I live in your hope,Part_02
Adnan Mahmud
-আচ্ছা ভাবী খাবার টেবিলে তুমি আমাকে এরম করে চোখ মারলা কেন?আর ভাইয়া আমার দিকে ওরকম শকুনের মতো দৃষ্টি ফেলল কেন?অবুঝ আর নিষ্পাপ শিশুর মতো মুখ করে তাসনিমকে বলল রিয়া।
রিয়ার এরকম হাবভাব দেখে তাসনিম আর নিজের হাসি ধরে রাখতে না পেরে রিয়ার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,আচ্ছা এসব বাদ,দেও।
চল আমরা ছাদে যায়। আর গিয়ে দেখি তোমার গুণধর ভাইটা কি করছে।
তাসনিমের কথায়,রিয়া সায় দিলো।
-একটার পর একটা সিগারেট টেনে যাচ্ছে রিয়াদ।খেয়ে এসে অলরেডি চারটা হয়ে গেছে আর পাঁচ নম্বরটা হাতে নিয়ে বসে আছে।
ছাদে কারোর আসার আওয়াজ পেয়ে সেদিকে তাকাল রিয়াদ।যা ভেবেছিল তাই হলো।তাসনিমের মুখটাই দেখতে হলো তার।একবার তাকিয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে জায়গা মতো বসে রইল রিয়াদ।
-আরে তুমি এখনো সিগারেট খাও,এটাকে এখনো ছাড়োনি তাহলে। দাড়াও আজকেই বাবাকে বলছি।নিজের ভাইকে সিগারেট খেতে দেখে বলল রিয়া।রিয়ার কথা শুনে রিয়াদ থ,হয়ে গেলো।আসলে তাসনিমের পেছনে থাকায় রিয়াকে সে দেখতে পায়নি।
রিয়াদ মনে মনে ভাবল, ধরা যেহেতু খেয়েইছি তাহলে হাতেরটা শেষ করেই ছাড়ি।পুনরায় দুই আঙুলের মাঝে রেখে টান ধরল রিয়াদ।
তাসনিম দর্শক হয়ে দাড়িয়ে ভাইবোনের কারসাজি দেখছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে।
–আজকে যদি আমি বাবাকে না বলছি, তাহলে দেইখো।
মুখ ঝামটি দিয়ে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল রিয়া।
আর ভাবী চলো এখান থেকে।এখানে বেশিক্ষণ থাকলে আমাদের ফুসফুসেও সমস্যা হবে। চলো ওই দিকটায় যায়।চলো দেখবে আমি কি কি ফুল গাছ লাগিয়েছি। তাসনিমের হাত ধরে নিয়ে যেতে যেতে বলল রিয়া।
রিয়াদ নিজের মতো করে ধরা বিড়ি দে টান এই ডায়লোগ মাথায় নিয়ে সিগারেট টানছে আর নানান স্টাইলে ধোঁয়া ছাড়ছে।
দেখ দেখ আমি লজ্জাবতী ফুলগাছ ও লাগিয়েছি।পাশ থেকে ফুলের টবে পানি দিতে দিতে তাসনিমকে বলল রিয়া।তাসনিমেরও ফুল অনেক পছন্দ। কিন্তু ফুলের দিকে এখন একটুও খেয়াল নেই তাসনিমের।বার বার রিয়াদের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছে তাসনিম।আবার মাঝেমধ্যে রিয়াদও তাসনিমের দিকে দেখছে।দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলেই রিয়াদ চোখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নিচ্ছে। রিয়ার অজান্তে এভাবে চলতে থাকলো দুজনের মাঝের চোখাচোখি।
-নতুন ভাবী ও নতুন ভাবী আপনাকে খালাম্মা ডাকতাছে।মাঝার সাথে পেচানো ওড়না ভালো করে মাঝার সাথে পেচাতে পেচাতে বলল কাজের মেয়ে রহিমা।অদ্ভুদ রকমের ডাক শুনে পেছনে ফিরে তাকালো তাসনিম।
-আসো মা আসো।বসো এখানে।একটা টুল দেখিয়ে বলল রাহি বেগম।তাসনিম লক্ষী মেয়ের মতো টুলে এসে বসে পড়ল।
–আসলে মা আমার ছেলে একটু বদমেজাজি উগ্র স্বভাবের।আমি জানি হয়তো তোমার সাথে ও সুলভ আচারণ করেনি।কিন্তু করবে।ও যেমন উগ্র আবার তেমনি নরম মনের একজন মানুষ।
–আরে মা,আপনি কান্না করছেন কেনো?কান্না করবেন না।আমি সব মানিয়ে নিবো।টুল থেকে উঠে শাড়ির আঁচল দিয়ে শাশুড়ির চোখ মুছাতে মুছাতে বলল তাসনিম।
আচ্ছা মা,আমাদের বাড়ি তোমার পছন্দ হয়েছে তো?নিজের চোখ মুছে বলল রাহি বেগম।
-কি যে বলেন মা।পছন্দ হবেনা কেনো?কি বড় বাড়ি।আর শুধু বাড়ি কেনো?আপনাদের সবাইকেই আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।আপনি এসব নিয়ে আর কখনো টেনশন করবেন না।শাশুড়ির পাশে বসে হাসতে হাসতে বলল তাসনিম।
-আপনি কি বাইরে কোথাও যাবেন?আরে কিছু বলছেন না কেনো?
রুমে বসে রিয়াদকে কাপড় চেঞ্জ করতে দেখে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।
-কিন্তু রিয়াদ তাসনিমের প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপহ করছে না।
তাসনিম বারবার প্রশ্ন করছে আর এদিকে রিয়াদের মুখ থেকে কোন জবাব নেই।
বিরক্ত হয়ে রিয়াদের পিছনে গিয়ে রিয়াদকে নিজের মুখো করে নিয়ে আবারো সেইম প্রশ্ন করল তাসনিম।
রিয়াদকে ঘুরাতেই তাসনিমের দিকে রক্তচক্ষু করে তাকিয়ে আছে রিয়াদ।তাসনিমও রিয়াদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রিয়াদের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।খানিকক্ষণ এভাবেই কেটে গেলো।
তাসনিম খাটের উপর এসে ধপাস করে পড়ল।রিয়াদ তাসনিমকে খাটের উপর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। এরকম পড়ার কারণে তাসনিমের পেটের দিক থেকে শাড়ির কিছু অংশ সরে গেছে।কাপড় সরে যাওয়ায় তাসনিমের শুভ্র রঙের নরম কোমল পেটের কিছু অংশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
আহহ্।এরকম আচমকা খাটের উপর পড়ে ককিয়ে উঠল তাসনিম।কোমরে সেই লেভেলের ব্যাথা পেয়েছে তাসনিম।ব্যাথার কারণে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে তাসনিম।চোখ খুলে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে দেখল রিয়াদ কেমন জানি দৃষ্টি দিয়ে দেখছে তাসনিমকে।পরে খেয়াল করল তাসনিমের কাপড় সরে যাওয়ার ব্যাপার টা। আর রিয়াদ ওইদিকেই তাকিয়ে আছে।সাথে সাথে শাড়ি ঠিক করে নিল তাসনিম।
– তাসনিম শাড়ি ঠিক করতেই রিয়াদ যেন বাস্তবে ফিরে এলো।সাথে সাথে চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিল সে।তাসনিম খাট থেকে উঠে বসে রইল এক কোণে।এখনো মাঝা ডলছে তাসনিম।
-ভাবী মা তোমাকে নিচে আসতে বলছে।হঠাৎ করে রুমে ঢুকে বলল রিয়া।সাথে সাথে রিয়ার সাথে তাসনিম বেরিয়ে এলো রুম থেকে।রিয়াদ রুমেই রয়ে গেলো।
-মা তুমি না রুই মাছের তরকারি পছন্দ করো।আজকে ওগুলোই রান্না করেছি এসো খাবে।ছেলে বউয়ের দিকে হাস্যকর মুখ নিয়ে বলল রাহি বেগম।
-ওহ আল্লাহ! আপনাকে এগুলে কে বলল মা?
শাশুড়ীর এমন কারসাজি দেখে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।
-তোমার মায়ের কাছে ফোন দিয়ে জেনে নিয়েছি।আর রিয়াদ এলো না?টেবিলের উপর খাবারগুলো সাজাতে সাজাতে বলল রাহি বেগম।
-আমি ডাক দেয়নি।শুধু ভাবীকে ডেকে এনেছি।টেবিলের উপর থেকে একটা আপেল নিয়ে খেতে খেতে বলল রিয়া।
-দেন মা আমাকে দেন আমি সাজিয়ে রাখছি এসব।শাশুড়ীর হাত থেকে তারকারির বাটি নেওয়ার উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে বলল তাসনিম।
আরে না না থাক।তুমি নতুন বউ।আমিই করছি।তুমি গিয়ে বসো।তোমার কোন কাজ করতে হবে না।শুধু আমার সাথে বসে গল্প করবে।
ছেলে বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলল রাহি বেগম।
-রিয়া আবার যা তোর ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আয়।কড়া গলায় বলল রাহি বেগম।
আচ্ছা মা, বাবা দুপুরে বাসায় খায় না?শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।
-নাহ,দুপুরের খাবার নিয়ে যায় তোমার শশুর।আর ওগুলো অফিসেই খায়।হাসিমুখে বলল তাসনিম।
-রিয়াদ বসে বসে তাসনিমের সেই পড়ে যাওয়া আর পেট বের হয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে।তাসনিয়ার পেট ও এরকম ছিল।যখন তাসনিয়ার পেটে ব্যাথা করত তখন রিয়াদ তাসনিয়ার পেটে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতো,, যা দূর হয়ে যা পেটের ব্যাথা।
ওই, মা জলদি নিচে যেতে বলছে।রিয়ার কথায় কল্পনা থেকে বেরিয়ে এলো রিয়াদ।মনে মনে রাগ হলো রিয়াদের।মনে মনে ভাবল,এই রিয়াটা হলো আমার জীবনের একটা ভিলেন।সবসময় ডিস্টার্ব করে।
-মা তুমি মাছের মাথাটা নাও।তাসনিমের প্লেটে মাছের মাথা দিতে দিতে বলল রাহি বেগম।
অনেক জুরাজুরির পর নিজের প্লেটে মাছের মাথাটা রাখল তাসনিম।
-রিয়াদ আগামীকাল সকাল সকাল রেডি হয়ে থেকো।ছেলের দিকে একনজর তাকিয়ে বলল রাহি বেগম।
–কেন মা?আগামীকাল সকালে হবে কি?বিয়ে তো করলামই।আবার কি হবে?বিরক্ত মাখা কন্ঠে বলল,রিয়াদ।
-আরে বোকা।বিয়ে করেছিস ঠিক আছে।এখন শশুর বাড়িতো যেতে হবে।কাল সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট করে তাসনিমকে নিয়ে বেরিয়ে যাবে। ছেলের কথায় হাসতে হাসতে বলল রাহি বেগম।
রাহি বেগমের হাসি দেখে তাসনিম আর রিয়াও হেসে উঠলো।
সবার হাসি দেখে রিয়াদের মাথা গরম হয়ে গেলো।
আরে কি শুরু করলে তোমরা? শান্তি মতো খেতেও পারিনা।জোর গলায় বলল রিয়াদ।
রাহি বেগমসহ সকলেই চুপ হয়ে গেলো।
-দুপুরের খাবার শেষ করে রুমে এসে শুয়ে পড়েছে তাসনিম।কখন যে চোখ লেগে গেছে তাসনিমের জানে না সে।চোখ খুলে যা দেখল তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না তাসনিম।
তাসনিম দেখল,রিয়াদ তাসনিমের পেটের কাছে শাড়ি হাত দিয়ে কি যেন করছে।লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়ল তাসনিম।নিজের হাতে শাড়ি ঠিক করল তাসনিম।
-তাসনিমের এরকম হাবভাব দেখে রিয়াদ একটু ভড়কে গেলো।রিয়াদ মাথা চুলকতে চুলকতে বলল,আসলে আমি কিছু করিনি।তোর পেটের……
চলবে…..