়ে যেও।
একথা বলে তায়্যিবার বাবা বাসা থেকে চলে গেলেন। একমাত্র মেয়ে বলে কথা টেনশন তো একটু হবেই। কারণ পৃথিবীর সকল বাবারাই চান যে, তাদের মেয়ের ভালো ঘরে বিয়ে হোক। মেয়েটা যেন সুখে থাকে। তায়্যিবারা দুই ভাইবোন ছিল, তায়্যিবা বড় আর ছোট ভাই। কিছুক্ষণ পর আমি বাসায় চলে আসলাম। আমি তখন আন্টিদের বাসায় থেকেই পড়াশুনো করতাম। বাসায় আসতেই,
– কিরে কোথায় ছিলি? মাটির নিচে চলে গেছিলি নাকি? মাটির নিচে ও তো ফোনে নেট পাওয়ার কথা। কারণ 4g র যুগ এটা।
– আরে আন্টি হয়েছেটা কি বলবে কি আমায়?
– দেখতো কত্তবার ফোন দিয়েছি? তোর মোবাইল বন্ধ কেন? আমাদের কি চিন্তা হয়না? তোকে নিয়ে আমাদের কি কোনো মাথাব্যথা নেই?
পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখলাম ওটা বন্ধ হয়ে আছে।
– আন্টি ফোনটা বন্ধ হয়ে গেছে দেখ তুমি। ব্যাটারি ডাউন। রাগ করো না প্লিজ আন্টি। লক্ষী আন্টি আমার। আর হ্যা, বলতো আন্টি কেনো এত ফোন দিচ্ছিলে? আমিতো তোমাকে বলেই গিয়েছিলাম যে তায়্যিবাদের বাড়ি যাচ্ছি।
– তোর বাবা- মা আসছে। তাদেরকে বাসস্টপ থেকে রিসিভ করে আনতে হবে।
আমি কথা না বাড়িয়ে চলে গেলাম বাবা-মাকে রিসিভ করতে। এখানে তাদের আসার কারণ আমার বোঝা হয়ে গেছে। প্রতিবার তারা খুলনাতে আসত আমার জন্য। আমাকে দেখতে আসত। কিন্তু এবার তারা এসেছেন তায়্যিবার জন্য। তায়্যিবাকে দেখতে। মনের কোণায় হালকা হিংসে হচ্ছিল। আসলে তা ছিল খুশির।
মা-বাবাকে নিয়ে বাসায় আসলাম। তায়্যিবার ব্যাপারে আরো অনেক কিছু জানতে চাইলেন। বাবা আমার কাছে তায়্যিবার বাবার ফোন নম্বর চাইলেন। দূর্ভাগ্য যে, আমার কাছে নম্বরটা ছিলো না। তাই তায়্যিবাকে ফোন করে ওর হেল্প নিলাম। বাবা আমাকে হাসতে হাসতে বলল,
– হবু শশুরের ফোন নম্বর রাখো না। নট গুড ইট। সামনে থেকে এরকম ছোট ছোট ভুল আর যেন না হয়।
বাবা তায়্যিবার বাবাকে ফোন দিলেন, কথা বললেন। তায়্যিবার বাবা আমার বাবাকে বলেছেন, সবাইকে নিয়ে আগামীকাল ওনাদের মানে তায়্যিবাদের বাসায় ডিনার করতে। বাবাও রাজি হয়ে গেলেন। পরদিন সন্ধ্যার পরপর আমরা সবাই বাসা থেকে রওনা হয়ে গেলাম। তায়্যিবাদের বাসা আন্টির বাসা থেকে তেমন একটা ডিসট্যান্স না থাকায় তাড়াতাড়িই পৌঁছে গেলাম।
বাবা-মায়ের তায়্যিবাকে দেখে ভীষণ পছন্দ হলো আর আমার বাবা একটু ভিন্ন টাইপের। তাই কথা বলে আমাদের বিয়ের ডেট ও ফিক্সড করে ফেলল। দেখলাম তায়্যিবা তো ভীষণ খুশি। আমি যে তখন কত্তখুশি হয়েছিলাম তা আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না।
– হ্যালো সুইটি, আপনি কি শুনতেছেন আমার কথা?
– আরে শুনব না কেন? এত ইন্টারেস্টিং কাহিনী কি কেউ কখনো মিস করে? বলতে থাকেন আমি শুনছি।
বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করার পর আমরা বাসায় চলে আসলাম। হঠাৎ করে বাবার ঢাকাতে জরুরী কাজ পড়ায় বাবা মাকে নিয়ে মাত্র দুদিন থেকেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে চলে গেলেন। আর এদিকে আমার আর তায়্যিবার সম্পর্ক আরো গাঢ় হয়ে উঠল। এমন হয়ে গেল যে, দুজন দুজনকে ছাড়া এখন আর থাকতে পারিনা। বলেন এটাকে আপনি কি বলবেন?
আমাদের ভালোবাসা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। কেউ কেউ বলে গোপনে প্রেম করলে নাকি তাতে ইন্টারেস্ট বেশি থাকে। বাট আমাদেরটা ছিলো একদম আলাদা। বুঝেনই তো তখন তায়্যিবা শুধু আমার গার্লফ্রেন্ড ছিলো না। তায়্যিবা ছিল আমার হবু বউও। সুতারাং আমাদের ভালোবাসা ছিলো আরো গভীর।
প্রতিদিনের মত সেদিনও আমরা দুজন ভার্সিটি শেষ করে একসাথে বাইকে করে বাড়ি ফিরছিলাম। রাস্তার অপজিটে একজন ভিক্ষুক বমি করতেছিল। এটা দেখে তায়্যিবা আমাকে বাইকটা থামাতে বলল, আমি বাইকটা থামালাম। থামানোর পর, তায়্যিবা পাশের দোকান থেকে এক বোতল পানি, দুটি কলা আর একটি রুটি কিনে নিয়ে ভিক্ষুককের দিকে হাঁটা দিল। আমি তায়্যিবাকে বললাম,
– কোথায় যাও??
– তুমি দেখছ না? একটি লোক কিভাবে বমি করতেছে বাট কেউই তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না।
– তা তুমি একা যাবে কেনো? দাঁড়াও! আমিও তোমার সাথে যাচ্ছি। এরকম ব্যস্ত রাস্তা তুমি একা পার হতে পারবে না।
– না মশায় লাগবে না। বিয়ের আগে এত দরদ দেখানো লাগবে না। বিয়ের পরে দরদ দেখায়েন তখন মানা করব না। তখন দেখব, কত দরদ দেখাতে পারেন।
তায়্যিবা এই কথাগুলো আমায় বলতেছিল আর আস্তে আস্তে পিছাচ্ছিল, আই লাভ ইউ মশায়। আই লাভ ইউ। আমিও অপলক দৃষ্টিতে তায়্যিবার দিকে তাকিয়ে তায়্যিবার কথাগুলো শুনছিলাম। কথাগুলো আমার খুব ভালো লাগছিলো। প্রতিটি কথা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছিল। কথাগুলো শুনতে আমি এতটায় ব্যস্ত ছিলাম যে, আশেপশের কোনো খবরই ছিলো না।
হঠাৎ করে একটা কবার ভ্যান এসে আমার সব সপ্নকে তছনছ করে দিয়ে চলে গেল। তায়্যিবা প্রায় ৪০ গজ দূরে ছিটে গিয়ে পড়ল। এক নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেল। হারিয়ে গেল আমার কলিজা, আমার ভালোবাসা, আমার তায়্যিবা।
#চলবে
______ Next part coming soon.