গল্পঃ অবহেলার সংসার,পর্বঃ ৩,৪
লেখিকাঃ (মায়া)
০৩
(গত পর্বে… মায়া রিপোর্ট নিয়ে আসার পথে জ্যামের মধ্যে আটকা পড়লো। চোখ গুরাতেই দেখলো…..তারপর…)
মায়া দেখলো, আতিক অন্য একটা মেয়েকে বাইকের পিছনে নিয়ে আছে। মেয়েটি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে আতিককে। মায়া নিজের রিপোর্টের দিকে একবার তাকিয়ে চোখের পানিটা মুছে নিলো। আর ব্যাগ থেকে ফোন বের করে তাদের একটা ছবি উঠিয়ে রাখলো।
জ্যাম কেটে যাওয়ায় বাইক নিয়ে চলে গেলো আতিক। সারা রাস্তা মায়া আর চোখের পানি ফেলেনি শুধু নিজের ক্যান্সার রিপোর্ট দেখছে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলছে।
বাসায় এসে দেখে দুপুরের রান্না হয়নি।মায়া মনে মনে ভাবছে একটা দিন কি শাশুড়ী মা রান্নাটা করতে পারতো না। হ্যাঁ পারতো। কিন্তু মায়া কি করতে আছে তাহলে। সে তো শুধু এই বাড়িতে কাজের মেয়ে হয়ে এসেছে। বউ মানেই তো তাই। শাশুড়ীকে সব কাজ থেকে ছুটি দিয়ে দাও।
মায়াকে দেখে শাশুড়ী মা বলল। এতক্ষণ লাগে এক ডাক্তারের কাছ থেকে ফিরতে? মাথায় তো কান্ড জ্ঞান বলতে কিছুই নেই। দুপুরে রান্নাটা যে করতে হবে সেই দিকে কি খেয়াল আছে???
মায়াঃ মাফ করবেন মা,জ্যামে আটকে গেছিলাম তাই দেরি হয়ে গেছে।
শাশুড়ীঃ কিসের দেরি হয়েছে তা আমি বুঝি। দেখো গিয়ে কোন ছেলে বন্ধুর সাথে বসে গল্প করছিলে কি না।
মায়া শেষের কথাটা কিছুতেই হজম করতে পারলো না। তাই কঠিন গলায় উত্তর দিলো,আমাকে কোন দিন দেখেছেন মা অন্য কারো সাথে আড্ডা দিতে???
অযথা বউদের সন্দেহ করতে যাবেন না। নয়লে হিতে বিপরীত হবে।
আমি রান্না করে দিচ্ছি একটু অপেক্ষা করুন।
মায়া শাশুড়ী মা কে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।
মায়া নিজের মনেই বলছে একটা মানুষ ডাক্তারের কাছ থেকে ফিরেছে আর তার শরীরের অবস্থা না জানতে চেয়ে রান্না নিয়ে পড়ে আছে। মায়া নিজেই নিজেকে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মুখ হাত ধুয়ে রান্না ঘরে গেলো।
মায়া নিজের মনে রান্না করছে। শরীরটা তার একদমই ভালো লাগছে না। বাবার বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে তার, একটু অসুস্থ হলে মা বাবা কত উতলা হয়ে যেতো। খাবার টাও নিজের হাতে খেতে হতো না।
দুপুরে আতিক খেতে আসেনা অনেক মাস হয়ে গেছে। বিয়ের নতুন সময়ে আসতো রোজ। দুপুরে সবাই কে খাইয়ে দিয়ে। মায়া না খেয়েই রুমে চলে গেলো। শরীরটা অনেক ক্লান্ত লাগছে তার। এখন একটু তার বিশ্রামের দরকার।
মায়া খাটে হেলান দিয়ে নিজের শরীরটা এলিয়ে দিলো। হুট করে তার আতিকের কথা মনে পড়ে গেলো। না চাইতেও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।হে আল্লাহ,,আমি মানে কি সবার শুধু প্রয়োজন😭???
আতিক কে এতো ভালোবাসার পরেও হাজার কমতি রয়ে গেছে তার। হয়তো তাই,, অনেক কমতি রয়ে গেছে, নাহলে অন্য মেয়ের স্পর্শে কিভাবে গেলো সে।
আচ্ছা আতিক বাসায় আসার পরে যদি আমি জিজ্ঞেস করি বাইকের পিছনে মেয় টা কে ছিলো? সে কি বলবে???
আতিক বাসায় ফিরবে অনেক রাত করে এসে খাবেও না।। ভাবনায় চলে গেলো মায়া।
মায়াঃ আজ কোথায় ছিলে তুমি???
আতিক ভ্রু দুটো কুঁচকে বলল মাথার কি তার ছিড়ে গেছে??? অফিসে গেছিলাম সেটা কি তুমি দেখোনি???
মায়া শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল বাইকের পিছনে মেয়েটি কে ছিলো???
রাগী চেহারাই আতিক বলল। মায়া প্লিজ তোমার এসব সন্দেহ আমার একদম ভালো লাগেনা। যাস্ট অসহ্য লাগে।
মায়া ফোন বের করে তাদের ছবি দেখালো।
আতিক কিছুটা ভীতি মুখ করল তারপরেও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল আমার কলিগ ছিলো ঐটা। আজ বাহিরে একটা মিটিং ছিলো সেখানে যেতে হয়েছে আমাদের।
কলিগ??? সে তো ভালো কথা??? কিন্তু এত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে কেনো???
মায়া লো ক্লাস ওয়ালা কথা বলো না। বাইকের পিছনে এভাবে ধরে থাকাটা নরমাল ব্যাপার। তোমার মতো বাইকের পিছনে না ধরে বসা নরমাল নয়।
মায়া ছল ছল চোখে তাকিয়ে বলল আমি তোমাকে অন্য মেয়ের সংস্পর্শে দেখতে পারিনা আতিক!!!
প্লিজ মায়া এবার ফেসকাদুনি শুরু করো নাতো। এমনিই সারাদিন অফিস করে আমি খুব ক্লান্ত। তার উপর বাসাতে এসেও শান্তি নেই।
মায়াঃ আমার কান্না তোমার কাছে অভিনয় মনে হয়???
আতিক কোন কথার উত্তর না দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ফোন হাতে নিয়ে অন্য পাশ হয়ে শুয়ে পড়লো।
মায়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেই নিজেকে বলছে। আতিক কে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তাহলে হয়তো কথোপকথন গুলো ঠিক এইরকমই হবে।
রাত প্রায় ১১টা বাজে আতিক এখনো বাসায় ফিরেনি। অফিস ছুটি হয় ৮ টায়, আর আতিক এখনো ফিরেনি।
মায়া খাবার টেবিলে প্রতিদিনের মতো অপেক্ষা করছে আতিকের জন্য।
দেরি করে ফেলাটা তার নিয়মিত অভ্যাস।মায়া আতিক কে যদি জিজ্ঞেস করে এতো দেরি কেনো হলো, তাহলে তার সোজা উত্তর দেয় আতিক আমি সব কৈফিয়ত তোমাকে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না।
মায়া শান্ত হয়ে বলে আচ্ছা কৈফিয়ত দিও না, কিন্তু বাসায় একটু তাড়াতাড়ি আসিও প্লিজ।
আমার যখন ইচ্ছে হবে তখন ফিরবো।
এই কথার বিপরীতে কোন কথাই মায়া আর বলে না।
কলিং বেলের আওয়াজে মায়ার ভাবনায় ছেদ পড়ে।
দরজা খুলে দেখে আতিক এসেছে। কোনো কথা না বলেই আতিক ঘরে প্রবেশ করলো।
মায়া শুধু বলল তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো আমি খাবার বাড়ছি ।
আমি খেয়ে এসেছি আমার ক্ষুধা নেই বলে হনহন করে হেঁটে চলে গেলো আতিক।
মায়া খাবারের টেবিলে একবার চেয়ে দেখে নিজেও ঘরে চলে গেলো।
মায়া সোজা বারান্দায় চলে আসলো। কারণ রাতের বেলা শুলেই কাশিটা বেড়ে যায়। কাশির জন্য আতিকের সেই বিরক্ত মুখের কথা আর সে শুনতে চাই না।
আতিক ওয়াশরুম থেকে এসে দেখে মায়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। সে জানে মায়া খায়নি তার এসব ঢং একদম ভালো লাগে না। যার ক্ষুধা লাগবে এমনিই খাবে আদুরি সোহাগী কন্ঠে খাবার মুখে দেওয়া যাবে না।
আতিক সোজা খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
মায়া আকাশ দেখছে আর রবের কাছে নিজের আরজি পেশ করছে।
আমার জীবনটা এমন কেনো??? কেনো এতো ভালোবাসার কাঙ্গালিনী আমি??? কেনো এমন অবহেলার সংসার তার। সে তো শুধু একটু ভালোবাসায় চেয়েছিলো। কেনো তার কপালে কোনো সুখের সংসার হলো না।
তবে মনে মনে হাজার শুকরিয়া আদায় করছে আল্লাহর দরবারে,, তাকে এতো ভালো একটা রোগ দেওয়ার জন্য। আতিক এমন কেনো হয়ে গেছে!?? আজ তো মায়ার রিপোর্ট দিয়েছে, কই একবার-ও তো আতিক জিজ্ঞেস করে দেখলোনা তার রিপোর্টে কি এসেছে???
গত কয়েকদিন সবাই লক্ষ্য করছে মায়া এখন বেশ অন্যমনস্ক থাকছে। কারো সাথে তেমন কথা বলেনা। যে যা হুকুম দেয় তা কোনো প্রশ্ন ছাড়াই করে দেয়।সাফিক জিজ্ঞেস করেছিলো মায়ার রিপোর্টে কি রোগ এসেছে, মায়া বলেছে রিপোর্ট নরমাল কোন সমস্যা নেই। এই কথাটা শাশুড়ী মা শুনে মুখ বেঁকিয়ে বলেছিলো জানতাম আমি এসব অভিনয়,, তা ছাড়া কিছুই নয়। শুধু শুধু টাকা নষ্ট। টাকা কি গাছে ফলে নাকি??? মায়া কথা গুলো শুনেছিলো আর মুচকি হেসেছিলো।
মায়ার মন টা আজ একদমই ভালো নেই।
আতিক অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।
মায়া আতিকের মুখের দিকে চেয়ে আছে।
আতিক একবার মায়ার দিকে সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল কিছু কি বলবে???
মায়াঃ হ্যাঁ আমি আমার বাবার বাড়ি যেতে চাই, কিছুদিনের জন্য।।।
আতিকঃ কিহ?? মাথা ঠিক আছে?? কোথাও যাচ্ছো না তুমি!??
মায়া কিছুটা জোর খাটিয়ে বলল গত এক বছরে আমি আমার বাবার বাড়িতে যায়নি এবং কোনোদিন বায়না ধরে বলিনি যে যাবো।
কিন্তু এখন আমি যেতে চাচ্ছি।
আতিকঃ তুমি চলে গেলে বাড়ি সামলাবে কে?? তাই আমি বলছি যখন না, তো না।
মায়াঃ আমি যখন ছিলাম না তখন কিভাবে বাড়ি চলছিলো!??
আতিকঃ মায়া অফিস যাওয়ার টাইমে আমার মুড টা খারাপ করো না।
আতিক চলে যেতে চাইলে মায়া পিছন থেকে বলে উঠে!!
চলবে………..____
👉 গল্পঃ অবহেলার সংসার
👉 পর্বঃ ৪
👉 লেখিকাঃ (মায়া+সংগৃহীত)
(গত পর্বে ছিলো… মায়া বাবার বাড়ি যাওয়ার বায়না করছিলো, আতিক নিষেধ করে দিলো।তারপর…….)
মায়াঃ আমি যাবো বলছি তো যাবোই,,, তোমার পরিবার তোমার!!! তোমার মা বাবা কে নিয়ে এতো টেনশন আর আমি গত এক বছর ধরে আমার মা বাবার সাথে দেখা অবদি করিনি।
আতিক থেমে গিয়ে পিছন ফিরে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল। যদি আমার কথার অবাধ্য হয়ে বাবার বাড়িতে যাও,তো আর এই বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবে না।
নিমিষেই মায়ার চোখ পানিতে ভিজে উঠলো,,,
এই মানুষটাকে সে এতো ভালোবেসেছিলো?? এই মানুষটার জন্য পুরো ফ্যামিলির অবাধ্য হয়ে তাকে বিয়ে করেছিলো???
মায়া চোখের পানি মুছে বলল আচ্ছা আসবো না আর!!!
আতিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে। কি বললে তুমি?? আমার অবাধ্য হয়ে তুমি যাবেই???
মায়াঃ হ্যাঁ যাবো।
আতিকঃ এই তোমার পাখনা গুলো কে গজাতে সাহায্য করলো শুনি? নতুন কেউ এলো নাকি জীবনে???
মায়া এবার অট্ট হাসিতে ফেটে পরলো। হাসি থামিয়ে বললো যার চরিত্র যেমন,তার কাছে তেমনি মনে হয়।
আতিক মায়ার কথায় অগ্নিমূর্ত ধারণ করে মায়ার সামনে এসে স্বজোরে থাপ্পর বসিয়ে দেয়। থাপ্পরটা এতো জোরে ছিল যে মায়ার দূর্বল শরীর তা নিতে পারলো না। ছিটকে পড়ে গেলো মাটিতে। ঠোঁটের কোণে রক্ত। আর হুংকার করে বলল কি বললি তুই আমার চরিত্র খারাপ??? তোর এত বড় স্পর্ধা???
মায়া ছলছল চোখে আতিকের দিকে তাকিয়ে রইল।
(বিঃদ্রঃসম্মানিত পাঠক পাঠিকা ভাই বোনেরা, এই জায়গায় এসে আমি নিজেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি,😭 🍀Aman🍀)
আতিকের চিৎকার চেঁচামেচিতে শশুর শাশুড়ি আর সাফিক তাদের ঘরে আসলো।
মায়াকে পরে থাকতে দেখে সাফিক দৌড়ে গিয়ে মায়াকে উঠালো। ভাবী কি হয়েছে তোমার??? ঠোঁটে রক্ত কেনো?? ভাইয়া তুই ভাবীকে মারছিস???
শশুর মশাই বলল আতিক কি হয়েছে?এত চেঁচামেচি করছো কেনো?? আর বউমার গায়ে হাত তুলছো তুমি???
আতিক কোন কথাই বলছেনা আর মায়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
কারো কোনো উত্তর না পেয়ে শাশুড়ী মা বলে উঠে নিশ্চয়ই মায়া কোনো কিছু ভুল করেছে, এমনি এমনি তো আর আমার ছেলে গায়ে হাত তুলতে যাবেনা।
সাফিক কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,, তুমি চুপ করবে মা। কি হয়েছে সেটাতো তুমি জানো না। আর না জেনেই দোষ গুণ বিচার করতে শুরু করে দিয়েছো???
শশুর মশাই ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল কি হলো চুপ করে আছো কেনো??? বউ মার গায়ে হাত তুলছো কেনো???
আতিক তখন রাগী চেহারাই বলল তোমাদের সাধের বউ আমাকে চরিত্রহীন বলেছে।
আতিকের কথা শেষ করার সাথে সাথে শাশুড়ী মা আগা গোড়া না জেনেই মায়াকে কথা শুনাতে লাগলো।
কিহঃ আমার ছেলেকে চরিত্রহীন বলা??? তোমার সাহস কি করে হয় হ্যাঁ???
মায়া কান্না ভেজা কন্ঠে বলল আমি মোটেই আতিককে চরিত্রহীন বলিনি।
শাশুড়ীঃ চরিত্রহীন বলোনি তাহলে আমার ছেলে বুঝি মিথ্যা বলছে???
শশুরঃ আহ্ কি শুরু করলে তুমি। বউমার কাছে থেকে আগে ভালো করে শুনতে দাও কি হয়েছে???
কি হয়েছে তুমি বলো তো???
মায়াঃ আমি আমার বাবার বাড়িতে যেতে চেয়েছিলাম। আতিক যেতে দিবেনা বলছে। আমি জোর করে বলেছি আমি যাবোই,তাই আপনার ছেলে বলেছে আমি তার অবাধ্য হওয়ার সাহস পেলাম কোথায়?? নতুন কেউ এলো নাকি জীবনে??? তাই আমি বলছি যার চরিত্র যেমন সে মানুষ কে তেমনি ভাবে।
আতিক তখন মায়ার কথা কেড়ে নিয়ে বলল দেখছো,, কি বলেছে আমাকে বাবা!!!
সাফিক তখন বলে উঠে,, তুই নিজেই তো প্রথমে ভাবীকে চরিত্রহীন বলে সন্দেহ করে কথাটা বললি ভাইয়া।
শাশুড়ী মা সাফিকের কথায় ক্ষেপে গিয়ে বললেন তুই চুপ কর। বড়দের মাঝে এতো কেনো কথা বলিস,, যাহ এখান থেকে তুই???
আমি ভুল কি বলেছি মা!!! আমি তোকে এখান থেকে যেতে বলছি। সাফিক একবার মায়ার দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে চলে গেলো।
শশুর বাবা বললেন সব বুঝলাম। তো তুমি কি চাচ্ছো এখন??? বাবার বাড়িতে যেতে চাও??
মায়া জোরালো কন্ঠে উত্তর দেয়
হ্যাঁ আমি কিছুদিনের জন্য যেতে চাচ্ছি। আমার খুব মনে পড়ছে মা বাবার কথা।
শাশুড়ী মা বলল, মানে কি? বাড়ি ঘর রেখে এখন বাবার বাড়িতে সফর করতে বের হবে?
শাশুড়ী মায়ের কথা পাত্তা না দিয়ে শশুর বাবা বললেন তার আগে আতিকের কাছে তোমায় মাফ চাইতে হবে!!!
মায়া একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আতিকের কাছে মাফ চাইলো।
আতিক বলল তার মানে মায়া বাবার বাড়িতে যাচ্ছে নাকি বাবা???
শশুরঃ হ্যাঁ এই নিয়ে আর একটা কথাও বলবে না।
সামনে থাকা চেয়ারে স্বজোরে একটা লাথি মেরে আতিক ঘর থেকে বের হয়ে অফিসে চলে যায়।
একে একে সবাই চলে যায়।
মায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলো। কাঁপা কাঁপা হাতে গালে হাত দিলো।
নিজেকে নিজেই বলল, বউ হওয়ার আগে তোকে বিনা দোষে ভুল শিকার করার ট্রেনিং নেওয়া লাগতো মায়া।
মায়ার ভিতরের ক্ষত গুলো আলগা হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। এতক্ষণ যেই কান্নাটা সে চেপে রেখেছিলো। এখন সেটা আর বাঁধ মানছে না।
ধপ করে মায়া মাটিতে বসে পরে হাউমাউ করে কাঁদছে। এ কেমন জীবন বিধাতা আমার। বুক ফাটা কান্নার সাথে তার আরো আগে থেকে সম্পর্ক। তারপর’ও এই কান্নাকে সে আজ অব্দি কাবু করতে পারলোনা।
অঝোর ধারায় কাঁদছে মায়া।
নাহ তার কান্নার কোনো বাহির থেকে শব্দ নেই। কিন্তু তার ভিতরটা চিৎকার করে কাঁদছে।
বিকাল চারটা বাজে,,, মায়া রাতের রান্নাটা তাড়াতাড়ি করে নিলো। সব কিছু ফ্রিজে উঠিয়ে রাখলো।
মায়া ব্যাগ প্যাক করছে। গালে পাঁচ আঙ্গুলের দাগটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। কিভাবে এই দাগ মুছবে বুঝতে পারছেনা। হঠাৎ মনে পড়লো বরফ দিলে হয়তো তেমন বুঝা যাবেনা।
মায়া রান্না ঘরে গেলো। ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে সামনে তাকাতে দেখে সাফিক তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
মায়া মুচকি হেসে বলল তোমার কিছু লাগবে সাফিক???
তোমার কি ক্ষুধা লাগছে?? নুডুলস করে দিবো???
সাফিকঃ বরফ দিয়ে কি করবে ভাবী?? গালের দাগ কে ধামা চাপা দিবে তাই না??? মায়া তেমন কিছুই বলল না। বরফ তো গলে যাবে গালে দাও ভাবি।
এই বাড়িতে শুধু এই একটা মানুষ আছে যে মায়ার সাথে সুন্দর করে কথা বলে। মায়া সাফিককে খুব স্নেহ করে।
সাফিকঃ কখন যাচ্ছো তুমি ভাবি???
মায়াঃ এই তো বের হবো।
সাফিকঃ একটা কথা বলবো রাখবে???
মায়া মুচকি হেসে বলল কেনো নয় আমার ভাইটার কথা আমি রাখবোনা কেনো?? কি বলবে বলো। মায়া গালে বরফ ধরে রেখেছে।
সাফিকঃ ভাবি তুমি একবারেই চলে যাও এখান থেকে। আর কখনো এসোনা এই অবহেলার সংসারে, এখানে কেউ তোমার কদর করেনা। সবাই তোমায় প্রয়োজনে ব্যবহার করে।
সাফিকের চোখের কোনে পানি। তোমার এসব কষ্ট আমার একদম ভালো লাগেনা ভাবি। তুমি কেনো মুখ বুজে সব সহ্য করো???
অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা কেনো বলোনা???
মায়া সাফিকের কথা শুনছে নির্বাক হয়ে। যাক কেউ তো আছে যে মায়ার কথা চিন্তা করে।
মায়া সাফিকের কাছে গিয়ে চোখের পানিটা মুছে দিলো। এসব কি বলছোটা কি তুমি বলতো???
যেই মানুষটার হাত ধরে নিজের পরিবারের অবাধ্য হয়ে তাকে বিয়ে করেছো,সেই মানুষটা আদৌ কি তোমার আছে, বলো আমায়???
তুমি ভাইয়াকে ছেড়ে দাও। তাহলে বুঝতে পারবে তোমার কদর।
মায়া চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলল এখানে বসো,
সাফিক চুপচাপ বসে পরলো।
মায়াঃ তোমার কি মনে হয় তোমার ভাইকে ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করিনি কখনো।
যতবার তাকে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি তার মধ্যে একটু যদি তোমার ভাই আমাকে আপন করার চেষ্টা করতো তাহলে আমাকে তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা কোনোদিন চিন্তা করতে হতো না।
সহজ ভাষায় বলি তোমার ভাই কে আমার নেশার মতো লাগে। এমন নেশা যেটা তিলে তিলে তোমায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবে। কিন্তু তুমি ছাড়তে পারবেনা।
আর আমি এই অবহেলার সংসার থেকে মুক্তি সেদিন নিবো,যেদিন আমার মৃত্যু হবে।
আর সেটা খুব শীঘ্রই হবে।
সাফিক শেষের কথায় কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। মানে??? কি করতে চাচ্ছো ভাবি???
মায়ার চোখের পানি টলমল করছে। সে সাফিককে সেখানে রেখে দৌড়ে নিজের ঘরে চলে যায়।
সাফিকের মনটা কেমন করে উঠলো,,, ভাবি কি বললো বুঝলাম না।
মায়া গালে বরফ লাগিয়ে রাখছে বার বার চেষ্টা করছে চোখের পানি আটকাতে, কিন্তু চোখ তার কথা শুনছেই না।
মায়া রেডি হচ্ছে। মাথার চুলে চিরুনি দিতেই মায়া বুঝতে পারলো তার চুল…
চলবে,,,……