#হঠাৎ_হাওয়া,১৬,১৭
(১৬)
গতরাত থেকে মায়া ফোন রিসিভ করছে না এদিকে হিমালয় হসপিটাল,পাসপোর্ট, ভিসা সবকিছু মিলিয়ে ভীষণ ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে,হিমালয় চেম্বারে বসে বেশ কয়েকবার মায়াকে ফোন করেও পেলো না,এমন সময় পুষ্প এসে নক করলো,ওর পিছুপিছু ধ্রুবও এলো, ধ্রুব এলো বলতে পুষ্পই ওকে জোর করে নিয়ে এসেছে
—কিরে ব্যাস্ত নাকি তুই
—আরেহ না আয়,মায়াকে কল দেই ও তো রিসিভই করে না,
বলে ধ্রুবের দিকে তাকাতেই ধ্রুব হিমালয় কে একটা মুখ ভেংচি দিল, হিমালয় উঠে একহাতে কুনুই দিয়ে ধ্রুবের গলা পেচিয়ে ধরে বলল,
—এমনিই মায়ার ঢং এর জ্বালায় আমি বাচি না এখন ওর সাথে মিশে তুইও ঢং শুরু করছস না?আমার সাথে এই কয়দিন কথা বলিস নাই ক্যান
—তুইও তো এক্কেরে মাথা মোটা, কি খাইয়ে তুই টপ রেজাল্ট করতি আমি বুঝলাম না আমি যে তোর উপর রাগ করছি এইডাও তো বুঝস না আমারই আসা লাগলো তোর কাছে,আর তুই যে মায়ারে ঢঙ্গী কইছস এইডাও আমি ওরে বলব
—মহারানী ফোন রিসিভ করলে তো বলবি
—সে তো তোর ফোন রিসিভ করে না,আমার সাথে তো একটু আগেও কথা হইছে,
পুষ্প পেপার ওয়েট দিয়ে খেলতে খেলতে বলল,
—আমার সাথেও তো সকালেই কথা হলো
হিমালয় অবাক হয়ে বলল
—মানে কি! আমার সাথে কাল রাত থেকে কথা হয় না!
পুষ্প এবার বলল,
—বিয়ে নিয়ে আবার ঝামেলা করছিস নাকি
—কই না তো! আমি তো বলেছি যাওয়ার আগে আকদ হবে আমি ফিরলে অনুষ্ঠান, ইভেন বাসায়ও তো সেভাবেই সব ঠিকঠাক
—তাহলে দেখ তোর সাথে দেখা করার বাহানা, মেয়েটা তোকে পাগলের মত ভালোবাসে, তোকে ছাড়া থাকার কথা ও ভাবতেই পারে না,
হিমালয় মিটমিটি হাসলো, ধ্রুব চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল,
—আমার তো ভয় করছে হিমালয় চলে গেলে ও কান্নাকাটি করে ভয়ংকর পরিস্থিতি না তৈরি করে, আর মায়াকে বিশ্বাস নেই দেখা গেলো ও আবার না তোর কাছে চলেই যায় দুদিন পর,দেখা গেলো একদিন খুব ঠান্ডায় দরজা খুলে তুই দেখলি বরফ পড়ছে আর মায়া কেপে কেপে বলছে,মহারাজ আমায় জড়িয়ে ধরুন তো আমি ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি!
তিনজনেই সশব্দে হেসে উঠলো, আবির আর নিরবও এসে যোগ দিলো,পুষ্প এবার গম্ভীর হয়ে বলল,
—শোন, মজা পরে হবে যে কথা আমি বলতে চাচ্ছি,তা হলো আমরা কিন্তু কথার সাথে খুবই অন্যায় করছি,
হিমালয় চেয়ারে বসতে বসতে বলল,
—কি রকম?
পুষ্প নিজের চেয়ারটা সামনে টেনে হিমালয়ের দিকে একটু ঝুকে বসে বলল,
—দেখ হিমালয় এটা তো তুইও জানিস যে কথার তোর প্রতি যে ফিলিংস সেটা কখনোই শুধু বন্ধুত্ব না, হ্যা এটা ঠিক যে তুই কখনো ওকে প্রশ্রয় দিস নি বা তোর তরফ থেকে সরাসরি সেটা না ই ছিল কিন্তু ইদানীং স্পেশালি মায়া তোর লাইফে আসার পর থেকে কিন্তু তুই টোটালি ওকে ইগনোর করছিস,
হিমালয় টেবিলের উপর ভর করে উঠে দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
—তোদের সবারই কি সেম ধারণা
কেউ কোনো কথা বলল না হিমালয় এবার বলল,
—ওকে দেন আমি ধরে নিচ্ছি মৌনতা সম্মতির লক্ষণ, তাহলে তোরা আমাকে বল আমি কি একাই কথা কে ইগ্নোর করছি না তোরা সবাই লাস্ট তোদের কার কবে কথার সাথে যোগাযোগ হয়েছে একটু মনে করে বলতো,
সবাই এবার খেই হারিয়ে ফেলল,যে অভিযোগ নিয়ে ওরা সবাই হিমালয়ের কাছে এসেছিলো সেম দোষে যে ওরাও দোষী হিমালয় ওদের তা বুঝিয়ে দিলো, হিমালয় এবার টেবিলের উপর ভর দিয়ে পুষ্পের দিকে ঝুকে শান্ত চোখে তাকালো,
—আচ্ছা চল বাদ দিলাম তাও এবার আসি কথা আর আমার বন্ধুত্ব বা বন্ধুত্বের বেশি কিছু সম্পর্কে এবং তার সাথে মায়া,কথা বরাবর খুব বুঝদার মেয়ে খুব গোছালো খুবই হেল্পফুল কোনো কথা ওকে বোঝাতে হয় না যথেষ্ট বুদ্ধিমতী কথাও কম বলে মোট কথা একটা বাড়ির বউ হিসেবে একজন স্ত্রী হিসেবে ও পার্ফেক্ট, বাট আমি কখনোই ওকে সেভাবে দেখি নি ও বরাবরই আমার খুব ভালো একজন বন্ধু ছিলো মায়া যদি আমার লাইফে নাও আসতো তাহলেও ওর সাথে আমার কিছু হবার কোনো সম্ভাবনা ছিল না যতই আমার বাড়ির লোক যাই বলুক শেষ পর্যন্ত হয় কিন্তু সেটাই যেটা আমি বলি,আমি নিজে খুব গোছানো একজন মানুষ, আমাকে গুছিয়ে দেবার কারো দরকার নেই আমার দরকার এমন কেউ যে আমাকে এলোমেলো করে দেবে যাকে আমি গুছিয়ে দেবো, যার জন্য আমারও পাগলামি করতে ইচ্ছে হবে যে কথায় কথায় কষ্ট পাবে যার রাগ হবে অভিমান হবে, ঠিক যেমন টা মায়া।কিন্তু কথা এসব কিছুর উর্ধ্বে।আর বেশ কিছুদিন আঙ্কেল অসুস্থ তাই কথা ছুটিতে ছিল আমাদের রেগুলার কথা হয়েছে হ্যা ইদানীং আমি খুব ব্যস্ত থাকি কারো সাথেই আমার কথা হয় না তোদের সাথেও না ইভেন দেখ মায়াও আমার উপর আপসেট।আর কথা নিজেই আমাকে ইগনোর করে আর আমি যাস্ট ওকে স্পেস দিচ্ছি যাতে আমাদের বন্ধুত্বটা ভালো থাকে।এম আই ক্লিয়ার মিস পুষ্প হায়দার?
পুষ্প ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেললো ও জানে এটাই হিমালয় যে সহজে কথা বলে না আর যে কথা বললে তার কথার উপর বলার কিছুই থাকে না।
সন্ধ্যায় মায়া ড্রয়িং রুমে সোফার উপর সটান হয়ে শুয়ে কোলের মধ্যে কুসন নিয়ে মোবাইলে হিমালয়ের সাথে ওর ছবিগুলো দেখে নিজেই বিড়বিড় করছিলো, এমন সময় কলিংবেল বাজলে মায়া খুব বিরক্ত হলো এখনই তো বাবার আসার কথা না কে এলো? মায়া বিরক্ত হয়ে ডাকলো
—ওসমান চাচা দেখো তো কে
ওসমান চাচা দরজা খুলতেই হিমালয় ইশারায় না করলো কে এসেছে জানাতে, ওসমান চাচাও একগাল হেসে দরজা বন্ধ করে ভেতরে চলে গেলেন
—কে এসেছে চাচা?
মায়া কোনো সাড়া পেলো না, নিজের ভ্রু কুচকে ব্যাপারটা পাত্তা না দিয়েই ও হিমালয়ের সাথে নিজের একটা ছবি ছবি দেখতে পেলো মিষ্টির বৌভাতের দিন তোলা যেখানে হিমালয় এক হাত মায়ার পিঠে অন্য হাত পকেটে ঢুকিয়ে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে আর মায়া এক হাতে হিমালয়ের ব্লেজারের কলার চেপে ধরে হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে,হিমালয় সোফার পেছনে দাঁড়িয়ে মায়ার দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে,মায়া কপাল কুচকে ছবিটা জুম করে বলতে থাকলো
—কিই ক্যামেরা ম্যানের কি রূপ জ্বালাইছে?এই যে,আমি এত সুন্দরী একটা মেয়ে যে লজ্জার মাথা খেয়ে আপনার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকায় আছি সেইটা খেয়াল করছেন!আহারে! কি পোজ নিছে মনে হয় এইটারে সিভিতে দিয়ে উনি মেয়ের বাড়ি পাঠাবে হেহ! একটুও ভাল্লাগতেছে না আরে ক্যাবলা লাগতেছে ক্যাবলা,ফালতু লোক একটা,
বলে মায়া নিজেই মুখ ভেংচি দিয়ে মুখ ফেরাতেই ভূত দেখার মত চমকে উঠলো! হিমালয় এক ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করলো
—কাকে ফালতু বলছো মায়া?
মায়া খেয়াল করলো সাদা শার্ট কুনুই পর্যন্ত ফোল্ড করে এক হাতে ভাজ করা এপ্রোনটা নিয়ে পাশের দেয়ালে হ্যালান দিয়ে হিমালয়ই দাঁড়িয়ে আছে!
মায়া ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে ভাবলো এটাও নিশ্চয়ই কল্পনা ও কদিনে এরকম হাজার বার হিমালয় ওর কল্পনায় এসেছে আর হাজার বার মায়ার মন খারাপ করিয়ে চলে গেছে, মায়া নির্বিকার ভাবে সোফা থেকে উঠে নিজের ঘরের দিকে যেতে লাগলো হিমালয় অবাক হয়ে গেলো, মায়াকে কত ক্লান্ত লাগছে!
—মায়া?
মায়া এবার চমকে পেছন ফিরে তাকালো!বিস্মিত হয়ে বলল,
—আপনি কি সত্যি এসেছেন মহারাজ!
হিমালয় চরম বিস্ময় নিয়ে বলল,
—মিথ্যে করে আবার আসা যায় নাকি?!
মায়া দৌড়ে হিমালয়ের বুকের উপর আছড়ে পড়লো হিমালয় টাল সামলে দাড়ালো! মায়া হাউমাউ করে কেদে ফেললো,হিমালয় এক হাত মায়ার মাথায় রাখলো,ও বিস্ময়ের চরম সীমা কাটিয়ে উঠতে পারছিলো না এই মেয়েটা ওকে কতখানি ভালোবাসে! ফোন রিসিভ না করার জন্য যতখানি রাগ অভিমান, সারাদিনের যত ক্লান্তি নিয়ে হিমালয় এসেছিলো সব হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে লাগলো!হিমালয়ের নিজের বুকের মধ্যেই চিনিচিনি করে উঠলো এই মেয়েটাকে ছেড়ে ও কি করে থাকবে! ও তো নিজেই পাগল হয়ে যাবে!মায়া বরফের মত ঠান্ডা হাতে হিমালয়ের গাল স্পর্শ করে বলল,
—আমার একটুও ভালোলাগে না আপনাকে না দেখলে, সারাদিন মনে হয় কি যেন নেই কিচ্ছু নেই! আমি একা একাই আপনার ওপর অভিমান করে বসে থাকি আমার কি অসুখ হলো বলুনতো!আমি কি এই অসুখে মরেই যাবো!
হিমালয় মায়ার এক হাত মায়ার ঠোটের উপর চেপে হাতের অপর পৃষ্ঠে একটা চুমু খেয়ে বললো
—এত সহজেই তুমি মরে যাবে মায়া?আমার ট্রিটমেন্ট নেবে না?
মায়া অসহায়ের মত তাকিয়ে রইলো…..শান্ত কন্ঠে বলল,
—একবার চোখের আড়াল হলেই আপনার আর খোজ থাকে না আপনি ব্যস্ত মহা ব্যস্ত হয়ে পড়েন আমার ভালোলাগে না একটুও না, মহারাজ আপনি চাকরিটা ছেড়ে দিন তো, আপনার কোনো ডিগ্রী ফিগ্রী আনতে হবে না
হিমালয় অবাক হয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো,
—তোমার কি হয়েছে মায়া?এরকম করছ কেন! তোমার শরীর কি খারাপ কই এসো তো দেখি,
মায়া হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
—কোনো শরীর খারাপ নেই আমার, আমার শুধু মনে হয় আপনাকে আমি পাব না, আপনার খুব কাছে এসে আমি আপনাকে ছুতে পারব না, আমার গলা শুকিয়ে আসে আপনি আমার না হলে আমি কি করব!
মায়া খুব জোড়ে হিমালয় কে জড়িয়ে ধরে বলে,
—আমার মনে হয় এত ছোট জীবন এত কম সময় আমি আপনাকে কাছে পাই! যদি আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলি!আপনি কিন্তু আমার মহারাজ আপনি শুধুই আমার,
হিমালয় মায়ার বাহু ধরে ওকে শান্তু করে বলল,
—কি হয়েছে মায়া?
মায়া অসহায়ের মত হিমালয়ের বুকে ঢলে পড়লো খুব ক্লান্ত হয়ে পড়লোএক হাতে হিমালয়ের শার্টের বোতাম নাড়তে নাড়তে বলল,
—কিচ্ছু না খুব খিদে পেয়েছে, আমাকে খাইয়ে দিন তো,
হিমালয়ের কেমন মায়া হলো,মেয়েটা যে কেমন করে ওর সবটা তোলপাড় করে দেয় যত নিজেকে পরিপাটি করে হিমালয় ওর সামনে আসে ঠিক ততটাই ভেঙে গুড়িয়ে দেয় মেয়েটা ওকে ওর সবটা এলোমেলো করে দেয়।বাবাকে বলতে হবে বিয়ের ডেট টা এগোতে এই মেয়ে এভাবে অসুস্থ হয়ে যাবে।
চলবে…
সামিয়া খান মায়া
#হঠাৎ_হাওয়া (১৭)
হালকা আবছা আলো আঁধারের একটা খেলার মধ্যে মায়া ট্রেন থেকে নামলো, ওর শহরে এই শহরে ওর সবচেয়ে কাছের মানুষ সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা একসময় থাকতো, আচ্ছা হিমালয় কি দেশে আসে?কথা আপু সাথে থাকে?মায়া আকাশ পাতাল চিন্তা মাথা ঝেড়ে ফেলে দিতে চাইলো এজন্যই এই শহরটা ওর ভালো লাগে না, খুব বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়া স্টেশনে দাড়িয়ে রইলো তবে বেশিক্ষণ না একটা পরিচিত অবয়ব দেখতে পেলো জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ওর দিকে হেটে আসছে, মায়া নিজ মনেই একটু হাসলো, ছেলেটা পাগল নাকি? এত ভোরে ওর ঘুম ভাঙলো কি করে?
—দে তোর পা টা দে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করি এই শহরে তুই তোর পায়ের ধুলো দিলি এই শহর ধন্য হয়ে গেলো
মায়া হাসলো,
—তুই তোর পা এগিয়ে দে, এত সকালে তোর ঘুম ভাঙলো,
সাহিত্য নির্বিকার ভাবে উদাস গলায় বলল,
—আমি রাতে বাসায় যাই নাই।
মায়া এবার অবাক হলো ভীষণ অবাক, তবে কিছু বলল না,
—বাবাই এর কাছে এখন কে আছে?
—তোর ফুপি
—আমার ফুপি তোর কি হয় সাহিত্য?
—এ চুপ কর তো, তোর লেকচার আমার শুনতে ইচ্ছা করে না।
—আচ্ছা এই চুপ করলাম, আর লেকচার দিব না।
—তোর ব্যাগ কই
মায়া হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝালো আনে নি,সাহিত্য চোখ ছোট করে বলল,
—কি? জাদু দেখাচ্ছিস? তুই প্রতিবন্ধীর মত হাত পা নাড়াইলেই ব্যাগ চলে আসবে?
মায়া শীতল চোখে তাকিয়ে থেকে বলল,
—আমি প্রতিবন্ধী?
—আমি বললেই কিছু হয়ে যায় না মায়া, আমার বেশিরভাগ কথাই ইগনোর করবি,
মায়া চোখ নামিয়ে ফেলল, এই ছেলেটা এমনই যখন মায়া মজা করে কিছু বলে ও সিরিয়াস হয়ে যায় আর মায়া যখন সিরিয়াস হয় তখন এমন সব কথা বলে মায়ার সিরিয়াসনেস আর টেকে না সাহিত্য হাই তুলতে তুলতে বলল,
—চল ভাই এখন যাই আর ভাল্লাগতেছে না, ব্যাগ তো আনিস নাই তাই না?
মায়া আর কিছু বলল না হাটতে থাকলো, খুবই ক্লান্ত ভঙ্গিতে, সকাল বেলাটা মায়ার খুব প্রিয় ওর কাছে সকাল মানে মন খারাপের সময় একান্ত ব্যাক্তিগত কিছু সময়,আচ্ছা ওর কি মন ভালো করার সময় আছে এখন?কিসে ওর মন ভালো হয়?সাহিত্য একমনে মায়ার দিকে চেয়ে রইলো,সকাল ওর খুব একটা কপালে জোটে না তবে সকালটা সুন্দর তার চেয়েও সুন্দর এই মৃদু কুয়াশায় হেটে যাওয়া রমনীটা এই মেয়ের দিকে হাজার বছর এভাবেই তাকিয়ে থাকা যায় কোনো ক্লান্তি আসে না ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে সাহিত্য মায়ার সাথে হাটতে থাকলো,
—চা খাবি সাহিত্য?
—কি জন্যে?এই যে তোরে নিতে আসলাম তার জন্য পে করতিছিস?তুই কি ভাবছিস দশ টাকার চা খাওয়াইলে শোধবোধ হয়ে যাবে এত সহজ?
মায়া আর কিছু বলল না, এরে কিছু বইলেও লাভ নাই।সাহিত্য একটা টং এর সামনে এসে দাড়ালো মাত্রই দোকানদার দোকান খুলেছে,
—মামা দেরি হবে নাকি?
—পানি বসাইছি মামা
—আচ্ছা দুইটা চা দিয়েন একটা লাল চা আরেকটা দুধ চা, লাল চা তে কড়া লিকার দিবেন মিষ্টিও বেশি
—তুই খালি পেটে দুধ চা খাবি?এসিডিটি হবে না?
—আমার সাথে ডাক্তারি দেখাইতে আসবি না, রোগ শোক তাদের হয় যাদের ডাক্তারের সাথে পরিচয় থাকে আমার পরিচিত কোনো ডাক্তার নাই অতএব আমার ওইসব কিছু হয় না।
মায়া শকড হয়ে তাকিয়ে রইলো এই ছেলেটা দেখতে যতটা সুন্দর ওর কথাগুলো ততটা তিক্ত, ও এমন সহজ ভাবে কঠিন কথা বলে যে কলিজা এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যায় আর ও এমন নির্বিকার থাকে যেন কিছুই হয় নি।মায়ার চোখ ছলছল করে উঠলো চোখের পানি লুকাতে মায়া একটু তফাতে গিয়ে দাড়ালো, এই ছেলের সামনে কেদে ফেললেও ঝামেলা, এখনো চারপাশ পরিষ্কার হয় নি আলো পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়েনি মায়া দিগন্তে দৃষ্টি রেখে চোখ ভর্তি পানি বাচ্চাদের মত মুছে ফেলল,সাহিত্য মায়ার পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বলল,
—কাদিস না মায়া তুই কান্না করলে আমার সহ্য হয় না,
মায়ার চোখের পানি এবার আর বাধ মানলো না,সাহিত্য মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো বটলগ্রীন কালারের গোল জামার উপরে সাদা রঙের চাদর জড়ানো বেণির ফাকে বেরিয়ে আসা এলোমেলো চুলের একটা মেয়ের এই আবছা ভোরে কান্নার দৃশ্য খুবই অপ্রীতিকর অথচ অদ্ভুত সুন্দর।
—আই এম সরি মায়া,তুই কাদিস না প্লিজ আমি দুধ চা খাবো না দাড়া এক্ষুনি লাল চা বলে আসছি,সামান্য একটা চা খাওয়া নিয়ে তুই যদি এভাবে পরীক্ষায় ফেল করার মত কাদিস তাইলে তো সমস্যা তাই না?
মায়া কপট রাগ নিয়ে তাকালো সাহিত্য বুকের ডানপাশে হাত দিয়ে বলল,
—আহ! ভয় পাইছি হার্ট ধুকপুক করতেছে দেখ?
মায়া খুবই আহত ভঙ্গিতে বলল,
—হার্ট বাম পাশে থাকে
তারপর দুজনেই একসাথে হেসে ফেললো।
প্রাইভেট হসপিটালের একটা কেবিনে আপাতত মায়ার বাবা আছেন ডাক্তার বলেছেন হার্টে রিং বসাতে হবে, তবে যে ডাক্তার অপারেশন করবেন তিনি একটা সেমিনারের জন্য জাপানে আছেন তাই ডাক্তার ফিরলে দুদিন পরেই অপারেশন টা হবে, মায়া ওর বাবার কেবিনে গিয়ে বাবার পাশে বেশ কিছুক্ষণ বসে রইলো ওর বাবার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবলো ওর জন্যেই হয়তো বাবার এত চিন্তা খুব কষ্ট দিয়ে ফেলে ও বাবাকে, খুব বেশি।মায়ার বাবা ঘুম ভেঙে মেয়েকে দেখে শুকনো করে হাসলো,মায়ার বুকের ভেতর গিয়ে হাসিটা বিধলো
—আমি তোমার বুকের ওপর একটু মাথা রাখব বাবা?
—তোর কি মনে হয় তোর বাবা খুব দুর্বল নারে মা?
—উহুহ আমার কাছে আমার বাবা সবচেয়ে শক্তিশালী,
—আমি যতই দুর্বল হই তোকে ধারণ করার ক্ষমতা আমার আছে, আয় তো মা আমার কাছে আয়,
মায়া আলতো করে ওর বাবার হাতের উপর মাথা রাখলো মায়ার বাবা অনুভব করলো তার মেয়েটা কাদছে
—মায়া
—হু
—কষ্ট হচ্ছে মা?
—উহুহ,তোমার কষ্ট হচ্ছে বাবা?
—আমার মেয়েটাকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে।মা?
—হু?
—তুমি তোমার কষ্ট আমাকে বলো না কেন?
মায়া চুপ করে রইলো,
—পৃথিবী এমন কেন বাবা, খুব আকাঙ্খার জিনিসগুলো এত কষ্ট দেয় কেন বাবা?আমি কেন তোমায় এত কষ্ট দেই?
মায়ার বাবা চুপ করে রইলেন তার মেয়েটা আসলে বড় হয় নি এখনো এলোমেলো কথাই বলে।
মায়া ফুপির হাতে হাত রেখে বলল,
—থ্যাংক ইউ ফুপি তুমি বাবার খুব যত্ন করেছো আমি তোমার প্রতি খুব গ্রেটফুল,
মায়ার ফুপি মায়াকে দেখে মুখ ঝামটা মেরে বলল,
—এসেছিস তাহলে?তা কতদিন থাকবি ব্যাগ রেডি রাখিস পালাইতে সুবিধা হবে, তোর তো লুকোচুরি খেলা খুব প্রিয়।আর তোর বাবা আমার ভাই হয় কথাটা ভুলিস না তোর গ্রেটফুল থাকার জন্য আমি কিছু করি নি।
মায়া মাথা নিচু করে বসে রইলো ওর কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না সাহিত্য কঠিন মুখ করে বলল,
—কি করবে মা, বলো যে হারে ছ্যাচড়া চোর ডাকাত বেরে গেছে ওর বাধ্য হয়ে লুকিয়ে থাকতে হয়, বলাতো যায় না কে কখন কি প্লান বানায়।তুমি কি জন্য মামাকে দেখছো তাও তো বলতে পারি না।
—সাহিত্য! আজকাল খুব মুখে মুখে তর্ক করো তুমি।ভুলে যাচ্ছ আমি তোমার মা।
—ইশ যদি ভুলতে পারতাম!ভাইয়া কি সুন্দর ভুলতে পারলো আমি যে কেন পারি না!
মায়ার ফুপি চোখ গরম করে বলল,
—তনয়টার মাথাটাতো তো ওই বেয়াদব মেয়ে ছেলেটার পাল্লায় পড়ে এক্কেবারে গেছে
—ভাবির সম্পর্কে বাজে কথা বলো না মা।এই মায়া তুই কি চলে যাবি?
—নারে অপারেশন টা যতদিন না হয় থাকি, বাবাইকে দেখে খুব মায়া হচ্ছে
—তুই তো ড্রেস ফ্রেস কিছু আনিস নাই এই এক কাপড়েই থাকবি নাকি? সন্ন্যাসী হবি?এই কাপড়েই খাবি, ঘুমাবি?গোসল করে একাই শুকাবি?এই প্লান
মায়া ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—কিনে নেব দু একটা।
—তাহলে বসে আছিস কেন চল।মামা তো এখন ঘুমুচ্ছে, আমি অনেক ব্যস্ত সারাদিন তোর পেছনে ঘুরতে পারব না।
মায়ার ফুপি রাগ করে বললেন,
—দিন তো শেষ ই সাহিত্য তুই তো সারাদিনই এখানে।
—অনেক শেষ মানেই সমাপ্ত না মা, আফসোস তুমি এসব বোঝো না। তোর কি চেয়ারের সাথে প্রেম হয়ে গেছে এইখানেই থাকবি? তাইলে থাক আমি গেলাম।
সাহিত্য কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে এসে মায়ার হাত ধরে টেনে তুলে নিয়ে বিড়বিড় করে বলতে থাকলো
—কিছুই বুঝিস না তুই মায়া কিচ্ছু না।
চলবে….
সামিয়া খান মায়া