Darkness,Part: 06

Darkness,Part: 06
Writer: Abir Khan

ওরা একে অপরের দিকে মায়ায় ভরা ভালবাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তনুর ঠোঁট জোড়া কাঁপছিল। নেহাল কেন জানি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না৷ ও তনুকে একদম অবাক করে দিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তনুর মিষ্টি ঠোঁটদ্বয়কে একদম নিজের করে নেয়। অজানা অনুভূতিতে দুজন হারিয়ে যায় অতলে। বেশ কিছুক্ষণ পর বাধ্য হয়ে ওরা একে অপরকে ছেড়ে দেয়৷ তনু এবার খুব লজ্জা পাচ্ছে। তবে আবার একটা অন্যরকম ভালো লাগাও কাজ করছে। মনের মানুষটাকে এভাবে কাছে পেলে কারই বা না ভালো লাগে! তনুরও লাগছে। নেহাল তনুর লজ্জাসিক্ত মুখখানা ওর দিকে করে কিছু মুহূর্ত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,

— তুমি যদি রাজি থাকো আমরা কালই বিয়েটা করে ফেলবো। কারণ হাতে সময় খুব কম। আমাদের খুব দ্রুত ডার্কনেসে যেতে হবে।

তনু কিছুক্ষণ ভেবে আস্তে করে লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে বলে,

~ আমি রাজি। আমার সব কিছু আপনার হাতে তুলে দিয়েছি। আপনি যা বলবেন তাই হবে। কিন্তু বাবা তো কিছুই জানে না৷ আমি যদি হঠাৎ করে এভাবে হারিয়ে যাই,তাহলে উনি কি ভাববেন?
— সে তো তোমার কোন খোঁজই নেয় না। তবে চিন্তা নেই আমি তাকে দেখে আসবো নি, যাতে সে তোমার কথা আর না ভাবে।
~ ঠিক আছে। আচ্ছা বিয়ে করতে তো দু’পক্ষেরই সাক্ষী লাগবে৷ সেটার কি হবে?
— উমমম, তুমি নীলাকে আসতে বলো আর আমি আমার একজনকে আনবো নি। তাহলেই তো হবে?
~ হ্যাঁ হ্যাঁ বেশ হবে৷ জানেন, আমার না খুব খুশি খুশি লাগছে। আমি কখনো ভাবতেও পারি নি আমি আপনার বউ হবো।
— শুধু বউ না, বলো ভ্যাম্পায়ার কিংয়ের একমাত্র ভ্যাম্পায়ার বউ। তোমাকে আপন করে নেওয়া মাত্রই তুমি ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবে৷ এটা হলো আমাদের রিচুয়াল।
~ যাহ! খালি লজ্জা দেয় আমাকে। চুপ করেন তো। (লজ্জায় একদম লাল টুকটুকে হয়ে)
— হাহা৷ তোমাকে একদম কাছে পাওয়ার জন্য বেকুল হয়ে আছি বুঝলে। আর তার চেয়েও বেশি অস্থির হয়ে আছি তোমার ভ্যাম্পায়ার রূপটা দেখে। জানি না কি হবে৷
~ আপনারা অনেক পঁচা। এরকম একটা রিচুয়াল কেউ বানায় নাকি! (নেহালের বুকে মুখ লুকিয়ে)
— পাগলি, এই রিচুয়াল না হলে অনেক মানুষই খুব সহজে ভ্যাম্পায়ার হয়ে যেত আর অন্য মানুষের ক্ষতি করতো। তাই হইতো এই রিচুয়াল বানিয়েছে।
~ হয়েছে চুপ করেন এবার। একটুও লজ্জা নাই আপনার।

তনু খুব লজ্জা পাচ্ছে। আর নেহালও ওর লজ্জাসিক্ত মুখখানা দেখে খুব মজা পাচ্ছে। একজন মানুষ ঠিক তখনই ভ্যাম্পায়ার হতে পারবে যখন সে আরেকটা ভ্যাম্পায়ার এর সাথে একদম আপন হয়ে যাবে। তাদের মন, দেহ এবং আত্না এই তিনটি জিনিস যখন এক হয়ে যাবে ঠিক তখনই সে ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবে। এটাই ভ্যাম্পায়ার হওয়ার রিচুয়াল। সেদিন রাতে নেহাল তনুকে এটাই বলেছিল। কিন্তু তনু চেয়েছে এই রিচুয়ালটা ওরা স্বামী স্ত্রী হয়ে পূর্ণ করবে৷ তাহলে ওদের কোন সম্পর্কটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাবে। ওরা সারাজীবন স্বামী স্ত্রী হয়ে থাকতে পারবে৷ নেহাল তনুর কথায় সেদিন রাজি হয়৷ এবং কালকে ওরা সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিয়ে করতে যাচ্ছে। তনু আর নেহাল সেদিন রাতটা এভাবে খুনসুটি করেই কাটিয়ে দেয়৷ তবে নেহালের মনের গভীরে তনুকে নিয়ে একটা অজানা ভয় কাজ করছিল। তবে সেটা ও তনুকে বুঝতে দেয় নি।

পরদিন সকালে,

আজকের দিনটা অনেক স্পেশাল। তনু আর নেহাল একসাথে ঘুমিয়ে আছে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎই দরজায় নক। আজিম আঙ্কেল তনুকে ডাকছে।

— মামনি… এই যে মামনি… উঠুন। নাস্তা করবেন না? নিচে আসুন।

তনু একলাফে উঠে বসে। দেখে নেহাল ওর পাশে ঘুমাচ্ছে। তনু উত্তরে বলে উঠে,

~ আঙ্কেল আপনি যান আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
— আচ্ছা মামনি।

আজিম আঙ্কেল চলে গেলে তনু আস্তে আস্তে নেহালকে ডাক দেয়।

~ এই যে মিস্টার উঠুন। সকাল হয়ে গিয়েছে। এই যে…
— আরেকটু ঘুমাতে দেও না।
~ আজিম আঙ্কেল ডাকছে আমাকে। নিচে যেতে হবে।
— আচ্ছা যাও। আমাকে কেউ দেখবে না সমস্যা নেই।
~ আরে আমি নিচে গেলে ঘর পরিষ্কার করতে আসবে তো।
— ওহ! তাহলে আমি অন্য কোথাও যাই। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে আসো।
~ ঠিক আছে। আর শুনুন..
— হুম বলো..
~ না মানে আমার রক্ত খাবেন না? (লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে)

নেহাল তনুর দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়। আর তনু খুব লজ্জা পাচ্ছে। হঠাৎই নেহাল তনুকে কাছে টেনে ওর ঘাড়ে আলতো করে একটা পরশ বুলিয়ে দিয়ে দাঁত বসিয়ে দেয়৷ কিছুক্ষণ ওর রক্ত খেয়ে তনুকে ছেড়ে দিয়ে ও বেড থেকে নেমে বলে,

— আহ! নিজেকে অনেক পাওয়ারফুল মনে হচ্ছে। যাই ট্রেনিং করে আসি কতক্ষণ।
~ আচ্ছা যান। (মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে)

নেহাল তনুর কাছে এসে ওর কপালে আলতো করে পরশ বুলিয়ে দিয়ে চোখের পলকে নাই হয়ে যায়৷ তনু চোখ বন্ধ করে মুচকি হেসে নেহালের ভালবাসার স্পর্শটা গ্রহণ করে। তারপর ও ফ্রেশ হতে চলে যায়৷ ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে নাস্তা করতে চলে যায়। নাস্তা করে এসে নীলাকে সবার আগে ফোন দেয়৷

~ হায় দোস্ত কেমন আছিস? (তনু)
~ আলহামদুলিল্লাহ। তুই? আর গতকালকে আসিস নি কেন?(নীলা)
~ আমিও অনেক ভালো আছি। আসলে দোস্ত একটা জিনিস হয়ে গিয়েছে। তোর একটা হেল্পও লাগবে৷
~ বলিস কি! কি হয়েছে? তাড়াতাড়ি বল। আমার তো চিন্তা হচ্ছে।
~ আরে শান্ত হ। খুশির খবর আছে একটা।
~ তো কার অপেক্ষায় আছিস বল না৷
~ আসলে দোস্ত তুই তো জানিসই আমি কতটা একা। সারাদিন একাকিত্ব আর বিষন্নতায় ভুগি। কিন্তু হঠাৎ করে নেহাল আসায় ওর আর আমার মধ্যে কিছু একটা হয়ে গিয়েছে৷
~ কি হয়েছে!
~ উমমম, মানে…ভালবাসা দোস্ত। (খুব লজ্জা পেয়ে)
~ ওমা তাই নাকি? ওয়াও! আমিও ভেবেছিলাম তোদের মাঝে কিছু একটা হতে পারে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি হবে তা ভাবি নি। কংগ্রেস দোস্ত।
~ থ্যাংকস।
~ আরে থ্যাংকস পরে, এখন বল আমার কি হেল্প লাগবে? আঙ্কেলকে বলতে হবে? আচ্ছা নাম্বার দে।
~ আরে না না৷ আসলে আজকে বিকেলে আমরা বিয়ে করবো তুই আমার সাক্ষী হবি প্লিজ? আব্বুকে নেহাল দেখে নিবে বলেছে।
~ কিহহ! তোরা আজকে বিয়ে করবি? হাউ! মানে কেমনে কি?
~ আরে আমরা অনেক সিরিয়াস। প্লিজ তুই একটু হেল্প কর।
~ আরে এত রিকোয়েস্ট করছিস কেন! অবশ্যই করবো। আমাকে এড্রেস পাঠিয়ে দিস আমি সময় মতো চলে আসবো।
~ সত্যি দোস্ত?
~ হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ। তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তোর পাশে না থাকলে কার পাশে থাকবো বল? তোকে এতটা বছর পর আমি এত হ্যাপি দেখছি। আমিও যদি এই আনন্দের ভাগিদার হতে পারি খারাপ কি।
~ সত্যিরে তুই অনেক অনেক ভালো।
~ হয়েছে এবার যা সব গুছিয়ে নে৷
~ আচ্ছা৷

তনুর কথা শেষ হলে ও পিছনে তাকিয়ে দেখে নেহাল বেডের উপর বসে আছে ওর দিকে তাকিয়ে। তনু নেহালকে দেখে অবাক হয়ে বলে,

~ আপনি কখন আসলেন?
— কিছুক্ষণ আগেই।
~ ও৷ যাক ভালোই হলো। নীলা রাজি ও সময় মতো চলে আসবে৷ বলেছে কাজী অফিসের এড্রেসটা দিতে শুধু।
— ওকে তোমার বাসায় আসতে বইলো তাহলেই হবে৷
~ বলেন কি! এখানে তো সবাই আছে। সবার সামনে কিভাবে কি?
— পাগলি আমি ভ্যাম্পায়ার ভুলে যাও কেন বারবার? সবার সম্মতিতেই আমাদের বিয়েটা হবে।
~ সত্যি!
— হ্যাঁ।
— এটা তোমার জন্য৷(একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে)
~ এটা কি?
— খুলে তো দেখো।

তনু ব্যাগটা খুলে দেখে অসম্ভব সুন্দর ডিজাইনের একটা দামী কাজ করা নীল রঙের শাড়ি। ও পুরো অবাক আর অনেক খুশি। এত সুন্দর শাড়ি ও আগে কখনো দেখে নি। নেহাল তনুকে এত খুশি হতে দেখে বলে,

— শাড়িটা পাকিস্তান থেকে এনেছি। পছন্দ হয়েছে?
~ অনেক অনেক বেশি। আমি এখনিই এটা পড়বো।
— আরে এখন না৷ তোমাকে সাজাতে মেয়েরা আসবে৷ তারা সুন্দর করে পরিয়ে দিবে৷
~ ঠিক আছে। আপনি যা বলবেন তাই হবে।
— আমি তাহলে সব রেডি করে আসি।
~ আচ্ছা।

নেহাল আবার চলে যায়। এরপর দেখতে দেখতে বিকেল চলে আসে। এর মাঝে নেহাল কাজীকে ঠিক করে, তনুর বাসায় যারা আছে তাদের সবাইকে ওর পাওয়ার দিয়ে বশ করে ফেলে। যেন তারা নেহালকে অনেক বছর যাবৎ চিনে৷ আজিম আঙ্কেল পুরো বাসা সুন্দর করে সাজায়। এছাড়া নেহাল নিজ হাতে ওদের জন্য স্পেশাল বাসর রেডি করে৷ তবে সেটা তনুর বাসায় না অনেক দূরে কোথাও। যেটা তনু জানে না৷ নেহাল চায় ওদের জীবনের এই বিশেষ মুহূর্তটা যেন স্মরণীয় হয়ে থাকে তনু আর ওর মাঝে। সব কিছু গুছিয়ে নেহাল অসম্ভব সুন্দর একটা কুর্তা পরে নিচে হল রুমে বসে আছে। নীলা আগেই এসে তনুকে সাজাচ্ছে। আর নেহালের সেই বিশ্বস্ত বন্ধু মানে রাইগারও এসেছে। বেচারা এত মানুষ দেখে অনেক কষ্টে নিজের লোভকে সামলে আছে। শুধু মাত্র নেহালের ভয়ে। মাগরিবের ঠিক পর পরই তনুকে নিয়ে নীলা নিচে আসে। নেহাল সহ সবাই তনুকে দেখে পুরো অবাক৷ তনুকে একদম রাণীর মতো লাগছে। অসম্ভব থেকে অসম্ভব সুন্দরী লাগছে ওকে। নেহাল যেন ওর চোখই সরাতে পারছে না। তনু লজ্জাসিক্ত মুখখানা নিয়ে নেহালের পাশে এসে বসে। নীলা বলে উঠে,

~ কি জিজু আপনার রাণীকে কেমন লাগছে? কেমন সাজালাম আমরা?
— অসম্ভব সুন্দর৷ যেন চাঁদের টুকরো বসে আছে আমার পাশে।
~ বাব্বাহ! আমাদের জিজু তো ভালোই রোমান্টিক। হাহা৷

সবাই হেসে দেয়৷ এদিকে তনু লজ্জায় শেষ। নেহাল সেটা বুঝতে পেরে ওর হাতে হাত রাখে৷ আর কাজীকে বলে,

— জি এবার শুরু করুন। সবাই এসেছে।

কাজী ওদের বিয়ে পড়ানো শুরু করে৷ রাইগার আর নীলা সাক্ষী হয়েছে আর আজিম আঙ্কেল হয়েছেন উকিল বাবা৷ ওরা দুজন কবুল বলা মাত্রই কাজী সাহেব মোনাজাত ধরেন৷ মোনাজাত শেষে তিনি বলেন,

— আজ থেকে আপনারা স্বামী আর স্ত্রী হিসেবে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলেন৷ আমিন৷
— আমিন।(সবাই)

এরপর মিষ্টি সহ আরও অনেক খাওয়া দাওয়া হয়৷ সবাই অনেক হাসাহাসি করে। নীলা নেহালকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করে। নেহাল বানিয়ে বানিয়ে অনেক কিছু বলে। আস্তে আস্তে সবাই বিদায় নিয়ে চলে যায়। নীলা তনুকে ওর রুমে রেখে এসেছে। যাওয়ার সময় ও নেহালকে বলে,

~ তনুকে আপনার হাতে দিয়ে গেলাম। ওর খেয়াল রাখবেন কিন্তু মিস্টার জিজু।
— অবশ্যই। (হাসি দিয়ে)
~ আসি তাহলে।
— আচ্ছা।

নীলা গেলে আজিম আঙ্কেল এসে বলেন,

— বাবা তাহলে তুমি উপরে তনু মামনির কাছে যাও আমি এদিকটা দেখছি।
— জি আঙ্কেল।

নেহাল এবার তনুর কাছে যাচ্ছে। তনু ওর বেডে অনেক বেশি উত্তেজনা নিয়ে বসে আছে৷ আজ ও ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবে৷ যখন নেহাল ওকে একদম আপন করে। এসব ভেবেই ওর মনে অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে। লজ্জায় বারবার লাল হয়ে যাচ্ছে ও। এদিকে তনু আবার জানে না নেহাল কত বড়ো একটা সারপ্রাইজ ওর জন্য রেডি করে রেখেছে। তনু নেহালের অপেক্ষায় আর নেহাল তনুকে সেই সারপ্রাইজটা দেওয়ার অপেক্ষায়। নেহাল দরজায় নক করে তনুর রুমে প্রবেশ করে। তনু নেহালকে আসতে দেখে একটু নড়েচড়ে বসে। নেহাল দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে ওর কাছে এসে দাঁড়ায়। তনু আড় চোখে একবার নেহালের দিকে তাকায়। আবার লজ্জায় চোখ সরিয়ে ফেলে। তনু দেখে নেহাল চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কোন কিছু বলছে না৷ তাই ও আস্তে আস্তে নেহালের দিকে তাকাতেই, হঠাৎই নেহাল কোন কিছু না বলে তনুকে সোজা….

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here