অবহেলার সংসার 🏘️ পর্ব ১,২

#অবহেলার সংসার 🏘️
পর্ব ১,২
#লেখিকা___(মায়া)
০১
🥀🥀💔
ডাক্তারের সামনে হাতে ক্যান্সারের রিপোর্ট নিয়ে বসে আছে মায়া। মুখে এক বিশ্ব জয় করা হাসি,,,,

ডাক্তার মেডাম কিছু টা অবাক হয়ে বললেন। আপনার বাসার কেউ আসেনি কেন আপনার সাথে???

আসলে তারা অনেক বিজি তাই আমিই নিতে আসলাম রিপোর্ট টা। কিন্তু আমি তো ফোন করে বলেছিলাম আপনার হাসবেন্ড কে আসতে। অনেক আর্জেন্ট দরকার ছিল। উনার সাথে কিছু কথা ছিল।

যা বলার আমাকেই বলুন‌। রোগ তো আমারি,,,,

ইয়ে মানে আপনাকে বলা টা ঠিক হবে কি??? এতে পেসেন্টের অবস্থা আরো সিরিয়াস হয়ে যায়।।‌

বেশি কিছু আর কি বলবেন। আমার কন্ডেশান ভালো না আর কি মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছি এই তো। এর বেশী তো কিছু না বলেই অট্ট হাসিতে ফেটে পরে মায়া।

ডাক্তার হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে। তার মনে হচ্ছে মায়া মেন্টালিটির দিক দিয়ে সিক। না হলে নিজের ক্যান্সার রিপোর্ট দেখে এ ভাবে হাসতে পারে???

মায়া হাসি বন্ধ করে আচ্ছা ডাক্তার আমার কিসের ক্যান্সার???

জ্বি আপনার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে।

ব্লাড ক্যান্সার কি মানুষ মারা যায়।
জ্বি তেমন নয়।তবে মাসে মাসে শরীরের রক্ত চেন্জ করতে হবে আপনাকে‌। নয়লে মৃত্যুও হতে পারে।।।

আমার অবস্থা কেমন??? খুব খারাপও না আবার। খুব ভালোও নাহ,,,
দেখুন শরীরের যত্নের উপর সব কিছু। এই যে আপনার ব্লাড ক্যান্সার আজ। এটা কিন্তু আপনার অযত্নের কারণে হয়েছে।

দেখুন ক্যান্সার মানে নো আনসার,,, এই ধারণাটা ভুল,, কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সার সেড়ে যায় আবার কিছু ক্ষেত্রে বেড়ে যায় সেটা নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে বেঁচে থাকাকে অর্থপূর্ণ করে তোলে।

সো আপনার ক্যান্সার দ্রুত রক্তে ছড়িয়ে ফেলার আগে হসপিটালে এডমিট হয়ে যেতে হবে। এবং আপনাকে রক্ত চেন্জ করতে হবে।

ক্ষীণ স্বরে মায়া বলে আচ্ছা আমি যদি রক্ত চেন্জ না করি তাহলে???..

কি বলছেন এসব?? তাহলে আপনার প্রান নাশের ঝুঁকি রয়েছে।

আর এখন কিছু মেডিসিনের নাম লিখে দিচ্ছি । সেগুলো নিয়মিত খাবেন। আর নিজের শরীরের যত্ন নিবেন!!!

মায়া প্রিসকেপশান টা নিল। উঠে দাঁড়াতেই অস্বাভাবিক ভাবে কাশতে শুরু করলো। মায়া হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে। হাত সরাতেই চোখে পরলো তাজা রক্ত হাতে লেগে রয়েছে।

ডাক্তারের চোখ আড়াল করে দ্রুত ডাক্তারের কেবিন থেকে বেরিয়ে ওয়াশরুমের দিকে ছুটে গেল।

চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়ে ট্যিসু দিয়ে হাত মুছে বেড়িয়ে এলো।

রিক্সায় উঠে মায়া ভাবছে গত কয়েক মাস ধরে অস্বাভাবিক জ্বর,,,, দ্রুত ওজন কমে যাচ্ছিল। এসব কে তখন সে খুব একটা পাত্তা দেয়নি। কিন্তু হঠাৎ তার কাশি বেড়ে যায়। কাশির সাথে রক্ত বের হতে থাকে। এসবে অনেক টাই ঘাবড়ে যায় সে। মাথার চুল ও পড়ে যাচ্ছিল।

কয়েক দিন আগে রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেছে,, হঠাৎ কাশি বেড়ে যায় মায়ার পাশে তাকিয়ে দেখে আতিক ফোনে কারো সাথে চ্যাট করতে ব্যস্ত। মায়ার মাস খানেক থেকে যে জ্বর তার কোন খেয়ালই নেই। শশুর শাশুড়ী ও তেমন নয়।

বাড়ির বউদের সামান্য জ্বর হলে তা নিয়ে মাতামাতি করার কিছু নেই। জ্বর তো স্বাভাবিক। বউদের সামান্য অসুস্থ হলেও শুয়ে থাকা যাবে না। কারন সে এখন বউ তার অনেক দায়িত্ব।

মায়ার কাশি টা বেরে যাওয়াই আতিক বিরক্ত কন্ঠে বলল। কি সমস্যা তোমার এত কাশছো কেন??? যাও উঠে গিয়ে পানি খেয়ে এসো। আর কানের কাছে তোমার কাশির শব্দ ভালো লাগছে না। কাল কে দয়া করে ডাক্তারের কাছে গিয়ে আমাকে উদ্ধার করো অসহ্য।
আতিক পাশ কেটে আবার ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো। মায়া মুখে হাত দিয়ে কাশি আটকানোর চেষ্টা করছে। শেষে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। কাশতে কাশতে একদলা রক্ত বের হয়ে আসলো যা দেখে ভিষন রকম ভয় পেয়ে গেল মায়া। তারাতারি রক্ত পরিষ্কার করলো পানি দিয়ে,,, মুখ ধুয়ে ফেলল মায়া। বেসিনের দিকে তাকালো মায়া।

সংসার জীবনে আসার পর থেকে খুব সময় আয়না দেখা হয়। নিজের দিকে তাকানোর ফুরসৎ নেই‌।

নিজের গালে হাত দিয়ে বলল কি রে মায়া তোর চেহারার এত অবনতি হয়েছে কেন???
কারন আমি বউ এখন তাই। এখন নিজেকে গোছানোর সময় নেই। সংসার গোছাতে হবে যে।

মায়া ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এক বার আতিকের দিকে তাকালো। ফোনে কারো সাথে চ্যাট করছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।

মায়ার বুকে ভিতর কোন রিয়াকশন হলো না। কারন তার এসব এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।
মায়া বারান্দায় চলে গেল,, সেখানে ছোট বেতের চেয়ারে বসে পড়লো আর মুখে কাপড় দিয়ে খুক খুক করে আস্তে আস্তে কাশতে লাগলো। যেন আতিকের কানে না পৌঁছায় কাশির শব্দ,,,

আকাশের দিকে মুখ করে বসে রইলো মায়া আর ভাবতে লাগলো কিছু পুরোনো কথা।

৪বছরের সম্পর্ক আতিক আর মায়ার মাত্রিক ভালোবাসে মায়া আতিক কে। আর মায়া আজো বুঝে উঠতে পারলো না যে আতিক তাকে সত্যিই ভালো বাসে কিনা???

আতিকের সাথে বিয়ে মায়া এক প্রকার জোর করেই করেছে। কারন মায়ার পরিবার আতিক কে এক দম পছন্দ করে না। কারন তারা খুব ভালো করেই জানে যে আতিক শুধু মায়াকে ব্যবহার করছে। অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল আতিকের সাথে সম্পর্ক রাখার জন্য। কিন্তু ভালোবাসাই সে অন্ধ ছিল। মোটা কাঁচের চশমা পরে রেখেছিল মায়ার চোখে। তাই তো সবাই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার পরো পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করে আতিক কে।

২বছর বিয়ের বয়স তাদের। প্রথম ক মাস আতিক ভালো ছিল মায়ার সাথে তার পর শুরু হয় অবহেলা।

আজ বড্ড মনে পড়ছে মায়ের বলা কথাগুলো আতিকের সাথে কখনই সুখি হতে পারবি না। বিয়ে করিশ না ওকে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল মায়া,,, ঘরে আর সে গেল না বাকি টা রাত বারান্দায় কাটালো,,,

আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে মায়া বুঝতেই পারেনি। ফজরের আযানের ধ্বনি কানে আসতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল মায়ার। বারান্দা থেকে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে দেখে আতিক বিভোরে ঘুমাচ্ছে।

মায়া কিছু ক্ষণ পলক হীন ভাবে আতিকের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। মনে মনে আফসোস করে বলছে। আমায় একটু ভালোবাসলে কি এমন ক্ষতি হতো তোমার???

চোখের কোনে পানি টা মুছে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল মায়া ওজু করার জন্য।

ফজরের নামাজের মুনাজাতে প্রতিদিনের মতো আজো চোখের পানি ছেড়ে দিল মায়া।

হে আমার পালনকর্তা,, কেন তুমি আমাকে এত ভালবাসার কাঙ্গাল বানাইছো??? যেখানে আমার কপালে তুমি এক ফোঁটা ও ভালোবাসা রাখোনি,,,, রহম করো আমার উপর ইয়া মাবুদ ‌। আমি জানি না কি এত পরিক্ষা নিচ্ছো আমার। আমাকে ধর্য্য দান করো মাবুদ আমি যেন তোমার সকল পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারি। আতিক কে তুমি নেক হায়াত দারাস করো আল্লাহ। সৎ পথে চলার তৌফিক দান করো।আমিন,,,

মায়া চোখের পানি মুছে জায়নামাজ টা ভাঁজ করে সকালের নাস্তা বানানোর জন্য রান্না ঘরে গেল।

সকালের নাস্তা বানানো প্রায় শেষ,,, মায়ার আবার খাশি শুরু হয়েছে,, শাশুড়ী মা পিছন থেকে ঝংকার গলায় আওয়াজ করে বলল।

চলবে___,,,,,????
#পর্ব__2

#অবহেলার সংসার 🏘️

#লেখিকা__(মায়া)

তোমার এমন কাশি হচ্ছে আর তুমি সেই কাশি নিয়ে রান্না করছো। তোমার মুখের কাশি যদি খাবারে পড়ে??? এসব নংরামি খাবার আমাদের খাওয়াবে???

মা এসব কি বলছেন?? আমি মুখ ঢেকেই কাশছি। কেন বাপু তোমার কাশি কত দিন থেকে??? আমার ছেলে কি তোমার ঔষধ এনে দেয়নি। না কি না খেয়েই নিজের ইচ্ছায় অসুস্থ হয়ে যাচ্ছো???

মা আতিক যা ঔষধ এনে দিয়েছে তা খেয়েছি আমি কিন্তু না কমলে আমি কি করবো???
আর কোন মানুষ ইচ্ছে করে অসুস্থ হয়না।

ভুল করেছো আবার মুখে মুখে তর্ক করছো???

মায়া এবার আর কিছুই বলল না কারণ এখন উনার সাথে কথা বলা মানে ভাববে ঝগড়া করছি।

তাই মায়ার ভুল না থাকা সত্ত্বেও বলল আমাকে মাফ করবেন মা,, আমি তর্ক করছিলাম না।

হ্যাঁ হয়েছে বাপু সরো তো এখান থেকে। যাও গিয়ে ৩কাপ চা বানাও,,,

মায়া কিছু না বলে চুলাই পানি উঠিয়ে দিল। আর ভাবছে। নানা বিষয় নিয়ে মায়ের সাথে কতই না তর্ক করছি। তার পর ও মা সব কিছু ভুলে আবার আমায় বুকে জড়িয়ে নিতো। ভুল করার পরো মাকে কখনো সরি বলা হয়ে উঠেনি।

আর এখন ভুল না করেও মাফ চাইতে হয়।

শাশুড়ী মা টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছেন। মায়া চা বানাচ্ছে। আতিক শশুর মশাই, আর মায়ার দেবর সাফিক নাস্তার টেবিলে বসলেন।

আতিক কিছু টা গরম মেজাজ নিয়ে বলল। মা আজ কি তুমি নাস্তা বানাইছো নাকি???
হ্যাঁ বাবা আমিই নাস্তা বানাইছি।

শাশুড়ী মায়ের কথা শুনে মায়া একটুও অবাক হলো না কারণ এর আগে ও এমন হয়েছে,, হাত পুরে রান্না করেছে মায়া আর শাশুড়ী মা নিজের নামে চালিয়েছে।

রাগী কন্ঠে আতিক বলল
তুমি কেন রান্না করেছো??? মায়া কি করছে??? ওকে এই বাসায় কি জন্য রাখা হয়েছে??? নবাবী হয়ে থাকার জন্য নাকি।

মায়া থাকতে যে তোমাকে রান্না করতে হবে??? মায়া কাপে চা ঢালছে আর মাথা নিচু করে সব শুনছে।

সাফিক তখন বলে উঠলো,,, ভাইয়া রান্না টা মা নয় ভাবিই করেছে। ভাবি ফজরের পর রান্না ঘরে ঢুকেছে। আর মা আধা ঘন্টা হয়েছে মা ঘুম থেকে উঠেছে। আর এত নাস্তা মা অবশ্যই আধা ঘন্টাই করেনি।

শাশুড়ী মায়ের হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে যাওয়াই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাফিক এর দিকে।

শশুর বাবা বললেন,,, নিজে রান্না করে নিজের ছেলের সোহাগ নিতে যেও। বউ মা আমার চা দাও,,, মায়া মাথা নিচু আতিক সাফিক আর শশুর বাবা কে চা দিলেন। মাথা টা ঝিম ঝিম করছে মায়ার একে তো রাতে ঘুম হয়নি দ্বিতীয় তো গায়ে আবার জ্বর আসছে !!!

মায়া খবরের কাগজ টা শশুরের হাতে দিল। বাবা একটু ভালো করে মায়ার দিকে তাকালো। বউ মা তুমি কি ঠিক আছো??? এমন দূর্বল দূর্বল লাগছে কেন তোমায়???

কিছু টা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে শাশুড়ী মা বলল। দু দিন পর পর অসুখ পুষলে কি আর হবে‌।

সাফিক চিন্তিত কন্ঠে বলল তোমার আবার কি জ্বর আসছে ভাবী???

তোমারা অযথা চিন্তা করছো আমি ঠিক আছি। মায়া সবাই কে নাস্তা দিচ্ছে।
আতিক আড় চোখে মায়ার দিকে তাকালো সত্যিই মায়ার মুখ টা খুবি শুকনো লাগছে।

আতিক বিরক্ত কন্ঠে বলল তুমিও আমাদের সাথে নাস্তা করতে বসো। আর নাস্তা করে তারাতারি রেডি হও। তোমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো।

মায়া আতিকের দিকে তাকালো বুঝতে পারলো না আজ কি সূর্য পশ্চিমে উঠছে নাকি!!!

মায়া সহজ ভাষায় বলল আমি ঠিক আছি ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না।।

শাশুড়ী মা বলল ঢং করো না তো আতিক যা বলছে তাই করো। অসুস্থ হয়ে বাবার বাড়ির লোকজন কে আবার বলবে তার মেয়েকে অবহেলাই রাখি।

মায়া শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সবার সাথে নাস্তা করে নিল। মায়ার সম্ভবত এই এক সাথে খাওয়ার ভাগ্য খুব কমই হয়। আর বাবার বাড়িতে এক দিন ও তার মা বাবা তাকে ছেড়ে খায়নি।

এখানে এক দিন কেন দিনের পর দিন না খেয়ে থাকলেও কেউ কিছু বলতে আসবে না‌।

আর এক বেলা না খেলে আব্বু নিজ হাতে তুলে খাওয়াতো।

খুব ইচ্ছে করে আবার আব্বুর হাতে আবার তুলে খাই।

খাওয়ার মাঝ খানে মায়ার আবার কাশি শুরু হলো। খাওয়ার রেখে মুখে হাত চেপে ধরে উঠে চলে গেল মায়া।

ওয়াশরুমে গিয়ে হাত দেখলো মায়া তাজা রক্ত। বড় বড় কয়েক টা শ্বাস নিলো মায়া। মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো। কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে তার।

মায়া রেডি হয়ে বাহিরে এসে দেখে,, আতিক বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গম্ভীর মুখে আতিক বলল তারাতারি উঠে বসো। আমার অফিসের লেট হয়ে যাচ্ছে
।।

মায়া অসহায় মুখ করে বলল তুমি আমার সাথে ডাক্তারের কাছে যাবে না???

পাগল হয়েছ??? আমি অফিস বাদ দিয়ে তোমার সাথে যাবো?? তুমি একাই তো যেতে পারবে।

মায়া চুপ করে গেল আতিকের কথায় বাইকে উঠে বসলো।

মায়া আতিক কে ধরলো না। আতিক নিজেও কিছু বলল না। গাড়ি স্টার্ট দিল। মায়ার চোখ জোড়া ভিজে উঠলো। একটা সময় ছিল যখন বাইকে মায়া উঠে বসলেই আতিক গাড়ি স্টার্ট করার আগে বলতো কাঁধে হাত দিয়ে ধরে বসো নয়লে পরে যাবে!!!

মায়া দুষ্টুমি করে ধরতোই না তখন আতিক নিজেই মায়ার হাত কাঁধে দিয়ে দিতো।

হসপিটালের সামনে এসে বাইক থামালো আতিক। তুমি যাও,,, আমার যেতে হবে দেরি হচ্ছে।

তুমিও আমার সাথে যাবে নয়লে আমিও যাবো না।

কঠিন গলায় আতিক বলল,, কি ঢং শুরু করলে। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে বললাম না তোমাই‌। বসের বকুনি তো তোমায় শুনতে হয় না আমায় শুনতে হয়। এসব আমার অসহ্য লাগে মায়া।। মাঝে মাঝে তোমার বাড়াবাড়ি গুলো।

আমি জানি তো আমার কোন কথাই তোমার ভালো লাগে না এখন।

আতিক বিরক্ত হয়ে বাইক পার্ক করে মায়া কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল‌।

ডাক্তার মেম মায়ার অসুস্থের ডিটেইলস শুনে কিছু টা চিন্তিত কন্ঠে বলল,, মিস্টার আতিক এত দিন ধরে আপনার ওয়াইফ এর এই অবস্থা আর আপনি কিছুই করেননি।

আতিক মাথা টা নিচু করে বলল আমি তো ঔষধ যা লাগে সব এনে দিয়েছি‌।‌‌ ‍‌‍মায়া নিজেই হয়তো ঠিক মত খায়নি।

মিস্টার আতিক এত টা কেয়ার লেস হওয়া কিন্তু ভালো নয়। মাস খানেক থেকে জ্বর। আবার কাশি। কাশিতে দুই দিন ধরে রক্ত বের হচ্ছে।

রক্তের কথা তো মায়া কিছুই বলেনি।

মিস মায়া আপনার অনেক গুলো টেস্ট করতে হবে। আর রিপোর্ট দেখে আপনার ট্রিটমেন্ট করা হবে। তার আগে আমি কিছুই বলতে পারছি না। আপাতত কিছু মেডিসিনের নাম লিখে দিচ্ছি সেগুলো খান। আর আজ কের মধ্যে টেস্ট গুলো করে নিন।

মায়া শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। আর নিজের যত্ন নিবেন,, খাওয়া দাওয়া মনে হয় ঠিক মত করেন না। পুষ্টি কর খাবেন বেশি করে।

মায়া আতিক ডাক্তারের রুম থেকে বেরিয়ে আসল। আতিকের উদ্দেশ্য বলল সরি আমি রক্তের বিষয় টা বলিনি।

না থাক ডাক্তারের কাছে কেয়ার লেস প্রমাণ করার জন্য ধন্যবাদ।

মায়ার হাতে হাজার খানেক টাকা দিয়ে বলল। সব টেস্ট গুলো করিয়ে নিও আমি গেলাম।

হনহনিয়ে আতিক চলে গেল। মায়া আতিকের যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে আছে।

মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হয় আতিকের আচারনে।এক দম চিনতে পারি না। এই মানুষ টা কে অথচ নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি এখনো।

সব টেস্ট করানো হলো। রিপোর্ট আসবে তিন দিন পর।

মায়া ডিসপেন্সারি থেকে যাবতীয় ঔষধ নিয়ে বাসায় চলে গেল। আবার প্রচুর জ্বর আসছে। কাশি টা তো থামছেই না।

হর্নের আওয়াজে মায়ার এসব ভাবনার সুতোই টান পরলো।

নিজেকে খুব হালকা হালকা লাগছে তার এটা জেনে যে তার ক্যান্সার।

জ্যামের মধ্যে আটকা পড়ে আছে মায়ার। জ্যাম জিনিস টা অনেক বিরক্তকর একটা অবস্থা কিন্তু আজ কেন জানি মায়ার এই জ্যামের ভিতর থাকতে ভালো লাগছে।

মায়া চারপাশের মানুষ দের দেখছে কয়েক মিনিটের জ্যামের জন্য কত বিরক্ত হয়ে উঠেছে নিজের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছে।

জ্যামের ভিরে এক গাড়ির দিকে তাকাতেই মায়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরলো।

কিছু ক্ষনের জন্য মায়ার হার্ট রেসপন্স করা বন্ধ করে দিয়েছে। নিজের মনের চোখের পানি গাল বেয়ে টপ টপ করে ঝরতে লাগল।

চলবে___,,,,????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here