I live in your hope,part_01

I live in your hope,part_01
Adnan Mahmud

এই উঠ,এতো ন্যাকামি আমি পছন্দ করি না।বেশি ন্যাকামি করলে থাপ্পড় দিয়ে বত্রিশটি দাঁত ফেলে দিবো।
ও তোর তো মনে হয় দাঁত বত্রিশটা হয় নাই।
যা হয়েছে তাই ফেলে দিবো।
আচ্ছা চিল,,

দেখ তোর নাম কি, কি করিস, এসব আমি জানি না।আর তোকে আমি ভালো করে দেখিওনি পর্যন্ত।
আমাকে বিয়ে করার জন্য বাধ্য করা হয়েছে।তাই
মা-বাবার কথায় তোকে বিয়ে করেছি।এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।আবারো বলছি,বেশি ঢং আমার সামনে করবি না।করলে লাথি দিয়ে মাঝা ভেঙে দিবো তোর।আর নাহলে এমন জায়গায় মারব যে,কাউকে দেখাতেও পারবি না।আর হ্যাঁ, তোকে আমি আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নেইনি, আর কোনোদিন নিতেও পারবো না।

–হাতে একটা অর্ধ জলন্ত সিগারেট নিয়ে বাসর ঘরে ঢুকে দিব্যি নববধূকে চোখ রাঙিয়ে কথাগুলো বলে হাতের অর্ধেক পুড়ে যাওয়া সিগারেট স্ট্রোতে রেখে বিছানায় গিয়ে ধপাস করে পুরো বিছানা জুড়ে বাকা হয়ে শুয়ে পড়ল রিয়াদ।

____রাত বারটা পর্যন্ত নব স্বামীর জন্য বধূবেশে অপেক্ষারত তাসনিম যা ঘটে গেলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।স্বামীর এরকম হাবভাব দেখে একটু হাসি পেলো।সাথে আবার ভয়ও পেলো।রিয়াদ বিছানায় গিয়ে এমনভাবে শুয়েছে যে,বিছানায় শোয়ার মতে কোন পরিবেশ নেই।
তাসনিমের অনেক সখ আর স্বপ্ন ছিল বাসর রাত নিয়ে।কিন্তু কিছুই হলো না তার স্বপ্নের।স্বপ্নের ছিটেফোঁটাও পূর্ণ হলো না।খানিকটা কষ্ট পেয়ে নিজেকে সামলে নিলো তাসনিম।মনে মনে এই ভেবে যে,সবার তো আর সব সপ্ন পূর্ণ হয়না তাইনা।

রিয়াদের গায়ে খাতা টেনে দিয়ে একটা বালিশ এনে সেদিনের মতো সোফায় কাটিয়ে দিলো রাতটা, তাসনিম।

-হঠাৎই মুখের উপর সূর্য্যি মামার এক ফালি কিরণ এসে পড়ল রিয়াদের।
আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুলে ফেলল রিয়াদ।চোখ খুলেই চোখের সামনে তাসনিমকে দেখে বোকার মতো ফ্যাল ফ্যাল করিয়ে তাকিয়ে আছে তাসনিমের মুখের দিকে।একমুহূর্তের জন্য হয়তো রিয়াদ ভুলে গিয়েছিল যে,সে এখন বিবাহিত।

-ভ্রু নাচিয়ে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে থাকল তাসনিম।সাথে সাথে রিয়াদ চোখ ফিরিয়ে আনল তাসনিম থেকে।
দুহাত দিয়ে চোখ ডলে হাম ছাড়তে লাগলো।এক হাত দিয়ে হাম থামানোর চেষ্টা করল।ডানে বামে তাকিয়ে কি যেন দেখে উঠে বসে পড়ল রিয়াদ।

–তাসনিম গোসল করে একটা নীল রঙের শাড়ি পরেছে।ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে কি যেন করছে তাসনিম।তাসনিমের লম্বা ভেজা চুল বেয়ে এখনো টপ টপ করে পানি পড়ছে।

-পানি পড়তে দেখে রিয়াদ বুজতে পেরেছে তাসনিম গোসল করেছে।কিন্তু কেনো?কাল রাতের কথা মনে করার ব্যর্থ চেষ্টা করল রিয়াদ।কিন্তু কিছুই মনে পড়লো না রিয়াদের।

এই মেয়ে সরে দাড়া এখান থেকে।দেখতো পানি পড়ে কি হচ্ছে রুমটা?এগুলো কে মুছবে এখন?
বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নেমে তাসনিমকে নিজের মুখো করে ধমক দিয়ে বলল রিয়াদ।
তাসনিম রিয়াদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে ভৌ দৌড়ে চলে এলো বেলকনিতে।একটা মোছার ব্রাশ নিয়ে পানি পড়া জায়গাটা মুছতে লাগল তাসনিম।

-ভাবী উঠছো ঘুম থেকে?ভাবী দরজা খুলো আমি আসবো।
বাইরে থেকে দরজায় বাড়ি দিয়ে চেচিয়ে বলল,রিয়া।

–তাসনিমের কান্ড দেখে একমুহূর্তের জন্য সেখানে না দাঁড়িয়ে সোজা ওয়াশ রুমে চলে গেলো রিয়াদ।
তাসনিম জায়গাটা মুছে ব্রাশটা জায়গা মতো রেখে এসে গেট খুলে দিলো।

বাবাহ্,কি সুন্দর লাগছে আমার ভাবীটাকে।তাসনিমকে জড়িয়ে ধরে বলল,রিয়া।
ভাবী ভাইয়া কোথায়?তাসনিমকে ছেড়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল রিয়া।
তাসনিম বলতেই যাচ্ছিল আর তখনই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো রিয়াদ।

-কিরে তুই এখানে কি করছিস?আমার রুমে আসতে মানা করেছি না তোকে?হাতের টাউ ওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল রিয়াদ।

আমি তোমার রুমে আসি নাই। আমি আমার ভাবীর রুমে এসেছি।আর এটা এখন ভাবীর ও রুম।রিয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে বলল রিয়া।

বের হ আমার রুম থেকে আর তোর এই ভাবী নামক যে প্রাণীটা আছে সেটাকেও আমার রুম থেকে নিয়ে বিদায় হ।যা তো।রেগে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল রিয়াদ।

কি ব্যাপার রিয়াকে পাঠালাম ডেকে আনার জন্য। আর রিয়াও এসে আটকে গেলো এখানে।বাইরে থেকে জোর গলায় বলতে বলতে রুমে ঢুকল রেহান সাহেব।
রেহান সাহেব রুমে ঢুকতেই নিরবতা বিস্তার করল পুরো রুম জুড়ে।

কি করছো এখনো তোমরা? খেতে আসার জন্য রিয়া তোমাদের কে বলেনি?রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল রিয়াদের বাবা রেহান সাহেব। রিয়াদ কিছু বলতেই যাচ্ছিল। কিন্তু বলার কোনো সুযোগ না দিয়ে সবাইকে নিচে যেতে বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো রেহান সাহেব।পিছন পিছনে রিয়াও বের হয়ে গেলো রুম থেকে।যাওয়ার সময় আরেকটা ভেঙচি দিয়ে গেলো রিয়াদের দিকে তাকিয়ে।

–রিয়ার কান্ড দেখে রিয়াদের মেজাজ আবার বিগড়ে গেলো।আর তাসনিম মুখে হাত দিয়ে মুখ চেপে হাসতে লাগল।তাসনিমের হাসি দেখে রিয়াদের মেজাজ ডাবল বিগড়ে গেলো।
রিয়াদের মুখের অবস্থা রাগে চৌদ্দ পনেরো ষোলটা বেজে রয়েছে। তাসনিম হাসি থামানোর চেষ্টা করছে মুখে হাত দিয়ে।কিন্তু হাসি থামাতে পারছে না।

তোকে কি নেমন্তন্ন করে ডাকবে?যাস না কেনো তুই?
কি বলবে ভেবে না পেয়ে তাসনিমের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলল রিয়াদ।
আপনি যাবেন না?আমি আপনার সাথে যাবো।হাতের কনিষ্ঠ আংগুল কামড়াতে কামড়াতে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল তাসনিম।

রিয়াদ এক মুহূর্তের জন্য সেখানে না দাড়িয়ে পিছনে গিয়ে বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা নিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে ডায়নিং টেবিলের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। তাসনিম ও পিছন পিছন নামতে লাগল সিড়ি বেয়ে।

ডায়নিং টেবিলে গিয়ে ব্রেকফাস্টের জন্য একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল রিয়াদ।

আস মা আসো।তাসনিম কে দেখে রিয়াদের মা রাহি বেগম বলল কথাটা।
একটা চেয়ার টেনে নিয়ে রিয়ার পাশে তাসনিম বসতে গেলে রাহি বেগম বলল,আরে এখানে কেনো বসছো?যাও ওই পাশে গিয়ে রিয়েদের পাশের চেয়ারটাতে বসো।

-জ্বী মা,আস্তে করে মাথা নাড়িয়ে কথাটি বলে রিয়াদের পাশের চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ল তাসনিম।
আমাদের বাড়ি কেমন লাগছে তোমার?পরাটা ছিড়ে মুখে দিতে দিতে তাসনিমকে জিজ্ঞেস করল রাহি বেগম।

আহহ্,কি যে করো না তোমরা?মেয়েটা আসলো বসল।প্রশ্ন করা শুরু করেছ।আগে শান্তি মতো খেতে দিবে তো।মুখের ভিতরের পরাটা চাবাতে চাবাতে বলল রেহান সাহেব।

-সবাই চুপ হয়ে গেলো রেহান সাহেবের কথায়।রিয়াদ হলো একটা বদমেজাজি ছেলে।কথায় কথায় অণু থেকে অণু কারণেই প্রচন্ড রেগে যায়।সেও বাবা রেহান সাহেবকে ভয় করে চলে।
পরিবেশটা চুপচাপ।কোন শব্দের লেশ মাত্রও নেই। মাঝে মাঝে বাটি টান দেওয়া, চামচ বাটিতে বাড়ি খাওয়া আর পানি খেয়ে টেবিলে কাচের গ্লাস রাখার আওয়াজ হচ্ছে।

-সবাই যার যার মতো করে খাচ্ছে নিচের দিকে তাকিয়ে।তাসনিম একেক করে সবার দিকে তাকিয়ে দেখল।
রিয়াদও মনের আনন্দে খাচ্ছে। তাসনিমও খেতে লাগল।
পরাটা ছিড়ে মুখে নিবে রিয়াদ, তখনই কে যেন পায়ে একটা লাথি মারল।রিয়াদ সবার চোখের দিকে তাকাল।প্রথমে তাসনিমের দিকে তাকাল।দেখল, নিরিবিলি নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে মেয়টা।

–রিয়ার দিকে তাকিয়ে রাগে চোখগুলো রক্তবর্ণ হয়ে গেলো রিয়াদের।রিয়া ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।তার মানে রিয়াই লাথিটা মেরেছে।
ওর সাহসটা ইদানীং খুব বেড়েছে। কিছু একটা করতে হবে।মনে মনে ভাবল রিয়াদ।

খাওয়া শেষে রিয়াদ উঠে চলে গেলো।খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে এসে আবার নিজের জায়গায় বসল তাসনিম।

–তাসনিম তুমি যাও, উপরে যাও।আমার দরকার হলে ডাকব তোমাকে মা।তাসনিমের দিকে এক নজর তাকিয়ে বলল,রাহি বেগম।

ভাবী আমিও আসি।তাসনিম উঠতে গেলে রিয়া তাসনিমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।

আরে তুই যাবি কোথায়?
রাহি বেগম রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল।
আসুক না মা।আসুক।রাহি বেগমের দিকে তাকিয়ে মোলায়েম কন্ঠে বলল তাসনিম।

-রিয়াদ খেয়ে এসে ছাদে দাড়িয়ে সিগারেটর ধোঁয়া উড়াচ্ছে।আর গুণ গুণ করে গান গায়ছে।মনে মনে তাসনিয়ার কথা ভাবছে।তাসনিয়ার কথা খুবই মনে পড়ছে।তাসনিয়ার সাথে এই মেয়েটির অনেকটাই মিল রয়েছে। নামও প্রয়া সেম সেম।তাসনিয়া আর তাসনিম।দুটো একসাথে মিলালে তাসনিয়া তাসনিম।চমৎকার নাম।

— কথা বলে হাসতে হাসতে একসাথে রুমে ঢুকল তাসনিম আর রিয়া।রুমে এসে রিয়াদকে না দেখে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল তাসনিম।
আরে ভাবী ভাইয়া হয়তে ছাদে গিয়েছে।তাসনিমের হাবভাব দেখে রিয়া ব্যাপার টা বুজতে পেরে বলে দিল কথাটা।

আচ্ছা ভাবী তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি।হাসিমুখ করে বলল রিয়া।

হুম বলো কি বলবে?
জিজ্ঞেস করার অনুমতি দিলো তাসনিম।

আচ্ছা ভাবী খাবার টেবিলে তুমি আমাকে চোখ মারলে কেনো?আর তারপর ভাইয়া আমার দিকে ওরকম রাগী চোখে তাকালও বা কেনো?
অবুঝ শিশুর মতো মুখ করে আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করল রিয়া।

রিয়ার এই অবস্থা আর প্রশ্ন শুনে ফিক করে হেসে দিলো তাসনিম।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here