Crush Villain,পর্ব ১৪,১৫

Crush Villain,পর্ব ১৪,১৫
লাবিবা ওয়াহিদ
পর্ব ১৪

রুহি হা করে তাকিয়ে আছে আয়াফের দিকে। আয়াফ গ্রে কালারের একটা টি-শার্ট পড়েছে আর তার উপরে ব্লাক কালার জ্যাকেট। চুলগুলো সবসময়ের মতো কপালে এলোমেলোভাবে, চোখে একটা সানগ্লাস পরেছে। ব্যাস এইটুকুই ক্রাশ খাওয়ার জন্য যথেষ্ট৷ আয়াফের পিছে আছে তার বন্ধুগণ। রুহি আয়াফের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলেও কেউ একজন রুহির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। সানিয়ার চোখের সামনে আয়াফ তুড়ি বাজিয়ে বলে,”কি হলো এভাবে চেয়ে আছো কেন?”

আমার ধ্যান ভাঙতেই আমি কথা ঘুরিয়ে বলি,”আপনি কি কানা নাকি আমি আপনার দিকে কেন তাকাবো আমি তো আপনার পিছের ওইযে দূরে যে ছেলেটা যাচ্ছে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।”

– কথা ঘুরাতে তো বেশ ভালোই শিখেছো দেখছি।

– আই থিংক সো….(দাঁত কেলিয়ে)

আয়াফ রাগি চোখে তাকিয়ে আমার পাশ কেটে চলে গেলো সাথে তার ফ্রেন্ডসরাও। হঠাৎ আমার কিছু একটা মনে হতেই দৌড়ে আয়াফের সামনে গিয়ে পথ আটকালাম!

– কি বললেন আপনি আমি ভন্ড? ভন্ড আমি নই আপনি! আপনার প্রতিটা রক্তের শিরায় শিরায় ভন্ডামি মিশে আছে আরেকটা বড় রোগ হলো অকারণে মেয়েদের গায়ে হাত তোলা!

আয়াফ যেনো কথাগুলো কানেই নিলো না। উল্টো বিরক্তি + রাগ নিয়ে বলে,”একেতো তুমি আমার পথ আটকিয়েছো আবার ভ্যাড়ার মতো ভ্যা ভ্যা করে চলেছো! মুখটা কি ১ সেকেন্ডের জন্য বন্ধ রাখতে পারো না?”

– না পারিনা আপনি এমনই একটা প্রাণী যার সামনে আমার মুখ খুলতেই হবে।

সানিয়া আর আয়াফের ঝগড়া দেখে রুহি ফিসফিস করে আলিজাকে বলছে,”আচ্ছা আপু এই ছেলেটা কি আপুকে চিনে?”

আলিজা হেসে ফিসফিস করে বলে,”হারে হারে চিনে দুটোকে।”

– ওদের মধ্যে সম্পর্ক কি?

– নাম না দেয়া সম্পর্ক!

আয়াফ সাইড প্লিজ বলে চলে গেলো। মন তো চাচ্ছে কসাইকে দিয়ে এর সব চুল কেটে গরুকে খাওয়াই শালা বান্দর! এসব বিড়বিড় করতে করতেই রুহিদের সামনে এসে দাঁড়ালাম। রুহি বলে,”আপু ছেলেটা খুব কিউট ইশশ যেরকম চেহারা তেমনই বডি হায়য়য় মে মার যাবা!”

রুহির কথায় মেজাজ ৭ম আসমানে উঠে যায়। তেড়ে রুহির সামনে রেগে বলি,”একদম ক্রাশ খাবিনা ওই গর্ধবটার উপর! ওইটা অনলি আমার ক্রাশ হোক ভিলেইন তবুও এইটাই আমার ক্রাশ! পাক্কা দেড় বছর এরে নিয়া আমি স্বপ্ন দেখসি কি হুদ্দাই মোয়া বানানের জন্য? খবরদার নজর দিবি না নইলে তোর চোখ উঠিয়ে মারবেল খেলবো!”

আমার কথায় আলিজা আর রোজা ভূত দেখার মতো চমকে উঠে আর এদিকে আমার এমন রূপ দেখে রুহি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে। আমি এখন আউট অফ মাইন্ড কি থেকে কি বলে ফেলেছি আই ডোন্ট নো! অলসো আই ডোন্ট কেয়ার! আলিজা চোখ বড় বড় করে বলে,”তোর সাথে তো সারাদিন আয়াফের ঝগড়াই লেগে থাকে তবুও তুই ওকে নিয়ে এসব কেন বলছিস?”

– হোক ঝগড়া তাতে কি? মুড ঠিক রাখতে এর সাথে ঝগড়া করতে হয় তাইতো বললাম ভিলেইন! আবার আমি কি ইচ্ছা করে লাগি নাকি ওই ছ্যাড়ায়ই তো আমার পিছে লাগে।

– সত্যি বইন তোরে বোঝা দায়!(রোজা)

– কারো আমার বুঝতে হবে না।

বলেই একপাশে এসে দাঁড়ালাম। রুহি এখনো কোনো শকে আছে। কিছুক্ষণ পর টিচার আর প্রিন্সিপালরা এসে হাজির হয় এবং আরাভ জুরাইজও আছেন তাদের মাঝে। সামনের ভি আইপি সিটে আয়াফ বসে আছে তার পিছে আয়াফের ফ্রেন্ডস। তিনয় না চাইতেও বারবার পিছে ফিরছে কিন্তু এতো ভিরের মাঝে রুহিকে দেখতে পায়না। হ্যাঁ তখন যে রুহিকে অপলক চোখে দেখছিলো সে আর কেউ না তিনয় ছিলো। তিনয় মনটা ছোট করে সামনে ফিরে তাকায়। আস্তে আস্তে লেকচার দেয়া শুরু হয় একজন একজন করে ভার্সিটি এবং রেজাল্ট নিয়ে লেকচার দিচ্ছে। এদিকে আমার ভয়ে পা কাঁপছে। রেজাল্ট কেমন হবে সেই ভেবে। কিছুক্ষণের মাঝে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায় তাই রোজাকে বললাম,”তোরা থাক আমি পানি কিনে আনছি।”

– ওকে তাড়াতাড়ি আসিস।

আমি মাথা নাড়িয়ে ভীর ঠেলে বাইরে বেরোলাম। উফফ এতোক্ষণ এই ভীরে দম আটকে আসছিলো। বেশি দেরি না করে কেন্টিনে গেলাম পানি কিনতে বাট আফসোস ক্যান্টিন অফ। তাই আর কি করার নিচে নেমে আসি এবং ভার্সিটির বাইরে এসে একটা দোকান থেকে পানি কিনে নেই। পানি বোতলটা হাতে নিয়ে পিছে ফিরে দেখি তিনয় দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখে যেনো সে চমকে উঠে তারপর আমতা আমতা করে বলে,”আরে সানিয়া তুমি এখানে?”

– হ্যাঁ আসলে পানি কিনতে আসলাম।

– ওহ।

তিনয় কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। আমি ভ্রু কুচকে বলি,”কিছু বলবেন ভাইয়া?”

– ইয়ে মানে তোমার সাথে একটা নতুন মেয়ে দেখলাম। সে কে? আগে তো কখনো ভার্সিটিতে বা তোমার সাথে দেখিনি।

আমি যা বুঝার বুঝে গেলাম তাই কিছু মজা নিয়ে বলি,”কেন ভাইয়া আপনি কি প্রতিটা ডিপার্টমেন্টের প্রতিটা মেয়েকেই চিনেন এবং দেখেছেন?”

– আরে ধুর সেরকম কিছু না তোমার সাথে আগে দেখলাম না তাই….

– ওকে ওকে বুঝেছি। ও আমার কাজিন হয়।(নাম ইচ্ছা করেই বললাম না কারণ বিষয়টা ঘাপলা লাগছে।)

– ইয়ে মানে…. নাম?

এবার শিওর হলাম তিনয়ের বিষয়টা একদম প্রমাণসহ। আমি হেসে নির্দ্বিধায় বলে দেই,”রুহি!”

বলেই চলে আসছিলাম আবার সেই আয়াফের সাথে দেখা। আয়াফ একবার আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে তিনয়ের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে বলে,”কিরে এই বাচাল মেয়েটার সাথে কি এতো কথা বলছিস?”

‘বাচাল’ শব্দটা শুনে মাথায় রক্ত উঠে গেলো। কোমড়ে দুই হাত দিয়ে আয়াফের দিকে ফিরে বলি,”এক্সকিউজ মি! আপনি বাচাল কাকে বললেন?”

– এখানে অনেকেই তো আছে তাদের মধ্যে কোনক একজনকে বললাম!

– মজা নিচ্ছেন?

– মোটেও না।

– তাহলে আমাকে বাচাল কেন বললেন?

– তোমাকে বলেছি বুঝি?

– আপনি…… অসহ্য!!

বলেই হনহন করে ভার্সিটিতে ঢুকে গেলাম আর আয়াফ সেখানে দাঁড়িয়ে হাসছে। তিনয় বলে,”মনে লাড্ডু ফুটসে নাকি দোস্ত?”

আয়াফ হাসি থামিয়ে তিনয়ের দিকে ফিরে বলে,”তোর কি মনে হয়?”

– আমার তো মনে হয় ঘাপলা একটা আছে।

– ঘাপলা টা নাহয় তোর আরও ঝাপসা হোক।

– মানে কি বলছিস তুই?

– ধরে নে ঘন্টা বেজেছে।

তিনয় অবাক হয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে ইশারায় বলে সত্যি কিনা? আয়াফ টেডি স্মাইল দিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জবাব দেয়।

– তোকে এই ঘন্টার কথা বললাম কারণ তুই-ই প্রথমে এই ঝাপসাকে ঘাপলা করেছিস যাইহোক বাদ দে তুই ওর সাথে কি কথা বলছিলি?

তখনই তিনয় মুখটা বোম্বা মরিচের মতো লাল করে নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে, “একচুয়ালি সানিয়ার সাথে যে নতুন মেয়েটা ছিলো তাকে আমার ভালো লেগেছে! আই থিংক আই বেডলি লাইক হার!”

– ওহ ওই মেয়েটা যে আমায় চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো?

তিনয় মুহূর্তেই মুখটা গোমড়া করে ফেলে। আয়াফ হেসে বলে,”ওহ প্লিজ ডোন্ট বি সিরিয়াস আই জাস্ট কিডিং!”

রেজাল্ট বলা শুরু করেছে। ফাস্ট ইয়ারের প্রতিটা ডিপার্টমেন্টের ১ম, ২য় এবং ৩য় ঘোষণা করছে। আমিতো চোখ বুজে আল্লাহকে ডাকছি। শেষে সাইন্সের কথা উঠলো। সাইন্স শব্দটা শুনতেই আমার কাঁপা-কাঁপি আরও বেড়ে গেলো। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। এক হাত আলিজার এবং আরেক হাত রুহির দুইজনের হাত শক্ত করে ধরে আছি ভয়ে যেনো কিছু আলগা হলেই সব তছনছ হয়ে যাবে।

– ১ম হয়েছে তারা।

বলতেই সবাই একসাথে তালি দিলো। তারা স্টেজে গিয়ে নিজের মার্কশীট এবং ফাস্ট এওয়ার্ড নিলো। এরপর আবার হোস্টার বলে,”২য় হয়েছে মোসাঃ সানিয়া ইবনাথ।”

আমি যেনো শকড। আমি তাও সেকেন্ড?? আয়াফ নিজে প্রথমে অবাক হলেও পরে মুচকি হেসে কড়াতালি দেয়। আমি কিছুক্ষণ বাকরুদ্ধ হয়ে থাকার পর আমাকে টেনে স্টেজের দিকে নিয়ে গেলো। সয়ং আরাভ জুরাইজ আমার হাতে মার্কশীট এবং প্রাইজ ধরিয়ে দিলো। আমি যেনো হাসতে ভুলে গেছি। সামনেএ ক্যামেরাম্যান সবকিছু ক্যামেরা বন্দি করছে। আরাভ জুরাইজ আমায় মুচকি হাসি দিয়ে বলে,”কাংগ্রেচুলেশন ডিয়ার!”

আমি মুচকি হেসে উত্তর দেই,”থ্যাংকস স্যার।”

তারপর আমি স্টেজ থেকে চলে আসি। আমার ফ্রেন্ডরা আমায় হাগ করলো এবং অভিনন্দন জানালো তারা এ নিয়ে বেশ খুশি আজ। আস্তে আস্তে সেকেন্ড ইয়ারের পালা গেলো এবার থার্ড ইয়ার। থার্ড ইয়ারে কমার্স থেকে মানিশা আপু থার্ড হয়েছে। মানিশা আপুকে দেখে ভালো লেগেছে। এবার আয়াফ মানে ফাইনাল ইয়ারের পালা। আয়াফ চুপচাপ শান্তভাবে বসে আছে। তার মনে ঠিক কি চলছে সেটা আশেপাশের কারো বোঝার সাধ্য নেই। আমি একমনে চুপচাপ দেখছি এবং জানতে চাই আয়াফ টপে আসতে পারবে কিনা?

রুহি বলে,”আয়াফ কি টপে আসবে?”

এতোক্ষণে রুহি আয়াফের ফুল বায়োডাটা আলিজা এবং রোজার থেকে পেয়েছে। আমি বলি,”পড়ালেকজায় সে অলয়েজ গোল্লা আবার সে কিনা আসবে টপে হা হা!”

রোজা আমার কথার মাঝে বা-হাত ঢুকিয়ে বলে,”এতোটাও কাচা ভেবো না ভাইয়াকে। ভাইয়া এমনে যাই করুক পড়াশোনা নিয়ে বড্ড সিরিয়াস।”

আমি কিছু বললাম না চুপচাপ এদের কান্ড দেখতে লাগলাম। একেক ডিপার্টমেন্ট বলা শেষে এবার আসে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এবং আয়াফ এই ডিপার্টমেন্টেরই। হোস্টার বলে উঠে, “প্রথম স্থান গ্রহণ করেছে “আয়াফ জুরাইজ”!!” (কিছু চেঁচিয়ে)

আয়াফের নাম শুনে যেসব পাবলিক চুপ ছিলো তারা পর্যন্ত চেঁচিয়ে উঠে। সকলের কড়তালির মাঝেই আয়াফ স্টেজে গিয়ে নিজের প্রাইজ আর রেজাল্ট কালেক্ট করে। আয়াফ নিজের বাবার চোখে স্পষ্ট গর্ববোধ দেখতে পায়। তার ঠোঁটে বিশ্বজয়ের হাসি। সবাই একে একে আয়াফকে কাংগ্রাচুলেট করে।২য় হয়েছে আবরার। আমি তো পুরোই থ! সে কি এতোটাই ভালো স্টাডিতে কই মনে তো হলো না? রোজা আমায় ধাক্কিয়ে বলে,”কি ঝটকা টা কেমন?”

আমি ধ্যান ভেঙ্গে অন্যদিকে ফিরে যাই। কিন্তু হঠাৎ মনে প্রশ্ন জাগলো যদি সে কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট তাহলে সে সাইন্সের পিজিক্স কেমিস্ট্রি মাঝে মধ্যে কি করে করাতো? প্রশ্নটা আমি রোজাকে বললাম। রোজা নিজের মাথায় চাপড় মেরে বলে,”হায়রে গাধী রে! ওদেরও এই দুই সাবজেক্ট আছে তাই ক্লিয়ারলি বুঝাতে পেরেছে এবং করিয়ে দিয়েছে।”

এতোক্ষণে যেনো প্রশ্নের ভারটা কমে গেলো। আজ ভালো রেজাল্টের জন্য ফ্রেন্ডরা ট্রিট চায় আমিও রাজি হয়ে যাই। তবে তার থেকেও বড় কথা আয়াফের রেজাল্টের জন্য আয়াফ পার্টি রেখেছে আজকে সেটাতে আমাদেরও ইনভাইট করেছে। আমি জাস্ট বলেছি দেখা যাক।

বাসায় ফিরে সকলকে রেজাল্ট জানাতেই সকলে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে। বাবাই তো এই খবর পেয়ে পুরো মহল্লাসহ সকল ভাড়াটিয়াদের মিষ্টি খাওয়াতে লাগে। তা দেখে আমি হেসে দেই। তারপর বেশি কিছু না বলে উঠে নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নেই। অঅনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে এখন এতোটাই ব্যথা যে পা দু’টো নড়ছে না। তাই চুপচাপ বিছানায় গিয়ে পা লম্বা করে শুলাম আর সাথে সাথেই রাজ্যের ঘুম চোখে এসে জড়ো হলো।

চলবে!!!

Crush Villain
লাবিবা ওয়াহিদ
পর্ব ১৫

মানিশা এদিক-সেদিক শুধু আবরারকে খুঁজে চলেছে। হুট করেই আবরার মানিশার সামনে চলে আসাতে মানিশা কিছুটা ঘাবড়ে উঠে। আবরারকে দেখে সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আবরার বলে,”কাউকে খুঁজছিলেন?”

মানিশা মাথা নাড়িয়ে বলে,”আপনাকেই খুঁজছিলাম!”

– ওহ তাইনাকি?

– হ্যাঁ তাই। তা একটা কথা বলুন তো!

– জিজ্ঞেস করুন তাহলেই বলবো!(চোখের চশমা ঠিক করে)

– আপনি কি সবসময় এইরকম জোব্বা পাঞ্জাবি আর পাজামা পরে সব জায়গায় আশাযাওয়া করেন?

আবরার ম্লান হেসে মাথা নাড়ায়। মানিশ কিছুক্ষণ ভেবে বলে,”আমার সাথে এক জায়গায় যাবেন?”

– কোথায়?(অবাক হয়ে)

– শপিং এ।

– আপনার বন্ধুদের মধ্যে কাউকে নিয়ে যান।

– না আমি আপনার সঙ্গেই যাবো।

– ঠিক আছে চলুন।

মানিশা দেরি না করে আবরারের সাথে ভালো মানের একটা শপিংমলে গেলো। মানিশা গার্লস সাইডে না গিয়ে বয়েস সাইডে গেকো তা দেখে আবরার অবাক হয়ে গেলো তবুও কিছু বললো না। মানিশা একটা শোরুমে ঢুকে আর তার পিছে পিছে আবরারও। আবরার ঘুরে ঘুরে সবটা দেখছে কিন্তু তার মুখে একদমই রিয়েকশন নেই। মানিশা একটা শার্ট চুজ করে সেই শার্ট টা আবরারের পিছে লাগালো কিন্তু আবরার সাথে সাথে সরে গিয়ে বিস্ময়ের চোখে বলে,”আপনি আমার অইছে শার্ট রাখছেন কেন?”

– মাপ দেখবো তাই!

– আমার মাপ কেন?

– আপনাকে গি….

– না আমি নিতে পারিনা সরি জানিনা এটা বেয়াদবি হবে কিনা তবুও আমি এটা নিতে পারবো না।

– কিন্তু কেন?

– বলতে পারবো না আপনাকে।

বলেই চলে যেতে নেয় মানিশা আবরারকে আটকে বলে,”আরে কোথায় যাচ্ছেন? আসলে আমার এক ভাইয়ের বার্থডে আজকে তাই তার জন্য চুজ করতে এসেছি আর সে আপনার মতোই লম্বা চওড়া সুঠাম দেহের। আমার ওর মাপ নেই দেখেই আপনাকে সাথে করে এনেছি!”(মিথ্যা কথা)

আবিরার ভ্রু কুচকে বলে,”ওহ আগে বলবেন তো!”

মানিশা যেনো হাফ ছেড়ে বাচে। এই আবরার আসলেই অনেকটা বোকা। এর জীবন যে কি করে চলবে আল্লাহ ভালো জানে। তবে ব্যাপার না মানিশা যেহেতু তার জীবনে নতুন করে একজনকে পেয়েছে আবরারকে সে সবকিছু সম্পর্কে আইডিয়া দিবে। মানিশা একটা মেরুন কালারের শার্ট, ব্লাক জিন্স, ব্লাক শু, ব্লাক টাই এবং ধূসর রঙের একটা সানগ্লাস হাতে দিয়ে চেঞ্জিংরুমে জোর করে পাঠিয়ে দিলো আর এদিকে মানিশা ঘড়ি চয়েজ করছে। কিছুক্ষণ পর মানিশা সামনের মিররে আবরারকে দেখে হা হয়ে যায় এবং সে তৎক্ষনাৎ পিছে ফিরে তাকায়। আবরার সব পরেছে কিন্তু নিজের সেই পুরোনো চশমাই তার চোখে এতে তার বিরক্ত ধরে গেলো তবুও আবরারকে হিরোর থেকে কম লাগছে না। আবরার ভীতু চোখে এদিক সেদিক দেখছে আবার চশমা ঠিক করছে। মানিশা খেয়াল করে আবরারের টাই ঠিক নেই। তা দেখে মানিশা মুচকি হেসে আবরারের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আবরার ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বলে,”এগুলো আমাকে কি পরিয়েছেন বলেন তো আর আমি এই টাই-টাও বাধতে পারছি না।”

মানিশা মুচকি হাসি দিয়ে একজন ছেলে শপকিপারকে ডেকে বললো যেনো সে আবরারের টাই-টা ঠিক করে দেয়। শপকিপারও সম্মতি জানিয়ে আবরারের টাই ঠিক করে দেয়। ছেলেটা চলে যেতেই আবরারের হাতে ঘড়িটা পরিয়ে দেয় তারপর তার পুরোনো চশমা খুলে সানগ্লাসটা পরিয়ে দেয়। এবং তার চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দেয়। ব্যাস! এতেই আবরারকে দেখার মতো। মানিশা হা হয়ে দেখছে আবরারকে। আবরার বলে,”এভাবে আমায় কেন দেখছেন আমার মুখে কি কালি বা ময়দা লেগেছে?”

মানিশা ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,”তা কেন লাগতে যাবে আপনার দিকে তাকাতে পারিনা?”

– জানিনা তবে আমার তাই মনে হচ্ছিলো।

– ওকে আমি আপনাকে দেখাচ্ছি আমি ঠিক কি দেখছিলাম।

বলেই আবরারকে টেনে আয়নার সামনে এনে দাঁড় করায়। আবরার নিজেকে নিজেই দেখে শকড! এটা কি সে নাকি অন্যকেউ একদম চেনা যাচ্ছে না। মানিশা পাশে থেকে মুচকি হেসে বলে,”নতুন আপনিটার সাথে নতুনভাবে পরিচিত হোন। সাধাসিধে হয়ে চলাটা বর্তমান দুনিয়ায় অনেক টাফ। নিজেকে শক্ত করে ফেলুন এবং ভেতরের নিজের অনুভূতি সম্পর্কে জানুন। কারো সামনে আপনি যদি নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করেন সে অবশ্যই আপনার পিঠে ছুড়ি ঢুকাতে সময় নিবে না। সবাই আপনার সরলতার সুযোগ নেবে। মনে রাখবেন সবাই আপনার মতো ভালো মানুষ না, যে যেমন তার সাথে তেমনটাই ব্যবহার করুন। অন্যায় সহ্য করা এবং করা দুটোই সমান অপরাধ। আশা করি বুঝতে পেরেছেন?”

আবরার মনোযোগ দিয়ে মানিশার কথাগুলো শুনলো। যখন ছুড়িঘাতের কথা শুনলো তখনই মুখ গোমড়া করে ভাবে সত্যি-ই তো এতোটা দিন তার সরলতার জন্যই তাকে এতোটা দিন কতো যুদ্ধ করতে হয়েছে। নাহ এখন থেকে সে হারবে না এবং কাউকে তার সরলতা দেখাবে না। এমন কি নিজের মানুষদেরও না যারা এতোদিন তাকে কষ্ট দিয়েছে। মানিশা আবরারের দিকে তাকিয়ে আছে তার উত্তরের আশায়। আবরার তখনই সেখান থেকে সরে এসে কাউন্টারে গিয়ে বলে,”এসবকিছুর বিল কতো হয়েছে?”

কাউন্টার থেকে বিল জেনে নিয়ে তার বাটন ফোন দিয়ে কাকে যেনো তার একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে বলে। মানিশা অবাক হয়ে আবরারের দিকে তাকায়। মানিশা আবরার সম্পর্কে ভেবেছিলো কি আর করলো কি? আবরারের আরেকটা ফোন আসতেই সে এটিএম কার্ড দিয়ে বিক পে করলো সাথে আরও কিছু নিজের জন্য নিলো। তারপর মানিশাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনের শোরুমে ঢুকে একটা ভালো মানের ফোন কিনে শপিং থেকে চলে এলো। মানিশা অবাক হয়ে বলে,”আপনি বুঝলেন কি করে আমি আপনার জন্যই এগুলো কিনতে চেয়েছিলাম!”

– আমাকে যতোটা বোকা ভাবো ততোটাও নই।

আবরারের এমন পরিবর্তন দেখে মানিশা যেনো আকাশ থেকে পরলো।

অনেকক্ষণ পর মানিশা বলে,”পার্টিতে যাবেন আমার সাথে?”

আবরার মাথা নাড়ায়।

ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই রুহি জ্বালিয়ে চলেছে পার্টিতে যাওয়ার জন্য আর ওদিকে আলিজা রোজা ফোন দিয়ে দিয়ে। ৩টা আমাকে পাগল করেই চলেছে। এদিকে মাকেও উল্টাপাল্টা বুঝিয়েছে এখন মাও জোর করছে সাথে খালামনিও। তো আর কি করার পার্টিতে যেতে রাজি হলাম। বিকালে আমি সাধারণ একটা কূর্তি পড়ে হিজাব পরে নিলাম। পার্টিতে যাওয়ার একদম মুড নেই তবুও আমি বাধ্য। ওদিকে রুহি ড্রেস দিয়ে পুরো বিছানা ভরে ফেলেছে। এতে প্রচুর বিরক্তি লাগছে। ১ঘন্টা লাগিয়ে একটা ড্রেস চয়েস করে পড়েছে এখন সে মেকাপে বিজি। এমন সময়ই হঠাৎ জোহানকে রেডি করে নিয়ে এসে বলে,”সানিয়া জোহানকেও সাথে করে নিয়ে যা।”

আমি অস্ফুট সুরে একপ্রকার চেঁচিয়ে বলে,”ওয়ায়াট!! পার্টিতে তোমার এই গুনোধর ছেলেকে নিয়ে যাবো হাউ?”

– তুই ওরে নিয়ে যাবি মানে নিয়ে যাবি ব্যাস!

– কিন্তু মা…

– কোনো কথা না তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আয়।

জোহান দাঁত কেলিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আম্মুর সাথে চলে গেলো। এদিকে আমি রেগেমেগে বোম। রুহিকে রেগে বলি,”তুই কি বিয়ে করতে যাচ্ছিস যে এতো সেজে যাচ্ছিস?”

– উফ আপু এমন করো কেন শেষই তো হয়েছে প্রায়।
– অসহ্য!

পার্টিতে অবশেষে জোহানকে নিয়েই আসতে হয়েছে। আশেপাশে অনেক মানুষ আর পার্টিটা একটা ক্লাবে করা হয়েছে। রোজাকে দেখতেই রোজা আমাদের নিয়ে আরেকদিকে নিয়ে গেলো। সেখানে আয়ায়সহ সকলেই ছিলো আলিজাও। আয়াফকে দেখে আরেকদফা ক্রাশ খেলাম এই ছেলেটা এত্তো কিউট কেন? আয়াফ আমাকে দেখে মুচকি হেসে আমার সামনে এসে বলে,”ওয়েলকাম!”

আমি থ মেরে আগের জায়াগতেই দাঁড়িয়ে আছি আমার মুখে কোনো কথা নেই।

চলবে!!!

(গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here