#পঁচিশটি_মোমবাতি
#পর্ব:- ০৫ (সমাপ্ত)
লিমনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রূপা কেবিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সফিক যেন কিছু বলতে গিয়েও গলায় আটকে যাচ্ছে কথা। রূপা দরজা খুলে ভিতরে চলে গেল, সফিক দ্রুত কেবিনের সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিতে লাগলো।
দরজা ধাক্কার শব্দ হচ্ছে কিন্তু রূপা দরজা খুলছে না।
আচমকা ঘুম ভেঙ্গে গেল সফিকের। সত্যি সত্যি দরজা ধাক্কার শব্দ হচ্ছে কিন্তু সেটা তার নিজের কেবিনের দরজা। সদ্য ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নটা মাথার মধ্যে জ্বলন্ত হয়ে আছে। বাতি জ্বলছে, সে একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে। মাথা ব্যথাটা এখন আর নেই মনে হচ্ছে।
দরজা ধাক্কা চলছে। সফিক উঠে গিয়ে কেবিনের দরজা খুলে দিল, তার সামনে ম্যানেজার সাহেব দাঁড়িয়ে আছে।
– ঘুমাচ্ছিলে সফিক?
– জ্বি, আসুন।
– আপনার মাথা ব্যথা কমেছে কিনা জিজ্ঞেস করতে এলাম। ম্যাডাম আর রূপা ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে, আপনি সুস্থ থাকলে যেতে বলেছে।
– তারা দুজনেই একসঙ্গে আছে?
– হ্যাঁ। ম্যাডামের এক বন্ধু ছিলেন এতক্ষণ, তার নাম লিমন। কতক্ষণ গল্প করলো, তারপর দেখি ম্যাডাম তার সঙ্গে রাগারাগি করলেন।
– আপনি ম্যাডামের দিকে খেয়াল রাখবেন। আমার যেতে ইচ্ছে করছে না, তাছাড়া শরীর বেশি ভালো না ম্যানেজার সাহেব।
– ঠিক আছে তাহলে বিশ্রাম করেন।
দরজা বন্ধ করে সফিক মোবাইল হাতে নিল। কথা বলতে ইচ্ছে করছে, ফারজানার কাছে কল দিয়ে কি স্বপ্নের বিষয় জিজ্ঞেস করা যায়? সফিক তার ভাবনা মতোই ফারজানার কাছে কল দিল, প্রায় সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ হলো।
– ফারজু আমি সফিক বলছি।
– তোমার নাম্বার আমার মুখস্থ।
– তোমাকে একটা জরুরি কারণে কল দিলাম।
– কি কারণ?
– একটু আগে একটা স্বপ্ন দেখলাম, আমাদের মালিকের মেয়েকে রূপা মারার চেষ্টা করছে।
– তুমি কি সবসময় উদ্ভট জিনিস দেখো?
– রেগে যাচ্ছ কেন?
– তুমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করোনি এখনো?
– পেপারটা হারিয়ে গেছে, আমি খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো। তারপর সিগনেচার করে দেবো।
– তুমি কিন্তু খুব চালাকি করার চেষ্টা করছ।
– আমি মোটেই চালাকি করছি না, সত্যি সত্যি সেটা হারিয়ে গেছে। বাসাতেই আছে মনে হয়। তুমি এক কাজ করো, তোমার কাছে তো বাসার চাবি আছে। বাসায় গিয়ে একটু খুঁজে দেখবে প্লিজ? আমি জানি তুমি খুঁজে পাবে, তুমি পারবে না এমন কোনো কাজ পৃথিবীতে নেই।
– ঠাট্টা করছ?
– না ঠাট্টা করছি না, তুমি কি এখনো তোমার সেই বান্ধবীর বাসায় আছো?
– হ্যাঁ।
– তুমি চাইলে কিন্তু আমাদের বাসায় গিয়ে থাকতে পারো। বাসাটা এখন থেকে খালি পরে থাকবে। আমি স্যারের শশুর বাড়ির এলাকায় হাসপাতাল তৈরির সব দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। এখন থেকে সেই গ্রামের মধ্যে থাকবো।
– তোমার কেন মনে হচ্ছে যে আমি ওই বাসায় গিয়ে থাকতে পারি।
– জানি না, তুমি তো জানো আমি ভেবেচিন্তে কিছু বলতে পারি না ফারজু। যা ভালো লাগে তাই বলে ফেলি, তুমি না থাকলেও বাসায় গিয়ে পেপারটা খুঁজে বের করো। তবে তুমি যদি আমাদের বাসায় থাকো তাহলে কিছুদিন তোমার কাছে ফাকাফাকা মনে হবে। তখন যদি তোমার মনে হয় আমার কাছে ফিরে আসা দরকার তাহলে ফিরে আসবে। আর নাহলে তুমি পেপারটা নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসবে। সেখানে একদিন তোমাকে আমি সবকিছু ঘুরিয়ে দেখাবো, তারপর সন্ধ্যা বেলা পেপার সাইন করে তোমাকে ঢাকার লঞ্চে উঠিয়ে দেবো।
– আমি কল রাখলাম।
– আরেকটু কথা বলি? বেশি নয়, একটুখানি …!
– বলো।
– নাহহ কিছু না। ভালো থেকো ফারজু।
সফিক কল কেটে দিল। ফারজানা তাকে বারবার বলেছিল সে সফিকের সঙ্গে আর কোনদিন দুই মিনিটের বেশি কথা বলতে চায় না। কিন্তু আজ একটু বেশি হয়ে গেছে। সফিক আবার বেরিয়ে গেল বাইরে, একটু চা খেতে ইচ্ছে করছে তার।
★★
নিধির দিকে তাকিয়ে আছে রূপা, তার কাছে এই মুহূর্তে নিধিকে রহস্যময় মনে হচ্ছে। অদ্ভুত ধরনের কথা বলে, রূপার ঘুম পাচ্ছে কিন্তু নিধির জন্য তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। রূপার মনে হচ্ছে সে এখনই ঘুমে ঢলে পড়বে লঞ্চের ছাঁদে। একটু আগে ম্যানেজার সাহেব বলে গেছে সফিক সাহেব এখনো অসুস্থ। রূপার ইচ্ছে করছে স্যারের কাছে গিয়ে কথা বলতে, তার কিছু দরকার হলে সেটা এগিয়ে দেবে। কিন্তু পারছে না।
– রূপা।
– জ্বি ম্যাম।
– লিমন সাহেবকে দেখে চমকে গেলে নাকি?
– জ্বি একটু অবাক হয়েছি।
– তার কথাবার্তায় তোমার কি মনে হয় যে মে আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চায়?
– আমি জানি না ম্যাম।
– তুমিও তো একটা মেয়ে তাই সামান্য ধারণা তো আছে বলে মনে হয়। নাকি বলতে ভয় পাও?
– জি-না ভয় পাই না।
– সফিক সাহেবকে আমি বলেছিলাম যে বাবার মৃত্যুর পিছনে লিমনের হাত থাকতে পারে। কারণ আমি বাবার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশে আসবো না বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম।
– তিনি কি সত্যি সত্যি স্যারকে মেরেছেন?
– না, বাবা আত্মহত্যা করেছে।
রূপা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিধির দিকে। খুব স্বাভাবিক ভাবে নিধি কথা বলছে কিন্তু সত্যি নাকি মিথ্যা বোঝা যাচ্ছে না।
– রূপা…!
– জ্বি।
– বাবাকে আমাকে মানসিক কষ্ট দেবার জন্য আমার জন্মদিনের দিন আত্মহত্যা করেন। আমি যতদিন বাঁচবো ততদিন প্রতি বছর জন্মদিনে আমার মনে পড়বে তার কথা। আমি তখন হয়তো তার কথা ভেবে মন খারাপ করবো চোখের পানি ফেলবো। এসব করার জন্য বাবা আমাকে শিক্ষা দিয়ে গেল।
মৃত্যুর দিন বাবা অনেকবার আমাকে কল করে কিন্তু আমি রিসিভ করিনি৷ তারপর বাবা আমাকে টেক্সট করে বলে যে, আমি কল রিসিভ না করলে তিনি আত্মহত্যা করবেন। আমি তখন বাবার কাছে ভিডিও কল করি তাকে বললাম যে আমি তার আত্মহত্যার দৃশ্য দেখতে চাই। আমি তাকে বলেছিলাম রাগ করে কারণ ভেবেছিলাম বাবা আমাকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করতে চায়।
– তারপর কি হলো ম্যাডাম?
– বাবা তার ড্রয়ার থেকে ছুরিটা বের করেন। মোবাইল হাতে ধরেই তিনি এক মুহূর্ত দেরি না করে নিজের গলায় নিজেই কাটেন। দেরি করলে হয়তো পারতেন না কারণ সাহস ফুরিয়ে যেত। ভাবতেই পারিনি যে বাবা এরকম একটা কাজ করতে পারবেন।
নিধি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। রূপা কিছু বলবে কিনা ভেবে নিচ্ছে। তার কাছে মনে হচ্ছে এখন চুপ করে থাকাটা ভালো হবে।
– রূপা।
– জ্বি।
– আমি লিমনকে বললাম যে, তুমি কি আমার বাবার কিছু করেছ? আমি জানি বাবা আত্মহত্যা করেছে তবুও তাকে বলেছি। কারণ আমি চাইতাম লিমন এসবের সঙ্গে জড়িত হবার ভয়ে যেন আমার সঙ্গ ত্যাগ করে। তাকে ভয়ে রাখার জন্যই আমি সত্যিটা কাউকে বলিনি। পুলিশের তদন্ত করার বিষয়টাও বাদ দিয়েছি আমি। তবে সফিক সাহেবকে নিজে ইচ্ছে করে একটু বিভ্রান্ত করছি। আমার কেন জানি না নিজেকে সবার সামনে বুদ্ধিমতী হিসেবে প্রকাশ করতে ইচ্ছে করে। সফিক সাহেব একেক সময় একেক ধরনের দ্বন্দ্বে পড়ে যেতেন। আমার বেশ ভালো লাগতো।
– আমাকে এসব বলছেন কেন?
– লিমন তোমার পরিচিত তাছাড়া আমার বিশ্বাস তুমি এসব কাউকে বলবে না। ঢাকায় ফিরে আমি সবাইকে সত্যিটা বলবো৷
– ঠিক আছে ম্যাডাম।
– বাবা আমার জন্য একটা গিফট রেখে গেছে আমাদের বাড়িতে। আমি যে ঘরে থাকতাম সেই ঘরের খাটের ওপর রাখা ছিল গিফট। বাবা মনে হয় ভেবেচিন্তে রেখেছিল তিনি মারা যাবেন। না ভাবলেও সমস্যা ছিল না কারণ বেঁচে থাকলে সেদিনই তিনি গিফট সরাতে পারতেন। কারণ আমি তো দেশের বাইরে ছিলাম।
– কি ছিল সেই গিফটে?
– পঁচিশটা মোমবাতি আর একটা চিঠি।
– মোমবাতি কেন ম্যাডাম?
– জানি না, চিঠির মধ্যে মোমবাতি নিয়ে তেমন কিছু লেখা নেই। তবে চিঠিটা চমৎকার ছিল।
– ওহ্।
– মা নিধি, আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে আমার জীবদ্দশায় তুমি দেশে ফিরবে না। তাই আমি চাই যেকোনো মূল্যে তুমি দেশে আসো। তোমাকে আমি সফিকের কথা সবসময় বলতাম। আমি শুনেছি সফিকের নাকি ডিভোর্স হয়ে যাবে। এরকম ভালো আর চমৎকার একটা ছেলের এরকম কিছু হবে ভাবিনি। আমার মৃত্যুর পরে যদি তোমার রাগ বিন্দু পরিমাণ কমে থাকে তাহলে তোমার প্রতি আমার অনুরোধ তুমি শফিককে বিয়ে করবে। আশা করি আমার শেষ মুহূর্তে বলা অনুরোধ তুমি না রাখলেও অন্তত বিবেচনা করে দেখবে৷
এটাই ছিল বাবার চিঠি। আমি দেশে এসে বাড়িতে এই গিফট পাইছি তারপর থেকে কতো চিন্তা কতো সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।
– রূপার গলা শুকিয়ে গেল। নিধি চৌধুরী তার স্যারকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাকি? তাহলে তার নিজের কি হবে? রূপা মনে মনে কতটা আগ্রহ নিয়ে ছিল সেই স্বপ্নের কি হবে? রূপার মনে হচ্ছে নিধি বুঝতে পেরেছে রূপার মনের কথা। তাই সে কৌশলে সবকিছু তাকে জানাচ্ছে।
– রূপা।
– জ্বি।
– শুনেছি সফিক সাহেব এখনো তার স্ত্রীর দেয়া ডিভোর্স পেপারে সাইন করেনি। আমি সেজন্য চুপচাপ অপেক্ষা করছি। বাবার অনেক অনেক টাকা হলেও কেন জানি নিজেকে খুব নিঃশ্ব মনে হয় সবসময়।
– ম্যাডাম আমার ঘুম পাচ্ছে, চলুন নিচে যাই।
– সফিক সাহেবের স্ত্রীর সঙ্গে তার মনে হয় আবার সম্পর্কটা ঠিক হবে। সফিক সাহেব এখনো সেই পেপারে সাইন করেননি। কেন জানি মনে হচ্ছে তিনি ফিরে আসবেন। তিনি যদি ফিরে আসে তবে আমি খুশি হবো। বাবার মৃত্যুর আগে তার বলে যাওয়া ইচ্ছে পুরন করতে হবে না। চলো নিচে যাই।
★★★
নিধি কেবিনে ঢুকে গেল। রূপা সফিককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে রেলিং হাতলে। নিধিকে রেখে সে চুপিচুপি সফিকের কাছে গেল। সফিক তাকে দেখে বললো,
– ম্যাডাম কোথায়?
– এইমাত্র কেবিনে গেলেন। আপনার শরীর কেমন আছে স্যার?
– ভালো লাগছে এখন।
রূপা চলে যাচ্ছিল, আবারও থমকে গেল। সে পিছনে ফিরে বললো,
– স্যার একটা কথা বলতে পারি?
– হ্যাঁ বলো।
– আপনার সঙ্গে ভাবির এখনো পুরোপুরি ডিভোর্স হয়নি তাই না? মানে আপনি ডিভোর্স পেপারে সাইন করেননি।
সফিকের রাগ উঠে গেল। সে ভাবলো রূপা মনে হয় তার আর ফারজানার মোবাইলে কথা বলতে শুনেছে। ম্যানেজার সাহেব চলে যাবার পরে রূপা হয়তো আবার এসেছিল। তখন হয়তো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আড়ি পেতেছে।
– তাতে তোর কোনো সমস্যা আছে? আমার বিষয় আমি বুঝবো তাতে তোর কি? দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথা শোনার অভ্যাস হয়ে গেছে নাকি? খবরদার আর কখনো যেন আমার চোখের সামনে তোমাকে না দেখি৷ মনে রেখো কথাটা।
রূপার চোখ দিয়ে গলগল করে পানি পড়তে লাগলো। স্যারের কাছে বকা শুনতে তার খারাপ লাগে না কিন্তু আজকে কেন জানি প্রচুর খারাপ লাগছে। রূপার ইচ্ছে করছে এখনই নদীতে ঝাপ দিয়ে মরে যাবে। রূপা টলতে টলতে কেবিনের দিকে এগিয়ে গেল।
পরদিন ভোরবেলা লঞ্চ থেকে নেমে রূপা সবার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে গেল না। নিধির কাছে বললো তার বাবার শরীর খুব খারাপ তাই তাকে ঢাকায় যেতে হবে। নিধি কোনকিছু চিন্তা না করে রূপাকে ঢাকা যাবার ব্যবস্থা করতে বললেন। দেড় ঘন্টা পরে সকালের লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। রূপা লঞ্চ টার্মিনালে ঢাকায় ফিরে যাবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। মনে মনে বললো,
“স্যার আর কোনদিন আপনার সামনে যাবো না!”
★★★
সময় কখনো অপেক্ষা করে না। আপনি ঘুমিয়ে থাকুন, জাগ্রত থাকুন, ব্যস্ত থাকুন, অবসর থাকুন, সুখে থাকুন বা কষ্টে থাকুন। সময় চলে যাবে তার নিজের গতিতে।
হাসপাতালের কাজ শুরু হবার পরে নিধি চৌধুরী চলে গেছে ঢাকায়। সে আর গ্রামের বাড়িতে আসেনি তবে খোঁজ নিচ্ছেন সবসময়।
রূপা সেদিন চলে যাবার পরে অফিসে গিয়েছে মাত্র একবার। চাকরি ছেড়ে দিয়েছে রূপা। নতুন চাকরি নিয়েছে অন্য একটা কোম্পানিতে।
সফিক এসব নিয়ে চিন্তা করে না। সে সারাদিন কাজের মধ্যে থাকে, দিনশেষে গ্রামের শেষ প্রান্তে নদীর তীরে গিয়ে বসে থাকে। অনেক রাত পর্যন্ত সে নদীর তীরে অবস্থান করে, তারপর ক্যাম্পে ফিরে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যায়।
সাত মাস পরে নিধির সঙ্গে সফিকের দেখা হয় কিন্তু কথা হয় না। চারদিন আগে কাজের সাইডে পা পিছলে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছে। চারিদিকে লন্ডভন্ড অবস্থা ছিল, কোনকিছু তেমন ঠিক নেই। সিমেন্টের শক্ত ঢালাইয়ে মাথা পরে মারাত্মক ধরনের আঘাত লাগে। জেলা সদর হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেবার পরে নিয়ে আসা হয় ঢাকায়।
আজ সকালে সফিক মারা গেছে হাসপাতালে। সফিকের সঙ্গে যে ছেলেটা ছিল সে গতকাল রাতে নিধির হাতে দুটো ডকুমেন্ট দিয়েছে। সুন্দরবন কুরিয়ার অফিসের মাধ্যমে সফিকের নামে ঢাকা থেকে পাঠানো হয়েছিল। সফিককে দেওয়া হয়নি কারণ সেই সুযোগ নেই।
একটা রূপার এবং আরেকটা ফারজানার।
রূপার বিয়ে ঠিক হয়েছে। সে তার বিয়ের কার্ড সুন্দর করে খামে ভরে পাঠিয়েছে সফিকের কাছে।
ফারজানা পাঠিয়েছে সেই ডিভোর্স পেপার। সে পেপারে সাইন না পাওয়া পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছে না। সফিক যেন দয়া করে এবার কোনো ঝামেলা না করেই সিগনেচার করে দেয়।
দুটো ঠিকানার জন্য দুটো খাম যোগাড় করে নিধি। চাইলেই কল দিয়ে বলে দিতে পারে সফিক নেই।
কিন্তু সে রূপার কাছে একটা চিঠি দিল, যে ঠিকানা থেকে সে পাঠিয়েছে সেই ঠিকানায় নিধি তাকে লিখে পাঠালো,
” তোমার নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা রইল। দোয়া করি সামনের দিনগুলো হাসিখুশি আর আনন্দের সাথে কাটুক। সফিক গতকাল মারা গেছে। তার হাতে তোমার বিয়ের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া হলো না। ভালো থেকো। ”
নিধি।
ফারজানার পাঠানো ঠিকানায় সেই পেপারই পাঠিয়ে দিল নিধি। সেখানেও ছোট্ট একটা চিরকুট দিয়ে দিল।
” সফিক সাহেব মারা গেছে, আমার মনে হয় আপনার আর কোনো অস্বস্তি থাকবে না। জীবন নতুন করে সাজিয়ে নিন। নিধি। ”
|
|
মৃত্যুর আগে বাবার রেখে যাওয়া পঁচিশ মোমবাতি একসঙ্গে জ্বালিয়ে ছাঁদে বসে আছে নিধি। তার হাতে মা-বাবা দুজনের একত্রিত একটা ছবি। নিধি সেই ছবি আঁকড়ে ধরে বসে আছে। ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে, কিছু জীবন শেষ হয়েছে আর কিছু জীবন নতুন করে শুরু হয়েছে।
জীবনের সব পথ শেষ হয় না। কিছু পথের যাত্রী মাঝপথে হারিয়ে যায়। কেউ কেউ পথ বদলে ফেলতে বাধ্য হয় আবার কেউ কেউ সামনে বা পিছনে কোথাও যায় না। অপেক্ষা করে।
—– সমাপ্ত —–
~ মো: সাইফুল ইসলাম।