#হঠাৎ_হাওয়া,১২,১৩
(১২)
—আবির ভাই আমি তোর বাড়ির সামনে গেট টা কি খুলবি?
—আপনি কে ভাই?!
—শ্বশুরের বাচ্চা শালা আমি হিমালয় আমার নম্বর সেভ নাই তোর কাছে?
—কোন হিমালয়?
—ভাই প্লিজ আমার সাথে মায়া আছে আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে
—ওয়েট।
আবির বাইরে এসে মায়াকে নিয়ে ভেতরে ঢুকতে গেলেই হিমালয় বললো
—তুই কি আমায় চিনতে পারছিস না!
আবির মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
—তুমি জানো মায়া এই যে আমাদের প্রায় ৮/৯ বছরের সম্পর্ক এর মধ্যে এই ছেলে ৮/৯ বার আমার বাসায় এসেছে কি না সন্দেহ, আজও নিশ্চয়ই তুমি বলেছ বলেই এসেছে।
মায়া হাসলো,হিমালয় মিনমিন করে বলল,
—ধুর তাইলে থাক আমি গেলাম
আবির মায়ার হাত খপ করে ধরে বললো
—ওকে রেখে যেতে পারলে যাবি, আলবিদা কাল হসপিটালে দেখা হবে।
আবির আর মায়া ভেতরে ঢুকে গেলো, হিমালয় কতক্ষন অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে থাকতেই দেখল মিষ্টি আসছে,মিষ্টি হালকা হেসে বলল
—হিমালয় ভাইয়া চলুন।
—মিষ্টি…
—হ্যা বলুন?
—তোমার কপাল কিসে কাটলো?!
মিষ্টি হেসে বলল,
—হঠাৎ হাওয়ায়।
হিমালয় কিছুক্ষণ মিষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
—তুমি কিছু লাগাও নি কেন!
—চলুন ভাইয়া আব্বু আম্মু আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ভেতরে।
—আবির আর তোমার মধ্যে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?
—আমার তার সাথেই কোনো সমস্যা হয় হিমালয় ভাইয়া যার সাথে সখ্যতা হয়।আপনার বন্ধুর সাথে আমার কোনো সখ্যতা নেই তাই সমস্যা হচ্ছে না। আপনার বন্ধু অতি উচ্চ মানের সাধু ব্যাক্তি সবার বাহবা নেওয়ার জন্য সে আমাকে বিয়ে করেছে ঠিকই কিন্তু আমায় সহ্য করতে পারেন না আমাকে দেখলেই তার আকাশ পাতাল উল্টে যায় সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট শেষ করে রাত পার করে,আচ্ছা ভাইয়া আমি কি আপনার বন্ধুর পা ধরে বসে ছিলাম বিয়ে করব বলে বলুন?
হিমালয় মাথা নিচু করে ফেলল,মিষ্টি হেসে বললো
—আপনি ভাববেন না আমি জানি না যে সে জীবনে ভালোবেসে খুব বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে, সে তা নিজেই স্বীকার করেছে, তার জীবনের চরম বিপর্যয়ের কথা সে আমায় বলেছে,আমি বলছি না সে খারাপ মানুষ, তবে তাকে আমি বুঝে উঠি না সে মুহুর্তেই তরল হয়ে যায় আবার তক্ষুনি কঠিন থেকে কঠিনতম হয়!তার সুন্দর একটা পরিবার আছে আমার শ্বশুর আমায় এত আহ্লাদ করে যা আমার বাবাও করে না, আমার শ্বাশুড়ি পারলে তিন বেলা মুখে খাবার তুলে আমায় খাইয়ে দেয় কেন জানেন? কারণ তাদের ছেলে তাদের সাথে ঠিকমত কথাও বলে না তাদেরও ইচ্ছে করে সন্তান কে স্নেহ করতে।এনিওয়ে ভাইয়া চলুন ভেতরে যাই।
হিমালয়ের মনটা একটু খারাপই হয়ে গেলো এখানে না আসলে সে জানতই না আবিরের বাসায় এরকম পরিস্থিতি।
হিমালয় উত্তেজিত হয়ে মায়াকে ফোন করে বলল,
—এই মায়া তুমি কি জানো আবির মিষ্টির বৌভাতের জন্য রাজি হয়ে গেছে?
মায়া হাই তুলতে তুলতে বললো মিনিট দশকের মধ্যে ঘর থেকে বের হয়ে দেখবেন আমি আপনার ড্রয়িং রুমে আপনার আব্বু আম্মুকে মিষ্টির বৌভাতের জন্য ইনভাইট করতে এসেছি।
মায়া ফোন কেটে দিলো, হিমালয় হা হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো বিড়বিড় করে বলল,
—এই মেয়ে বলে টা কি! মা যদি মায়ার কথা জানে,সিরিয়ালের ন্যাকা মা দের মত বাসায় কি সিন ক্রিয়েট করবে আল্লাহই জানে!
হিমালয় ড্রয়িং রুমে এসে দেখে মায়া হিমালয়ের মা রেহেনা আহমেদ কে কদমবুসি করছে পাশেই আবির দাঁড়িয়ে, হিমালয় নিচে নামার সাহস পাচ্ছে না সিড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে, দেখলো মায়া রেহেনা আহমেদ কে বলছে
—আন্টি জানেন হিমালয় আপনাকে কত ভালোবাসে? আমি ওকে আড়াইবার প্রপোজ করেছি আর ও কি না বলে ওর মা ই ওর কাছে সব ওর মা যদি আমাকে পছন্দ না করে তাহলে যতই ওর আমাকে একটু একটু পছন্দ হোক ও ওর ভালোলাগা বিসর্জন দিয়ে দেবে ওর মায়ের পছন্দমত মেয়েকেই ও বিয়ে করবে, আন্টি বলুন আমি কি অসুন্দর আন্টি আপনিই বলুন?
আবির পানি খেতে খেতে বিষম খেলো, হিমালয় হা করে তাকিয়ে আছে,হিমালয়ের মায়ের চোখ ছলছল করছে তিনি অতি আবেগে আপ্লুত হয়ে বললেন,
—হিমালয় এই কথা বলেছে?
—আন্টি আপনার কি আমাকে দেখে মিথ্যেবাদী মনে হচ্ছে?কোনো মেয়ে কি একটা ছেলের কাছে রিজেক্ট হওয়ার কথা কাউকে বলতে পারে?এর চেয়ে অপমানের কিছু আছে? আন্টি আমার মত একটা ইনোসেন্ট মেয়ে কি মিথ্যে বলতে পারে?বলুন?আপনি আপনার ছেলে কে চেনেন না?
—না না মা আমি তো জানি আমার হিমালয় আমাকে কত ভালোবাসে,
—আন্টি আমি যে আড়াইবার আপনার ছেলেকে প্রপোজ করলাম তা কি বৃথা যাবে আন্টি?
হিমালয়ের বাবা এতক্ষণ অবাকের চরম মাত্রা থেকে বের হয়ে বললেন,
—মা সবই তো বুঝলাম কিন্তু আড়াইবার কি করে প্রপোজ করলে?
—আরে আঙ্কেল দুইবার আমি ডাইরেক্ট প্রপোজ করলাম আর প্রথমবার আমার বান্ধবীকে দিয়ে করালাম হলো না?আড়াইবার?
হিমালয়ের বাবা মাথা ঝাকিয়ে বলল,
—হ্যা তাই তো তাই তো।
—আন্টি,আমার আম্মু নেই আন্টি ইচ্ছে হলেই আমি কাউকে মা বলে ডাকতে পারি না এইটা ওইটা রান্না করে খাওয়ার বায়না করতে পারি না, আমি হিমালয়ের মত ভাগ্যবান নই আন্টি, বলুন আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়নি?
হিমালয়ের মা কেদেই ফেললো তিনি পরম মমতায় মায়াকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন
—খুব পছন্দ হয়েছে মা। তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
—আর আঙ্কেল আপনার?
হিমালয়ের বাবা আমতা আমতা করে বললো,
—আমারো পছন্দ হয়েছে আর যাইহোক তুমি সরাসরি আমাদের প্রপোজ করেছো আমরা দুজন যদি এখন তোমাকে রিজেক্ট করি তুমি তো সাড়ে চতুর্থ বারের মত রিজেক্ট হবে সেটা কি ভালো দেখায়!?
—ওয়াও আঙ্কেল আপনি তো খুব ব্রিলিয়ান্ট আমার এরকম ব্রিলিয়ান্ট শ্বশুর এমন সুন্দর শাশুড়ি হবে ভেবেই আনন্দ হচ্ছে
—আমারো খুব আনন্দ হচ্ছে মা আমার বৌমা এত ইনোসেন্ট ভেবেই আনন্দ হচ্ছে
মায়া মুখ টিপে হাসলো,হিমালয় উলটো পথে উপরে চলে গেলো এখানে থাকা মোটেই সুবিধের না।
—আঙ্কেল এবার কাজের কথায় আসি
—ও এতক্ষণেও তুমি তাহলে কাজের কথা বলোনি মা?
—না না সেটা তো আবির ভাইয়া বলবে,আন্টি হিমালয় মনে হয় বাসায় নেই তাই না?
হিমালয়ের মা চোখ মুছতে মুছতে বলল,
—আছে তো মা ও, উপরের ঘরে।
—ওহ থাক আমি আপনার পারমিশন ছাড়া ওর সাথে আর কথা বলব না ও আবার আমায় রাগ করবে
—সেকি! তুমি এবাড়ির হবু বউ তুমি ওর সাথে দেখা করবে না কি করে হয়!
হিমালয়ের মা তার অনামিকায় থাকা একটা আংটি খুলে মায়ার মধ্যমায় পড়িয়ে বলল,
—পাশের আঙুলে আমার ছেলে পড়িয়ে দেবে তুমি উপরে উঠে ডান দিকে গেলেই হিমালয়ের ঘর পেয়ে যাবে যাও মা।আমি চা নাস্তা নিয়ে আসি।
মায়ার কপালে একটা চুমু খেয়ে, রেহেনা আহমেদ রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন।মায়া উপর তলায় উঠে গেলো।
এতক্ষনে হিমালয়ের বাবা সোফায় বসতে বসতে বললেন
—কি হলো বলোতো আবির?এটা কি মেয়ে নাকি তেজস্বী?
—তেজস্বী ই বলতে পারেন আঙ্কেল আপনার বরফের মত কঠিন ছেলে এর প্রেমে গলে পুরো বাষ্প হয়ে উড়ছে, রাতদুপুরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।
—কয়েকদিন যাবত আমিও হিমালয়ের পরিবর্তন লক্ষ্য করছি!সিলেট থেকে ফেরার পরই, তা একে তোমরা পেলে কই?
—ট্রেনে বিয়ে থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলো
—হোয়াট?!
—আঙ্কেল,এই মেয়ে একটা হীরে একে ধারণ করার ক্ষমতা সবার নেই হিমালয়ের আছে, আপনারা যে কি পেতে চলেছেন আপনারা নিজেও জানেন না।
—মেয়েটা বুদ্ধিমতী
—উহুহ আঙ্কেল ওর সাথে মিশে দেখবেন মেয়েটা অলরাউন্ডার আর এটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না।আঙ্কেল আমি এখানে কেন এসেছি জানেন?আমি বিয়ে করেছি বৌভাতের দাওয়াত দিতে।
—হোয়াট, সত্যি আবির!
—অবাক হচ্ছেন আঙ্কেল?ভাবছেন ড্রাগ এডিক্টেড সেই ছেলে টা সংসার করবে কি করে?
—আমি তোমার জন্য খুবই খুশি মাই সন।ইটস ফিল লাইক এ ম্যাজিক
—এন্ড মায়া ইজ দ্যা ম্যাজিশিয়ান হু হ্যাভ ডান দিস।ইওর ফ্যামিলি ইজ সো লাকি আঙ্কেল,হিমালয় চুজ দা রাইট লাইফ পার্টনার।
চলবে…
সামিয়া খান মায়া
#হঠাৎ_হাওয়া (১৩)
মায়াকে নিজের ঘরে দেখে হিমালয় সরু চোখে তাকালো,
—তুমি এখানে বৌভাতের দাওয়াত দিতে এসেছ?
মায়া হিমালয়ের সাথে ঘেষে বলল,
—নাহ নিজে বউ হয়ে আসার ফাদ পাততে এসেছি, বৌফাদ।
হিমালয় একটু দূরে বসতে বসতে বলল,
—এত ফাদ পাদ করে কোনো লাভ হবে না,আমি পিএইচডি করতে কানাডা তে যাচ্ছি, সো এত শীঘ্রই তোমার বউ হওয়া হচ্ছে না সবে ইউনিভার্সিটি গেছো বই পড়ো কাজে দেবে,
মায়া থমকে গেলো
—কি বললেন?
—শুনতেই তো পেলে,
মায়া হিমালয়ের কোলের উপর গিয়ে বসে দুহাতে হিমালয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
—ভালোবাসি আমি আপনাকে, আপনাকে ছাড়া আমি একটুও থাকতে পারব না অল্প একটুও না, আর আপনি বলছেন আপনি বিদেশ যাচ্ছেন?
হিমালয় অবাক হয়ে গেলো এই মেয়েতো পুরো মাথা খারাপ!হিমালয় নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করল,
—বিদেশ না কানাডা
মায়া মুখ ছোট করে ফেলল,হিমালয় অনুভব করল মায়ার হাত ঠান্ডা হয়ে এসেছে খুব মায়া হলো ওকে দেখে এর সাথে কঠিন গলায় কথা বলা যায় না একে শুধু ভালোইবাসতে হয় একটু নরম কন্ঠে বলল,
—শোনো মায়া তোমার নিজেরও এখনও অতটা ম্যাচুরিটি আসে নি আর আমার তো খুব বেশিদিনের কোর্স নয় মাত্র ১ বছর, ফিরে এসেই আমরা বিয়ে করব?ততদিন আমরাও নিজেদের সম্পর্ক কে সময় দিতে পারব।
মায়া উঠে দাড়ালো, ওর কিছুক্ষণ সময় লাগলো নিজেকে সামলাতে অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকালো,তারপর হাওয়ার বেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো, হিমালয় ওর যাওয়ার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইলো মেয়েটা আসলেই পাগল!এ তো ভালোবাসা ছাড়া কিছুই বোঝে না।ঠোঁট বাকিয়ে হেসে ভাবলো রাতে ফোন করে মান ভাঙাবে।
রাতে হিমালয় মায়াকে অনেক বার ফোন করলেও রিসিভ করলো না,বাধ্য হয়ে ল্যান্ডলাইনে কল করলে মায়ার বাবা ফোন রিসিভ করে বলল,
—মায়া দরজা আটকে সেই যে রুমে ঢুকে ডোন্ট ডিস্টার্বের সাইন ঝুলিয়েছে আর খোলার নাম নেই, আমি নক করার সাহস পাচ্ছি না।
হিমালয় ছোট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—আমি কি একবার বাসায় আসতে পারি আঙ্কেল?
মায়ার বাবা হেসে বললেন,
—সে তো রোজই আসো জিজ্ঞেস করছ কেন!
হিমালয় একটু লজ্জাই পেয়ে গেলো।
মায়ার রুমের সামনে গিয়ে দেখলো একটা প্লাকার্ডে “ডোন্ট ডিস্টার্ব আই এম এংরি নাউ এন্ড রিডিং অলসো হু উইল নক আই উইল ডেফিনিটলি পানিশ হিম/হার।থ্যাংক ইউ।”লিখে টানিয়ে রেখেছে। মোটামুটি একটা থ্রেট আর কি!
হিমালয়ও যথেষ্ট আতঙ্ক নিয়ে দরজায় নক করতেই দাড়াম করে দরজায় কিছু আছড়ে পড়ার আওয়াজ হলো, ভেতর থেকে চিৎকার করে শব্দ এলো,
—বাবাই তুমি বলে দাও সে যে দেশের মহারাজই হোক এক্ষুনি যাতে বিদেয় হয়।আমি পড়ালেখা করছি কোনো ডিস্টার্ব হবে না, অদ্ভুত! মানুষ অশিক্ষিত নাকি!লেখাপড়া করতে পারে না?দরজায় লেখা পড়তে পারে না! নাকি?!
মায়ার বাবা অসহায় ভঙ্গিতে তাকালো,হিমালয় বুঝলো এ যে সেই রাগ নয়, আবার হালকা করে নক করে বলল,
—ম্যাডাম আই এম রিয়েলি সরি ক্যান আই হ্যাভ পানিশমেন্ট প্লিজ?
—গেট লস্ট
মায়ার বাবা এবার বললেন
—আম্মু ও মা একটু দরজা খোলো আম্মু,তুমি তো কিছুই খাও নি সারাদিন
হিমালয় চকিত হয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
—কিচ্ছু খায় নি?
—তুমি তো চেনো না ওকে কিছু হলেই সেই রাগ খাওয়ার ওপর ঝাড়ে,
—আঙ্কেল এই দরজাটার কত দাম পড়েছিল?
—মানে!
—এটা আমি যদি ভেঙে ফেলি তাহলে কি আপনি খুব রাগ করবেন?
মায়ার বাবা হাসলো,
—এক্সট্রা চাবি দিলে হবে?ওর রুমের দরজায় আমি কোনো ছিটকিনি দেই নি,সব লক সিস্টেম।
হিমালয়ও হাসলো।মায়ার বাবা চাবি পকেটে নিয়েই ঘুরছিলেন হিমালয়ের হাতে দিয়ে চলে গেলেন সেখান থেকে।
হিমালয় দেখলো সারাঘর এলোমেলো জিনিসপত্র এদিকওদিক ছড়ানো ছিটানো, মায়া অন্যদিকে মুখ করে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে,হিমালয় আস্তে করে মায়ার কোমড় পেচিয়ে ওকে তুলে কোলের উপর বসিয়ে ঘাড়ের উপর থুতনি রেখে বলল,
—এরকম করলে আমি কি করে যাব?মায়া?তুমি কি ভাবো তোমার একারই কষ্ট হয়?আর কারো কষ্ট হয় না?হুম?
মায়া চুপ করে রইলো,
—খাও নি কেন?
—কাল মিষ্টির বৌভাত তো এজন্য পেট খালি রাখছি বেশি করে খাবো,
—আমিও পেট খালি রাখব?
—আপনার ইচ্ছা
—আঙ্কেলেরও পেট খালি
—তার ইচ্ছা
—এটা কি মায়া?মায়া কি এরকম কখনো বলে?
মায়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
—আপনি যান তো
—সত্যি?
মায়া এবার হিমালয়ের দিকে মুখ করে ওকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললো, শব্দ করে কাদতে কদতে বলল,
—আমি তো বলেছিলাম আপনাকে বলি নি? একবার আমি আপনাতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেলে পাগল হয়ে যাব, আপনি এখন আমার সাথে এমন করছেন কেন?হোয়াই?
হিমালয় মায়ার মাথায় হাত রেখে বলল,
—সরি
মায়া চেচিয়ে বলল,
—রাগ করি নি আমি কষ্ট পেয়েছি,রাগ করলে সরি বলতে হয়
হিমালয় হেসে ফেলল,
—ও আচ্ছা!আর কষ্ট পেলে কি করতে হয়?
মায়া চেচিয়ে চেচিয়ে বলল
—আদর করতে হয়, কষ্ট দিলে আদর দিতে হয়
হিমালয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো এই মেয়ে তো মানসম্মান কিছুই রাখবে না বাইরে যে ওর বাবা থাকতে পারে সে খেয়াল কি ওর আছে!?
হিমালয় ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বলল,
—আচ্ছা আচ্ছা,আর খিদে লাগলে?
মায়া ঝট করে উঠে দাড়ালো এদিক ওদিক তাকিয়ে হাতের কাছে কিচ্ছু পাচ্ছে না হিমালয় আতঙ্কিত গলায় বলল,
—মারবে নাকি মায়া!
—আপনি এক্ষুনি আমার বাসা থেকে বের হবেন কি? না?
—ডিনার করে যাবো তোমার আর আঙ্কেলের সাথে।
—ডিনার করে বিদেয় হবেন তো?
—হ্যা।
মায়া সবাইকে খাবার বেড়ে খাওয়ালো নিজেও খেল তবে হুলস্থূল কান্ড তরকারির ঝোল, ডাল ফেলে হিমালয় আর ওর বাবার পাঞ্জাবি মাখামাখি হয়ে একাকার দুজনেই হেসে খাবার পর্ব সারলেন। হাত ধোয়া হতে না হতেই মায়া বলল,
—এবার যান।
হিমালয় বলল,
—এগিয়ে দিবে না!
মায়া গটগট করে গেইট পর্যন্ত এসে বুকে হাত বেধে দাড়িয়ে রইলো,হিমালয় গাড়িতে ওঠার আগে মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
—বিয়েটা একবার হোক দেখি কত আদর তুমি নিতে পারো।
বলেই শা করে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো মায়া বেশ কিছুক্ষণ হিমালয় যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো ওর বুকের মধ্যে খালি খালি লাগছে কেন যে সবসময় হিমালয়ের সাথে থাকতে পারে না ও!
বাসায় গিয়ে সবার আগে হিমালয় যেটা করলো তা হলো ওর বাবা মাকে বলল,মায়ার সাথে বিয়ের কথা ওর বাবা মা তেমন কোনো আপত্তি করল না শুধু হিমালয়ের বাবা কে একটু চিন্তিত দেখালো,আর রেহেনা আহমেদ তো কেদেই ফেললেন খুশিতে মায়াকে তার খুব মনে ধরেছে,হিমালয় বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
—বাবা তোমার কি কোনো আপত্তি আছে?ইউ আর নট লুকিং হ্যাপি
—আই এম হ্যাপি মাই সন ভেরি হ্যাপি ফর ইউ।মায়া খুবই সুন্দর একটা মেয়ে, চঞ্চল আর মিষ্টি আর সবচেয়ে বড় কথা তুমি ওকে পছন্দ করছ আর যেই সেই পছন্দ না আমার আপত্তি থাকলেও তুমি মানবে না এরকম পছন্দ এম আই রাইট?
হিমালয় হাসলো,
—আই লাভ হার, ওকে ছাড়া আমার থাকা অসম্ভব এরকম টাইপের ভালোবাসা আমার দেখা সবচেয়ে চমৎকার একটা মেয়ে, মায়া।
—অবশ্যই সে যথেষ্ট গুণবতী, যে তোমার মনে দাগ কাটতে পেরেছে।
—বাবা আমি যদি কালই আবিরের অনুষ্ঠানে এইংগেজমেন্ট টা করি?
—তুমি তো মে বি কানাডা যাওয়ার আগে বিয়েটা ই করতে চাইছো সিদ্ধান্ত কি নেওয়া হয় নি এখনো?
হিমালয় হেসে ফেললো
—তুমি সব বুঝে যাও বাবা
—এক্সাক্টলি আমি তোর বাপ মাথায় রাখিস।
এর মধ্যে হিমালয় আর মায়ার সাথে যোগাযোগ করলো না,মায়ার খুব অভিমান হলো,বৌভাতে মায়া এলো মিষ্টি আর সাদা কালারের শেডের একটা গাউন পরে আর সাথে মায়ার আব্বুও সাদা রঙের ম্যাচিং ব্লেজার,মায়া অবাক হয়ে দেখলো সেম ব্লেজার হিমালয় পড়ে আছে!ও একবার হিমালয় আর একবার ওর বাবার দিকে তাকালো,তারপর মুখ ভেংচি দিয়ে গিয়ে মিষ্টির কাছে গিয়ে দাড়ালো।
চলবে…..
সামিয়া খান মায়া