#হঠাৎ_হাওয়া,২০,২১
(২০)
বিকেলে মায়া সাহিত্যের সাথে হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো সাহিত্য সেই যে ওয়াশরুমে ঢুকে বসে আছে বের হওয়ার নাম নেই
—ওই ফুপ্পার বাচ্চা সাহিত্য বের হবি তুই আজকে? ডাক্তার কি তোর দুলাভাই লাগে? তোর জন্য বসে থাকবে?
—মায়া যত কথা বলবি তত দেরি হবে তুই চুপ থাক প্লিজ,
মায়া বিরক্ত হয়ে উঠে বাইরে গিয়ে দাড়ালো ওর ফোনে আননোন নম্বর থেকে একটা কল আসলো মায়া ঠিক বুঝতে পারলো না কি করবে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা নারী কন্ঠ শোনা গেলো
—মায়া! আমি আমি হিমালয়ের মা!
মায়া ছোট করে নিঃশ্বাস ফেললো
—কেমন আছেন আন্টি?
—তোর সাথে আমার দেখা করা খুবই দরকার মায়া, এই দুই বছরে আমি হাজার বার চেষ্টা করেছি তোর সাথে যোগাযোগ করার।
—আন্টি এখন আর আপনাকে সাহায্য করার মত তো আমার কিছু নেই
—মায়া,আমায় ক্ষমা কর মা, অনেক বড় ভুল আমি করেছি তোকে আমার খুব দরকার
মায়া ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো সবারই শুধু দরকার,
—আন্টি আমি ঢাকায় থাকি না বড়জোর দুদিন আছি আপনার দরকার আমি কিভাবে মেটাতে পারি বলুন
—আমি জানি মায়া আমার উপর তোর খুব রাগ, আমি তখনও অসহায় ছিলাম এখনো অসহায়,
সাহিত্যকে দূর থেকে আসতে দেখে মায়া বলল
—আমার নম্বর কি আপনাকে আবির ভাই দিয়েছে
—হ্যা, আমরা সবাই তোকে খুজেছি তোর ফিরে আসাটা যে আমাদের জন্য কতটা আনন্দের ভাবতে পারবি না তুই
—আমি একটু বাইরে আছি আন্টি আপনি একসময় বাসায় আসবেন আমরা কথা বলব।
রেহেনা আহমেদ এবার অসহায় কণ্ঠে বলল,
—তোকে খুব দরকার মায়া আমার অন্যায়ের শাস্তি আমার ছেলেটা…
মায়ার দম বন্ধ হয়ে গেলো, ও শুনতে চায় না ওই মানুষটার কথা ও জানতে চায় না
—আমি রাখছি।
মায়া অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে চোখের জল আড়াল করে বলতো
—আর দুই ঘন্টা বসে থাকতি
—শুধু শুধু বাথরুমে কেন বসে থাকব!অদ্ভুত কথা বলিস আমার কি বাড়িঘর নাই?
মায়া গাড়িতে উঠতে উঠতে বলল,
—ডাক্তার কি এখন আছে?
—থাকলে থাকবে না থাকলে তুই তো আছিসই ডাক্তারদের দেবী
—সবসময় মজা করবি না
—আচ্ছা কোন সময় করব তুই বলে দিস।
—সাহিত্য হসপিটালে পৌছানোর আগে তুই যদি একটা শব্দ করিস আমি গাড়ি থেকে নেমে কোথায় যে যাবো আর খুজে পাবি না।
সাহিত্য আর একটা কথাও বলল না,মায়াকে ও যথেষ্ট ভয়ই পায় শুধু বুঝতে দেয় না।
সাহিত্য আড়চোখে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে ওরা যে নিউরোলজিস্ট এর সামনে বসে আছে সে ধ্রুব।মায়া সাহিত্যের দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিলো,ধ্রুবকে উত্তেজিত দেখাচ্ছে
—তুমি কিন্তু এখনো বলছো না তুমি এতদিন কোথায় ছিলে
—বলতে চাচ্ছি না ধ্রুব, কারণ আমি আবার ফিরে যাবো
—তুমি জানো মায়া কত কিছু পালটে গেছে
—কই? তুমি তো সেই আগের ধ্রুবই আছো এখনো শুনলাম মেয়েদের সাথে ফ্লার্টিং করো বিয়েশাদীর প্লান নেই
ধ্রুব ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—তুমি মেয়েটা খুব খারাপ
—জানিতো
ধ্রুব ওর পিএ কে ডেকে সমস্ত এপোয়েন্টমেন্ট ক্যান্সেল করে দিতেই সাহিত্য ঘাবড়ে বলল,
—প্লিজ ডাক্তার আমি খুব বিজি মানুষ অনেক প্লান বাদ দিয়ে আজ এসেছি আমার এপোয়েন্টমেন্ট ক্যান্সেল করবেন না, আমার দেখানোর ওতো গরজ নেই তবে বাসায় ঢুকতে হলে আমার ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে ঢুকতে হবে
—তুই কিসের বিজি
—স্টপ, তুই আর কখনোই আমার সাথে হসপিটালে আসবি না
মায়া অসহায় ভাবে তাকাতেই ধ্রুব হেসে বললো
—তোমার ফাইলটা দাও
সাহিত্য ফাইল এগিয়ে দিতে দিতে বলল,
—ডক্টর আদনান আমায় সাজেস্ট করেছে আপনার কাছে আসতে
ধ্রুব হেসে হেসে ফাইল দেখছিলো ওর মুখটা শুকিয়ে গেলো, মায়া অধীর হয়ে ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে আছে ধ্রুব সাহিত্যের দিকে তাকিয়ে রইলো,সাহিত্য হেসে বললো
—কিছু বলবেন ডক্টর? আমি কিন্তু সব জানি।কিচ্ছু করার নেই।
ধ্রুব একটু গলায় জোড় এনে বলল
—অনেক কিছুই আছে, আমি একটু স্টাডি করতে চাই তোমার ব্যাপারে তারপর তোমাকে জানাবো।
—শুধু শুধু সান্ত্বনা দিচ্ছেন ডক্টর
—সাহিত্য শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়তে নেই, এটা আমরা অনেকেই বুঝে উঠি না
ধ্রুব এবার মায়ার দিকে তাকালো
—আবির তোমাকে কি বলেছে আদৌ কিছু বলেছে কি না আমি জানি না, তোমার সাথে এখানে দেখা না হলেও আমি তোমার বাসায় যেতাম
মায়া চোখ নামিয়ে নিলো,
—আমরা এখন আসি ধ্রুব…
—হিমালয় কোথায় জানতে চাও না?
মায়ার গলা শুকিয়ে গেলো এই একটা নামের প্রতি ওর তীব্র আকর্ষণ ও জানতে চায়, তাকে একবার দেখতে চায় কিন্তু….
—তুমি যে একটা স্টুপিড সেটা কি তুমি বোঝো?সব তোমার ইচ্ছে মত হয়? তুমি জানো আজ দেড়বছর হিমালয় ওর বাসায় যায় না, ও তোমাকে কত খুজেছে তোমার কোনো ইয়াত্তা আছে?কি করে পারলে বলোতো মায়া একজন জীবন্ত মানুষকে নিষ্প্রাণ করে দিতে..
মায়া ভয়ে ভয়ে বলল,
—মানে!…উনি কানাডাতে যান নি! কথা আপু আর উনি….
—তুমি কি বোকা মায়া? লাইফটা কি সিনেমা? যে তুমি সরে গেলেই সব স্মুথ হয়ে যাবে? হিমালয় পাগল হয়ে গিয়েছিলো মায়া তোমার প্রত্যাখ্যান ও মানতে পারে নি ওর বিস্ফোরক আচারণ দেখে আমরা সবাই হতভম্ব ছিলাম, রাগের মাথায় সেদিন ও চলে এলেও পরে তোমার বাসায় গিয়ে দেখে তুমি নেই…. প্রথম ছয়মাস ওর মানসিক অবস্থা এক্কেবারে খারাপ ছিলো প্রচুর ড্রাগ নিতে শুরু করেছিলো,আমাদের চোখের সামনে আমাদের যে বন্ধুটার সবচেয়ে ব্রাইট ফিউচার সে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিলো,অথচ আমরা কিচ্ছু করতে পারছিলাম না…. অতিরিক্ত ড্রাগ নেওয়ার কারণে হসপিটালে এডমিট হতে হয়েছিলো তখন আন্টি খুব ভেঙে পড়ে আর আঙ্কেলের কাছে সবটা জানায় তোমার আর আন্টির মধ্যে যা কথা হয়েছিলো সে সম্পর্কে, সবকিছু জানাজানি হওয়ার পর কথাও খুব ভেঙে পড়ে, এটা ঠিক কথা ছোট বেলা থেকে হিমালয় কে খুব ভালোবাসতো কিন্তু ও কখনোই চায় নি তোমার আর হিমালয়ের মধ্যে বাধা হতে…।আমরা তোমার আব্বুর কাছে তোমার খোজ নিয়ে গেলে জানতে পারলাম তুমি তার সাথেও যোগাযোগ রাখো না! তুমি এরকম কিভাবে করতে পারো মায়া!
মায়া বিস্মিত হয়ে গেলো ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো, ও সবসময় বোকামি করে সবসময়! ও কেন ভাবলো না হিমালয় ওকে ভালোবাসে! কেন ও হিমালয়ের সাথে অন্যায় করলো!
—ধ্রুব…. মহারাজ! এখন কোথায়?!
ধ্রুব হালকা হাসলো,
—এখন তার খোজ করছ মায়া! এখন কি চাইলেই তুমি তাকে পাবে?সবকিছু কি চিরস্থায়ী মায়া?তুমি হিমালয়ের জীবনে একটা হঠাৎ হাওয়ার মতো এসে ওর পুরো জীবন ওলটপালট করে দিয়ে পালিয়ে গেলে অদ্ভুত না! একটা ছেলে তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসলো তার কাছে সকাল দুপুর মাঝরাত সব তুচ্ছ হয়ে গেলো তোমার জন্যে আর তুমি….
মায়ার কান শো শো করতে লাগলো ও কিচ্ছু বুঝতে পারছে না ওর কাছে পৃথিবী পুরো অন্ধকার হয়ে আসছে, এতবড় পৃথিবীতে ও একটুও নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না!
সাহিত্য অবাক হয়ে ওদের কথা শুনছে, এতদিন ও শুধু মায়ার ভালোবাসার গভীরতাটা দেখেছে আজ বুঝতে পারছে যাকে মায়া এত ভালোবাসে তার কাছে ভালোবাসার ভান্ডার আছে তার সামনে সাহিত্য অতি নগন্য!
চলবে….
সামিয়া খান মায়া
#হঠাৎ_হাওয়া (২১)
মায়া সব ঘুরে এসে ড্রয়িং রুমে দাড়ালো,ফ্লাট টা খুব চমৎকার ভাবে গোছানো, বরাবরই হিমালয়ের রুচি অসম্ভব ভালো তবে এই ফ্লাটের ডেকোরেশন দেখে মায়া অভিভূত বিশেষ করে বেলকনি বারান্দাটা!ড্রয়িং এর সাথে লাগানো বেলকনি,কাচের দরজা খুলে ম্যাক্সিকান গ্রাসের উপর পা রাখতেই মায়ার গা শিরশির করে উঠলো ,জাদি,এলোভেরা, স্নেক প্লান্ট,জিজি প্লান্ট, ফিলোডেনড্রন,মানি প্লান্ট কি নেই! মনের অজান্তেই মায়ার মনের ভেতর থেকে একটা বড় দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো এই মানুষ টা কতটা যত্নশীল! কতটা! ধ্রুব মায়াকে ডাকতেই ও ড্রয়িং রুমে চলে গেলো,
—হিমালয় হয়তো এক্ষুনি এসে পড়বে
সাহিত্য মায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো, মায়ার উত্তেজনায় গা কাপছে
—তুই ঠিক আছিস মায়া?
মায়া শব্দ করতে পারলো না,
—তোমার কাছে এই ফ্লাটের চাবি সবসময় থাকে,ধ্রুব?
—শুধু আমার কাছে না আমাদের সবার কাছেই ডুপ্লিকেট চাবি করে নিয়েছি আমরা, হিমালয়ের কোনো ঠিক নেই ও কখন কোথায় থাকে,আর আমরা যে যখন পারি চলে আসি,
হিমালয় দরজায় হাত দিতেই দেখলো দরজা খোলা ও স্বাভাবিক ভাবেই ঘরে ঢুকলো, ধ্রুবকে দেখে বলল,
—এই ধ্রুব আদনানের সাথে দেখা হলো কাল নাকি ওর রেফার করা একটা স্পেশাল পেশেন্ট এটেন্ড করার কথা ছিল তোর করেছিলি? তুই…
কথা বলতে বলতে হিমালয়ের চোখ মায়ার দিকে পড়লো… মায়ার গলা শুকিয়ে এলো হিমালয় কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো,এই প্রথম হিমালয়ের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো ও দ্রুত বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালো জোরে জোরে কিছুক্ষণ নিঃশ্বাস ফেলে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে জ্বালালো বড় করে দুটো টান দিয়ে ভেতরে ফিরে গেলো, মায়ার সামনে গিয়ে দাড়ালো মায়া মাথা নিচু করে আছে হিমালয় একটু নিচু হয়ে ঝুকে মায়ার মুখের সামনে মুখ নিয়ে বলল,
—কেমন আছো মায়া!
হিমালয়ের গলার কম্পন স্পষ্ট শোনা গেলো,ওর মুখ থেকে ভকভক করে সিগারেটের গন্ধ বের হতে লাগলো, মায়ার গা গুলিয়ে উঠলো,একটু পিছিয়ে গিয়ে মায়া অসহায় ভাবে হিমালয়ের দিকে তাকালো! এই কি সেই হিমালয় যে কোনোদিন সিগারেট ছুয়েও দেখেনি! বরাবর খুব গোছালো সেই লোকটা কি এই?এই বাড়িটা যে এত সুন্দর করে সাজিয়েছে সে নিজে এত্ত এলোমেলো কেনো! মায়া চোখের জল আড়াল করে বলল,
—আপনি সিগারেট খাচ্ছেন?
হিমালয় তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে পাশে থাকা এস্ট্রে তে ছাই ফেলতে ফেলতে বলল,
—না তো পান করছি, করবে? ধ্রুব মায়াকে নাস্তা দিয়েছিস?
ধ্রুব একটু হতাশ হয়ে বলল,
—হিমালয়, তুই…
—হ্যা বল শুনছি তুই কিছু বলতে চাস?
ধ্রুব খেই হারিয়ে ফেললো কি বলবে ও বুঝতে পারলো না,
—তুই কোথায় ছিলি?
—কোথাও না, অর্না ওর আশ্রমের বাচ্চাদের নিয়ে একটা কালচারাল প্রোগ্রাম করছে তার এরেঞ্জমেন্ট করছিলাম, এনিওয়ে হু ইজ হি?
সাহিত্য কে দেখিয়ে হিমালয় প্রশ্ন করলো,সাহিত্য এগিয়ে এসে হিমালয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
—আমি সাহিত্য,মায়ার…
—বয়ফ্রেন্ড?
বলেই মায়ার দিকে তাকালো, হিমালয় হ্যান্ডশেক করতে করতে বলল,
—মায়ার পছন্দ বরাবরের মতোই পারফেক্ট, ইউ আর রিয়েলি গুড লুকিং সাহিত্য, নাইস টু মিট ইউ,
সাহিত্য অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, ধ্রুব কিছু বলতে গেলেই হিমালয় বলল,
—আমি খুব টায়ার্ড ধ্রুব সন্ধ্যায় অর্নার আশ্রমে যেতে হবে নয়তো ও আমাকে কাচা খেয়ে ফেলবে,আমি একটু রেস্ট নিতে চাই।মায়া তুমি কি ঢাকায় আছো নাকি তোমার প্লান আছে অন্য কোনো?
মায়া নিস্তব্ধ হয়ে গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে হিমালয়ের দিকে হিমালয় কিছুক্ষণ তাকিয়ে চোখ নামিয়ে মনে মনে বলল,আজও আমি তোমাকে দেখলে খেই হারিয়ে ফেলি!এত্ত বেহায়া আমি!
হিমালয় মায়ার চোখের সামনে তুড়ি মেরে বলল,
—কি ভাবছো এতো!
—মহারাজ..
—হিমালয়, আমার নাম হিমালয় আহমেদ প্লিজ কল মি বাই মাই নেম,
মায়া আর কিচ্ছু বলতে পারলো না ওর গলার কাছে কথা আটকে গেলো, হিমালয় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বলল,
—কিছু বলবে?
মায়া মাথা নিচু করেই রইলো চোখ তুলে ধ্রুবের দিকে তাকাতেই ধ্রুব ইশারায় সাহস দিল, তারপর সাহিত্য কে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো,মায়া এবার হিমালয়ের দিকে তাকালো হিমালয়ের খুব কাছে গিয়ে বলল,
—আপনি নাকি আজকাল ভবঘুরে হয়ে গেছেন?
—সেটা আবার কি? এসব কথা তোমাকে কে বলে?আমি একটু ব্রেকে আছি হ্যা পিএইচডি করতে একটু দেরি হয়ে গেছে কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য মাস ছয় একটু পিছিয়ে গেছিলাম বাট ৩ মাস হলো কম্পলিট করে দেশে এসেছি আপাতত ব্রেকে আছি রুলস এন্ড রেগুলেশনের জীবন আর কাটাতে ইচ্ছে করে না এই আরকি….
মায়া কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল,
—আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি…
—কিসের জন্যে!
—আপনি অনেক পালটে গেছেন অনেক বেশি,
হিমালয় সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসতে বসতে বলল,
—তাই নাকি কই আমার তো মনে হচ্ছে না?আমি তো ঠিকই আছি,তোমার একটু স্বাস্থ্য ভালো হয়েছে মায়া,তোমাকে বেশ আবেদনময়ী লাগছে আবেদনময়ী এর ইংরেজি জানো তো?
—আপনি ইচ্ছে করে আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন?!
—কিসের কষ্ট!তোমার কিসের কষ্ট! তুমি খুব স্বেচ্ছাচারী মায়া স্বেচ্ছাচারীদের কষ্ট থাকে না তবে হ্যা আমি শুনেছি নানান কেচ্ছা থাকে এদের….
মায়া কিছুক্ষণ হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর অবাক হওয়ার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে,হিমালয় উঠে এসে মায়ার সাথে ঘেষে দাড়ালো,মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
—তুমি বরাবরের সাহসী আমি জানি, তবে তোমার ভয় করছে না একা মেয়ে একটা ছেলের ফ্লাটে চলে এলে!?এত দুঃসাহস পাচ্ছ কোথায়? নাকি অভ্যাস হয়ে গেছে?
মায়ার মাথার মধ্যে চিনচিন করে উঠলো ওর চোখ ছলছল করে উঠলো ও ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না গিলে কঠিন চোখে হিমালয়ের দিকে তাকালো,
—একজন মানুষের এতটাও অধঃপতন হয়!
হিমালয় ক্রুদ্ধ একটা হাসি দিয়ে মায়ার কাছে এগিয়ে এসে বলল,
—অধঃপতন দেখতে চাও…?
মায়া কেদে ফেললো আর এক মুহুর্ত সেখানে দাড়ালো না দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো, হিমালয় মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে পড়লো,ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে অর্নাকে একটা টেক্সট পাঠিয়ে দিলো “আমি সন্ধ্যায় আসছি না, তুমি ম্যানেজ করে নিও”। কিছুক্ষণ বসে থেকে হিমালয় পাশে থাকা চিনা মাটির এস্ট্রে টা ছুড়ে মারলো কাচের দরজায়।তারপর ভাবতে লাগলো কতগুলো কঠিন কথা ও মায়াকে বলেছে!মায়া কি খুব কাদছে?মেয়ে টা কঠিন কথা একদম সহ্য করতে পারে না একদম না, হিমালয় দুহাতে নিজের চুল টেনে, শব্দ করে বলে উঠলো
—আজ এতদিন পর তুমি কেন ফিরে এসেছ মায়া? কেন?
চলবে….
সামিয়া খান মায়া