‘একটি মৃত্যু এবং একটি বিয়ে’
৬
হিমুর মা কেন সুইসাইড করেছিলেন?
উনি কি মানসিক রোগী ছিলেন, না কি কারোর উপর প্রচন্ড অভিমান করে পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন?
তিনি হিমুর জন্মের পর থেকে ধীরে ধীরে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। হিমু নিজেই একদিন কথাটা বলেছিল প্রমাকে।
কিন্তু সুইসাইডের ঘটনাটা কেন লুকালো হিমু আর তার পরিবার?
এর পেছনে কি কোন গোপন অভিসন্ধি আছে?
প্রমা বিশ্বাস করতে চায় না যে হিমু কোনভাবে তার সাথে প্রতারণা করতে পারে।হিমুর সাথে প্রতিদিনই ফোনে কথা হয়, টেক্সট
হয়।সে কেন এই সত্যটুকু লুকোলো তার কাছ থেকে?
—রুমা, তুই কতোদিন ধরে চিনিস হিমুকে ?
—২-৩ বছর আগে যখন মেডিকেল শেষ করে ইন্টার্নী করছিলাম, তখন হিমু ভাই আমাদের হাসপাতালেই কাজ করতো। একরাতে নাইট ডিউটির সময় সে আমাদের কয়েকজনকে তার মায়ের মৃত্যুর কথা বলেছিল। ভীষণ খারাপ লেগেছিল তার জন্য।
—অথচ আমার সাথে বিয়ে ঠিকঠাক, এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে, আগামী মাসে আমাদের বিয়ে। কিন্তু আমাকে কিছুই জানানোর দরকার মনে করলো না?
—আমারও অবাক লাগছে জেনে যে তুই ব্যাপারটা সম্পর্কে জানিস না। হয়তো এটা হিমু ভাইএর জীবনে একটি কালো অধ্যায় যার কারণে সে ব্যাপারটা চেপে গেছে।
—আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। রুমা, আজ ফোনটা রাখছি। ভীষণ মাথা ব্যথা করছে।
—ঠিক আছে। তুই কিন্তু শুধু শুধু এই ব্যাপারটা জটিল করে ফেলিস না। হিমু ভাইএর সাথে খোলাখুলিভাবে কথা বলে দেখ। উনি মানুষটা এমনিতে খুব ভালো। প্লিজ গিভ হিম বেনেফিট অফ ডাউট।
—হুম।ঠিক আছে।
প্রমা ফোনটা রেখে থম মেরে বসে রইলো বেশ কিছুক্ষণ।
আজ সত্যিকার অর্থেই সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় !
এতো বড় একটা ধাক্কা যে সামনে আসছে তার অশনি সংকেত আগে থেকেই বেজে উঠেছিল। কিন্তু তার হৃদয় যে কখন এক দুরন্ত কিশোরী মেয়ের কোমল মনের মতো অবারিত ভালোবাসার উত্তাল জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে তার খেয়াল সে রাখে নি। প্রেমের সুনামির সাথে সাথে লোপ পেয়েছে তার যৌবনের বিচক্ষণতা আর বুদ্ধিমত্তা।
আজ নিজেকে ভীষন বোকা মনে হচ্ছে তার।
কি করবে এখন সে ?
~~~~###~~~~
হিমুর মন গত তিনদিন ধরে বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। কোন কারণে প্রমা তাকে এ্যাভয়েড করছে। ফোন করলে ধরছে না, টেক্সটে অটো উত্তর আসেঃ
—Can I call you later ?
টেক্সট করলে এক কথায় উত্তর দিচ্ছে সে।
—প্রমা, সব ঠিক আছে তো ?
—হুম।
—তুমি হঠাৎ এমন চুপ হয়ে গেলে কেন ? আমি কি অন্যায় কিছু করেছি বা বলেছি ?
—না।
—তাহলে তুমি কথা বলছো না কেন ?
—বলছি তো।
—নাহ্। তুমি কেমন যেন অন্যরকম ব্যবহার করছো। আচ্ছা আমরা কি আজ সামনাসামনি একটু দেখা করতে পারি?
—আজ হবে না। স্কুলে নতুন ক্লাসের সিলেবাস তৈরী করতে হবে।
—তাহলে কাল ?
—দেখি।
হিমুর মনটা বিষন্ন হয়ে গেল। সে নিজেও কাজে প্রচন্ড ব্যস্ত। ক্লিনিকে অসংখ্য রোগীর ভিড়। ক্লিনিক সম্পূর্ণ ওভারবুক করা।
রোগীদের নানা রোগের লক্ষণ, বিকার… সব বৃত্তান্ত শুনতে শুনতে একসময় সে এক প্রকার জোর করেই নিজেকে কাজে ডুবিয়ে রেখেছে।
তারপরও প্রমার সেই স্মিত হাসিমাখা স্নিগ্ধ মুখটি সকল কিছু ছাপিয়ে মনের আয়নায় জেগে উঠছে বারবার।
—কি হলো প্রমার ?
—কেন সে হঠাৎ করেই নিজেকে গুটিয়ে ফেলেছে ?
—কি অন্যায় করেছে সে?
কাজে প্রায় ১২ ঘন্টা ডিউটি শেষে পর প্রচন্ড খাটুনির পর হিমু যখন বাড়ি ফিরলো তখন রাত এগারোটারও বেশি বেজে গেছে।
প্রমাকে একটা কল করলে মনটা প্রফুল্ল হয়ে যেতো, কিন্তু সে নিশ্চয়ই এখন ফোন ধরবে না।
গত সপ্তাহে প্রমার বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়ে সে তাকে গুলশানের ইমপেটাস লাউঞ্জে নিয়ে গিয়েছিল।
রুফটপে সুইমিং পুলের ধারে রেস্টুরেন্টের আলো আঁধারির মাঝে নির্জন মনোরম পরিবেশে কি সুন্দর সময় কাটিয়ে ছিল তারা।
প্রমা একটা সাধারণ লিনেন শাড়ি পরে এসেছিল। কিন্তু তারপরও তাকে ভীষণ এলিগেন্ট লাগছিল।
এই প্রথম একসাথে ছবি তুলেছিল সেদিন দুজনে। রেস্টুরেন্টের ওয়েটার তুলে দিয়েছে একটা ছবি আর পরে সে একটা সেল্ফি তুলেছিল।
ফেসবুকে প্রমার আর তার সেল্ফি পোস্টে কয়েক শত লাইক আর কমেন্টের ঢল নেমেছে। সবাই তাদের আসন্ন বিবাহের অভিনন্দন জানাচ্ছে।
জীবনে বহু ক্রাশ খেলেও এই প্রথম হিমু গভীর প্রেমে পড়ে গেছে। এর থেকে আর নিস্তার নাই।
যে কোন উপায়েই হোক প্রমাকে সে ছাড়তে পারবে না।
অনাকাঙ্খিত অতীতের কিছু অন্ধকার অধ্যায় যখন তার সব আনন্দ গ্রাস করে নেয়, তখন প্রমার চেহারাটা মনে এলেই সে আবারও বেরিয়ে আসতে পারে ভয়াবহ একাকীত্বের কবল থেকে।
শেষমেশ যে ইমেইলের চিঠি দিয়ে তাদের পরিচয়ের সূত্রপাত হয়েছিল, সেই ইমেইলেরই সহায়তা লাগলো।
প্রমা প্রিয়তমা,
আবারও ইমেইলের আশ্রয় নিতে হলো কারণ গত কয়েকদিন যাবত তোমার সাথে ফোনে কিংবা টেক্সটে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হলাম।
তুমি কি কোন কারণে আমার উপর রেগে আছো?
আমি যদি কোনরকম অন্যায় করে থাকি তার জন্য আগেভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। দরকার হলে একশ বার কানে ধরে উঠ-বস করতেও আমি রাজি।
(এতে অবশ্য ব্যায়ামের কাজটাও হয়ে যাবে!)
আমার রসিকতায় তোমার হাসি না পেলে কিছু মনে করো না।জানোই তো, আমি তেমন ভালো জোকস বলতে পারি না। শেষের পাঞ্চ লাইনটা কি করে যেন ওলট পালট হয়ে যায়।
যাই হোক, তোমার সাথে কথা বলতে না পেরে আমি মহা কষ্টে আছি।
তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি এসে আমার এই কষ্ট লাঘব করো !
—তোমার হিমু
~~~##~~~
—প্রমা, হিমুর খালা আজ তোকে নিয়ে শপিংএ যাবেন। তিনি বলছিলেন যে তোকে সাথে নিয়ে দর্জির কাছে যাবেন তোর সালোয়ার-কামিজ, ব্লাউজ, পেটিকোট এসবের মাপ নেয়ার জন্য।
—আমার দর্জির কাছে তো সব মাপ আছে। সেখান থেকে নিয়ে নিলেই তো হয়। আমার আবার যাওয়ার কি দরকার ?
—না না। মুরুব্বি মানুষ যখন বলেছেন, তার উপর দিয়ে কথা বলিস না। এমনিতেই তোর শাশুড়ি বেঁচে নেই।
—কখন যেতে হবে মা?
—উনি বিকেলে এসে নিয়ে যাবে তোকে।
—আচ্ছা।
প্রমা অনিচ্ছার সাথে রাজি হলো।
আজ স্কুল ছুটি ছিল। ভেবেছিল একটু রিলাক্স করবে। কিন্তু বিয়ের শপিং আর অন্যান্য সব হুলস্থুল নিয়ে সবাই মহাব্যস্ত।
প্রমার মন এখনও বিষন্ন। হিমুর সাথে সে ঠিক মতো কথা বলতে পারছে না।
যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে সে যদি বিয়ের আগে থেকেই সত্য গোপন করে রাখে, বিয়ের পর তাকে কি আর বিশ্বাস করা সম্ভব হবে?
বিকেলে হিমুর খালা মিসেস নাজমা হোসেন গাড়ি নিয়ে চলে এলেন।
প্রমার মা চা-নাস্তার আয়োজন করেছিল। তিনি আজ নিজ হাতে ডালপুরি, চটপটি, চিকেন প্যাটিস, পাউন্ড কেক আর পুডিং বানিয়েছেন।মেয়ের শশুরবাড়ির মানুষ এলে নিজ হাতে রান্না করে আপ্যায়ন করাটা তাদের পরিবারের রেওয়াজ।
—বেয়াইন, আপনি এতো ভালো রান্না করেন? সব কিছুর টেস্ট অসাধারণ হয়েছে !
মিসেস নাজমা হোসেন চিকেন প্যাটিসে কামড় দিতে দিতে বললেন। তিনি এমনিতেই একটু খাদ্য রসিক।
—ধন্যবাদ বেয়াইন। তেমন কিছু করার সময় কোথায় দিলেন? এরপর আপনাকে মোগলাই পরোটা বানিয়ে খাওয়াবো।
—আরে বাবা। আপনি দেখছি পাকা রাঁধুনী!
—আমার মেয়েদেরও আমি রান্না শিখিয়েছি আপা। প্রমার চিকেন কোরমা আর সাদা পোলাও কিন্তু দারুণ হয়।
—তাই না কি? আমাদের মামনির এতো গুণ !
তিনি প্রমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
—প্রমা, চলো মা আমাদের এখনই যাওয়া দরকার। নইলে রাস্তায় জ্যামে পড়তে হবে। আজ আমাদের অনেক কেনাকাটা শেষ করতে হবে।
প্রমা রেডিই ছিল। সে তার রুম থেকে ব্যাগটা নিয়ে আসলো।
তারপর তার হবু খালা শাশুড়ির সাথে বেরিয়ে পড়লো।
প্রমার মা তাদের ফ্ল্যাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখলেন নিচে। গলির রাস্তায় যতক্ষণ গাড়িটি দেখা যায় ততক্ষণ তাকিয়ে রইলেন নীরবে।
একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস লুকোলেন।
~~~##~~~
গাড়িতে বসে মিসেস নাজমা হোসেন প্রমার সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছেন। বেশির ভাগ সময় প্রমা ছিল নীরব শ্রোতা।
—বুঝেছো প্রমা, হিমু কিন্তু আমার নিজের ছেলের মতোই। আমি ছোটকাল থেকে ওকে পেলে বড়ো করেছি। ওর মা চলে যাবার পর ওর বাবা কেমন যেন পাগল পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। তাই আমার মা মানে হিমুর নানি তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন।আর আমার তখনও বিয়ে হয়নি। আম্মা আর আমি হিমুকে নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকতাম… যা দুরন্ত ছিল সে!
প্রমা মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিল।তার মন বারবার হিমুর মায়ের কথা জানার জন্য উৎসুক হয়ে রইলো। কি করে সে কথা জিগেস করবে মনে মনে ভাবছে।
—খালামনি, হিমুর মায়ের সাথে আপনার বয়সের কি অনেক গ্যাপ ছিল?
—হ্যাঁ। আমাদের বয়সের প্রায় দশ বছরের ব্যবধান ছিল। আমার মায়ের বেশ কয়েকটা মিসক্যারেজ হয়েছিল এর মাঝে।
—ও আচ্ছা।
—বয়সের গ্যাপ থাকলেও আমাদের মধ্যে অনেক মিলমিশ ছিল। আমার বড়ো বোন ছিল প্রচন্ড মেধাবী।
সে এসএসসি আর এইচএসসিতে খুব ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করেছিল।
ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় তার হঠাৎ বিয়ে হয়ে যায়। হিমুর বাবা তখন মাত্র লন্ডন থেকে ফিরে এসেছেন পড়াশুনা শেষ করে। ভাল সম্বন্ধ পেয়ে আপার বিয়েটা হয়ে যায় খুব তাড়াহুড়া করে।
—তারপর ?
—তারপর আর কি? বিয়ের কিছুদিন পর আপা প্রেগনেন্ট হয়।কিন্তু তারও আমাদের মায়ের মতো পর পর তিনবার মিসক্যারেজ হয়েছিল।
সে তখন একটা বাচ্চার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল।
—আহারে।
—আসলেই ! বেচারি তখন খুব বিষন্ন থাকতো। কিছুদিন পর সে হিমুকে কনসিভ করে। এইবার আম্মা তাকে জোর করে আমাদের বাড়িতে এনে রাখেন। তারপর যথাসময়ে আমাদের হিমু বাবার জন্ম হলো।
গল্পের ফাঁকে গাড়ি এসে পড়েছে গুলশানের পিংক সিটিতে। সেখানে তিনতলায় রহমত দর্জি মিসেস নাজমা হোসেনের সব কাপড় সেলাই করেন।তারা প্রথমে দর্জির কাছে গিয়ে সব কিছুর মাপ দিয়ে এলো। তারপর তারা গেল গয়নার দোকান, জড়োয়া হাউজে।
সেখান থেকে প্রমার বিয়ের গয়না কেনা হচ্ছে। প্রমার হাতের চুড়ির সাইজ মেপে নিলো তারা।
এতো বড় গয়নার দোকানে প্রমা আগে কখনও আসে নি। তার মা নিইমার্কেটের ছোট একটা গয়নার দোকান থেকে কালে ভদ্রে গলার চেইন বা হাতের দুটো চুড়ি কিনেছেন।
গত কয়েক দশক ধরে স্বর্ণের দাম আকাশচুম্বী! মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের পক্ষে এই চড়া দামে সোনার গয়না বানানো মোটামুটি অসম্ভব।
প্রমার মা তার নিজের বিয়ের একটা সেট প্রমার বিয়ের জন্য তুলে রেখেছেন। অন্য সেটটা ছোট মেয়ে তনিমার জন্য রাখা আছে। তাদের পক্ষে এখন নতুন কোন সোনার গয়না বানানো সম্ভব হবে না।
ভাগ্যিস, আয়ারল্যান্ড থেকে প্রমার ছোটচাচা বিয়ে উপলক্ষে বেশ বড় অংকের টাকা পাঠিয়েছেন। সে টাকাতেই বিয়ের বেশিরভাগ খরচ হচ্ছে। তাছাড়া বড়ো খালা, মামা-মামী মিলে একটা ছোট সোনার সেট উপহার দিচ্ছেন।
—প্রমা কেমন লাগছে চুড়ির ডিজাইন?
—অনেক সুন্দর খালামনি।
মনে মনে এখনও প্রমার বেশ অস্বস্তি লাগছে এই দামী দোকানে এসে।
—বিয়ের পর সব সময় হাত ভরে সোনার চুড়ি পরে থাকবে। খুব সুন্দর লাগে দেখতে।
প্রমা একটু লজ্জা পেয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
সব শপিং সেরে তারা গুলশানেরই একটা ক্যাফেতে এসে বসলো।
মিসেস নাজমা হোসেন একটা ডিক্যাফ কফি নিলেন আর প্রমার জন্য কাপুচিনো অর্ডার করলেন।
—এখন বলো তোমাদের প্রেম কেমন চলছে ? হিমুর মুখে সারাক্ষণ শুধু তোমার কথা !
প্রমা জোর করে মুখে একটা হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। গত চারদিন সে হিমুর সাথে কথা বলে নি। হিমুর হাজারো টেক্সটের উত্তর দিয়েছে এক লাইনে। মনের সাথে এ কারণে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে তার।
—তুমি চুপ করে আছো যে ? কিছু হয়েছে না কি ?
—না খালামনি। জাস্ট একটু টায়ার্ড।
—হ্যাঁ। বিয়ের শপিং আনন্দের হলেও খুব ঝামেলার।
—আচ্ছা খালামনি, একটা প্রশ্ন করতে চাই। কিছু মনে করবেন না তো?
—না না বলে ফেলো। কি আবার মনে করবো ?
—হিমুর মায়ের কি কোন মানসিক রোগ ছিল ?
—কে বললো তোমাকে এসব ?
মিসেস নাজমা হোসেনের মুখের হাসি নিমেষেই মিলিয়ে গেল।
—আমি এ ধরনের কিছু একটা শুনেছি যে আপনার বোনের মৃত্যুটা অস্বাভাবিক ছিল। সেটা কি সত্য ?
—অস্বাভাবিক মানে কি বোঝাতে চাইছো তুমি প্রমা? পরিষ্কার করে বলো।
—তিনি কি সুইসাইড করেছিলেন?
মিসেস নাজমা হোসেন কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন। তারপর বললেন,
—এসব বাজে কথা কে বলেছে তোমাকে ? অমিতা ?
—অমিতা কে ?
প্রমা অবাক হয়ে জিগেস করলো।
—অমিতার কথা হিমু তোমাকে বলে নি?
— না।
—অমিতা হিমুর বাবার বন্ধুর মেয়ে। তার সাথে ওর বিয়ের কথা ঠিক ছিল।কিন্তু মেয়েটা কেন যেন লাস্ট মোমেন্টে বিয়েটা ভেঙে দেয়।
—সেটা কবেকার কথা ?
—বছর দুই আগে।
—বিয়ে কেন ভেঙে দিয়েছিল সে ?
—অমিতা কিসব আজেবাজে কথা বলছিল। সে বলেছিল তার এনগেজমেন্টের পরের দিন থেকেই সে কি সব অদ্ভুত জিনিস দেখতে পাচ্ছিলো।
—মানে কি দেখতে পেতো সে?
—আমি সব ডিটেইল জানি না। হিমু জানে সব। তাকেই জিগেস করে নিও।
প্রচন্ড ভয়ে প্রমার শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল!
তার মতো সেই মেয়েটিরও চোখের বিভ্রম হয়েছিল না কি বাস্তবেও এসব ঘটেছে ?
—এনগেজমেন্টের সময় কি আপনারা আমার হাতের এই নবরত্নের আংটিটা দিয়েছিলেন অমিতাকে?
—হ্যাঁ। কেন বলো তো ?
—এই আংটিটা হিমুর মাকে কে দিয়েছিল ?
—বড়ো আপার যখন বারবার মিসক্যারেজ হচ্ছিল তখন আমার মা তাকে এক পীরের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানেই এই আংটিটা তাকে দেয়া হয়। বড়ো আপা মনে করতেন এই আংটির কারণেই হিমু বেঁচে গিয়েছিল জন্মের সময়। সেজন্য আপা এই আংটিটা কখনই খুলতেন না।
—খালামনি প্লিজ আপনি আমার প্রশ্নটা এড়িয়ে যাবেন না। আপনার বোনের মৃত্যুর কারণ কি সুইসাইড ছিল ?
—হ্যাঁ।
মিসেস নাজমা হোসেন মাথা নিচু করে অঝোরে কাঁদছেন।
(চলবে)
–বিপাশা বাশার