শূন্য_অনুভূতি পার্ট:”আট”
#রোকসানা_ইয়াসমিন
উনি আমার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছেন।তবে দৃষ্টি শান্ত হলেও বেশ তুখড়।আমি একটা বড়সড় ঢোক গিলে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি আমায় ডেকেছেন প্রায় আধঘণ্টার মতো হতে চলল।কিন্তু এতক্ষণ যাবৎ আমি আমার মাঝেই মেতে ছিলাম।জানি না এর জন্য আমায় কতগুলো কথা শুনতে হবে।নিজেকে ওনার কড়া কড়া কথা শোনার জন্য প্রস্তুত করতে লাগলাম।কিন্তু উনি আমায় অবাক করে দিয়ে কিছু না বলেই নিজের কেবিনে চলে গেলেন।উনার এমন কাজে আমি কিছুটা অবাক হয়েই ওনার পিছু পিছু চললাম।উনি কেবিনে গিয়ে সোজা নিজের সিটে বসে পরলেন।আমি উনার পিছু পিছু কেবিনে ঢুকতেই আমার মাথার রক্ত টগবগ করতে লাগল।উনার ঠিক সামনের চেয়ারেই মায়া বসে আছে।এই অফিসে এই একমাত্র মেয়ে যাকে আমি মোটেও সহ্য করতে পারি না।কেন জানি না।হয়তো এর সবসময় ওনার পেছনে লেগে থাকা টা আমার পছন্দের নয় এজন্য।আমি ওর দিকে তাকিয়েই ওর পাশে থাকা চেয়ারে গিয়ে বসে পরলাম।আমি বসতেই মায়া আমার দিকে তাচ্ছিল্যের নজরে তাকালো।যা দেখে আমি ভেংচি কেটে সাহিত্যের দিকে তাকালাম।উনি টেবিলের ওপর থেকে একটা ফাইল হাতে নিয়ে তাতে কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে ফাইল টা মায়ার দিকে এগিয়ে দিল।
“আজ থেকে আমাদের নতুন প্রজেক্টের কাজ তুমি হ্যান্ডল করবে।এখানে কাজের সব ডিটেইলস দেওয়া আছে বুঝে নাও।”
ওনার এমন কাজে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।
“কিন্তু এই প্রোজেক্ট তো আমাকে হ্যান্ডওভার করার কথা ছিল তাই না?”
উনি আমার কথায় আমার দিকে না তাকিয়ে বসা থেকে ওঠে দুই হাত পকেটে রেখে অন্য দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
“যার টাইম সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই তাঁকে বিশ্বাস করে আমি এই কোম্পানির ক্ষতি করতে চাই না।এটা নেহাৎই বোকামি ছাড়া আর কিছুই হবে না।”
ওনার কথাটা যেন আমার বুকের ঠিক বা পাশে গিয়ে বিধল।উনি আমার থেকে বেশি ওই মায়া কে বিশ্বাস করেন।কথা টা মনে হতেই বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসছে।চোখের জল অনেক কষ্টে আটকে রেখে কেবিন থেকে বেরোতে যাবো তখনই মায়ার বলা কথা আমার কানে ভেসে এলো।
“ওও,,,থ্যাংক ইউ সো মাচ সাহিত্য।”
কথাটা শুনেই আমি চট করে পেছনে ফিরে তাকালাম।মায়া ওনার গলা জড়িয়ে ধরার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে।আমি আর এক মূহুর্ত ও ওখানে না দাঁড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে ওনার আর মায়ার মাঝ খানে ঢুকে চট করে উনার গলা জড়িয়ে ধরে টুপ করে ওনার গালে একটা চুমু একে দিলাম।এতে উনি বেশ অবাক চোখেই আমার দিকে তাকালেন।তবে আমি ওনার এই অবাক হওয়াটাকে সম্পূর্ণ ভাবে ইগনোর করে মায়ার দিকে তাকালাম।মায়া হা হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।আমি ওর সামনে হাল্কা তুরি বাজিয়ে বলে উঠলাম,
“মানছি তুমি সাহিত্য স্যারের কলেজ ফ্রেন্ড তাই বলে তুমি এটা ভুলে যেও না যে যাকে তুমি ‘ জড়িয়ে ধরতে যাচ্ছিলে সে আরেকজনের হাজবেন্ড।লজ্জা করা উচিত তোমার।”
আমার এমন কঠোর গলায় বলা কথাটা মায়ার খুব বেশিই গায়ে লেগেছে।তাই তো সে চোখ মুখ বিকৃতি করে একবার সাহিত্যের দিকে তাকিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।মায়া চলে যেতেই আমি ওনার দিকে তাকালাম।উনি শান্ত নরম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে নিজেও কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলাম।
.
.
.
.
.
নিজের রাগ এখন আমার চরম সীমায় পৌছেছে।উনি কি করে পারলেন এটা করতে!উনি আমার কাজ ওই মায়া কে দিয়ে দিলেন।উনার জন্য এখন মায়া এতোটা ইমপোর্টেন্ট হয়ে উঠেছে।আমি এখন কিছুই নই ওনার জন্য তাই না।ঠিক আছে এবার উনিও দেখবেন আমি কি করতে পারি।আমি নিজের কেবিনে এসে নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলাম।যাওয়ার সময় তাসরিফ কে বললাম ও যেন আমায় তার বাইকে করে বাড়ি পৌছে দেয়।
.
.
.
.
.
রাত প্রায় বারোটা বাজে।উনি এখনো বাড়ি ফেরেন নি।আমি বেলকনি তে দাঁড়িয়ে উনার আসার অপেক্ষা করছি।বুঝতে পারছি না উনি এখনো বাড়ি ফিরছেন না কেন।নাকি আমি অফিসে না থাকায় ওই মায়ার সাথে সময় কাটাতে খুব সুবিধাই হচ্ছে উনার।এ জন্যই কি বাড়ি ফিরতে এতো দেরী হচ্ছে।আমার মনে নানান ধরনের ভাবনা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি।এমন সময় উনার গাড়ি বাড়ির ভেতরে ঢুকলো।আমি সাথে সাথে দৌড়ে নিজের ঘরে এসে ফোন হাতে নিয়ে বেডের ওপর বসে গেম খেলতে লাগলাম।কিছুক্ষণ এর মধ্যেই উনি ঘরে এলেন।আমি উনাকে দেখেও না দেখার ভান করে বসে রইলাম।আর খুব ভালো করেই বুঝতে পারলাম উনি বিষয় টা লক্ষ্য করছেন।কিন্তু কিছু না বলেই হাতের ব্যাগটা বেডের উপর রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।বেশ কিছুক্ষণ পর উনি ওয়াশরুম থেকে বেরোলেন।আমি এখনো ওভাবেই বসে বসে গেম খেলছি।তার দেখে উনি হাতের ভিজে টাওয়াল টা বেডের ওপর ছুড়ে ফেলে আমার দিকে কিছু টা এগিয়ে এলেন।
“আমাকে না বলে অফিস থেকে চলে এসেছ কেন?”
ওনার কথা আমার কানে পৌছালেও আমি এমন ভাব করলাম যেন আমি কিছু শুনতেই পাইনি।আমার এমন খামখেয়ালি পনায় হয়তো উনি একটু বেশিই রেগে গেলেন।তাই উনি আবারো দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন,
“আমি তোমায় কিছু জিজ্ঞাসা করছি।”
এবার আমি উনার দিকে এমন ভাবে তাকালাম যেন আমি উনার কথায় খুব বেশি বিরক্ত বোধ করছি।উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি আমার ফোন টা একপাশে রেখে বেড থেকে উঠে কোনো কথা না বলে ঘর থেকে বেরোনোর জন্য উনার পাশ কাটাতে গেলেই উনি আমার এক হাত ধরে হেচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন।উনার এমন কাজে কিছুটা চমকে গিয়ে ই উনার দিকে তাকালাম।উনি তীব্র দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠলেন,
“আমি তোমায় একটা প্রশ্ন করছি তার উত্তর দাও।অফিস কী তোমার মামার বাড়ি যখন ইচ্ছে যাবে আর যখন ইচ্ছে আসবে।”
ওনার কথায় আমি রেগে কিছু একটা বলতে যাবো তার আগেই আমার ফোন বেজে উঠল।আমি চোখ বড় বড় করে ফোনের দিকে তাকালাম।সেখানে বড় বড় অক্ষরে তাসরিফ লেখাটা ভেসে আছে।মূহুর্তেই আমার সব রাগ পানি হয়ে গেল।আমি তাসরিফ কে ফোন করতে বলেছিলাম।ভেবেছিলাম ওর সাথে কথা বলে আমি উনাকে বোঝাবো নিজের ভলোবাসার মানুষকে যখন কেউ অন্যকারো সাথে ঘনিষ্ঠ হতে দেখে তখন আসলেই তার কতটা কষ্ট হয়।কিন্তু এখন এই মূহুর্তে বিষয় টা আমার জন্য বিপদজ্জনক হয়ে উঠেছে।এখন উনি একটু বেশি ই রেগে আছেন।তার থেকেও বড় কথা আমি এখন উনার হাতে বন্দি।।আমি একটা বড়সড় ঢোক গিলে উনার দিকে তাকালাম।উনি রক্ত চক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।বুঝলাম বউ এর ফোনে রাত একটার দিকে কোনো পরপুরুষ ফোন করলে স্বামীর মনের অবস্থা কী হয়।তবে এই মূহুর্তে আমার কী অবস্থা হবে তা ভাবতেই আমার গা শিউড়ে উঠছে।আমি কোনমতে কাপতে কাঁপতে উনার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ফোনের দিকে এগিয়ে গেলাম।ভাবতেই অবাক লাগছে উনি এতো সহজেই আমায় ছেড়ে দিলেন।
আমি হাঁটি হাঁটি পা পা করে ফোনের কাছে গিয়ে ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে বেলকণির দিকে এগোলাম।অঘটন টা সেখানেই ঘটল।উনি হঠাৎ করেই পেছন থেকে এসে আমায় টুপ করে কোলে তুলে নিলেন।সাথে সাথে ভয়ে আমি ফোন ছেড়ে উনার গলা জড়িয়ে ধরেই বুঝলাম ভুল করেছি।এই নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো আমার ফোন ভাঙলো।নিজের মনেই নিজের কপাল চাপড়াতে লাগলাম।কিন্তু সেদিকে উনার কোনো খেয়াল ই নেই।উনি আমায় কোলে নিয়ে সোজা বেডের ওপর শুইয়ে আমার ওপর আধশোয়া হয়ে আমার দিকে তাকালেন।আমার হার্টবিটের বারোটা বেজে গেল।কি করতে যাচ্ছেন কি উনি কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
“এসব কি করছেন আপনি!ছাড়ুন আমায়।”
কথা টা বলেই আমি উঠে আসতে চাইলে উনি আমার দুই হাত বেডের সাথে শক্ত করে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে আমার দিকে তাকালেন।
“সেটাই যেটা অনেক দিন আগেই আমার করা উচিৎ ছিল।”
কথা টা বলে উনি আমার ঠোঁটের দিকে তাকালেন।উনার এমন চাহনিতে আমার বুকের ঢিপ ঢিপ শব্দটা দ্বিগুণ বেড়ে গেল।মহুর্তেই যেন শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেল।আমি আর সহ্য করতে পারলাম।দুই চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।আমার বুঝতে বাকি রইলো না এরপর কি ঘটতে চলেছে।আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবি নি আজ আমি উনাকে নিজের এতোটা কাছে পাবো।
চলবে❤
গল্পটা আর দুই পর্বে শেষ করতে চলেছি।আসলে গল্পটা কেমন জানি এলোমেলো হয়ে গেছে।যেভাবে লিখতে চেয়েছিলাম সেভাবে হয়নি।গল্পটা কেমন আগোছালো হয়ে গেছে।তাই যত তাড়াতাড়ি শেষ করা যায় ততই ভালো।