পবিত্র_বন্ধন #শেষ_পর্ব

#পবিত্র_বন্ধন
#শেষ_পর্ব
#(কাজী সারা)

দরজা খুলে দেখি খ্যাত টা দাঁড়িয়ে আছে ১ দিনে চেহেরার ১২ টা বাজাই ফেলছে।খুব খারাপ লাগছে সত্যি আমি উনার জীবন টা নষ্ট করে দিলাম।। উনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম,,

—— কি ব্যাপার এত রাত হলো যে?? কোথায় ছিলেন আপনি?? মা কত চিন্তা করে আপনাকে নিয়ে জানেন না!

—— হুম মা ছাড়া আর কে বা আছে চিন্তা করার..

——-কি বললেন!!

—— না কিছুনা, কাজে ছিলাম একটু।।

—— আর কখনো এভাবে না বলে যাবেন না।। মায়ের ঘরে গিয়ে বসুন আমি টেবিলে ভাত দিয়ে দিচ্ছি।।

রাশেদ রুমে গিয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে গেল। খুব কষ্ট হচ্ছে কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারছেনা।

——কিরে রাশেদ তোর কি মন খারাপ, এভাবে মায়ের কোলে শুয়ে আছিস যে??

—– না মা কতদিন এভাবে কোলে মাথা রাখিনি আজ খুব ইচ্ছে করছে।।

——আমার কপাল ভালো মেঘলার মত একটা বউ মা পেয়েছি, মেয়ে টা কে এক নজর না দেখলে ভালো লাগে না। সারা ঘর মাথায় তুলে রাখে ভিষন হাসি খুশি মেয়েটা।।
………..
মা, যদি বলতে পারতাম ও আমাদের মাঝে আর বেশিদিন নেই। তোমার বউমা অন্য সুখের নীড়ে বাসা বাঁধবে। জানি তোমাদের কষ্ট হবে কিন্তু কাউকে জোর করে বেঁধে রাখা যায় না।।

– কিরে কি ভাবছিস এত।

– না মা কিছুনা।
.
.
আচ্ছা মেঘলা কি বুঝতে পারছেনা ও কতটা আমার মনের গহীনে ঢুকে গেছে। এ কয়দিনে মেয়েটা আমার মনের সব টুকু জায়গা দখল করে ফেলছে। আমি ওকে ছাড়া থাকবো কি করে!! একবার ও কি ভাবছেনা সেটা।ও চাইলে কি পারেনা আমার সাথে বাকি জীবন টা পার করতে।

ওকে কি অই ছেলেটা আমার চেয়ে বেশি সুখে রাখবে! এমন পরিস্থিতি, মনে হচ্ছে দেহ থেকে প্রাণ টা আলাদা করে দিচ্ছে। কাউকে ভালোবেসে বলতে না পারার কষ্ট টা খুব ভয়ংকর শুধু
যারা এ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যায় তারা বলতে পারবে।।

দুইজন মানুষ একসাথে একি রুমে থাকার পরেও কত দুরত্ব। মনে হচ্ছে চেয়ে কেউ কারো মনের ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছে না। খ্যাত টা আজও সোফায় শুবার জন্য,বালিশ নিয়ে চলে যাচ্ছে।।

—— দেখুন,, সোফায় শুইতে হবে না। খাটে শুয়ে পড়েন আমার অসুবিধা নেই। আমি আজকে সোফায় থাকি।

—— না না আমি একদম ঠিক আছি।

——- আমি খেয়াল করছি আপনার কষ্ট হয়। সোফায় থাকলে রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারেন না।।

—— যাওয়ার আগে এত মায়া বাড়িয়ে লাভ কি। আমি উকিলের সাথে কথা বলে আসছি। সব রেডি করে রাখবে আপনি যখন চাইবেন তখন ডিভোর্স পেপার নিয়ে আসব।

কথাটা শুনার পর চোখের কোণে জল জমেছে, আজ প্রথম বার লাগছে আমার জীবনের দামী জিনিস হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছি।।

——- আচ্ছা।

—– যদি কোন হ্লেপ লাগে আমাকে বলবেন। বিয়ের পর থেকে তো আপনার কোন ইচ্ছা পূরণ করতে পারলাম না।। যদি আপনার কোন কাজে লাগতে পারি।

এক ফোটা ঘুম ও আসছেনা, আমি সত্যি সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছি। মুগ্ধের সাথে দেখা করা জরুরি ওর সাথে কথা না বলা পর্যন্ত আমার কনফিউশান দূর হবে না।। মুগ্ধেরও বা কি দোষ ও তে ইচ্ছা করে কিছু করেনি, কাল দেখা করতে হবে।।

মুগ্ধ কে না বলে ক্যাম্পাসে চলে গেলাম দেখা ও হবে সারপ্রাইজ ও দেয়া হবে গিয়ে দেখি ও ফ্রেন্ড দের সাথে আড্ডা দিচ্ছে কাছে যেতে মনে হল যেন আমাকে নিয়ে কথা বলছে ফ্রেন্ডদের সাথে। আড়াল হয়ে গেলাম, অগোচরে ভালোবাসার মানুষের মুখে নিজের কথা শুনতে আলাদা ভালো লাগা কাজ করে..

—– কিরে দোস্ত তোর মেঘলার এখন কি খবর। অনেক দিন তার কথা শুনে মজা নিতে পারিনা।

—– আর বলিস না কোনমতে এক্সিডেন্ট এর নাটক টা প্লে করে বিয়ে করা থেকে বেঁচে গেছি।তার পর ভাবলাম বিয়ে হয়ে গেছে পিছু ছাড়বে তাতে হাফ ছেড়ে বাঁঁচবো। ওর সাথে সম্পর্কে থেকেও কোন মজা পেলাম না।

—— এখন কি সমস্যা আবার!!

——-এখন বলছে আমার জন্য নাকি জামাইর সাথে মিলন ঘটায়নি তাই ভাবলাম এ ২ বছরে তেমন কিছু করতে পারলাম না ওর বাবা পুলিশ তাই ভয় হত এবার যদি কিছু করতে পারি।
বিবাহিত হলে দায় টা কম থাকে ঝামেলা মুক্ত। ছ্যাকা দিতে পারতাম কিন্তু ইমেজ টা খারাপ করতে চাইনি, পরে যদি মেয়েরা আমার প্রেমে না পড়ে, টাইম পাস করার জন্য এত গফ কই খুঁজি পামু….

—— তুই ও পারিস, শিহাব এর কাছে শুনলাম ধরা খেতে গিয়ে বেঁচে গেচিস!!

—– হুম রে আমি বুঝতে পারিনি কখন কল রিসিভ হই গেছে, আমার আর সিনথেয়ার কথা সব শুনে ফেলছে পরে কোনমতে বুঝাই ফেলছি শিহাব এর কথা বলে।।

—— মেয়ে গুলা প্রেমে পড়লে আন্ধা হয়ে যায় বোকার মত সব বিশ্বাস করে।

—– মেয়ে মানে গাধা, না হয় একসাথে এত গুলার সাথে প্রেম করতে পারতাম।।

আড়াল থেকে মুগ্ধের মুখে এসব শুনে নিজের চোখ কান কে বিশ্বাস করতে পারছিনা, ঘৃনায় জমে যাচ্ছি। এত নিখুত নাটক কেমনে পারে। আর আমি ওর সব কথা বিশ্বাস করলাম!

চোখ মুছে বের হয়ে মুগ্ধকে থাপ্পড় লাগিয়ে বললাম,

—– বাহ! মুগ্ধ তুমি ত খুব ভালো অভিনেতা, এত নাটক না করে সত্যি টাই বলতে তাহলে তোমার মত লম্পট এর জন্য রাশেদ এর মত ছেলে কে এত দিন ঠকাতে হত না। তুমি ও শাস্তি পাবে অপেক্ষা কর।, আর আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া তুমি এত কাহিনি না করলে আমি রাশেদের মত স্বামী পেতাম না। তোমার কাছে সত্যি আমি মন থেকে কৃতজ্ঞ।।
—- আসলে মেঘলা……
—– প্লিজ নতুন নাটক শুরু করিও না। আমার ভুল তোমাকে চিনতে এত দেরি হয়ে গেলো।

বাসায় এসে নিজেকে অসহায় লাগছে কার জন্য এত কিছু করেছি আমি। সে তো কখনো আমাকে ভালোবাসেনি। মা ঠিক বলত, ফ্যাশন করা, বাহিরের চাকচিক্য দেখানো ছেলে গুলা কখনো স্বামী হিসেবে পারফেক্ট হয় না।। খ্যাত টা কে খুব মিস করছি, উনাকে কিভাবে বলব নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে গেলাম।

খ্যাত টা রুমে এসেছে, জিজ্ঞাস করছে সব কিছু ঠিক করে এসেছি কিনা। কোন কিছু না বলে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম এ বুকে কাঁদতে ও সস্তি লাগছে। যেখানে কোন অবিশ্বাসের ছোয়া নেই আছে শুধু পবিত্রতা।। বার বার জিজ্ঞাস করছে কি হইছে , মুগ্ধ আসলে খুব খারাপ ও আমাকে কখনো ভালোবাসেনি এতদিন যা করছে সব মিথ্যে।।

——আমি আগে থেকে সব জানতাম ও ভালো ছেলে না।

—– কিভাবে জানতেন আপনি তো মুগ্ধ কে চিনিতেন না।

—— আপনি যেদিন মোবাইলে কথা বলেচন আমি সব কথা শুনেছি, তারপর নাম্বার নিয়ে খোঁজ লাগালাম ছেলেটা কেমন জানার জন্য। শুনলাম ছেলেটার নাকি অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক।

—— আপনি আমাকে বলেন নি কেন??

—— আমি বলতে পারতাম কিন্তু তখন আমার কথা বিশ্বাস করতেন না। যদি ভাবেন আপনাকে ধরে রাখার জন্য মিথ্যা বলছি। তাই আল্লাহর কাছে বার বার দোআ করছিলাম যাতে আপনি নিজ থেকে সত্যি টা জানেন। আর আমাকে ক্ষমা করবেন না বলে আপনার মোবাইল ধরেছি।

আপনাকে একটা কথা বলার ছিল
— জি বলুন (মেঘলা)
—- আপনাকে খুব ভালোবাসি….

আমি কিছু না বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।।
খ্যাত টা আমার কপালে চুমু একে দিলো। উনাকে জড়িয়ে ধরে অন্যরকম প্রশান্তি কাজ করছে।
—–

আজ মনে হচ্ছে আমি এ দুনিয়ার সবচেয়ে সুখি মানুষ।

পরের দিন উনার দেয়া শাড়ি টা পরলাম, এ শাড়িতে আমাকে বেশি সুন্দর লাগছে কারন এখানে আছে পবিত্র ভালোবাসার ছোয়া….. ❤❤

সবাইকে অনেক ভালোবাসা এত কষ্ট করে পড়ার জন্য 🤗
কেমন লেগেছে জানাবা💕

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here