I_live_in_your_hope,Part_12,13
Adnan Mahmud
Part_12
.
যেখানে রাত শেষ হলে জার্মানির উদ্দেশ্যে রওনা হবে সে সময় তাসনিমের মনটা খুব খুশি থাকার কথা ছিলো।কিন্তু বরাবরই তার উল্টো।সবাইকে ছেড়ে যেতে মোটেও মন চাইছে না তাসনিমের।
-আজকে তাসনিমের রান্নাঘরে যেতে হয়নি।আত্নীয়-স্বজনেরাই সব রান্না করেছে খুশি মনে।
রাতের বেলা খাবারের সময় একে একে সবাই উপস্থিত হলো ডায়নিং টেবিলে। লোক বেশি হওয়ায় একেবারে সবাই বসতে পারবে না।তাই কিছু লোককে বসে টিভি দেখতে বলল তাসনিম।
-একেক করে সবারই খাওয়া শেষ হয়ে গেলো।শুধু বাড়ির লোকজন বাকি।তাসনিমসহ বাড়ির লোকজন এবার বসল খেতে।কিন্তু রিয়াদ কোথায়?
কিছুক্ষণ পর রিয়াদ এসে বসল টেবিলে।রিয়াদের মুখটা এখন বেশ শুকনো লাগছে।যেটা সবার চোখে ধরা না পড়লেও তাসনিমের চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি।
-নিরিবিলি খেয়ে উঠে চলে গেলো রিয়াদ।সবাই সবার মতো খেয়ে চলে গেলো।বাকি বসে রইলো তাসনিম আর রাহি বেগম।
আস্তে আস্তে সবকিছু গুছিয়ে তাসনিম আর রাহি বেগমও চলে গেলেন।
-কি ব্যাপার? মন খারাপ নাকি?রিয়াদকে অমনস্ক হয়ে বসে থাকতে দেখে বলল তাসনিম।
-কোন কিছু না বলে ইজি চেয়ারে বসে আগের মতো অমনস্ক হয়ে দুল খেতে লাগলো রিয়াদ।
-তাসনিম এবার কোন কথা না বলে সোজা গিয়ে রিয়াদের কোলে বসে গেলো।
কোলে বসাতেও রিয়াদের কোনো রিয়্যাক্ট নেই। আগের মতনই বসে রইলো।তবে হ্যাঁ, এবার একটু নড়েচড়ে বসে ডান হাত দিয়ে তাসনিমের কোমর ধরলো।
-যখন তাসনিম দেখলো,কিচ্ছু তে কিচ্ছু হচ্ছে না,তখন রিয়াদের নাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করল।
-মনটা খারাপ লাগছে আমার।হঠাৎ করে বলে উঠল, রিয়াদ।
-কেনো,তাসনিয়ার কথা মনে পড়ছে?রিয়াদকে হাসি মুখে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।
-আরে না,কি যে বল তুমি।এবার খানিকটা হেসে বলল, রিয়াদ।
তারপর উঠে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
তাসনিমও ফ্রেশ হয়ে রিয়াদের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
-সকাল বেলা থেকেই হৈ হুল্লোড় লেগে গেলো সারা বাড়ি জুড়ে। কোনরকম নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে পড়লো রিয়াদ তাসনিম জুটি।সাথে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যাওয়ার সঙ্গীরাও বেরিয়ে পড়লো।
-রিয়াদ তাদের গাড়িতে সব মালামাল উঠিয়ে নিলো।সব মালামাল লোড করে মামতো ফুফাতো ছোট ভাই-বোন আর শালা,শালী ছোট বোন আর তাসনিমকে নিয়ে নিজেদের গাড়িতে ড্রাইভিং সিটে চেপে বসে গেলো রিয়াদ।ভাই-বোন সবাই ভাবী পাগল হওয়ায় তাসনিম যে গাড়িতে যাবে,তাদেরকেও সেই গাড়িতে নিয়ে চেপে বসেছে।
-বাকি যারা ছিল,তারা আত্মীয়-স্বজনদের গাড়িতে চেপে বসেছে।সবাই গাড়িতে উঠলে একেক করে সব গাড়ি বেরিয়ে পড়লো এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে।রিয়াদের গাড়ি মাঝের দিকে।মানে,আগে পরে কিছু গাড়ি রয়েছে আত্মীয় স্বজনদের।
এতসকালে রাস্তা ফাঁকা থাকায়, সবাই গাড়ি টানছে বিদ্যুৎ গতিতে।
-রিয়াদের ঠিক পাশে বসেছে তাসনিম।পিছনে সবাই হৈচৈ করছে।তাসনিমের দিকে আড় দৃষ্টিতে তাকালো রিয়াদ।তাসনিম নিরিবিলি বসে আছে।গাড়ির ভিতরের লুকিং গ্লাস টা এমনভাবে করে নিলো রিয়াদ,যাতে তাসনিমের মুখটা স্পষ্ট দেখা যায়।
-গাড়ি চালাচ্ছে আর বারবার লুকিং গ্লাসের আয়নার মাধ্যমে তাসনিমকে দেখছে রিয়াদ।
হঠাৎ একবার তাসনিমও লুকিং গ্লাসের দিকে তাকালে দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো।রিয়াদ চোখ নামিয়ে ইনোসেন্ট সেজে গাড়ি চালানোর দিকে মন দিলো।
-হঠাৎ তাসনিমের হাতে থাকা সেলফোনটা বেজে উঠল। ফোনের স্ক্রিনে চোখ ফেলে তাসনিম দেখে নিলো কে ফোন করেছে।রিংটোনের আওয়াজ শুনে তাসনিমের ফোনের দিকে তাকালো রিয়াদ।
ওই,বিদেশি আন্টি ফোন করেছে।রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,তাসনিম।
-রেহেনা আন্টি?ফোন রিসিভ করে কথা বলো।
তাসনিমকে বলল রিয়াদ।
-জার্মানি এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করতে আসবে রেহানা-রাজন দম্পতি। হয়তো রওনা হলো কিনা সেটা জানার জন্যই ফোন করেছে রেহেনা বেগম।
-হ্যাঁলো আন্টি,হ্যাঁ হ্যাঁ আমরা অন দ্য ওয়েতে।হুম হুম বারোটায় ফ্লাইট। এখন তো নয়টার কাছাকাছি। ওকে রাখি।ফোন রেখে দিলো তাসনিম।
-রেহেনা আন্টি বোধহয় খুবই ভালো মানুষ তাই না?,রিয়াদকে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।
-হুম,কেনো?তাসনিমকে জিজ্ঞেস করল রিয়াদ।
-নাহ,মানে আমার সাথে মা ছাড়া কথা বলে না।হেঁসে হেঁসে বলল তাসনিম।
-ওখানে গেলে নিজের মেয়ের মতনই আদর করবে দেখো।তাসনিমকে বলল রিয়াদ।
রিয়াদ আবার গাড়ি চালানোর দিকে মন দিলো।মাঝে মাঝে লুকিং গ্লাসের দিকে তাকানো বাদ যাচ্ছে না রিয়াদের।একবার কি মনে করে তাসনিমও তাকালো লুকিং গ্লাসের দিকে।সেসময় রিয়াদও তাকিয়ে ছিলো লুকিং গ্লাসের দিকে।
-দুজনের চোখাচোখি হতেই রিয়াদ তাসনিমকে চোখ মেরে দিলো।এবার লজ্জা পেয়ে তাসনিমই চোখ নামিয়ে আনলো।আর অল্প কিছু সময় গাড়ি চালিয়ে পৌঁছে গেলো এয়ারপোর্টে।
-এগারোটার কাটা ছুঁই ছুঁই করছে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে পড়লো একেক করে।
রিয়াদ নেমে মালামাল সব বের করে নিলো গাড়ির ডিকি থেকে।সাড়ে এগারোটার ভিতর সব কম্পিলিট করতে হবে।
-রিয়াদ সব রেডি করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে তাসনিমকে নিয়ে এয়ারপোর্টের ভিতর ঢুকলো।তাসনিম ভিতরে যাবার আগে মা আর শাশুড়ী কে জড়িয়ে ধরে কান্না করল খানিকটা।
-প্লেনে বসে আছে তাসনিম আর রিয়াদ।তাসনিম আগে কখনো প্লেনে উঠেনি।রিয়াদ নিজের সিট বেল্ট সুন্দর মতন লাগিয়ে নিয়েছে।
বারবার এনাউন্সমেন্টে বলছে সিট বেল্ট ভালোমতো লাগিয়ে নিতে।তাসনিম বারবারই চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো।
তাসনিমের কান্ড কারখানা দেখে রিয়াদ কোনভাবেই নিজের হাসি আটকাতে পারছে না।
-দেখি সরো,দুধের স্বাদ যদি ঘোলে মিটানো যেতো তাহলেতো হতোই।তাসনিমের হাত সরিয়ে দিয়ে তাসনিমের সিট বেল্ট বেঁধে দিতে দিতে বলল রিয়াদ।
-কি বললে?আমি দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাই?রাগে মুখ ফুলিয়ে বলল তাসনিম।
-আরে আমি সেটা তো,,
কথা শেষ হবার আগেই প্লেন আকাশে উঠা শুরু করলো।তাসনিম তো ভয়ে রিয়াদকে জড়িয়েই ধরলো।
-ধুর প্লেনে কি মানুষ উঠে?বিড়বিড় করে বলল তাসনিম।
কে উঠে তাহলে?আশেপাশের লোকজনদের কি মানুষ বলে মনে হচ্ছে না?তাসনিমের দিকে তাকিয়ে বলল রিয়াদ।
-আরে দেখো না কেমন ভয় লাগে।করুণাভরা দৃষ্টি নিয়ে বলল তাসনিম।
-আরে তুমি তো প্রথম বারের মতে উঠেছো তাই এমন ভয় লাগছে।দেখো নেক্সটবার আর এমন ভয় লাগবে না।
তাসনিমকে বুঝিয়ে বলল রিয়াদ।
-খানিকটা পর বিমানবালার একজন সুন্দরী বিদেশি মহিলা এসে ড্রিংক নিবে নাকি জিজ্ঞেস করলো।
রিয়াদ হ্যাঁ বললে পাশ থেকে তাসনিম না বলে দিলো।পরে সফট ড্রিংকস আনতে বলল।আর চকলেট থাকলে চকলেট আনতে বলল।
-বিমানে উঠার এক ঘন্টা হয়ে গেছে।বিমানের সবাই কমবেশি নিজেদের কাজে মত্ত হয়ে আছে।কেউ ফোন ঘাটছে।কেউ ল্যাপটপ চালাচ্ছে।কেউ ড্রিংক করছে আর গল্প করছে।আবার কেউ নাক টেনে কম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘুমোচ্ছে।
-আরেকজনকে কম্বল গায়ে দেখে নিজের কম্বলটা টেনে ভালো করে গায়ে পেচিয়ে নিলো তাসনিম।প্লেনের এসির পাওয়ার খুবই বাড়িয়ে দেওয়া।একেবারে শীত লেগে যাচ্ছে। পাশে ফিরে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে দেখে কানে বড় বড় হেডফোন লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে কম্বল পেচিয়ে বসে আছে হেলান দিয়ে।তাসনিম ও হেডফোন লাগিয়ে নিলো নিজের দু কানে।
-ধুরু বাবা কি গান,ইংলিশ টিংলিশ।ভালো লাগে না।রিয়াদে কেমনে শুনে কে জানে?
-ওই,ঘুমাচ্ছো নাকি?রিয়াদের বাহু বরাবার ধাক্কা দিয়ে বলল তাসনিম।
-হ্যাঁ,,,,,,কি বলো বুঝি না।চোখ খুলে তাসনিমের দিকে তাকিয়ে বলল রিয়াদ।
মাথায় যে ইয়ে বড় একটা হেডফোন লাগিয়ে রাখছে ওটা খোলার নামই নেই।না খুলেই বলছে বুঝি না।
-আর কতোখন লাগবে?রিয়াদের মাথা থেকে এক টানে হেডফোন খুলে নিয়ে বলল তাসনিম।
-ওহ,আচ্ছা। ওয়েট আমি দেখছি।ম্যাপে দেখতে লাগলো রিয়াদ।তাসনিমকেও ম্যাপ দেখা শিখিয়ে দিলো রিয়াদ।
-তার মানে আরো ঘন্টা পাঁচেক লাগবে তাইতো?
-রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল তাসনিম।
-কেনো তোমার কি কোন সমস্যা হচ্ছে? তাসনিমকে জিজ্ঞেস করল রিয়াদ।
-ধুূ্র একভাবে বসে থাকতে কার ভালো লাগে?আচ্ছা ওয়াশরুম থেকে একটু ঘুরে আসি।চলোতে যায়।রিয়াদকে বলল তাসনিম।
-তাসনিমকে সাথে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে এলো রিয়াদ।
ওয়াশরুম থেকে এসে দুজনে আবার যার যার সিটে বসে পড়লো।
একটু ঘুমোনোর চেষ্টা করো।দেখো ঘুম এসে যাবে।
গায়ে চাদর জড়িয়ে দিয়ে বলল রিয়াদ।
-তাসনিম আস্তে আস্তে চোখে পাতা এক করে নিলো।আর ঘুম রাজ্যের সকল ঘুম এসে ভর করলো তাসনিমের চোখে।
চলবে…
I_live_in_your_hope
Adnan_Mahmud
Part_13
.
তাসনিম উঠো, আমরা এসে পড়েছি।মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল রিয়াদ।
তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল তাসনিম।
-আমরা কি নামবো নাকি?রিয়াদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।
-নাহ,এখন প্লেন ল্যান্ডিং করবে।নামতে নামতে আধঘন্টা লেগে যাবে।তাসনিমের দিকে তাকিয়ে বুঝিয়ে বুঝিয়ে বলল রিয়াদ।
-ওহ,তাহলে আরেকটু পরেই ডেকে নিতে।এতো আগে কেনো ডাকলে আমায়?কপাল ভাজ করে বলল তাসনিম।
-আরে প্লেনের ল্যান্ডিং খুব সুন্দর। এটা না দেখলে বুঝবে না।সেটা দেখার জন্যইতো ডাকলাম।তাসনিমকে বুঝিয়ে বলল রিয়াদ।
-দুজনে মিলে প্লেনের ল্যান্ডিং দৃশ্য উপভোগ করল।এরপর দুজনে নামল প্লেন থেকে।এয়ারপোর্টের বাইরে যেতেই রাজন আংকেল আর রেহেনা আন্টি কে দেখল রিয়াদ।আগে যখন রিসিভ করতে এসেছিল তখন যে জায়গাতেই দাঁড়িয়ে ছিলো আজও সেখানে দাঁড়িয়ে।
-রিয়াদ, তাসনিম এগিয়ে যাচ্ছে তাদের কাছে।তখনই পাশ থেকে একটা লোক হুট করে এসে তাসনিমের হাত থেকে পার্স ব্যাগ নিয়ে দৌড় দিলো। রিয়াদ কাউকে কিছু না বলে ওই লোকটার পিছনে দৌড় দিলো।
-তাসনিম রিয়াদকে থামতে বলল,তারপরও রিয়াদ না থেমে দৌড় দিলো। তাসনিম কিছু বুঝে উঠতে না পেরে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো।
-খানিকটা পর রিয়াদ ব্যাগসহ ফিরে এলো।
আরে কি দরকার ছিলো এরকম দৌড়ানোর?
যাই হোক, ব্যাগটা আনতে পেরেছো এটাই অনেক।
রিয়াদকে বলল তাসনিম।
-হুম,পেরেছি।কারণ,ওই লোকটা বারবার পিছনে তাকাচ্ছিল আর দৌড়াচ্ছিল তাই হঠাৎ একটা খুটিতে বেধে পড়ে গেছিলো।পরে ব্যাগ ফেলে রেখে জীবন রক্ষা করে পালিয়ে গেছে।
রিয়াদকে দেখে এগিয়ে এলো রাজন সাহেব আর রেহেনা বেগম।
-কেমন আছেন আংকেল আন্টি?
রিয়াদ জিজ্ঞেস করল তাদেরকে।
-আমরা তো ভালো।বাট কি হয়ে গেলো কিছু বুঝলাম না।রিয়াদকে বলল রাজন সাহেব।
-তাসনিমের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রেহেনা বেগম।
-রিয়াদ এটাই তোমার বউ?
রিয়াদকে জিজ্ঞেস করল রেহেনা বেগম।
-আন্টি ভালো আছেন তো?
রেহেনা বেগমকে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।
-আরে তুমি তো আমার মেয়ের মতনই দেখতে প্রায়।আবার নামও সেইম সেইম।
কন্ঠে একরম না হলেও দেখতে কিন্তু একই রকম।
তাসনিমকে বলল, রেহেনা বেগম।
আসো মা আসো।দুহাত এগিয়ে দিয়ে তাসনিমকে ডাকল,রেহেনা বেগম।
তাসনিমও এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো রেহেনা বেগম কে।
-হ্যাঁ মা, হ্যাঁ আমিও ভালো।
তাসনিমের দিকে তাকিয়ে বলল,রাজন সাহেব।
-চলো এখন তাহলে যাওয়া যাক।মেয়ে আদর পরে করো।এমনিতেই কিছুক্ষণ আগে কি ঘটে গেলো।
রেহেনা বেগম কে বললেন রাজন সাহেব।
-সকলে মিলে গাড়িতে উঠে গেলো।রাজন সাহেব ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো।তাসনিম পিছনে গিয়ে বসেছে।রিয়াদ সব মালপত্র গাড়ির ডিকিটে রেখে তাসনিমের পাশে পিছনে বসার জন্য গেট খুলতে গেলে রেহেনা বেগম বললেন,,
-“সরো তুমি,তুমি তোমার আংকেলের কাছে গিয়ে বসো।আমি আমার মেয়ের কাছে বসবো।
এটা বলে গেট খুলে তাসনিমের পাশে গিয়ে বসে পড়ল রেহেনা বেগম।
ফিক করে হেসে উঠলো তাসনিম। রেহেনা বেগমের কান্ড দেখে।
-“রিয়াদ বোকার মতো বাইরে দাড়িয়ে একটা হাসি দিয়ে রাজন সাহেবের পাশের সিটে বসে পড়লো।
-রিয়াদ ড্রাইভ করতে পারবে না বাবা?গাড়িতে বসতেই পাশ থেকে বলে উঠল রাজন সাহেব।
-সারাপথ একভাবে বসে থেকে হাঁটু ব্যাথা হয়ে গেছে।এখন আবার ড্রাইভ!!
মনে মনে বিড়বিড় করল রিয়াদ।”
-হ্যাঁ আংকেল কেনো নয়?পারবো তো।রাজন সাহেবের দিকে তাকিয়ে ক্লান্তি ভরা মলিন একটা হাসি দিয়ে বলল রিয়াদ।
-“গাড়ি থেকে নেমে সিট চেঞ্জ করে নিলো রিয়াদ।
বাসার দিকে গাড়ি ছোটালো রিয়াদ।বারবার পাশে তাকাচ্ছে রিয়াদ। মন ছটফট করছে তাসনিমকে দেখার জন্য। অথচ তাসনিম পিছেনই বসে আছে।তাসনিম যখন পাশে থাকে তখন অনেক দূরের পথও সামান্য মনে হয়।আর এখন যেনো পথ শেষই হচ্ছে না।
-“আচ্ছা, আমি তাসনিমকে এতটা ভালোবেসে ফেললাম কবে থেকে?প্রথমতো ওর উপর শুধু আমার মনে ঘৃণা ছিলো ঘৃণা। কিন্তু এতটা ভালোবাসা কি করে জন্মালো।ধুর যাগগে।
যেভাবে জন্মেছে জন্মেছে।
-তাসনিমকে দেখার জন্য হৃদয় ব্যকুল হয়ে উঠছে আরো বেশি।
তখন মনে পড়লো এয়ারপোর্টে যাবার সময়ের কথা।যেই ভাবা সেই কাজ।এবারো লুকিং গ্লাসটা এমনভাবে করে নিলো যাতে তাসনিমকে সুন্দর ভাবে ক্লিয়ারলি দেখা যায়।
-রাজন আংকেল ঘুমিয়ে পড়েছে।মুরুব্বি মানুষ ক্লান্তি এখন দূর্বলতার রূপ নিয়েছে।পাশে একনজর তাকিয়ে ভাবছে রিয়াদ।
লুকিং গ্লাস ঠিক করে তাসনিমকে দেখে মন খানিকটা শান্ত হয়েছে রিয়াদের।”
-“রেহানা আন্টির সাথে কথা বলছে তাসনিম।এভাবে তাসনিমকে দেখতে দেখতে শেষ হয়ে এলো পথের সীমা।
হয়ে গেলো নামবার পালা।”
-“রিয়াদ জোর গলায় ডেকে তুলল রাজন সাহেবকে।
একে একে সবাই নামলো গাড়ি থেকে।পাশেই গাড়ি পার্ক করে রেখে রিয়াদও গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।
-ওয়াও!!কি নাইস বাড়ি আংকেল আন্টি তোমাদের। বাড়ি দেখে বলল তাসনিম।
-“একি আংকেল সেই পুরোনো মডেলই রয়েছে দেখছি বাড়ির।বাড়ি দেখে বলল রিয়াদ।
-হ্যাঁ, আর চেঞ্জ করা হয়নি।রিয়াদের দিকে তাকিয়ে স্লান হাসি দিয়ে বলল রাজন সাহেব।
-“সবাই একযোগে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করল।
-তাসনিম আমি যখন জার্মানিতে মানে এখানে থেকেছি।তখন ওই রুমটাতে থেকেছি।দূর থেকে আঙুলের ইশারা করে তাসনিমকে দেখিয়ে বলল রিয়াদ।
তোমরা সবাই ফ্রেশ হয়ে জলদি খেতে আসো।সবার উদ্দেশ্যে বললেন, রেহেনা বেগম।
-আন্টি আমরা কিন্তু আমার ওই রুমেই থাকবো বলে দিচ্ছি। রেহেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে আবদারের সুর নিয়ে বলল রিয়াদ।
-“আর হ্যাঁ,খানিকটা পরে খাই।সাতটা সাড়ে সাতটাতো বেজে গেলো।একেবারে রাতের ডিনার করে নিবো।রেহেনা বেগমকে বলল রিয়াদ।
-“ওকে!যা তোরা ভালো বুঝিস।রিয়াদকে বলল রেহেনা বেগম।
-“হাউজ কিপারকে স্থানীয় ভাষায় খাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখতে বলল রেহেনা বেগম।
-“আন্টি ওই রুমটার চাবি দাও।রেহেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল রিয়াদ।
-চাবি কোথায় রাখতে তুমি?দেখো সেখানেই আছে।রিয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলল, রাজন সাহেব।
-রিয়াদ তার রুমের পাশের ছোট বক্সের দিকে তাকিয়ে দেখল চাবিটা ঝুলে আছে।
তাসনিমকে নিয়ে রুমের সামনে চলে এলো রিয়াদ।চাবিটা আস্তে করে নিয়ে রুম খুলে একনজর তাকিয়ে দৌড়ে পিছনে এসে আংকেল আন্টিকে জড়িয়ে ধরল রিয়াদ।
-আজও রুমটা তেমনই রয়েছে।কিছু নড়চড় হয়নি।ধন্যবাদ তেমাদের।আংকেল আন্টিকে জড়িয়ে ধরে বলল রিয়াদ।
রুমে ঢুকে তাসনিম হা হয়ে গেছে।এতো সুন্দর সাজানো গোছানো রুম কখনো দেখেনি তাসনিম।
-এত্তোসুন্দর করে সাজানো রুম।তাসনিমের মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে গেলো কথাটা।”
-“হ্যাঁ মা,যখন রিয়াদ থাকতো তখন তাসনিয়া আর রিয়াদ নিজেদের ভিতর প্রতিযোগিতা করে রাখতো কার রুম কে বেশি সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে পারে।
তাসনিমের দিকে তাকিয়ে বললেন, রাজন সাহেব।
-“সব মালপত্র এনে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখলো রিয়াদ।তাসনিম ওয়াশরুমে গিয়ে আবারো অবাক হলো।এটা যেনো কোন ওয়াশরুম নয়,মনে হচ্ছে ছোটখাটো একটা রুম।এতোবড় ওয়াশরুম।বাথ টব।আরো কতোকি রয়েছে সেখানে।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নিজের কাপড় চেঞ্জ করে অনান্য কাপড়চোপড় আলমারি তে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখছে তাসনিম।রিয়াদ চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে বেলকনির লম্বা থাই খুলে চলে গেছে বেলকনিতে।
-“তাসনিমও কাপড় সাজিয়ে গুছিয়ে রেখে চলে এলো বেলকনিতে।
বেলকনিতে আসতেই এক ঝাপটা ঠান্ডা হওয়া এসে লাগল তাসনিমের চোখে মুখে।
সামনে দুহাত গ্রিলে বাধিয়ে হালকা নিচু দাড়িয়ে আছে রিয়াদ।
-তাসনিম এগিয়ে গিয়ে রিয়াদের দুহাতের নিচ দিয়ে নিজের হাত ভরে দিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল রিয়াদকে।”
রিয়াদ হালকা নজরে পিছনে ফিরে তাসনিমকে এক নজর দেখলো।”
-“দারুণ জোছনা আজকে এখানে।চাঁদের এক ফালি আলো এসে যেন দুজনকে গ্রাস করে নিতে চাইছে।”
রিয়াদ আস্তে আস্তে তাসনিমের হাত সরিয়ে নিয়ে নিজেকে তাসনিমের কোষবদ্ধ থেকে মুক্ত করে ঘুরে দাড়ালো তাসনিমের দিকে।
-তাসনিমের গলায় এক হাত রেখে অন্য হাতে তাসনিমের কোমর ধরে একটা আচমকা টান দিয়ে তাসনিমকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো রিয়াদ।
দুজেনে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে নিরবধি।
-“প্রবল ঠান্ডা হাওয়া এসে দুজনকে শীতল করে দিয়ে যাচ্ছে যেনো।
রিয়াদ আস্তে আস্তে তাসনিমের মাথার সাথে নিজের মাথা লাগিয়ে নিলো।নাকে নাক ঘষল রিয়াদ।
-“তাসনিম রিয়াদের তুলনায় খাটো হওয়ায় পায়ের আঙুলের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে খানিকটা উঁচু হয়ে নিলো।
আস্তে করে তাসনিমের গোলাপি কোমল ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো রিয়াদ।
চলবে…