#মেঘের_উল্টোপিঠ,২৮,শেষ_পর্ব
#লেখনীতে-সাদিয়া মেহরুজ দোলা
#পর্ব_২৮
অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু বার্তা যখন কর্ণকুহরে প্রবেশ করে লঘু মস্তিষ্কে গিয়ে পৌঁছায় তখন হটাৎই সবকিছু যেনো লহমায় স্তব্ধ হয়ে গেলো। বারংবার কর্ণকুহরে প্রতিফলিত হতে লাগলো মায়ের বলা শব্দফালি। হাত, পা তুমুল কাঁপছে। চঞ্চল নেত্র যুগল আই.সি.ইউ এর মধ্যে থাকা ব্যাক্তিকে দর্শন করার ইচ্ছে পোষণ করে তুমুল অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। নেত্রযুগল বন্ধ করে অন্তঃস্থল কে মিথ্যা আশ্বাস দেয়ার প্রয়াসে ব্যার্থ হতেই আঁখি দ্বারা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো।
‘ দোল প্লিজ! এতোটা হাইপার হতে নেই। শান্ত হও।পূর্ব ঠিক হয়ে যাবে ডক্টর বলল না?’
আহত দৃষ্টিতে তারা আপুর পানে চাহনি নিক্ষেপ করলাম ধীরে। শেষে নিষ্প্রভ কন্ঠে বলি,
‘ মাথায় উনি অনেক আঘাত পেয়েছে আপু। পায়ে ফ্রেকচার। একহাত ভেঙে গিয়েছে। ঘাড়ের রগে টান লেগেছে। শরীর ক্ষতবিক্ষত তার। তুমি আমাকে শান্ত হতে বলছো? পূর্ব কতটা কষ্ট পাচ্ছে জানো তুমি আপু? ‘
তারা আপু তপ্তশ্বাস ছাড়লেন। হতাশ হয়ে বললেন,
‘ বুঝতে পারছি তোমার মনের অবস্থা। বুঝতে পারছি পূর্ব’টার অবস্থাও। কিন্তু পূর্বকে ঠিক রাখতে তোমায় নিজের খেয়াল রাখতে হবে না? নিজের কি হাল করেছো দেখেছো? সেই সকালে এসেছো। না খাওয়া সারাদিন। এখন রাত শেষ হতে চললো। একটু খাও বোন। অসুস্থ হয়ে পড়বে তো। পূর্ব তোমার এই অবস্থা দেখলে কতটা কষ্ট পাবে জানো? দেখি ‘ হা ‘ করো তো। কান্না থামাও। ‘
খাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে না থাকা সত্বেও জোরপূর্বক অল্পস্বল্প খেতে হচ্ছে। আসলেই তো! পূর্ব তার আহত অবস্থার ব্যাথা থেকে আমায় দেখলে পাগলপ্রায় হয়ে যাবেন। এতদিনে তার ব্যাবহার, আচরণ এবং বাহ্যিক বহিঃপ্রকাশ সম্পর্কে এতটুকু জ্ঞান তো আহরণ হয়েছে আমার।
পূর্বকে আরেকটু পর বেডে দেয়া হবে। আঘাত গুলো গুরুতর হলেও এখন একটু হলেও সুস্থ তিনি। তার এক্সিডেন্টের পিছনে কে দায়ী? তা জানার জন্য পুলিশের কাছে গিয়েছে অভ্র ভাইয়া। সম্ভবত রিপোর্ট লিখতে। পূর্বের এহেন অবস্থা দর্শন করার পর ঠিকমতো শ্বাস নেয়াও যেনো দায় হয়ে পড়েছে আমার। এতোটা দূর্বল হয়ে পড়েছি তা প্রতি?তার বিন্দু লেশ খেয়াল নেই আমাতে।
কিয়ংদশ বাদে পূর্বের জ্ঞান ফিরলে তাকে বেডে দেয়া হয়। একে একে সকলে সাক্ষাৎ করে আসেন তার সাথে। শেষে আমাকে ভিতরে যাওয়ার জন্য তাড়া দিতেই আমি আমতা আমতা করে ব্যাপারটা কাটিয়ে নেই ক্ষনিকের জন্য। সবাইকে বিশ্রাম গ্রহণের জন্য বাসায় পাঠিয়ে দেয়া শেষে পূর্বের কেবিনের দিকে অগ্রসর হতেই কেবিন হতে একজন নার্স হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে এসে বলল,
‘ দোলা ম্যাম! জলদি ভিতরে যান প্লিজ। পূর্ব স্যার অনেক পাগলামো করছেন। ওনাকে ঔষধ খাওয়ানো যাচ্ছেনা। বারবার আপনার নাম ধরে চিল্লাচ্ছেন তিনি। স্যালাইনের ক্যানেলাও খুলতে নিয়েছিলো। বহুকষ্টে থামিয়েছি। আপনি প্লিজ দ্রুত যান তার কাছে। ‘
আমি বিস্মিত হয়ে শুভ্র দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখা মিললো পূর্বের রুষ্ট দৃষ্টিপাত। ক্ষুব্ধ হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন। শব্দ হতেই তিনি আমাতে দৃষ্টি ফেলে মুখোশ্রী স্বাভাবিক করে বললেন,
‘ তুমি এসেছো? ‘
প্রতিত্তুর করার আগেই কেবিনে উপস্থিত ডাক্তার মুচকি হেঁসে বললেন,
‘ নিন এবার নিজের স্বামীকে সামলান। তিনি তো আপনার জন্য প্রায় পাগল করে তুলছিলো আমাদের। ইউ আর সো লাকি দোল! পূর্ব তোমায় অনেক বেশিই ভালোবাসে। ওকে খাইয়ে দিয়ে ঔষধ গুলো খাওয়ায় দিও। ‘
ডাক্তার চলে গেলেন। সাথে তার সাথে থাকা ইন্টার্নি করা ডাক্তার’টাও। যাওয়ার আগে শেষোক্ত কম বয়সী ডাক্তার চোখ টিপ দিতেই লজ্জা কাজ করলো। অদ্ভুত! এতোটা পাগলামো করার কি আছে? কেবিন শূন্য হতেই তড়িৎ বেগে পূর্বের সম্মুখে গিয়ে কড়া কন্ঠে বলে উঠি,
‘ এমনটা করার মানে কি পূর্ব? ‘
পূর্ব আমার বাহু টেনে ধরে তার পাশে বসালেন। হাতে তার ওষ্ঠাধর স্পর্শ করে আলত সুরে বললেন,
‘ কেমনটা?’
আমি একটু মিইয়ে যাই৷ পূর্বের আলত কন্ঠ আগত রাগকে দমন করে পানিতে পরিণত করলো। কন্ঠের খাদ নামিয়ে বলি,
‘ সবাইকে বাসায় পাঠিয়ে আসতে লেট হচ্ছিলো। সেই কারণে আমার আসতে লেট হয়েছিলো। তাই বলে এমন পাগলামো করলেন কেনো? আমি তো আপনার কাছে আসতামই। ‘
পূর্ব নিরুত্তর। সে নিজ ঘাড় খুব সাবধানে পিছনে এলিয়ে আমায় সুস্থ হাতটা দ্বারা আঁকড়ে নিলেন। চুল নিজের ওষ্ঠাধর ছুঁইয়ে ভরাট কন্ঠে বললেন,
‘ পুরো ১৮ ঘন্টা ১৭ মিনিট ১৬ সেকেন্ড আমি আমার স্নিগ্ধময়ী কে এক পলক দেখিনি। আমার কি অস্থির হওয়াটা জায়েজ না দোলপাখি?হুহ্?’
মৌনতা বজায় রেখে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। এতটুকু সময়ের মাঝে মনে হচ্ছে তার মুখোশ্রীতে মলিনতা এসে ভর করেছে। সতেজতা ঠেলে রাজত্ব নিয়েছে ক্লান্ততা! কপাল’টা শুভ্র ব্যান্ডেজ দ্বারা আবৃত। ঘাড়ের পেছনটায় একই ব্যান্ডেজ। হাতে প্লাস্টার ঝুলানো। পায়ের মাঝেও অধিকার খাটিয়ে নিয়েছে ব্যান্ডেজ এর দল। সবকিছু এলোমেলো রূপে পরিণত হলেও প্রাণবন্ত আছে তার নীল মনি’বিশিষ্ট আঁখি জোড়া।
অন্তঃস্থল ভার হলো। নেত্র যুগল হতে অশ্রুকণা বারংবার গড়িয়ে পড়ার অনুমতি চাচ্ছে। নিজেকে সর্বোচ্চ ধাতস্থ করে বললাম,
‘ আপনার কি খুব কষ্ট হচ্ছে? ‘
আমার কন্ঠস্বর শুনে পূর্ব হয়তো আন্দাজ করতে পারলো আমার অন্তঃকরণের বার্তা। শোচনীয় অবস্থাটা। তিনি উদগ্রীব হয়ে বললেন,
‘ একটুও ব্যাথা করছে না আমার। বিশ্বাস করো। ইনজেকশন দিয়েছে একটু আগে। ব্যাথা করবে কি করে? আ’ম অলরাইট! বাট তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? আর ইউ ওকে? রাতে খেয়েছো?’
‘ খেয়েছি। ‘
উত্তর দেয়া শেষে চট করে পূর্বের খাবারের কথা মনে পড়লো। তাকে তো খাওয়ানো হয়নি এখনো। গহীনে নিজেকে শ’খানেক গালি দিয়ে উঠতে নিলেই পেছন থেকে হাত চেপে ধরলেন পূর্ব। উত্তেজিত হয়ে বললেন,
‘ এই মেয়ে কই যাচ্ছো? আমার পাশ থেকে বিন্দু মাত্র নড়াচড়া করতে নিষেধ করেছিনা?’
‘ আপনার খাবার আনতে যাচ্ছি। এখনো তো কিছুই খাননি। ঔষধ খাওয়াও বাকি। বসুন! এখনি আসছি। ‘
পূর্ব হাত ছেড়ে দিলেন। চটপট ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে এসে বেড সাইড টেবিলে পড়ে থাকা প্লেট হাতে তুলে নিয়ে পূর্বের পাশে বসি। খাবার মাখিয়ে তার ওষ্ঠাধর সম্মুখে ধরতেই তিনি আঁখি যুগল বড়সড় করে তাকালেন। আমি খানিক ইতস্তত বোধ করে বলি,
‘ এভাবে তাকাচ্ছেন কেনো?অদ্ভুত! ‘
পূর্ব কন্ঠে অবাকের রেশ টেনে বললেন,
‘ তুমি আমায় খাইয়ে দিচ্ছো, আই কান্ট বিলিভ! যেই মেয়ের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে অব্দি লজ্জায় কাঁপতে থাকে সে আমায় আজ নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে? গড! এই মোমেন্ট’টা এটলিষ্ট ছবি তুলে ইতিহাসের পাতায় লাগিয়ে রাখা উচিত। ‘
‘ আপনার কি সৃতিশক্তি চলে গিয়েছে পূর্ব? এতো কথা বলছেন তাও আবার অযৌক্তিক কথাবার্তা। আগে তো একটা শব্দও মুখ দিয়ে বের হতো বহু কষ্টে। যাইহোক! আপনি কি খাবেন? নাকি আমি চলে যাবো?’
পূর্ব কথা মতোন ‘ হা ‘ করলেন। খাবার গলাধঃকরণ করার পূর্বে এবারও আঙুলে কামড় দিতে ভুললেন না। এই লহমায় তার প্রতি রাগ উঠলো না। বকতে ইচ্ছে করলো না। বরঞ্চ তিনি যা করছেন সেগুলো নোট করে মস্তিষ্কে এঁটে রাখতে ইচ্ছে জন্ম নিলো অন্তঃকরণে। কি অদ্ভুত!
পূর্ব খাওয়া শেষেই হুট করে আমার কোল দখল করে শুয়ে পড়লেন। তার এহেন কান্ডে হকচকিয়ে বলি,
‘ কি করছেন? ঘাড়ে ব্যাথা পাবেন তো। বালিশে মাথা রাখুন। ‘
পূর্ব কুঁকড়ে গিয়ে আমাতে আরো নিবিড় হয়ে নিচু স্বরে বললেন,
‘ উঁহু! ব্যাথা লাগবেনা বরং শান্তি লাগবে। ‘
পূর্ব তার নেত্রযুগল বন্ধ করতেই আমি আমার কাঁপা কাঁপা হাত তার চুলের মাঝে ডুবিয়ে দেই। আস্তে আস্তে স্থির হাত স্থিতিশীলতা ফেলে চলমান হয়।পূর্বের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়া শুরু করতেই দৃশ্যমান হয় সেই ব্যাক্তির অধর কোণের মৃদু হাসি।পরিশেষে নিঃশব্দ রুমে ভারী নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ নিস্তব্ধতা কাটিয়ে দেয়। রাতে যখন অরণ্য ভাইয়া রাউন্ডে আসেন পূর্বকে দেখতে তখন তার অবস্থান আমার কোলে দেখে মুচকি হাসেন। সেই ক্ষণে লজ্জায় চুপসে নতজানু হয়েছিলাম। অরণ্য ভাইয়া রুম থেকে প্রস্থান করতেই হাফ ছেড়ে বাঁচি। ঘুমন্ত পূর্বকে শেষোক্ত দর্শন করতেই বিড়বিড়িয়ে বলি,
‘ আপনি পৃথিবীর সবথেকে শুদ্ধতম সুদর্শন পুরুষ পূর্ব। আপনার প্রণয়ের পবিত্র বহিঃপ্রকাশ আজ আমার মতোন কঠিন মেয়েকে আপনার প্রণয়ে ফেলতে সক্ষম হলো। ‘
_________________
প্রভাতের বিশুদ্ধ অনিল যখন সর্বাঙ্গ ছুঁয়ে গেলো তখনই চট করে নেত্র যুগল উন্মুক্ত করতেই দৃশ্যমান হয় পূর্বের মুখোশ্রী। আমার অবস্থান তখন তার বক্ষঃস্থলে। হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলাম তৎক্ষনাৎ। কিন্তু যতদূর আমার স্বরণে আছে আমি ঘুমে মগ্ন হওয়ার পূর্বে বিছানার সাথে মাথা এলিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু পূর্বের বক্ষঃস্থলে কখন আসলাম আমি? নিশ্চিত পূর্বের কাজ। লোকটা পাগল! ব্যাথা পেলে তখন? ক্ষতগুলো কাঁচা এখনো। রেগেমেগে তার মুখোশ্রীর প্রতি দৃষ্টি ফেলে বিছানা থেকে নেমে পড়ি। চোখে পানি দেয়া প্রয়োজন। আখিদুটো জ্বলছে ভীষণ। কাল তাড়াহুড়োর চোটে নেত্রে ড্রপ দেয়া হয়নি।
ওয়াশরুম থেকে তোয়ালে দিয়ে মুখোশ্রী মুছতে মুছতে বের হতেই দৃশ্যমান হয় পূর্ব তার একহাতে ভর দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। আমি ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে চটজলদি তাকে ধরে বসিয়ে দিয়ে কড়া কন্ঠে বলি,
‘ পাগল হয়েছেন? একা একা বসতে যাচ্ছেন কেনো? আমাকে ডাকলেই পারতেন। ‘
পূর্বকে ইতস্তত দেখালো। তিনি হাসফাস করা শেষে বললেন,
‘ আমাকে একটু ওয়াশরুমে নিয়ে যাবে?’
‘ আসুন। এভাবে বলার কি আছে?’
‘ আব.., আমার ভর নিতে পারবে? ‘
পূর্বের কথায় ভ্রু কুঁচকে আসে। সন্দিহান গলায় বলি,
‘ আপনি এভাবে বলছেন যেনো আপনার ওজন ১০০+! আপনাকে দেখতে ভীষণ স্লিম লাগে জানেন?’
পূর্ব ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলেন। আমার হাত রেখে ওয়াশরুমে সামনে এসে আমায় বাহিরে থাকতে বলে নিজে ভিতরে প্রবেশ করলেন। কিয়ৎ বাদে বেড়িয়ে আসলেন তিনি। পূর্বকে ধরে বেডে বসিয়ে সরে যেতে নিলেই সে আমার একহাত হেঁচকা টানে নিজের নিকট নিয়ে নিবিড় ভাবে জরীয়ে ধরলেন। কানের নিকট ফিসফিসিয়ে বললেন,
‘ আমার এক্সিডেন্ট কে করেছে জানো? আয়াফ! ও দায়ী। ওর মূল উদ্দেশ্য আমায় আহত করে রাস্তা খালি করা। অতঃপর ‘ তুমি ‘ আয়াফের মূল লক্ষ্য। আমার থেকে এক বিন্দুও দূরে থেকোনা দোলপাখি, একবার আয়াফের কবলে তুমি চলে গেলে তোমায় আমি ফিরিয়ে আনতে পারবো কিনা নিশ্চয়তা নেই,’
পূর্বের নিষ্প্রভ কন্ঠ। আমি থম মেরে আছি। কিছুক্ষণ বাদে অনুভূত হলো কানের নিচের অংশটায় কোমল স্পর্শ। অনবরত সেই স্পর্শ গভীর হচ্ছে ধীরে ধীরে…!
চলবে,
#মেঘের_উল্টোপিঠ
#সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা
#শেষ_পর্ব
আয়াফের মূল লক্ষ্য ছিলো আমায় মেরে ফেলা। কোনো প্রণয় সংঘটিত বা অন্য কোনো কারণ ছিলো না এতে। পুলিশ যখন হন্ন হয়ে আয়াফকে খোঁজায় ব্যাস্ত তখনই জানা যায় পূর্বের এক্সিডেন্টের পরপরই আয়াফ বাংলাদেশে ছেড়ে নিজের মাতৃভূমি কানাডায় ফিরে গিয়েছে। যাওয়ার আগে পূর্বের জন্য দু’টো চিঠি প্রদান করে গিয়েছে। চিঠিতে কি লিখা ছিলো? তা জানা নেই আমার। তবে, চিঠিটা পড়া শেষেই আয়াফের ওপর থেকে কেস উঠিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। আমি চিঠি সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর পেতাম না। তবে আয়াফের সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করলে তিনি আমায় আলত করে জরীয়ে ধরে বলেছিলেন,
‘ ফাইনালি! আমাদের দু’জনের লাইফ থেকে সকল ঝামেলা দূর হয়েছে স্নিগ্ধময়ী। আয়াফের ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করো না আমায়। আমি ওর ব্যাপারে কিছু বলতে চাচ্ছিনা। ‘
সেদিনের পর থেকে ‘ আয়াফ সম্পর্কে আর কিছুই জিজ্ঞেস করিনি। তবুও গহীনে কৌতূহল রয়েই যায় ভীষণ। জানা আছে যদিও, পূর্ব কখনো আমায় আয়াফ সম্পর্কে কিছু বলবে না। হাল ছেড়ে দিয়ে নিজ স্বাভাবিক জীবনে মন দেই।
পূর্বকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকদিন। তিনি এখন তার বাসাতেই আছেন। ১ম এক সপ্তাহ ছিলাম তার পাশে। তারপর যখন তিনি একটু সুস্থ হলেন তিনি ঠেলেঠুলে আমায় নিজ বাসায় পাঠিয়ে দেন। কারণটা আমার পড়ায় ক্ষতি হচ্ছে বলে। দূরে থাকলেও প্রতি রাত ২ টার দিকে তিনি আমায় একটা ম্যাসেজ দিতেন। ‘ ভালো আছো? ‘ লিখে! ব্যাস এতটুকুই। সামনে আমার গুরুত্বপূর্ণ পরিক্ষা রয়েছে তাই আমি যদি কল ব্যাক করতাম উল্টো কঠিন ধমক হজম করতে হতো। সেই দুই শব্দের ম্যাসেজে নিজের আকাঙ্খা মেটাতে হতো। আমারই এই অবস্থা। পূর্বের কিরূপ করুণ অবস্থা হচ্ছে তার বার্তা আমি তার নিকট না থেকেও পাচ্ছি। মামনি প্রায়ই ফোন করে বলে।
পরিশেষে আজ পরিক্ষা শেষ! শেষোক্ত পরিক্ষা দিয়ে এক্সাম হল থেকে বের হয়ে রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করতেই পূর্বের সেই কালো রঙের গাড়িটা এসে পথ রোধ করে দাঁড়ালো। আমি অন্তঃকরণে ম্লান হাসি। কিন্তু বাহিরে বজায় রাখি কাঠিন্যতা। এত সহজে এবার তার ফাঁদে পা দিচ্ছিনা। পূর্ব গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে এসে আমার সন্নিকটে এসে দাঁড়ালেন। পুরো সুস্থ তিনি এখন! কাছে এসে কপালে শব্দ করে চুমু খেয়ে তিনি নিজের দু’হাত দ্বারা আমার গাল আগলে বললেন,
‘ ভালো আছো?’
এতদিন পর সেই চির – পরিচিত একই শব্দগুচ্ছো কর্ণপাত করে বিরক্তি লাগলো। কপাল কুঁচকে চেহারায় বিরক্তি ভাব প্রকাশ করে বলি,
‘ এক্সাম দিতে আসার আগেই তো ম্যাসেজ দিয়ে এটা জিজ্ঞেস করলেন। এখন আবার একই কথা?আর পাবলিক প্লেসে এসব কি? লাজ- লজ্জা নেই আপনার?’
‘ আশপাশে মানুষ নেই তো। তাছাড়া আমি আমার বউকে চুমু খেয়েছি। এতে কার কি?’
‘ নির্লজ্জ লোক! ‘
‘ লজ্জাবতীর হ্যাজবেন্ড কে একটু নির্লজ্জ হতেই হয় বুঝেছো?’
আমি চোখ রাঙিয়ে তাকালাম। পূর্ব তা দেখে হেঁসে গাল ধরে টান দেন। হাতের কব্জি ধরে সামনে এগোতেই আমি হন্তদন্ত হয়ে বলি,
‘ কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?’
পূর্ব তার দৃষ্টিপাত সামনে রেখে প্রতিত্তুরে বললেন,
‘ আসো। তারপর বলছি। ‘
‘ আমি আপনার সাথে কোথায় যাচ্ছি না। ‘
হাত ছাড়িয়ে নিতেই পূর্ব তীক্ষ্ণ চাহনি নিক্ষেপ করলেন। শক্ত কন্ঠে বললেন, ‘ সমস্যা কি? যাবেনা কেনো?’
‘ ইচ্ছে নেই তাই। আপনি নিজের বাসায় যান। ‘
‘ তুমি কি চাও আমি তোমায় কোলে নিয়ে গাড়িতে বসাই? পিছে দেখো! মানুষ আসছে। তারা কাছাকাছি আসলেই তোমায় কোলে তুলবো নাকি?’
চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে বসতেই দৃশ্যমান হয় পূর্বের ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা বাঁকা হাসি৷ আমি নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করি। ধাতস্থ হই একবার তার সেই কাঙ্খিত স্থানে পৌঁছাই তারপর এই ত্যাড়া লোককে শায়েস্তা করবো।
গাড়ি থামে পরিচিত সেই নদীর পাড়টায়। গাড়ি স্থির হতেই তড়িৎ বেগে নেমে পড়ি পূর্বের কোনো কথা শ্রবণ না করেই। এখন বিকেলবেলা। এই সময় নদীর সৌন্দর্য’টা ভীষণ চোখ ধাধানোরকর হয়। পশ্চিম দিকে হেলে পড়া সূর্যের সম্পূর্ণ প্রতিবিম্ব এখন নদীর পানিতে বিদ্যমান৷ কমলাটে রৌদ্দুরের আনাগোনা চারপাশে। হিমেল অনিল বইছে! মস্তিষ্ক ঠান্ডা করা পরিবেশ। আঁড়চোখে খেয়াল হলো পূর্ব আমার পাশে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছেন। আমি উদ্বেগ নিয়ে বলি,
‘ কি হয়েছে? এমন হাঁপাচ্ছেন কেনো?’
পূর্ব রুষ্ট কন্ঠে বললেন, ‘ এভাবে হরিণের মতো দৌড়ে এলে কেনো? তাও জুতো ছাড়া? সামনে তাকিয়ে দেখো। কাঁচের টুকরো পড়ে আছে। খেয়াল আছে কোনো সেদিকে? কমনসেন্সহীন প্রাণী! ‘
আমি ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে উঠি, ‘ প্রাণী না মানুষ বলুন মানুষ! আর রইল কাঁচের টুকরো। ঐটা আমি দেখেছি তাই এতটুকু এসেই থেমে গিয়েছি বুঝেছেন?’
পূর্ব চোখ গরম করে তাকালেন। আমি ডোন্ট কেয়ার মুড নিয়ে ঠোঁট বাঁকাতেই তিনি ইশারায় জুতো পড়ার জন্য তাড়া দিলেন। শেষে আমার হাত চেপে ধরে নদীর পাড়ে থাকা সিঁড়ি গুলোতে গিয়ে বসলেন। তার মাঝে বেশ দূরত্ব বজায় রেখে বসতেই তিনি ফট করে বললেন,
‘ এতো দূরে বসছো কেনো?আমি কি পরপুরুষ? ‘
‘ ইচ্ছে হয়েছে বসেছি..! ‘
কথা শেষে অন্যদিকে ফিরতেই কোমড়ে বলিষ্ঠ হাতের ছোঁয়া উপলব্ধি হয়। এই হাতটা যে পূর্বের। সেটা ছোঁয়ার ধরণ দেখে বুঝেছি। টেনে আমায় নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কানের নিকট ফিসফিস আওয়াজে বললেন,
‘ এতদিন দূরে থেকেছো। এখনও দূরে থাকতে চাও?আমার জন্য তোমার বুঝি একটুও মায়া – দয়া কাজ করেনা? ‘
‘ এতদিন মনে হয় আমি নিজ ইচ্ছেতে দূরে থেকেছি, হাহ্! নিজে দূরে রেখে আবার মায়া – দরদের হিসেব নিকেশ করতে বসেছে। ‘
পূর্ব বোধহয় এতক্ষণে আমার অভিমান ধরতে পারলেন। কোমল হয়ে এলো তার অন্তঃকরণ। আমার পিঠে তার একহাত কোমল ভাবে স্থাপন করে আলত জরীয়ে ধরে বললেন,
‘ তোমার ভালোর জন্যই তো এটা করেছি। আমি পাশে থাকলে পড়া হতো?হতোনা! সেই আড়চোখে তাকিয়ে থাকতে। ধমক তো আর দিতে পারিনা। হুটহাট কেঁদে দাও সুযোগ মতো। এটা যে আমি সহ্য করতে পারিনা তার সুযোগ নাও! ‘
নিরুত্তর রইলাম। কথাগুলো মিথ্যা নয়। মৌনতায় কেটে গেলো কিয়ৎক্ষণ। হটাৎ খেয়াল হলো পূর্ব তার সাথে আনা ব্যাগটা থেকে কিছু বের করছেন। সম্পূর্ণটুকু বের করতে দৃশ্যমান হয় তার হাতের বস্তু গুলো আসলে ফুল। ফুলের গহনা! লাল গোলাপ এবং সাদা কাঠগোলাপ দিয়ে তৈরি। পূর্ব বিনাবাক্যে আমার হাত টেনে হাতের মধ্যে ব্রেসলেট আকাড়ে বানানো ফুলগুচ্ছোর গহনা পড়িয়ে দিলেন। মাথায় ফুলের আস্তরণ এলিয়ে পরখ করলেন আমাতে। কাছে এসে হিসহিসিয়ে বললেন,
‘ তোমাকে ফুলের মধ্যে এতো বেশি স্নিগ্ধ লাগে..! ‘
আলত হাতে জরীয়ে ফের তার কাঁধে মাথা রাখি। দৃষ্টি আমার সামনে। কিন্তু পূর্বের চাহনি যে আমার ওপর তা বুঝতে বেগ পেতে হলো না। জোড়াল শ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করি। জীবনটা সুন্দর! মারাত্মক সুন্দরে পরিণত হয় যদি তাকে আমরা উপভোগ করার চেষ্টা করি। পূর্ব পাশে থাকলে পুরো পৃথিবীটা যেনো অমায়িক সৌন্দর্যে ফুটে উঠে আমার নিকট।দিনশেষে মন কোণে একটাই কষ্ট। অরিনটা ভালো হবে কবে? ব্রেণ স্ট্রোক করায় হাত – পা প্যারালাইজ’ড হয়ে গিয়েছে ওর। ডাক্তার বলেছে অরিন একদিন সুস্থ হবে। তবে সেই একদিনটা দীর্ঘ সময়ের। কপালে মিষ্টি স্পর্শ পেতে চোখ বন্ধ রেখেই হাসি। শেষ বিকেলের নিস্তব্ধতা হলো আমার এবং পূর্বের এক প্রেম’ময় মূর্হতের সাক্ষী।
পরিশিষ্ট:
___________________________
গ্রীষ্মকালের রেশ কেটে গেলো যেনো অল্প সময়েই।বর্ষা শেষে আগমন ঘটলো শরৎ এর। চমৎকার এক মৌসুম। এটা সেই আগের গ্রীষ্ম নয়! এটা তিন বসন্ত ফেলে আসা গ্রীষ্ম।তিনটা বছর কেটে গিয়েছে। প্রকৃতি বদলেছে। মানুষ পাল্টেছে। স্বাভাবিক জীবনটা অনন্যতম হয়েছে। আমার সেই খরগোশ জোড়া বড় হয়েছে অনেকটা। নীরব, আদ্রাফ বিবাহিত দের খাতায় নিজেদের নাম লিখিয়েছে।
বদলেছে অনেক কিছু। ১৯ বছরের সেই আমি এখন ২২ এ পা দিয়েছি। ম্যাচিউরিটি বেড়েছে। তবে সেটা বহিরাগত মানুষের সাপেক্ষে। পূর্ব এবং পরিবারের কাছে আমিটা সেই আগের মতোই রয়ে গিয়েছি। নিজের ১৯ বছর কাটিয়ে আসা খান ভিলা থেকে আমার আগমন ঘটেছে আবরার মঞ্জিলে বছর এক হবে। চোখের সামনে ঘটে যেতে দেখেছি অনা আকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা। নিজের প্রিয়তম ব্যাক্তিকে জীবন থেকে হারিয়েছি। তিক্ত অনুভূতির শিকার হয়েছি। আরো কত কি!
বেলকনিতে এসে দাঁড়ালাম। নিজের বাসায় এসেছি কয়েকদিন হলো। বিয়ের অনুষ্ঠানের পর পূর্ব আমায় নিজের বাসায় আসতেই দেয়না বললে চলে। আসতে দিলেও সকাল এসে সন্ধ্যায় ছুটতে হয় আবরার মঞ্জিলে! বেলকনি থেকে স্পষ্টত দেখতে পেলাম তিশান ভাইয়াকে। দিবা আপুর কবরের সামনে বসে আছে। প্রায়ই দেখি। ফজরের নামাজ পড়েই ভাইয়া আপুর কবর একবার হলেও দর্শন করে যায়। আমার বিয়ের অনুষ্ঠানের আগে। একদিন হুট করে সিঁড়ি থেকে সাত মাসের উঁচু পেট নিয়ে পড়ে যায় আপু। তারপর মৃত্যু! প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়ে। কিন্তু আপুর দোষটা তো অতো বড় নয়। তবুও…! আপুর সাথে নিষ্পাপ বাচ্চাটাও চলে গেলো। সাথে জীবন্ত তিশান ভাইকে অর্ধমৃততে পরিণত করে দিয়ে গেলো। এদের দুজনের তো কোনো দোষ ছিলো না। তবুও কেনো?দিবা আপু আয়াফের সাথে মিলে আমায় হত্যা করতে চেয়েছিলো। হয়তো এটাই আপুর অপরাধ। কিন্তু আয়াফ? মূল দোষী! তার কি কোনো শাস্তি হয়নি? অবশ্যই হয়েছে হয়তো। আড়ালে আবডালে কোনোভাবে।
বেলকনি থেকে সরে আসি। ভালো লাগছে না। সহ্য হয়না তিশান ভাইয়ার হৃদয়বিদারক কান্না। তিনি এসেই হাউমাউ করে কাঁদেন। সর্বদা! তার জন্য খারাপ লাগে। এই মানুষটা কি সুখে হবেনা আর কখনো?
রুমে আসতেই নজরে এলো তিনজন বাচ্চার হাস্যরত মুখোশ্রী। তারা তিনজন এলোমেলো পায়ে হেঁটে আসছে। আমি হাঁটু গেড়ে বসতেই তিনজন গড়গড় করে বলল,
‘ এঞ্জেল উই লাভ ইউ সো মাচ।’
আমি কিয়ৎ হেঁসে তিনটার গালে আদুরে স্পর্শ একে বলি, ‘ লাভ ইউ টু বাট এঞ্জেল? আমি তোমাদের খালা হই খালা। খালামনি ডাকো। ‘
‘ নোপ এঞ্জেল। পূর্ব চাচু বলেছে তোমাকে এঞ্জেল বলে ডাকতে। তুমি তো এঞ্জেলের মতো কিউট তাই।আমরা পূর্ব চাচুর কথা ফেলি না। ‘
দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। তিনটা দারুণ ভক্ত পূর্বের। পূর্ব যা বলবে কড়ায় – গন্ডায় তা পালন করবে। হটাৎ কারো চেঁচানোর স্বর শুনে কায়া, মায়া, তোয়া ৩ জন আমার পিছে লুকিয়ে পড়লো। আমি সামনে তাকাই।অরিন কোমড়ে শাড়ী গুঁজে রগচটা দৃষ্টি নিয়ে বলল,
‘ এই দোল! ঐ তিনটাকে দেখছিস? খাওয়ার সময় হয়ে গেছে একটাকেও পাইনা। খাওয়াতে নিলেই জ্বালাতন শুরু করে হাত ফস্কে পালিয়ে যায়।’
‘ আমার পিছে তাকা গাঁধি! এদিক – ওদিক কি দেখিস? ‘
আমি নিচু কন্ঠ! অরিন ৩ টাকে ধরে হালক ধমক দিয়ে নিয়ে যায়। আমি পিছন থেকে ধমক দিতে নিষেধ করলাম। শুনলো কিনা এই মেয়ে জানিনা। আলত হেঁসে উঠে বসি বিছানায়। অরিনের মতোই হয়েছে ওর বাচ্চাগুলো। অরিন সুস্থ হয়েছিলো ৫ মাস বাদেই। তারপর ছোটখাটো আয়োজন করে বিয়ে হয়ে ওদের। তারপরই আগমন ঘটে এই ৩ রাজকন্যার। তারা আপুকে বিয়ে দেয়া হয়েছে ভাইয়ার সাথে। ভাইয়ার মত ছিলো সম্পূর্ণ বিয়েতে।
উঠে দাঁড়িয়ে বাহিরে আসি। করিডর থেকে নিচে তাকাতেই দৃশ্যমান হলো সুখী পরিবারকে। আজ সবাই আমাদের বাসায় এসেছে। পূর্বও আসবে রাতে। সে এখন হসপিটালে! অরিন বাচ্চাদের চোখ রাঙিয়ে খাওয়াচ্ছে। অভ্র ভাইয়া তার পাশে বসে একবার বাচ্চাদের দিকে তো একবার অরিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। তারা আপুর আঙুল কেটেছে আজ সকালে। তাই ভাইয়া সন্তপর্ণে আপুকে খাইয়ে দিচ্ছে। বাবা, মা এবং পূর্বের বাবা, মামনি। অরিনের বাবা, মা তাদের খাওয়া শেষ। এখন তারা আড্ডায় মশগুল। সুখী পরিবার আমার।
রুমে আসি। পূর্বকে মনে পড়ছে। কিন্তু রাত ছাড়া তার আসা সম্ভব না। দরজার লাগানোর শব্দে পিছন তাকাতেই দৃশ্যমান হয় কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিকে। পূর্ব তার হাতের এপ্রোন সোফায় ছুঁড়ে আমার সন্নিকটে এসে বললেন,
‘ কায়া, মায়া, তোয়ার মতো বেবি চাই আমার দোলপাখি। চলো এখন থেকেই বেবি প্লেনিং শুরু করি। হসপিটালে বসে ভাবছিলাম। তাই হুট করেই চলে এলাম। ‘
পূর্ব আমার উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে কোলে নিয়ে বিছানায় গিয়ে শোয়ালেন। আমার পাশে তিনি বসে গলায় মুখ ডুবুরি দিতেই আমি আচানক বলি,
‘ ভালোবাসি পূর্ব। ‘
পূর্ব স্তব্ধ নয়নে তাকালেন। তার চোখের কোণার পানি জানান দিচ্ছে তিনি কতটা খুশি হয়েছেন আমার কথায়। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন,
‘ কি বললে? আবার বলো। ‘
‘ ভালোবাসি আপনাকে। জীবনের শেষ সময়টুকু আপনার সাথে কাটাতে চাই। মেঘের উল্টোপিঠ এর মতোন শুভ্র, পবিত্র মেঘদের মতোন খুব করে ভালোবাসি। ‘
পূর্ব অতর্কিত হামলা চালালেন আমার অধরে। তার আগে ফিসফিস করে বললেন,
‘ আজ আমি প্রচন্ড খুশি স্নিগ্ধময়ী। এই কয়েক শব্দ আমার কাছে অতীব মূল্যবান। আজ আর ছাড়ছিনা তোমায়। এতদিন ছাড় দিলেও আর না। ‘
অতঃপর মিষ্টি এক প্রহর। আশেপাশে বইছে দমকা হাওয়া। মেঘের উল্টোপিঠ আজ মেঘ যুগল প্রেমিক দম্পতিকে দেখে বোধহয় হাসছে। হয়তো বলছে,
থেমে যাক প্রহর! থেমে যাক সবকিছু। মেঘ এবং উল্টোপিঠ আজ মেঘবতী কন্যা এবং মেঘরাজের প্রেম কাহিনি দর্শণ করুক।
(সমাপ্ত)