Crush Villain,পর্ব-১৯

Crush Villain,পর্ব-১৯
লাবিবা ওয়াহিদপর্ব

রাতটা গভীর। চারপাশে অন্ধকার, দূর-দূরান্ত কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আজ চাঁদটাও আকাশে নেই। চারপাশে কেমন এক নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। দূরে ল্যামপোস্টের আলোতে সরু রাস্তাটা কেমন হলদে ভাব ধারণ করেছে। তাছাড়া বাকি সব অন্ধকারে ছেঁয়ে গেছে। যেমনটা আবরারের জীবন। তার জীবনটা অন্ধকারেরই চাদরে মোড়ানো। যেই একটু আলোর সন্ধান পেলো এই অন্ধকারে সেই সরু রাস্তার ল্যাম্পোস্টের আলোর মতো তখনই সেটা তার জীবন থেকে দূরে চলে গেলো অনেক দূরে। তার এই একাকিত্ব জীবনের কি ইতি ঘটবে না? হবে না তার কষ্টের সমাপ্তি? ছাদে বসে এসব দেখে মনে মনে ভাবছিলো আবরার। ছাদ পুরোপুরি অন্ধকার তাও নয়৷ ছাদের কর্ণারে একটা ল্যাম্প আছে যেটা ছাদটাকে ঝাপসা আলোর থেকে কিছুটা আলোকিত করেছে। আবরার চোখ বুজে মানিশার সাথে কাটানো প্রতিটা মোমেন্ট মনে করতে লাগলো! হঠাৎ মনে পরলো সেইদিনের কথা যেদিন মানিশা ওভাবে কেঁদেছিলো। সাথে সাথে আবরার চোখ মেলে তাকায় আর ভাবে মানিশার কি সমস্যা আছে? সেদিন কাঁদতে দেখলো আর আজ সে নিজের জীবনকে অন্ধকারের সাথে তুলনা করলো সাথে এটাও বলেছিলো তার অন্ধকার জীবনে তাকে জড়াতে চায় না। ব্যাপারটা ঘুরে ফিরে একদিকেই যাচ্ছে। নাহ কিছু তো ঘাবলা আছেই। ভেবেই আবরার ছাদ থেকে নেমে যেতে নেয় ওমনি দেখে খালা তার দিকেই এগিয়ে আসছে। আবরার মুচকি হাসে। খালা বলে,”আবরার বাবা তোমার জন্য খাবার তৈরি করেছি এসে খেয়ে যাও নয়তো ঠান্ডা হয়ে যাবে।”

– আচ্ছা খালা তুমি যাও নিচে আমি আসছি আর এতো কষ্ট করে ছাদে কেন আসতে গেলে বলো তো?

– তুই ছাদে ছিলি তাই আসলাম যাইহোক তাড়াতাড়ি খেতে আয়।

বলেই খালা নিচে চলে গেলো। এই সেই বুয়া যে আবরারকে ছোটবেলায় নিজ হাতে বড় করেছে। আবরার যখন ক্লাস ১০ এ ছিলো তখন মিস্টার শেখর তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিলো। আজ এতো বছর পর অনেক কষ্টে বের করেছে আবরার খালাকে। আবরার দেরি না করে নিজের ঘরে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে ডিরেক্ট আয়াফকে ফোন করলো।

আয়াফ তখন ভাবছিলো সানিয়াকে সে কল দিবে নাকি দেবে না। হঠাৎ কারো কল আসতেই তার ধ্যান ভাঙ্গে এবং দেখে আবরারের ফোন। এতো রাতে আবরারের ফোন? কোনো বিপদ হলো না তো? আয়াফ সাথে সাথে রিসিভ করে বলে,”হ্যাঁ বল এতোরাতে কেন ফোন করেছিস?”

– সেসব কথা পরে হবে আগে এটা বল মানিশার কি হয়েছে? কেন আমাকে রিজেক্ট করলো আর সবচেয়ে বড় কথা সে এটা কেন বললো তার জীবনটা আঁধারে পূর্ণ?

নিমিষেই আয়াফের চেহারার ভাব-ভঙ্গি অন্যরকম হয়ে গেলো। কঠিন গলায় বললো,”সেটা তুই মানিশার থেকে জেনে নিস!”

বলেই ফোন কেটে দিলো আয়াফ তারপর ফোন ছুঁড়ে ফেলে এদিক সেদিক তাকিয়ে নিজের রাগ দমানোর চেষ্টা করছেন! পরে উপায় না পেয়ে আয়াফ স্টাডিরুমের দিকে ছুটে চললো। আরাভ জুরাইজের অভ্যাস আছে ঘুমানীর আগে বই পড়ার। আয়াফ স্টাডিরুমে খুব সহজেই আরাভ খানকে পেলো। আরাভ জুরাইজ তখন বই পরছিলেন। কারো ছায়া দেখতে পেয়ে আরাভ জুরাইজ দরজার দিকে তাকালেন। আয়াফকে দেখে তিনি মুচকি হাসলেন তারপর বললেন,”আরে আকিল! এই অসময়ে স্টাডিরুমে?”

আয়াফ নিজের ক্ষোভ লুকিয়ে বলে,”তোমার সাথে জরুরি কথা ছিলো ডেড!”

– হ্যাঁ অফ কর্স কাম এন্ড সিট!

আয়াফ কিছু না বলে বাধ্য ছেলের মতো আরাভ জুরাইজের পাশে বসলেন। তারপর আরাভ জুরাইজ মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলেন,”এবার বল কি বলবি!”

– নেহালকে কেন তুমি কিছু বলতে দেও না ডেড?

সাথে সাথে আরাভ জুরাইজের হাসি উড়ে গেলো৷ সে কিছুটা গম্ভীর হয়ে বললো,”এই প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে অন্য কিছু বল!”

– ডেড! আমি এটাই বলছি! তুমি বুঝতে পারছো না বাবা ওই নেহাল তোমার কাছে বেশি লাই পেয়ে কতোটা বিগ্রে গেছে আর ও…

– (বলতে না দিয়ে) তোকে কি আমি লাই দেইনা? তুইও তো কম লাই পাসনি তাইতো তুইও বিগ্রে যাচ্ছিস!

– তুমি ওর সাথে কেন আমাকে কম্পেয়ার করছো? নেহাল আর আমার মাঝে আকাশ-পাতাল তফাৎ! তুমি একটু খোঁজ নিয়ে দেখো নেহাল কিসব করে বেড়াচ্ছে! তুমি জানো সে কতো সুখের সংসার ভাঙ্গার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে? কতোগুলো নিষ্পাপ মেয়ের জীবন নিয়ে খেলছে?

আরাভ জুরাইজ কিছুই বলছে না সে আগের কতোই গম্ভীর হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন। আয়াফ তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,”তা তো জানবেই। আবার জেনেও না জানার ভান ধরে থাকবে এর চেয়ে কি তোমার কাছে এক্সেপ্ট করা যায়? সে যাইহোক তোমার যা মন চায় করো আর ওই নেহালের ব্যবস্থা আমি করছি!”

বলেই আয়াফ উঠে যেতে নিতেই আরাভ জুরাইজ আয়াফকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”নেহালকে কিছু করবি না তুই আমার কসম!”

– ডেড!!

আয়াফ বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে আছে তার পিতার দিকে। এমন আচরণ সে কখনোই আশা করেনি আরাভ জুরাইজের কাছে। শেষপর্যন্ত বাইরের একটা ছেলের জন্য তার বাবা তাকে কসম কাটলো? আয়াফ তখনই দেরি না করে বাসা থেকেই বের হয়ে গেলো। আয়াফের চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে চশমা কিছুটা খুলে দুচোখ মুছে মনে মনে বলতে লাগে,”আমায় ক্ষমা করিস বাবা আমার হাতে যে কিছুই নেই। ওই নেহাল যে আমার বোনের শেষ চিহ্ন তাই চাইলেও কিছু বলতে পারিনা আমি। জানি আমি নেহালের কথা এমনকি ওর কর্মকান্ডসমূহ সব! একদম তার বাবার মতো উশৃংখল প্রকৃতির হয়েছে। আল্লাহর উপর ভরসা করা ছাড়া যে আমার কিছুই করার নেই!”

– আয়াফ প্লিজ এভাবে পাগলের মতো ড্রিংকস করিস না!

আয়াফ কারো কথা শুনছে না। সে একেকটা করে ওয়াইনের বোতল শেষ করেই চলেছে তাকে থামানো কোনো সাধ্য নেই! নীল উপায় না পেয়ে আলিজাকে ফোন করলো। আলিজা তখন ঘুমাচ্ছিলো। হঠাৎ তার ফোন এলে বিরক্তি নিয়ে পিটপিট করে চোখ খুলে ফোনের স্ক্রিনে তাকায় এবং দেখে নীল কল দিয়েছে। সাথে সাথে আলিজার ঘুম উড়ে গেলো এবং শোয়া থেকে উঠে বসে ফোন রিসিভ করলো।

– হ্যালো।

– আলিজা সানিয়াকে কি কল দিতে পারবে?

– মানে? এতোরাতে সানিয়াকে কেন কল করতে যাবো আমি?(ভ্রু কুচকে)

– আহ এতো কথা কেন বলো তুমি ওর নাম্বার আমাকে মেসেজ করে পাঠাও ইমিডিয়েটলি!

– আরে কি হয়েছে সেটা তো বলুন!

– এতোকিছু বোঝানো যাবে না আগে তুমি নাম্বার দাও কুইক! আয়াফকে একমাত্র সানিয়াই থামাতে পারবে!..

আয়াফের কথা শুনে আলিজার মনে ভয় ঢুকে গেলো এবং সে চটজলদি সানিয়ার নাম্বারটা নীলকে মেসেজ করে দিলো। নীল নাম্বারটা পাওয়ার সাথে সাথেই সানিয়ার নাম্বারে কল করলো! হ্যাঁ রিসিভ হচ্ছে। সানিয়া সবে বারান্দা থেকে বিছানায় এসে শুয়েছে এমন সময়ই তার ফোনের রিং শুনতে পেলো। সানিয়া শোয়া থেকে উঠে বসে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে দেখলো আননোন নাম্বার। সানিয়া ভ্রু কুচকালো আর ভাবতে লাগলো এটা আবার কার নাম্বার? সানিয়ার ভাবার মাঝেই কল কেটে গেলো। আবার একপ্রকার সাথে সাথেই একি নাম্বার থেকে কল আসলো। সানিয়া এভার সাথে সাথেই রিসিভ করে হ্যালো বললো। অপরপাশ থেকে নীল বলে উঠে,”হ্যা..হ্যালো সানিয়া আমি নীল বলছি!”..

– ওহ তা জিজাজি এতো রাতে হঠাৎ কল দিলেন কেন তাও আমাকে? আর আপনার কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন?

– এতোকিছু বলার সময় হাতে নেই। তুমি একটু হলিডে ক্লাবে আসতে পারবে?

– হোয়াট! আপনার মাথা ঠিক আছে? এই রাত ১টায় আমি যাবো ক্লাবে?

– দেখো সানিয়ার তোমার বাসার সামনে অলরেডি তিনয়কে গাড়িসহ পাঠিয়ে দিয়েছি তুমি একটু জলদি আসো। আয়াফের অবস্থা খুব সিরিয়াস!

আয়াফের কথা শুনে সানিয়ার বুক ধড়ফড়িয়ে উঠে। সে কিছুটা অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলে,”ভাইয়া ওনার কি হয়েছে?”

– মাত্রাতিরিক্ত ড্রিংক করছে যা ওর বডিতে বেড ইফেক্ট ফেলবে তুমি প্লিজ জলদি আসো আমরা কেউ-ই আয়াফকে থামাতে পারছি না!

– ওকে ওকে আমি চেষ্টা করছি আসার।

বলেই কল কেটে দিলো আর ভাবতে লাগলো বাসা থেকে কি করে বেরোবে? এতোরাতে দাড়োয়ান মামা তাকে সহজে বের হতে দিবে না। এখন কি করবো! জোহানকে নিয়ে যাবো? হ্যাঁ জোহানকে নিয়ে যাওয়াই ব্যাটার কারণ জোহান যা চিজ দাড়োয়ান মামার কিছু বলার সুযোগ বা সাহস হয়ে উঠবে না। কিন্তু এতো রাত অব্দি কি জেগে থাকবে? আগে গিয়ে দেখি।

ভেবেই দরজা খুলে জোহানের ঘরের দিকে দৌড় লাগালাম। জোহান তখন ভিডিও গেমস খেলছিলো। দরজার আওয়াজ হতেই ধ্রাম করে ফোনটা কম্বলের তলায় রেখে ঘুমানোর ভান ধরলো। ভাগ্যিস দেখে ফেলেছি। দরজা টা আস্তে করে লাগিয়ে অন্ধকারে লুকিয়ে পরি প্লান হলো জোহানকে হাতেনাতে ধরা। জোহান দরজা বন্ধ করার শব্দ শুনে পিটপিট করে তাকায়। যখন দেখলো দরজা বন্ধ আবার ফোন নিয়ে ধুরুম ধারুম ভিডিও গেম খেলা শুরু করলো। তখনই আমি গিয়ে ফোনটা হাত থেকে নিয়ে রাগি দৃষ্টিতে জোহানের দিকে তাকাই। জোহান তো ভয়ে কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে ফেলেছে। তারপর আমতা আমতা করে বলে,”আপু তুই এখানে?”

– কেন ভাই আমার কাকে আশা করছিলি শুনি?

– না মানে ইয়ে মানে তুমি এতোরাতে এখানে কি করছো ঘুমাওনি?

– প্রশ্নটা তো আমার! এতো রাত অব্দি গেমস খেলোস কি ভাবসোস আমি টের পাইনা?

এবার জোহান কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,”আপু প্লিজ বাবাকে বলিস না নইলে আমাকে মেরে পুতে ফেলবে। প্লিজ আপু প্লিইইইজ!”

– ওকে ওকে তবে শর্ত আছে!

– কি শর্ত?

– আমার সাথে বাইরে ঘুরতে যাবি!

– হোয়াট! কবে? কখন? কোনসময়?

– আজকের এবং এখনই!

– মানেহ? এখন যাবো ঘুরতে?

– হ্যাঁ এখনই। তুই না একদিন বলেছিলি তোর মাঝরাতে বাইরে ঘুরতে মন চায়? তাইতো আজ চাইলাম গিয়ে ঘুরে আসতে।

জোহানের চেহারায় মুহূর্তেই আনন্দের ঝলকানি চলে আসে। তারপর মৃদ্যু সুরে বলে উঠে,”সত্যি আপু সত্যি তুই….”

আমি জোহানের মুখ চেপে আস্তে করে বলি,”আরে আস্তে বাবা-মা জানলে রক্ষা থাকবে না। এখন বল যাবি কিনা?”

– যাবো মানে আলবাদ যাবো!

– ওকে তাহলে একটা কাজ করতে হবে।

– কি কাজ?

– কানে কানে বলছি।

জোহানকে সবকিছু বুঝিয়ে দিতেই বলে,”আরেহ এটা তো আমার বা হাতের কাজ! বাবার ফোন আনতে এই যাবো আর আসবো!”

– হইসে বেশি হিরোগিরি করতে গিয়ে আবার যেনো এমন না হয় আমরা দুইজন ধরা খাই।

– আরে ধুর বললাম তো নো চিন্তা ডু ফূর্তি।

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো জোহান আর আমি এদিকে ভয়ে পায়চারি করছি আর মনে মনে আল্লাহর নাম নিচ্ছি। কিছুক্ষ্ণের মাঝেই জোহান হাসিখুশি হয়ে ফিরে এসেছে আর তার হাতে বাবার ফোন। আমি জলদি করে ফোনটা নিয়ে দাড়োয়ান মামার নাম্বারে কল দেই। দাড়োয়ান তখন ঝিমোচ্ছিলো। হঠাৎ ফোন আসতেই দাঁড়িয়ে যায় এবং ফোনে দেখে সানিয়ার বাবার নাম। সাথে সাথে রিসিভ করে এবং সালাম দেয়৷ আমি জোহানকে ইশারায় শিখিয়ে দেই যাতে সে সালামের উত্তর দেয়। জোহানও কন্ঠ ভারি করে বলে,”ওয়ালাইকুম সালাম!”

– এতো রাতে ফোন করেছেন যে?

আমি ইশারায় কিছু বলতেই জোহান আবার আগের মতো ভারি গলায় বলা শুরু করে,”এহেম এহেম আমার ছেলেমেয়ে নিচে নামছে তাদের দেখলেই আপনি তালা খুলে দেবেন। ওর এক মামা এসেছে সে এসে ওদের নিয়ে যাবে।”

– কিন্তু স্যার আমার কাছে তো এখনো কেউ এলো না মামার পরিচয় নিয়ে?

এভার জোহান আর আমি খেলাম ধরা। এখন কি বলে সামাল দিবো? তারপর জানালা দিয়ে একটা সাদা গাড়ি দেখতেই মনে পরলো নীল বলেছিলো যে তাকে নিতে তিনয় ওদের বাসায় যাবে। আমি ইশারায় জোহানকে গাড়ির কথা বুঝিয়ে বলতেই জোহান বলে,”দেখেন গেটের বাইরে একটা সাদা গাড়ি আছে ওতেই ওদের মামা!”

দাড়োয়ান মামা জোহানের কথায় বাইরে একবার উঁকি দিয়ে দেখলো সত্যি সত্যি-ই গাড়ি আছে। তারপর দাড়োয়ান বলে,”ওকে স্যার! জোহান বাবা আর সানিয়া মা আসলেই আমি তালা খুলে দিবো!”

– আচ্ছা ঠিকাছে এখন রাখছি।

বলেই ফোন রেখে দিলো। জোহান আমার হাতে ফোন দিতেই আমি তাড়াতাড়ি ডায়াললিস্ট থেকে দাড়োয়ানের নাম্বারটা ডিলিট করে দেই। জোহান আবার সেমভাবে বাবার ফোনটা আস্তে করে রেখে আসে। এখন দুই ভাই-বোন মিলে বেরিয়ে আসি নিচে। নিচে যেতেই দাড়োয়ান মামা কোনো প্রশ্ন না করেই তালা খুলে দেয়। জোহান মুখ টিপে হাসতেই চিমটি দিয়ে হাসি থামিয়ে দেই কারণ এই পর্যন্ত এসে যদি প্লান ফ্লপ হয় তাহলে সব শেষ। বেশি দেরি না করে তিনয়ের ড্রাইভিং সিটের কাছে এসে দাঁড়ালাম এবং জানালায় টোকা দিলাম। তিনয় গ্লাস খুলে বলে,”জলদি এসো হাতে সময় নেই!”

জোহানের দিকে তাকাতেই দেখলাম জোহান হা করে তিনয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। জোহান বল,”আমরা কই যাবো?”

তিনয় হাসার চেষ্টা করে বলে,”আয়াফের কাছে!”

আয়াফের কথা শুনতেই জোহান লাফ দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো সাথে আমিও। জলদি করে আমরা ক্লাবের সামনে পৌঁছালাম! আমাকে ক্লাবের সামনে নামিয়ে দিয়ে তিনয় বলে,”জোহানের সেখানে থাকাটা ঠিক হবে না তাই আমি ওকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি!”

আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। জোহানও অমত করেনি রাতে ঘোরার সখ টা যে তার পূরণ হতে চলেছে। এখন তার থেকে সুখী ব্যক্তি আর কেউ-ই হয়না। তিনয় জোহানকে নিয়ে চলে গেলো আর আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্লাবে ঢুকে পরি। দরজার সামনেই নীলকে পেলাম। নীল আমায় খুব সেভলি আয়াফের কাছে নিয়ে যায়। আয়াফের কাছে যেতেই আমি অবাক! এতোগুলা বোতল খালি করেছে? এখনো ঢকঢক করে খেয়েই চলেছে! মাথা ঠিক আছে এর? আমি জলদি গিয়ে আটকালাম আর হাত ধরে টেনে উঠালাম। আয়াফ এতোটাই মাতাল হয়ে আছে যে ঠিকমতো তাকাতেই পারছে না আর দাঁড়িয়ে থাকা তো দূরে থাক। দাঁড়াতে পারে না দেখে আমার কাধে এসে ঢলে পরলো সে। আমি কিছুটা কেঁপে উঠি ভয়ে। তারপর নিজেকে সামলে আয়াফকে ঠিক করার চেষ্টা করি। কিন্তু সে নিজেকে একদমই সামলাতে পারছে না বারবার একটা কথা টেনে টেনে বলছে,”আমার আপন বাবাই আমায় বুঝলো না! আই হেট হিম! ইয়েএএএএস আ আ আই হেয়েট ইউ ডেড! বুঝলে না তুমি আমাকে তুমি সারাদিন ওই নেহালকে নিয়েই পরে থাকো! থাকবো না আমি তোমার সাথে থা ক বোওওও না!!!”

আমি ওনার কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। চেঁচিয়ে নীল ভাইয়াকে বললাম,”ভাইয়া যতো দ্রুত পারেন ওনার জন্য লেবুর শরবত নিয়ে আসেন!”

নীল মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। আমার কন্ঠ শুনে আয়াফ আমার দুইকাধে হাত রেখে কাধ থেকে নিজের মাথাটা তুলে আমার দিকে তাকালো। আমি তার চোখমুখ দেখে অবাক! চোখ পুরো লাল হয়ে গেছে সাথে তার নাক আর গালদুটো। কপালে এলোমেলো চুল! বলা যায় একদম বাজে অবস্থা। সে আমার দিকে তাকিয়ে অবাক ভঙ্গিতে বলে,”সানি তুমি? এসেছো?”.

বলেই আমায় তার বুকের সাথে ঝাপটে ধরলো। উনি ঠিকমত দাঁড়াতে না পারায় আমিও পরে যেতে নিলাম ওমনি সে পাশের এক দেয়াল ধরে বলে,”এতো সহজে পরবা না আমার হাত থেকে। আমার হাত থেকে পরা এতো ইজি না সানি! তোমায় জীবন দিয়ে রক্ষা করবো!”…

আমি চোখ মুখ বড় করে অবাক হয়ে মাথা উঠিয়ে আয়াফের দিকে তাকালাম। আয়াফ আমার দিকেই ঝুঁকে আছে আর তার দৃষ্টিতে কেমন নেশা নেশা ভাব! কেমন নেশার মতো করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভয়ে কেঁপে উঠি!

আয়াফ তখনই ছেড়ে দিয়ে বলে,”নো টেনশন সানি! ড্রাংক বলে এই নয় যে আই কান্ট কান্ট্রোল মাইসেল্ফ! আই এম ড্রাংক বাট মাই মাইন্ড ইজ নট! সো ভয় নেই!”

বলে সেই একই ভাবে ঢুলছে! আমি মুখ বাকিয়ে ভাবি, এএএহ সে নিজেকে সামলাতে পারে.. ঘোড়ার আন্ডা পারে! এতোই যেহেতু পারোস তাহলে ঢলে ঢলে আরেকজনের গায়ে আইসা পরোস ক্যান?

আয়াফ আবার ওয়াইনের বোতলে হাত দিতে যাবে আমি হাত দিয়ে আটকিয়ে বলি,”একদম এগুলা খাবেন না, খেলে আপনাকে মেরে তক্তা বানিয়ে গুম করে দিবো!”

আমার থ্রেডে আয়াফ মাতালের মতো হেসে উঠলো! হেসে হেসেই বলে,”ওকে ওকে আই সইয়ার আর টাচ করবো না ড্রিংকস!”

আয়াফের এমন ব্যবহারে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। এর মাঝেই নীল ভাইয়া লেবুর রস নিয়ে আসে। আয়াফ প্রথমে খেতে চায়না তাই একপ্রকার জোর করেই খাইয়ে দিয়েছি যার ফলে কিছুক্ষণের মাঝেই সব বমি করে ফেললো। ভাগ্যিস লেবুটা অতিরিক্ত ঝাঁঝ ছিলো তাইতো বেশি সময় লাগেনি। আয়াফ বমি করে সব ফেলে দিলেও তার নেশা এখনো কাটেনি তাই আগের মতোই আজেবাজে বকেই চলেছে সে। নীল ভাইয়া আয়াফকে অনেক কষ্টে বাইরে নিয়ে আসে আমিও ওদের পিছু পিছু আসি। দেখলাম তিনয় ভাইয়া গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীল ভাইয়া আমাকে থ্যাংকস জানিয়ে আয়াফকে নিয়ে যেতে নিতেই আমি বলি,”এখন কি ওনাকে বাসায় দিয়ে আসবেন?”

নীল ভাইয়া থেমে মুচকি হেসে বলে,”নাহ আপাতত আমার বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।”

– ওহ ওকে সাবধানে যান।

তারপর আমিও আর দেরি না করে তিনয় ভাইয়ের গাড়িতে উঠে পরি। সারা গাড়িতে জোহান শুধু তার ঘোরা নিয়ে কথা বলেছে। আমি করছি অন্য চিন্তা! হঠাৎ আয়াফ এতো ড্রিংক কেন করলো? আর তখন ওইসব কি বলেছিলো?

চলবে!!!

(গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here