Crush Villain,৩০ শেষাংশ

Crush Villain,৩০ শেষাংশ
লাবিবা ওয়াহিদ

আযানের সুরে সানিয়ার ঘুম ভাঙ্গে। ওযু করে নামাজ আদায় করে সে রুমের বাহিরে চলে আসে শরীরে একটা চাদর জড়িয়ে। এখনো চারপাশে ভালো করে আলো ফুটেনি। সূর্য না উঠলেও আবছা আবছা আলো ছড়িয়েছে। সানিয়া রুম থেকে বের হতেই আচমকা কারো সাথে জোরে ধাক্কা খায়। পরে যাওয়ার আগে আয়াফ শক্ত করে ধরে ফেলে। সানিয়ার তো ভয়ে জান যায় যায় অবস্থা। আয়াফ মৃদ্যু হেসে বলে,”এতো ভয় কেন পাও তুমি?”

সানিয়া পূণরায় সামনে তাকায় এবং দেখে আয়াফ জগিং স্যুট পরে দাঁড়িয়ে। সানিয়া একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে সামলে বলে,”হুট করে কারো সাথে ধাক্কা খেলে যে কেউ-ই ভয় পাবে তাও এই সময়!”

আয়াফ মজা নিয়ে বলে,”তাহলে তো আমার জায়গায় ভূতও দাঁড়িয়ে তোমাকে ধাক্কা দিতে পিছপা হবে না।”

সানিয়া আয়াফের মজা বুঝতে পেরে আয়াফের বুকে একটা কিল দেয়। এতে আয়াফ মৃদ্যু শব্দ করে হাসে। সানিয়া প্রসঙ্গ বদলে বলে,”কোথায় যাচ্ছেন?”

– জগিং এ যাচ্ছিলাম। তোমার পিছে দৌড়াতে দৌড়াতে আমার জগিং এর হাওয়া বিলুপ্ত হয়ে গেছিলো তাই আবার শুরু করলাম কাল থেকে।

– আপনাকে কি বলেছে আমার পিছে দৌড়াতে? এমন ভাবে বলছেন যেনো আমি আপনার পা ধরে বলেছি যেনো আমার পিছে দৌড়ান!(ভেংচি কেটে)

– নাহ তা নয়!(সানিয়ার দিকে কিছুটা এগিয়ে) আমি নিজেই তোমাকে পেতে দৌড়িয়েছি।(নেশাগ্রস্ত কন্ঠে)

সানিয়া শুকনো একটা ঢোক গিলে কয়েক কদম পিছে চলে যায়। সানিয়ার ভীত চেহারা দেখে আয়াফ হেসে দেয়।

– তুমি এমন ভয় পাও কেন বলো তো? এখনো তো টাচ অব্দি করলাম না এতেই ভয়ে ঢোক গিলো হাউ ফানি!

– আপনি একটা আজরাইল তাই আপনাকে কাছাকাছি দেখলে ভয় লাগে। আপনি কাছে আসলে মনে হয় যেনো আজরাইল আমার জান কবজ করতে আসছে।

সানিয়ার কথা শুনে আয়াফ নিজের হাসি থামাতে পারলো না। হু হা করে হাসতে থাকে পেটে হাত দিয়ে। আয়াফের হাসি দেখে সানিয়া গাল ফুলিয়ে বলে,”এক কিলে আপনার হাসি ছুটিয়ে দিবো! বজ্জাত আকিল!!”

আয়াফ আরও হেসে বলে,”তোমার মুখে আমার আকিল নামের রোস্ট টা সেই হয়, সানি!”

বলে আবার হাসে। সানিয়া সত্যি সত্যি-ই ইচ্ছা মতো কিল দিতে থাকে আয়াফকে। আয়াফ প্রথমে না আটকালেও পরে সানিয়ার দুইহাত টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে। আর সানিয়া ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে লাগে।

– কিল ঘুষি খেতে তোমাকে বিয়ে করিনাই!

– তো কি করতে বিয়ে করেছেন শুনি!(রেগে লাল হয়ে)

আয়াফ সানিয়ার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে ঠোঁটের কোণায় হাসি ঝুলিয়ে ফিসফিস করে বলে,”রোমান্স করতে!”

সানিয়ার মন চাচ্ছে আয়াফকে পানিতে চুবাতে কিন্তু পারছে না। আয়াফ তৃপ্তিভরে সানিয়াকে দেখে সানিয়াকে ছেড়ে দেয় তারপর বলে,”জগিং এর জন্য লেট হয়ে যাচ্ছে নয়তো আজ তুমি এতো সহজে আমার হাত থেকে রেহাই পেতে না!”

বলেই চোখ টিপ দিয়ে আয়াফ চলে গেলো আর সানিয়া রাগে ফুসছে আয়াফের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে।

আজ সানিয়ার মা আর বাবা এসেছে সানিয়াকে নিতে। সানিয়া মাথা নিচু করে নিজের মায়ের পাশে বসে আছে। সানিয়াদের সামনে বসে আছে আরাভ জুরাইজ আর আয়াফের মা। আয়াফ তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ভদ্র ছেলের মতো আর আয়াফের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে জোহান। নিরবতা ভেঙে সানিয়ার বাবা বলে,”ভাইসাহেব, আয়াফ এবং সানিয়ার পড়াশোনা এখনো বাকি। আমি চাচ্ছি ওদের দুজনের পড়াশোনা শেষ হলে ধুমধাম করে ওদের বিয়ে দেবো বুঝেনই তো একমাত্র মেয়ে।”

আরাভ জুরাইজ এক গাল হেসে বলে,”আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরাও চাই ছেলেমেয়ে পড়াশোনা শেষ করুক তারপর নাহয় স-সম্মানে আমাদের মেয়েকে ঘরে তুলবো কি বলো সানিয়া মা!”

সানিয়া উত্তরে মৃদ্যু হাসে। সানিয়ার বাবা মা আয়াফদের ব্যবহারে বেশ মুগ্ধ। তাই তারা আরও খুশি হয়েছেন মেয়ের উপর। সানিয়া সবার আড়ালে আয়াফের দিকে তাকায়। আয়াফ তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। সানিয়া তাকাতেই আয়াফ চোখ দিয়ে আশ্বাস দেয়। তারপর সানিয়ার বাবা বলে,”ঠিকাছে তাহলে আজ উঠি। দাওয়াত রইলো আমাদের বাসায় আসবেন কিন্তু!”

– জ্বী অবশ্যই।

আয়াফ তাদের মাঝে বলে উঠে,”আমিও কি যেতে পারি? আপনাদের ড্রপ করে আবার চলে আসবো!”

– হ্যাঁ আসো সমস্যা নেই।(হেসে)

তারপর সবাই মিলে বেরিয়ে পরে। আয়াফ ড্রাইভ করছে আর তার পাশে সানিয়া। সানিয়ার বাবা মা আর জোহান পিছেই বসে আলাপ আলোচনা করছে। আয়াফের একটুও ইচ্ছে করছে না সানিয়াকে রেখে আসতে। এতোদিন সানিয়াকে কাছে পেয়ে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। এখন সে সানিয়াকে খুব করে চায় কিন্তু সম্ভব না এখন কিছুই আরও কিছুদিন নাহয় অপেক্ষা করলো সানিয়ার জন্যে তাছাড়া হাতে যে আর কোনো উপায়-ই নেই।

সানিয়া বাইরে তাকিয়ে এতোদিনে আয়াফের সাথে কাটানো প্রতিটা মোমেন্ট আর খুনশুটি মনে করে যাচ্ছে। সে থাকবে কি করে আয়াফকে ছাড়া? দুইজন-ই দুরত্ব নিয়ে চিন্তিত। একজন আরেকজন ছাড়া কেন যেন নিজেদের অচল মনে হচ্ছে। কিন্তু কি করার তাদের ভালোটা পাওয়ার জন্য যে তাদের এই দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

এমন নানান চিন্তা করতে করতে বাড়ির সামনে চলে আসে সবাই। সানিয়ার মা বাবা জোহানকে নিয়ে আগেই নেমে যায়। নিলুফা মেয়েকে বলে,”জামাইকে বিদায় দিয়ে আয় আমরা যাচ্ছি।”

উত্তরে সানিয়া শুধু মাথা নাড়ায়। সানিয়া গাড়ি থেকে নামেনি। দুজনের মাঝে কঠিন নিরবতা বিরাজ করছে। দুজনের ভেতরেই দুরত্বের তৃষ্ণা জুড়ে যাচ্ছে। আয়াফ গাড়ির স্টায়ার ছেড়ে সানিয়ার দুগালে হাত দিয়ে নিজের দিকে টেনে সানিয়ার কপালের সাথে নিজের কপাল মিশিয়ে উভয়ই চোখ বুজে থাকে। দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না। ভারি নিঃশ্বাস নিতে নিতে আয়াফ বলে,”মিস ইউ সো মাচ, সানি। কি করে থাকবো তোমায় ছাড়া? তুমি যে আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছো!”

সানিয়া নিজেকে সামলে মৃদ্যু সুরে বলে,”কয়েকটা বছর অপেক্ষা করুন সমস্যা কোথায়? আর আমরা যে একবারের জন্যে কথা বলা বন্ধ করবো এমন তো নয়। ফোনে কথা হবে, দেখা হবে সমস্যা হবে না!”

– তবুও…

– উহু কোনো তবুও নয়! লেখাপড়ায় মন ফোকাস করুন। স্টুডেন্ট আপনি এখনো, বিয়ের চিন্তা পরে!

আয়াফ হাসলো। তারপর আলতো করে সানিয়ার ঠোঁটে কিস করে। সানিয়া হতভম্ব হয়ে চোখ বড় বড় করে আয়াফের দিকে তাকায়। আয়াফ হেসে সানিয়াকে ছেড়ে দেয়। তারপর বলে,”ফোন দিলে রিসিভ করবা নইলে আগের মতো আবার হুটহাট করে চলে আসবো!”

সানিয়া ভেংচি কেটে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে আয়াফ হেসে সানিয়ার ভেতরে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে চলে যায়।

দুজনেই কোমড়ে দড়ি বেধে পড়াশোনা শুরু করে। পড়াশোনার ফাঁকে একটু আকটু কথা হয় আর কয়েকমাস পরপর গিয়ে দেখা হয়। শত ব্যস্ততার মাঝেও দুজনের ভালোবাসা এক ফোটাও কমেনি আরও বেড়েছে। এভাবেই কয়েক বছর অতিবাহিত হয়ে গেলো। দুইজনের অপেক্ষার অবসান ঘটে।

এই কয়েকবছরে নেহালের গুরুতর চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে। তার উজ্জ্বল শ্যামল শরীরের অবস্থা নাজেহাল। কেউ তার আশেপাশে আসতে পারেনা ঘৃণায়। নেহাল এখন নিজের অবস্থার জন্য জেলের এক কোণায় বসে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। তার এই যন্ত্রণা তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। না পারছে সইতে না পারছে সহ্য করতে। নিজের এই অবস্থা দেখলে নিজেরই বমি চলে আসে তার। এই অবস্থায় সে বুঝতে পারছে নিজের অন্যায়গুলো! অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে সে তাই হয়তো ফলস্বরূপ প্রকৃতি তাকে এই কঠিন ব্যাধিতে ফেলেছে। কথাটা ঠিক, আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। সবটা সে হারে হারে টের পাচ্ছে এই কয়েকবছর। কেউ আসেনি তাকে এই অন্ধকার থেকে মুক্ত করতে কেউ না! হয়তো আর কখনো কেউ আসবে না। নিজের কর্মফল নিজেই ভোগ করছে সে।

আজ আয়াফ এবং সানিয়ার বাসররাত। সানিয়া চুপটি করে ফুলের বিছানার মাঝে বসে আছে। ঘরটা আয়াফের। আয়াফ কিছুক্ষণের মাঝেই রুমে আসলো। আয়াফ এখন একজন সফল ইঞ্জিনিয়ার। আয়াফ এক পা এক পা করে এগিয়ে সানিয়ার পাশে বসলো। এতে করে সানিয়া কিছুটা নড়েচড়ে বসে। আয়াফ ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলে,”আজ আমাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো!”

সানিয়া নিচের দিকে তাকিয়েই মাথা নাড়ায়। আয়াফ দুস্টু হেসে বলে,”তো?”

– তো?

– তো?

– তো?

আয়াফ আবার কিছু বলতে যাবে এমন সময়ই কারো জোরে দরজা ধাক্কানোর শব্দ শুনতে পেলো। আয়াফ এবার চরম বিরক্ত হলো। আয়াফের বিরক্তিমাখা চেহারা দেখে সানিয়া নিশব্দে হাসলো। আয়াফ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে দেয় এবং সামনে তাকিয়ে দেখে ছোট্ট আনফি কোমড়ে দুইহাত দিয়ে নাক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াফকে দেখে আনফি বলে উঠে,”তোমাল সাহচ তো কম না তুমি আমাল বউলে নিয়া দজ্জা আতকিয়ে রাকচো! তুমালে আমি নানুভাইকে দিয়ে ঢিশুম ঢিশুম খাওয়াবো!”

বলেই দৌড়ে ভেতরে ঢুকে সানিয়ার কোলে গিয়ে ধুম করে বসে পরে। মুনতাহা দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,”সরি ভাইয়া অনেক করে ছেলেটাকে শুইয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু সে সানিয়াকে ছাড়া শুবে না কি করি বলেন তো ছেলেটাকে নিয়ে! এতো দুস্টু কি বলবো!”

আয়াফ কিছু বলে না শুধু করুণ চোখে তাকিয়ে বলে,”তোর এই ৩ বছরের ছেলে আমার বাসরের ১২টা বাজিয়ে ছেড়েছে!”

এই কথা সানিয়ার কানে পৌঁছাতে-ই ফিক করে হেসে দেয়। এখন আয়াফের সবচেয়ে বড় শত্রু “আনফি”!

বাকি কাপলরাও আছে কোনরকম তবে তাদের আনলাম না শেষে।😛😛😛

সমাপ্ত🖤

[আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? অবশেষে আপনাদের ক্রাশ ভিলেইন আয়াফ এবং সানিয়ার কেমিস্ট্রির সমাপ্তি ঘটলো। শেষটা সহ পুরো গল্পটা কেমন লেগেছে আশা করি জানাবেন। আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম। এতোদিন যারা ধৈর্য ধরে শেষ অব্দি পড়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা আমার কাচা হাতের লেখা পড়ার জন্য🤎। জানিনা আপনারা কতোটুকু আনন্দ পেয়েছেন এই গল্পে তবে দোয়া করবেন আমার জন্য যেনো আপনাদের কাছে ভালো ভালো গল্প নিয়ে হাজির হতে পারি, আল্লাহ হাফেজ🌼]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here